জাতকে জীব ও প্রকৃতি

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - | NCTB BOOK

জাতকে জীব ও প্রকৃতি

এ অধ্যায়ে যা আছে

  • জাতক পরিচয়
  • জীব ও প্রকৃতি: গৃধু জাতক, মিত্রামিত্র জাতক এবং বৃক্ষধর্ম জাতক
  • মানুষ, জীবজগত ও প্রকৃতি।

জাতক পড়ে বা শুনে আমরা যেসব ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি জোড়ায় আলোচনা করে তার একটি তালিকা তৈরি করি।

তালিকা

১.

২.

৩.

৪.

৫.

এই অধ্যায়ে আমরা জাতকের পরিচয়, তিনটি জাতকের শিক্ষণীয় বিষয় ও উপদেশ এবং জাতকে জীব ও প্রকৃতি সম্পর্কে কী বলা আছে সে সম্পর্কে জানব।

জাতক পরিচয়

বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম ত্রিপিটক। ত্রিপিটক তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। যথা: সূত্রপিটক, বিনয় পিটক এবং অভিধর্ম পিটক। জাতক সূত্রপিটকের অন্তর্গত খুদ্দকনিকায়ের দশম গ্রন্থ। তাই জাতক পবিত্র ধর্মগ্রন্থের একটি। 'জাতক' শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে যিনি জাত বা জন্মগ্রহণ করেছেন। কিন্তু বৌদ্ধ সাহিত্যে 'জাতক' বলতে গৌতম বুদ্ধের অতীত জীবনের কাহিনিকে বোঝানো হয়েছে। জানা যায়, বুদ্ধ বোধিসত্ত্বরূপে ৫৫০ বার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কখনো রাজা, কখনো প্রজা, কখনো দেবতা, কখনো ধনী, কখনো সম্ভ্রান্ত বংশের লোক, কখনো দরিদ্র, কখনো চণ্ডাল, কখনো কৃষক, কখনো ব্যবসায়ী, কখনো শ্রমিক, কখনো ফেরিওয়ালা, কখনো পশু-পাখিসহ নানা রূপে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতিটি জন্মে তিনি অসংখ্য কুশল কর্ম সম্পাদন করে পারমী পূর্ণ করতেন। এভাবে শেষ জন্মে তিনি মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ করে দশপারমী পূর্ণ করেন এবং বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ নামে খ্যাত হন। বুদ্ধ বিভিন্ন ঘটনা উপলক্ষ্যে শিষ্য, শিষ্যা ও অনুসারীদের তাঁর অতীত জীবনের কাহিনি ভাষণ করতেন। সেসব কাহিনির মাধ্যমে তাঁদেরকে নৈতিক ও মানবিক জীবন গঠনের শিক্ষা দিতেন। মন্দ কাজ হতে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করতেন। জাতক গ্রন্থে সেসব কাহিনি সংকলিত আছে।

বৌদ্ধ সাহিত্যে জাতকের সংখ্যা ৫৫০টি উল্লেখ আছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলা ভাষায় অনুবাদকৃত জাতক গ্রন্থে ৫৪৭টি জাতক সংকলিত আছে। প্রতিটি জাতকে নানা ধরনের শিক্ষণীয় বিষয় আছে। জাতক মানুষকে চরিত্রবান, নৈতিক, মানবিক, সদাচারী, উদার, পরোপকারী, সহনশীল, সংযমী, নির্লোভ ইত্যাদি হতে শিক্ষা দান করে। প্রতিটি জাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ থাকে। জাতকের উপদেশ মানুষকে জীব ও প্রকৃতির প্রতি সদয় আচরণে উদ্বুদ্ধ করে। খারাপ কাজ হতে বিরত থেকে ভালো কাজ করার প্রেরণা যোগায়। তাই প্রতিটি মানুষের জাতক পাঠ করা বা শোনা উচিত। নিচে পাঁচটি জাতকের পাঁচটি উপদেশ দেওয়া হলো

জাতকের নামউপদেশ
সেরিবাণিজ জাতকলোভে পাপ, পাপে মৃত্যু
বক জাতকঅতি চালাকের গলায় দড়ি
নক্ষত্র জাতকশুভ কাজের কোনো কালাকাল নেই।
কালকর্ণী জাতকবিপদে বন্ধুর পরিচয়
সুখবিহারী জাতকভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৩: দলগত কাজ

তালিকা তৈরি: দলে আলোচনা করে বুদ্ধ অতীত জন্মে যেসব রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তার একটি তালিকা তৈরি করি

তালিকা

১.

২.

৩.

৪.

৫.

৬.

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৪: জোড়ায় কাজ

ধারণা চিত্র: সঠিক শব্দ দিয়ে খালিঘর পূরণ করি

জীব ও প্রকৃতি

গৃধু জাতক, মিত্রামিত্র জাতক, বৃক্ষধর্ম জাতক জাতকে জীব ও প্রকৃতি সম্পর্কে নানা শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আজ আমরা গৃঘ্র জাতক, মিত্রামিত্র জাতক এবং বৃক্ষধর্ম জাতক পাঠ করে জীব ও প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করব।

গৃদ্র জাতক

চিত্র-২৫: শিকারীর ফাঁদে আটক শকুন

অতীত কালে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের রাজত্বকালে বোধিসত্ত্ব গূদ্রকূট পর্বতে গূদ্র (গৃধু শব্দের অর্থ শকুন) রূপে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা-পিতা তাঁকে পরম আদরে লালন-পালন করে বড়ো করে তোলেন। বড়ো হয়ে গূদ্ররূপী বোধিসত্ত্ব প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে মাংসাদি এনে বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে খেতে দিতেন। এভাবে বোধিসত্ত্ব গৃঘ্র মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ করতে লাগলেন। সে সময় বারাণসীর শশ্মশানে এক শিকারী মাঝে মধ্যে গূদ্র ধরার জন্য ফাঁদ পেতে রাখতেন। একদিন বোধিসত্ত্ব গোমাংস খোঁজার জন্য ঐ শ্মশানে প্রবেশ করলে ফাঁদে তাঁর পা আটকে যায়। তখন তিনি নিজের মুক্তির কথা না ভেবে বৃদ্ধ মাতাপিতার কথা স্মরণ করতে লাগলেন এবং বিলাপ করে এরূপ বলতে লাগলেন: "হায়! আমার মাতাপিতা কি উপায়ে জীবনযাপন করবেন। আমি যে ফাঁদে আটকে গেছি তা তাঁরা জানতে পারবেন না। তাঁরা খাবারের আশায় অপেক্ষা করে থাকবেন। আমি খাবার নিয়ে ফিরে না গেলে তাঁরা পর্বত গুহায় অনাহারে মারা যাবেন।"

মাতা-পিতার ভরণ-পোষণের কথা স্মরণ করে গৃধুকে বিলাপ করতে দেখে শিকারীর মায়া হলো। শিকারী গৃধুকে ছেড়ে দিয়ে বলল: "পর্বত গুহায় ফিরে যাও। বৃদ্ধ মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ করো। জ্ঞাতীবন্ধুকে সুখী করো।"

ছাড়া পেয়ে বোধিসত্ত্ব গূদ্র মাংসাদি নিয়ে মনের সুখে পর্বতগুহায় ফিরে গেলেন এবং মাতা-পিতার ভরণ- পোষণ করতে লাগলেন।

উপদেশ

মাতাপিতার প্রতি দায়িত্ব পালন করা সকলের উচিত।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৫: একক কাজ

বাক্য লিখন: বড়ো হয়ে কীভাবে মাতাপিতার সেবা করব সে সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লিখি

 
 
 
 
 

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৬: একক কাজ

অনুচ্ছেদ: 'পশু-পাখি শিকার করা উচিত নয়' এ বিষয়ে নিচে একটি অনুচ্ছেদ লিখি

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

অতীতে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের রাজত্ব কালে বোধিসত্ত্ব রাজার অর্থ ও ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। রাজার আরো অনেক অমাত্য বা মন্ত্রী ছিলেন। রাজা ব্রহ্মদত্ত এক অমাত্যকে খুব ভালোবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। কারণ সেই অমাত্য ছিলেন খুবই বিশ্বস্ত। রাজাকে সকল কাজে নিরলসভাবে সাহায্য করতেন। রাজার সুনাম নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতেন। রাজা তাঁকে অধিক ভালোবাসতেন বলে অন্যান্য অমাত্যগণ তাঁকে হিংসা করতেন এবং তাঁর নামে নানা কুৎসা রটনা করতে লাগলেন। একদিন তারা রাজাকে বললেন, "মহারাজ! অমুক অমাত্য আপনার উপকারী নয়। অমিত্র। কিন্তু রাজা অনুসন্ধান করে ঐ অমাত্যের কোনো দোষ দেখতে পেলেন না। তখন তিনি ভাবলেন, আমি এই অমাত্যের কোনো দোষ দেখছি না। কে মিত্র কে অমিত্র কীভাবে বুঝব? তা জানার জন্য তিনি উপদেষ্টা বোধিসত্ত্বের কাছে গেলেন। বোধিসত্ত্ব রাজাকে মিত্র-অমিত্র চেনার ষোলটি লক্ষণ বলেন। নিচে মিত্র ও অমিত্রের কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো

মিত্র লক্ষণ 

১) মহারাজ! আপনার লাভ বা সাফল্যে যে ব্যক্তি আনন্দ লাভ করেন তিনি মিত্র। 

২) আপনার সুখে যে ব্যক্তি সুখী হন তিনি মিত্র। 

৩) যে ব্যক্তি আপনার মিত্রকে বন্ধু ভাবেন তিনি মিত্র। 

৪) যে ব্যক্তি আপনার শত্রুকে বর্জন করেন তিনি মিত্র। 

৫) যে ব্যক্তি আপনার নিন্দা শুনলে প্রতিবাদ করেন তিনি মিত্র

অমিত্র লক্ষণ 

১) মহারাজ! আপনাকে দেখলে যে ব্যক্তির মুখে হাসি থাকে না সে অমিত্র। 

২) আপনার প্রশংসা শুনলে যে ব্যক্তি সুখি হয় না সে অমিত্র। 

৩) আপনাকে দেখলে যে ব্যক্তি চোখ ফিরিয়ে নেয় সে অমিত্র। 

৪) আপনি যা বলেন যে ব্যক্তি তার বিপরীত কথা বলে সে অমিত্র। 

৫) যে ব্যক্তি আপনার লাভ ও সফলতায় ঈর্ষা করে সে অমিত্র। 

[* উপরে বর্ণিত মিত্র-অমিত্র লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য]

উপদেশ

মিত্রকে গ্রহণ এবং অমিত্রকে ত্যাগ করা উচিত।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৭: দলগত কাজ

তালিকা তৈরি: কোন ধরণের মানুষের সাথে আমাদের কন্ধুত্ব করা উচিত নয় তা দলে আলোচনা করে একটি তালিকা তৈরি করি

তালিকা

১.

 

২.

 

৩.

 

৪.

 

৫.

 

৬.

 

 

বৃক্ষধর্ম জাতক

চিত্র-২৯। একা থাকার কারণে গাছটি ভেঙ্গে গেল

অতীতে বুদ্ধের সময়ে রোহিণী নদীর জল নিয়ে রাজাগণের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া-বিবাদ দেখা দিল। রাজাগণ পরস্পরের জ্ঞাতী বা আত্মীয় ছিলেন। কলহের কথা শুনে বুদ্ধ রোহিণী নদীর তীরে উপস্থিত হন এবং রাজাগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন:-

"মহারাজগণ! আপনারা জ্ঞাতী বিরোধ ত্যাগ করুন। জ্ঞাতীগণ পরস্পর মিলেমিশে বসবাস করা উচিত। জ্ঞাতীদের মধ্যে ঐক্য থাকলে শত্রুপক্ষ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। মানুষের কথা দূরে থাকুক, চেতনাহীন বৃক্ষদের মধ্যেও একতা থাকা আবশ্যক। একবার হিমালয় প্রদেশে এক শালবনে প্রবল ঝড় হয়েছিল। সেখানে গুল্ম, লতা, বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা পরস্পর জড়াজড়ি করে ছিল বলে ঝড়ে একটি বৃক্ষও মাটিতে পড়ে যায়নি। কিন্তু ঐ স্থানে একা একটি বড়ো বৃক্ষ ছিল। ঐ বৃক্ষ অন্যান্য বৃক্ষের সঙ্গে একতাবদ্ধ ছিল না বলে ঝড়ে মাটিতে পড়ে যায়। তাই মহারাজগণ! আপনাদেরও পরস্পর মিলেমিশে থাকা উচিত।"

অতঃপর জ্ঞাতীগণের অনুরোধে বুদ্ধ বৃক্ষধর্ম জাতক ভাষণ করেন, যা নিচে দেওয়া হলো

অতীতে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের সময়ে দেবতা বৈশ্রবণ দেবরাজ্যে রাজত্ব করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর দেবরাজ শত্রু অপর এক দেবতাকে রাজ্যভার অর্পন করেন। নতুন রাজা বৃক্ষ, গুল্ম, লতায় বসবাসকারী দেবতাদের আদেশ দিলেন, "তোমরা নিজের পছন্দনীয় স্থানে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করো।" সে সময় বোধিসত্ত্ব বৃক্ষদেবতা রূপে হিমালয়ে বাস করছিলেন। তিনি দেবতাদের বললেন, "তোমরা ঘর নির্মাণের সময় বৃক্ষ নষ্ট করবে না। আমি শালবনে বসবাস করছি। তোমরা শালবনের চারিপাশে বাস করো।" বৃক্ষদেবতাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান তাঁরা বোধিসত্ত্বের কথামতো কাজ করলেন। যারা নির্বোধ তাঁরা বললেন, "আমরা বনে বাস করব কেন? লোকালয়ে গ্রাম, নগর, রাজধানী প্রভৃতি স্থানে থাকলে কত সুবিধা। যে সকল দেবতা এরূপ স্থানে বাস করেন, তাঁরা ভক্তদের নিকট কত উপহার পেয়ে থাকেন।" এরূপ বলে নির্বোধ দেবতারা লোকালয়ে গিয়ে বৃক্ষসমূহে বাস করতে লাগলেন। ঘটনাক্রমে একদিন সেই স্থানে ভীষণ ঝড়বৃষ্টি হলো। বৃক্ষগুলোর বহু শাখা-প্রশাখা ছিল এবং মূল দৃঢ় ছিল। কিন্তু তারা পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ ছিল না বলে ঝড়বৃষ্টির বেগ সহ্য করতে পারল না। শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল। কিন্তু সেই ঝড় যখন পরস্পর আবদ্ধ শালবৃক্ষসমূহের বনে উপস্থিত হলো তখন বারবার আঘাত করেও সেখানকার একটি বৃক্ষকেও অনিষ্ট করতে পারল না। তখন ভগ্ন গৃহের দেবতাগণ নিরাশ্রয় হয়ে পুত্র-কন্যাসহ হিমালয়ের শালবনে গমন করলেন এবং সেখানকার শালবনবাসি দেবতাদের নিকট নিজেদের দুঃখের কাহিনি জানালেন। তখন শালবনে বসবাসকারী দেবতাগণ তাদের কথা বোধিসত্ত্বের নিকট গিয়ে বললেন। তাদের কথা শুনে বোধিসত্ত্ব বললেন, 'আমার সৎপরামর্শ গ্রহণ না করাতেই তাদের এরূপ দুঃখ-দুর্দশা হয়েছে।' বোধিসত্ত্ব তাদের উদ্দেশ্যে এই ধর্ম গাথা ভাষণ করলেন- "বনের বৃক্ষরাজির মতো পরস্পর আলিঙ্গন করে বাস করলে কোনো বিপদ আসে না। শত্রু ভয় থাকবে না। একাকী বাস করলে বিপদ আসে; তার থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। ঝগড়া-বিবাদ ত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাস করা মঙ্গল।"

উপদেশ 

একতাই শক্তি।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৮: দলগত কাজ

বাক্য লিখন: দলে আলোচনা করে মিলেমিশে থাকার উপকারিতা সম্পর্কে ৫টি বাক্য লিখি

১.
২.
৩.
৪.
৫.

 জাতকের শিক্ষা

চিত্র-৩০: নদীর ধারে বসে বুদ্ধ রাজাগণকে মিলেমিশে জল ব্যবহার করার জন্য উপদেশ দিচ্ছেন

 মানুষ, জীব ও প্রকৃতির মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও মিল রয়েছে। জাতক পাঠে আমরা তা জানতে পারি। গুদ্র জাতক পাঠ করে আমরা জানতে পারি যে, মানুষের ন্যায় পশুপাখিরও পরিবার থাকে। তারাও পরম আদরে সন্তান লালন পালন করে। তাদের সন্তানেরাও মানুষের মতো বৃদ্ধ মাতা-পিতার ভরণ পোষণ করে। মানুষ যেমন পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসে, পশুপাখিও তেমনি ভালোবাসে। পরিবারের কেউ হারিয়ে গেলে, মৃত্যুবরণ করলে বা আহত হলে মানুষ যেমন কষ্ট পায় তেমনি পশুপাখিরাও কষ্ট পায়। তাই পশু-পাখি শিকার করা উচিত নয়।

মিত্রামিত্র জাতক পাঠে আমরা কে মিত্র, কে অমিত্র তা জানতে পারি। মিত্র সব সময় উপকার করে। ভালো কাজের প্রশংসা করে। বিপদ আপদ হতে রক্ষা করে এবং সৎ পথে পরিচালিত করে। অপরদিকে, অমিত্র অপকার করে। ভালো কাজ করলেও নিন্দা করে। বিপদ-আপদ দেখলে দূরে সরে থাকে এবং বিপথে পরিচালিত করে। তাই মিত্র-অমিত্র লক্ষণ জেনে মিত্রতা করা উচিত।

বৃক্ষধর্ম জাতক হতে আমরা শিক্ষা পাই যে, একতাই শক্তি। গুল্ম, লতা, বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা পরস্পর জড়াজড়ি করেছিল বলে ঝড়ে একটি বৃক্ষও মাটিতে পড়ে যায়নি। অপরদিকে, বহু শাখা-প্রশাখা সম্পন্ন ও দৃঢ় মূলের বৃহৎ বৃক্ষ একা থাকার কারণে ঝড়ের আঘাতে মাটিতে পড়ে যায়। তাই আমাদের উচিত পরস্পর মিলেমিশে থাকা। মিলেমিশে বসবাস করলে শত্রু ক্ষতি সাধন করতে পারে না। বুদ্ধের সময়ে রোহিণী নদীর জল নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের মধ্যে কলহ দেখা দিয়েছিল। রাজাগণ ছিলেন পরস্পরের আত্মীয়। বুদ্ধ তাঁদের কলহ ত্যাগ করে অপচয় না করে রোহিণী নদীর জল মিলেমিশে ব্যবহার করতে উপদেশ দেন। বুদ্ধের উপদেশ শুনে তাঁরা মিলেমিশে জল ব্যবহার করে একতাবদ্ধ হয়ে সুখে বসবাস করতে থাকেন। জলের অপর নাম জীবন। আমরা প্রতিদিন নানা কাজে জল ব্যবহার করি। যেমন, আমরা জল পান করি, জল দ্বারা স্নান করি, আসবাবপত্র ধৌত করি, সেচ দিয়ে জমিতে ফসল ফলাই। তাই সকলের উচিত, অপচয় না করে সঠিকভাবে জল ব্যবহার করা।

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৫৯: একক কাজ

শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্ণয়: টিক (✔) চিহ্ন দিয়ে শুদ্ধ-অশুদ্ধ চিহ্নিত করি 

ক) মানুষের ন্যায় পশুপাখির পরিবার থাকে না। শুদ্ধ/অশুদ্ধ 

খ) পাখিরাও পরম আদরে সন্তান লালন পালন করে। শুদ্ধ/অশুদ্ধ 

গ) মিত্র সব সময় উপকার করে। শুদ্ধ/অশুদ্ধ 

ঘ) অমিত্র বিপদে আপদে এগিয়ে এসে সাহায্য করে। শুদ্ধ/অশুদ্ধ 

ঙ) মিলেমিশে থাকলে শত্রু ক্ষতি করতে পারে না। শুদ্ধ/অশুদ্ধ 

চ) জল অপচয় করা উচিত নয়। শুদ্ধ/অশুদ্ধ

অংশগ্রহণমূলক কাজ-৬০: একক কাজ

মিলকরণ: বাম পাশের বাক্যের সাথে ডান পাশের সঠিক বাক্যের মিল করি

ক. মানুষ, জীব ও প্রকৃতির মধ্যেক. পরস্পর মিলেমিশে থাকা।
খ. আমাদের উচিতখ. শত্রু ক্ষতি সাধন করতে পারে না।
গ. মানুষ যেমন পরিবারের সদস্যদের ভালবাসে,গ. গভীর সম্পর্ক ও মিল রয়েছে।
ঘ. মিত্র সব সময়ঘ. অপচয় না করে সঠিকভাবে জল ব্যবহার করা।
ঙ. মিলেমিশে বসবাস করলেঙ. পশুপাখিও তেমনি ভালোবাসে।
চ. সকলের উচিতচ. উপকার করে।
Content added By
Promotion