জনসংখ্যা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - NCTB BOOK

বর্তমান পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, প্রতিষেধক আবিষ্কার, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবহার ও শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার বৃদ্ধি কিছুটা কমলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ হার কমেনি। এর ফলে পৃথিবীর জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনসংখ্যার গুরুত্ব রয়েছে। পরিমিত শ্রমশক্তি ব্যতীত উন্নয়ন সম্ভব নয় আবার জনাধিক্যতা অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা। প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক উপাদানগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানকে জনবহুল বা জনবিরল করে তোলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এ সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষ ও বনজ সম্পদের ভারসাম্য
মানুষ ও ভূমির ভারসাম্য
মানুষ ও খনিজ সম্পদের ভারসাম্য
মানুষ ও শিল্পের ভারসাম্য

বিশ্বের জনসংখ্যার বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিবর্তনের ধারা (Present Situation of World Population and its Changing Pattern)

আমরা জানি এ পৃথিবী হাজার হাজার যুগ পেরিয়ে এসেছে। খ্রিষ্টীয় সালের প্রারম্ভ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পৃথিবীর জনসংখ্যা খুব ধীরে এবং পরবর্তীতে তুলনামূলকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই যে সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা পরিবর্তনের তারতম্যকে জনসংখ্যা পরিবর্তনের গতিধারা বলে।
প্রতি দশ কিংবা পাঁচ বছর অন্তর বর্তমান বিশ্বে জাতীয় ভিত্তিতে লোক গণনা করার প্রচলন রয়েছে। ১৬৫৫ সালের আগে তা ছিল না। ধীরে ধীরে এই লোক গণনা প্রসার লাভ করে, বর্তমানে সকল দেশেই জাতীয়ভাবে লোক গণনা করা হয়। লোক গণনায় দেখা যায় যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছিল কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দীর পরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে আসে। তবে পরবর্তী ২০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়। ১৬৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন, ১৮৫০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১.২ বিলিয়ন। ১৮৫০ সালের পর কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়, এর ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি আরও দ্রুত হয়। মাত্র ১০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা আবারও দ্বিগুণ হয়। ১৯৫০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২.৫৩ বিলিয়ন। যা ২০১৭ সালে ৭.৬০ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। যদি এই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে ২০৩০ সালে অনুমিত জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮ বিলিয়নের উপরে (চিত্র ৭.১)।

পৃথিবীর জনসংখ্যা পরিবর্তন

         সাল      জনসংখ্যা (বিলিয়ন)
       ১৯৫০      ২.৫৩
       ১৯৬০       ৩.০৩
       ১৯৭০       ৩.৬৯
       ১৯৮০       ৪.৪৫
       ১৯৯০       ৫.৩২
       ২০০০       ৬.১৩
       ২০১০       ৬.৯২
       ২০১৫       ৭.৩৫
        `২০১৭       ৭.৬০

উৎস : UN, Dept. of Economic and Social Affairs, Population Division, 2017

উপরের তথ্য ও বর্ণনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাকে সাধারণভাবে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। যেমন—
প্রাথমিক পর্যায় (Initial Stage)
সুদূর অতীতকাল থেকে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে প্রাথমিক পর্যায় বলে। এ সময় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ও বৃদ্ধির হার উভয় ছিল খুবই কম। এই পর্যায়ে পৃথিবীর সকল অংশেই জন্ম এবং মৃত্যুর হার উভয়ই খুব বেশি ছিল।

মাধ্যমিক পর্যায় (Middle Stage)
১৬৫০ থেকে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে মাধ্যমিক পর্যায় ধরা হয়। এই পর্যায়ে প্রথমে ধীরে এবং পরে দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে কিছু অঞ্চলে মৃত্যুহার হ্রাসের ফলে এবং কিছু অঞ্চলে অভিগমনের ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকা ও এশিয়ায় পূর্বের মতো জন্ম ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
সাম্প্রতিক পর্যায় (Recent Stage)
১৯৫০ সাল থেকে ২০২১ সময় পর্যন্ত সাম্প্রতিক পর্যায়ভুক্ত। বিগত কয়েক দশকে সমগ্র বিশ্বে জনসংখ্যা
বৃদ্ধির হার সার্বিকভাবে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিশ্বের অঞ্চল ভিত্তিতে দুটি ধারা লক্ষ করা যায়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক পর্যায় ২টি ।যথাঃ
১উন্নত অঞ্চল (Developed region)
২উন্নয়নশীল অঞ্চল (Developing region)

উন্নত অঞ্চল বা উন্নত দেশসমূহ
উন্নত অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে ও জনসংখ্যা স্থিতিশীল। জনসংখ্যা কাঠামো দেখলে বোঝা
যাবে এর ভূমি কম প্রশস্ত, উপরের দিকে প্রশস্ততা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্ফীত হয়ে উপরের দিকে গিয়ে আবার সরু হয়েছে (চিত্র ৭.২)। উন্নত দেশসমূহে নারী ও পুরুষের শতকরা বৃদ্ধির হারের খুব বেশি পার্থক্য নেই এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ কম। কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশি, ফলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে তারা যথেষ্ট অবদান রাখে। সাধারণত ০-১৮বছর বয়সের শিশু এবং ৬৫ উর্ধ্ব বয়সের জনসংখ্যাকে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বলে। বাকিদের কর্মক্ষম জনসংখ্যা হিসেবে ধরা হয়।

