গৃহ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি কতগুলো ধারাবাহিক স্তরের সমষ্টি। সকল কাজেই স্তরগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়। পারিবারিক বিভিন্ন সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ সহজিকরণের কৌশল জেনে এবং তা প্রয়োগ করে অর্থ, শক্তি ও সময়ের সদ্বব্যবহার করা যায়। গৃহসামগ্রী ক্রয়ের উপায় জানা থাকলে এবং ভোক্তা হিসেবে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে সঠিক সামগ্রী ক্রয় করা যায়। তাছাড়া শিল্পনীতি ও শিল্প উপাদান সম্পর্কে জেনে যথাযথভাবে কক্ষসজ্জা করে গৃহকে আকর্ষণীয় ও মনোরম করা যায়।
এই বিভাগ শেষে আমরা-
মানুষের জীবনে বিভিন্ন রকম লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে, এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করি। কাজগুলো করার জন্য আমরা বিভিন্ন রকম সম্পদ ব্যবহার করে থাকি। আমাদের চাহিদার তুলনায় সম্পদ সীমিত। আর তাই সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। পারিবারিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য আমাদের যে সম্পদ আছে, তার ব্যবহারে পরিকল্পনা, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন করাকে এক কথায় গৃহ ব্যবস্থাপনা বলে। তাই বলা যায় যে, গৃহ ব্যবস্থাপনা পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতগুলো কর্মপদ্ধতির সমষ্টি। আর এ পদ্ধতি কতগুলো ধারাবাহিক স্তর বা ধাপের সমন্বয়ে গঠিত, যা গৃহ ব্যবস্থাপনার স্তর হিসেবে পরিচিত। লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গৃহ ব্যবস্থাপনার স্তরগুলো চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
পরিকল্পনা গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রথম স্তর হলো পরিকল্পনা প্রণয়ন। যেকোনো কাজ করতে গেলে কাজটি কেন করা হবে, কীভাবে করা হবে ইত্যাদি সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা করার নাম পরিকল্পনা। পরিকল্পনাকে অনুসরণ করে পরবর্তী কাজগুলো করা হয়। সেজন্যই পরিকল্পনাকে যেকোনো কাজের মূল ভিত্তি বলা হয়। অন্যভাবেও বলা যায়, পরিকল্পনা হলো লক্ষ্য অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের পূর্বাভাস। লক্ষ্য অর্জন করার জন্য কী কাজ করা হবে, কেন করা প্রয়োজন, কে বা কারা এ কাজ করবে, কখন ও কীভাবে প্রতিটি কাজ করা হবে ইত্যাদি বিষয় পরিকল্পনার সময় মনে রাখতে হবে। পরিবারের সকল সদস্যর মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকলে পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হয়। সকলের সুবিধা-অসুবিধার দিকে লক্ষ রেখে পরিকল্পনা করতে হয় এবং এটা যেন সহজ সরল হয়, যাতে সবাই বুঝতে পারে। প্রয়োজনে পরিকল্পনায় কিছু রদবদল করার সুযোগও থাকতে হবে। পরিকল্পনাটা যেন বাস্তবমুখী হয় এবং সবার মিলিত প্রচেষ্টায় তা যেন কার্যকর করা যায়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হয়।
সংগঠন – পরিকল্পনার বিভিন্ন কাজের সংযোগসাধন করার নাম সংগঠন। গৃহ ব্যবস্থাপনার দ্বিতীয় এ স্তরে কোন কাজ কীভাবে করলে ভালো হবে, কোথায় করা হবে, কে বা কারা করবে, কোন কাজে কাকে নিয়োজিত করা হবে, কী কী সম্পদ ব্যবহার করা হবে এসব বিষয় ঠিক করা হয়। এক কথায় কাজ, কর্মী ও সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাকে সংগঠন বলে। কাজের প্রতি উৎসাহ, দক্ষতা, মনোযোগ থাকলে কাজের ফলাফল ভালো হয়। কোনো কাজের কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা যায় সংগঠন দ্বারা। সংগঠনস্তরে পরিকল্পনালব্ধ কাজের যুক্তিসংগত বিন্যাস করা হয়। সুতরাং বলা যায় যেকোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করাই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য।
নিয়ন্ত্রণ- গৃহীত পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ও সংগঠনের বিভিন্ন ধারা কার্যকর করে তোলাকে নিয়ন্ত্রণ বলে। গৃহ ব্যবস্থাপনার তৃতীয় এ স্তরটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনা যত ভালোই হোক, তা যদি বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে কখনই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। নিয়ন্ত্রণ স্তরটি কয়েকটি পর্যায়ে এগিয়ে চলে। প্রথম পর্যায়ে কাজে সক্রিয় হওয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ উদ্যোগ নিয়ে কাজটা শুরু করা। কী কাজ করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে তা জানা থাকলে কাজ শুরু করা সহজ হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজের অগ্রগতি লক্ষ করা হয়। অর্থাৎ কাজটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা। তৃতীয় পর্যায়ে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। কোনো সমস্যা দেখা দিলে গৃহীত পরিকল্পনায় কিছুটা রদবদল করে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই হলো খাপ খাওয়ানো।
মূল্যায়ন - গৃহ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ স্তরের নাম মূল্যায়ন। কাজটি সম্পন্ন হওয়ার পর এর ফলাফল যাচাই করাই মূল্যায়ন। কাজটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারল কি না তা মূল্যায়নের মাধ্যমে জানা যায়। মূল্যায়ন ছাড়া কাজের সফলতা বা ব্যর্থতা নিরূপণ করা যায় না। লক্ষ্য অর্জন হলে সফলতা আসে। এ সফলতা লাভের উপায় ভবিষ্যৎ কাজের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। আর লক্ষ্য অর্জন যদি ব্যর্থ হয়, তাহলেও ব্যর্থতার কারণ জেনে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম অনুযায়ী পরিবর্তন ও সংশোধন করে লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হয়। তাই গৃহ ব্যবস্থাপনা হলো কতকগুলো পরস্পর নির্ভরশীল ও গতিশীল পর্যায়ক্রমিক স্তরের সমষ্টি। আর এর প্রতিটি স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। সেজন্যই গৃহ ব্যবস্থাপনার কাঠামোটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে মূল বিষয়রূপে দেখানো হয়েছে।
কাজ ১- গৃহ ব্যবস্থাপনার স্তর অনুযায়ী একটি ক্লাসপার্টির আয়োজন করতে হলে তোমার কী করতে হবে তা লেখো। |
সম্পদের ধারণা - বাড়িঘর, জমিজমা, টাকাপয়সা, আসবাবপত্র, সরঞ্জাম ইত্যাদিকে সম্পদ হিসেবে আমরা সবাই জানি। এগুলো আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। তবে গৃহ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক স্তর থেকে আমরা জেনেছি যে, পরিবারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সম্পদ ব্যবহার করা হয়। আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করার জন্য বিভিন্ন রকম কাজ করতে হয়। আর এ কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য কতকগুলো জিনিসের উপর নির্ভর করতে হয়। এ জিনিসগুলোই হচ্ছে সম্পদ। সম্পদ দিয়ে পরিবারের বিভিন্ন রকম চাহিদা পূরণ করা যায়। অর্থাৎ সম্পদ হচ্ছে চাহিদা পূরণের হাতিয়ার।
মায়িশা ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। তাই সে নিয়মিত স্কুলে যায়। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সে অনেক বই পড়ে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করে। তার পরীক্ষার ফল সব সময় ভালো হয়। শিক্ষক এবং অভিভাবকগণ আশাবাদী যে, মায়িশা তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
মায়িশার লক্ষ্য অর্জনের পেছনে কাজ করছে তার মেধা, অধ্যাবসায় ও সময়জ্ঞান। এগুলো তার নিজস্ব গুণাবলি, যা তার এক ধরনের সম্পদ। আর তার শিক্ষার আয়োজন করতে ও উপকরণ জোগাতে তার পরিবার ব্যয় করছে টাকাপয়সা, সেগুলোও সম্পদ। সুতরাং যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করার জন্য বিভিন্ন রকম সম্পদ ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা যায়। আমাদের বাড়িঘর, জমিজমা, অর্থ (টাকাপয়সা), বিভিন্ন আসবাব ইত্যাদি প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো যেমন সম্পদ; আবার আমাদের বিভিন্ন গুণ যেমন – জ্ঞান, সামর্থ্য, বুদ্ধি, শক্তি ইত্যাদি ব্যবহার করে আমরা কাজ করি, সেগুলোও সম্পদ হিসেবে পরিচিত।
