নাইলন হল পলি জ্যামাইড ফাইবার। অ্যামাইড নামক রাসায়নিক পদার্থের পলিমারাইজেশন করে পলিঅ্যামাইড ফাইবার গঠন করা হয়।
- CO-NH -
জামাইড
পলিঅ্যানাইত ফাইবারের প্রকার (Classification of Polyamalde fibre)
সাধারণত আমরা দুই ধরনের পলিঅ্যামাইড ফাইবার দেখতে পাই।
১) নাইলন ৬.৬ ও
২) নাইলন ৬
উপরোক্ত দুই ধরনের পলিঅ্যামাইড ফাইবার ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে নিম্নলিখিত ফাইবার উৎপাদিত হচ্ছে।
১) নাইলন ১১
২) নাইলন 6.10.
নিম্নে নাইলন ৬.৬ ও নাইলন ও পলিঅ্যামাইড ফাইবারের বর্ণনা দেওয়া হলো ।
নাইলন ৬.৬ (ONylon 6.6):
নাইলন ৬.৬ কে পলিঅ্যামাইড ৬.৬৪ বলা হয়। নাইলন ৬.৬ -এর রাসায়নিক নাম পলিহেক্সামিথিলিন
অ্যাডোপামাইড (Polyhexamethylene Adopamide) ।
- C ONH{CH2)=NHCO{CH2 – CONH(CH2)_NHCO – (CH2)CO
পলিহেব্রামিথিলিন অ্যাডোপ্যামাইড
উপরোক্ত ফাইবার দুইটি রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণে তৈরি হয়। যেমন- হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ও অ্যাডিপিক অ্যাসিড।
নাইলনকে পৃথিবীর সর্বপ্রথম কৃত্রিম ফাইবার বলা হয়। নাইলন ফাইবার উচ্চশক্তিসম্পন্ন। ইহা ছাড়াও ঘর্ষণজনিত শক্তি নষ্ট হয় না বললেই চলে। ফাইবারের স্থিতিস্থাপকতা গুণও খুব ভালো। ইহা ছাড়া সক্স ও ফুল তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।
নাইলন ৬.৬ প্রস্তুত প্রণালি :
নাইলন ৬.৬ প্রস্তুতপ্রণালি কতগুলো ধাপে সম্পন্ন হয়। নিম্নে ধাপগুলো দেওয়া হলো।
কাঁচামাল : কাঁচামাল হিসেবে হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ও অ্যাডিপিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়।
এডিপিক অ্যাসিড প্রস্তুত প্রণালি
কোলটার (Coal-tar) অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম হতে প্রথমে ফেনল (phenol) সংগ্রহ করা হয়। এই ফেনলকে হাইড্রোজেনেশন করে সাইক্লোহেক্সানল ও পরে অক্সিডেশন করে অ্যাডিপিক অ্যাসিড প্রস্তুত করা হয়।
হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন প্রস্তুত প্রণালি
উপরোক্ত অ্যাডিপিক অ্যাসিডের সাহায্যে হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন প্রস্তুত করা হয়। অ্যাডিপিক অ্যাসিড ক্যাটালিস্ট (ফসফরিক অ্যাসিড ও বোরন সালফেট) এর উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়ার সাথে ডিহাইড্রেট হয়ে অ্যাডিপোনাইট্রাইল তৈরি করে। পরে এই অ্যাডিপোনাইট্রাইল নিকেলের উপস্থিতিতে রিডিউজড হয়ে হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন গঠন করে।
পলিমারাইজেশন ও উৎপাদন
হেক্সামিথিলিন ডায়ামিন ও অ্যাডিপিক অ্যাসিড বিক্রিয়া করে মিথাইল অ্যালকোহলের উপস্থিতিতে নাইলন সল্টকে একটি বন্ধ পাত্রে তাপ দেওয়া হয়। ফলে নাইলন সল্ট পানি বের করে দেয় ও হেক্সামিথিলিন অ্যাডিপ্যামাইড গঠন করে যা পরবর্তীতে পলিমারাইজেশন হয়ে আরও পানি বের করে দেয় ও নাইলন পলিমার গঠন করে। পরে এই পলিমারকে ২৮° সে. তাপমাত্রায় ৮ ঘণ্টা যাবৎ তাপ দেওয়া হয় ফলে এটা একবার গলে ও জমাট বেঁধে সম্পূর্ণ পলিমারাইজেশন শেষ করে। এই পলিমারগুলিকে প্রথমে রিবন আকারে ও পরে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চিপস -এ টুকরো টুকরো হয় এবং স্পিনিং সেকশনে প্রেরণ করা হয়।
নাইলন ৬.৬ স্পিনিং