উন্নয়নশীল অঞ্চল বা উন্নয়নশীল দেশসমূহ
বিশ্বের উন্নয়নশীল অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও যথেষ্ট বেশি। উন্নয়নশীল দেশসমূহে বিগত কয়েক দশকে যে হারে মৃত্যুর হার কমেছে, সে হারে জন্মহার কমেনি। এ দেশগুলোর জনসংখ্যা কাঠামোর ভূমি অত্যন্ত প্রশস্ত এবং শীর্ষভাগ সংকীর্ণ (চিত্র ৭.২)। মোট জনসংখ্যায় শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অনুপাত বেশি। যার ফলে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বেশি। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কম থাকায় অর্থনৈতিক দিক থেকে এই সকল দেশ পিছিয়ে আছে।

জনসংখ্যা কাঠামো(PopulationStructure) : নারী-পুরুষের বয়সভিত্তিক বিন্যাস গ্রাফে প্রকাশ করলে ত্রিভুজ বা পিরামিড সদৃশ যে নকশা তৈরি হয় তাকে জনসংখ্যা কাঠামো বলে। উল্লম্ব অক্ষে (Vertical axis) বয়স এবং অনুভূমিক অক্ষে (Horizontal axis) বামে পুরুষ ও ডানে নারীর সংখ্যা বা শতকরা হার স্তম্ভে স্থাপন করা হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের এরূপ জনসংখ্যা কাঠামোকে জনসংখ্যা পিরামিড (Population Pyramid ) বলে ।

কাজ : নিচের ছকটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য লেখ ।

  প্রাথমিক পর্যায়     মাধ্যমিক পর্যায়       সাম্প্রতিক পর্যায়
     

 

জনসংখ্যা পরিবর্তনের নিয়ামক (Factors of population change)

লক্ষ কর—তাহলে দেখবে যে, এই পাঁচ বছরে দুই-একজন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। আবার কারো কোনো পারিবারিক সদস্য মারা গেছে, কেউবা চাকরি বা বিয়ের কারণে অন্যত্র চলে গেছে। আবার শহরে অস্থায়ী/কাঁচা বসতিতে অধিকসংখ্যক শিশু দেখা যায়। নারী-পুরুষও এসব অঞ্চলে অধিক।
এই যে চারপাশের জনসংখ্যার আপাত বৃদ্ধি, কমে যাওয়া এই দুই-এর পার্থক্য থেকে প্রকৃত জনসংখ্যা বৃদ্ধি বের করা যায়। জনসংখ্যার পরিবর্তন এভাবেই হয়ে চলেছে।
তাহলে দেখতে পাচ্ছি যে, জনসংখ্যা একটি সক্রিয় পরিবর্তনশীল উপাদান। জনসংখ্যার এই পরিবর্তন ঘটছে জন্ম, মৃত্যু ও অভিবাসনের কারণে। এগুলোকে আমরা জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রক্রিয়ার নিয়ামক বলতে পারি এই নিয়ামকগুলোর পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে কোনো সমাজ তথা দেশের জনমিতিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়ে থাকে। যার প্রভাব দেখা যায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও।

জন্মহার (Birth Rate)

স্বাভাবিক জন্মহার নারীদের সন্তান ধারণের সামর্থ্য নির্দেশ করে। তবে কোনো নির্দিষ্ট এক বছরের প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মোট সংখ্যাকে সাধারণ জন্মহার বলে। সাধারণত ১৫-৪৫ অথবা ১৫-৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের প্রজনন ক্ষমতা (Fertility) থাকে। কোনো দেশের বিশেষ কোনো বছরের জন্মিত সন্তানের সংখ্যাকে উক্ত বছরের গণনাকৃত প্রজননক্ষম নারীর মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে সাধারণ জন্মহার নির্ণয় করা হয়।

এ বিষয়টিকে নিম্নোক্তভাবে দেখানো যেতে পারে।

সাধারণ জন্মহার =নির্দিষ্ট বছরে জন্মিত সন্তান/  নির্দিষ্ট বছরের প্রজননক্ষম নারীর সংখ্যা

স্থূল জন্মহার (Crude Birth Rate)

সাধারণ জন্মহারের চেয়ে স্থূল জন্মহার বহুল প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। এই পদ্ধতি হাজারে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কোনো বছরে জন্মিত সন্তানের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে স্থূল জন্মহার নির্ণয় করা হয়। একে নিম্নোক্তরূপে দেখানো যেতে পারে ।
স্থূল জন্মহার= কোনো বছরের জন্মিত সন্তানের মোট সংখ্যা / বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা x ১০০০০

কোনো একটি স্থান বা দেশের মোট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে জন্মিত সন্তান ও জনসংখ্যা জানা থাকলে স্থূল জন্মহার বের করা সহজ। পৃথিবীর বিভিন্ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রজননশীলতার ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। একেক দেশের জন্মহার একেক রকমের। এর কারণ হিসেবে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভিন্নতা প্রধান। সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়াবলির প্রভাবেই জন্মহারের ভিন্নতা দেখা যায়।

