আমরা যা কিছু আঁকি তাই মূলত ড্রয়িং-এর উপাদান। অর্থাৎ কোনো কিছু অঙ্কনের জন্য বিন্দু বা লাইন দিয়ে অঙ্কন শুরু করা হয়। যে কোনো ড্রয়িং বা ডিজাইনই কোনো না কোনো প্রকার রেখা, তল ইত্যাদির সমন্বয় করা হয় মাত্র।
বিন্দুঃ ড্রয়িং-এর মৌলিক উপাদান যা মাত্রাহীন ও কেবলমাত্র অবস্থান নির্দেশ করে। বিন্দুই মূল উৎস বা ফর্মের সূচনা। স্থাপত্যের বিকাশই বিন্দু থেকে। এর কোনো প্রকার আকার-আকৃতি নেই। কোনো কিছুর
শুরু বা শেষ প্রান্ত মাত্র।
উদাহরণঃ কাগজে পেনসিলে অঙ্কনের তরই একটি বিন্দু, আবার কোনো একটি মার্কেলও একটি বিন্দু। বৃহৎ পরিসরে একটি শহরের চার রাস্তার মোড়ের বৃত্তাকার চক্করও একটি বিন্দু তেমনি মহাবিশ্বের মধ্যে
পৃথিবীও একটি বড়ো বিন্দু মাত্র ।
বৈশিষ্ট: স্থিতিশীল, নিৰ্দেশনাহীন, কেন্দ্রমুখী, নমনীয়, মাত্রাহীন
রেখা: রেখা কতগুলো বিন্দুর সমষ্টি বা একটি বিন্দুর গতিপথ অর্থাৎ কোনো বিন্দু চলতে থাকলে তার চলার পথটিই একটি রেখা। কেবলমাত্র দৈর্ঘ্য আছে, গ্রন্থ বা উচ্চতা নেই তাই এটি একমাত্রিক মিতভাবে রেখা সরল ও বক্ষ দুই প্রকার। সৱল ৰা সোজা রেখা আবার তিন প্রকার- অনুভূমিক, খাড়া বা উলৰ এবং নত বা হেলানো রেখা।
অনুভূমিক রেখা: ভূমির সমান্তরাল রেখাসমূহকে অনুভূমিক রেখা বলে। অনুভূমিক রেখা শান্ত, ক্লান্ত ও বিশ্রামে মগ্নতা বা স্থিতা বোঝায়।
খাড়া বা উল্লম্ব রেখা: ভূমির সাথে লম্বভাবে অবস্থিত বা অংকি রেখাকে খাড়া বা উলৰ রেখা বলে। খাড়া বা উলৰ রেখা দৃঢ়, আত্মপ্রত্যয়, প্রতিরোধে সক্ষম, ঋজুতা প্রকাশ করে।
খাড়া বা উল্লম্ব রেখা
নভ বা হেলানো বা কৌণিক রেখা: ভূমির সাথে কৌণিকভাবে অবস্থিত বা অঙ্কিত রেখাকে নত বা হেলানো বা কৌশিক রেখা। লক্ষ বা হেলানো বা কৌশিক রেখা গভিরতা, অনুপ্রেরণা প্রকাশ করে। আবার বাঁকা রেখা গতিময়তা, নমনীয়তা, পরিবর্তনশীলতা, ছন্দময়তার সৃষ্টি করে।
উদাহরণঃ কোনো একটি মার্বেল রঙে ডুবিয়ে গড়িয়ে দিলে রেখা অঙ্কিত হয়। আমাদের চারপাশে অসংখ্য রেখাকৃতির বন্ধ রয়েছে যেমন, যে কোনো ধরনের খুঁটি বা ল্যাম্প পোস্ট, চেয়ার বা টেবিলের পারা, গ্রিল, রেলিং, রাস্তা ইত্যাদি। আবার মানুষ স্রষ্টার এক অনবদ্য রৈখিক সৃষ্টি মাত্র ।
বৈশিষ্ট্যঃ দিক নির্দেশক, গতিময়তা, প্রত্যয়, অনমনীয় কিন্তু বক্ররেখা নমনীয়, একমাত্রিক ।
তলঃ কতগুলো রেখার সমষ্টি। একটি রেখা যখন চলতে শুরু করে তখনই জলের উৎপত্তি হয়। তলের দৈর্ঘ্য ও গ্রন্থ আছে কিন্তু উচ্চতা নেই। তাই এটি দ্বিমাত্রিক। তলের সমষ্টিতেই ফর্মের সৃষ্টি। ডল বর্গাকার, আয়তকার, ত্রিভুজাকার, গোলাকার বা অসম আকৃতির হতে পারে। বর্গাকার বা আরকার তল শান্ত, স্থির, দৃঢ়, প্রত্যর, ভাবলাীর্য, প্রতিরোধে সক্ষম, স্থিতিশীল, ব্যক্তিত্বময়, অটন