সম্পদের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে
১. সম্পদের উপযোগিতা সকল সম্পদেরই কমবেশি উপযোগিতা রয়েছে। অর্থাৎ সম্পদের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা আছে। তবে সম্পদভেদে এর তারতম্য দেখা যায়। যেমন- অর্থ বা টাকা সম্পদ দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যায়। তাই অর্থ বা টাকা সম্পদ।
২. সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পদের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো, সকল সম্পদই সীমিত। যেমন-একটা পরিবারের সীমিত আয় বা বাস করার জন্য সীমিত জায়গা ঐ পরিবারের সম্পদের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে।
৩. সম্পদের ব্যবহার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন সম্পদ একত্রে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটা কাজ করতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থ, সময়, শক্তি, দক্ষতা ইত্যাদি একাধিক সম্পদের প্রয়োজন হয়। সম্পদের যৌথ প্রয়োগের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়।
৪. সকল সম্পদই ক্ষমতাধীন সম্পদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটা কারও ক্ষমতাধীনে থাকতে
হবে। যদি কোনো জিনিস নিজের মালিকানাধীনে না থাকে বা একে যদি কোনো কাজে না লাগানো যায়, তা হলে তা সম্পদ নয়।
অর্থ, বাড়িঘর, জমিজমা, বাড়ির যাবতীয় আসবাবপত্র, ইত্যাদি সম্পদ যা হস্তান্তর করা যায়। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সামর্থ্য, দক্ষতা, সময়জ্ঞান ইত্যাদি সম্পদ যা কখনো হস্তান্তর করা যায় না। কারণ এগুলো মানুষের নিজস্ব গুণাবলি।
কিছু কিছু সম্পদ আছে যা বৃদ্ধি করার জন্য চর্চা বা অনুশীলনের প্রয়োজন। যেমন- জ্ঞান, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, শক্তি ইত্যাদি।
আয় বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় যেমন- চাকুরি, ব্যবসা ইত্যাদি করে অর্থসম্পদও বাড়ানো যায়।
কাজ ১- তোমার একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো এবং লক্ষ্য অর্জন করতে তুমি কী সম্পদ ব্যবহার করবে তার একটি তালিকা তৈরি করো। কাজ ২- সম্পদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের সম্পদগুলো চিহ্নিত করো। |
সম্পদ মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের হাতিয়ার। সম্পদ নানাভাবে মানুষের অধিকারে আসে। প্রত্যেক মানুষই কম বেশি বিভিন্নরকম সম্পদের অধিকারী। কিন্তু অনেক মানুষের তার সম্পদের ধরন ও পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক ধারনার অভাব রয়েছে। যার ফলে তারা তাদের অজানা সম্পদগুলো ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। গৃহ ব্যবস্থাপনায় আমরা যা কিছু লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করি তাই সম্পদ হিসেবে পরিচিত। সম্পদের শ্রেণিবিভাগের মাধ্যমে আমরা সবরকম সম্পদ সম্পর্কে জানতে পারি এবং আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জনে তার সঠিক ব্যবহার করতে পারি। গৃহ ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পদকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।
মানবীয় সম্পদ
একটি পরিবারে একাধিক সদস্য বসবাস করে। একটি পরিবারের সদস্যরা অনেক রকম গুণের অধিকারী। তাদের জ্ঞান, দক্ষতা, শক্তি, আগ্রহ, মনোভাব ইত্যাদি গুণগুলোকে মানবীয় সম্পদ বলা হয়। মানবীয় সম্পদগুলোকে বস্তুগত সম্পদের মতো দেখা বা স্পর্শ করা যায় না। এগুলো মানুষের অন্তর্নিহিত গুণ। পরিবারের সদস্যরা এই মানবীয় সম্পদগুলোর ব্যবহার করে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আমাদের এই মানবীয় সম্পদগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আমরা নিজেদের ও পরিবারের অনেক উন্নয়ন ঘটাতে পারি।
ফারহান মেধাবী ছাত্র। সে প্রায়ই তার মাকে ঘর গোছানো ও পরিষ্কার করার কাজে সাহায্য করে। কখনো কখনো রান্নার প্রস্তুতির কাজেও সহায়তা করে। মাকে সাহায্য করার ফারহানের এই মনোভাব ও আগ্রহকে নিঃসন্দেহে পরিবারের মানবীয় সম্পদ হিসেবে ধরা যায়। মানবীয় সম্পদগুলো পরস্পর নির্ভরশীল ও সম্পর্কযুক্ত। অনেক সময় দেখা যায় কারো কোনো বিশেষ কাজের দক্ষতা ও জ্ঞান আছে। কিন্তু কাজ করার মনোভাব বা আগ্রহ না থাকলে কাজটি কখনো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে না।
অমানবীয় বা বস্তুগত সম্পদ
বাড়িঘর, জমিজমা, অর্থ, গৃহের যাবতীয় সরঞ্জাম হতে শুরু করে আসবাব, সবই বস্তুগত সম্পদের মধ্যে পড়ে। সম্পদগুলো ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন রকম কাজ করি, যা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। বস্তুগত সম্পদের মধ্যে অর্থ অর্থাৎ টাকাপয়সা সবচেয়ে মূল্যবান ও কার্যকর সম্পদ। অর্থের বিনিময়ে আমরা অন্যান্য বস্তুগত সম্পদ সংগ্রহ করে থাকি।
পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানবীয় ও অমানবীয় বা বস্তুগত উভয় প্রকার সম্পদ ব্যবহার করা হয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে সম্পদগুলো যেন যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। তা না হলে সম্পদের অপচয় হবে। আর আমরাও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। পরিকল্পনা করে সম্পদ ব্যবহার করতে পারলে সীমিত সম্পদের মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।
মানবীয় ও অমানবীয় সম্পদের উদাহরণ
| মানবীয় সম্পদ |
| অমানবীয়/বস্তুগত সম্পদ |
সম্পদের নাম | সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হলো সময় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। | সম্পদের নাম | উদাহরণ |
সময় | যেকোনো বিষয়ের সঠিক তথ্য জানা | অর্থ | বেতন, মজুরী, সঞ্চয়, পুঁজি বিনিয়োগ, ব্যবসা হতে প্রাপ্ত টাকা পয়সা |
জ্ঞান | হাঁটা, চলা বা বিভিন্ন কাজ করার শক্তি | বস্তুসামগ্রী | গাড়ি, গৃহের আসবাব, সরঞ্জাম, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি। |
শক্তি | কোনো বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী | সামাজিক সুযোগ-সুবিধা | স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, লাইব্রেরি, পার্ক, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট ইত্যাদি। |
দক্ষতা | সকল ব্যক্তি, পরিবেশ, অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর মনোভাব, সহযোগিতার মনোভাব |
|
|
মনোভাব |
| জায়গা | বাড়িঘর, জমিজমা ইত্যাদি। |
কাজ ১- তোমার মানবীয় সম্পদগুলো চিহ্নিত করো। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেগুলো কীভাবে সহায়তা করছে? কাজ ২- তোমার পরিবারের সকল বস্তুগত সম্পদের তালিকা করো। |
অর্থ, সময়, শক্তি এ তিনটি মূলত প্রধান গৃহসম্পদ। প্রতিটি পরিবারে এসব সম্পদ কম বেশি-বিভিন্নরূপে রয়েছে। এ সম্পদগুলো ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জন করে থাকি। সম্পদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রতিটি সম্পদই সীমিত। এই সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পারিবারিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব হয়।
অর্থ- অর্থ পরিবারের একটি অন্যতম প্রধান বস্তুগত সম্পদ। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক চাহিদাগুলো রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হলে অর্থের প্রয়োজন। প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে এ অর্থ উপার্জন করে। চাকুরি, ব্যবসা, পুঁজি বিনিয়োগ বা যেকোনো পেশার মাধ্যমে পরিবার টাকা পয়সা আয় করে। অন্যান্য বস্তুগত সম্পদের মধ্যে অর্থের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। কারণ অর্থের ক্রয়ক্ষমতা আছে। অর্থের বিনিময়ে আমরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা সংগ্রহ করি। অর্থ দিয়েই পরিবারের সকল ব্যয়ভার মেটানো হয়।