১। বৈবাহিক অবস্থাগত বৈশিষ্ট্য : বিবাহের বয়স, বহুবিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রভৃতি কারণ জন্মহার কম
বা বেশির উপর প্রভাব ফেলে।

২। শিক্ষা : সাধারণ শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেলে প্রজননশীলতা হ্রাস পায় এবং শিক্ষার মান ও হার কম হলে : প্রজননশীলতা বেশি হয়।

৩। পেশা : সাধারণভাবে কৃষিকাজে নিয়োজিত কর্মী এবং শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মহার বেশি হতে দেখা যায়। অন্যদিকে শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী প্রভৃতি পেশাদার শ্রেণি এবং প্রশাসক, ব্যবস্থাপক ও চাকরিজীবীদের মধ্যে জন্মহার কম দেখা যায় ।

৪। গ্রাম-শহর আবাসিকতা : গ্রাম এলাকায় সাধারণত জন্মহার বেশি এবং শহর এলাকায় জন্মহার কম দেখা
যায়। তবে এই উপাদানটি আবার শিক্ষা ও পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত।
মানব জন্মহারের তারতম্য একটি সামাজিক বিষয়। সমাজ, ব্যক্তি-জীবনের বহুবিধ বিষয়, বিশেষ করে সামাজিক অবস্থান, সামাজিক ভূমিকা, ভৌগোলিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈবাহিক ধারা, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন, সমাজবৈশিষ্ট্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয় মানব প্রজননশীলতা তথা জন্মহারের সঙ্গে সম্পর্কিত।


মৃত্যুহার (Death Rate)

মানুষ মরণশীল। মরণশীলতা জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকেই শুধু প্রভাবিত করে না, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিমাপ করা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য মৃত্যুহার জানা বিশেষ প্রয়োজন।

স্থূল মৃত্যুহার (Crude Death Rate)
স্থূল মৃত্যুহার মরণশীলতা (Mortality) পরিমাপের বহুল প্রচলিত গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। নির্দিষ্ট কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারীদের মোট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে স্থূল মৃত্যুহার নির্ণয় করা হয়।

স্থূল মৃত্যুহার= কোনো বছরে মৃত্যুবরণকারী মোট সংখ্যা/ বছরের মধ্যকালীন মোট জনসংখ্যা x ১০০০

কোনো স্থান বা দেশের মৃতের সংখ্যা এবং মোট জনসংখ্যার তথ্য পাওয়া গেলে স্থূল মৃত্যুহার নির্ণয় করা যায়। তবে মৃত্যুহার নির্ণয়ের জন্য, বয়স-নির্দিষ্ট মৃত্যুহার (Age-specific death rate) গুরুত্বপূর্ণ। যা বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন সংখ্যার মৃত্যুহার নির্দেশ করে, ফলে এই হার থেকে বার্ধক্য ও অকালমৃত্যু প্রভৃতি বোঝা যায়।
পরিণত বয়সে সামান্য অসুখবিসুখ বা আঘাতেই মানুষের মৃত্যু ঘটে। একে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে। আবার অনেক সময় পরিণত বয়সের পূর্বেই মারা যায়। একে অকাল বা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে। মৃত্যুহারের পার্থক্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

১। প্রাকৃতিক দুর্যোগ : ঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ইত্যাদি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

২। যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা : যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। কুয়েত, আফগানিস্তান, ইরাক যুদ্ধে দেখা যায় তখন ঐ সব দেশে মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক শহিদ হয়।

৩। রোগ ও দুর্ঘটনা : সংক্রামক, শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ, ক্যান্সার, রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত রোগ, আঘাত বা দুর্ঘটনা প্রভৃতির কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। অঞ্চলভেদে মরণশীলতার পার্থক্য রয়েছে। অনুন্নত দেশগুলোতে মৃত্যুহার অনেক বেশি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মৃত্যুহার কিছুটা কমে এসেছে এবং উন্নত দেশগুলোতে স্বাভাবিক মৃত্যুহার রয়েছে। আবার
নারী-পুরুষের মৃত্যুহারের পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রজননকালীন নারীদের
মৃত্যুহার বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার অনুন্নত দেশগুলোতে শিশু মৃত্যুহারও বেশি দেখা যায়।

