অনেক দিন আগের কথা। হস্তিনাপুরে বাস করতেন কর্ণ নামে একজন মহাশক্তিশালী বীর। তিনি দাতাকর্ণ নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন সূর্যদেব ও কুন্তীর পুত্র। তিনি জন্মেছিলেন একটি কবচ ও কুণ্ডল নিয়ে। এই কবচ কুণ্ডলের গুণে তিনি ছিলেন অপরাজেয়। ছোটবেলা থেকেই অস্ত্র ও ধনুর্বিদ্যা শিক্ষার প্রতি তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ। কর্ণ অস্ত্র শিক্ষার জন্য ভগবান পরশুরামের কাছে যান।
পরশুরাম ছিলেন অস্ত্র বিদ্যার গুরু। তিনি কর্ণকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করেন। গুরুর প্রতি ছিল কর্ণের গভীর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। তিনি গুরুগৃহে থেকেই অস্ত্র শিক্ষার বিভিন্ন কৌশল অনুশীলন করতে থাকেন। গুরুর প্রতিটি আদেশ তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে মেনে চলতেন। গুরুর আদেশেই তিনি কঠোর অধ্যবসায় ও নিরলস পরিশ্রম করে অস্ত্র ও ধনুর্বিদ্যা আয়ত্ত করেন।
এভাবে দীর্ঘ দিন কেটে যায়। একদিন গুরু পরশুরাম তাঁর শিষ্যদের অস্ত্র শিক্ষা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তিনি একটি প্রস্তরখণ্ডের ওপর বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্য এগিয়ে যান। এমন সময় শিষ্য কর্ণ গুরুদেবকে বলেন, গুরুদেব শক্ত প্রস্তরখণ্ডের ওপর বিশ্রাম নিতে আপনার কষ্ট হবে । গুরুদেব, দয়া করে আপনি আমার কোলে মাথা রেখে শান্তিতে বিশ্রাম করুন। এ কথা শুনে পরশুরাম বললেন, এতে আমার কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ এভাবে বিশ্রাম নেয়া আমার অভ্যাস আছে। কিন্তু কর্ণ গুরুকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করে তাঁকে রাজি করান। পরশুরাম শিষ্যের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। কর্ণ তখন গুরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এভাবে অনেকটা সময় কেটে যায়। হঠাৎ বনের ভিতর থেকে একটি বিষাক্ত কীট এসে কর্ণের হাঁটুতে কামড় দেয়। এই বিষাক্ত কীটের কামড়ে কর্ণের পা দিয়ে দরদর করে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁর পরিধানের কাপড়টি রক্তে ভিজে যায়। প্রচণ্ড কষ্ট পেলেও গুরুদেবের বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে তিনি দাঁতমুখ চেপে ব্যথা সহ্য করেন। এতটুকুও নড়াচড়া করেননি। গুরুজনের প্রতি কতটা ভক্তি ও শ্রদ্ধা থাকলে এতটা কষ্ট সহ্য করা যায়!
একটা বিষাক্ত কীটের কামড়ের যন্ত্রণা সহ্য করেও তিনি গুরুকে কিছু বুঝতে দেননি। গুরুদেবের ঘুমের বিঘ্ন ঘটুক এটা কর্ণ চাননি। গুরুদেবের প্রতি মহাবীর কর্ণের এই ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আমাদের কাছে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
আমরাও কর্ণের মতো হব। মা বাবা ও শিক্ষকসহ সকল গুরুজনকে শ্রদ্ধা করব। তাঁদের আদেশ মান্য করব। অর্জন করব গুরুজনে ভক্তির মতো নৈতিক গুণ।
আরও দেখুন...