দেব-দেবী ও পূজা-পার্বণ (পঞ্চম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - হিন্দুধর্ম শিক্ষা - | NCTB BOOK
43
43

ঈশ্বর নিরাকার হলেও জগতের প্রয়োজনে বিভিন্ন রূপে তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন। ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি যখন আকার পায় তখন তাকে দেবতা বা দেব-দেবী বলে। যেমন-ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী, মনসা প্রভৃতি। এ সকল দেব-দেবী ঈশ্বরের বিশেষ গুণ ও ক্ষমতার অধিকারী। আমরা এসকল দেব-দেবীর পূজা করে থাকি।

পূজা শব্দের অর্থ প্রশংসা করা বা শ্রদ্ধা করা। কিন্তু হিন্দুধর্মে পূজা শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। পূজা বলতে বোঝায় ঈশ্বরের প্রতীক বিভিন্ন দেব-দেবীকে ফুল ও নানা উপকরণ দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন বা প্রশংসা করা। এজন্য মন্ত্র পাঠ করে পুষ্পাঞ্জলি, আরতি এবং ধ্যান করাসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক কাজ করা হয়।

পার্বণ শব্দের অর্থ হলো পর্ব বা উৎসব। উৎসব মানে আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠান। পূজা-পার্বণ বলতে আমরা বুঝি, যে পর্বগুলো পূজা অনুষ্ঠানকে আনন্দময় করে এবং ঈশ্বর বা দেব-দেবীর প্রতি ভক্তির সৃষ্টি করে। পূজা-পার্বণের এসকল বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্রতিমা নির্মাণ, মন্দির সাজানো, বিভিন্ন ধরনের বাদ্যের আয়োজন বিশেষ করে ঢাক, ঢোল, ঘণ্টা, কাঁশি, শঙ্খ এবং ভক্তদের সাথে ভাব বিনিময়, কিছুটা বিচিত্রধর্মী খাওয়া-দাওয়া, বিভিন্ন ধরনের আনন্দমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন, পরিচ্ছন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান ইত্যাদি। দেবদেবীর পূজা করার জন্য বিশেষ পূজাবিধি অনুসরণ করতে হয় যা বিভিন্ন দেব ও দেবী অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এ অধ্যায়ে আমরা পূজাবিধির ধারণা, লক্ষ্মী পূজা, বিশ্বকর্মা পূজা এবং এসব পূজার গুরত্ব, পদ্ধতি, পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণামমন্ত্র এবং পূজার শিক্ষা ও প্রভাব সম্পর্কে অবহিত হব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা -

  • পূজাবিধির ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব
  • লক্ষ্মীদেবীর পরিচয় বর্ণনা করতে পারব
  • লক্ষ্মীদেবীর পূজাপদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব
  • লক্ষ্মীপূজার পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণামমন্ত্র সংস্কৃত ভাষায় বলতে পারব এবং বাংলা অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব
  • জীবনাচরনে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব
  • বিশ্বকর্মা দেবের পরিচয় বর্ণনা করতে পারব
  • বিশ্বকর্মা দেবের পূজাপদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব
  • বিশ্বকর্মা পূজার পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণামমন্ত্র সংস্কৃত ভাষায় বলতে পারব এবং বাংলা অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব
  • পারিবারিক ও সমাজ জীবনে বিশ্বকর্মা পূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব
  • লক্ষ্মী ও বিশ্বকর্মা পূজার্চনায় উদ্বুদ্ধ হব।
Content added By

পূজাবিধি (পাঠ ১, ২ ও ৩)