ও বক্তৃতা প্রকাশ করে। ত্রিভুজাকার তলও শান্ত, স্থির, দৃঢ়, আত্মপ্রত্যয়, অপ্রতিরোধ্য, স্থিতিশীল, ব্যক্তিত্বময়, অটল ও স্বচ্ছতা, দর, বিজর প্রকাশ করে। কিন্তু বর্গাকার বা ত্রিভুজাকার যখন ভূমির সাথে কৌণিকভাবে থাকে তখন উচ্চ গুণাগুণ উল্টে যায়। গোলাকার তল বিন্দুর মত স্থিতিশীল, নির্দেশনাহীন, কেন্দ্রমুখী, নমনীয় ভাব প্রকাশ করে। অসম আকৃতির তল প্রাকৃতিক নির্দেশনা দেয়।
উদাহরণঃ কোনো একটি রেখা রঙে ডুবিয়ে গড়িয়ে দিলে তল অঙ্কিত হয় । আমাদের চারপাশে অসংখ্য তল রয়েছে যেমন, যে কোনো ধরনের পৃষ্ঠ, চেয়ার বা টেবিলের উপরিতল, দরজা, জানালা, দেয়াল ইত্যাদি বর্গাকার বা আয়তাকার জল বিশেষ। তেমনি গোলাকার টেবিলের উপরিতল গোলাকার তল আর পিড়ামিডের পার্শ্ব ত্রিভুজাকার তলের অনন্য উদাহরণ। আবার একখও জমি অসম আকৃতির তল মাত্র।
বৈশিষ্ট্যঃ ফল বিশেষে শান্ত, স্থির, দৃঢ়, প্রতার, ভাবগাম্ভীর্য, প্রতিরোধে সক্ষম, স্থিতিশীল, ব্যক্তিত্বময়, অটল, জুতা, দম্ভ, বিজয়, নির্দেশনাহীন, কেন্দ্রমুখী, নমনীয়তা ও গতিময়তা প্রকাশ করে।
ঘনক: ঘনক কতগুলো তলের সমষ্টি। ঘনকের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে ভাই। এটি ত্রিমাত্রিক। এটি আবদ্ধ, ফাঁকা, কিংবা বেশ কিছু তলের সমিষ্টি হতে পারে। ঘনক জলের মত বর্গাকার, আয়তাকার, ত্রিভুজাকার, গোলাকার বা অসম। আয়তকার ঘনক আকৃতির হতে পারে।
আয়তাকার ঘনক
উদাহরণ: বাক্স, আলমিরা, যে কোনো কক্ষ বর্গাকার বা আয়তাকার ঘনক। ফল, ড্রাম বা সিলিন্ডার গোলাকার ও পিড়ামিত ত্রিভুজাকার ঘনক বিশেষ ।
বৈশিষ্ট্যঃ ঘনক তলের মত আকৃতির হতে পারে বিধায় উষ্ণ আকৃতির ঘনকের ত্রিভুজাকার ও গোলাকার ঘনক বৈশিষ্টসমূহও অলের ন্যায় ।
ত্রিভুজাকার ও গোলাকার ঘনক
চিত্র-২.৪, ১: প্ল্যান-এ রেখাসমূহের নাম ও ব্যবহার
চিত্র-২.৪.২: এলিভেশনে-এ রেখাসমূহের নাম ও ব্যবহার
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
১. ড্রয়িং-এর মৌলিক উপাদান কয়টি ও কি কি?
২. বিন্দু কাকে বলে?
৩. রেখা কী?
8. রেখা কত প্রকার ও কী কী?
৫. তল কত প্রকার ও কী কী?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ড্রয়িং-এর মৌলিক উপাদানসমূহের সংজ্ঞা লেখ।
২. রেখার বৈশিষ্টসমূহ লেখ।
৩. তলের বৈশিষ্টসমূহ লেখ।
৪. ফল ও ঘনকের পার্থক্য বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্নঃ
১. ড্রয়িং-এর মৌলিক উপাদানসমূহের বর্ণনা দাও।
২. বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক রেখার সংজ্ঞাসহ বৈশিষ্ট বর্ণনা কর।
৩. ড্রয়িং-এ ব্যবহৃত রেখার প্রকারভেদ ব্যবহারসহ বর্ণনা কর।
৪. যে কোনো একটি চিত্র এঁকে এতে পাঁচ প্রকার রেখার ব্যবহার দেখাও ।
আরও দেখুন...