ক্ষমা, সহনশীলতা ও দেশপ্রেম শুধু সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ নয়, ধর্মীয় মূল্যবোধও বটে। ক্ষমার মনোভাব নিয়ে যে কোনো কাজ আমরা করব তা হবে উত্তম। সহনশীলতা আমাদের কাজে, চিন্তায় ও আচরণে পরিপক্বতা আনে। দেশপ্রেম মনের মাঝে ভালো কিছু করার ইচ্ছাকে আরও শক্তি জোগাবে।
কাজ: নিচের শাস্ত্রাংশটি নিজ নিজ খাতায় লেখ এবং এক মিনিট নীরবে ধ্যান কর-এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আমাদের কী বলতে চান। "তোমরা একে অন্যের প্রতি সহৃদয় হও, হও কোমলপ্রাণ। পরস্পরকে ক্ষমা করে নাও, যেমন খ্রীষ্টে তোমাদের |
এবার আমরা পর পর দুটি ঘটনার বিবরণ শুনব এবং এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে আমরা কী করতাম তা নিজ নিজ খাতায় লিখব।
আন্না ও নমিতা খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। আন্না তার বান্ধবী নমিতাকে খুব বিশ্বাস করত। সে একবার নমিতার সাথে খুব গোপন একটি বিষয় আলাপ করল। সে মনে করেছিল, এই বিষয়টি নমিতা কারো সাথে আলাপ করবে না। কিন্তু নমিতা তা গোপন না-রেখে অন্য একজন বান্ধবীর কাছে বলে দিল। নমিতা শুধু আন্নার কথাটাই বলেনি, একইসঙ্গে সে আরও কিছু কথা বানিয়ে যোগ করে দিল। আন্না মনে খুব দুঃখ পেল কারণ তার বান্ধবী কথাটা গোপন রাখবে বলে যে কথা দিয়েছিল তা রাখেনি। এতে নমিতার ওপর তার অনেক রাগও হলো। মনে মনে সে বলল, নমিতার সাথে সে আর কখনো কথা বলবে না।
কাজ: ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করো: এরকম পরিস্থিতি তোমার নিজের হলে তুমি কী করতে তা তোমার খাতায় লিখ। |
একদিন ক্লাসে শিক্ষক দলীয় আলোচনা দিলেন। দলীয় আলোচনায় যাবার আগে সাগর তার হাতঘড়িটা খুলে টেবিলের উপর রেখেছিল। দলীয় আলোচনার জন্য সে অন্য এক জায়গায় বসেছিল। তার দল থেকে নিজের জায়গায় এসে সে ঘড়িটা আর খুঁজে পেল না। সে সবাইকে জিজ্ঞেস করল কিন্তু কেউই নিয়েছে বলে স্বীকার করল না। তাতে সাগরের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। পরদিন স্কুলে আসার আগে দ্বীপ সাগরের বাড়িতে গেল। সে সাগরের কাছে স্বীকার করল যে সে-ই ঘড়িটা নিয়েছিল। এই বলে সে ঘড়িটা ফেরত দিল আর খুব অনুতপ্ত চিত্তে ক্ষমা চাইল। সাগর খুব খুশি হয়ে বলল, "ভাই, তোমাকে আমি অবশ্যই ক্ষমা করি কারণ তুমি সাহস নিয়ে আমার কাছে এসে তোমার দোষ স্বীকার করেছ এবং ঘড়িটা ফেরত দিচ্ছ। আমি কথা দিচ্ছি, আমি সবই ভুলে যাব।" তাঁরা আবার বন্ধু হয়ে গেল।
কাজ: সাগরের স্থলে তুমি হলে তুমি কী করতে, প্রত্যেকে নিজ নিজ খাতায় লিখ ও উপস্থাপন করো। |
মুক্তিদাতা যীশু আমাদেরকে নিজের আদর্শ দিয়ে ক্ষমার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। এবার আমরা একটা শাস্ত্রাংশ শুনব। যীশু সমবেত লোকদেরকে বললেন: "তোমরা শুনেছ যে, প্রাচীনকালের মানুষদেরকে এই কথা বলা হয়েছিল: 'তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাসবে আর তোমার শত্রুকে ঘৃণা করবে।' কিন্তু আমি তোমাদের বলছি: 'তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবাস; যারা তোমাদের নির্যাতন করে, তাদের মঙ্গল প্রার্থনা করো' (মথি ৫:৪৩)।
যীশুকে তাঁর শত্রুরা ধরে এনে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, বিনা দোষে দোষী সাব্যস্ত করেছে, নিজেরই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এতেও যীশু কোনো কথা বলেননি। তাঁর মধ্যে প্রতিশোধের কোনো ভাব ছিল না। তিনি বৃহৎ এক ক্রুশ বহন করে কালভেরি পর্বতের দিকে এগিয়ে গেছেন। তাঁর মুখে থুথু দেওয়া হয়েছে; তাঁকে চড়, ঘুষি, লাথি ও চাবুক মারা হয়েছে। ক্রুশে তাঁকে পেরেক দ্বারা বিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে জল পান করতে চাইলে শত্রুরা তাঁকে সির্কা খেতে দিয়েছে। তবুও তিনি সব নীরবে সহ্য করেছেন। পিতার কাছে কাতর মিনতি জানিয়ে তিনি বলেছেন, "পিতা, ওদের ক্ষমা কর! ওরা যে কী করছে, ওরা তা জানে না!" (লুক ২৩:৩৪)।