অর্থ যে কাজগুলো করে-
বিনিময়ের মাধ্যম - অর্থ হলো জিনিস বিনিময়ের মাধ্যম। অর্থাৎ অর্থের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।
মূল্যের পরিমাপক- টাকার অঙ্কে আমরা জিনিসের দাম জানতে পারি।
ঋণ পরিশোধের মান ঋণের লেনদেন অর্থের মাধ্যমে হয়।
সঞ্চয়ের ভান্ডার ভবিষ্যতের জন্য আমরা অর্থ সঞ্চয় করতে পারি।
পারিবারিক জীবনে অর্থকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের চাহিদাগুলো সীমিত অর্থ দ্বারাও পূরণ করা সম্ভব। অর্থকে পরিকল্পনা করে ব্যয় করতে হয়। অর্থ ব্যয়ের জন্য পূর্ব পরিকল্পনাকে বাজেট বলে। সকলেরই বাজেট করে অর্থ ব্যয় করার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারব। আর অকারণে অর্থ ব্যয় করার বদাভ্যাস গড়ে উঠবে না। আমরা মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হতে শিখব।
সময় – মানবীয় সম্পদগুলোর মধ্যে সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সময় প্রকৃতির নিয়মে বয়ে চলে। তবে জন্মের পর থেকেই আমরা এ সম্পদের অধিকারী হয়ে যাই। সময় সবচেয়ে সীমিত সম্পদ এবং একে পরিমাপ করা খুবই সহজ। এর পরিমাণ সবার জন্য সমান। যেমন- সবার জন্যই চব্বিশ ঘন্টায় একদিন। কখনোই একে বাড়ানো যায় না। একে সঞ্চয়ও করা যায় না। তাই সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। অযথা সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সময়ের সঠিক পরিকল্পনা করে আমরা যদি কাজ করি, তাহলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারব এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
রূপম প্রতিদিন ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে। সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত পড়ালেখা করে। এগারটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে থাকে। বাসায় ফিরে বিকালে মাঠে খেলতে যায়। রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত আবার পড়ালেখা করে। রাত এগারটায় ঘুমিয়ে পড়ে। দৈনন্দিন অন্যান্য কাজ, বিশ্রাম সবই সে সময়মতো করে। এভাবে রূপমের মতো আমরা সবাই সময় তালিকা করে আমাদের প্রতিদিনের সব কাজ করতে পারি। তাহলে মূল্যবান সময় অবহেলায় নষ্ট হবে না। বরং সময়মতো সব কাজ করে, আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
শক্তি - শক্তি একটি মানবীয় সম্পদ। শক্তি ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন রকম কাজ করে লক্ষ্যে পৌঁছাই। এ সম্পদটা আমরা অর্জন করি। সবার শক্তি এক রকম নয়। প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখি কেউ শক্তি দিয়ে অনেক কাজ করতে পারে, আবার কেউ অল্পতেই শক্তি হারিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য সম্পদের মতো শক্তি ব্যবহারেও আমাদের যত্নবান হতে হয়। যেকোনো কাজ এমনভাবে করতে হবে, যাতে সে কাজে আমাদের কম শক্তি ব্যয় হয়। প্রতিদিন আমাদের শক্তি ব্যবহার করে অনেক কাজ করতে হয়। সুতরাং আমাদের কম শক্তি ব্যবহার করে বেশি কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য সম্পদের মতো শক্তিও সীমিত। তাই এই শক্তিকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হলে একটা কর্মতালিকা করতে হবে। যার মাধ্যমে শক্তির অপচয় রোধ করা যায়।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলু গ্রামে থাকে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দূর থেকে পানি আনে। এরপর ঘর, উঠোন ঝাড়ু দেয়, তারপর পুকুরে যেয়ে কাপড় ধুয়ে গোসল করে স্কুলে যায়। ক্লাসে সে প্রতিদিন ক্লান্তিতে ঝিমাতে থাকে। ফলে ক্লাসের পাঠে সে মনোযোগ দিতে পারে না।
পরপর অনেকগুলো কঠিন কাজ করার ফলে নীলুর শক্তি শেষ হয়ে যায়। ফলে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নীলুর মতো অবস্থায় না পড়তে হলে শক্তি ব্যবহারের উপায়গুলো জেনে রাখা দরকার।
কাজ ১- ছুটির দিনে তোমার সময় ও কাজের তালিকা তৈরি করো। ২- তোমার হাত খরচের টাকা থেকে কীভাবে সঞ্চয় করবে লেখো। |
আমরা জেনেছি সময় ও শক্তি হচ্ছে খুবই সীমিত দুটো সম্পদ। দুটোর মধ্যে সময় একেবারেই সীমিত, যা সবার জন্য সমান। সময় ও শক্তির উপযুক্ত ব্যবহার করে প্রতিদিন অনেক কাজ সহজে করা যায়।
কাজ সহজকরণ বলতে বোঝায়-
কাজ সহজিকরণের বিভিন্নরকম কৌশলগুলো আয়ত্ত করে ফেললে কাজগুলো সহজ হয়ে যায় এবং সময় ও শক্তির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়। গার্হস্থ্য অর্থনীতিবিদগণ সময় ও শক্তির সদ্ব্যবহার করে কাজ সহজ করার বিভিন্ন কৌশল হিসেবে পাঁচ ধরনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১। দেহের অবস্থান ও গতিতে পরিবর্তন কাজ করার সময় দেহের সঠিক অবস্থান ও সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখলে কম শক্তি ব্যয়ে বেশি কাজ করা যায়। যেকোনো কাজ করার সর্বোচ্চ ও স্বাভাবিক পরিসর সম্পর্কে ধারণা থাকলে কম শক্তি ব্যয়ে কাজটি সহজেই করা যায়। একথা মনে রেখে কাজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো হাতের নাগালের মধ্যে রাখা। কোনো কিছু কাটার সময় হাতের গতি ওপর থেকে নিচ দিকে থাকলে খুব সহজে কাজটা করা যায়।
২। কাজ করার স্থানের ও কাজের সরঞ্জামের পরিবর্তন- কাজের জন্য স্থান ও সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে কাজ সহজ করা যায়। প্রত্যেক কাজের একটা নির্দিষ্ট স্থান থাকে এবং সেখানে কাজটি করতে পারলে সময় ও শক্তির অপচয় রোধ করা যায়। যেমন- রান্নাঘরের পাশে খাবার ঘর থাকলে অথবা রান্নাঘরের একপাশে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে সময় ও শক্তি ব্যয় কমে যাবে। প্রত্যেক কাজের সরঞ্জামগুলো নির্ধারিত স্থানে রাখলে সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। বসার টুল, চেয়ার ও টেবিল ইত্যাদি সঠিক উচ্চতায় হলে আরামদায়ক অবস্থায় কাজ করা যায়। সামর্থ্য থাকলে বৈদ্যুতিক ইত্রি, ফিল্টার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি ব্যবহার করে সময় ও শক্তি বাঁচানো যায়।
৩। উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের পরিবর্তন কোনো কিছু উৎপাদন বা প্রস্তুত করার পদ্ধতির বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তন এনে কাজ সহজ করা যায়। যেমন-বাড়ি পরিষ্কার করার সময় বাড়ির প্রতিটি আলাদাভাবে ধোয়ামোছা না করে, প্রথমে সব ঘর ঝাড়ু দিয়ে এরপর ঘরগুলো মুছলে সময় ও শক্তি কম ব্যয় হয়। একইভাবে বুদ্ধিমান গৃহিণী চুলায় ভাত চড়িয়ে দিয়ে সেই সময়ে আরো কিছু কাজ করে নিতে পারেন।
৪। উৎপাদিত দ্রব্যে পরিবর্তন উৎপাদিত দ্রব্যে পরিবর্তন করে কাজ সহজ করা যায়। যেমন- সালাদ বানানোর সময় শসা বা টমেটো মিহিকুচি না করে টুকরা করে কাটলে সময় ও শক্তি কম খরচ হয়। বাজার থেকে কাটা মাছ, স্লাইস করা পাউরুটি কিনে আনা যায়।
৫। কাজে বিভিন্ন উপকরণের পরিবর্তন আজকাল গৃহের কাজ সহজ করার জন্য বিকল্প উপকরণ ব্যবহার
করা হয়। যেমন- জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকে ডিসপোজেবল প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করেন। এসব জিনিস একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়, ফলে ধোয়ামোছার জন্য সময় ও শক্তি ব্যয় হয় না। এভাবে বিভিন্ন রকম কৌশল অবলম্বন করে আমরা প্রতিদিনের কাজগুলো সহজভাবে করতে পারি। কাজ করার সবচেয়ে ভালো পন্থাটি বেছে নিলে অল্প সময় ও শক্তিতে অনেক কাজ করা সম্ভব।
কাজ ১- তোমার পরিবারের প্রতিদিনের বিভিন্নরকম কাজ সহজিকরণের কৌশলগুলো চার্টের মাধ্যমে দেখাও। কাজ ২- তুমি তোমার ঘরটি পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে যেসব সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করো তা উল্লেখ করো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১. কোন বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গৃহ ব্যবস্থাপনার স্তরগুলো চক্রাকারে আবর্তিত হয়?