নাইলন গলানোর পর স্পিনিং করা হয় বলে একে মেল্ট স্পিনিং বলা হয়। প্রথমে একটি হপারে নাইলন চিসগুলিকে রাখা হয় ও পরে একটি পাত্রে নেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি ছিদ্রযুক্ত প্লেট আছে। যাকে বৈদ্যুতিক তাপ দেওয়া হয়। তাপে নাইলন চিসগুলি গলে ছিদ্র দ্বারা ভ্যাসেলের মধ্যে অর্থাৎ নিচে আসে। লক্ষ্য রাখতে হবে এ অবস্থায় যাতে সলভেন্টসমূহ অক্সিজেন অথবা বাতাসের সংস্পর্শে না আসে। উক্ত গলিত নাইলনকে ২৮° সে. তাপমাত্রায় পাম্পের সাহায্যে ফিল্টার পেট হয়ে স্পিনারেটে আসে। (স্পিনারেটটি ০.২৫" মোটা ২-৩" ব্যাস এবং ০.০১” ব্যাস বিশিষ্ট ২৪টি ছিদ্রযুক্ত) এবং চাপের কারণে স্পিনারেট থেকে বের হয়ে যত শিগগির সম্ভব এটা কুলিং জোন এর মধ্য দিয়ে আসার সময় শক্ত হয়ে ফিলামেন্টে রূপ নেয়। ফিলামেন্ট সংগ্রহের গতি ১২০০ মিটার/মিনিট।
ড্রইং এবং ওয়াইন্ডিং
ড্রইং ও ওয়াইন্ডিং -এ ফিলামেন্টগুলিকে একটি ৭০° সে. তাপমাত্রায় স্টিম চেম্বারের মধ্য দিয়ে আনা হয় এবং বিভিন্ন গাইডের মাধ্যমে ববিনে জড়ানো হয়।
নাইলন ৬.৬ এর ব্যবহার
১) প্যারাসুট কাপড়, কর্ড, হারনেস কর্ড, সেলাই সুতা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
২) ল্যাডিজ হুজ (Hose) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৩) দড়ি, মটর ও অ্যারোপ্লেনের টায়ার কর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪) পিভিসি -এর উপর নাইলনের প্রলেপ দিয়ে তারপুলিন তৈরি হয়।
৫) লিঙ্ক বেল্ট ও জয়েন্ট ডিস্ক ইত্যাদি
৬) টাইপ রাইটারের রিবন।
৭) ছোট ফিশিং বোট (Boat)
৮) ফিল্টার কাপড়।
৯) কার্পেট, অ্যাপারেল।
নাইলন ৬ উৎপাদন :
ক্যাপরোল্যাকটাম প্রস্তুতকরণ
ফেনল, বেনজিন ও অ্যানিলিনকে ক্যাপরোল্যাকটাম প্রস্তুতের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপরোক্ত কাঁচামাল দ্বারা প্রথমে সাইক্লোহেক্সানল প্রস্তুত করা হয়। নিকেল ফ্যাস্টালিস্ট -এর উপস্থিতিতে ১৫০° থেকে ২২০° সে. তাপমাত্রায় ২৫ অ্যাটমোসফেয়ারিক চাপে বেনজিনকে হাইড্রোজেনেটেড করে সাইক্লোহেক্সানল গঠন করে।
এ সাইক্লোহেক্সানল বিক্রিয়াটি নাইট্রোসিল -এর সঙ্গে পারদের ল্যাম্পের শক্তি ও আলোর উপস্থিতিতে সংঘটিত হয়। সাইক্লোহেক্সানন অক্সিম ও পরে সালফিউরিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যাপরোল্যাকটাম গঠন করে।
পলিমারাইজেশন
ল্যাকটামকে তরল অবস্থায় ছেঁকে তাপে ও অত্যাধিক চাপে একটি অটোকেভ-এ নেওয়া হয়। যাতে প্রায় ২০০ -এর মতো মনোমারিক ইউনিট থেকে একটি বড় পলিমারিক ইউনিট দেয়, যার নাম পারলন ( Parlon )। এ পলিমার পারলনকে নাইলন ৬ বলা হয়। কারণ এটা ৬টি কার্বন অ্যাটমের পলিমার।
স্পিনিং (Spinning)
পারলন পলিমারকে ধৌত ও শুকানোর পর গলানো হয়। নাইলন ৬ এ গলনাঙ্ক খুবই কম। অতঃপর ইহাকে উচ্চ চাপে স্পিনারেটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। স্পিনিং গতি ১০০০ মি. মিনিট। পলিমারকে মেন্ট স্পিনিং -এর মাধ্যমে ফিলামেন্টগুলো সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ যত শিগগির সম্ভব ফিলামেন্টসমূহকে কুলিং (Cooling) জোন-এর মধ্য দিয়ে নিয়ে আসার সময় শক্ত হয়ে যায় এবং গাইড রোলারের মাধ্যমে ববিনে জড়ানো হয়।
নাইলন ৬ এর ব্যবহার
১. সাফল্যজনকভাবে নাইলন-৬ টায়ার কর্ড প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। নাইলন ৬ এর তাপ প্রতিরোধক ও রাবারের প্রতি সংযুক্তের কারণে টায়ার কর্ড প্রস্তুত হচ্ছে।
২. নাইলন ৬ ফিশিং লাইন অর্থাৎ মাছ ধরার জাল, সুতা ও দড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের জন্য নাইলনের দড়ি ব্যবহৃত হয়।
৪. হোজ ( Hose ) ও মোজা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. জর্জেট, কার্পেট, সাঁতারের পোশাক, ইউনিফরম, ফ্লাগ, বর্ণাঢ্য বস্ত্র, ফিল্টার ক্লথ, নিটেড ব্লাউজ, শার্টিং ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
৬. টাইপ রাইটারের রিবন।
৭. ছোট ফিশিং বোট
৮. ফিল্টার কাপড়।
৯. কার্পেট, অ্যাপারেল।
আরও দেখুন...