কাজ: দলে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করো। ১। তুমি যদি কাউকে কোনোদিন ক্ষমা করে থাক তা দলে অন্যদের সাথে সহভাগিতা করো। ২। কারও বিরুদ্ধে তোমার অন্তরে চাপা ক্ষোভ, রাগ বা প্রতিশোধের মনোভাব থাকলে তা তুমি কীভাবে জয় করতে পার এবং সত্যি সত্যি ক্ষমা করে দিতে পার? ৩। প্রার্থনা তোমাকে কীভাবে ক্ষমা করতে শেখাতে পারে? ৪। যীশু তোমাকে কীভাবে ক্ষমা করতে শেখাতে পারেন? |
আমরা পাপ করলেও যদি অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাই তবে আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেন। ঈশ্বর যা একবার ক্ষমা করেন তা আর কখনো মনে আনেন না। আমরাও যখন কারো অপরাধ ক্ষমা করি তখন যেন আর তা মনে না-আনি।
পিতর এগিয়ে এসে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন: "প্রভু, আমার ভাই আমার প্রতি বারবার অন্যায় করলে তাকে আমায় কতবার ক্ষমা করতে হবে? সাত সাতবার?” যীশু উত্তর দিলেন: "আমি বলছি, সাতবার কেন, বরং সত্তরগুণ সাতবার" (মথি ১৮:২১-২২)।
"তোমরা একে অন্যের প্রতি সহৃদয় হও, হও কোমলপ্রাণ। পরস্পরকে তোমরা ক্ষমা করে নাও, যেমন খ্রিষ্টে তোমাদের আশ্রয় দিয়ে পরমেশ্বরও তোমাদের ক্ষমা করেছেন" (এফেসীয় ৪:৩২)।
উপরে যে দুটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছি তা আবার স্মরণ করি। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে উত্তর আগে দিয়েছিলাম তা আবার চিন্তা করি। যদি আমার মন্তব্য পরিবর্তন করতে চাই তা এখন করতে পারি।
কাজ: নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে দলে আলোচনা কর ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করো: ১। আমি যদি আন্নার স্থানে থাকতাম তবে নমিতার সাথে আমি কেমন আচরণ করতাম? ২। আন্না ও সাগর যদি সত্যিই অন্তর থেকে ক্ষমা করে থাকে তবে তাদের অন্তরে তখন কী রকম অনুভূতি হয়েছিল? |
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ক্ষমা করার ফল সবসময়ই ইতিবাচক এবং ক্ষমা না করার ফল সব সময়ই নেতিবাচক। প্রথমে আমরা দেখি ক্ষমা করার সুফলগুলো।
কারো বিরুদ্ধে আক্রোশের মনোভাব থাকলে তা ক্ষমা করে দিলে অন্তরে যেসব ভালো ফল পাওয়া যায় সেগুলো হলো:
১। অন্তরে শান্তি বিরাজ করে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
২। মনের দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ বা অশান্তি, বৈরী মনোভাব কমে যায়।
৩। অন্যদের জন্য সহানুভূতি ও উদারতার জন্ম হয়।
৪। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
৫। আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করা যায় অর্থাৎ ঈশ্বরের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়া সম্ভব হয়।
৬। রক্তচাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
৭। হতাশার ভাব কেটে যায়।
৮। কোনো রকম মাদকাসক্তির আশঙ্কা থাকে না।
৯। আদর্শবান মানুষ হিসেবে অন্যদের কাছে নিজেকে তুলে ধরা যায়।
১০। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
১১। জীবনের প্রতিটি মূহূর্তকে শান্তি ও আনন্দে ভরে তোলা যায়।