ক. সংগঠন
খ. লক্ষ্য
গ. নিয়ন্ত্রণ
ঘ.পরিকল্পনা
২. গৃহ ব্যবস্থাপনার স্তরগুলোকে চক্রাকারে সাজালে নিয়ন্ত্রণের পর কোন স্তরটির স্থান-
ক. সংগঠন
খ. পরিকল্পনা
গ. মূল্যায়ন
ঘ. সিদ্ধান্ত
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং ৩ নং ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
সচেতন গৃহিণী মনিরা সব সময় কেনাকাটা করতে যাওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের কার কী প্রয়োজন তা জেনে নেন এবং সর্বোচ্চ কত টাকার মধ্যে প্রত্যেকের প্রয়োজন মেটানো যায় তা চিন্তা ভাবনা করেন।
৩. মনিরার অনুসৃত পদ্ধতিটিকে কী বলে?
ক. কর্মতালিকা
খ. বাজেট
খ. বাজেট
ঘ. দ্রব্যতালিকা
৪. মনিরা বেগমের অভ্যাসের কারণে তাঁর পরিবারে সদস্যদের-
i. অর্থের অপব্যবহার কমবে
ii. প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটবে
iii. সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন:
১. গ্রামে বসবাসকারী রহিমা তার স্বল্প আয়ে সংসারের যাবতীয় চাহিদা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পূরণ করতে চেষ্টা করেন। রান্নাঘর থেকে পানির চাপকল দূরে হওয়ায় তিনি পানি বালতিতে ভরে রাখেন। রান্নার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হাতের নাগালে মাটির তৈরি তাকে রাখেন। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রান্না শেষ করে তিনি বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যান।
ক. সম্পদ কী?
খ. সম্পদের সীমাবদ্ধতা বলতে কী বোঝায়?
গ. রান্নার পূর্বে রহিমার গৃহীত পদক্ষেপগুলো কাজ সহজ করার কোন কৌশলটির পরিচায়ক-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'রহিমা গৃহ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করেন' বক্তব্যের যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
২. রসুলপুর গ্রামের মাফুজার স্বপ্ন সফল নারী উদোক্তা হবেন। এ লক্ষ্যে সে তাঁর প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ যেমন-নকশিকাঁথা, চাদর ইত্যাদি তৈরি করে বিক্রি করেন। তাঁর কাজের দক্ষতা দেখে ঐ এলাকার মহিলা সংস্থা তাঁকে ঋণ প্রদান করে। মাফুজা ১০ জন নারীকে সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের নিয়ে "সেলাই ঘর" নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বর্তমানে রসুলপুর গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় মাফুজার কাজের প্রশংসা অনেক।
ক. গৃহ ব্যবস্থাপনা কী?
খ. মানবীয় সম্পদগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত-বুঝিয়ে লেখো।
গ. কোন সম্পদের প্রভাব মাফুজার মধ্যে লক্ষ করা যায়- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দুই রকম সম্পদের সমন্বয়ে মাফুজার লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হয়েছে- যুক্তিসহকারে উপস্থাপন করো।
পারিবারিক জীবনে বিভিন্ন রকম কাজ করার জন্য যেসব সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই গৃহসামগ্রী হিসেবে পরিচিত। এই সামগ্রীগুলো আমাদের অনেক কাজকে সহজ ও আরামদায়ক করে দেয়। উপযুক্তভাবে গৃহসামগ্রী নির্বাচন করে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমরা সময়, শক্তি বাঁচিয়ে অনেক কাজ করতে পারি। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। যেমন-
গৃহসামগ্রী ক্রয়ের নীতি- গৃহসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা না থাকলে, অনেক সময় সঠিক সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব হয় না। অর্থের বিনিময়ে সামগ্রীগুলো কেনা হয়। তাই সামগ্রী ক্রয়ের সময় যাতে অর্থের অপচয় না হয়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আর তাই গৃহসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব নীতি অনুসরণ করতে হবে তা হলো।
প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা- আমাদের অর্থসম্পদ সীমিত বলে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী একসাথে ক্রয় করতে পারি না। তাই প্রয়োজনের ক্রমানুসারে সামগ্রীর একটা তালিকা করে সেখান থেকে যে সামগ্রীটা বেশি জরুরি সেটা আগে ক্রয় করা। যেমন-কোনো পরিবারে একই সময় পানির জগ এবং ফুলদানির চাহিদা থাকলে প্রথমে জগ ও পরে ফুলদানি ক্রয় করতে হবে। বেশি প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো আগে কিনলে চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ হয়।
ক্রয় পরিকল্পনা-পরিকল্পনা ছাড়া গৃহসামগ্রী ক্রয় করলে বেশির ভাগ চাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। তাই সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা পরিকল্পনা করতে হবে। কোন সামগ্রী কখন, কোন কাজের জন্য, কোথা থেকে কেনা হবে, কেনার সামর্থ্য আছে কি না ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়। যেমন-শহরে চুলা কেনার সময় সংগতি থাকলে বড় পরিবারের জন্য দুই বা ততোধিক বার্নারের গ্যাস চুলা ক্রয় করলে, অল্প সময়ে বেশি রান্না করা যাবে। অন্যদিকে গ্রামে গ্যাসের চুলার চেয়ে মাটির চুলার জ্বালানি সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়।
গুণাগুণ যাচাই- সামগ্রী ক্রয়ের সময় তার গুণাগুণ যাচাই করে কেনা হলে তা লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। সামগ্রীর গুণ বিচারের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন-
১) সময় ও শক্তি বাঁচিয়ে কাজ করার জন্য পণ্য দ্রব্য নির্বাচন করা। অতিরিক্ত ভারী বা বড় আকৃতির সামগ্রীর চেয়ে হাল্কা সহজে নাড়াচাড়া করা যায়, সেগুলো বেশি উপযোগী কারণ এতে সময় ও শক্তি কম খরচ হয়।
২) মূল্য ও উপযোগিতা যাচাই করে সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। অনেক সময় দেশজ কাঁচামালে তৈরি কম মূল্যের সামগ্রী বিদেশি চাকচিক্যময় সামগ্রীর তুলনায় গুণে ও মানে ভালো হয়।
৩) গৃহসামগ্রীগুলো কাজের প্রকৃতি অনুসারে বিভিন্ন ধাতুর তৈরি হয়। বিভিন্ন ধাতুর বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, যত্ন, সংরক্ষণের উপায় জেনে সামগ্রী ক্রয় করা উচিত। রান্না করার সামগ্রীর মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি পাতিল সুবিধাজনক। আবার ভাজার জন্য লোহার কড়াই উপযোগী। তেমনি প্লেট, গ্লাস, চায়ের কাপ ইত্যাদি কাঁচের হলে তা বেশি গ্রহণীয়। তবে তা ব্যবহারে বেশি সতর্ক হতে হয়।
৪) প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের আগেই সেটা টেকসই কি না তা বিচার করতে হবে। কোনো সামগ্রীর স্থায়িত্ব অনেকাংশে নির্ভর করে তার গঠনপ্রণালী ও ধাতুর বৈশিষ্ট্যের উপর। যেমন-কেটলি, ফ্রাইপ্যান ইত্যাদির হাতগুলো কাঠ বা প্লাস্টিক দিয়ে জোড়া দেওয়া থাকে। তাই দ্রব্যটির জোড়ার অংশগুলো ঠিকভাবে লাগানো হয়েছে কি না তা দেখতে হয়।
