ছবি আঁকার বিভিন্ন মাধ্যম (চতুর্থ অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - চারু ও কারুকলা - | NCTB BOOK
42
42

ছবি আঁকার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। পেনসিল, কালি-কলম, জলরং, তেলরং, প্যাস্টেল রং, অ্যাক্রেলিক রংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছবি আঁকা যায়। এ অধ্যায়ে আমরা ছবি আঁকার মাধ্যম- পোস্টার রং, অ্যাক্রেলিক রং ও জলরং সম্পর্কে জানব।

এ অধ্যায় পড়া শেষ করলে আমরা-

  • পোস্টার রং এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারব।
  • অ্যাক্রেলিক রং এবং তার ব্যবহারবিধি বর্ণনা করতে পারব।
  • 'জলরং এবং তার প্রয়োগ পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব।
Content added By

পোস্টার রং (পাঠ ১)

137
137

ছবি আঁকার জন্য ছোটোদের কাছে প্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে পোস্টার রং। এটি মূলত পানি মাধ্যমের রং (water baised)। এই রং পানি দিয়ে মিশিয়ে আঁকতে হয়। জল রঙের তুলনায় পোস্টার রং ভারী ও মোটা। একে অস্বচ্ছ রং বলা যায়। কারণ হলো, একটির উপর অন্য একটি রঙের প্রলেপ দিলে আগের রংটি সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। আগের রঙের অস্তিত্ব হারিয়ে যায়। পোস্টার রং বিভিন্ন শেডে বা নানা রঙে কাচের শিশিতে পাওয়া যায়। ঘন পেস্টের আকারে শিশিতে সম্প্রক্ষিত থাকে। রং শিশি থেকে বের করে পানি দিয়ে পরিমাণমতো তরল করে কাগজে ব্যবহার করা হয়। পোস্টার রং দিয়ে সাধারণত কাগজেই ছবি আঁকা হয়। একটু খসখসে জমিনের কাগজে পোস্টার রং ব্যবহার করতে সুবিধা। ছবিতে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে একাধিক তুলি এবং যথাসম্ভব পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা উচিত। পোস্টার রং দিয়ে যে কোনো ধরনের ছবি আঁকা সম্ভব।

কাজ: পোস্টার রঙে একটি গ্রামীণ চিত্র আঁক।
Content added By

অ্যাক্রেলিক রং (পাঠ ২)

49
49

অ্যাক্রেলিক রং টিউব আকারে ছাড়াও কাচের এবং প্লাস্টিকের কৌটায় ছোটো-বড়ো বিভিন্ন আকৃতিতে পাওয়া যায়। ঘন পেস্টের আকারে সংরক্ষিত এই রং পানি দিয়ে তরল করে ছবি আঁকা যায়। অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে কাগজ, বোর্ড বা ক্যানভাস যে কোনোটিতেই ছবি আঁকা সম্ভব। এটিও মূলত অস্বচ্ছ রং।

তবে পাতলা করে গুলিয়ে জল রঙের মতো ব্যবহার করা চলে। রং খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় বলে তাড়াতাড়ি ছবি আঁকা যায়। ফলে শিল্পীদের কাছে এ সময়ে অ্যাক্রেলিক রং খুবই প্রিয় একটি মাধ্যম। অ্যাক্রেলিকে সব রং-ই পাওয়া যায়। বাজারে প্লাস্টিক রং নামে যে রং পাওয়া যায় সেটিও মূলত অ্যাক্রেলিক। তবে তা অ্যাক্রেসিক রং থেকে অপেক্ষাকৃত তরল। প্লাস্টিক রং পানি মিশিয়ে আঁকতে হয়।

কাজ: জলরঙে ফুল বাগানের চিত্র আঁক।
Content added By

জলরং (পাঠ ৩ ও ৪)

42
42

জলরং এর নাম শুনলেই বোঝা যায়, তা জল মিশিয়ে আঁকতে হয়। জলরং বাক্সে ছোটো ছোটো খোঁপে চারকোনা ট্যাবলেটের মতো থাকে। আলাদা আলাদা ট্যাবলেট অবস্থায়ও পাওয়া যায়। তবে টিউবের মধ্যে পেস্টের মতো অবস্থায়ও জলরং তৈরি হয়ে থাকে। জলরং ও পোস্টার রং কাছাকাছি হলেও গুণগত দিক থেকে অনেকটা ভিন্ন। জলরং স্বচ্ছ ও পাতলা। একটি রঙের ওপর আরেকটি রং দিয়ে আগের রংটি ঢেকে দেওয়া যায় না। স্বচ্ছ হওয়ার কারণে দুটো রং মিলে অন্য একটি রং হয়। জলরং সাধারণত কাগজের ওপর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জলরং ছবি আঁকার জন্যে একটু মোটা ও খসখসে জমিনের কাগজ সবচেয়ে উপযোগী। আমাদের দেশে যে মোটা কার্ট্রিজ পাওয়া যায় তাতে জলরঙে আঁকা যেতে পারে। যাদের পক্ষে সম্ভব তারা হ্যান্ডমেড কাগজ বা উন্নত ধরনের কাগজ জোগাড় করে নেবে।