খুব ঘনিষ্ঠ বা যাকে আমরা খুব বিশ্বাস করি এরকম কেউ যদি আমাদেরকে কোনোভাবে আঘাত দেয় তবে নিশ্চয়ই আমরা খুব দুঃখ পাই ও রাগান্বিত হই। সেই রকম অনুভূতি যদি আমরা দিনের পর দিন মনের মধ্যে ধরে রাখি তবে আমাদের অন্তরে আক্রোশের মনোভাব বাসা বাঁধে।
১। আমরা তখন ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই আর বৈরী মনোভাব পোষণ করি।
২। আমরা যদি আমাদের নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে বেশি বাড়তে দেই তবে সেগুলো আমাদের ইতিবাচক অনুভূতিগুলোকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর তখন আমাদের মনে তিক্ততা ও অন্যায্যতা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৩। যদি আমরা ক্ষমা করতে না চাই তবে আমরা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই।
৪। ক্ষমা না করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই মূল্য দিতে হয়। পরস্পরের সাথে আমাদের সম্পর্কে রাগের ভাব এসে যায়।
৫। আমরা মনের মধ্যে অতীতকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ফলে বাস্তবের আনন্দগুলোকে আমরা ভোগ করতে পারি না।
৬। আমাদের মনে হতাশা কাজ করতে থাকে। তখন আমাদের কাছে জীবনটা নিরানন্দ ও অর্থহীন হয়ে পড়ে।
৭। আধ্যাত্মিক জীবন আমাদের আর আকর্ষণ করে না। আমরা স্বর্গের পথ হারিয়ে ফেলি।
৮। অন্যদের সাথেও আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। আমরা একাকী হয়ে যাই।
৯। সকল কাজে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায় ও সকলের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়।
কাজ: একটি পুনর্মিলন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। এতে করে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা দেওয়ার সুযোগ পাবে ও সকলেই ক্ষমার অভিজ্ঞতা বাস্তবে উপলব্ধি করতে পারবে। |
সহনশীলতা অর্থ হচ্ছে নির্মম বা বিরক্তিকর অনুভূতি দমন করার সক্ষমতা বা ইচ্ছা। সহনশীলতা দ্বারা শান্ত ও অটল অধ্যবসায়ও বোঝায়। সেই ব্যক্তিকেই আমরা সহনশীল বলি যিনি প্ররোচনা, উসকানি, বিরক্তি, দুর্ঘটনা, বিলম্ব, কষ্টকর পরিস্থিতি, দুর্ভোগ, ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি পরিস্থিতি সহ্য করতে পারেন। তিনি এগুলো সহ্য করতে পারেন সংযম ও ধৈর্য সহকারে।
আমরা জীবনে যা-কিছু করি প্রায় সবকিছুর জন্যই সহনশীলতা প্রয়োজন। আমরা প্রায়ই কোনো এক স্থানে রওনা দিয়ে যানজটে আটকা পড়ে যাই, ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে বা কোনো জায়গায় যাওয়ার টিকেট কাটার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। এসব স্থানে রাগারাগি বা চিৎকার করলেও কোনো লাভ হয় না। সেখানে সহনশীল মনোভাব নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো গতি থাকে না।
সাধু পল বলেন: "আমরা যা দেখতে পাই না, তার আশা যখন করি, তখন সহিষ্ণুতার সঙ্গেই তার জন্যে প্রতীক্ষা করে থাকি” (রোমীয় ৮:২৫)।
সাধু যাকোব বলেন: "মনে রেখো, যাঁরা নিষ্ঠাবান হয়ে থেকেছেন, তাঁদেরই আমরা ধন্য বলে থাকি। যোবের সেই নিষ্ঠতার কথা তোমরা তো শুনেছ; আর এ-ও দেখেছ যে, প্রভু এ ব্যাপারে শেষে কী করেছিলেন। তাঁর তো তা করারই কথা: প্রভু যে দয়াময়, করুণানিধান!" (যাকোব ৫:১১)।