বাজারমূল্য সম্পর্কে ধারণা- যেকোনো সামগ্রী কিনতে হলে তার মূল্য যাচাই করে অপেক্ষাকৃত সুলভ মূল্যে কেনার চেষ্টা করা উচিত। সেজন্য সামগ্রী কেনার সময় বিভিন্ন দোকান ঘুরে বাজার মূল্য যাচাই করে কিনলে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়।
কাজ ১- এক বছরে তোমার পড়ালেখার জন্য কী কী সামগ্রী দরকার হয় তার তালিকা তৈরি করো। কাজ ২- কোনো সামগ্রী ক্রয়ের সময় গুণাগুণ যাচাই করলে কী কী সুবিধা হয়, লেখো। |
তুমি যদি কোনো জিনিস ক্রয় করো, তাহলে তুমি ক্রেতা। আর সে জিনিসটা যদি তুমি ভোগ করো, তাহলে তুমি একই সাথে ক্রেতা ও ভোক্তা। চাহিদা পূরণের জন্য যেকোনো দ্রব্য বা জিনিস আমরা বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে থাকি। প্রায়ই দেখা যায় যে, ক্রেতা বা ভোক্তারা নানানভাবে বিক্রেতার দ্বারা প্রতারিত ও নাজেহাল হচ্ছে। শুধু বিক্রেতারাই নয়, উৎপাদনকারীরা খারাপ মানের দ্রব্য তৈরি করে আমাদের প্রতারণা করছে বা ঠকাচ্ছে ।
আমরা ভোক্তারা পণ্য বা দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করি-
অপরদিকে আমাদের মতো দেশে বেশিরভাগ বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীরা বেশি লাভ করার জন্য যেভাবে আমাদের প্রতারিত করছে-
একজন ভোক্তা হিসেবে আমরা যেন আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারি এবং কোনো অবস্থাতেই যেন বিক্রেতাদের দ্বারা প্রতারিত না হই, সে বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া দরকার। অর্থকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা যেন সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি পেতে পারি, সেজন্যই ভোক্তার অধিকারগুলো আমাদের জানতে হবে। পৃথিবীর সকল ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার জন্য সাতটি মৌলিক অধিকার রয়েছে, এগুলো হলো-
নিরাপত্তার অধিকার- ভোক্তাদের জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিপজ্জনক ও অনিষ্টকারী পণ্য যাতে উৎপাদন ও বাজারে বিক্রি না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর নিয়ম থাকতে হবে। ভেজাল খাবার, ভেজাল ওষুধে যেন আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে দেশে আইন ও তার প্রয়োগ থাকতে হবে।
জানার অধিকার- যে সব দ্রব্য ভোক্তা ক্রয় করে, সেগুলোর সঠিক মূল্য কত, গুণগত মান কেমন, কী উপাদান দ্বারা তৈরি, ব্যবহারের নিয়ম, মেয়াদকাল ইত্যাদি সম্পর্কে তার জানার অধিকার থাকবে। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রব্যের মোড়কের লেবেলে সব তথ্য থাকলে ভোক্তারা পণ্য যাচাই করে কিনতে পারে। ফলে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
অভিযোগ করার অধিকার- যদি কোনো দ্রব্য খারাপ মানের হয় তাহলে ভোক্তা উক্ত দ্রব্যের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভোক্তার অভিযোগ শুনে, সে অনুযায়ী দ্রব্যের মান উন্নয়নে সচেষ্ট হতে বাধ্য হবে।
ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার- কোনো দ্রব্য ব্যবহারে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা দ্রব্যের মান সঠিক না হলে বিক্রেতা তার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। এটা ভোক্তার একটা অন্যতম অধিকার। আজকাল অনেক বিক্রেতা ভোক্তাকে দ্রব্য ক্রয়ের ক্যাশমেমো দিতে চায় না। কিন্তু ভোক্তাদের সচেতনভাবে ক্যাশমেমো সংগ্রহ করতে হবে। যাতে প্রতারিত হলে বিক্রেতার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায়।
বাছাই করার অধিকার- বিভিন্ন বিকল্প দ্রব্য মধ্যে থেকে ভোক্তা তার পছন্দমতো সঠিক দ্রব্যটি বেছে নিতে পারবে। দ্রব্যের গুণগত মান যাচাই করার জন্য প্রয়োজনে পণ্যটি হাত দিয়ে ধরে, নেড়েচেড়ে পছন্দ করার সুযোগ ভোক্তার থাকবে।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকার- সব ভোক্তার সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। হাট-বাজার বা দোকানের পরিবেশ যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় এবং যাতে ভোক্তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে। ভোক্তার যাতায়াতের সব পরিবেশ যেন দূষণমুক্ত, কোলাহলমুক্ত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়, সে বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ভোক্তার শিক্ষালাভের অধিকার- ভোক্তা শিক্ষার অর্থ হলো সেই শিক্ষা যা ভোক্তাদের সঠিক দ্রব্যসামগ্রী বেছে
নিতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। উন্নত অনেক দেশে ভোক্তাদের শিক্ষালাভের জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা ইত্যাদির মাধ্যমে বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীদের প্রতারণা বা ভোক্তাকে ঠকানোর বিষয়টি জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা যায়। দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দ্রব্যের গুণ ও মানের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করে তার ফলাফল ভোক্তাদের জানাতে পারে। তাহলে ভোক্তা দ্রব্যের ভালোমন্দ সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পারবে। এভাবে ভোক্তা শিক্ষালাভ করে সচেতন হয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
কাজ ১- ভোক্তার অধিকার নিয়ে একটা পোস্টার তৈরি করো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১. কোনটি রান্নার সামগ্রী?
ক. খুন্তি
খ. প্লেট
গ. চামচ
ঘ. গামলা
২. সামগ্রী ক্রয়ের সময় কোনটির উপর গুরুত্ব দিতে হয়?
ক. সামর্থ্য
খ. পরিকল্পনা
গ. চাহিদা
ঘ. উপযোগিতা
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৩ নং ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
চামেলী ডিনার সেট কেনার উদ্দেশ্যে প্রথমে একটি বড় দোকানে যান। পরে আরো কয়েকটি দোকান ঘুরে অবশেষে সে একটা দোকান থেকে একই জিনিস অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে আনে।
৩. ডিনার সেট কেনায় চামেলী কোন বিষয়টি বিবেচনা করেছেন?
ক. বাজারমূল্য
খ. ধাতুর বৈশিষ্ট্য
গ. দ্রব্য নির্বাচন
ঘ. স্থায়িত্ব যাচাই
৪. উদ্দীপকে উল্লিখিত উপায়ে পণ্যসামগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে
i. অর্থের সাশ্রয় হয়
ii. অধিক পণ্য কেনা সম্ভব হয়
iii. সময় ও শক্তি কম খরচ হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন :
১. মুবীনা ইলেকট্রনিক্সের দোকান থেকে ক্যাশমেমো ছাড়া একটি ইস্ত্রি কেনেন। বাসায় ফেরার পথে মেয়ের জন্য এক প্যাকেট জুস কেনেন। মেয়ে জুসটি খেতে গিয়ে খেয়াল করে সেটার মেয়াদ পার হয়ে গেছে। আবার অনেক চেষ্টা করেও মুবীনা তাঁর ইস্ত্রিটিকে চালু করতে না পেরে দোকানে নিয়ে গেলেন। দোকানদার ইস্ত্রিটি অন্য দোকান থেকে কেনা হয়েছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন।
ক. ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় কয়টি মৌলিক অধিকার রয়েছে?