52
52

হিন্দুধর্মে পূজা করার জন্য কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করা হয়। এ সকল নিয়মনীতিগুলোকে পূজাবিধি বলে। প্রতিমা, ঘট, পট (ছবি), মণ্ডল, শালগ্রাম, পুস্তক, শিবলিঙ্গ ও জল এ আটটি বস্তুর যে- কোনো একটি বস্তুতে পূজা করা যায়। এ আটটি বস্তুকে পূজার আধার বলে। এ কারণে পূজার আধার হিসেবে এগুলোর কোনো-না-কোনোটির ব্যবহার দেখা যায়। পূজা করার মৌলিক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে দেব-দেবীর আবাহন, ধ্যান, প্রাণপ্রতিষ্ঠা, পূজামন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রার্থনামন্ত্র পাঠ, প্রণামমন্ত্র পাঠ ও বিসর্জন। এ ছাড়াও যে কোনো পূজা করার পূর্বে পঞ্চদেবতার পূজা করা হয়। পঞ্চদেবতা হচ্ছেন: শিব, বিষ্ণু, সূর্য, অগ্নি ও কালী। পূজা করার জন্য বেশকিছু সাধারণ বিধি বা নিয়ম-নীতি রয়েছে। নিচে কিছু কিছু বিধির উল্লেখ করা হলো-

১. আসনশুদ্ধি ও আচমন : এ বিধি অনুসারে পূজা করার পূর্বে পূজার উপকরণসমূহ শুদ্ধি করে নিতে হয়। শুদ্ধি করা বলতে দোষমুক্ত করাকে বোঝানো হয়। এ ক্ষেত্রে আসনশুদ্ধি, জলশুদ্ধি, করশুদ্ধি, পুষ্পশুদ্ধি করে পূজার ঘট স্থাপন করতে হয়। অতঃপর আচমন করতে হয়। আচমন বলতে হাত, পা, চোখ পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে বিশুদ্ধ জল তিনবার পান করতে হয়। এ সময় নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করতে হয়। আচমনের সাথে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করতে হয়। অতঃপর স্বস্তিবাচন। স্বস্তিবাচন বলতে শুভকামনা বোঝানো হয়। সাধারণত পুরোহিত পূজার শুরুতে যে শুভ বা মঙ্গল কামনা করেন তাকে স্বস্তিবাচন বলে।

২. সংকল্প গ্রহণ: এ বিধি অনুসারে সঠিকভাবে পূজাকার্য সম্পাদনের জন্য সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। সংকল্প শব্দের অর্থ প্রতিজ্ঞা বা দৃঢ় ইচ্ছা।

৩. পূজায় অভীষ্ট দেব-দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো, চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা: পূজার প্রথম বিধি অনুসারে নির্দিষ্ট দেব-দেবীর প্রতিমা বা পট নির্দিষ্ট করে পূজা ও প্রার্থনা গ্রহণের জন্য হৃদয় দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশ্বাস করা হয়, অভীষ্ট দেব-দেবী নির্দিষ্ট প্রতিমার মধ্যে অবস্থান করছেন। প্রতিমায় চক্ষু দান করে নিতে হয়। অতঃপর অভীষ্ট দেব-দেবীর উদ্দেশে বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

৪. অভীষ্ট দেব-দেবীর ধ্যান, পূজামন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি, প্রার্থনা, আত্মসমর্পণ ও নমস্কার প্রদান : এ বিধি অনুসারে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে দেব-দেবীর উদ্দেশে ধ্যান, পূজা, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, প্রার্থনা ও প্রণাম করা হয়। পূজা কার্যক্রমে কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থনা এবং দেব-দেবীর কাছে আমাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য আত্মসমর্পণ করা হয়। দেব-দেবীর পূজা করার জন্য এ বিধিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. আরতি প্রদান ও বিসর্জন: এ বিধি অনুসারে অভীষ্ট দেব-দেবীর উদ্দেশে আরতি প্রদান করা হয়। আরতির সময় অভীষ্ট দেব-দেবীর কাছে আমাদের ভিতর ও বাইরের সকল খারাপ দিকসমূহ দূর করে দেয়ার জন্য কপূর প্রজ্বলিত করে প্রার্থনা করা হয় এবং সকল পূজারিকে আশীর্বাদ প্রদান করা হয়। এ বিধির মাধ্যমে অভিষ্ট দেব-দেবীর ওপর আমাদের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশেষে অভীষ্ট দেব-দেবীর প্রতিমাকে বিসর্জন দেয়া হয়।

