বিশ্বজুড়ে কতটা জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা নিয়ে জানতে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ সীমাহীন, কারণ, এখনও সেগুলোর অনেক জীববৈচিত্র্য আবিষ্কার করা বাকি আছে। পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন জীব ওই অঞ্চলের পরিবেশ অনুযায়ী অভিযোজিত হয়। অঞ্চলভিত্তিক এই জীবগোষ্ঠী এবং তার পরিবেশের জড় উপাদান মিলে যে সিস্টেম তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ইকোসিস্টেম (Ecosystem) বা বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তুতন্ত্র কে “বায়োম”ও (Biome) বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। যেমন- সবুজ বনভূমিতে, বরফে ঢাকা তুন্দ্রা অঞ্চলে, কিংবা পুকুর, হ্রদ বা সাগরের পানির নিচে বাস্তুতন্ত্রের ধরন একে অপরের চেয়ে অনেক আলাদা। যেসব প্রজাতির বৈশিষ্ট্য কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবেশে খাপ খাওয়াতে বেশি উপযোগী সেগুলো সেখানে টিকে থাকে এবং সফলভাবে বংশবৃদ্ধি করে।
সহজভাবে বলা যায়, বায়োম হলো একটি বিশাল এলাকা যা এই এলাকার গাছপালা, মাটি, জলবায়ু এবং বন্যপ্রাণী দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। পাঁচটি প্রধান ধরনের বায়োম রয়েছে: জলজ, তৃণভূমি, বন, মরুভূমি এবং তুন্দ্রা, যদিও এই বায়োমগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে আরও নির্দিষ্ট বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে, যেমন মিষ্টি জল, সামুদ্রিক, ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল (Rainforest) যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা নাতিশীতোষ্ণ হয়ে থাকে এবং জলাভূমিময় পাইনগাছের বন বা তাইগা।
একটি পুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে সেখানে মাছ, ব্যাঙ, মাছরাঙা, ফড়িং এবং আরও নানা রকম পোকামাকড় দেখতে পাবে। তৃণভূমিতে ইঁদুর, সাপ, কেঁচো ইত্যাদি প্রজাতি থাকতে পারে, আর নানা ধরনের পোকা-মাকড় তো থাকবেই। আবার বাংলাদেশের একটি তৃণভূমির সঙ্গে কানাডার একটি তৃনভূমি তুলনা করলে দেখেবে সেগুলোর জীববৈচিত্র ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য ধারণ করা বাস্তুতন্ত্রগুলোতে সেখানকার প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশগত অবস্থা থাকে।
বিশ্বের কিছু অঞ্চল, যেমন মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মাদাগাস্কারের অঞ্চলে অন্যদের চেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিশ্বের এসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে। স্থানীয় প্রজাতি হচ্ছে সেগুলো, যেগুলো শুধু কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় বিদ্যমান। যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ ফ্লোরিস্টিক (Cape Floristic) অঞ্চলে প্রায় ৬২০০টি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায় না। স্থানীয় প্রজাতির উচ্চ সংখ্যার অঞ্চলগুলোকে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট (Hotspot) বলা হয়৷
আরও দেখুন...