খ. গৃহসামগ্রী কেনার আগে পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
গ. জুস ক্রয়ে মুবীনা তার কোন অধিকারটি প্রয়োগ করেননি- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'ভোক্তা হিসাবে মুবীনার মতো ক্রেতারা নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়'-বিশ্লেষণ করো।
গৃহকে মনোরম ও আকর্ষণীয় করার কাজটি শিল্পের একটি ক্ষেত্র। শিল্প হচ্ছে যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টা বা অনুভূতি যা মানুষকে আনন্দ দেয়। এই প্রচেষ্টা কোনো কিছু সৃষ্টির মধ্য দিয়ে হতে পারে, আবার আচরণের মধ্যে দিয়েও হতে পারে। মানুষের কল্যাণের জন্য সুন্দর উদ্দেশ্য নিয়ে শিল্পের সৃষ্টি হয়। গৃহকে সাজানোর কাজটি যখন এসব উদ্দেশ্য পূরণ করে তখন সেটা শিল্পের মর্যাদা পায়। এখন প্রশ্ন হলো, গৃহকে আমরা আকর্ষণীয় করব কীভাবে? এর জন্য গৃহ পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রয়োজন উপযুক্তভাবে গৃহকে সাজানো। এটি অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জা (Interior Decoration) নামে পরিচিত। গৃহকে মনোরম ও আকর্ষনীয় করে তুলতে হলে, যে বিষয়গুলো শেখা দরকার তা এই অধ্যায়ে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো-
রং (Colour) আমাদের চারপাশে নানা ধরনের রঙের ব্যবহার দেখা যায়। রং দেখার জন্য আলোর প্রয়োজন হয়। রংকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা হয়।
১. প্রাথমিক রং (Primary Colour)- যে রং অন্য কোনো কোনো রং থেকে তৈরি করা যায় না, সেগুলোই প্রাথমিক রং। লাল, নীল, হলুদ হলো প্রাথমিক রং। | ![]() |
২. মাধ্যমিক রং (Secondary Colour)- একই পরিমাণ দুটি প্রাথমিক রং মেশানো হলে যে রঙের সৃষ্টি তাই মাধ্যমিক রং। মাধ্যমিক রংগুলো হলো- ⅰ) লাল + হলুদ = কমলা ii) হলুদ নীল সবুজ iii) নীল + লাল = বেগুনি | ![]() |
৩. সংমিশ্রিত রং (Tertiary Colour)- সমান পরিমাণ একটি প্রাথমিক রং এবং একটি মাধ্যমিক ,রঙের মিশ্রণে সংমিশ্রিত রং তৈরি করা যায়।
i) লাল+কমলা = লালচে কমলা
ii) কমলা হলুদ হলদে কমলা
iii) হলুদ + সবুজ হলদে সবুজ
iv) সবুজ + নীল = নীলচে সবুজ
v) নীল + বেগুনি = নীলচে বেগুনি
vi) বেগুনি + লাল লালচে বেগুনি
বর্ণচক্র ১২টি রং চক্রাকারে সাজিয়ে বর্ণচক্র তৈরি করা হয়। বর্ণচক্র দিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, সংমিশ্রিত রঙের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট বোঝা যায়। এ থেকে খুব সহজেই গৃহের আসবাবপত্রের রং, গৃহসজ্জার অন্যান্য উপকরণর রং নির্বাচন করা যায়।
রঙের বিভিন্ন প্রভাব- একেক ধরনের রং আমাদের মনে একেক ধরনের অনুভূতি জাগায়।
উষ্ণ রং - বর্ণচক্রের উজ্জ্বল রংগুলোকে গরম বা উষ্ণ রং বলা হয়। যেমন-লাল, হলুদ, কমলা।
শীতল রং- বর্ণচক্রের হালকা রংগুলোকে ঠান্ডা বা শীতল রং বলা হয়। যেমন- নীল, নীলচে সবুজ, সবুজ।
গৃহসজ্জাকে আকর্ষণীয় করতে খুব সতর্কতা ও যত্নের সাথে রং নির্বাচনের প্রয়োজন হয়।
কাজ ১- তোমরা হাতেকলমে রং মিশিয়ে বর্ণচক্রের জন্য রং তৈরি করো এবং বর্ণচক্র আঁকো। |
রেখা, আকার ও জমিন
রেখা (Line)
রেখা একটি অন্যতম শিল্প উপাদান। কোনো গতিশীল বিন্দুকে রেখা বলা হয়। রেখা সরু ও মোটা হতে পারে, আবার যেকোনো দৈর্ঘ্যের হতে পারে।
উপরের ছবিগুলোতে বিভিন্ন রকম রেখা দিয়ে নকশা তৈরি করা হয়েছে। এই নকশাগুলো কি তোমার কাছে একইরকম আবেদন সৃষ্টি করছে? এই নকশাগুলো প্রতিটিই পৃথক পৃথক ভাব উপস্থাপন করছে। আঁকাবাঁকা রেখা দিয়ে নকশাটিতে নতুনত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। লম্ব রেখা আপাত দৃষ্টিতে উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আড়াআড়ি রেখা দিয়ে জায়গাটিকে আরও প্রশস্ত বা মোটা মনে হচ্ছে। কৌণিক রেখায় নকশাটির অতিরিক্ত সৌন্দর্য ও নতুনত্ব ফুটে উঠেছে। জিগজ্যাগ রেখা অন্যান্য রেখার চেয়ে বেশি গতিশীল ও বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম। গৃহকে আকর্ষণীয় করে সাজাতে রেখার এসব বৈশিষ্ট্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
আকার (Form)
কোনো কিছুর সামগ্রিক গঠনকে আকার বলে। আকার যদি ঠিক না থাকে তবে পুরো শিল্পটিই দেখতে অসুন্দর হয়ে যায়। দুই ধরনের আকার আছে। যথা:
১) মুক্ত আকার- জ্যামিতিক আকার ছাড়া সব ধরনের আকার মুক্ত আকার। যেমন- গাছের আকার, ফুলের আকার।
২) জ্যামিতিক আকার- বৃত্ত, চর্তুভুজ, ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি।
কোনো বস্তুকে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য আকার তৈরির প্রয়োজন হয়। যেমন-কাঠকে কেটে জোড়া দিয়ে বসার জন্য চেয়ারের আকার ও কাঠামো তৈরি হয়। বস্তু যদি সঠিক আকারের হয়, তবে তা দিয়ে কাজ করা সহজ হয়। যেমন-চেয়ারের আকার ঠিক না হলে বসে আরাম পাওয়া যায় না। বিভিন্ন আকার ব্যবহার করে নকশায় বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা যায়। যেমন- খাবার টেবিলের আকার কখনো চারকোনা, কখনো গোল, আবার কখনো ডিম্বাকৃতি হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জায় পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন ও রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার আকার নির্বাচন করা হয়।
কাজ ১- বিভিন্ন ধরনের রেখা ব্যবহার করে পাঁচটি নকশা আঁকো। কাজ ২- জ্যামিতিক আকার ও মুক্ত আকার দিয়ে দুটি নকশা আঁকো। |
জমিন (Texture)
সকল বস্তুর উপরিভাগের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন- মাটির দেয়াল, টাইলস-এর মেঝে, আসবাবপত্র ও কার্পেটের উপরিভাগ। এদের মধ্যে কোনোটি খসখসে, কোনোটি চকচকে মসৃণ, আবার কোনোটি উঁচু নিচু হয়ে থাকে। বস্তুর উপরিভাগের বৈশিষ্ট্যই জমিন। চোখে দেখে এবং স্পর্শ করে জমিনের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়। জমিন শিল্প সৃষ্টির অন্যতম একটি উপাদান। গরম ও ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জমিন বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন- ভারী ও মোটা জমিনের পর্দা ও কার্পেট শীতকালে ঘরকে গরম রাখে। আবার গ্রীষ্মে হালকা ও পাতলা জমিনের পর্দা ঘরে ঠান্ডার অনুভূতি দেয়। বিভিন্ন ঘরে খোদাই বা নকশা করা আসবাবপত্র বা উঁচু ও নিচু জমিনের গৃহসজ্জার উপকরণ গৃহকে যেমন- আকর্ষণীয় করতে পারে, আবার চকচকে মসৃণ জমিনের মেঝে, জানালার কাচ, পর্দার কাপড় দিয়েও গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জার সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বাড়ানো যায়।
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জমিন
কাজ ৩- পাঁচ ধরনের উপকরণের নাম লেখো যাদের জমিন আলাদা। |
একটি চেয়ার তৈরি করার কথা চিন্তা করা যাক। চেয়ারের পায়ের উচ্চতা যদি ৪৬ সেন্টিমিটার হয় তবে হেলান দেওয়ার অংশ কতটুকু উঁচু হলে বসতে আরাম হবে ও দেখতে সুন্দর লাগবে? চেয়ারের হাতলের নকশার সাথে কি পায়ের নকশার মিল থাকবে? মধ্যবিন্দু থেকে দুই হাতলের দূরত্ব সমান হতে হবে। চেয়ারটিতে কি এমন নকশা দেওয়া যায় যে সবার দৃষ্টি প্রথমে সেখানে যাবে? একই রকমের ছয়টি চেয়ার ব্যবহারে খাবার ঘরের সৌন্দর্য কতটুকু বাড়বে?
