নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ :
১। জনসংখ্যার আকার ও ঘনত্ব : সাধারণত শহর বৃহৎ জনসংখ্যাবিশিষ্ট এবং ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কোনো বসতিকে শহর হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য কমপক্ষে ৫,০০০ জনসংখ্যা এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৫০০ জনের বসবাস থাকতে হবে। শহরে জন্ম ও মৃত্যুর বৃদ্ধির হার গ্রামের তুলনায় কম। তবে অভিবাসনের কারণে শহরের জনসংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। বসতবাড়ির ধরন : শহরে সাধারণত ইট, কাঠ, লোহা ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বহুতলবিশিষ্ট বাড়ির সংখ্যা অধিক। এর ফলে স্বল্প পরিসর স্থানে অধিক লোকের সংস্থান হয়। প্রশস্ত রাজপথ, পার্ক, কৃত্রিম লেক প্রভৃতি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা থাকে।
৩। পরিবহন ব্যবস্থা : নগরে যাতায়াতের জন্য অধিকসংখ্যক রাস্তা গড়ে ওঠে। ফলে মানুষ সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারে।
৪। পরিবার : পরিবার হলো মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। শহর জীবনে সচরাচর একক পরিবার কাঠামো লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের পেশা ও শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে শহরের লোকেরা প্রায় অবসরহীন জীবনযাপন করে। ফলে তারা নিজ নিজ পরিমণ্ডলের লোকদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না।
৫। চালচলন : শহর জীবনে গতিময়তা খুব প্রবল। বিভিন্ন প্রকার পেশা গ্রহণের সুযোগ থাকায় শহরের মানুষ অনেক সময় পেশা পরিবর্তন করে উন্নততর সুযোগ সুবিধা গ্রহণে ব্রতী হয়। এখানে আয় দ্বারা সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অপরপক্ষে গ্রামের মানুষ স্বভাবত রক্ষণশীল। সনাতন সামাজিক রীতির প্রতি গ্রামের মানুষ শ্রদ্ধাশীল থাকে। গ্রামে মানুষের সামাজিক অবস্থা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হয়।
৬। অর্থনীতি : শহরের মানুষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নগরে মানুষের পেশা বহু বৈচিত্র্যপূর্ণ। তারা প্রধানত শিল্পকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রশাসন ও সেবা প্রভৃতি অকৃষি পেশায় নিয়োজিত থাকে।
৭। সেবা সুবিধা : নগর জীবনে মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকার সেবা সুবিধা, যেমন— বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পয়ঃপ্রণালি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি অপরিহার্যভাবে গড়ে ওঠে।
৮। শিক্ষা ও চিকিৎসা : নগরে মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বপ্রকার সুবিধা ভোগ করে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রভৃতি নগরে গড়ে ওঠে।
৯। বিনোদন ব্যবস্থা : নগরে কর্মক্লান্ত মানুষের চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা থাকে। সিনেমা, থিয়েটার,
খেলাধুলা প্রভৃতি বিনোদনমূলক কার্যকলাপ নগর জীবনের মানুষকে প্রভাবিত করে।
১০। অপরাধ বৃত্তি : নগরে অপরাধের ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হয়, যেমন— চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা ও মারামারি ইত্যাদি। এসব ঘটনা শহরের নাগরিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
১১। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন : নগরে নাগরিক সংগঠনগুলো খুব সক্রিয় থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড শহর থেকেই পরিচালিত হয়। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলো নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও লোক ঐতিহ্যের মেলার আয়োজন করে থাকে। যা নগর জীবনকে আনন্দময় করে তোলে।
কাজ : তোমার দেখা নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট সুবিধা ও অসুবিধা লিপিবদ্ধ কর।
আরও দেখুন...