এ ছাড়াও পূজার সংকল্প গ্রহণ, একটু একটু করে জল পান করার জন্য জল সমর্পণ, দেব-দেবীকে অলংকার সমর্পণ, ছাতা সমর্পণ, পাখা (চামর) বিসর্জন প্রভৃতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

উপচারের ভিত্তিতে পূজার প্রকারভেদ: সাকাররূপে দেব-দেবীর পূজা বিভিন্ন উপচার অনুসারে বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে।
পঞ্চোপচার পূজা: উপচার শব্দের অর্থ উপকরণ। পঞ্চোপচার পূজা পাঁচটি উপকরণের মাধ্যমে করা হয়। গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য এ পাঁচটি পঞ্চোপচার পূজার উপকরণ।

দশোপচার পূজা: দশোপচার পূজা দশটি উপকরণের মাধ্যমে করা হয়। পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য-এ দশটি দশোপচার পূজার উপকরণ।

ষোড়শোপচার পূজা: আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ও বন্দনা- এ ষোলটি উপকরণ দিয়ে ষোড়শোপচার পূজা করা হয়।
অঞ্চলভেদে পূজাবিধির কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা যায়। তবে সাধারণ ভাবে সকল অঞ্চলের পূজাপদ্ধতি একই রকম।

একক কাজ: পূজার সাধারণবিধিসমূহ লেখ।
Content added By

শ্রীশ্রী লক্ষ্মীদেবীর পরিচয় ও পূজা পদ্ধতি (পাঠ ৪ ও ৫)

32
32

লক্ষ্মীদেবীর পরিচিতি

দেবী লক্ষ্মী সম্পদ, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী। তিনি সুন্দরী ও মাধুর্যময়ী দেবী। তিনি পূজারিদের ধন-সম্পদ দান করে থাকেন। তাঁর বাহন পেঁচা।

দেবী লক্ষ্মী শ্রী হিসেবে অভিহিত। কেননা তিনি সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতার প্রতীক। তিনি ভগবান বিষ্ণুর সহধর্মিণী।

দেবী লক্ষ্মী অত্যন্ত সুন্দর এবং দুই হাতবিশিষ্ট। তিনি পদ্মফুলের উপর উপবিষ্ট। দেবী লক্ষ্মীর গায়ের রঙ ধূসর, সাদা, উজ্জ্বল হলুদ ও নীলাভ হয়ে থাকে। শ্রীশ্রীলক্ষ্মী সৌন্দর্যের দেবী, সম্পদের দেবী। আমাদের পরিবারের উন্নতি নির্ভর করে সম্পদের ওপর। আর এই • সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি, পশু, শস্য, জ্ঞান, ধৈর্য, সততা, শুদ্ধতা ইত্যাদি।

লক্ষ্মীপূজা পদ্ধতি: যে কোনো পূজা করতে পূজাবিধি অনুসরণ করতে হয়। লক্ষ্মীপূজার পদ্ধতি হিসেবে শুদ্ধ আসনে বসে আচমন থেকে শুরচ করে পঞ্চদেবতার পূজা করতে হয়। অতঃপর লক্ষ্মীর ধ্যান করে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। লক্ষ্মীপূজা পঞ্চোপচার, দশোপচার বা ষোড়শোপচারে করা হয়ে থাকে। পূজার মৌলিক নীতি হিসেবে দেবী শ্রীলক্ষ্মীর ধ্যান, পূজামন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, ও প্রণামমন্ত্র পাঠ করতে হয়। অবশেষে বিসর্জন দিতে হয়।

