এ অধ্যায় শেষে আমরা-
যে সকল ছবি এঁকে আমরা আনন্দ পাব এখন সেসব মজার মজার ছবি তৈরি করতে শিখব। ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা সাধারণ নিয়মের আলোকে ফুল, পাতা, নকশা ইত্যাদি শিখেছি। তোমরা নিজেরাই ইচ্ছেমতো ভালোলাগা ছবিগুলো আঁকবে। আমরা ছোটোবেলা থেকে গণিত বা অংক কষতে গিয়ে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা ব্যবহার করে এসেছি। এখনও করছি এবং সারা জীবনই এ সংখ্যাগুলো আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। মজার ব্যাপার হলো এই সংখ্যাগুলো দিয়েও যে মজার ছবি তৈরি করা যায় তা কি ভেবেছি? এবার আমরা এই সংখ্যাগুলো দিয়ে কিছু মজার মজার ছবি তৈরি করে নিজেরা যেমন আনন্দ পাব তেমনি বাবা, মা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদেরও এঁকে দেখিয়ে অবাক করে দিব।
কাজ: সকলে ১ সংখ্যা দিয়ে তোমার নিজের মতো করে মজার অনুশীলন করে দেখাও। |
কাজ: সকলে ২,৩ সংখ্যা দিয়ে তোমার নিজের মতো করে মজার অনুশীলন করে দেখাও। |
কাজ: সকলে ৪ সংখ্যা দিয়ে তোমার নিজের মতো করে মজার অনুশীলন করে দেখাও। |
কাজ: ৫, ৬, ৭, ৮ সংখ্যা দিয়ে তোমার নিজের মতো করে মজার অনুশীলন করে দেখাও। |
কাজ: সকলে ৯, ০ সংখ্যা দিয়ে তোমার নিজের মতো করে মজার অনুশীলন করে দেখাও। |
ছবি আঁকার প্রাথমিক কিছু কথা
প্রতিদিন আমরা আমাদের চারপাশে যেসব জিনিস দেখি সেসব জিনিসের বাস্তবধর্মী ছবি আঁকার সময় তার আকারআকৃতির প্রতি খুবই সচেতন থাকতে হবে। কারণ এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পূর্ব পাঠে আকারআকৃতি সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে এসেছি।
পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার বেশিরভাগই বৃত্ত, চতুর্ভুজ কিংবা ত্রিভুজের মাঝে আবদ্ধ। বিশেষ করে বৃত্ত ও চতুর্ভুজের মাঝে সব বিন্দুকে একটা আকারে প্রাথমিকভাবে রূপদান করা যায়। বাস্তবধর্মী চিত্রাঙ্কনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আকার যতই বড়ো কিংবা ছোটো হোক না কেন, আকৃতি ঠিক রাখতেই হবে।
যেমন-
পূর্বেই বলেছি যে কোনো চিত্র অঙ্কন মানেই কতগুলো রেখার সমষ্টি, সেটা সরল, বাঁকা, বৃত্তাকার কিংবা যে কোনো ভাবেই হতে পারে। তাই অঙ্কনের ক্ষেত্রে প্রতিটি রেখাই সমান গুরুত্ব বহন করে।
নানা ধরনের রেখার সমন্বয়ে কতগুলো অনুশীলন দেখানো হলো-
এই সকল বিষয়সমূহ অঙ্কনের সময় যে বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে, তা হলো বিষয়বস্তু বা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, তার সুষমতা দেখার অনুপাত এবং তার যথার্থ স্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করতে হবে। এ সকস বিষয়সমূহ ঠিক রেখে আমরা যে কোনো বস্তু বা বিষয় অঙ্কন করি না কেন, তার একটা সুন্দর প্রকাশ অবশ্যই ফুটে উঠবে।
আমাদের চারদিকে আমরা যা কিছু দেখছি তার সবই প্রকৃতি। এই প্রকৃতির আছে বর্ণিল রূপ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতি ক্ষণে ক্ষণে এর রূপ পাল্টায়। সকালের নরম আলোয় প্রকৃতির যে রূপ, দুপুরের প্রখর আলোয় তা পাল্টে যায়। আবার সূর্যাস্তে সে রূপ হয় ভিন্ন অনুভবের-আর এ সব কিছুই ঘটে আলোছায়ার আবর্তনে। আবার ঋতুর বৈচিত্র্যতায়ও এর পরিবর্তন ঘটে নানারূপে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্তে নানা রূপে প্রকৃতি সাজে অপরূপ সৌন্দর্যে।