জলরং ব্যবহারের নিয়ম

এক তা কার্ট্রিজ কাগজ অর্ধেক করে কেটে নাও। ইচ্ছে করলে আরও ছোটো করে নিতে পার। মনে রাখতে হবে কাগজ যেন দুমড়ে-মুচড়ে বা ভাঁজ হয়ে না থাকে। কাটাও যেন সুন্দর হয়। কাগজটিকে হার্ডবোর্ডের ওপর ক্লিপ দিয়ে এমনভাবে আটকাও যেন টান-টান থাকে। বোর্ডকে মেঝেতে বা কোনো উঁচু জিনিসে হেলান দিয়ে তোমাদের সামনে রাখ। একটা মগে পরিষ্কার পানি নাও। তার পাশে জলরঙে আঁকার জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্যালেট অথবা কয়েকটি সাদা পিরিচ রাখ। সে সাথে রঙের টিউব বা রঙের কৌটাগুলি হাতের কাছে রাখ। এবার আঁকা শুরুর পালা। শুরু করার আগে খুব ভালো করে ভেবে নাও কী আঁকবে। ধরা যাক, সাদা কালো মেঘে ছাওয়া আকাশ আঁকবে। পেনসিলে হালকা দাগ দিয়ে মেঘের ড্রইং করে নাও। রাবার দিয়ে মোছামুছি না করলেই ভালো। বেশি ঘষলে কাগজের মসৃণতা নষ্ট হয়। রং লাগালে ঘষে দেওয়া স্থানে অপ্রয়োজনীয় দাগ দেখা দিতে পারে। ছবিও নষ্ট হতে পারে। রং লাগাবার আগে পরিষ্কার ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে অথবা চওড়া তুলি দিয়ে কাগজটিকে ভিজিয়ে নাও। কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। দেখবে কাগজের চুপচুপে পানি কিছুটা শুকিয়ে এসেছে। এবার পিরিচে রং নাও। কিছুটা বাদামি রংও নিতে হবে। পানির সাথে বাদামি, নীল রং তুলি দিয়ে গুলে নাও এবং চওড়া তুলি দিয়ে আধ-ভেজা কাগজে আলতো করে লাগাতে হবে। মনে রাখবে রং লাগানো শুরু করতে হবে কাগজের উপর থেকে। তুলি চালাতে হবে বাঁ দিক থেকে ডানে। পানির মতো রং নিচের দিকে গড়াবে। গড়ানো রংকে তাড়াতাড়িভাবে তুলি দিয়ে টেনে ওয়াশ শেষ করবে। এভাবে নীল রঙের ওয়াশ দেওয়ার সময় ড্রইং অনুযায়ী সাদা মেঘের অংশগুলো ছেড়ে যাবে। অর্থাৎ কাগজের সাদা যেন রয়ে যায়। এইভাবে নীলের ওয়াশ শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। রং কিছু শুকিয়ে এলে কালো মেঘের কাজ শুরু করবে। এজন্য নীল এবং কালো মিশিয়ে আবার কালো ও বাদামি মিশিয়ে দুটি পিরিচে আলাদা করে পরিমাণমতো রং তৈরি করে নাও। এরপর প্রথমে কিছুটা হালকা করে নীল এবং কালো মেশানো রং ড্রইং অনুযায়ী কালো মেঘের অংশে লাগাও। তারপর কালো এবং বাদামি মেশানো রঙ গাঢ় করে বেশি অন্ধকার বোঝাতে আগের রঙের উপরেই কিছু অংশে লাগাও। দেখবে ভেজা কাগজ এবং ভেজা রঙের ওপর এইভাবে রং লাগালে বৃষ্টির ভেজা ভেজা কালো মেঘের ধরনটা এসে যাবে। এবার সাদা মেঘে কালো আর বাদামি রংকে খুব হালকা করে মিশিয়ে যেখানে শেড প্রয়োজন সেখানে লাগাও। তোমাদের ছবিটি আঁকা এখানেই শেষ। এখানে একটি সহজ পদ্ধতির কথা বলা হলো। এই পদ্ধতিতে খুব কম সময়ের মধ্যে একটি জলরঙের ছবি আঁকা যাবে। তবে বিষয় অনুসারে অনেক ধরনের রং প্রয়োজন হবে। আলোছায়া অনুযায়ী রঙের তারতম্য হবে এবং সময়ও বেশি লাগবে। শ্রেণিতে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বারবার অনুশীলন করে জলরঙের ব্যবহার আয়ত্ত করতে হবে।

Content added By

নমুনা প্রশ্ন

27
27

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. জলরং কোনটি?
ক. অস্বচ্ছ রং
গ. ভারী রং
খ. স্বচ্ছ রং
ঘ. তৈলাক্ত রং

২. কোনটি মিশিয়ে পোস্টার রং আকতে হয়?
ক. তেল
খ. তারপিন
গ. পানি
ঘ. গাম

৩. অ্যাক্রেলিক রং কীভাবে সংরক্ষিত থাকে?
ক. ঘন পেস্টের আকারে
খ. তরল কালির আকারে
গ. রঙিন কাঠির আকারে
ঘ. কেক আকারে

৪. অ্যাক্রেলিক রং শিল্পীদের কাছে প্রিয় কেন?
ক. রং খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় বলে
খ. রং উজ্জ্বল হয় বলে
গ. রং মুছে যায় না বলে
ঘ. অল্প রং লাগে বলে

৫. জলরঙে ছবি আঁকা হয় কোনটিতে?
ক. ক্যানভাসে
গ. হার্ডবোর্ডে
খ. কাগজে
ঘ. কাঠের টুকরাতে

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

১. নিচের রংগুলো থেকে শুধু কাগজে আঁকা যায় এমন রংগুলো আলাদা করো। অ্যাক্রেলিক রং, প্লাস্টিক রং, জলরং, অক্সাইড রং, পোস্টার রং, টাইডাই, প্যাস্টেল রং, তেল রং।
২. পোস্টার রং সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
৩. জলরং, ব্যবহারের নিয়মাবলি বর্ণনা করো।
৪. 'অ্যাক্রেলিক রং এখন শিল্পীদের প্রিয় একটি মাধ্যম'- কথাটির ব্যাখ্যা করো।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;