সাধু যাকোব যোবের উদাহরণ দিয়েছেন। আমরা জানি যোব তাঁর সব সহায় সম্পত্তি, ছেলেমেয়ে, যত পশুসম্পদ, এমনকি তাঁর সব অর্থকড়িও হারিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও বন্ধুবান্ধবেরা এসে তাঁকে নানারকম অসৎ উপদেশ দিয়েছেন। এধরনের সমস্ত পরীক্ষায় যোব উত্তীর্ণ হয়েছেন কারণ তিনি ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে কোনোরকম পাপ করতে চাননি। যোবের গ্রন্থে বলা হয়েছে: "এত কিছু ঘটা সত্ত্বেও যোব এমন কিছুই করলেন না, যাতে পাপ হয়। ঈশ্বরের প্রতি নির্বোধের মতো কোনো অভিযোগও করলেন না তিনি" (যোব ১:২২)। যোবের স্ত্রী পরামর্শ দিয়েছিলেন, যোব যেন ঈশ্বরকে ত্যাগ করেন। তাই যোব স্ত্রীকে বলেছিলেন, "নির্বোধ মেয়েরা যেমন কথা বলে, তুমি তো সেইরকম কথা-ই বলছ। ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা যেমন সুখ গ্রহণ করে থাকি, তেমনি দুঃখও কি গ্রহণ করব না?" (যোব ২:১০)।
সাধু পিতর বলেন: "আর তাই তো তোমাদের মনে এত আনন্দ, যদিও এখন কিছুকালের জন্য তোমাদের নানা পরীক্ষায় দুঃখকষ্টও পেতে হচ্ছে, যাতে ঈশ্বরের ওপর তোমাদের বিশ্বাস যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়; এমন বিশ্বাস, সে তো নশ্বর স্বর্ণের চেয়ে অনেক মূল্যবান-যদিও স্বর্ণটা আগুনে যাচাই করা হয়! আর এমন বিশ্বাসই যীশু খ্রিষ্টের সেই মহা আত্মপ্রকাশের দিনে তোমাদের প্রশংসা, সম্মান ও মহিমার কারণ হয়ে দাঁড়াবে" (১পিতর
১:৬-৭)।
প্রবচন গ্রন্থে বলা হয়েছে: "অন্যায়ের প্রতিশোধ নেব, এমন কথা কখনো বলো না; তুমি বরং ঈশ্বরের ওপরেই আস্থা রাখো, তোমাকে বাঁচাবেন তিনি" (প্রবচন/হিতোপদেশ ২০:২২)।
সাধু পল বলেন: "সমস্ত নিষ্ঠা, সমস্ত আশ্বাসের উৎস স্বয়ং পরমেশ্বর তোমাদের এই বর প্রদান করুন, খ্রীষ্ট যীশুর আদর্শ অনুসারে তোমরা যেন পরস্পর একপ্রাণ হতে পার" (রোমীয় ১৫:৫)। তিনি আরও বলেন, "শুধু তাই নয়: আমরা তো আমাদের দুঃখ-দুর্ভোগ নিয়েও গর্ব করে থাকি; কেন না আমরা জানি যে, দুঃখ-দুর্ভোগ থেকে জাগে নিষ্ঠা আর নিষ্ঠা থেকে চারিত্রিক যোগ্যতা; আর চারিত্রিক যোগ্যতা থেকে অন্তরে জেগে ওঠে আশা"
(রোমীয় ৫:৩-৪)।
সাধু যাকোব বলেন: "শোন, ভাই, প্রভু যতদিন না-আসেন, ততদিন তোমরা বরং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা চাষির কথা একবার ভেবে দেখ, সে কেমন করে জমির মূল্যবান ফসলের প্রতীক্ষায় বসে থাকে, তার জন্যে কেমন ধৈর্য ধরেই সে অপেক্ষা করে, যতক্ষণ-না নেমে আসে প্রথম আর শেষ বর্ষার জল" (যাকোব ৫:৭)।
মানুষ হিসেবে আমাদের যত গুণ আছে তার মধ্যে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি মুহূর্তে এই সহনশীলতা গুণ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, "কেউ যদি আমার অনুগামী হতে চায়, তবে সে আত্মত্যাগ করুক এবং নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসরণ করুক" (মথি ১৬:২৪)। এর দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে একজন বিশ্বস্ত খ্রীষ্টভক্তের জীবনে নানারকম বিপদ আপদ, দুঃখযন্ত্রণা, অন্তর্জালা ইত্যাদি আসবেই। যীশুর নামে সেগুলো সহ্য করতেই হবে। এগুলো তার জীবনে আসবে কারণ সে যীশুকে ভালোবাসে।
সহনশীলতা আসে একটি ল্যাটিন শব্দ patiencia থেকে, যার অর্থ 'কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা'। অনেক কিছুই আছে যেগুলো আমরা চাই বা না-চাই, আমাদের সহ্য করতেই হয়। যেমন রান্না বসিয়ে অপেক্ষা করা, পড়াশুনার জন্য সময় দেওয়া, পরীক্ষায় লিখে ফলের জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করা, ক্ষেতে ফসল বুনে কয়েক মাস অপেক্ষা করা, রাস্তার যানজটে আটকে থাকা, টিকিট কাটার জন্য কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি। এগুলোর জন্য সময় প্রয়োজন হয়। তাড়াহুড়া করলে কাজ ঠিকমতো হয় না। এছাড়া, ভিড়ের রাস্তায় তাড়াতাড়ি হাঁটতে গিয়ে আমাদের সহনশীল হতে হয়। যখন আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হয় বলে বাসে বা রিকশায় উঠি আর বাসের ড্রাইভার বা রিকসাওয়ালা যদি দ্রুত না-চালায় তবে আমরা অনেক সময় অধৈর্য হয়ে যাই। এসময়ও আমাদের সহনশীল হতে হয়।
