জীববৈচিত্র্য পরিমাপের একটি সাধারণ উপায় হলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বসবাসকারী প্রজাতির মোট সংখ্যা গণনা করা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, যেখানে সারা বছর উষ্ণ থাকে, সেখানে সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য রয়েছে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, যেখানে উষ্ণ গ্রীষ্ম এবং ঠান্ডা শীত থাকে, সেখানে জীববৈচিত্র্য কম থাকে। পাহাড়ের চূড়া এবং মরুভূমির মতো শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে জীববৈচিত্র্য আরও কম।
সাধারণত, বিষুবরেখার যত কাছে একটি অঞ্চল, জীববৈচিত্র্য তত বেশি। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন রেইন ফরেস্ট অন্তত ৪০,০০০ বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রজাতি বাস করে। এটি আমাদের এই পৃথিবী নামের গ্রহের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলে নানা প্রজাতির মাছ, প্রবাল ইত্যাদির সমাহারে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক পরিবেশ রয়েছে। অনেক প্রবাল মিলে প্রবাল প্রাচীর তৈরি করে, যেগুলো আরও শত শত প্রজাতির জীবের বাসস্থান। এসব প্রবাল প্রাচীরে ক্ষুদ্র সামুদ্রিক শৈবাল থেকে থেকে শুরু করে বড় হাঙর পর্যন্ত বাস করে।
জীববৈচিত্র্য পরিমাপের আরেকটি উপায় হলো জেনেটিক বৈচিত্র্য। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আরো একটু বিস্তৃত ভাবে জানব, তবে এখন জেনে রাখি যে জীবকোষের নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে এই জিন। তুমি দুপেয়ে মানুষ নাকি চারপেয়ে বিড়াল, তোমার চুল কোঁকড়া নাকি সোজা—এই সকল তথ্যই জমা থাকে তোমার কোষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোনো না কোনো জিনে। কিছু প্রজাতির প্রায় ৪০০,০০০ (চার লক্ষ) জিন আছে। মানুষের জিনের সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার)। এই জিনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আছে যেগুলো একটি প্রজাতির সমস্ত সদস্যের জন্য একইরকম। এসব জিনই একটি গোলাপকে গোলাপ এবং একটি কুকুরকে কুকুর হিসেবে নির্ধারণ করে। কিন্তু একটি প্রজাতির জিনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু জিন থাকে ভিন্ন। এই জেনেটিক পরিবর্তনের কারণেই কিছু গোলাপ হয় গোলাপি রঙের, আর কিছু হয় সাদা। আবার মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, জিনের এরকম পার্থক্যের কারণেই কিছু লোকের চোখ বাদামি এবং কিছু লোকের চোখ নীল ।
প্রজাতির বৃহত্তর জেনেটিক বৈচিত্র্য গাছপালা এবং প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধী করে তুলতে পারে। জেনেটিক বৈচিত্র্য প্রজাতিগুলোকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে আরও ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে দেয়।
আরও দেখুন...