টার্কি পালন

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

টার্কি মেলিয়াগ্রিডিডেই পরিবারের এক ধরনের বড় আকৃতির পাখি বিশেষ। এগুলো দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। বিশ্বের সর্বত্র টার্কি গৃহপালিত পাখিরূপে লালন-পালন করা হয়। এরা পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। পালনের জন্য উন্নত অবকাঠামো দরকার হয় না । এরা প্রতিদিন মোট খাদ্যের ৫০-৬০ ভাগ নরম ঘাস খায়। তাই খাবার খরচ কম।

এ অধ্যায় শেষে আমরা

  • টার্কি পাখির ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে পারব 
  • টার্কি মুরগির পালনে জনপ্রিয় দেশসমূহের নাম বলতে পারব 
  • টার্কি পাখির জনপ্রিয়তার কারণ বলতে পারব 
  • টার্কি পাখির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারব 
  • টার্কি পালনের সুবিধাসমূহ বলতে পারব 
  • টার্কি মুরগীর জাত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারব 
  • টার্কি বাচ্চা ব্রুডিং ব্যাখ্যা করতে পারব 
  • টার্কি পালন পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব 
  • টার্কির ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, জীবাণুমুক্তকরণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে পারব
  • টার্কির বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থ্যা বর্ণনা করতে পারব 
  • প্রয়োজনীয় টিকা প্রয়োগ করতে পারব 
  • কাঙ্খিত দৈহিক ওজনে পৌঁছালে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারব 
  • বাসস্থানের জীব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারব

 

 

Content added By

টার্কি পাখির ইতিহাস

টার্কি পাখির ইতিহাস

টার্কি মেলিয়াপ্রিডিডেই পরিবারের এক ধরণের বৃহদাকৃতির পাখি বিশেষ। যার ওজন ১০/১৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই পাখি যখন সর্বপ্রথম আমেরিকাতে দেখা যায় তখন অনেকে ভয়ে পালিয়ে যায়। টার্কি পাখি দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। টার্কির বিভিন্ন জাতের মধ্যে এক প্রজাতির বুনো টার্কি মেলিয়াগ্রিস গ্যালোপাভোর উত্তর আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকার বনাঞ্চলে বসবাস করতে দেখা যায়। বুনো টার্কি গৃহপালিত প্রজাতি থেকে ভিন্নতর। অন্য জীবিত প্রজাতির মধ্যে মেলিয়াথিস ওসেলাটা বা চক্ষু আকৃতির চিহ্নবিশিষ্ট টার্কির আবাসস্থল হচ্ছে ইউকাতান উপ-দ্বীপের বনাঞ্চলে। বিশ্বের সর্বত্র টার্কি গৃহপালিত পাখিরূপে লালন-পালন করা হয়।

 

Content added By

টার্কি পাখি পরিচিতি

টার্কি পাখি পরিচিতি

টার্কি পোল্ট্রির ১১টি প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। বৈজ্ঞানিক নাম Meleagris gallopavo । এটি (Turkey) মেলিয়াগ্রিডিডেই পরিবারের এক ধরনের বড় আকৃতির পাখি বিশেষ। এগুলো দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও আকারে তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। বিশ্বের সর্বত্র টার্কি গৃহপালিত পাখিরুপে লালন- পালন করা হয। পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং পালনের জন্য উন্নত অবকাঠামো দরকার হয় না ।

আমাদের দেশের অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে পশুপাখি পালন অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। আবার কিছু প্রাণী আছে যারা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আর টার্কি পাখি সে রকম একটি সহনশীল জাত, যে কোনো পরিবেশে দ্রুত এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এরা বেশ নিরীহ ধরনের পাখি, মুক্ত অথবা খাঁচা উভয় পদ্ধতিতে পালন করা যায়। ৬-৭ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে এবং বছরে ২- ৩ বার ১০-১২টি করে ডিম দেয়। একটি স্ত্রী টার্কি ৫-৬ কেজি এবং পুরুষ টার্কি ৮-১০ কেজি ওজন হয়। এদের মাংস উৎকৃষ্ট স্বাদের। ঘাস, পোকামাকড়, সাধারণ খাবার খেতে এরা অভ্যস্ত তবে উন্নত খাবার দিলে ডিম ও মাংসের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। ৪-৫ মাস বয়সের টার্কি ক্রয় করা ভালো, এতে ঝুঁকি কম থাকে এবং লিঙ্গ নির্ধারণ সহজ হয়, এরকম বয়সের এক জোড়া টার্কির দাম হবে প্রায় ৪৫০০-৫০০০ টাকা। প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে শুরু না করে ৮-১০ জোড়া দিয়ে শুরু করা ভালো, কারণ তাতে সুবিধা অসুবিধাগুলো নির্ণয় করা সহজ হয়।

 

 

Content added By

টার্কির উৎপত্তি স্থান

টার্কির উৎপত্তি স্থান

যখন ইউরোপীরা প্রথমবারের মতো টার্কিকে আমেরিকায় দেখতে পেয়েছিলেন, তখন তারা ভুলবশতঃ ভাবল যে পাখিটি এক ধরণের গিনিয়া মুরগি (নুমিডা মেলিয়াগ্রিস)। পরবর্তীকালে তারা তুরস্ক দেশ থেকে মধ্য ইউরোপে পাখিটিকে নিয়ে আসে। গিনিয়া মুরগি বা গিনিয়া ফাউলকে টার্কি ফাউল নামেও ডাকা হয়। তাই, তুরস্ক দেশের নামানুসারে উত্তর আমেরিকার পাখিটির নামকরণ করা হয টার্কি। ১৫৫০ সালে ইংরেজ নাবিক উইলিয়াম স্ট্রিকল্যান্ড টার্কি পাখিকে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন ।

 

Content added By

টার্কি পালনে জনপ্রিয় দেশসমূহ

টার্কি পালনে জনপ্রিয় দেশসমূহ

টার্কি গৃহপালিত পাখি হিসেবে উত্তর আমেরিকাতে সর্বপ্রথম পালন করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে ১৫৫০ সালে উইলিয়াম স্ট্রিকল্যান্ড নামের এক ইংরেজ নাবিক টার্কি পাখিকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। বর্তমানে ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই পাখী কম-বেশি পালন করা হয়। পশ্চিমা দেশসমূহে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয়। তাই সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডে, ব্রাজিলে । বাংলাদেশের খামারিগন টার্কি পাখি পালনে বেশ আগ্রহী। অনেক বেকার তাদের বেকারত্ব দূর করছে টার্কি পালন করে। বাংলাদেশে পোল্ট্রি পালনের পাশাপাশি টার্কি মুরগী পালন ও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশেও এখন ব্যাক্তি উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছে ছোট-মাঝারি অনেক খামার । ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বেকার যুবকদের অনেকেই টার্কি পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিছু কিছু খামার থেকে টার্কির মাংস বিদেশে রপ্তানীর চেষ্টা চলছে। অচিরেই এ পাখির মাংস রপ্তানী অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস বেশ জনপ্রিয়। টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

 

 

Content added By

টার্কি পাখির জনপ্রিয়তার কারণ

টার্কি পাখির জনপ্রিয়তার কারণ

  • অল্প সময়ে পুরুষ টার্কির ওজন ১২/১৫ কেজি ও স্ত্রী টার্কির ওজন ৭/১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে । 
  • মাংস উৎপাদন ক্ষমতা ও চাহিদা পোল্ট্রি থেকে অনেক বেশি। 
  • টার্কির মাংস সুস্বাদু ও বিভিন্ন দেশে টার্কি উৎসব হয়ে থাকে। 
  • এটা ঝামেলাহীনভাবে দেশী মুরগীর মত পালন করা যায় । 
  • টার্কি পাখি ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে দ্রুত বাড়ে । 
  • টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারণ এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি শাক, ঘাস, লতাপাতা খেতে পছন্দ করে । 
  • টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, চর্বি কম ।
  • গরু কিংবা খাসীর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কি মাংস ব্যবহার করা যায়। 
  • নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়। যা মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী কারণ এতে আছে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম এবং বি-৬ ও ফসফরাস।
  • টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে থাকে ।
  • টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির শোভা বর্ধন করে ।

 

 

Content added By

টার্কি পাখির বৈশিষ্ট্য

টার্কি পাখির বৈশিষ্ট্য

  • ৬/৭ মাসের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে । 
  • ৪/৫টি স্ত্রী টার্কির জন্য ১টি পুরুষ থাকতে হবে। 
  • বছরে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ টি ডিম দেয় । 
  • ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হতে ২৮ দিন সময় লাগে । 
  • পূর্ণাঙ্গ পুরুষ জাতীয় টার্কির মাথা ন্যাড়া থাকে।
  • ১৪০/১৫০ দিনে পুরুষ টার্কির গড় ওজন হয় ৬-৭ কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ৩-৪ কেজি হয়। 
  • ৯৮ থেকে ১০৫ দিনে পুরুষ টার্কির বাজারজাত করনের সঠিক সময়। আর স্ত্রী টার্কির ১২০-১৪০ দিন ।
  • সাধারণত এর মাথা উজ্জ্বল লাল রঙের হয়। কখনো কখনো সাদা কিংবা উজ্জ্বল নীলাভ রঙেরও হয়ে থাকে। 
  • পুরুষ টার্কি গবলার বা টম নামেও পরিচিত। এগুলো গড়ে লম্বায় ১৩০ সে.মি. বা ৫০ ইঞ্চি হয়। 
  • বন্য টার্কি আত্মরক্ষার্থে দ্রুত দৌড়িয়ে গা ঢাকা দেয়। কিন্তু এটি স্বল্প দূরত্বে উড়তে পারে। 
  • স্ত্রী জাতীয় টার্কি সাধারণতঃ পুরুষ পাখির তুলনায় ওজনে অর্ধেক হয়।

টার্কি মুরগির মাংসের গুনাগুন ও উপকারিতা

 

  • টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসির মাংসের বিকল্প হতে পারে। 
  • টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি-৬ ও ফসফরাস থাকে। এ উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী । 
  • নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টোরল কমে যায়। 
  • টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে । 
  • টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে থাকে ।

 

 

 

Content added By

টার্কি পালনের সুবিধাসমূহ

টার্কি পালনের সুবিধাসমূহ:

  • টার্কি বাণিজ্যিকভাবে মাংস, ডিম ও পোষা প্রাণী হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। 
  • টার্কি পালনে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই । 
  • টার্কি বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদনকারী একটি প্রজাতি তবে ডিমের জন্য নয়। 
  • টার্কি ব্রয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত বাড়ে।
  • টার্কি পালনে খাদ্য খরচ কম কারণ এরা দানাদার খাদ্যের চেয়ে ঘাস, লতা-পাতা জাতীয় খাদ্য বেশি খায় ।
  • টার্কি যেহেতু দেখতে খুব সুন্দর তাই এরা বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে । 
  • টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ অন্য প্রজাতির পোল্ট্রির চেয়ে বেশি এবং চর্বির আধিক্য কিছুটা কম ।
  • টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ আয়রন, জিংক, পটাসিয়াম, ফসফরাস থাকে। এ উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী এবং নিয়মিত এ মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়। 
  • টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকে বিধায় এদের মাংস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই ও ফসফরাস থাকে।
  • টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে থাকে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। 
  • অন্যান্য পাখীর তুলনায় এর রোগ বালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে রোগের ঝুঁকি কম হয় । 
  • নিয়মিত এ মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়।

 

 

Content added By

টার্কির জাতসমুহ

১। রয়েল পাম টার্কি (Royal Palm Turkey) 

২। আদর্শ ব্রোঞ্জ টার্কি (Ideal bronze Turkey) 

৩। বেল্টসভিল স্মাল হোয়াইট টার্কি (Beltsville Small White Turkey) 

৪। মিডগেট হোয়াইট টার্কি (Midgate White Turkey) 

৫। বারবোন রেডস্ টার্কি (Bourbon Reds Turkey) 

৬। ব্লাক টার্কি (Black Turkey) 

৭। ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট টার্কি (Broad Breasted White Turkey) 

৮। ন্যারাগ্যানসেট টার্কি (Narraganset Turkey) 

৯। ব্লু স্লট টার্কি (Blue slot Turkey) 

১০। হেরিটেজ টার্কি (Heritage Turkey)

 

            রয়েল পাম টার্কি (Royal Palm Turkey)

 

উৎপত্তিস্থল : যুক্তরাজ্য। 

রয়েল পাম টার্কি শোভা বর্ধক হিসেবে বেশি বিখ্যাত। এ জাতের টার্কি ছোট খামারে শোভাবর্ধনকারী টার্কি হিসেবে পালন করা হয়। ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েল পাম টার্কি প্রথম পালন করা হয়। ১৯৭০ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক রয়েল পাম টার্কি স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে এটি বিলুপ্ত প্রায় জাত হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয় এবং তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

বৈশিষ্ট্যঃ

  • এ জাতের টার্কি আকারে ছোট কিন্তু দেখতে সুন্দর। পালক অনেকটা সাদা ও উজ্জ্বল মেঙ্গানিক কালো। 
  • রয়েল পাম টার্কির পিঠের পালক কালো রঙের হলেও গালকের গোড়ার ভেতরে সাদা ।
  • পুরুষ টার্কির গড় ওজন ৭-১০ কেজি এবং বরফ স্ত্রী টার্কির গড় ওজন ৪.৫-৫.৫ কেজি। 
  • এ জাতের টার্কির লেজ সম্পূর্ণ সাদা এবং প্রতিটি পালকের প্রান্তে কালো রঙের ব্যান্ড থাকে।
  • মাথা, গলা ও ওৱাটল সাদা কিন্তু ঠোঁট শৃংঙ্গের ন্যায়। শ্যাংক ও নব গাঢ় লাল। 
  • ছোট খামারে শোভাবর্ধনকারী জাত হিসেবে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এ টার্কি পালন করা হয়। 
  • চঞ্চল প্রকৃতির টার্কি। নিজের খাদ্য নিজে সংগ্রহ করে। 
  • এ জাতের টার্কি চামড়ার জন্য বিখ্যাত।
  • পুরুষ টার্কি সাধারণত আক্রমণাত্মক না এবং পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী টার্কি মাতৃত্ববন্ধনে অপূর্ব। 
  • স্ত্রী টার্কি গোলাপি থেকে হালকা বাদামি রঙের ফোটা ফোটা দাগযুক্ত ডিম দেয়। 
  • যে কোন আবহাওয়ায় বেঁচে থাকে।

 

                      বারবোন রেভস্ টার্কি (Bourbon Reds Turkey) 

এটি যুক্তরাষ্ট্রের গৃহপালিত টার্কি। দেহের পালক একমাত্র লালচে রঙের । উনবিংশ শতকের পূর্বে এ জাতের টার্কির আদি নিবাস ছিল কেনটাকী (Kentucky) এবং পেনসিলভ্যানিয়া (Pennsylvania) রাজ্যে। হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্রোঞ্জ টার্কির সংকরায়নে অত্যুৎসাহী হয়ে এ লাভের টার্কির সৃষ্টি ছিল মূল লক্ষ্য। ১৯০৯ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক এ জাতের টার্কিকে ভিন্ন জাতের টার্কি হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বারযোগ রেড টার্কিকে ১৯৩০ সাল এবং ১৯৪০ সালে মা উৎপাদনকারী জাত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। একবিংশ শতাব্দী থেকে ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট জাতের টার্কির ৰাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হলে অন্যান্য জাতের টার্কি ব্রিডের ন্যায় এ জাভের টার্কি ও প্রতীয়মান হতে শুরু করে। এ জাতের টার্কি যুক্তরাষ্ট্রের হেরিটেজ জাতের টার্কি ফ্রিড হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য

  • দেহের পালকের গোড়া কালো রঙের এবং পালকের প্রথমাংশে সাদা রঙের। 
  • বারবোন রেড টার্কির ঠোটের মাথা শৃংঙ্গের রঙের এবং ঠোঁটের গোড়া কালে রঙের। 
  • এটি আকারে অন্যান্য লাভের থেকে বড় ও খুবই আকর্ষণীয়।
  • গলা, ভরাট এর রঙ লাল বা পরিবর্তনশীল হয়ে নীলাভ সাদা রঙের হয়।
  • শ্যাংক ও নখ গোলাপী। এ জাতের টার্কি মাংস উৎপাদনকারী জাত হিসেবে পালন করা হয়।
  • পুরুষ টার্কির গড় ওজন ১৫ কেজি এবং বয়স্ক স্ত্রী টার্কির গড় ওজন ৮ কেজি। 
  • বারবোন রেড টার্কি শক্তিশালী ও সহাক্ষমতা সম্পন্ন জাতের । 
  • দেখতে বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। 
  • এ জাতের টার্কি প্রদর্শনের জন্য খুবই ভাল। 
  • বাড়ির আঙ্গিনাতেও ছেড়ে দিয়ে এ জাতের টার্কি পালন পালন করা যায় ।
  • এ জাতের টার্কি বেশ শান্ত প্রকৃতির আবার কখনো কখনো চটে যেতে পারে। 
  • বর্তমানে এ টার্কি মাংস উৎপাদনকারী জাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
  • তৃণভোজি পাখি হিসেবে বিখ্যাত । 
  • সব আবহাওয়া ও জলবাহুতে বেঁচে থাকে।

 

                  ব্লু স্লট টার্কি (Blue slot Turkey)

এটি আমেরিকার গৃহপালিত টার্কি। এ জাতের টার্কি দেহের পালকের জন্য স্লট ধূসর রঙের টার্কি হিসেবে পরিচিত। ধারণা করা হয় যে ব্ল্যাক নরফোক এবং আমেরিকার পূর্বঞ্চলীয় বন্য টার্কির সংকরায়নের মাধ্যমে এ জাতের টার্কির উন্নয়ন করা হয়েছে। কেউ কেউ মনে করে ব্ল্যাক টার্কি এবং হোয়াইট জাতের টার্কি সংকরায়নের এ জাতের টার্কির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। স্লট টার্কি ১৮৭৪ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বর্তমানে এ জাতের টার্কি বিলুপ্ত প্রার টার্কি হিসেবে সরকারি লাইভস্টক বিভাগ কর্তৃক তালিকাভূক্ত করা হয়।

বৈশিষ্ট্য ঃ

  • এটি আকারে মাঝারি থেকে বড়। 
  • এ জাতের টার্কি বেশ সুন্দর । 
  • এ জাতের টার্কির দেহের পালকে ছোট ছোট কালো দাগ দৃশ্যমান । 
  • স্লট টার্কির মাখা, ওয়াল ও ঘাড় পাল থেকে সাদাটে নীলাভ রঙের। 
  • এ জাতের টার্কির ঠোট, শিং এর কালারের যত। 
  • চোখ বাদামি। 
  • শ্যাংক ও নখ গোলাপী। 
  • বয়স্ক পুরুষ টার্কির গড় ওজন ১০.৫ কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন ৬.৪ কেজি।
  • এটি মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয় । 
  • প্লট টার্কি সহনশীল ও শান্ত 
  • কোন কোন সময় এ জাতের টার্কি আক্রমণাত্মক ভঙ্গি প্রদর্শন করে। 
  • মাংসের ঘ্রাণ খুবই ভাল । 
  • স্ত্রী টার্কি ফোটা ফোটা দাগযুক্ত ক্রিম বা বাদামি রঙের ডিম পাড়ে। 
  • এটি খুবই শক্তিশালী ও সহাক্ষমতা সম্পন্ন ।

 

                    আদর্শ ব্রোঞ্জ টার্কি (Ideal bronze Turkey)

ব্রোঞ্জ টার্কির উৎপত্তি হয়েছে ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক কর্তৃক আমেরিকার বন্য টার্কি ও গৃহপালিত টার্কির ক্রসের মাধ্যমে। দেহ বিচিত্র বর্ণের ও চকচকে ব্রোঞ্জ রঙের পালকের জন্য নামকরণ করা হয়েছে ব্রোঞ্জ ব্রিড টার্কি। ব্রোঞ্জ টার্কি ১৭০০ সালের পরে সনাক্ত করা হয়। ব্রোঞ্জ টার্কি ১৮৭৪ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ব্রোঞ্জ টার্কি ব্রিড সুনির্দিষ্টভাবে দু'ধরনের হয়ে থাকে । একটি স্ট্যান্ডার্ড ব্রোঞ্জ ও ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ টার্কি।

বৈশিষ্ট্য :

  • এটি মাঝারি থেকে বড় হয় । 
  • খুবই সুন্দর ও দেহের পালক বৈচিত্র্যময়। 
  • বড় আকারে টার্কিকে ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ টার্কি এবং ছোট জাতের টার্কিকে ব্রোঞ্জ টার্কি বলা হয়ে থাকে ।
  • ব্রোঞ্জ টার্কি দেখতে বৈচিত্র্যতায় পরিপূর্ণ এবং সুন্দর । 
  • স্ট্যান্ডার্ড ব্রোঞ্জ টার্কি সাধারণত ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ টার্কি থেকে হালকা 
  • এটি মাংসের জন্য পালন করা হয়। 
  • ব্রোঞ্জ টার্কি শক্তিশালী ও সহ্যক্ষমতা সম্পন্ন । 
  • এরা বেশি দিন বাঁচে এবং প্রাকৃতিকভাবে যৌন মিলনে সক্ষম । 
  • এ টার্কির দৈহিক বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়। 
  • যে কোন আবহাওয়ায় বেঁচে থাকে।

 

              ন্যারাগানসেট টার্কি :

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় জঙ্গলের বন্য টার্কি ও গৃহপালিত টার্কির মধ্যে ক্রস করে ন্যারাগানসেট টার্কি তৈরি করা হয়েছে। এ প্রজাতির টার্কি আদর্শ ঐতিহ্যবাহী ভ্যারাইটি এবং এ জাতের টার্কির নামকরণ কর হয়েছে ন্যারাগানসেট নামক জায়গার নামানুসারে। এ জাতের টার্কি জনপ্রিয় ছিল না। ন্যারাগানসেট টার্কির মূল ভিত্তি শুরু হয়েছিল নিউ ইংল্যান্ডের টার্কি শিল্প বিশেষ করে রোড আইল্যান্ড ও কোনেকটিকাট থেকে। এ জারে টার্কির মধ্য আটলান্টিক রাজ্য ও মধ্য পশ্চিম আমেরিকার পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক ১৮৭৪ সালে স্বীকৃতি পায় ।

বৈশিষ্ট্য

  • এটি আকারে আন্যান্য জাতের টার্কি থেকে বড়। 
  • পালক দেখতে বেশ সুন্দর। 
  • পালক সাধারণত কালো, তামাটে বর্ণের, ধূসর ও সাদাটে। 
  • এ জাতের টার্কি সাধারণত ব্রোঞ্জ টার্কির ন্যায় মনে হয়। 
  • পালক ধূসর অথবা হালকা কালো থেকে তাম্র বর্ণের। 
  • বয়স্ক পুরুষ টার্কির গড় ওজন ১০-১২ কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন ৫.৫- ৭ কেজি।
  • ন্যারাগানসেট টার্কি দেখতে খুবই সুন্দর। অনেক সৌখিন মানুষ বাসাবাড়িতে শোভবর্ধনকারী হিসেবে পালন করে। 
  • বেশির ভাগই পালন করা হয় মাংসের জন্য । 
  • ন্যারাগানসেট টার্কি অত্যন্ত শক্তিশালী ও মহাক্ষমতা সম্পন্ন। 
  • এ জাতের টার্কি দ্রুত পরিপক্কতা অর্জন করে। 
  • স্ত্রী টার্কি মাতৃত্বের গুণাবলী বহন করে। 
  • নিজেরাই নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। 
  • মাঠে চড়ে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। 
  • বিশেষ করে ঘাস ফড়িং ও ঝি ঝি পোকা এদের প্রিয় খাবার। 
  • এরা ডিম বেশি পাড়ে। 
  • এ জাতের টার্কি দ্রুত দৌড়াতে ও উড়তে পারে । 
  • রাতের অন্ধকারে গাছের ডালে দাঁড়িয়ে থেকে ঘুমাতেও পারে।

 

          ব্ল্যাক টার্কি

এটি ইউরোপের গৃহপালিত টার্কি। স্প্যানিশ গবেষক দল কর্তৃক এজটেক টার্কি ম্যাক্সিকো থেকে নিয়ে এলে ব্লাক টার্কির উন্নয়ন ঘটান ইউরোপে এসে। ইনাকে যুক্তরাজ্যে পুরোনো এবং বিরল জাতের টার্কি হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্ল্যাক টার্কি স্পেনে জনপ্রিয় এবং এ জাতের টার্কি ব্ল্যাক স্প্যানিশ টার্কি নামে পরিচিত। ব্ল্যাক টার্কি ব্রিড সরকারি ভাবে ১৮৭৪ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বর্তমানে এ জাতের টার্কি ইউরোপেও বহুল ববহৃত হয়।

বৈশিষ্ট্য :

  • পুরুষ টার্কির গড় ওজন ১০ কেজি এবং স্ত্রী টার্কির গড় ওজন ৬.৫ কেজি। 
  • মাংস উৎপাদনের জন্য সাধারণত এ জাতের টার্কি পালন করা হয়। 
  • ব্ল্যাক টার্কি সাধারণত মাঝারি থেকে বড় হয়। 
  • দেখতে সুন্দর। দেহের পালক আলোকোজ্জ্বল ও উজ্জ্বল সবুজাভাব। 
  • বাচ্চা টার্কি সাদা অথবা ব্রোজ রঙের পালকযুক্ত কিন্তু বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে ব্ল্যাক রঙে পরিবর্তিত হয়। 
  • ঠোঁট কালো রঙের, ওয়াটল উজ্জ্বল লাল রঙেন। 
  • দেহের পালক ব্ল্যাক রঙের হলেও চামড়ার রঙ সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। 
  • ব্ল্যাক টার্কি সাধারণত গৃহপালিত টার্কির মধ্যে সহনশীল প্রকৃতির টার্কি। 
  • আচরণে শান্ত স্বভাবের। 
  • এ জাতের টার্কির মাংস স্বাদে ও গন্ধে খুবই ভাল । 
  • যে কোন আবহাওয়ায় বেঁচে থাকে।

 

            হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি

পুরাতন জাতের গৃহপালিত টার্কির মধ্যে হোয়াইট ল্যান্ড টার্কি অন্যতম যা সাদা পালকের জন্য হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি নামে পরিচিত। ইউরোপিয়ান হোয়াইট টার্কির সাথে আমেরিকার নিজস্ব টার্কির ক্রস করে ১৮৭৪ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন হোৱাইট হল্যান্ড জাতের টার্কি উদ্ভাবন করেন। হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি বিরল জাতের বেস্টসভিল স্বপ্ন হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি সৃষ্টির জন্যও মূল ভিত্তি। হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোজ টার্কির সাথে ক্রস করে ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি সৃষ্টি করা হয় যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ব্রিড হিসেবে।

বৈশিষ্ট্য :

  • ব্রড ব্রেস্টেড হোৱাইট হল্যান্ড টার্কি বেশ বড় আকারের। 
  • বুকের আকার ছোট এবং পা অপেক্ষাকৃত লম্বা । 
  • দেখতে খুব সুন্দর যা ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট হল্যান্ড টার্কি থেকে আলাদা করা কঠিন । 
  • এরা সাদা বর্ণের এবং মাথা নীলাভ লাল। 
  • কেশগুচ্ছ কালচে ছোট গোলাপী। 
  • ডানা ও ওয়াটল গোলাপী, শ্যাংক ও নখ সাদা । 
  • মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। 
  • এই টার্কি বেশ শক্তিশালী জাতের টার্কি হিসেবে পরিচিত। 
  • এরা আকারে ছোট থেকে মাঝারী । চোখ বাদামি । 
  • পুরুষ টার্কির গড় ওজন প্রায় ১৬ কেজি 
  • স্ত্রী টার্কির গড় ওজন প্রায় ৯ কেজি। 
  • শান্ত প্রকৃতির তবে আক্রমাণাত্মক হতে পারে 
  • স্ত্রী টার্কি বেশ বড় আকারের ডিম দেয়। 
  • ডিমের রঙ গোলাপী ক্রিম থেকে হালকা বাদামি রঙের ফোটা ফোটা দাগযুক্ত হয়।

 

            মিডগেট হোয়াইট টার্কি

এটি আমেরিকার গৃহপালিত টার্কি। এ জাতের টার্কির উত্তরাধিকার বিরুল। ডা. জে. রবার্ট স্মিথ কর্তৃক ১৯৬ সালের পূর্বে মিডগেট হোয়াইট টার্কির উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন। এ জাতের টার্কি ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট জাতের টার্কির আদলে সংক্ষরণ করা হয়। মিডলেট হোৱাইট টার্কি ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট জাতের টার্কির উত্তরাধিকার। এ জাতের টার্কি ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট জাতের টার্কি ও রয়েল পাম টার্কির ক্রস করে তৈরি করা হয়।

বৈশিষ্ট্য :

  • বয়স্ক পুরুষ টার্কির গড় ওজন ৬ কেজি 
  • স্ত্রী টার্কির গড় ওজন ৩.৫-৪.৫ কেজি। 
  • মাংসের জন্য পালন করা হয়। 
  • এরা ছোট আকারের হয়। 
  • ৰয়ক্ষ একটি জীবন্ত টার্কির ওজন একটি বড় আকারের মুরগির চেয়ে একটু বেশি হয়। 
  • এরা বাণিজ্যিক ক্ষুদ্রাকৃতির ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট জাতের টার্কির ন্যায় । 
  • এরা মজবুত ও সতেজ টার্কি । 
  • উচ্চ মাত্রার ডিম উৎপাদন, ডিমের ভালো নিষিক্ত ও যথাযথ হ্যাচাবিলিটির জন্য বাছাই করা হয়। 
  • বছরে গড়ে ৬০-৮০ টি ডিম দেয় এবং হ্যাচাবিলিটি ৭৫-৮০%। 
  • ডিমের বর্ণ হালকা বাদামি থেকে গোলাপী ক্রিম, সেই সাথে কিছু দাগ থাকে। 
  • কিছু কিছু টার্কি উড়তে পারে তবে বয়স বেশি হলে শরীর ভারী হওয়ার কারণে উড়তে কষ্ট হয়।

 

 

 

 

Content added By

টার্কির বাচ্চা ব্রুডিং

টার্কির বাচ্চা ব্রুডিং

টার্কির বাচ্চাকে কৃত্রিমভাবে তাপ দিয়ে লালন পালন করাকে ব্রুডিং বলে। সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত টার্কির বাচ্চাকে ব্রুডিং করা হয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর তারা তাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কারণ তার শরীরে পর্যাপ্ত পালক থাকে না ।

উৎপাদিত বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট, বাচ্চার দেহের এই তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রতিপালন করতে হয়। তাই পীড়নের হাত থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্যই ব্রুডিং করা হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চাকে তাপ দেওয়া হয় তাকে ব্রুডার বলে। ৭ ফুট থেকে ৮ ফুট ব্যাসের একটি চিকগার্ডের ভেতর ৩০০-৪০০টি বাচ্চা প্রাথমিকভাবে ব্রুডিং করা যাবে।

ব্রুডিং এর সুফল 

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । 

২. বিভিন্ন পীড়ন থেকে সুরক্ষিত থাকে। 

৩. সমস্ত বাচ্চা সমানভাবে বেড়ে উঠে 

৪. শারীরিক গঠন সঠিক ভাবে হয় । 

৫. বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করা যায়। 

৬. ঠান্ডা, গরম, বৃষ্টি, প্রতিকূল আবহাওয়া ইত্যাদি থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করা যায় ।

 

ব্রুডিংকালীন সময়ে ব্রুডারে তাপের উৎস হিসেবে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেমন- 

১. বিদ্যুৎ : বৈদ্যুতিক বাল্ব বা হিটার । 

২. কেরোসিন : কেরোসিন হিটার । 

৩. গ্যাস : গ্যাস হিটার ।

ব্রুডার হাইজে প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা দিয়ে ব্রুডিং আরম্ভ করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হয়।

ব্রুডিং তাপমাত্রা

উপরে যে তাপমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্রুডারের তাপমাত্রা। হোভার ও চিক গার্ডের মাঝখানে মেঝে থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি উঁচুতে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে এই তাপমাত্রা নিরূপণ করা হয়।

থার্মোমিটার ঘড়াও ব্রুডারের তাপ সঠিক হয়েছে কিনা তা ব্রুডারে বাচ্চার অবস্থান এবং চলাফেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায় ।

 

ক) কাম্য তাপমাত্রা

যে তাপমাত্রায় বাচ্চাগুলো আরাম বোধ করে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে তাই কাম্য তাপমাত্রা। 

কাম্য তাপমাত্রার লক্ষণ : 

বাচ্চা চিকগার্ডের মধ্যে সর্বত্র সমভাবে বিস্তৃতি থাকবে ও চলাফেরা করবে। খাদ্য ও পানি গ্রহণের স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যাবে। বাচ্চাগুলোর চলাফেরায় চঞ্চলতা পরিলক্ষিত হবে।

খ) অতিরিক্ত ঠান্ডা : 

যদি ব্রুডারে তাপমাত্রা কাম্য তাপমাত্রার তুলনায় কম হয় তখন বাচ্চাগুলো ঠান্ডা অনুভব করে। 

কম তাপমাত্রার লক্ষণ : 

ব্রুডারের নিচে তাপের উৎসের কাছে সমস্ত বাচ্চা জড়ো হয়ে থাকবে। চি চি শব্দ করে ঘাড় ছোট করে গুটি সুটি মেরে থাকে। একটির উপর আরেকটি বাচ্চা উঠার প্রবণতা দেখা যায় অর্থাৎ গাদাগাদি করে থাকে। খাদ্য ও পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

প্রতিকার : 

ব্রুডার পর্যাপ্ত তাপ উৎপাদনে সক্ষম কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিমান তাপ উৎপাদনে সক্ষম ব্রুডার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত ব্রুডারের তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা করা এবং ঠান্ডা বাতাস যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

গ) অতিরিক্ত গরম 

ব্রুডারের কাম্য তাপমাত্রার তুলনায় অধিক তাপমাত্রা থাকলে বাচ্চাগুলো অধিক গরম অনুভব করে। 

অতিরিক্ত তাপমাত্রার লক্ষণ: বাচ্চা গুলো তাপের উৎস হতে দুরে সরে গিয়ে চিকগার্ডের কাছাকাছি অবস্থান করে। মুখ হাঁ করে শ্বাস নিতে থাকে। খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে যায় । 

প্রতিকার : 

তাপের উৎসের সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। ঘর ঠান্ডা করার জন্য বেড়া দেয়া পর্দা তুলে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, ব্রুডার ঘরে অতিরক্তি ঠান্ডা যেমন ক্ষতিকর তেমনিই অতিরিক্ত গরমও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। উভয় ক্ষেত্রেই বাচ্চার দেহে পীড়ণ পড়ে ও বাচ্চা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই ব্রুডার ঘরের কাম্য তাপমাত্রা সব সময় বজায় রাখতে হবে।

 

 

Content added || updated By

ব্রুডিংকালীন খাদ্য, পানি ও আলোক ব্যবস্থাপনা

ব্রুডিংকালীন খাদ্য, পানি ও আলোক ব্যবস্থাপনা

ব্রুডিংকালীন সময়ে খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা : 

টার্কির সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধের জন্য সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি জীবাণুমুক্ত ও রাসায়নিক পদার্থমুক্ত হতে হবে।

  • টার্কি বাচ্চা হ্যাচারি থেকে আনার পর গ্লুকোজ, পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বা ডাব্লিউ এস এবং ভিটামিন সি মিশ্রিত পানি খেতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে- গ্লুকোজ = ২৫ গ্রাম ১ লিটার পানিতে ডাব্লিউ এস = ১ গ্রাম ২ লিটার পানিতে ভিটামিন সি = ১ গ্রাম ৩ লিটার পানিতে ব্রুডারে পূর্ব থেকে পাত্রে পানি প্রদান করা হয়।
  • ভিটামিন মিশ্রিত পানি পানে বাচ্চার ভ্রমণকালীন সময়ে পীড়ন হ্রাস পাবে, পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করবে এবং খাদ্য পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
  • ভিটামিন মিশ্রিত পানি পান করার ৩ ঘন্টা পরে বাচ্চার জন্য তৈরিকৃত খাদ্য অল্প পরিমানে ট্রেতে সরবরাহ করতে হবে ।
  • কোন বাচ্চা পানি পান করতে না পারলে হাতে ধরে পানি পান করাতে হবে । 
  • খাদ্য প্রদানের পূর্বে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে প্রতিটি বাচ্চা সুষ্ঠুভাবে পানি পান করেছে । 
  • প্রথম ১-৪ দিন পর্যন্ত লিটারে ট্রে পাত্রের পাশাপাশি ট্রাফ পাত্রে খাবার দিতে হবে । 
  • ৪র্থ দিনের পর মেঝেতে বিছানো খাদ্য তুলে ফেলতে হয় । খাদ্য কখনই ব্রুডারের নিচে ছিটানো উচিত নয় ।
  • ব্রয়লার বাচ্চার প্রাথমিক খাদ্য বা স্টার্টার রেশন হিসাবে ক্রাম্বল খাদ্য ব্যবহার করা হয় । 
  • খাদ্য দেওয়ার সময় কখনও পাত্র পরিপূর্ণ করে দেওয়া ঠিক না । পাত্রের অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ খালি রাখলে অপচয় কম হয় ।
  • প্রথম দিন ১৫ ঘন্টা পর্যন্ত বাচ্চাদের গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি দিতে হয় । 
  • দিনের খাদ্য ২ বা ৩ ভাগে ভাগ করে সকালে-বিকালে বা সকালে-দুপুরে ও বিকালে দেওয়া যেতে পারে ।
  • প্রতিদিন একই সময় খাবার প্রদান করতে হবে । 
  • প্রতিদিন পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হয় ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি সরবরাহ করতে হয় । 
  • সাধারন তাপমাত্রায় বাচ্চা দৈনিক যে পরিমান খাদ্য খায়, তার দ্বিগুণ পানি খায় । 
  • বাচ্চা যাতে প্রথম ৩ সপ্তাহ সব সময় পেট ভরে খেতে পারে- সেটা খেয়াল রাখতে হবে । 
  • এরপর দিনে ৪/৫ বার করে খাদ্য দিতে হবে । ২ ঘন্টার বেশি সময় যেন খাদ্য পাত্র খালি না থাকে।
  • সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধকরণে ব্লিচিং পাউডার বা ৩ পিপিএম ক্লোরিন ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে ভ্যাকসিন ও ভিটামিন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগের সময় ব্লিচিং পাউডার পানিতে মেশানো যাবে না ।

টার্কি মুরগির বাচ্চা পালতে যা জানতে হয়: বাচ্চার শরীরে লোম পড়ে নতুন পালক না গজানো পর্যন্ত তারা শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর পর ৬-৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত তাপের ব্যবস্থাসহ বাচ্চাকে সর্বাধিক যত্ন নিতে হয়।

 

 

Content added By

টার্কি পালন পদ্ধতি

টার্কি পালন পদ্ধতি

দুইভাবে টার্কি পালন করা যায়- 

০১. মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি ও 

০২. নিবিড় পালন পদ্ধতি

মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি 

মুক্ত চারণ পদ্ধতিতে এক একর ঘেরা জমিতে ২০০-২৫০টি পূর্ণ বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। রাতে পাখি প্রতি ৩-৪ বর্গফুট হারে জায়গা লাগে। চরে খাওয়ার সময় তাদের শিকারি জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। ছায়া ও শীতল পরিবেশের জন্য খামারে গাছ রোপণ করতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে এতে পরজীবির সংক্রমণ কম হয়।

সুবিধা : খাবারের খরচ ৫০ শতাংশ কম হয়; স্বল্প বিনিয়োগ : খরচের তুলনায় লাভের হার বেশি। 

মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় খাবার : 

টার্কি খুব ভালোভাবে আবর্জনা খুঁটে খায় বলে এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক, রান্নাঘরের বর্জ্য ও উঁইপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে যা খাবারের খরচকে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুসার্ন, ডেসম্যান্থাস, স্টাইলো এসব খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখিদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হতে সুস্থ রাখার জন্য খাবারে ঝিনুকের খোসা মিশিয়ে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম হিসেবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ যাতে কম হয় সে জন্য শাক সবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের ১০ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য রক্ষা: মুক্তচারণ ব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ (গোল কৃমি) ও বাহ্যিক (ফাউল মাইট) পরজীবি সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই পাখিদের ভালো বিকাশের জন্য মাসে একবার ভিওয়ার্মিং ও ডিপিং করা আবশ্যক ।

 

নিবিড় পালন পদ্ধতি :

বাসস্থান টার্কিদের রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শিকারি জীবান্ত থেকে বাঁচায় ও আরাম জোগায়। অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চলগুলোতে খামার করলে ঘরগুলো লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। খোলা ঘরের গ্রন্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৫ থেকে ৩.৩ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে। বৃষ্টির ঝাপটা আটকাতে ঘরের চালা এক মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সা, টেকসই, নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বন্ধ কংক্রিটের হওয়া বাঞ্ছনীয়। কম বয়সি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির ঘরের মধ্যে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পাশাপাশি দুটি ঘরের মধ্যে অন্তত ২০ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে। ভিপ লিটার পদ্ধতিতে টার্কি পালনের সাধারণ পরিচালনা ব্যবস্থা মুরগি পালনের মতো, তবে বড় আকারের পাখিটির জন্য যথাযথ বসবাস, ওয়াটারার ও ফিডারের জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সুবিধা : 

১। উন্নত উৎপাদন দক্ষতাঃ 

২। উন্নততর পরিচালন ও ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ।

নিবিড় পালন ব্যবস্থার খাদ্যঃ 

নিবিড় পালন ব্যবস্থায় টার্কিকে ম্যাশ ও পেলেট (ট্যাবলেট) দুইভাবেই খাবার দিতে হবে। মুরগির তুলনায় টার্কির শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি। সেজন্য টার্কির খাবারে এগুলোর আধিক্য থাকতে হবে। খাবার মাটিতে না দিয়ে ফিডারে দিতে হবে। যেহেতু পুরুষ ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শরি (এনার্জি) পরিমাণ আলাদা, ভাই ভালো ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথকভাবে পালন করতে হবে। টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানির প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে ওয়াটারারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং আপেক্ষতৃক ঠাণ্ডা সময়ে খাবার দিতে হবে। পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের খোসার গুঁড়া দিতে হবে এবং খাবারে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলে তা আস্তে আস্তে করতে হবে।

সবুজ খাদ্য : নিবিড় পদ্ধতিতে ড্রাই ম্যাশ হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেয়া যায় । সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুসার্ন (প্রথম শ্রেণীর সবুজ খাদ্য) প্রয়োজন। এছাড়া খাবারের খরচ কম করার জন্য ডেসম্যান্থাস ও স্টাইলো কুচি করে টার্কিদের খাওয়ানো যেতে পারে । 

টার্কির খাবার তালিকা 

টার্কি মুরগির খাবার তালিকা এর পালনের উদ্দেশ্য, ধরণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে এখনো হাইব্রিড বা জেনেটিক্যালি পটেনশিয়াল টার্কি পালন শুরু হয়নি। তবে বানিজ্যিকভাবে হেরিটেজ টার্কি পালন হচ্ছে এবং টার্কি পালন দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

হেরিটেজ টার্কি আংশিক খোলা পদ্ধতিতে পালন করা লাভজনক। এই পদ্ধতিতে টার্কি পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়। সাধারণত এরা লতা পাতা, ঘাস, কলমি শাক, বাধাকপি, হেলেঞ্চা ইত্যদি শাক খেয়ে থাকে । টার্কির খাবার তালিকার একটি চার্ট নিচে দেয়া হলো। মোট খাদ্যের ২৫% থেকে ৫০% পর্যন্ত দানাদার খাদ্য দেয়া যেতে পারে।

 

টার্কির খাদ্য তালিকা

বানিজ্যিক বা সম্পূর্ন আবদ্ধ পরিবেশে টার্কি পালনে সাধারণত ৩ থেকে ৪ ধরনের খাদ্য দেয়া হয়। এর ফিড ফরমুলেশন পদ্ধতি অনেকটাই ব্রয়লার মুরগির মত। এর পুষ্টিমান নিম্নরুপ ।

 

 

Content added By

টার্কির বিভিন্ন রোগের কারণ, সংক্রমণ, লক্ষণ, রোগের চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

টার্কির বিভিন্ন রোগের কারণ, সংক্রমণ, লক্ষণ, রোগের চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা 

টার্কির রাণীক্ষেত রোগ 

রাণীক্ষেত টার্কির ভাইরাসজনিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। পৃথিবীর কম বেশি প্রত্যেক দেশে এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। বাংলাদেশের টার্কির রোগগুলোর মধ্যে রাণীক্ষেত সবচেয়ে মারাত্বক ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর এ রোগে দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়। এ রোগের ব্যাপকতা এবং ক্ষরক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে, টার্কি পালনের জন্য রাণীক্ষেত রোগ একটি প্রধান অন্তরার। বয়স্ক অপেক্ষা বাচ্চা টার্কি এতে বেশি মারাত্মক আক্রান্ত হয়। সাধারনত শুল্ক আবহাওয়ায়, যেমন- শীত ও বসন্ত কালে এ রোগটি বেশি দেখা যায়।

রোগের কারণঃ প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস নামক এক প্রজাতির প্যারামিক্সো ভাইরাস এ রোগের কারণ ।

রোগ সংক্রমণ 

নিম্নলিখিতভাবে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। যেমন-

  • বাতাসের মাধ্যমে আক্রান্ত স্থান থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে। 
  • অসুস্থ বা বাহুক পাখির সর্দি, হাঁচি-কাশি থেকে অন্যস্থানে জীবাণু ছড়াতে পারে। 
  • আক্রান্ত এবং অতিথি পাখি আমদানির মাধ্যমে। 
  • মৃত মুরগি বা পাখি যেখানে সেখানে ফেললে। 
  • বন্য পশুপাখির মাধ্যমে। 
  • পরিচর্যাকারী বা দর্শনার্থী মানুষের জামা, হুতা বা খামারের ঘ্যাপাতির মাধ্যমে। 
  • খাদ্য, পানি ও লিটারের মাধ্যমে।

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ 

রাণীক্ষেত রোগ অনেক সময় অত্যন্ত দ্রুত জীবাণু সংক্রমণের ফলে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই টার্কি মারা যেতে পারে। তবে তা না হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন-

  • প্রথমদিকে আসনত টার্কি দলছাড়া হয়ে ঝিমাতে থাকে। 
  • শরীরে কাপুনি হয়, ঘন ঘন শ্বাস গ্রহণ করে। 
  • সাদাটে সবুজ পাতলা পায়খানা করে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। 
  • মুখ হা করে রাখে, কাশতে থাকে এবং নাকমুখ দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরে। 
  • শরীর শুকিয়ে যায় ।
  • মাথার খুঁটি ও গলার ফুল কালচে হয় এবং চোখ মুখ ফুলে যায়। 
  • ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়, ডিমের খোসা পাতলা ও খসখসে হয়। 
  • তাছাড়া অপুষ্ট ডিম উৎপন্ন হয়। 
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। 
  • ডিম উৎপাদন কমে যায়। 
  • পানির কাশি হয় ও মুখ হা করে নিঃশ্বাস নেয়। 
  • হলদে সবুজ রঙের পাতলা পায়খানা করে।
  • জীবাণু আক্রমনের দুই সপ্তাহ পর স্নায়ুর আক্রান্ত হয়। ফলে মাথা ঘুরায় ও পা অবস হয়ে যায় । 
  • মাথা একপাশে থেকে যেতে পারে, কখনো মাথা দুপায়ের মাঝখানে চলে আসে অথবা সোজা ঘাড় বরাবর পিছন দিকে বেঁকে যেতে পারে।
  • শ্বাস কম আক্রান্ত হওয়ায় এ ভরের লক্ষণ কম প্রকাশ পায়। 
  • সামান্য কাশি থাকে।

রোগ নির্ণয় : 

ময়না তদন্তে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখে

  • শ্বাসনালীতে রক্তাধিক্য ও রক্ত সঞ্চারন। 
  • স্বরা ও শ্বাসনালীতে রক্তাম্বু । 
  • গ্রীষ্ম বড় হয়ে যায়। 
  • খাদ্য অস্ত্রে, বিশেষ করে প্রভেটিকুলাস ও গিজার্ভে রক্ষক্ষরিত পচা ক্ষত । 
  • আগের শেষভাগে পাতলা সাদাটে মন।

চিকিৎসা: 

ভাইরাস রোগ বিধায় এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত টার্কিতে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা সালফোনেমাইড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিকে দৈনিক ২/৩ বার খাওয়ানো যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ 

রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধে দুই ধরনের টিকা ব্যবহার করা হয়। যথা- বি. সি. আর. ডি. ডি. এবং আর. ডি. ভি ।

বি.সি.আর.ডি.ভি. : এ টিকাবীজের প্রতিটি শিশি বা ভাষালে হিম শুষ্ক অবস্থায় ১ মি. পি. মূল টিকাবীজ থাকে। প্রতিটি শিশির টিকাবীজ ও মি.লি. পাতিত পানিতে ভালোভাবে মিশাতে হয়। এরপর ৭ দিন ও ২১ দিन বয়সের প্রতিটি বাচ্চা টার্কির এক চোখে এক ফোটা করে ড্রপারের সাহায্যে প্রয়োগ করতে হবে।

আর, ডি, ভি এ টিকাবীদের প্রতিটি ভারালে ০.৩ মি.লি. মূল টিকাবীজ হিমক অবস্থার থাকে। এ টিকা দুমাসের অধিক বয়সের টার্কির জন্য উপযোগী। প্রথমে তারালের টিকাবাজ ১০০ লি.লি. পাতিত পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তা থেকে ১ মি.লি. করে নিয়ে প্রতিটি টার্কির রানের মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। হয় মাস পরপর এ টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

 

টিকা ছাড়া খামার থেকে রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। যথা- 

ক) রাণীক্ষেত রোগে মৃত পাখিকে গুড়িরে ফেলতে হবে বা মাটিচাপা দিতে হবে।

খ) খামারের যাবতীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন- আয়োসান, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায়) দিয়ে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

টার্কির ফাউল কলেরা রোগ 

টার্কির ফাউল কলেরা রোগের কারণ: 

এটি ব্যাকটেরিয়া জনিত ছোঁয়াচে রোগ। যা সাধারণত গৃহপালিত ও বন্য পাখিকে আক্রান্ত করে । এ রোগ সেপ্টিসেমিক রোগ, যার ফলে আক্রান্ত পাখিতে উচ্চ আক্রান্ত হার ও উচ্চ মৃত্যুহার পরিলিক্ষত হয় । এ রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো পাশুরেলা মাল্টোসিডা নামক ব্যাকটেরিয়া ।

ফাউল কলেরা রোগের বিস্তার: মুক্তভাবে চলাফেরা করে এমন সব পাখি বিশেষ করে চড়ুই, কবুতর,বয়স্ক পাখি ও ইঁদুর এ রোগের অন্যতম বাহক হিসেবে কাজ করে। তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে ইঁদুরের ভূমিকা ১০% । চড়ুই পাখি ও কবুতর কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়াও আক্রান্ত খামারের খাদ্য, খাদ্যের ব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম এ রোগের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে।

  • গৃহপালিত পাখি, গেম বার্ড, ছোট বন্য পাখি বিশেষ করে চড়ুই পাখি, কাক । 
  • মুরগি, হাঁস, রাজহাঁসের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি । 
  • অনেকেই মনে করেন, পরিবেশগত ধকল বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তন, পুষ্টি, অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা জনিত ধকল ইত্যাদি এ রোগকে প্রভাবিত করে।

ফাউল কলেরা রোগের লক্ষণ:

  • তীব্র প্রকৃতির সংক্রমণ ঘটলে টার্কি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। 
  • এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুই হলো প্রথম লক্ষণ। 
  • পরবর্তীতে জ্বর, পালক ঝুলে পড়া, মুখ দিয়ে লালা ঝড়া, ডায়রিয়া, ঝিমানোভাব এ রোগের লক্ষণ। 
  • শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, মৃত্যুর পূর্বে পালকবিহীন স্থান বিশেষ করে মাথার ঝুটি ও ওয়াটলে সায়ানোসিস পরিলক্ষিত হবে। 
  • বিষ্ঠা প্রাথমিকভাবে পাতলা ও পর সাদাটে হবে। পরবর্তীতে সবুজাভাব পায়খানার সাথে অতিরিক্ত মিউকাস থাকবে।

পোস্ট মর্টেম পরীক্ষা

  • সাধারণত এবডোমিনাল ভিসারার শিরায় হাইপারেমিয়া থাকবে । 
  • পেটিকিয়াল ও ইকাইমোটিক হেমোরেজ দেখা যাবে। বিশেষ করে সাবইপিকার্ডিয়াল ও সাবসিরোসাল হেমোরেজ ফুসফুস, এবডোমিনাল ফ্যাট, ইনটেস্টাইনাল মিউকোসায় পরিলক্ষিত হবে। 
  • পেরিকার্ডিয়াল ও পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড বেড়ে যাবে। 
  • লিভার ফুলে যাবে ও আকারে বড় হবে। লিভারে নেক্রোটিক ফোকাই থাকবে। 
  • টার্কির ফুসফুস ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবে। টার্কিতে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে।
  • ডাইজেস্টিভট্রাক্ট, ফ্যারিংস, ক্রোপ এবং ইনটেস্টাইনে প্রচুর পরিমাণে থকথকে মিউকাস থাকবে । 
  • ডিম পাড়া মুরগির ক্ষেত্রে, ডিম পাড়া মুরগির ওভারিয়ান ফলিকল ফেটে যাবে, ইয়োক মেটেরিয়াল পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে প্রবেশ করবে।

চিকিৎসা

  • এ রোগের জীবাণু গ্রাম নেগেটিভ। তাই গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
  • এছাড়াও সালফোনেমাইড জাতীয় উপাদান ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে ।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা - 

উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত স্যানিটেশন, খামারের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, খামারে ইঁদুর ও টিকটিকির উপদ্রব ঠেকানো, বয়স্ক পাখি যথাসময়ে কালিং করা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খামারের আশেপাশে কুকুর, শেয়াল, বিড়াল, শূকর ইত্যাদি প্রাণির ঘোরাফেরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। টার্কি জোনের ক্ষেত্রে, যে অঞ্চলে টার্কির আধিক্য বেশি সেখানে টার্কি খামারের অভ্যন্তরে মুক্তভাবে চলাফেরা করে এমন সব পাখির আনাগোনা বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ টার্কি দ্রুতই সুস্থ টার্কি থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে। মৃত টার্কি মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে কিংবা মৃত টার্কি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নতুন করে টার্কি বাচ্চা তুলতে হলে খামার ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে জীবাণুনাশক দ্বারা স্প্রে করে খামারের অভ্যন্তরে ও বাইরের জীবাণু ধ্বংস করতে হবে।

 

টার্কির ফাউল পক্স রোগ 

টার্কি ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। সব বয়সের সব প্রজাতির পাখি এতে আক্রান্ত হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যপকতা লাভ করে। তখন মৃত্যুহার অত্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ফাউল পক্স বলতে সব পাখির বসন্ত রোগকেই বুঝায় তথাপি বর্তমানে আলাদা নামেও, যেমন- পিজিয়ন পক্স, টার্কি পক্স, ক্যানারি পক্স প্রভৃতি ডাকা হয়। পৃথিবীর প্রায় পোল্ট্রি উৎপাদনকারী দেশেই বসন্ত রোগ দেখা যায়। এ রোগের পাখির দেহের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত উন্মুক্ত স্থানে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ক্ষুদ্র লালচে নডিউল সৃষ্টি হয় যা বসন্তের গুটি নামে পরিচিত ।

রোগের কারণ: 

পক্সভিরিডি পরিবারের ফাউল পক্স ভাইরাস নামক ভাইরাস বসন্ত রোগের কারণ।

সংক্রমণঃ নিন্মলিখিতভাবে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। যথা-

  • রোগাক্রান্ত পাখির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে সুস্থ পাখিতে এ রোগ ছড়াতে পারে । 
  • ত্বকের ক্ষত বা কাটা ছেঁড়ার মাধ্যমে। 
  • কিউলেক্স ও অ্যাডিস মশার মাধ্যমে। 
  • তাছাড়া কখনো কখনো রক্তশোষক মাছি, ফ্লি ও আঠালির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণঃ

 বসন্ত রোগ প্রধানত দুই প্রকৃতিতে দেখা যায়। যথা-

ক. ত্বকীয় বা হেড ফর্ম : এ প্রকৃতিতে আক্রান্ত পাখির মুখমণ্ডলে বসন্তের গুটি দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ওজন হ্রাস ও ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটিকে শুষ্ক বসন্তও বলা হয়।

খ. ডিপথেরিটিক প্রকৃতি : 