এসব মাথায় রেখে যদি কোনো সামগ্রী তৈরি হয় তবে অবশ্যই তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাবে। চেয়ারটি তৈরি করতে যেসব বিষয় লক্ষ করার কথা ভাবা হয়েছে সেগুলো যেকোনো শিল্প সৃষ্টিতেই প্রয়োজন। তাই এভাবে বলা যায়, শিল্প সৃষ্টির জন্য যে নীতিগুলো অনুসরণ করার দরকার হয় সেগুলোই শিল্পনীতি।
শিল্পনীতিগুলো হলো- ক) সমানুপাত (Proportion) খ) ভারসাম্য (Balance) গ) মিল (Harmony) ঘ) ছন্দ (Rythm) ও ৬) প্রাধান্য (Emphasis)
ক) সমানুপাত-সৃষ্টিকে আকর্ষণীয় ও মজবুত করার জন্য এই নীতি অনুসরণ করা হয়। একটি অংশের সাথে আরেকটি অংশের আকার আকৃতি ও অনুপাতের সামঞ্জস্য থাকাই সমানুপাত। এটি অনুধাবনের ব্যাপার। তখন কোনো কিছু আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, যখন কোনো বৈশিষ্ট্যের আধিক্য থাকে না আবার স্বল্পতাও থাকে না, তখনই অনুপাত ঠিক আছে বলা হয়।
খ) ভারসাম্য-স্কুলে খেলার মাঠে বা পার্কে আমরা ঢেঁকিতে চড়ে খেলি। বসার পর ঢেঁকির দুদিকে যদি সমান ওজন না হয় তাহলে ঢেঁকি খেলা সম্ভব হয় না। আবার একদিকে বেশি ভারী হলে অন্যদিকে হাল্কা ওজনের দুজন বসেও খেলাটা চালিয়ে নেওয়া যায়। এটিই ভারসাম্যের নীতি। কোনো মধ্যবিন্দুর উভয় দিকে সমান দূরত্বে একই আকার আয়তনের বস্তু স্থাপন করে ভারসাম্য রাখা হয়।
গ) মিল-কোনো ঘরে প্রবেশ করলে যখন দেয়াল থেকে শুরু করে মেঝে, আসবাবপত্র, পর্দা, আলো ইত্যাদি সবকিছুর মধ্যে একটা সম্পর্ক ফুটে ওঠে, দেখতে কোনো রকম অসমন্বয় লাগে না, তখন বুঝতে হবে ঘর সাজানোতে মিল রাখা হয়েছে। এটা হতে পারে একটি জিনিসের বিভিন্ন অংশের মিল। আবার জিনিসটির সাথে অন্যান্য সকল উপকরণের মিল।
ঘ) ছন্দ-এটি একটি আকর্ষণীয় গতিশীল অবস্থা। কোনো শিল্প দেখার সময় চোখ কোনো কিছুতে যেন বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। কোনো কিছু পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে ছন্দের সৃষ্টি হয়। শিল্পকে প্রাণবন্ত ও চলমান করতে ছন্দের দরকার হয়।
ঙ) প্রাধান্য-শিল্প তৈরির সময় কোনো একটি অংশকে অন্য অংশের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা এমনভাবে তৈরি হয় যেন একটি বিশেষ অংশের উপর আগে দৃষ্টি পড়ে। যেমন ঘরে ঢুকলে কোথাও ফুল সাজানো থাকলে সেটা আগে চোখে পড়ে। আবার ফুল সাজানোর সময় ছোট ছোট ফুলের সাথে বড় একটি গাঢ় রঙের ফুল দিয়েও প্রাধান্য সৃষ্টি করা যায়।
সৃজনশীল চিন্তাধারার কলাকৌশলপূর্ণ প্রকাশ হলো শিল্প। শিল্প মানুষকে আনন্দ দেয়, আকর্ষণ করে। শিল্প সৃষ্টির দক্ষতা একটি বিরাট সম্পদ যা আমাদের প্রত্যেকের মাঝে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সঠিক উপায় না জানার কারণে অনেক সময় তা কাজে লাগানো যায় না। সঠিক উপায় জেনে, মনের সৃজনশীল চিন্তাধারা কাজে লাগিয়ে যে কেউ কোনো কাজকে সুন্দর ও আনন্দদায়ক করতে পারে। তবেই শিল্প সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থকতা লাভ করে।
কাজ ১- পাঁচটি শিল্প অনুসরণ করে পাঁচ ধরনের ছবি আঁকো। শিল্পনীতি অনুসারে ছবিগুলোর ক্যাপশন লেখো। |
গৃহে আমরা নানা ধরনের আসবাবপত্র ব্যবহার করি। খুব প্রয়োজনীয় কিছু আসবাব যা প্রায় সব বাড়িতেই থাকে সেগুলো হলো খাট, আলমারি, টেবিল, চেয়ার, সোফা, আলনা, ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদি। গৃহের আসবাব যথাস্থানে সংস্থাপনের উপর গৃহ পরিবেশের আরাম ও সৌন্দর্য অনেকখানি নির্ভর করে।
আসবাবপত্র যথাস্থানে সংস্থাপন করা হলে আমাদের কাজ করা সহজ হয়। সময় ও শক্তির অপচয় হয় না, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি কম হয়।
এসো আমরা জেনে নেই আসবাবপত্র যথাস্থানে সংস্থাপনের জন্য কী কী বিষয় লক্ষ রাখতে হয়-
বহুমুখী আসবাব দিয়ে একাধিক প্রয়োজন মেটানো যায়
কাজ ১- আসবাব সংস্থাপনে সচরাচর যে ত্রুটিগুলো চোখে পড়ে তার তালিকা করো। কাজ ২- আসবাব সংস্থাপনে তুমি কোন কোন বিষয় বিবেচনা করবে? গুরুত্ব অনুসারে সাজাও। |
আসবাবপত্র ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে আমরা ঘর সাজিয়ে থাকি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দরজা ও জানালার পর্দা, কার্পেট, দেয়ালচিত্র, আলো এবং ফুলের বিন্যাস।
দরজা ও জানালার পর্দা
গৃহে দরজা ও জানালার পর্দার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রথমত, পর্দার ব্যবহার আমাদের আব্রু রক্ষা করে। বিশেষ করে পর্দার ব্যবহারে রাতের আলোতে ঘরের ভেতরের কর্মকাণ্ড, চলাফেরা বাইরে থেকে দেখা যায় না। কড়া রোদ, বাইরের ধুলাবালি থেকে অনেক সময় ঘরকে ঢাকার প্রয়োজন হলেও পর্দা ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত রং, আকার, নকশার পর্দা নির্বাচন করতে পারলে ঘরের পরিবেশকে অনেক আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক করা সম্ভব।
পর্দা নির্বাচনে লক্ষণীয় বিষয়
ঘরের দেয়াল, মেঝে, ছাদ ও আসবাবপত্রের রঙের সাথে মিল রেখে পর্দার রং নির্বাচন করতে হয়। বর্তমানে ঘরের আকার ছোট হয় বলে হাল্কা রঙের পর্দা ব্যবহারে ঘরকে বড় দেখায়। হাল্কা রঙের পর্দা বিশ্রামের ঘরগুলোতে ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টি করে। বড় ছাপা, চেক, আড়াআড়ি রেখার পর্দা বড় আকারের ঘরে ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট আকারের ঘরে ছোট ছাপা, লম্বা রেখার পর্দা ব্যবহার করা ভালো। চেক, ছাপার পর্দা ছোট আকৃতির ঘরকে আরও ছোট করে দেয়।
পর্দার কাপড়ের জমিন হাল্কা বা ভারী উভয় ধরনের হতে পারে। এর জন্য কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক তন্তুর কাপড় নির্বাচন করা যেতে পারে। ভারী জমিনের পর্দা শীতকালে ঘর গরম রাখে। পর্দা বিভিন্ন নকশার হয়। সজ্জামূলক নকশার পর্দা আমরা বসার ঘরে ব্যবহার করি। জানালার পর্দা অনেক সময় জানালা জুড়ে না হয়ে নিচের অর্ধেক অংশে দেওয়া হয়। এতে বেশি আলো ও বাতাস পাওয়া যায়। একই ঘরে খাবার ও বসার ব্যবস্থা পৃথক করার জন্য পর্দা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পাটের বিভিন্ন দড়ি, রং-বেরঙের কাপড় ঝুলিয়ে পর্দার আবহ আনা যায়।
কার্পেট
আমাদের দেশে ঘরের মেঝে বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন- মাটির ও সিমেন্টের মেঝে, মোজাইক মেঝে, টাইলস মেঝে, কাঠের মেঝে ইত্যাদি। বর্তমানে টাইলস মেঝে বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন রং ও নকশায় তৈরি টাইলস মেঝে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে ঘরের পরিবেশকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করা যায়।
ঘরের সম্পূর্ণ মেঝেতে কার্পেট বিছানো যায়। আবার মেঝের কিছু অংশজুড়ে ছোট কার্পেট দেওয়া যেতে পারে। পুরাতন বাড়ির মেঝে কিংবা সাধারণ সিমেন্টের মেঝেতে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তবে কার্পেট দিয়ে সেটা ঢেকে রাখা যায়। কৃত্রিম তন্তুর কার্পেট যেমন- নাইলন, পলিস্টার এর রং ও উজ্জ্বলতার স্থায়িত্ব বেশি এবং দামে সস্তা হয়। এ ধরনের কার্পেটে ধুলাবালি কম জমে, সহজে পরিষ্কার করা যায়। প্রাকৃতিক তন্তুর কার্পেট (যেমন-উল, পাট, সুতি)-এর মধ্যে উলের কার্পেটে হাঁটতে আরাম এবং শিশুর জন্য কিছুটা নিরাপদ। কার্পেট নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। তা না হলে ধুলাবালিজনিত রোগ, যেমন- শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে।
দেয়ালচিত্র ও আলোক সজ্জা
দেয়ালচিত্র