সমাজবদ্ধ মানুষ হিসেবে সহনশীলতার গুণটি চর্চা করে আমরা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারি, হতে পারি অনেকের কাছে অনুকরণীয়। পরিবারে, বিদ্যালয়ে, খেলার মাঠে বন্ধুদের সাথে আড্ডায়-সব জায়গাতে ও সব কাজে আমাদের সহনশীল হতে হবে।
সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের সময় সহনশীলতা দেখাতে হবে। অন্যের মতামতকে সম্মান জানাতে হবে। বিশেষভাবে রাস্তায় চলাচলের সময় অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার সময় আমাদের সংযত আচরণ করতে হবে, সহনশীল হতে হবে।
কখনো কখনো আমরা প্রার্থনা করে সাথে সাথে ফল চাই। তখন আমাদের মনে রাখতেই হয়, ঈশ্বর যখন চাইবেন তখন আমার চাওয়াটা পূরণ করবেন।
একটি প্রবাদবাক্য আমরা প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকি, "যে সহে, সে রহে।" প্রবাদবাক্যটিতে সহনশীলতার জয় যে সুনিশ্চিত তা বুঝানো হয়েছে। সহনশীলতা একটি অর্জনযোগ্য মানবিক গুণ। আমরা নিম্নলিখিতভাবে চেষ্টা করলে সহনশীলতা অর্জন করতে পারি:
ক) ঈশ্বরভক্ত মানুষ হিসেবে নিয়মিত প্রার্থনা করে ও ঈশ্বরের পরিচালনায় বিশ্বস্ত থেকে।
খ) দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা ঠিক রেখে নিয়মিত খাবার গ্রহণ ও পরিমিত বিশ্রাম নিয়ে।
গ) মনের মধ্যে কোনো ধরনের রাগ ও হিংসা পোষণ না করে।
ঘ) কোনো কাজে বা পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে তার ভারসাম্য বজায় রেখে মোকাবেলা করে।
ঙ) কাজে জয় পেলে যথাসাধ্য স্বাভাবিক আচরণ করে এবং পরাজিত হলে তা মেনে নিয়ে।
চ) মহামনীষীদের জীবন ও কাজ অনুসরণ করে।
ছ) কোনো বিরোধের কারণে সম্পর্কের অবনতি হলে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলে।
জ) সমাজে অবহেলিত ও গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করে এবং সবসময় তাদের পাশে থেকে।
ঝ) বিভিন্ন পাবলিক সার্ভিস ও প্রতিষ্ঠানে যেমন ব্যাংক থেকে সেবা নিতে বা ট্রেনে কিংবা বাসে টিকিট কাটার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিয়ে।
ঞ) জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসলে, কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হলে সরল ও নম্র মন নিয়ে তা গ্রহণ করে আমরা সহনশীলতা অর্জন করতে পারি।
'সবুরে মেওয়া ফলে' কথাটি প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপেক্ষা করা, ধৈর্য ধরা, সহনশীল হওয়া সবই বিজয়ী হওয়ার উপায়। আমরা জানি বর্তমান পৃথিবীতে নানা প্রতিকূলতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জীবনের যে-কোনো কাজে ও পরিস্থিতিতে সহনশীল থেকে তা মোকাবেলা করে জয়ী হয়ে জীবনকে সাজানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।
নিজ দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ বা ভালোবাসাকে দেশপ্রেম বলা হয়। দেশপ্রেমের সাথে জড়িত থাকে জাতীয়তাবোধ। প্রত্যেক দেশের মানুষের মধ্যেই দেশের প্রতি একটা আকর্ষণ থাকে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর 'বঙ্গভাষা' কবিতায় ভালোবাসার কথা অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন:
হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন:-
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!
অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ,
মজিনু বিফল তপে অবরণ্যে বরি;-
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন!
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে,
-"ওরে বাছা মাতৃ-কোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে।।
কপোতাক্ষ নদ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন বলেন:
সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!-
বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া-যন্ত্রধ্বনি) তব কলকলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
ইংরেজ কবি সামুয়েল জনসন বলেছেন দেশপ্রেম বলতে বোঝায় 'দুরাচারী ব্যক্তির সর্বশেষ আশ্রয়স্থল'। এর দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সব মানুষের এমনকি দুর্বৃত্ত বা দুরাচারী ধরনের ব্যক্তিরও একটা আশ্রয়স্থল দরকার। আর সেই আশ্রয়স্থল হলো তার মাতৃভূমি তার আপন দেশ।
মা-মাটি-মাতৃভূমি এই তিন 'ম' যে কোনো মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় শব্দ। এই তিনকে ভালোবাসাই হলো দেশপ্রেম। দেশের মাটির ফসল, ফলমূল মানুষের জীবন বাঁচায়, দেশের বন-বনানী ও প্রকৃতি পরম মমতায় উদারভাবে আমাদের প্রয়োজন মেটায়। তাইতো দেশের প্রতি আমাদের মনে মমতা সৃষ্টি হয়। দেশের প্রতি মমত্ববোধও দেশপ্রেম নিয়ে আমরা সব কাজ করব। তাই তো জাতীয় সংগীতে আমরা গেয়ে উঠি:
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
পবিত্র বাইবেলে দেশপ্রেম সম্পর্কে শিক্ষা
"যাঁদের হাতে রয়েছে শাসন করার অধিকার, সকলেই যেন তাঁদের অনুগত হয়ে থাকে, কেননা তেমন কর্তৃত্বের অধিকার মাত্রই আসে পরমেশ্বরের কাছ থেকে। যাঁদের হাতে কর্তৃত্বের দায়িত্ব রয়েছে, তাঁরা তাঁর কাছ থেকেই তা পেয়েছেন। আর তাই তো কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা যে করে, সে কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বর যা স্থির করে রেখেছেন, তারই বিরোধিতা করে। তেমন বিরোধিতা যারা করে, তারা নিজেরা নিজেদের ওপর শাস্তি ডেকে আনবেই। যাঁরা ভালো কাজ করে, তাদের তো শাসকদের ভয় পাবার কোনো কারণই থাকে না। ভয় পাবার কারণ থাকে বরং তাদেরই, যারা মন্দ কাজ করে। কর্তৃপক্ষের কাউকে তুমি ভয় পাবে না, তুমি কি তেমনটি চাও? বেশ তো, যা ভালো, তাই কর। তাহলে তুমি তো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রশংসাই পাবে। আসলে তাঁরা তো ঈশ্বরেরই নিয়োজিত সেবাকর্মী- তোমার মঙ্গল করার জন্যেই নিয়োজিত তাঁরা। কিন্তু তুমি যদি মন্দ কাজ কর, তাহলে তোমার ভয় পাবার কারণ অবশ্যই আছে। তাঁরা তো শুধু শুধু তলোয়ার সঙ্গে বয়ে নিয়ে বেড়ান না; তাঁরা তো ঈশ্বরের সেবক: যারা মন্দ কাজ করে, তাদের ওপর ঐশ ক্রোধের আঘাত হানার দায়িত্ব তাঁদেরই হাতে রয়েছে। সুতরাং তাঁদের প্রতি তোমাদের অনুগত হয়ে থাকতেই হবে-শুধুমাত্র ঐশ ক্রোধের আঘাতকে ভয় পাও বলেই নয়, বিবেককে মান্য কর বলেই" (রোমীয় ১৩:১-৫)।
এর মধ্য দিয়ে সাধু পল আমাদের কাছে বলতে চান যে আমরা যেন শাসনকর্তাদের ভালোবাসার মাধ্যমে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি। কারণ শাসকগণ ঈশ্বরেরই সেবক। কাজেই ভালোবাসা আছে বলে আমরা কোনো ভয় যেন না পাই। যারা মন্দ কাজ করে তাদের মধ্যে দেশের প্রতি ভালোবাসার অভাব আছে। তারা শাসকদেরও ভয় পায়।
সামসংগীত লেখক লিখেছেন:
ধন্য সেই জাতি, ঈশ্বর যার আপন প্রভু;
ধন্য সেই জনসমাজ, যাকে নিজেরই জাতি-রূপে তিনি করেছেন মনোনীত!
