কৃষিতে বিজ্ঞানীদের অবদান অনেক। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় কৃষির সাথে যুক্ত করে কৃষি কর্মকাণ্ডকে আধুনিকায়ন করেছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা যেমন বিজ্ঞানী হতে পারেন, তেমনি কৃষকরাও বিজ্ঞানী হতে পারেন। আদি কৃষির উৎপত্তি সাধারণ মানুষের হাতেই। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা জলবায়ু, পরিবেশ, মাটি, পানি, উৎপাদন পদ্ধতি এসব বিষয় বিবেচনায় এনে উচ্চতর গবেষণা করছেন। তাদের নিরলস গবেষণার ফলে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ।
বাংলাদেশের কৃষির সমস্যাগুলো দৃষ্টিগোচরে আনা জরুরি। ফসল উৎপাদনে এ দেশের প্রধান সমস্যাগুলো হচ্ছে-
উপর্যুক্ত সমস্যাবলি সমাধানে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছেন। সারাদেশে মাটিতে উদ্ভিদের পুষ্টি সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা দেশকে ত্রিশটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে ভাগ করেছেন । কোন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের মাটি কিরূপ এসব বিষয় উদ্ভাবন কৃষিবিজ্ঞানীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এসব অঞ্চলের মাটির ধরন বিবেচনা করে ফসল ফলানোর জন্য কোন ফসলে কী মাত্রায় সার প্রয়োগ করা হবে সে বিষয়ে কৃষকগণকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তেমনিভাবে সার ব্যবস্থাপনায় সুন্দর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পূর্ববর্তী ফসলে যে মাত্রায় সার দেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে পরবর্তী ফসলের জন্য সারের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কেননা কোন কোন সার নিঃশেষ হয়ে যায় না।
বন্যা, খরা, লবণাক্ততা বাংলাদেশের প্রধান কৃষি সমস্যা। এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য বিজ্ঞানীরা বেশ অগ্রসর হয়েছেন। যেমন- বন্যার শেষে ধান চাষের জন্য বিলম্ব জাত হিসেবে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট ব্রিধান ২২ ব্রি ধান ২৩ ব্রিধান-৩৭ এবং ব্রি ধান-৩৮ নামে চারটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ব্রি ধান-১১, ব্রি ধান-১২, ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৫২ ও ব্রি ধান-৭৯ নামের আরও পাঁচটি জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। এই পাঁচ জাতের ধান পানির নিচে ১০-১৫ দিন টিকে থাকতে পারে কৃষিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
বন্যা যেমন কৃষকদের একটি বড় সমস্যা, খরা ও লবণাক্ততা আরও বড় সমস্যা। এজন্য বিজ্ঞানীরা ব্রি ধান৫৬ ব্রি ধান৫৭ নামের খরা সহনশীল ধান উদ্ভাবন করেছেন। উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে চাষের জন্য ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৬, ব্রি ধান-৪৭, ব্রি ধান-৫৩, ব্রি ধান-৫৪ ও ব্রি ধান-৫৫ উদ্ভাবন হয়েছে।
অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কৃষকেরা নতুন বিষয় আবিষ্কার করে কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন যেমন- ঝিনাইদহের হরিপদ কাপালি হরিধান নামে একটি ধান নির্বাচন করেছেন। কিছু কিছু উদ্ভিদের বিশেষ অঙ্গ বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধরনের বীজ থেকে উৎপন্ন গাছে মাতৃগাছের সকল গুণাগুণ হুবহু পাওয়া যায়। ফুলের পরাগায়ণের সময় উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজে পিতৃগাছের গুণাগুণ যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে কিন্তু অঙ্গজ প্রজননে সে আশঙ্কা থাকে না। কৃষকগণ কলা, আম, লিচু, কমলা, গোলাপ, চা, ইক্ষু, লেবু ইত্যাদির উৎপাদনে অঙ্গজ প্রজনন ব্যবহার করে থাকেন। ফসলের বীজ ও নতুন নতুন জাত উন্নয়ন, বীজ সংরক্ষণ, রোগ বালাইয়ের কারণ শনাক্তকরণ, ফসলের পুষ্টিমান বাড়ানো-এ সকল কাজই কৃষি বিজ্ঞানীরা করে থাকেন। এমনকি ফসল সংগ্রহের পর বিপণন পর্যন্ত ফসলের নিরাপত্তা বিধান ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখার যাবতীয় প্রযুক্তি কৃষি ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে সম্পন্ন করেন
কৃষির সঙ্গে বিজ্ঞানের নানা শাখার কর্মকাণ্ড জড়িত। কৃষিতত্ত্ব ছাড়াও মৃত্তিকা বিজ্ঞান, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন ইত্যাদি শাখার বিজ্ঞানীরা তথ্য ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে অবদান রাখছেন। পশুপাখি পালন ও এদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপর একদল বিজ্ঞানী ক্রমাগত কাজ করছেন। মৎস্য লালন পালন, প্রজনন, উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রেও একদল বিজ্ঞানী অবদান রাখছেন। এই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বিভিন্ন গবেষণা ইন্সটিটিউট রয়েছে। এসব ইন্সটিটিউট ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন।
কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে একজন কৃষিবিজ্ঞানী ও তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করে পোস্টারে লিখবে এবং উপস্থাপন করবে। |
আরও দেখুন...