লক্ষ্মীপূজার সময়কাল: সাধারণত প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করা হয়। লক্ষ্মীপূজায় লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করা হয়। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমাতিথিতে বিশেষভাবে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। এ লক্ষ্মীপূজা কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা নামে পরিচিত।

একক কাজ: লক্ষ্মী ধন-সম্পদের দেবী, এ দেবীর পূজাপদ্ধতি তোমার নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা কর।
Content added By

লক্ষ্মীদেবীর পুষ্পাঞ্জলি, প্রণামমন্ত্র এবং লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব (পাঠ ৬ ও ৭)

23
23

লক্ষ্মীদেবীর পুষ্পাঞ্জলি

ওঁ নমস্তে সর্বভূতানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।

যা গতিস্তৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্ত্বদর্চনাৎ।

সরলার্থ: হে হরিপ্রিয়া, তুমি সকলকে বর দিয়ে থাক। তোমার আশ্রিতদের যে গতি হয়, তোমার অর্চনার দ্বারা আমারও যেন তা হয়। তোমাকে নমস্কার।

লক্ষ্মীদেবীর প্রণামমন্ত্র

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।

সর্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে।

সরলার্থ: হে দেবী কল্যাণী, বিশ্বরূপ শ্রীবিষ্ণুর সত্রী, তুমি পদ্মা ও পদ্মার আলয়। সকলকে শুভফল দাও। তুমি আমাকে সকলক্ষেত্রে রক্ষা করো। আমি তোমাকে প্রণাম করি।

লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব

প্রতিটি হিন্দু পরিবারে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে এবং আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে লক্ষ্মীপূজা করা হয়, যা হিন্দুসমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একাত্মতাবোধের সৃষ্টি করে। লক্ষ্মীদেবী ধন-সম্পদ দান করেন। পূজার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীদেবীর উপর বিশ্বাস স্থাপিত হয়। লক্ষ্মীদেবীর শান্ত স্বভাব পূজারিকেও শান্ত করে তোলে।

দলীয় কাজ: লক্ষ্মীপূজার আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব চিহ্নিত কর।
Content added By

বিশ্বকর্মা দেবের পরিচয় ও পূজাপদ্ধতি (পাঠ ৮)

32
32

বিশ্বকর্মা দেবের পরিচয় : হিন্দুধর্ম অনুসারে বিশ্বকর্মা শিল্পী ও ভাস্কর্য এবং যন্ত্র ও যন্ত্রকৌশলের দেবতা। এ মহাবিশ্বের প্রধান স্থপতি। শিল্পনৈপুণ্য, স্থাপত্যশিল্প এবং কারুকার্য সৃষ্টিতে অনন্য গুণশালী দেবতা তিনি। পুরাণ অনুসারে তিনি দেবশিল্পী। তিনি স্থাপত্য বেদ নামে একটি উপবেদের রচয়িতা। বিশ্বকর্মা দেবের চতুর্ভুজ রূপ অত্যন্ত শৌর্যশালী। তাঁর বাম দিকের এক হাতে ধনুক

আর অন্য হাতে তুলাদণ্ড এবং ডান দিকের এক হাতে হাতুড়ি অন্য হাতে ব্রহ্ম কুঠার। তাঁর বাহন হস্তী। তাঁর কৃপায় মানুষ শিল্পকলা ও যন্ত্রবিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করে। তিনি অলংকার শিল্পের স্রষ্টা এবং দেবতাদের বিমান ও অস্ত্রনির্মাতা। তিনি ব্রহ্মার নির্দেশে কিষ্কিন্ধ্যা নগরী, যম ও বরুণদেবের প্রাসাদ, পুষ্পরথ, ইন্দ্রের বজ্র, শিবের ত্রিশূল, ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শনচক্র, কুবেরের অস্ত্র ইত্যাদি নির্মাণ করেছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদেশে তিনি দ্বারকাপুরীও নির্মাণ করেছেন।