জীবন ধারণের মৌলিক ও নানা প্রয়োজনে বহুলোক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। স্থায়ী বসবাসের উদ্দেশে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে অন্য শহরে এবং একদেশ থেকে অন্যদেশে অভিগমন করে। ফলে কোথাও জনসংখ্যা কমে আবার কোথাও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অভিবাসনে বাস্তুত্যাগীদের পরিমাণ বৃদ্ধি, গ্রাম বা শহরের মোট জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যার কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। এতে সমগ্র দেশের জনসংখ্যা বণ্টনে পরিবর্তন দেখা দেয়।
সাধারণত কর্মের মজুরি, পণ্যের মূল্য, চাষ পদ্ধতি, বাজার ব্যবস্থা, শহর বা গ্রামীণ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন প্রভৃতি অভিবাসনকে প্রভাবিত করে। অনেক দেশে জন্মহার বেশি হয়। আবার জন্মহার বেশি এমন দেশের কিছু লোক অভিগমন করলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি নাও থাকতে পারে।
তাই দেখা যাচ্ছে যে, কোনো দেশের জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ঐ দেশের জন্মহার, মৃত্যুহার ও অভিবাসন দ্বারা নির্ধারিত হয়। জন্মহার, মৃত্যুহার ও অভিবাসন প্রত্যেকটি বিষয় একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই শুধু জন্মহার বা শুধু মৃত্যুহার বা অভিবাসন দিয়ে কোনো দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাপ করা যায় না। জনসংখ্যার সঠিক তথ্য বুঝতে হলে এই তিনটি বিষয়ই সমানভাবে পর্যালোচনা করতে হয় । প্রকৃতি অনুযায়ী অভিবাসনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা—

১। অবাধ অভিবাসন (Voluntary migration) : নিজের ইচ্ছায় বাসস্থান ত্যাগ করে আপন পছন্দমতো
স্থানে বসবাস করাকে অবাধ অভিবাসন বলে।

২। বলপূর্বক অভিবাসন (Forced migration) : প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক চাপের মুখে কিংবা পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টির ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে যে অভিগমন করে তাকে বলপূর্বক অভিবাসন বলে। গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের কারণে বা যুদ্ধের কারণে কেউ যদি অভিগমন করে তবে তাকে বলপূর্বক অভিবাসন বলে। বলপূর্বক অভিবাসনের ফলে যে সমস্ত ব্যক্তি কোনো স্থানে আগমন করে ও স্থায়ীভাবে আবাস স্থাপন করে তাদেরকে বলে উদ্বাস্তু (Refugee)। আর যারা সাময়িকভাবে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সুযোগমতো স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় থাকে তাদেরকে বলে শরণার্থী (Emigre)। 

কাজ : রিনা ভৌমিকের পরিবার, সাদিয়ার পরিবার, সোহাগ, রবীন ও আরও অনেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গমন করে। এর মধ্যে সাদিয়ার পরিবার, সোহাগ ও রবীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে চলে আসে। তাহলে নিচের ছকটি পূরণ কর।

# এটা কোন ধরনের অভিবাসন?

# এখানে উদ্বাস্তু কারা ?

#এখানে শরনার্থী কারা ?

 #অভিবাসী কে কে?

আবার তোমরা দেখবে দেশের বা রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে গ্রাম (Rural) থেকে শহরে (Urban) অথবা শহর থেকে গ্রামে অভিগমন ঘটে। আবার কাউকে কাউকে দেখবে দেশের বাইরে অন্যকোনো রাষ্ট্রে গমন করেছে। তাই স্থানভেদে অভিগমনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১। রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ (Internal )
২। আন্তর্জাতিক (International)

কাজ : এককভাবে নিচের ছকটি পূরণ কর।

                   অভিগমনের  স্থান         কোন ধরনের  অভিগমন

 ঢাকা             থেকে           চট্টগ্রাম
 ঢাকা             থেকে          আমেরিকা
 ময়মনসিংহ    থেকে            ঢাকা
  বগুড়া           থেকে           ঢাকা

 

 

অভিবাসনের কারণ (Factors of Migration)

মানুষ প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে অভিগমন করে। বাংলাদেশের বহু মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গমন করেছে। একটু ভেবে দেখ কেন করেছে ?
যে সমস্ত কারণ নতুন কোনো স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত বা প্ররোচিত করে সেগুলোকে গন্তব্যস্থলের টান বা আকর্ষণমূলক কারণ (Pull factors) বলে। যে সমস্ত কারণে মানুষকে পুরাতন বাসস্থান পরিত্যাগ করে অন্যস্থানে যেতে বাধ্য করা হয় সেগুলোকে উৎসস্থলের ধাক্কা বা বিকর্ষণমূলক কারণ (Push factors) বলে। তাহলে, অভিগমনের কারণগুলো হলো :
আকর্ষণমূলক কারণ

(১) আত্মীয়স্বজন ও নিজ গোষ্ঠীভুক্ত জনগণের নৈকট্য লাভ
(২) কর্মস্থান ও অধিকতর আর্থিক সুযোগ সুবিধা
(৩) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহ-সংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তাগত সুবিধা (৪) বিশেষ দক্ষতার চাহিদা ও বাজারের সুবিধা
(৫) বিবাহ ও সম্পত্তি প্রাপ্তিমূলক ব্যক্তিগত সুবিধা

বিকর্ষণমূলক কারণ
(১) প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি
(২) জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা
(৩) সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য
(৪) অর্থনৈতিক মন্দা
(৫) ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমাগত ক্ষয়ক্ষতি

অভিবাসনের সুফল ও কুফল (Merits and demerits of migration)

অভিবাসনের স্বাভাবিক ফলাফল হচ্ছে জনসংখ্যা বণ্টন বা অবস্থানিক পরিবর্তন। বস্তুত বিশ্বের জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্য আনয়নের ক্ষেত্রে অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ। অবস্থানগত পরিবর্তন ছাড়াও অভিবাসনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জনবৈশিষ্ট্যগত যে পরিবর্তন হতে পারে তা আলোচনা করা হলো :

১। অর্থনৈতিক ফলাফল (Economic impact) : অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্যই মানুষ অভিবাসনে আগ্রহী হয়। উৎস ও গন্তব্যস্থলে ভূমি ও সম্পত্তির শরিকানা, মজুরির হার, বেকারত্ব, জীবনযাত্রার মান, বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্য, অর্থনৈতিক উৎপাদন ও উন্নয়ন ধারা প্রভৃতির পরিবর্তন হতে পারে। স্বল্পশিক্ষিত লোক সঠিক পদ্ধতিতে যদি অভিগমন না করে তবে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে কোথায় গমন করছি সে স্থানে যেয়ে কী করব তার যথার্থতা যাচাই করে অন্যত্র গমন করতে হবে। লোক মুখে শুনে প্ররোচিত হয়ে গমন করলে অন্যদেশের আইন দ্বারা সে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক কোনো লাভ না হয়ে ক্ষতি হয়। আবার বলপূর্বক অভিবাসন উদ্বাস্তুদের অর্থনৈতিক সুবিধার চেয়ে দুর্ভোগই বেশি হয়।
২। সামাজিক ফলাফল ( Social impact) : অভিবাসনের ফলে সামাজিক, আচার আচরণের আদান- প্রদান হয়। সামাজিক অনেক রীতিনীতি একদেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঘটে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের মধ্যে ভাব, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়। ফলে জনগণের গুণগত পরিবর্তন সম্ভব হবে। গ্রাম ও শহর এলাকার মধ্যে পার্থক্য কমে আসে। তবে অধিকভাবে অন্য কালচার রপ্ত করার কারণে নিজের দেশের সামাজিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ণ হয় ।
৩। জনবৈশিষ্ট্যগত ফলাফল (Impact on population) : অভিবাসনের ফলে উৎসস্থলে জনসংখ্যা কমে এবং গন্তব্যস্থলের মোট জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। শিক্ষিত, যুবক ও পেশাজীবী অভিবাসন করলে গন্তব্যস্থলে জনসংখ্যার কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। এর ফলে উভয় স্থানের জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ অনুপাত ও নির্ভরশীলতার অনুপাত ব্যাপক পরিবর্তিত হয়। অনেক সময় শিক্ষিত ও মেধাবী শ্রেণির লোক অভিগমন করে আর দেশে ফিরে আসে না এতে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক দেশে জনসংখ্যা কম থাকায় তারা অন্যদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়ে জনসংখ্যার ভারসাম্য আনে, এতে তাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন— অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত। উন্নয়নশীল দেশসমূহ যেমন- বাংলাদেশ শ্রম বাজারে জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।

সরকারি নীতি (Government Policy) : ২০১২ সালের জনসংখ্যা নীতি রূপরেখায় মা ও শিশুর উন্নত স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ এবং উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। পরিবারের আকার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে সার্বিক সামাজিক পুনর্গঠন ও জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অত্যাবশ্যক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের করণীয়

অধিক জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য জনসংখ্যার পরিমাণ ও বৃদ্ধির হার হ্রাস করার জন্য কিছু নীতি গ্রহণ করতে হয়। কোনো দেশের জনসংখ্যা সংকোচন প্রধানত দুইভাবে কার্যকর করা যেতে পারে ।

১। জন্মহার হ্রাস
২। উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ অথবা বহির্গমন বৃদ্ধি

প্রকৃতপক্ষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত কোনো দেশের জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব নয়। সামাজিক- অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে কোনো দেশের জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যাপক প্রচার ও জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রীসমূহ জনসাধারণের নিকট সহজলভ্য করা প্রয়োজন। সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বিলি-বণ্টনের সুষ্ঠু নীতি গ্রহণ করা ছাড়া অন্যান্য আরও কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :

১। আইন করে বিবাহের বয়স বৃদ্ধি করা।
২। সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার জন্য জনগণের উপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশে বিভিন্ন প্রকার আইন প্রণয়ন করা
৩। সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৪। মহিলাদের জন্য অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ।
৫। বৃদ্ধ বয়স, সংকট ও দুর্দশার সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা

অর্থনৈতিক কারণে কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত বিদেশি লোক নিয়োগ করে কোনো দেশ তার জনশক্তির অভাব সাময়িকভাবে পূরণ করতে পারে। এছাড়া মৃত্যুহার হ্রাস করে এবং জন্মহার বৃদ্ধি করে জনসংখ্যার সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়।

Content added By

জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বন্টন (Population density and distribution)

জনসংখ্যা ঘনত্ব (Population density) : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা এবং মোট ভূমির পরিমাণ বা
লায়তনের যে অনুপাত (Ratio) তা জনবসতির ঘনত্ব। পৃথিবীর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনবসতির
ঘনত্ব জানতে হলে মোট জনসংখ্যা ও দেশের আয়তন জানতে হবে।

জনসংখ্যা ঘনত্ব= মোট জনসংখ্যা / মোট ভূমির আয়তন

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪ জন এবং এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার

. জনসংখ্যা ঘনত্ব =১৪,৯৭,৭২,৩৬৪/১,৪৭,৫৭০
                           = ১,০১৫ জন (প্রতি বর্গকিলোমিটার)
উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখছি যে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় আয়তন বড় হলে তার জনসংখ্যা ঘনত্ব কমে আসে আবার ঘনত্ব বেশি হলে তা ভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করে (চিত্র ৭.৩)।

মানুষ- ভূমি অনুপাত (Man land ratio) : যে সকল তুমি মানুষের কাজে লাগে এবং সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে, তাকে কার্যকর ভূমি বলে। মানুষ ভূমি অনুপাত বলতে এই কার্যকর ভূমির অনুপাতকে ধরা হয়।

মানুষ-ভূমি অনুপাত =মোট জনসংখ্যা /মোট কার্যকর ভূমির আয়তন

প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশের ভূমির উপর জনসংখ্যার চাপ কী রকম তা জানতে হলে সেই দেশের জনসংখ্যা ঘনত্বের পরিবর্তে মানুষ-ভূমি অনুপাত কত তা জানা প্রয়োজন ।
কাম্য জনসংখ্যা (Optimum population) : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির অনুপাতে ভারসাম্য থাকলেই তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে। ঐ দেশের উৎপন্ন সম্পদের দ্বারা জনগণের ভোগ-সুখের বন্দোবস্ত যতক্ষণ বজায় রাখা যায়, ততক্ষণই সেই দেশের কাম্য জনসংখ্যা বিদ্যমান। মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির আদর্শ অনুপাতের ভারসাম্য যখন নষ্ট হয় তখনই কোথাও অতি-জনাকীর্ণতা আবার কোথাও জনসংখ্যা স্বল্পতা দেখা দেয়।

অতি-জনাকীর্ণতা (Over population) : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ অল্প থাকলে তাকে অতি- জনাকীর্ণতা বলে। এর ফলে মোট উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ, তথা মাথাপিছু উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ অল্প হয়। যা মাথাপিছু উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ হ্রাস করে।

জনস্বল্পতা (Under population) : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ বেশি থাকলেও জনসংখ্যার
স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার না করা গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই অবস্থাকে
জনস্বল্পতা বলে। যেমন— অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা কম।

জনসংখ্যা বণ্টন (Population distribution) : জনসংখ্যা ঘনত্ব বা আকারগত তারতম্য থেকে তোমরা এটা সহজেই বুঝতে পারছ যে ভূপৃষ্ঠে জনসংখ্যা সমভাবে বিস্তৃত নয়। স্থানভেদে জনসংখ্যার অবস্থানগত বিস্তৃতি বা বিন্যাস হচ্ছে জনসংখ্যা বণ্টন। কোথাও মানুষের বিপুল ঘন সমাবেশ। আবার কোথাও জনমানবহীন। ভূপৃষ্ঠের ৫০-৬০ শতাংশের মতো এলাকায় মাত্র শতকরা প্রায় ৫ ভাগ লোকের বসতি। স্থলভাগের মাত্র শতকরা ৫ ভাগ এলাকায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস।


জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক

তোমার নিজের দেশের কোনো অঞ্চলে জনসংখ্যা বেশি, কোথাও একদম কম। এ বিষয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কিছু প্রাকৃতিক, কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে যা জনসংখ্যা ঘনত্ব কম বা বেশি হতে সাহায্য করে। এই বিষয়গুলোকে আমরা জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক বলছি। প্রথমত একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) প্রাকৃতিক প্রভাবক ও (২) অপ্রাকৃতিক প্রভাবক।

১। প্রাকৃতিক প্রভাবক (Physical factors)
ভূপ্রকৃতি : মানুষ স্বভাবতই সমভূমি অঞ্চলে যেখানে কৃষি ও শিল্প গড়ে তোলা যায় সেখানে বসবাস করতে চায়। তাই পৃথিবীর সমভূমি অঞ্চলে ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আবার পাহাড়ি জঙ্গলময় অঞ্চলে জীবন ধারণ অনেক কষ্ট ফলে ঐ সকল অঞ্চলে জনবসতি কম। আমাদের দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব খুবই কম।
জলবায়ু : জলবায়ুর প্রভাব জনবসতির বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর চেয়ে সমভাবাপন্ন জলবায়ুতে মানুষ বসবাস করতে পছন্দ করে।
মৃত্তিকা : মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য মানব বসতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। উর্বর মৃত্তিকা কৃষিকাজের উপযুক্ত
হওয়ায় এ সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি। পানি : যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া যায় সেখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি হয়। এজন্য নদীর উপকূলবর্তী
অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি।
খনিজ : খনিজ প্রাপ্তির উপরও জনসংখ্যা ঘনত্ব নির্ভর করে।

২। অপ্রাকৃতিক প্রভাবক (Non- physical factors)

সামাজিক : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের জন্য যেখানে বেশি সুযোগ রয়েছে সে সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মতো দেশসমূহে প্রাকৃতিক সুযোগ সুবিধা না থাকলেও সামাজিক সুবিধাবলি পাওয়ার জন্য অভিবাসনের মাধ্যমে জনসংখ্যা ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক : শিক্ষা, সংস্কৃতি আজকের যুগে মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও
বিকাশের সুযোগ যেসব অঞ্চলে বেশি, সেসব অঞ্চলে জনবসতিও বেশি হয়।

অর্থনৈতিক : শিল্পাঞ্চলে, যেখানে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং যেসব অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায় সেখানে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি। যেমন— জাপানের ওসাকা, ভারতের মুম্বাই প্রভৃতি স্থানে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি।

Content added By

প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব(Impact of Exessive Population pressure on natural resources)

জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভূমির উপর। একটি দেশের ভূমি সীমিত হওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। বেশি খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভূমি অধিক ব্যবহার হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভূমির ব্যবহার নিম্নোক্তভাবে দেখানো যায়।

ভূমির অধিক ব্যবহার, খণ্ডিতকরণ প্রভৃতির কারণে দিন দিন উৎপাদনযোগ্য ভূমি কমে যাচ্ছে। বসতি বিস্তারের ফলে উন্মুক্তস্থান, জলাশয় প্রভৃতি কমে যাচ্ছে। মাটিতে যে সকল অণুজীব ও ক্ষুদ্রজীব বাস করে তা বাধাগ্রস্ত হয়। দূষিত মাটিতে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। ফলে ভূমি মরুকরণ হতে থাকে। তাই যে কোনো দেশের ভূমি ব্যবহার সঠিকভাবে করার জন্য জনসংখ্যার ভারসাম্য থাকা দরকার।    

                                 ভূমিঃ

    অধিক ফসল চাষ → উর্বরতা হ্রাস → মাটির জৈব উপাদান কমে
   অধিক ফলনের জন্য অধিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার → মাটি দূষিত হয়ে পড়ে
   বন, পাহাড় কেটে আবাদি ভূমিকরণ → ভূমি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ও মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়
   কৃষিভূমি খণ্ডিত হয়ে → বসত বাড়ি ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হয়
  ভূমি বিভাজন → নতুন অবকাঠামো স্থাপন এবং বাণিজ্যকেন্দ্ৰ স্থাপন
  যোগাযোগের জন্য ভূমি ব্যবহার বৃদ্ধি, স্কুল, কলেজ ও প্রশাসনকেন্দ্ৰ স্থাপনের জন্য ভূমি ব্যবহার বৃদ্ধি

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি পানির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। পৃথিবীর শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ পানি, কিন্তু সকল পানির শতকরা ৯৭ ভাগ লবণাক্ত বা লোনা। তাহলে আমাদের খাবার উপযুক্ত পানি মাত্র শতকরা ৩ ভাগ। পানির ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

                                 পানি

  কৃষিক্ষেত্রে ও সেচ কার্যে ব্যবহার, এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।
  পানি বা খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার, ভূনিম্নস্থ পানি অধিক ব্যবহারের ফলে মাটির নিচের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে এবং লোনা পানি তলদেশে
প্রবেশ করছে যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার, এতে তেল ও বর্জ্য সংযুক্ত হচ্ছে।
   শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার,এতে রং, গ্রিজ ও রাসায়নিক দ্রব্য সংযুক্ত হচ্ছে।

জনসংখ্যা অধিক বৃদ্ধি পেলে উপরিউক্ত কাজগুলো বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়, যা পানির উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদ, প্ল্যাংকটন, কচুরিপানা, শেওলা প্রভৃতি জন্মাতে পারছে না। পর্যায়ক্রমে ছোট মাছ ও বড় মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে জলজ সম্পদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল নির্মাণ, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ভূমি হ্রাস প্রভৃতির কারণে বন,
পাহাড় প্রভৃতি কাটা হচ্ছে, ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

কাজ : তোমার চারপাশের প্রাকৃতিক সম্পদ (পানি, ভূমি ও বনজ) কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার চার্ট তৈরি কর।

সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য, যে কোনো দেশের সুষ্ঠু উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা ও সম্পদ জাতীয় উন্নয়নের দুই উপাদান। সম্পদের অবস্থান, পরিমাণ ও গুণগত পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মানুষের অবদান রাখার সুযোগ খুবই সীমিত। তাই জনসংখ্যার যথাযথ সমন্বয় সাধন করার জন্য জনসংখ্যা নীতি (Population policy) গ্রহণ করা হয়। সমস্যা ও সমন্বয় ব্যবস্থার ভিন্নতার জন্য জনসংখ্যা নীতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। উপযুক্ত নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা ও সম্পদের মাঝে সমন্বয় সাধন করে যে কোনো দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যায় ।

Content added By

বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি, সমস্যা ও সমাধান (Contemporary Population of Bangladesh, problems and solutions)

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭০ হাজার জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,১১৬ জন (উৎস: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো)। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে জনসংখ্যা ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। জনসংখ্যা ঘনত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য

• জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে।
• আয়তন ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি।
• নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান।
• দেশের অর্ধেক লোক পরনির্ভরশীল।
• জন্মহার মৃত্যুহার অপেক্ষা কম হ্রাস পেয়েছে।
• অধিকাংশ লোক গ্রামে বাস করে।
• উন্নত দেশগুলোর তুলনায় গড় আয়ুষ্কাল অনেক কম।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (Population growth rate) : বাংলাদেশের জনসংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.১৭%, ২০০১ সালে ১.৪৮% এবং ২০১১ সালে ১.৩৭%। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি কমেছে তার একটি গ্রাফ তৈরি কর।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার

    সাল    বার্ষিক বৃদ্ধির হার (শতকরা)
 ১৯৮১     ২.৩১
 ১৯৯১    ২.১৭
 ২০০১       ১.৪৮
 ২০০৯    ১.৫
  ২০১১    ১.৩৭

 বার্ষিক বৃদ্ধির হার

  ৩.০          
   ২.৫          
   ২.০          
   ১.৫          
   ১.০          
     .৫          
     ০ ১৯৮১ ১৯৯১ ২০০১ ২০০৯ ২০১১
                                সাল

বয়স অনুযায়ী জনসংখ্যা বণ্টন (Population distribution according to age group)ঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পরিবর্তনশীল বয়সের প্রাধান্য। বিভিন্ন সালের গণনা থেকে দেখা যায় দেশের প্রায় অর্ধেক লোক পরনির্ভরশীল শিশু-কিশোর, এছাড়া সামান্য বৃদ্ধ লোকও রয়েছে। ২০০৫ সালের কাঠামো থেকে দেখা যায় ৬০ থেকে ৯০ বছরের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ১.৫ মিলিয়নের কম এবং পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যা বেশি। কাঠামো ব্যবহার করে নিচের কাজটি পূরণ কর ।

কাজ : ১। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোন বয়সের ?
২। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কোন বয়স কাঠামোতে ? ৩। কর্মক্ষম জনসংখ্যার ও নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বের কর।

যে কোনো দেশের ভূমি সীমিত এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নির্দিষ্ট। বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ফলে ভূমি ও সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেও কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা (Population problem of Bangladesh)

• জমির খণ্ডবিখণ্ডতা = উৎপাদন হ্রাস
• মাথাপিছু আয় হ্রাস = জীবনযাত্রার মান নিচু
• অত্যধিক জনসংখ্যা = স্বাস্থ্যসেবার মান কম
• জনসংখ্যা বৃদ্ধি = স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল
মাথাপিছু আয় কম, সঞ্চয় কম এবং বিনিয়োগ কম ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না = বেকারত্ব বৃদ্ধি
• মূল্যবোধের অবক্ষয়, জীবিকার তাগিদে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি বৃদ্ধি = সমাজ জীবনে নিরাপত্তার
অভাব
• বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি এবং জমির ব্যবহার বৃদ্ধি কৃষি ভূমি হ্রাস =
• জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি এবং খাদ্য কম বৃদ্ধি = খাদ্য ঘাটতি
বন নিধন, পাহাড় কাটা বৃদ্ধি এবং বস্তি বসতি বৃদ্ধি = পরিবেশ দূষণ
• খাদ্য আমদানি বৃদ্ধি = বৈদেশিক মুদ্রা হ্রাস
• অত্যধিক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, ভর্তি সমস্যা এবং প্রয়োজনীয় স্কুল-কলেজের অভাব শিক্ষার হার কম

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় হলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কৃষি ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, দ্রুত শিল্পায়ন, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। অধিক ঘনবসতিপূর্ণ স্থান থেকে কম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলসমূহে লোক স্থানান্তর করে জনসংখ্যা সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার প্রসার প্রভৃতির মাধ্যমে জনসংখ্যা হ্রাস করা যেতে পারে। জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করা হলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং জনসংখ্যা সমস্যা হ্রাস পাবে। কর্মদক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা গেলে সমস্যা হ্রাস পাবে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির মাধ্যমে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান সহজ হয়।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের উপায় (Measures taken to control population in Bangladesh)

জনসংখ্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের চেয়ে জনসংখ্যা যেন দ্রুত বৃদ্ধি না পায় তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হলো জনসংখ্যা। সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও সচেতনতা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার কুফল প্রচার করছে। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় এ দেশের জনশক্তি সমস্যা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
• জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সফল প্রয়োগের ব্যবস্থা করা।
• বিলম্ব বিবাহ ব্যবস্থা চালু করা।
• বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধ করা।
• নারী শিক্ষা ও নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
• দেশের জনগণের চিত্তবিনোদনের নানাবিধ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা।
ধর্মান্ধতা, পুত্র সন্তানের উপর নির্ভরশীলতা, বংশ রক্ষা প্রভৃতি কুসংস্কার দূর করা।

Content added || updated By
মানুষ ও বনজ সম্পদের ভারসাম্য
মানুষ ও ভূমির ভারসাম্য
মানুষ ও খনিজ সম্পদের ভারসাম্য
মানুষ ও শিল্পের ভারসাম্য

আরও দেখুন...

Promotion