যুদ্ধ কখনও জাতিতে জাতিতে সংকট নিরসনের পথ হতে পারে না। যুদ্ধ ডেকে আনে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা এবং মানবজাতির জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও অশান্তি। বিশ শতকের ইতিহাসে পৃথিবী জুড়ে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে। গত শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) সংঘটিত হয়। মূলত জাতিগ নিরসনে মধ্যস্থতাকারী শান্তিকামী জনতা যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় চুপ করে থাকেনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালের ১০ই জানুয়ারি বিশ্বে শাস্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 'লীগ অব নেশনস' সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু 'লীগ অব নেশনস এর সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অন্যান্য কারণে বিশ্বশান্তি বিধানে তা ব্যর্থ হয়। ১৯৩৯ সালে পুনরায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা পৃথিবীকে গ্রাস করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত ও আহত হয়। অনেকে গৃহহারা হয় ও পঙ্গুত্ব বরণ করে। প্রতিটি দেশ হারায় তাদের কর্মক্ষম যুবসম্প্রদায়কে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব বিবেককে ভীষণভাবে মাড়া দেয় ও আতঙ্কিত করে তোলে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আর একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এরপর ১৯৪৩ সালে তেহরানে ও মস্কোতেসমসাময়িক বিশ্বের ৪টি প্রধান শক্তির একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিবৃন্দ সম্মিলিত জাতিসংঘ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশেষে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ আত্মপ্রকাশ করে। এজন্য প্রতি বছর ২৪শে অক্টোবরকে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সদস্য।
পাঁচটি প্রধান অঙ্গ এবং একটি সেক্রেটারিয়েট নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত। পাঁচটি অঙ্গ হচ্ছে: সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, আন্তর্জাতিক আদালত সকল সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত। সাধারণ পরিষদকে 'বিতর্ক সভা' বলেও অভিহিত করা যায়। নিরাপত্তা পরিষদ হচ্ছে জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পরিষদ। ৫টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী মোট ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে এটি গঠিত। ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। এদের প্রত্যেকের 'ভেটো' প্রদান বা কোনো প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজ হচ্ছে বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করা। স্বাধীনতাপ্রাপ্ত নয়- এরূপ বিশেষ এলাকার তত্ত্বাবধানের জন্য অছি পরিষদ গঠিত। আন্তর্জাতিক বিবাদ মীমাংসা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাজ। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে এর কার্যালয় অবস্থিত। সেক্রেটারিয়েট হচ্ছে জাতিসংঘের প্রশাসনিক বিভাগ। সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিব প্রধান নির্বাহী। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তর অবস্থিত।
জাতিসংঘের সদস্যপদ
জাতিসংঘ চার্টার বা সনদের নিয়মকানুন মেনে চলতে আগ্রহী বিশ্বের যে কোনো শান্তিকামী দেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ জাতিসংঘের সদস্য। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য
জাতিসংঘ সনদে সুস্পষ্টভাবে বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতা বিধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ আছে। উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. শান্তি ভঙ্গের হুমকি, আক্রমণাত্মক প্রবণতা ও কার্যকলাপ দূর করে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা;
২. সকল মানুষের সমান অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব জোরদার করা:
৩. অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সকল জাতির মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলা;
৪. জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা
৫. আন্তর্জাতিক আইনের সাহায্যে আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করা;
৬. প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতি ও তা সমুন্নত রাখা, এবং
৭. উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের কার্যধারা অনুসরণ করা।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভূমিকা ও কার্যক্রম
বাংলাদেশে জাতিসংঘের সবকটি অঙ্গ সংস্থার মিশন আছে। জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য বাংলাদেশ সবসময়ই এর বিশেষ নজর পেয়ে থাকে। ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। জাতিসংঘের সবক'টি অফা সংস্থা শুরু থেকেই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। এ বিশ্ব সংস্থাটির চার জনমহাসচিব পাঁচ বার বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের আর্থিক অবদান কম হলেও বাংলাদেশের সৈন্যরা প্রাণ উৎসর্গ করে শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনায় কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করার পর থেকে বাংলাদেশ এই বিশ্ব সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৭৯-৮০ এ সময়ের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে বাংলাদেশের নির্বাচন তার এ ভূমিকার স্বীকৃতি এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থার স্বাক্ষরবাহী। ১৯৮৪ সাল থেকে জাতিসংঘের কার্যপ্রণালিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আমাদের জন্য খুবই গৌরবের। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তাঁর এই সভাপতি নির্বাচিত হওয়া বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের বিশেষ ভূমিকার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় জাতিসংঘ ঘোষিত নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি কটন বিষয়ক দীর্ঘকালের সমস্যা নিরসনে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাতময় পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানে সফল হয়েছে। এছাড়াও ২০১২ সালে সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে ৩৮ বছরের বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের নিম্নোক্ত অঙ্গ সংস্থাগুলো কাজ করছে :
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি (UNDP) বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক তথা অর্থাৎ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ইউএনডিপি দেশব্যাপী অসংখ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ইউএনডিপি সহাস্রাব্দ(মিলেনিয়াম) উন্নয়নের ৮টি লক্ষ্যমাত্রা (MDG) অর্জনে কাজ করছে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, দারিদ্র্য হার হ্রাসকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের এওয়ার্ড লাভ করেন। বর্তমানে টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষমাত্রা (SDG) অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ (UNICEF) দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিশেষত শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিসেফ কাজ করছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (UNESCO) - বাংলাদেশের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি কাজ করছে। জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা বা এফএও (FAO) - বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা কাজ করছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও (WHO) স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে। উদ্বাস্তু বিষয়ক জাতিসংঘ হাইকমিশনারের কার্যালয় বা ইউএনএইচসিনার(UNHCR)- বাংলাদেশ-মিয়ানমার ইস্যুতে এই কার্যালয় মধ্যস্থতা করছে। বিশাল শরণার্থী পালনের খরচেও অবদান রাখছে। তাছাড়া বাংলাদেশে বিহারী জনগোষ্ঠীর আবাসনসহ অন্যান্য ইস্যুতে এই সংস্থা ব্যাপক অবদান রেখেছে। জাতিসংঘ নারী উন্নয়ন তহবিল বা ইউনিফেম (UNIFEM) - বাংলাদেশে নারীদের উন্নয়নে এ সংস্থাটি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। নারীদের বিভিন্ন ধরনের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্ট করছে। নারীদের নিরাপদ শ্রম অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতেও এ সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা কার্যক্রম তহবিল (UNFPA ) - সংস্থাটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে জাতিসংঘের কার্যাবলি খুবই প্রশংসনীয়।
নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণে জাতিসংঘের ভূমিকা
নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে এবং নারীর অধিকার সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘ তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ ও আইন প্রণয়ন করে। ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র ছাড়াও জাতিসংঘ নারী উন্নয়নে যেসব কাজ করে তা হলো
১. ১৯৪৯- মানব পাচার দমন ও পতিতাবৃত্তি অবসানের জন্যে জাতিসংঘ সনদ অনুমোদন।
২. ১৯৫১- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) কর্তৃক একধরনের কাজের জন্য নারী ও পুরুষ শ্রমিকের একই বেতন প্রদান।
৩. ১৯৫২- নারীর রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি। নির্বাচনে নারী ভোট প্রদান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
৪. ১৯৫৭- বিবাহিত নারী জাতীয়তা সংরক্ষণ বা পরিবর্তন করতে পারবে।
৫. ১৯৬০- নারীদের কর্মসংস্থান ও পেশাক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপ সনদ অনুমোদন।
৬. ১৯৬২- বিয়ের ন্যূনতম বয়স ও রেজিস্ট্রেশন সনদ অনুমোদন |
৭. ১৯৬২- বালিকা ও নারীদের শিক্ষাক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা।
৮.১৯৭৫- নারী বছর ঘোষণা।
৯. ১৯৭৫— প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলন, মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয়।
১০. ১৯৭৬-১৯৮৫ নারী দশক ঘোষণা।
১১. ১৯৭১- নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, সিডও (CEDAW) নামে অভিহিত। ১৯৮১ সালে এই সনদ কার্যকর হয়।
১২. ১৯৮০ - দ্বিতীয় বিশ্ব নারী সম্মেলন ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয়।
১৩. ১৯৮৫– তৃতীয় বিশ্ব নারী সম্মেলন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয়।
১৪. ১৯৯২ – রিও ডি জেনেরোতে পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকার -
১৫. ১৯৯৩- অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা সম্মেলনে নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দান ।
১৬. ১৯৯৫- চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন, বেইজিং। এ বিশ্ব নারী সম্মেলনের ঘোষণা ছিল- 'নারীর চোখে বিশ্ব দেখুন'। এ সম্মেলনে প্লাটফরম ফর অ্যাকশন বা বেইজিং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
১৭. ২০০০- বেইজিং প্লাস ফাইভ সম্মেলন নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়।
১৮. ২০০৫- বেইজিং প্লাস টেন সম্মেলন নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়।এভাবে নারীদের কল্যাণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রটোকল, সেমিনার ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও জাতিসংঘ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডও ১৯৭১ (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women Or CEDAW 1979) নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদটি 'সিডও' নামে পরিচিত। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি গৃহীত হয়। ১৯৮১ সালে ২০টি দেশ সমর্থন করার পর এটি কার্যকর হয়। বাংলাদেশসহ মোট ১৩২টি দেশ বর্তমানেসনদটি সমর্থন করেছে। এই সনদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- এটি নারীর অধিকারের একটি পূর্ণাঙ্গ দলি। এটি বিভিন্ন সময়ে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন ইস্যুকে সমন্বিত করে। নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে সিডও সনদের ভূমিকা নারী ও পুরুষের সমতার নীতির ভিত্তি করে সনদটি তৈরি। নারীর মানবাধিকারের বিষয়টিও এখানে উঠে । আইনগত পদ্ধতিতে এই অধিকারগুলো ম্যান্ডেটভুক্ত করার সমর্থনকারী দেশগুলো এই সনদ মেনে চলতে বাধ্য। এই সনদে শীকর করা হয় যে, বিভিন্ন দেশে নারীর লাইনগত অধিকার বলবৎ থাকলেও বৈষম্য রয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নারীর প্রবেশাধিকার খর্ব করার মাধ্যমে তা করা হয়ে থাকে। এই সনদ নারীর প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বকে নিশ্চিত করে। সিডও সনদে ৩০টি ধারা আছে। প্রথম ১৬টি ধারা নারীর প্রতি কত প্রকার বৈষম্য আছে তা বিশ্লেষণ করে। পার পরের ১৪টি যারা ব্যাখ্যা করে এ বৈষম্যগুলো কীভাবে বিলোপ করা যায়।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৯১ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষনে ২৫শে নভেম্বরকে 'আন্তর্জাতিক নির্যাতন প্ররোধ দিবস' হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৫শে নভেম্বর থেকে ১০ই ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।
জার্ভিসনে ৮ই মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। নারীর উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ জন্মগ্ন থেকে অনেক কাজ করছে এবং নারীদের অবস্থানকে অনেক উন্নত করেছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। জয় জানিবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে। তাই রক্ষা মিশনগুলোতে বাংলাদেশের অবদান ইর্ষনীয়। ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি প্রায় ১১,০০০ এর বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনী বিশ্বের ১১টি দেশে জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশি সৈন্যদের পূর্ব সাফল্যর সিমের শান্তিমিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সারা বিশ্বে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতাকে অনেক বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বব্যাপী শাস্তি প্রতিষ্ঠার মডেল হিসেবে এবং শাস্তিতির জাতি হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে। আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কারণে অন্যান্য দেশের সৈন্যরা যেখানে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছিল না সেখানে বাংলাদেশি সৈন্যরা শুধু গ্রহণযোগ্যতা নয়, পেয়েছে স্থানীয় মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষা পেয়েছে সেই দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। আইভরিকোস্টে অন্যতম বড় সড়কের নাম হয়েছে 'বাংলাদেশ সড়ক'।
শাস্তিমিশনে শুধু বালাদেশ সেনাবাহিনী নয়, পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী ও মহিলা পুলিশও নিয়োজিত আছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে জাতিসবে তথা বিশ্বে বাংলাদেশ পেয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও বিশেষ মর্যাদা।জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার মিশন সহজ ছিল না। আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে যুদ্ধংদেহী দুই বা ততোধিক সশস গেরিলাগোষ্ঠীর মাঝে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি সৈন্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অত্র বিরতি পর্যবেক্ষণ করেছে। শাস্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করেছে। এ কাজে এখন পর্যন্ত ১৩৪ জন বাংলাদেশি সৈন্য বিশ্ব শান্তির জন্য শহিদ হয়েছেন। আহত হয়েছে অনেকে। বাংলাদেশি সৈন্যরা প্রমাণ করেছে শান্তির জন্য তারা জীবন দিতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের পথে, অধিকন্তু এর আছে বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশ তার সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে বিশ্বশান্তি রক্ষায় রেখেছে এক অনন্য অবদান বৃদ্ধি করেছে দেশের মর্যাদা ও গৌরব।
আরও দেখুন...