বিশ্বকর্মা পূজাপদ্ধতি

সর্বপ্রকার কারুকার্য বিশ্বকর্মা দেবের সৃষ্টি। বিশ্বকর্মা মানুষকে শৈল্পিক জ্ঞান ও মেধা দান করেন। বিশ্বকর্মা পূজার মূল উদ্দেশ্য তাঁর কৃপা এবং কর্মে শিল্পনৈপুণ্য লাভ করা। কারুশিল্প ও শিল্পশ্রমিকেরা ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিতে বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন। পূজার রীতিনীতি অন্যন্য পূজার অনুরূপ হলেও পূজার সময় পারিবারিক সদস্যগণ যেসকল পেশায় নিয়োজিত সেসব পেশায় ব্যবহৃত উপকরণসমূহ বিশ্বকর্মা প্রতিমার কাছে রাখা হয়। বিশ্বকর্মা পূজা পঞ্চোপচারে, দশোপচারে বা ষোড়শোপচারে করা যেতে পারে।

একক কাজ: বিশ্বকর্মা দেবের পরিচয় দাও।
Content added By

বিশ্বকর্মা পূজার পুষ্পাঞ্জলি, প্রণামমন্ত্র এবং বিশ্বকর্মা পূজার শিক্ষা ও এর প্রভাব (পাঠ ৯ ও ১০)

30
30

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

এষ সচন্দন দূর্বাপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ

ওঁ শিল্পবতে শ্রীবিশ্বকর্মণে নমঃ।

সরলার্থ: চন্দন, দূর্বা, পুষ্প ও বিল্বপত্র দিয়ে শিল্পদেবতা বিশ্বকর্মাকে এ পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করছি এবং প্রণাম জানাচ্ছি।

প্রণামমন্ত্র

ওঁ দেবশিল্পিন্ মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক।

বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্ট ফলপ্রদঃ।

সরলার্থ: হে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা, আপনি মহান, দেবগণের কার্যসম্পাদক, সর্ব অভীষ্ট পূরণকারী। তোমাকে প্রণাম।

বিশ্বকর্মা দেবের পূজার শিক্ষা ও প্রভাব
  • বিশ্বকর্মার কৃপায় শিল্প ও বিজ্ঞানে পারদর্শিতা লাভ কার যায়। তাঁর আশীর্বাদে কারুশিল্পকর্মে দক্ষতা অর্জন করা যায়। পারিবারিক ও মন্দিরভিত্তিক এ পূজা করার মাধ্যমে বিশ্বকর্মা দেবের প্রতি পূজারিদের ভক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা পূজার মধ্য দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটানোর প্রেরণা পাওয়া যায় এবং সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
  • পূজারিগণ স্ব স্ব কাজে মনোযোগী হয় এবং কার্যসম্পাদনে শৈল্পিক মনোভাবে গড়ে ওঠে।
  • বিশ্বকর্মার কৃপায় পূজারিগণ শিল্পকলা ও যান্ত্রিক বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করতে পারে।
  • বিশ্বকর্মা পূজার মধ্য দিয়ে লোকশিল্পের বিকাশ ঘটে।
দলীয় কাজ: বিশ্বকর্মা দেবের পূজা করার কয়েকটি কারণ উল্লেখ কর।
Content added By

অনুশীলনী

35
35

শূন্যস্থান পূরণ কর:

১. পূজামন্ত্র পাঠ পূজা করার একটি …………………………… দিক।

২. যে কোনো পূজার আগে …………………………… পূজা করতে হয়।

৩. স্বস্তিবাচন বলতে …………………………… বোঝানো হয়।

8. সর্বপ্রকার কারুকার্য …………………………… দেবের সৃষ্টি।

৫. স্থাপত্যবেদ নামে একটি উপবেদের রচয়িতা ……………………………।

ডান পাশ থেকে শব্দ বা বাক্যাংশ নিয়ে বাম পাশের সাথে মিল কর:

