কুমড়াজাতীয় সবজির রোগবালাই আক্রমণের লক্ষণ দেখে রোগ শনাক্ত করা, আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ ও হার্বোরিয়াম তৈরি করা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

প্রাথমিক তথ্য- কুমড়াজাতীয় সবজি মোট সবজির একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। সব সবজিগুলোর রোগসমূহ প্রায় একই ধরনের। রোগগুলো হলো পাউডারি মিলডিউ, ডাউনি মিলডিউ, পাতার দাগ, এনথ্রাকনোজ, নেতিয়ে পড়া, মোজাইক, ফল পচা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞের মতে সবজিতে বাংলাদেশে প্রায় ২০০ ধরনের রোগ দেখা যায় এবং শুধু রোগের কারনে ১২-১৫% সবজি ও ফল প্রতি বছর নষ্ট হয়।

পাউডারি মিলডিউ রোগে পাতায় উপরের দিকে সাদা পাউডারের ন্যায় আন্তর পড়ে। শেষে পাতা শুকিয়ে যায় । ডাউনি মিলডিউ রোগে পাতার নিচ দিকে ধূসর, বেগুনী গোলাপী দাগ পড়ে। আক্রান্ত পাতা ও গাছ দূর্বল হয়ে মারা যায়, ফল পাকে না। পোড়াভাব হয়। নেতিয়ে পড়া রোগে পাতা আংশিক নরম হয় এবং পুরো গাছ হঠাৎ নেতিয়ে পড়ে এনথ্রাকনোজ রোগে আক্রান্ত গাছের পাতায় বাদামি বা কাল দাগ পড়ে, শাখা-প্রশাখায় সরু গাঢ় কাল দাগ পড়ে, যা কান্ডের চারিদিকে ঘিরে ফেলে। এর ফলে আক্রমণের স্থান হতে উপরের দিকের অংশ মারা যায়। মোজাইক রোগ পাতায় হালকা ও গাঢ় সবুজের সংমিশ্রণে মোজাইক সৃষ্টি হয়। পাতা নিচের দিকে গুটিয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। ফল কুঁচকায়ে যায় ৷

এ সমস্ত লক্ষণ দেখার জন্য কুমড়ার জাংলায় বা মাঠে কুমড়ার গাছে লক্ষণ মিলিয়ে রোগাক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করতে হবে। সংগৃহীত রোগাক্রান্ত পাতা নেতিয়ে নিয়ে টানটান/সোজা করে ডুইং শিট বা মোটা অথচ শক্ত কাগজের পাতা দিয়ে সমতল টেবিলের উপর চাপ দিয়ে ২-৩ দিন রেখে দিতে হবে। পাতা শুকায়ে গেলে ব্যবহারিক খাতায় শুকানো সোজা করা পাতাটি আটকে নির্দেশনা লিখতে হবে। এটাকে হার্বোরিয়াম শীট বলে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

১। রোগাক্রান্ত কুমড়া গাছের পাতা, ২। চাকু/কাঁচি, ৩। চিমটা বা ফরসেপ, ৪। স্বচ্ছ গাম টেপ, ৫। কাঠ পেন্সিল, ৬। ড্রইং শিটযুক্ত ব্যবহারিক খাতা, ৭। ডাল/ট্রে, ৮। ট্যাগ, ৯। হার্কোরিয়াম শীট, ১০। কাগজ কলম।

কাজের ধাপ

পাউডারি মিলডিউপাতার উপরের দিকে সাদা সাদা পাউডারের ন্যায় ছোট ছাপে দেখা যাবে। বেশি আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যাবে।
ডাউনি মিলডিউপাতার নিচ দিকে ধূসর, বেগুনী বা গোলাপী দাগ দেখা যাবে। আক্রান্ত পাতা ও গাছ দুর্বল হবে এবং মারা যাবে। আক্রান্ত গাছের ফল শক্ত হয়ে থাকে ফল বাড়ে না এবং পাকে না।
এনথ্রাকনোজআক্রান্ত গাছের পাতায় বাদামি বা কাল দাগ পড়ে দাগ দেখতে চোখের ন্যায়, দাগের কিনারা উঁচু এবং মাঝে বসা হয়।
মোজাইকপাতায় হলুদ ও সবুজ এর সংমিশ্রিত ছিট ছিট দাগ পড়ে।
নেতিয়ে পড়াপাতা হলুদ হয়ে কিনারা দিয়ে পোড়াভাব হয়। পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং পুরো গাছ মারা যায়।

২। রোগের লক্ষণের সাথে মিলিয়ে পাতার বোঁটাসহ চাকু বা কাঁচি দিয়ে কেটে ডালা/ট্রেতে করে টান টান অবস্থায় ছায়ায় রাখতে হবে। তবে রোগের লক্ষণ অনুসারে পাতার বোটায় ট্যাগ লাগাতে হবে। 

৩। ছায়ায় পাতাটি ১৫-২০ মিনিট রাখলে নেতিয়ে নরম হবে। রোগের লক্ষণ দেখে খাতায় লিখতে হবে। 

৪। নরম পাতাটি ২টি ড্রইং শিট বা শক্ত কাগজের মাঝখানে ফেলে সমতল টেবিলের উপর ভারা দিয়ে ২/৩ দিন রাখলে শুকায়ে টান টান হয়ে থাকবে। পাতাটি অবশই ছায়ায় রাখতে হবে। প্লাইউড, পাতলা কাঁচ ভারা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ভারা/ওজন বেশি হলে পাতা/নমুনা থেতলে যেতে পারে। 

৫। এরপর শুকনো, সবুজ রঙের পাতাটি ব্যবহারিক খাতায় ড্রইংশিটে রেখে স্বচ্ছ টেপ দিয়ে আটকাতে হবে বা । হার্বোরিয়াম শীটে স্বচ্ছ টেপ দিয়ে আটকাতে হবে। 

৬। পাতা আটকানোর পর নিচে রোগের নামসহ ফসলের নাম সংগ্রহ স্থান, তারিখ ও ঠিকানা লিখতে হবে।

৭। পাতা সংগ্রহ ও দুই কাগজের শিটের মাঝখানে রেকে প্লাইউডের ন্যায় করার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পাতাটি ছিড়ে না যায় এবং রোগের নামসহ ট্যাগটি লাগানো হয়। 

৮। মাঠে নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে কোন রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি তা জানা যাবে। 

৯। সমস্ত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখতে হবে।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion