যারা বিজ্ঞানের ইতিহাস জানে তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কী, সম্ভবত তারা ট্রানজিস্টরের কথা বলবে। ট্রানজিস্টর p এবং n ধরনের সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তৈরি এক ধরনের ডিভাইস, যেটি তার ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। npn এবং pnp দুই ধরনের ট্রানজিস্টর আছে। ছবিতে তোমাদের npn ধরনের ট্রানজিস্টর দেখানো হয়েছে। এটাকে অনেকটা পানির ট্যাপের সাথে তুলনা করা যায়, পানির ট্যাপ খুললে পানির প্রবাহ শুরু হয় আবার ট্যাপটি বন্ধ করলে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। npn ট্রানজিস্টরের যে দিক দিয়ে কারেন্ট ঢোকে তার নাম কালেক্টর এবং যেদিক দিয়ে কারেন্ট বের হয় তার নাম অ্যামিটার (Emitter)। মাঝখানে রয়েছে বেস, এই বেসটি পানির ট্যাপের মতো। এই বেসে অল্প একটু কারেন্ট দিলেই যেন ট্যাপটি খুলে যায় অর্থাৎ অনেক বিদ্যুতের প্রবাহ হতে থাকে। আবার এই অল্প কারেন্ট বন্ধ করে দিলেই বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
চিত্র 13.03:ট্রানজিস্টর এর গঠণ ও প্রতীক
এই ট্রানজিস্টর দিয়ে অসংখ্য ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়। ছোট সিগন্যালকে বড় করার জন্য ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়, যেটাকে আমরা বলি অ্যামপ্লিফায়ার। নানা ধরনের সিগন্যালকে প্রক্রিয়া করার জন্যও ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়।
ট্রানজিস্টর রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ডায়োড ইত্যাদি ব্যবহার করে অনেক প্রয়োজনীয় সার্কিট তৈরি করা হয়। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির উন্নতি হতে থাকে এবং এই ধরনের নানা কিছু ব্যবহার করে তৈরি করা আস্ত একটি সার্কিট ছোট একটা জারগার মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়া শুরু হলো এবং তার নাম দেওয়া হলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। একটা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট হয়তো একটা নখের সমান। তার ভেতরে প্রথমে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরি সার্কিট ঢোকানো শুরু হয় এবং দেখতে দেখতে একটা আইসির ভেতর বিলিয়ন ট্রানজিস্টর পর্যন্ত বসানো সম্ভব হয়ে উঠতে থাকে। তোমরা এর মাঝে জেনে গেছো যে একটি ছোট চিপের ভেতর বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ঢোকানোর এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় VLSI বা Very Large Scale Integration এই প্রক্রিয়াটি এখনো থেমে নেই এবং চিপের ভেতর আরো ট্রানজিস্টর ঢুকিরে আরো জটিল সার্কিট তৈরি করার প্রক্রিয়া এখনো চলছে। একটি ছোট চিপের ভেতর বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ঢুকিয়ে অত্যন্ত জটিল সার্কিট তৈরি করার কারণে আমরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যালকুলেটর, চমকপ্রদ মোবাইল টেলিফোন ইত্যাদি অসংখ্য নতুন নতুন ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারছি। একসময় ইলেকট্রনিকসের যে কাজটি করতে কয়েকটি ঘর কিংবা একটা আস্ত বিল্ডিংয়ের প্রয়োজন হতো এখন সেটা একটা ছোট চিপের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে এবং সেগুলো দিয়ে তৈরি নানা ধরনের যন্ত্র আমরা এখন পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারি।
আরও দেখুন...