ঈশ্বর তো স্বর্গ থেকে তাকিয়ে দেখেন;
সব মানুষকে দেখতেই পান তিনি।
সুবিপুল রাজবাহিনী রাজাকে বাঁচাতে পারে না;
যোদ্ধার মহা বাহুশক্তিও সেই যোদ্ধাকে রক্ষা করতে পারে না।
যুদ্ধ-অশ্ব সম্বল করে জয়ের আশা তো বৃথা;
সেই অশ্বের যত তেজ থাক, কাউকে বাঁচাতে পারে না।
ঈশ্বরের দৃষ্টি কিন্তু নিয়ত তাদেরই প্রতি,
তাঁকে সম্ভ্রম করে যারা, তাঁরই কৃপা-প্রত্যাশী যারা।
তাদের তিনি তো মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করবেন,
প্রাণ বাঁচাবেন দুর্ভিক্ষের দিনে। (সাম ৩৩: ১২-২২)
এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, প্রত্যেক দেশের মানুষ যেন ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে। কারণ ঈশ্বরই তাদের লালনপালন ও রক্ষা করেন। ঈশ্বরের শক্তিতেই তাঁরা বিপদআপদ ও শত্রুদের কবল থেকে রক্ষা পায়।
সাধু পিতর তাঁর প্রথম ধর্মগ্রন্থে বলেন, "তোমরা কিন্তু এক মনোনীত বংশ, এক রাজকীয় যাজক-সমাজ, এক পবিত্র জাতি, একান্তভাবে পরমেশ্বরেরই আপন জাতি। তোমরা এজন্যেই মনোনীত, যাতে তোমাদের যিনি অন্ধকার থেকে তাঁর অপরূপ আলোকে আহ্বান করেছেন, তাঁরই সমস্ত মহাকীর্তির কথা তোমরা যেন প্রচার করতে পার। এককালে কোনো জাতিই ছিলে না তোমরা, কিন্তু আজ হয়ে উঠেছ স্বয়ং পরমেশ্বরেরই জাতি; এককালে তাঁর করুণার পাত্রও ছিলে না তোমরা কিন্তু আজ তোমরা, তাঁর করুণা পেয়েই গেছ” (১পিতর ২:৯-১০)।
সাধু পিতর আমাদের বলতে চান যে, আধ্যাত্মিকভাবে আমরা ঈশ্বরের আপন জাতি। যদি আমরা তাঁর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা বজায় রাখি, যদি তাঁর সব নিয়মকানুন পালন করে চলি তবেই আমরা তাঁর আপন জাতি।
১. তোমরা তোমাদের শত্রুদের _______ ।
২. যারা তোমাদের নির্যাতন করে, তাদের জন্য _______ প্রার্থনা করো।
৩. তোমরা একে অন্যের প্রতি ______ হও।
বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশের মিল করো।
বাম পাশ | ডান পাশ |
১. যারা মন্দ কাজ করে ২. ক্ষমার সুফল ৩. পরস্পরকে তোমরা ৪. যদি আমরা ক্ষমা করতে না-চাই ৫. সহনশীলতা একটি অর্জনযোগ্য |
|
১. 'পিতা, ওদের ক্ষমা করো! ওরা যে কী করছে, ওরা তা জানে না'-উক্তিটি কার?
ক. পিতরের
খ. স্টিফানের
গ. যোহনের
ঘ. যীশুর
২. কীভাবে সহনশীল হওয়া যায়?
ক. ধৈর্য ধরে
খ. ক্ষমা করে
গ. বিবেচনা করে
ঘ. সেবা করে
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
প্রফুল্ল বিদেশে থাকেন, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে গ্রামে সবসময়ই তার চোখে ভেসে ওঠে গ্রামের সবুজ ফসলের মাঠ, নদীর পানি ও পাখির কলরব। আবার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করলেও চমকে ওঠে। তিনি বিদেশে পরিবেশ বিষয়ক ডিগ্রি গ্রহণ করেন। তাই তিনি চিন্তা করেন গ্রামের পরিবেশকে কীভাবে রক্ষা করা যায়। তিনি গ্রামে ফিরে আসলেন এবং এ বিষয়ে সকলকে অনুপ্রাণিত করলেন। গ্রামের লোকেরা এ কাজে অনুপ্রাণিত হলো।
৩. প্রফুল্লের মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে?
ক. সহযোগিতা
খ. দেশপ্রেম
গ. সহনশীলতা
ঘ. আত্মসংযম
৪. প্রফুল্ল এ কাজের ফলে পেতে পারে না
i. প্রশংসা
ii. শান্তি
iii. ঐশশক্তি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iও ii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. নিলয়, অয়ন ও ঐশী সহপাঠী। একইসঙ্গে স্কুলে যায় ও খেলাধুলা করে। তিনজনই খুব বিশ্বাসী বন্ধু। একদিন ঐশীর কাছ থেকে অয়ন একটা বই ধার নিল। পরীক্ষার ঠিক আগের দিন ঐশী তার বইটা ফেরত চাইল। কিন্তু অয়ন বলল, 'কোনো প্রমাণ নেই যে আমি তোমার বই নিয়েছি।' ঐশী তার কথায় খুব আঘাত পেল। তার এই অস্বীকারের কথা ঐশী নিলয়কে জানাল। নিলয় রেগে গিয়ে অয়নকে মার দিল। অয়ন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বইটা নিয়ে এলো। ঐশীর সব কষ্ট ম্লান হয়ে গেল। কিন্তু নিলয় কিছুতেই অয়নকে সহ্য করতে পারল না।
ক. সহনশীলতা আমাদের কাজে কী আনে?
খ. ঈশ্বর কেন আমাদের পাপ ক্ষমা করেছেন?
গ. ঐশীর মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. নিলয়ের এ কাজের পরিণতি বিশ্লেষণ করো।
২. সুজন ও মৈত্রী এক বাসে করে স্কুলে যাচ্ছিল। ড্রাইভার নিয়মমাফিক গাড়ি চালাচ্ছিল। স্কুলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে এইজন্য খুব চিন্তা করছিল সুজন। সে বার বার ঘড়ি দেখছিল এবং বিরক্ত হচ্ছিল ড্রাইভারের ওপর। চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থেমে গেল। বাইরে কী হচ্ছে সেটা না বুঝে সুজন ও গাড়ির অন্য লোকেরা খুব বকা দিচ্ছিল ড্রাইভারকে। সবাই মিলে খুব খারাপ কথা বলতে লাগল। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে মৈত্রী বলে উঠল, 'সুজন কেন বকা দিচ্ছ ড্রাইভারকে। ওনারতো কোনো দোষ নেই। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যইতো তিনি বাস থামিয়েছেন। ধৈর্য ধরেন আপনারা, রাগ করবেন না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে নিয়ে যাবেন নিরাপদে।'
ক. দেশপ্রেম কী?
খ. আমরা কেন শাসকদের অনুগত থাকব?
গ. মৈত্রীর মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মৈত্রীর মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের চর্চার গুরুত্ব মূল্যায়ন করো।
সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন
১. দেশপ্রেম বলতে কী বোঝায়?
২. নিজেকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের মাঝে কী থাকতে হবে?
৩. সহনশীলতা বলতে কী বোঝায়?
বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. ক্ষমা করার ফলাফল ব্যাখ্যা করো।
২. সহনশীলতা অর্জনের উপায়সমূহ বর্ণনা করো।
৩. দেশপ্রেম সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা কী? বর্ণনা করো।
Read more