বাম পাশ

ডান পাশ

১. পূজা করতে পূজাবিধি

২. ধূপ সৌরভ সৃষ্টি করে

৩. প্রতি বৃহস্পতিবার

৪. বিশ্বকর্মা দেবের চতুর্ভূজ রূপ

লক্ষ্মীপূজা করা হয়

অত্যন্ত শৌর্যশালী

শিল্পের বিকাশ ঘটে

মনের পবিত্রতা আনয়ন করে

অনুসরণ করতে হয়

নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দাও:

১. পূজার সময় কীভাবে আসন শুদ্ধি ও আচমন করা হয়?
২. 'শ্রীশ্রীলক্ষ্মী সম্পদ, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী'-ব্যাখ্যা কর।
৩. শ্রীশ্রীলক্ষ্মী দেবীর পূজার আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব চিহ্নিত কর।
8. বিশ্বকর্মা দেবের পূজা কীভাবে করা হয়?

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

১. 'পূজা-পার্বণে পূজাবিধিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম'- বিশ্লেষণ কর।
২. পারিবারিক ও সমাজজীবনে লক্ষ্মীপূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
৩. 'শিল্পনৈপুণ্য সৃষ্টিতে অনন্য গুণশালী দেবতা বিশ্বকর্মা'- বিশ্লেষণ কর।
8. পারিবারিক ও সমাজজীবনে বিশ্বকর্মা দেবের পূজার শিক্ষা ও প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. পূজার উপচার হিসেবে কোনটি শক্তির প্রতীক?
ক. ধূপ
খ. পুষ্প
গ. প্রদীপ
ঘ. নৈবেদ্য

২. পূজায় আচমনের সাথে কোন দেবতাকে স্মরণ করতে হয়?
ক. শিব
খ. বিষ্ণু
গ. ব্রহ্মা
ঘ. অগ্নি

৩. দেব-দেবীর পূজায় আত্মসমর্পণ বিধিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে আমরা –
i. প্রত্যাশা পূরণ করি
ii. ভক্তির প্রকাশ ঘটাই
ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) i ও iii
গ) ii ও iii
ঘ) i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
প্রতীতিদের বাড়িতে প্রতিবছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাতিথিতে বিশেষ পূজা করা হয়। প্রতীতিও তার মায়ের সাথে উপবাস থেকে এ পূজা করে। এ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সমাগম ঘটে এবং এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
8. প্রতীতি কোন দেব-দেবীর পূজা করে?
ক. সরস্বতী
খ. লক্ষ্মী
গ. গণেশ
ঘ. বিশ্বকর্মা

৫. প্রতীতি উক্ত দেব-দেবীর পূজা করে লাভ করবে -
i. শান্তস্বভাব
ii. ধনসম্পদ
iii. শিল্পনৈপুণ্য
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
গ) ii ও iii
খ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. অবনীবাবু দা, বটি, কাঁচি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি এ পেশায় দক্ষতা অর্জন ও কৃপালাভের আশায় প্রতিবছর পরম ভক্তিতে পঞ্চোপচারে এক বিশেষ দেব-দেবীর পূজা করেন। এ পূজায় তার পেশায় ব্যবহৃত উপকরণসমূহ প্রতিমার কাছে রাখেন। তার উপলব্ধি পেশাগত পারদর্শিতা লাভ এবং কর্মের সুনাম সবই এ পূজায় পরম ভক্তির ফল।
ক. পূজা শব্দের অর্থ কী?
খ. পূজার একটি বিধি ব্যাখ্যা কর।
গ. অবনীবাবু প্রতিবছর পরম ভক্তিতে কোন দেব-দেবীর পূজা এবং কীভাবে করেন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অবনীবাবুর ব্যক্তিজীবনে উক্ত পূজার শিক্ষা ও প্রভাব মূল্যায়ন কর।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;