পৃথিবীর বেশিরভাগ জীববৈচিত্র্য মানুষের ব্যবহার এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা বাস্তুতন্ত্রকে বিশৃঙ্খল করে, এমনকি কখনো কখনো বিনষ্টও করে ফেলে। দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি সবই জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। এই হুমকি প্রজাতি বিলুপ্তির পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে। কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন যে, আগামী শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতির অর্ধেক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হলেও এখানেও নানান প্রজাতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (IUCN) এর তথ্য মতে, বাংলাদেশের ২৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও এ দেশের প্রায় ২৯টি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন। মূলত নগরায়ন, খাদ্য ও বাসস্থানের সংস্থান, ওষুধ ও পরিধেয় বস্ত্রের উপাদান জোগাড় করার কারণে ধ্বংস করা হচ্ছে জীবের নিরাপদ আবাসস্থল ।
মানব জাতি সকল প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন, জলাশয়, সমুদ্র, বনাঞ্চল উজাড় করছে সেগুলোর নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে। সুন্দরবন এবং মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়সহ বিভিন্ন বনভূমিতে বিদ্যমান প্রাণী ও জীবজন্তু, যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, সরীসৃপ, অজগর, বুনো হাঁস, কালো হাঁস, নীল গাই, রাজশকুন, বুনো মহিষ, মিঠা পানির কুমির, ঘড়িয়াল আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে হতে চরম হুমকির মধ্যে জীবনধারণ করছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৯ প্রজাতির প্রাণী হুমকির সম্মুখীন। বনবিজ্ঞানীগণের মতে, বাংলাদেশে ১২৫টির মতো বৃক্ষ প্রজাতি বিপন্ন প্রায়।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং একই বিপন্ন প্রজাতি এবং সেগুলোর আবাসস্থল রক্ষা করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এখন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ দূষণ, বন্যপ্ৰাণী হত্যা করে সেগুলোর চামড়া বা হাড় দিয়ে পণ্য তৈরি, প্রাণী পাচার ইত্যাদি সমস্যার কারণে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যপকভাবে অনুভূত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং দেশের বাইরের খ্যাতিমান সংস্থা, জাতিসংঘসহ নানা প্রতিষ্ঠান এই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সেখানকার অধিবাসী উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে জীববৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনে মানুষের গতিবিধি সীমিত রাখা হয়। বাংলাদেশেও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সরকার দেশের বনাঞ্চলের কিছু অংশ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এছাড়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ আহরণ বন্ধ রাখা ছাড়াও মানুষ সৃষ্ট বনায়নের পুরাতন গাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণী নিধন ও পাচার রোধে নতুন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। এরকম সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেকে দেশেই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এসব পদক্ষেপকে আরো জোরালো করতে বলেন। শুধু সরকারি উদ্যোগ এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, বরং সেই সঙ্গে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। সময়ের সঙ্গে যেসব জীব ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেগুলোর হয়তো ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু সবাই যত্নশীল হলে বর্তমান পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয়তো সম্ভব হবে। সেদিকে সবারই মনোযোগ দেওয়া দরকার। তাহলেই হয়তো সুন্দর পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য আবার সমৃদ্ধ ও বর্ণিল হয়ে উঠবে।
আরও দেখুন...