প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আমরা সবাই ভালোবাসি। গ্রামবাংলার নানান দৃশ্য, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। দূরের সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত, নদীমাতৃক বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য আমাদের প্রাণ ছুঁয়ে যায়। কখনোবা পরিপাটি শহরের রাস্তাঘাট, নীল আকাশ, নাগরিক সভ্যতা এই সবকিছু আমাদের মনে রেখাপাত করে। এইসব দৃশ্য অঙ্কনের পূর্বে তোমাকে গভীরভাবে বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ধর, তুমি কোথাও বেড়াতে গেলে- সেখানে শুধু মাঠের পর মাঠ, অনেক দূরে ছোটো ছোটো কুঁড়ে ঘর, আরও অনেক দূরে নদীতে কয়েকটি পালতোলা নৌকা, আকাশে কয়েকটি পাখি উড়ে যাচ্ছে, সামনের দিকে কয়েকটি তালগাছ। ছবিটি তোমার মনের মাঝে ধারণ করে নিয়ে এসে যখন বাসায় একটা ছোটো কাগজে আঁকতে বসবে, তখন পূর্বে যে ছবি আঁকার সাধারণ নিয়মগুলো জেনেছ, যেমন- আকার, আকৃতি, দূরত্ব, অনুপাত, আলোছায়া ইত্যাদির সংযোগে এর সাথে তোমার মনের মাধুরী দিয়ে আঁকবে, ছবিটি তখন তোমার কাছে আরও বেশি জীবন্ত হয়ে উঠবে। তাই কোনো কিছু আঁকার পূর্বে তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যত বেশি বাড়বে ছবিও তত বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে ।
এসব বিষয় খেয়াল রেখে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ছবি আঁকার অনুশীলন করবে।
নকশা
ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা নানা আকার যেমন-ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত ইত্যাদি দিয়ে নকশা অঙ্কনের কৌশল জেনেছি। আবার ফুল, লতাপাতা দিয়েও নানা প্রকারের নকশা অঙ্কনের অনুশীলন করেছি। এখন আমরা ওগুলোর সাথে আরও কিছু বিষয় যেমন পাখি, মাছের আকৃতি নিয়ে নিজেদের সৃজনশীল চিন্তা দিয়ে আরও সুন্দর সুন্দর নকশা আঁকব। যে কোনো নকশা অঙ্কনের পূর্বে, নকশায় যে সকল বিষয় ব্যবহার করব তার আকার ও আকৃতিগুলো আলাদা করে এঁকে পরে তা একটি নির্দিষ্ট মাপের মাঝে সাজালে সুন্দর নকশা তৈরি হবে।
নকশা হতে পারে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে। যেমন- শাড়ির পাড়, কামিজ বা পাঞ্জাবির গলার নকশা, টেবিল ক্লথ বা কুশনের জন্য, ফুলদানি, নকশি পাতিল বা অন্য যে কোনো জিনিসকে শিল্পরূপ দেওয়ার জন্য নকশার প্রয়োজন হয়।
কাজ: মাছ ও পাখির আকৃতি ব্যবহার করে ৬"x ৬" মাপে তোমার মনের মতো একটা নকশা এঁকে দেখাও। |
ব্যবহারিক
১. তোমার পছন্দমতো কোনো সংখ্যা দিয়ে মজার কোনো অনুশীলন করে দেখাও।
২. আকার-আকৃতির ভিন্নতা দেখিয়ে যেকোনো তিনটি বস্তু অঙ্কন করে দেখাও।
৩. তোমার প্রিয় ঋতুর একটি চিত্র পোস্টার রং অথবা জলরঙে আঁক।
৪. 2B এবং 4B পেনসিল ব্যবহার করে তোমার মনের মতো একটা পেনসিল স্কেচ করো।
৫. ৬"x ৪" পরিমাপে মাছ ও পাখির আকৃতি ব্যবহার করে একটা নকশা আঁক।
৬. জ্যামিতিক আকৃতি (বৃত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ) ব্যবহার করে ৫" x ৫" মাপে একটি নকশা আঁক।
৭. প্রাকৃতিক আকৃতি ব্যবহার করে ৩" ব্যাসের একটি বৃত্তাকার নকশা আঁক।
৮. অক্ষর ব্যবহার করে একটি নকশা অঙ্কন করো।
Read more