কক্ষসজ্জার অন্যতম একটি উপকরণ হলো দেয়ালচিত্র। দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দেয়ালে নানা ধরনের পেইন্টিং এবং ছবি ঝোলানো হয়। দেয়ালচিত্র কোথায় টাঙানো হবে তার জন্য স্থান নির্বাচন এবং উপযুক্ত ছবি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তবে আরও কিছু লক্ষণীয় বিষয় হলো-
দেয়ালচিত্র ছাড়াও হাতে তৈরি নানা ধরনের শিল্প দিয়ে দেয়াল সাজানো যায়। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে নিজের হাতে তৈরি যেকোনো দেয়ালসজ্জা গভীর আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে পাট, ঝিনুক, পাখির পালক, শুকনা ডালপাতা, ফলের বীজ, ধানের শিষ ইত্যাদি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার কাপড়, সুতা, রং, ধাতবসামগ্রী, বোতাম, শব্দ তৈরি হয় এমন বস্তু দিয়েও দেয়ালসজ্জা তৈরি করা যায়। গৃহের যেকোনো সজ্জার মধ্যে দিয়ে দেশিয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতে পারলে তা সবার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য ও পছন্দের হয়।
কাজ ১- দেশীয় উপকরণ এবং ভাববস্তু (theme) ব্যবহার করে একটি দেয়ালসজ্জা তৈরি করো। |
আলোকসজ্জা ও আলোর সুষ্ঠু ব্যবহার আলো ছাড়া আমরা চলতে পারি না। আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য এই আলোর উৎস কী? সূর্য থেকে আমরা প্রাকৃতিক আলো পাই। রাতের বেলা প্রাকৃতিক আলো থাকে না। তখন কৃত্রিম আলো দিয়ে আমাদের চলতে হয়। তোমরা কি লক্ষ করেছ যে, রৌদ্রোজ্জ্বল বা মেঘলা দিনে আমাদের মন কেমন থাকে? রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কাজ করার ইচ্ছা জাগে, আমরা বাইরে বের হই। অপরদিকে মেঘলা দিনে মনে কিছুটা বিষণ্ণতা আসে, অলসভাবে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। এভাবে আলো আমাদের শরীর ও মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। গৃহে প্রাকৃতিক আলো আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়, উপযুক্ত আলোয় পড়াশোনায় মনোযোগ আসে, শীতকালে ঘরে আলো এলে ঘর গরম থাকে।
ঘরে প্রাকৃতিক আলো আসার ব্যবস্থা করা কাজের জন্য ভালো ও স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো ঘরে প্রবেশের জন্য আজকাল জানালা, দরজায় গ্লাস ব্যবহার করা হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের দেশে দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে আলোর প্রাপ্তি ও বায়ুপ্রবাহ বেশি হয়। শীতকাল ছাড়া বছরের প্রায় সব সময় দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে বায়ুপ্রবাহ হয়। তাই গৃহের দক্ষিণ ও পূর্বের জানালা খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কখনোই আসবাবপত্র দিয়ে আলো ও বাতাস বন্ধ করা যাবে না। জানালার আকার, সংখ্যা, অবস্থান ইত্যাদির ওপর ঘরে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ নির্ভর করে। এছাড়া পর্দার জমিন, রং, ডিজাইন বা নক্শার উপর কক্ষের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশ নির্ভর করে।
রাতে আমরা কৃত্রিম আলো ব্যবহার করি। প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। যেমন-রান্নাঘরে রান্নার স্থানে, পড়ার টেবিলের উপর উজ্জ্বল আলোর দরকার। বসার ঘরে মৃদু আলো ঘরকে আকর্ষণীয় করে তোলে। শোবার ঘরের আলো স্নিগ্ধ হতে হয়। অনেক সময় কৃত্রিম আলোর বাল্বের উপর শেড ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর রং ও নকশা নির্বাচনে যথেষ্ট সতর্ক হতে হয়। বিভিন্ন রং ও নকশার শেড ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, সুরুচির পরিচয় বহন করে।
কাজ ১- কক্ষে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের জন্য তুমি কী কী বিষয় লক্ষ রাখবে? তা লেখো। |
পুষ্পবিন্যাস
ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ কি খুঁজে পাওয়া যাবে? নিশ্চয়ই না। আমাদের পছন্দের এই ফুল ও পাতার বিন্যাস কক্ষ সজ্জার অন্যতম অংশ। ফুলদানিতে যদি ফুল ও পাতা থাকে, তবে ঘরের সৌন্দর্য শতগুণ বেড়ে যায়। বাড়িতে ফুল দিয়ে সাজানো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন অনুষ্ঠানের মান বৃদ্ধি করে, সদস্যদের সুরুচির পরিচয় দেয়। এছাড়া গৃহসজ্জায় আমরা নানা কারণে ফুলের বিন্যাস করি-
ফুল সাজানোর জন্য বিশেষ কিছু সরঞ্জামের দরকার হয়। যেমন- ফুলদানি বা ফুল সাজানোর পাত্র, কাঁচি, পিন হোল্ডার, পানি, চিকন তার ইত্যাদি।
ফুল সাজানোর সময় প্রথমেই উদ্দেশ্যের কথা ভাবতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ফুল সাজানোর পদ্ধতি আলাদা হয়ে থাকে যেমন- কোনো উৎসবে ফুল সাজানো এবং প্রতিদিনের ফুল সাজানো এক হয় না। সাধারণত প্রাচ্যরীতি এবং পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণ করে ফুল সাজানো হয়। প্রাচ্য রীতিতে ফুল সাজানো বলতে জাপানি পদ্ধতি অনুসরণ করাকে বোঝায়। জাপানিরা ফুল সাজানোতে খুব দক্ষ। তাদের ফুল সাজাবার পদ্ধতিকে ইকেবানা (IKEBANA) বলা হয়। ইকে অর্থ তাজা, বানা অর্থ ফুলকে বোঝায়। এই রীতিতে অল্পসংখ্যক ফুলের দরকার হয়। এই পদ্ধতিতে ফুলদানিতে তিনটি প্রধান ডাল থাকে। সবচেয়ে উঁচু ডালটি হলো স্বর্গ, দ্বিতীয় উচ্চতার ডালটি মানুষ এবং ছোট ডালটি পৃথিবীর প্রতীক হিসাবে ফুল সাজানো হয়।
প্রথম ডালটির উচ্চতা ফুলদানির ব্যাস ও উচ্চতার যোগফলের সমান। দ্বিতীয় ডালটি প্রথম ডালের ৩/৪ অংশ (৪ ভাগের ৩ ভাগ)। ছোট ডালটি দ্বিতীয় ডালের ১/২ অংশ (অর্ধেক)। প্রধান ডাল তিনটি ছাড়া আশপাশের ডাল, পাতা, ফুলকে ফিলার বলা হয়। পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে ফুল সাজানোতে অনেক ফুল ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে স্তূপাকারে ফুল সাজানো হয়। জাঁকজমকপূর্ণ ফুলদানিতে বিভিন্ন রঙের ফুল এক সাথে সাজানো হয়।
যে রীতিতেই আমরা ফুল সাজাই না কেন, আমাদের ফুল সাজানোর সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে-
তাজা ফুলের পরিবর্তে কাপড়, কাগজ ও প্লাস্টিকের ফুল দিয়েও ফুলদানি সাজানো যায়। এসব ফুল দিয়ে একবার ফুলদানি সাজালে তা অনেক দিন ধরে রাখা যায়। এতে সময় ও শক্তি বাঁচে। কিন্তু এসব ফুলের আবেদন তাজা ফুলের মতো হয় না। তাজা, টাটকা ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য আমাদেরকে বেশি আকৃষ্ট করে।
কাজ ১- শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ফুল সাজাও। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. নিচের কোনটি প্রাথমিক রং?
ক. কমলা
খ. লাল
গ. বেগুনি
ঘ. সবুজ
২. কোন রেখা অধিক বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম?
ক. জিগজ্যাগ রেখা
খ. কৌণিক রেখা
গ. লম্ব রেখা
ঘ. বক্ররেখা
৩. কাজে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য গৃহে প্রয়োজন-
i. দামি আসবাবপত্র
ii. সুসজ্জিত কক্ষ
iii. উপযুক্ত আলো বাতাস
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন :
১. সালেহা ও হালিমা একই আয়তনের ফ্ল্যাটে থাকেন। সালেহা তাঁর বসার ঘরে আকাশি রঙের পর্দা ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে হালিমা তাঁর বসার ঘরে লাল রঙের ফুলের ছাপার পর্দা ব্যবহার করেছেন এবং দরজার পাশে বড় আকারের একটি মাটির টব রেখেছেন। পাশের ফ্ল্যাটের মারিয়া একদিন সালেহার বাসায় বেড়ানো শেষে হালিমার বাসায় এসে বললেন, তোমার বসার ঘরটি একটু বড় হলে ভালো হতো।
ক. আলোর উৎস কী?
খ. অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জা বলতে কী বোঝায়?
গ. সালেহা গৃহসজ্জায় কোনটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. গৃহসজ্জায় হালিমার পারদর্শিতা বিশ্লেষণ করো