এ প্রকৃতিতে প্রথমে আক্রান্ত পাখির জিহ্বায় ক্ষত দেখা যায়। এ ক্ষত পরে শ্বাসনালী ও ফুসফুসে বিস্তার লাভ করে। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণে অবশেষে পাখির মৃত্যু ঘটে। এ প্রকৃতির বসন্ত আর্দ্র বসন্ত নামে পরিচিত।

এ দুই প্রকৃতির বসন্তে আবার পাখিতে মৃদু ও তীব্র আকারে রোপ লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। 

যেমন-

মৃদু প্রকৃতির বসন্তে-

  • পাখির উন্মুক্ত ত্বকে বসন্তের ফোসকা দেখা যায়। এটিই এ প্রকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। 
  • টার্কির ঝুটি, গলকম্বল, পা, পায়ের আঙ্গুল ও পায়ুর চারপাশে বসন্তের গুটি বা ফুলকুঁড়ি দেখা যায়। এগুলো কিছুটা কালচে বাদামি রঙের হয় । 
  • চোখের চারপাশে বসন্তে ফুসকুঁড়ির ফলে চোখ বন্দ হয়ে যায়।

তীব্র প্রকৃতির বসন্তে

  • দেহের মুখগহ্বর, স্বরক্ষা, শ্বাসনালী ও অস্ত্রের দেয়ালেও কাঙ্কের ক্ষত দেখা দিতে পারে। 
  • শ্বাসনালী আক্রান্তের ফলে পাখির শ্বাসকষ্ট হয় ও পাখি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। 
  • এতে ডিম পাড়া টার্কি ডিম উৎপাদন কমে যায়। 
  • এতে পাখির মৃত্যু হার ৫০% পর্যন্ত হতে পারে।

রোগ নির্ণয়-

  • আক্রান্ত স্থানে প্রথমে ছোট ছোট লাল দাগ হয়। 
  • পরবর্তীতে যা বড় হয়ে পুঁজপূর্ণ হয়, পেঁকে ঘা সৃষ্টি করে। এ ঘায়ে শেষে মাঘড়ি সৃষ্টি হয় ও তা পরবর্তীতে খসে পড়ে।

চিকিৎসা: 

এ রোগের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত ক্ষত জীবাণুনাষক ওষুধ (যেমন- মারকিউরিকক্রোম) দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে সকেটিল, সালফানিলামাইড বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক পাউডার লাগালে সুফল পাওয়া যায় । 

রোগ নিয়ন্ত্রণ 

রোগ প্রতিরোধের জন্য যথাসময়ে পাখিদের টিকা প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সৃষ্টি এবং মশা নিয়ন্ত্রণও জরুরি। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য এ দেশে দুই ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হয়। যথা-

১। পিজিয়ন পক্স টিকা: 

এটি ৩ মি.লি. পাতিত পানির সাথে মিশিয়ে দুই সপ্তাহের বাচ্চার ডানার পালকবিহীন অংশে বাইফকর্ড প্রিকিং নিডল বা সূঁচ দিয়ে খোঁচা মেরে প্রয়োগ করা হয় । 

২। ফাউল পক্স টিকা: 

এ টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় ০.৩ মি.লি. মাত্রায় কাঁচের অ্যাম্পুলে থাকে। এ পরিমান টিকা পরিশ্রুত পানিতে মিশিয়ে দুইশত পাখিতে প্রয়োগ করা যায়। পিজিয়ন পক্স টিকার মতো এ টিকাও এ পদ্ধতিতে বাইফকর্ড প্রিকিং নিডল দিয়ে পাখির ডানার পালকবিহীন স্থানে ৩ বার বিদ্ধ করতে হবে প্রতিবারই পরিসৃত পানিতে গুলানো টিকায় নিডল চুবিয়ে নিতে হবে। এ টিকা প্রয়োগের ৫,৭ ও ১০ তম দিনে টিকাবদ্ধ স্থানে বসন্তের গুটি দেখা গেলে এর কার্যকারিতা প্রমাণ হবে। এ টিকা এক মাসের বেশি বয়সের টার্কিকে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বিদেশে প্রস্তুত বসন্ত রোগের টিকা পাওয়া যায়। যেমন- ওভোডিপথেরিন ফোর্ট (ইন্টারভেট) যা কোম্পানির নির্দেশমতো মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। বছরে একবার পাখিতে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়।

 

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগ

হিস্টিমোনাস মিলিয়ামিডিল নামক এককোষি প্যারালাইট এর কারণে ব্ল্যাকহেড ডিজিজ হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের সিকামে বসবাসকারী হেটেরেকিস না न म ও লার্ভা এ রোগের বাহক। ছেটেরেকিস কৃমির ডিম ও পার্ভাতে হিন্টিযোনাস মিশিরাপ্রিডিস নামক এক কোষি প্যারাসাইট বসবাস করে। মেটেরেফিল কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটিতে বসবাসকারি কেঁচোর মধ্যে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মুরগীর তুলনার টার্কিতে রাহের বিভিন্ন এর প্রভাব খুবই মারাত্মক এবং এর রোগের কারণে পুরো টার্কি খামারই ধ্বংশ হতে যেতে পারে। মেটেরেফিল কৃষির বিষ/মার্কা যুক্ত মুরগীর পারখানা খাওরার মাধ্যমে এবং এ কৃষির ডিম ও লার্ভা ধারণকারী কেঁচো, পোকা খাওয়ার মাধ্যমে টার্কিতে ব্ল্যাকহেড রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি প্রথমে টার্কির পরিপাকতন্ত্রের শিকার ক্ষত/আলসার সৃষ্টি করে এবং পাখি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে এটি পাখির নিবার স্থান দিয়ে রক্তনালীতে প্রবেশ করে লিভারে পৌঁছায় এবং লিভারে ছোট ছোট হোল/গর্ভের সৃষ্টি করার মাধ্যমে লিভারকে অকার্যকর করে ফেলে। অবশেষে পাখি মারা যায় ।

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগের সংক্রমণ-

  • টার্কির খামারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির টার্কি, ফেন্সি আইটেম ও গেম বার্ড থেকে এ রোগের সংক্রণ ঘটে। 
  • টার্কির পাশাপাশি ঘামারে থাকা মুরগি ও গেম বার্ডের পরিপাকতন্ত্রের সিকামে বসবাসকারী হেটেৱেকিস নামক সিকল কৃষি এ রোগের ধারক ও বাহক। 
  • সংক্রমিত পাখির সংস্পর্ষে থেকে সুস্থ পাখিও সংক্রমিত হয় মূলত আক্রান্ত পাখির মল বা মলত খাবার পানি গ্রহন করার ফলে। 
  • টার্কি মাটিতে থাকা কেঁচো খেলে, কারণ হেটেরেকিস কৃমির ডিম ও লার্ভা মাটিতে বসবাসকারি কেঁচোর মধ্যে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। 
  • লিটারে থাকা ভবেরে পোকা বা ক্ষৰৱে পোকার মতো অন্যান্য পোকা খেলেও টার্কির শরীরে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে।

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগের লক্ষণ

  • সংক্রমিত হওয়ার ৭-১২ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে- 
  • আকস্মিক বা হঠাৎ মৃত্যু হয় । 
  • অবসাদগ্রস্থতা, ক্ষুধা হ্রাস পাবে এবং পিপাসা বৃদ্ধি পাবে। 
  • উজ্জ্বল হলুদাভাব ডায়েরিয়া, 
  • অনেক ক্ষেত্রে মাথার রং নীলাভ-কাল বর্ণ ধারণ করে থাকে । 
  • সিকার প্রাচীরে ক্ষত সৃষ্টি হয় (সিকা স্ফীত হয় আবার কোথাও ছোট ও পাতলা হয়)। 
  • খাবার হজম হয় না, খাদ্য থলিতে খাবার ও পানি জমা হয়ে থাকে । 
  • পাখা ঝুলে পরে এবং পালক উদ্ধু-খুস্কু হয়ে পড়ে । 
  • অপেক্ষাকৃত বয়স্ক পাখি মারা যাওয়ার আগে চরম মাত্রায় ওজন হ্রাস পাবে এবং শরীরের চর্বি এবং মাংশ পেশীগুলো শুকিয়ে আক্রান্ত টার্কি ২-৪ দিনেই মারা যায় ।

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগের চিকিৎসা 

এন্টিকক্সিডিয়ালি অথবা এন্টিবায়োটিক দ্বারা হিস্টোমানিয়াসিস ডিজিজ নিরাময় হয় না। এই এককোষী প্যারাসাইট হিস্টোমোনাস এর ইউনিক স্ট্রাকচার ও মেটাবলিজম এর কারণে কোন এন্টিকক্সিডিয়াল অথবা এন্টিবায়োটিক একে ধ্বংস করতে পারে না; তবে সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন এর ক্ষেতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায় ৷

টার্কির ব্ল্যাকহেড বা হিস্টিমোনিয়াসিস রোগ প্রতিরোধ:-

১. এ রোগ নিরাময়ের জন্য এখনও পর্যন্ত কার্যকারি কোন ঔষধ না থাকায় সারা বিশ্বেই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আক্রান্ত পাখিকে সাথে সাথে সুস্থ পাখি থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে আলাদা রাখার ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় । 

২. খামারে টার্কির পাশাপাশি অন্যান্য মুরগী, ফেন্সি মুরগী এবং গেম বার্ড পালন করতে হলে অবশ্যই যথাযথাভাবে রুটিন মাফিক কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে। কারণ কৃমিই এ রোগের ধারক ও বাহক 

৩. খামারের লিটার সবসময় পরিষ্কার ও পোকা মুক্ত রাখতে হবে। 

৪. পাখির চারণভূমিতে কেঁচোর পরিমাণ যাতে কম থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বা কেঁচো বসবাসকারী স্থানে টার্কির প্রবেশ রহিত করতে হবে। 

৫. অসুস্থ পাখিকে অবশ্যই সাথে সাথে দূরে আলাদা শেডে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। এতে করে অন্যান্য সুস্থ পাখিগুলো রক্ষা পাবে। ব্ল্যাকহেড রোগ প্রতিরোধ ও সংক্রমণ ঠেকাতে অসুস্থ পাখিকে আলাদা রাখাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এ পদক্ষেপটিই খামারকে বাঁচিয়ে দিবে।

টার্কি মুরগির একটি আদর্শ সংক্ষিপ্ত ভ্যাকসিন সিডিউল

 

ব্রিডার ফার্ম এর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ভ্যাকসিন চার্টটি অনুসরন করা যেতে পারে। 

বিশেষ সতর্কতা

  • ভ্যাকসিনের আগে পরে এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার না করাই উত্তম। তবে ভ্যাকসিনের পরে ভিটামিন সি দেয়া ভালো।
  • ৩৫-৪০ দিনে কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রতি ২ মাস অন্তর তা পুনরায় দিতে হবে । 
  • টার্কির করাইজা ভ্যাকসিন ও মুরগির করাইজা ভ্যাকসিন এক নয়। 
  • ৬ মাস অন্তর রাণীক্ষেত কিল্ড ভ্যাকসিন করা যেতে পারে। 
  • অবশ্যই স্থান ভেদে ভ্যাকসিন সিডিউল পরিবর্তন করা যেতে পারে।

 

 

Content added By

টার্কি খামার ব্যবস্থাপনা ও জৈব নিরাপত্তায় করণীয়

টার্কি খামার ব্যবস্থাপনা ও জৈব নিরাপত্তায় করণীয়

খামারের প্রধান গেট তালা দিয়ে রাখতে হবে। জৈব নিরাপত্তা চালু আছে, ‘প্রবেশ নিষেধ' লেখা সাইনবোর্ড লাগাতে হবে

  • খামারের চার পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে 
  • খামারের শেডের পাশে খাদ্যদ্রব্য ফেলা যাবে না, এতে বন্যপাখি আসবে। বন্যপাখি বার্ড ফ্লুর ভাইরাস বহন করে
  • দর্শনার্থীদের এবং অন্য খামারের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না 
  • খামারের ভেতরে নিয়োজিত কর্মীদের খামার কর্তৃক প্রদত্ত জীবাণুমুক্ত পোশাক, জুতা, টুপি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে
  • খামারের ভেতর প্রবেশের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, গাড়িসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করাতে হবে। এসব কিছুতে জীবাণুনাশক পদার্থ স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • খামারের ভেতর যারা থাকবে বা প্রবেশ করবে তাদের পরিধেয় সবকিছু জীবাণুমুক্ত হতে হবে। 
  • টার্কির ঘরের দরজা বন্ধ রাখতে হবে; যাতে বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, সাপ, বেজি ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে।
  • এক খামারের লোক অন্য খামারে গোসল করতে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে। 
  • জীবাণু এক খামার থেকে অন্য খামারে প্রবেশ প্রতিরোধ করতে হবে। 
  • খামারের কর্মীদের বন্যপাখির দোকানে খাওয়া যাবে না। 
  • খামার পরিত্যাগের সময় খামারের বস্ত্রাদি পরিবর্তন করে হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে। 
  • প্রতিটি শেডের সামনে পা ধোয়ার জীবাণুমুক্তকরণ তরল পদার্থ রাখতে হবে। 
  • শেডে প্রবেশের সময় পা জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করতে হবে। 
  • দেশের ভেতর থেকে বাচ্চা সংগ্রহের আগে নিশ্চিত হতে হবে, ওই খামারের গত এক বছরে কোনো রোগ দেখা দিয়েছে কি না ।
  • অতিথি পাখি খামারের আশপাশে বা ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। খামারের কর্মীদেরও অতিথি পাখির কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ শীতকালে বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে অতিথি পাখি আসে। পাখিগুলো বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করতে পারে।
  • কোনো টার্কি অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সাথে সাথে জেলা বা উপজেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্ৰে জানাতে হবে। 
  • মৃত টার্কি মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
  • খামারে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার জন্য একটিমাত্র পথ চালু থাকবে। 
  • টার্কি ও ডিম বিক্রি করে খাঁচা, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে খামারে প্রবেশ করতে হবে। কারণ যেখানে টার্কি ও ডিম বিক্রি করা হবে, সেখানে অন্য টার্কি থেকে জীবাণু আসতে পারে। 
  • অবিক্রীত টার্কি ও ডিম খামারের ভেতর নেয়া যাবে না ।
  • টার্কিকে সময় মতো সব রোগের টিকা দিতে হবে। 
  • টার্কি, হাঁস, কবুতর ও অন্যান্য পাখি একত্রে পালন করা যাবে না। 
  • অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করা, বিক্রি বন্ধ করা এবং অতিথি পাখির কাছে যাওয়া নিষেধ। 
  • বাড়িতে পালার জন্য বাজার থেকে কেনা টার্কি অন্তত ১৫ দিন আলাদা রেখে তারপর বাড়িতে টার্কির সাথে রাখতে হবে।
  • খামারের ভেতরে প্রবেশের সময় জীবাণুমুক্ত গ্লাভস, গামবুট, মাস্ক, টুপি ও অ্যাপ্রন ব্যবহার করতে হবে
  • এক শেডের যন্ত্রপাতি বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য শেডে ব্যবহার করা যাবে না । 
  • রোগাক্রান্ত টার্কির বিষ্ঠা, ময়লা, বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। 
  • শেডের লিটার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে এবং শুকনা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • টার্কির ঘরে কাজ করার সময় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ রাখতে হবে। 
  • টার্কির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যে রয়েছে টার্কি পরপর দুই দিন ২০ শতাংশ হারে পানি ও খাদ্য কম খেলে এবং ডিম উৎপাদন পর পর দুই দিন ২০ শতাংশ হারে কমলে ।
  • লেয়ার টার্কির বিষ্ঠা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। 
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় সুষম ও টাটকা খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
  • জীবাণুনাশক হিসেবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ভিরকন, ফার্ম ফ্লুইড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

 

Content added By

জব ০৭ঃ বিভিন্ন জাতের টার্কি সনাক্তকরণ

জবের নাম: বিভিন্ন জাতের টার্কি সনাক্তকরণ

উৎপত্তি, উৎপাদন ও বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের টার্কি পাওয়া যায়। জাতগুলো মাংস উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। জবটিতে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত টার্কির জাতসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা যেমন উৎপত্তি, দৈহ্যিক বৈশিষ্ট্য, উৎপাদন ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। পরীক্ষণ কালে সকল জাত সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে বই পত্র ও ম্যাগাজিন হতে ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় পোস্টার ও স্লাইড করে তা প্রদর্শন করা হয়।

পারদর্শিতা নির্ণায়ক / মানদণ্ড : 

১) বিভিন্ন জাতের টার্কির সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য বলতে পারা 

২) বিভিন্ন জাতের টার্কি সনাক্ত করা 

৩) বিভিন্ন প্রকার ছবি, তথ্য সংগ্রহ করা

(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)

 

খ) প্রয়োজনীয় কাচামালঃ 

 

গ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি:

 

কাজের ধারাঃ 

১) বিভিন্ন জাতের টার্কি সংগ্রহ করে পাশাপাশি খাঁচায় সাজিয়ে রাখ। 

২) সম্ভব না হলে তাদের প্রয়োজনীয় ছবি ও তথ্যযুক্ত স্লাইড সংগ্রহ কর। 

৩) বিভিন্ন জাতের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদন সহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ কর।

৪) নিরাপত্তামূলক পোষাক যেমন অ্যাপ্রন ও হ্যান্ড গ্লোভস পরে নাও । 

৫) বিভিন্ন জাতের টার্কি ধরে এদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সনাক্ত করে সংগৃহীত তথ্যের সাথে মিলিয়ে নাও ৷ 

৬) টার্কি জাতগুলো উৎপাদন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এবং পালনের উদ্দেশ্য অনুসারে শ্রেণিবিভাগ কর ৷ 

৭) বিভিন্ন জাতের টার্কিগুলোর ছবি এঁকে এদের বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধ কর।

 

ছকে টার্কির বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করে লিপিবদ্ধ কর

সতর্কতাঃ 

১. বিভিন্ন জাতের টার্কি পৃথকভাবে রেখে সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যেন এক জাতের সাথে অন্য জাত মিশে না যায় । 

২. টার্কি সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন ছুটে না যায় ও গায়ে বিষ্ঠা না লাগে ৷

 

 

Content added By

                     অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

 

১. টার্কি প্রতিদিন মোট খাদ্যের কত ভাগ নরম ঘাস খায়? 

২. টার্কির রাণীক্ষেত রাগের কারণ লেখ। 

৩. টার্কির পক্স রোগের কারণ লেখ ৷ 

৪. টার্কির ব্ল্যাকহেড ডিজিজ রোগের কারণ লেখ ।

 

 

                    সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

 

১. টার্কির বাসস্থান নির্মাণ কৌশল লেখ । 

২. টার্কির বৈশিষ্ট্য লেখ । 

৩. টার্কির পালনের সুবিধাসমূহ লেখ। ৪. রয়েল পাম টার্কির বৈশিষ্ট্য লেখ।

 

 

                        রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন

 

১. টার্কির রাণীক্ষেত রাগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থ্যা বর্ণনা কর । 

২. টার্কির পক্স রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থ্যা বর্ণনা কর। 

৩. টার্কির ব্ল্যাকহেড ডিজিজ রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থ্যা বর্ণনা কর । 

৪. টার্কি খামার ব্যবস্থাপনা ও জৈব নিরাপত্তায় করণীয় পদক্ষেপ বর্ণনা কর ।

 

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion