নিম্নশ্রেণির জীব (প্রথম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - বিজ্ঞান - | NCTB BOOK
1k
1k

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, শৈবাল, অ্যামিবা ইত্যাদিকে নিম্নশ্রেণির জীব বলা হয়। এদের মধ্যে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যামিবা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া দেখা যায় না। এরা অণুজীবের অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু ছত্রাক ও শৈবাল খালি চোখে দেখা গেলেও অধিকাংশ ছত্রাক ও শৈবাল দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য লাগে। এসব অণুজীব বা আদিজীব মানুষ, গৃহপালিত পশুপাখি ও উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টি করে। আবার পরিবেশে এদের অনেক উপকারী ভূমিকাও রয়েছে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

  • অণুজীবের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • অণুজীবের শ্রেণিবিন্যাস করতে পারব।
  • ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যামিবার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারব।
  • শৈবাল ও ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও অপকারিতা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • কীভাবে ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ছত্রাকজনিত রোগ সংক্রমণের বিষয়ে নিজে সচেতন হব ও অন্যদের সচেতন করব।
  • মানবদেহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টিতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও এন্টামিবার ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • মানবদেহে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও এন্টামিবার কারণে সৃষ্ট মানবদেহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার ব্যাখ্যা করতে পারব। এসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিকারে নিজে সচেতন হব এবং অন্যদেরও সচেতন করব।
Content added By

অণুজীব জগৎ (পাঠ ১-২)

84
84

আমরা আমাদের চারপাশে অনেক জীব দেখতে পাই। এসব জীব ছাড়াও আমাদের পরিবেশে অনেক জীব রয়েছে যাদের খালি চোখে দেখাই যায় না। এদের তাধিকাংশেরই কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই। এরা অণুজীব নামে পরিচিত। এসব অণুজীব থেকেই সৃষ্টির শুরুতে জীবনের সূত্রপাত হয়েছে। তাই অণুজীবদেরকে আদিজীবও বলা হয়ে থাকে।

তোমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে মারগুলিস ও হুইটেকারের জীবজগতের পঞ্চরাজ্য প্রস্তাবনায় অণুজীবসমূহকে মনেরা, প্রোটিস্টা ও ফানজাই রাজ্যে দেখতে পেয়েছো। আবার অণুজীবসমূহের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে বর্তমান কালে অণুজীব বিজ্ঞাণীগণ এ জগৎকে তিনটি রাজ্যে ভাগ করেছেন।

রাজ্য-১: এক্যারিওটা বা অকোষীয় এসব অণুজীব এতই ছোটো যে তা সাধারণ আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচেও দেখা যায় না। এদের দেখতে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, যেমন- ভাইরাস।

রাজ্য-২: প্রোক্যারিওটা বা আদিকোষী: যেসব অণুজীবের কোষের কেন্দ্রিকা সুগঠিত নয় তারাই এ রাজ্যের সদস্য। সুগঠিত কেন্দ্রিকা না থাকায় এদের কোষকে আদিকোষ বলা হয়, যথা- ব্যাকটেরিয়া।

রাজ্য-৩: ইউক্যারিওটা বা প্রকৃতকোষী যেসব অণুজীব কোষের কেন্দ্রিকা সুগঠিত তাদেরই প্রকৃত কোষ বলে। শৈবাল, ছত্রাক ও প্রোটোজোয়া এ ধরনের অণুজীব।

নতুন শব্দ: এক্যারিওটা, প্রোক্যারিওটা, ইউক্যারিওটা, অণুজীব, ভাইরাস।

Content added By

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া (পাঠ ৩-৪)

141
141

ভাইরাস, রিকেটস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের অণুজীব আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা অধিকাংশই আমাদের উপকার করে। তবে কিছু কিছু অণুজীব আছে যারা আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে। এবার আমরা কয়েকটি অণুজীব সম্পর্কে জানব।

চিত্র-১.১: একটি
ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস কণিকা

ভাইরাস: ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসদেরকে দেখা যায় না। এরা সরলতম গঠনের। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, প্লাজমালেমা, সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছুই নেই। তাই ভাইরাস দেহকে অকোষীয়ও বলা হয়। এরা শুধুমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত। এদের আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড বের হয়ে গেলে এরা জীবনের সকল লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবদেহে যেইমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিডকে একত্র করা হয়, তখনি এরা জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এরা জীবনের কোনো লক্ষণ দেখায় না। এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবর্তী

ভাইরাসদের মধ্যে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস একটি পরিচিত ভাইরাস। চিত্র ১.১ এ এদের গঠন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।

ভাইরাস গোলাকার, দণ্ডাকার, ব্যাঙাচির ন্যায় ও পাউরুটির ন্যায় হতে পারে। ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। বসন্ত, হাম, সর্দি ইত্যাদি বায়ুবাহিত রোগ। ধানের টুংরো ও তামাকের মোজাইক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়।

ভাইরাসের উপকারিতা: বিভিন্ন রোগ যেমন বসন্ত, পোলিও ও প্লেগের টিকা ভাইরাস থেকে তৈরি হয়। জিন প্রকৌশলে ভাইরাস ব্যবহৃত হয়। কিছু ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থেকে পরোক্ষভাবে রক্ষা করে।

ভাইরাসের অপকারিতাঃ মানবদেহে কোভিড-১৯, বসন্ত, হাম, জলাতঙ্ক, এইডস প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ যেমন: তামাকের মোজাইক রোগ, ধানের টুংরো রোগ ইত্যাদি সৃষ্টি করে।

ব্যাকটেরিয়া: ব্যাকটেরিয়ার কিছু কথা আমরা পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছি। এবার একটু বিস্তারিত জানব। ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব।

বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ব্যাকটেরিয়া কোষ গোলাকার, দণ্ডাকার, কমা আকার, প্যাঁচানো ইত্যাদি নানা ধরনের হতে পারে। দেহের আকার আকৃতির ভিত্তিতে একে নিম্নরূপে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়:

ক) কক্কাস (চিত্র-১.২): কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া কোষের আকৃতি গোলাকার। এরা কক্কাস ব্যাকটেরিয়া। এরা এককভাবে অথবা দলবেঁধে থাকতে পারে, যেমন-নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।

খ) ব্যাসিলাস (চিত্র-১.৩): এরা দেখতে লম্বা দণ্ডের ন্যায়। ধনুষ্টংকার, রক্তামাশয় ইত্যাদি রোগ এরা সৃষ্টি করে।

গ) কমা (চিত্র-১.৪): এরা বাঁকা দণ্ডের ন্যায় আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। মানুষের কলেরা রোগের ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের।

ঘ) স্পাইরিলাম: এ ধরনের ব্যাকটোরিয়ার আকৃতি প্যাঁচানো।

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা

  • মৃত জীবদেহ ও আর্বজনা পচাতে সাহায্য করে।
  • একমাত্র ব্যাকটেরিয়াই প্রকৃতি থেকে সরাসরি মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে।
  • পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে।
  • দই তৈরি করতেও ব্যাকটেরিয়ার সাহায্য নিতে হয়।
  • বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়।
  • ব্যাকটেরিয়া জীন প্রকৌশলের মূল ভিত্তি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য পাওয়ার জন্য জীনগত পরিবর্তনের কাজে ব্যাকটেরিয়াকে ব্যবহার করা হয়।

চিত্র- ১.৫: স্পাইরিলাম

ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা: ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে যক্ষ্মা, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। এরা খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলের পচন ঘটায়। উদ্ভিদে বিভিন্ন রোগ যেমন: ধানের লিফ ব্লাইট, টমেটোর ক্যাংকার ইত্যাদি ঘটায়।

Content added By

ছত্রাক, শৈবাল ও অ্যামিবা (পাঠ ৫-৬)

126
126

ছত্রাক: ছত্রাক সমাঙ্গদেহী ক্লোরোফিলবিহীন অসবুজ জীব। ক্লোরোফিলের অভাবে এরা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না। তাই এরা পরভোজী অথবা মৃতভোজী। পরভোজী ছত্রাক বাসি ও পচা খাদ্য দ্রব্য, ফলমূল, শাকসবজি, ভেজা রুটি বা চামড়া, গোবর ইত্যাদিতে জন্মায়। মৃতভোজী ছত্রাক মৃত জীবদেহে বা জৈব পদার্থ পূর্ণ মাটিতে জন্মায়।

ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পেনিসিলিনসহ বহু মূল্যবান ঔষধ ছত্রাক থেকে পাওয়া যায়। পাঁউরুটি তৈরিতে ঈস্ট নামক ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। ঈস্ট ভিটামিন সমৃদ্ধ বলে একে ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এগারিকাস নামক এক ধরনের মাশরুম সৌখিন খাদ্য বলে বিবেচিত। বর্তমানে আমাদের দেশসহ বহু দেশে এর চাষ করা হয়। আবর্জনা পচিয়ে মাটিতে মেশাতেও ছত্রাকের ভূমিকা রয়েছে।

মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদের বহু রোগের জন্য দায়ী এই ছত্রাক। দাদ, ছুলি (ছোলম) ও মানুষের শ্বাসনালির প্রদাহ ছত্রাকের সংক্রমণে হয়ে থাকে। ছত্রাক আলুর বিলম্বিত ধসা রোগ, পাটের কালোপট্টি রোগ, আখের লাল পচা রোগ সৃষ্টি করে। এরা সহজেই কাঠ ও বেত বা বাঁশের আসবাবপত্র পচিয়ে আমাদের ক্ষতি করে।

ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধকরণ: ছত্রাকজনিত রোগ খুবই ছোঁয়াচে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে যা করা দরকার তা হলো:

  • ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র (কাপড়-চোপড়, চিরুনি, টুপি, স্যান্ডেল) ব্যবহার না করা।
  • ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কম আসা।
  • ছত্রাক আক্রান্ত উদ্ভিদে ঔষধ ছিটানো বা উদ্ভিদ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।

শৈবাল: সমাঙ্গবর্গের ক্লোরোফিলযুক্ত ও স্ব-ভোজী উদ্ভিদরাই শৈবাল। এরা মাটি, পানি ও অন্য গাছের উপর জন্মায়। সবুজ ছাড়াও লাল, বাদামি ইত্যাদি রঙের শৈবাল দেখা যায়। 'স্পাইরোগাইরা' নামক শৈবাল বেশিরভাগ জলাশয়ে পাওয়া যায়।

শৈবালের উপকারিতা: আইসক্রিম তৈরিতে সামুদ্রিক শৈবালজাত অ্যালজিন ব্যবহৃত হয়। সামুদ্রিক শৈবাল আয়োডিন ও পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। মৎস্য চাষে শৈবাল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

শৈবালের অপকারিতা: মানুষ ও উদ্ভিদের নানা রোগ সৃষ্টিতে শৈবাল দায়ী। যেমন এক ধরনের শৈবাল চা-পাতার রেড রাস্ট রোগ সৃষ্টি করে। জলাশয়ে শৈবালের আধিক্য দেখা দিলে জলজ প্রাণী ও মাছ অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে পারে।

অ্যামিবা : প্রোটিস্টা রাজ্যের সদস্য অ্যামিবা এককোষী জীব। এদের দেহ ক্ষুদ্রাকার। অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এদের দেখা যায় না। এরা প্রয়োজনে দেহের আকার পরিবর্তন করে থাকে। এদের দেহ থেকে আঙুলের মতো তৈরি অভিক্ষেপকে ক্ষণপদ বলে। এর সাহায্যে অ্যামিবা খাদ্যগ্রহণ ও চলাচল করে। এদের দেহে পানিগহ্বর, খাদ্যগহ্বর ও সংকোচন গহ্বর থাকে। এদের সারা দেহ একটি পাতলা ও স্বচ্ছ পর্দা দ্বারা ঘেরা থাকে। একে প্লাজমালেমা বলা হয়। অ্যামিবা পানিতে, স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে, পুকুরের তলার পচা জৈব আবর্জনার মধ্যে জন্মে।

চিত্র- ১.৬: অ্যামিবার আণুবীক্ষণিক গঠন

Content added By

এন্টামিবা (পাঠ ৭)

212
212

এন্টামিবা: এন্টামিবা প্রোটিস্টা রাজ্যভুক্ত আরেক ধরনের এককোষী জীব। খালি চোখে এদের দেখা যায় না। এদের দেহের কোনো নির্দিষ্ট আকৃতি নাই কারণ এরাও সর্বদাই অ্যামিবার মত আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করতে থাকে। এদের দেহ স্বচ্ছ জেলির ন্যায়। তবে কখনো কখনো প্রতিবন্ধু পরিবেশে এরা গোলাকার শক্ত আবরণে নিজেদের দেহ ঢেকে ফেলে। এ অবস্থায় একে সিস্ট বলে।
আমাশয় রোগ সাধারণত দুই ধরনের, যথা- এমিবিক ও ব্যাসিলারি। ব্যাসিলারি আমাশয়ের কারণ এক ধরনের ব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়া। এন্টামিবা নামক এক ধরনের এককোষী প্রাণীর আক্রমণে এমিবিক আমাশয় হয়ে থাকে ।

এরা পরজীবী হিসেবে মানুষ, বানর জাতীয় প্রাণী, বিড়াল, কুকুর, শুকর ও ইঁদুরের বৃহদন্ত্রে বাস করে।
এন্টামিবা কোষ বিভাজন ও অণুবজ (স্পোর) সৃষ্টির মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। স্পোরুলেশন পদ্ধতিতে একটি কোষের প্রোটোপ্লাজম বহুখন্ডে বিভক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুবীজ বা স্পোর গঠন করে। অনুকূল পরিবেশে এরা প্রত্যেকে একটি নূতন অ্যামিবা হিসেবে বড়ো হয়। এন্টামিবা এক ধরনের আমাশয় রোগের জন্য দায়ী।

রোগী রোগজীবাণুটি কোনো লক্ষণ ছাড়াই বহন করে। এমিবিক আমাশয় সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা খুব কঠিন। উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খেলে এ রোগ সেরে যায়।

Content added By

স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিতে অণুজীবের ভূমিকা (পাঠ ৮-৯)

81
81

ব্যাকটেরিয়া জীবাণু দেহাভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে পারে। অপরিষ্কার হাত জীবাণুর জন্য একটি সুবিধাজনক বাহন। যার মাধ্যমে সহজেই এরা মুখগহ্বরে ঢুকে যেতে পারে। আমরা যে জামা কাপড় ব্যবহার করি তাতে লেগে ব্যাকটেরিয়ার স্পোর স্থানান্তরিত হতে পারে।

বাতাসে যে ধুলাবালি উড়ে বেড়ায় তার সাথে অতি সহজেই ব্যাকটেরিয়া বা তার স্পোর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। হাত মেলানোর মাধ্যমেও ব্যাকটোরিয়া একজন থেকে অন্যজনে অতি সহজে স্থানান্তরিত হতে পারে। পচা ও বাসি খাদ্যের মাধ্যমে জীবাণু সহজেই ছড়ায়। কলেরা ও টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। ভাইরাস, ব্যাকটোরিয়া ও এন্টামিবাজনিত রোগ এক সময় খুবই ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে যেত। নিরাপদ পানির অভাবে এমন হতো। যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের কারণেও জনস্বাস্থ্যজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব মলমূত্রে যে জীবাণু থাকে তা ভক্ষণকারী অন্য জীব এগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া বৃষ্টি বা জোয়ারের পানিতে এগুলো দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

কাজ: তোমারা তোমাদের এলাকায় ঘুরে দেখ কোন কোন বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা রয়েছে, তার একটি তালিকা কর এবং যাদের স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই তাদেরও এ ব্যাপারে সচেতন কর। তোমার কাজের বর্ণনা লিখে দেখাও।

আমাদের দেশের অনেক স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই এবং এসব অঞ্চলে মানুষ মাঠ বা কাঁচা পায়খানা ব্যবহার করে। এন্টামিবায় আক্রান্ত ব্যক্তির মল মাঠের মাটিতে মিশে যায়। এ মাটি হাতে লাগলে বা এ মাটিতে যে সবজি চাষ করা হয় তাতে এসব জীবাণু লেগে থাকে। সবজির ভিতরেও এরা প্রবেশ করে। রান্নার পরও দেখা যায় ঐ জীবাণু তখনও বেঁচে আছে। এভাবে এন্টামিবা সংক্রমিত হয়।

ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে অনেক সময় ২/৪ দিনে এমনি এমনি রোগ সেরে যায়। তবে কিছু মারাত্মক রোগ আছে যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। হাঁচি, কফ, থুতু ও কাশির মাধ্যমে সর্দি কাশির ভাইরাস ছড়ায়। সংস্পর্শ দ্বারা উদ্ভিদের মোজাইক রোগ ছড়ায়। আবার এইট্স রোগ একবার হলে আর নিরাময় হয় না। অসুস্থ লোকের রক্ত গ্রহণ, মাদক গ্রহণ, এক সুঁই এ বহু লোকের ইনজেকশান গ্রহণ ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে এ রোগ ছড়ায়। মাম্পস, হাম, বসন্ত ইত্যাদি খুবই কষ্টকর রোগ। ভাইরাসজনিত এসব রোগ বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং আমাদের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে। এভাবে নানা মাধ্যমে ভাইরাস সুস্থ দেহে প্রবেশ করে।

Content added By

মানবদেহে অণুজীব সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ ও প্রতিকার (পাঠ ১০)

261
261

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও এন্টামিবা যেসব রোগ সৃষ্টি করে তার প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে হলে সম্মিলিতভাবে স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মগুলো যত্ন সহকারে পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দুর্বল স্বাস্থ্যের ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বহন করে। তাই সকলের উচিত সুষম খাদ্য প্রয়োজন মতো নিয়মিত গ্রহণ করা।

কাজ: তোমার শ্রেণির যাদের নখ বড়ো, যারা আজ দাঁত ব্রাশ করেনি তাদের তালিকা বানাও এবং এ ব্যাপারে তাদের সচেতন কর।

শুধু মাংস আর মাছ খেলেই সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হয় না। একইসাথে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খেলে তবেই সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হয়। ভিটামিন ও খনিজ লবণ সুস্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আসে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাত ও মুখ পরিষ্কার করা, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, হাতের নখ কাটা ও সাবান ব্যবহার করে গোসল করা। রাস্তাঘাটে যত্রতত্র থুতু বা কফ না ফেলা। পথ চলতে বিশেষ করে ধুলাবালি উড়ছে এমন স্থানে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই মুখে ও নাকে রুমাল চাপা দিতে হবে। রুমালে সর্দি মুছলে অবশ্যই বাসায় ফিরে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। তোমরা সম্ভব হলে নাক ঝাড়ার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে পার। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য কোনো কিছু ব্যবহার বা স্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। খাবার পানি নিরাপদ হওয়া খুবই জরুরি। কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। পান করা, গোসল ও কাপড় কাচা, বাসন ধোওয়া ইত্যাদির জন্য নিরাপদ পানি ব্যবহার করা উচিত। আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েলের পানি নিরাপদ। পুকুর ও নদীর পরিষ্কার পানিও ব্যবহারের পূর্বে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। মানুষ ও পশুপাখি আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা করাতে হবে। তবে ভাইরাস, যেমন বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হলে পাখি মেরে মাটিতে পুঁতে রাখতে হয়। ম্যাডকাউ ও অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গরু-মহিষও মেরে ফেলা উচিত কারণ এর চিকিৎসা চলাকালীন অন্যান্য পশু আক্রান্ত হতে পারে।

কাজ: তোমাদের এলাকায় ঘুরে দেখ কোন কোন বাড়িতে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। না থাকলে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করে শ্রেণিতে উপস্থপনা কর।

এলাকার সবাইকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জীবনযাপনে উৎসাহিত করতে হবে। কীভাবে এসব জীবাণু মানবদেহে ঢুকে পড়ে এবং কী করলে এদের প্রতিরোধ করা যাবে সে সম্পর্কে নিজে ভালোভাবে জানতে হবে। বিদ্যালয়ে, মসজিদে, মন্দিরে, খেলার মাঠে, হাটে, বাজারে যেখানে লোকসমাগম বেশি সেখানেই এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যায়। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করাটাই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিরোধ। রোগাক্রান্ত হলে অবশ্যই রোগীকে একজন ভালো চিকিৎসকের নিকট গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ঔষধ সেবন করতে হবে। হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় রোগ নিরাময়ের বদলে রোগ জটিল সতরে পৌঁছে যায়। এ ব্যাপারে আমাদের সকলের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম

  • ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যামিবা ইত্যাদি নিম্ন শ্রেণির জীব।
  • ভাইরাস অকোষীয় জীব
  • ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যামিবা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিকারী জীব।
  • পানি, বায়ু ও অপরিচ্ছন্ন হাত রোগ জীবাণু ছড়ায়।
  • স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জীবনযাপন রোগ প্রতিরোধ করে।
Content added By

অনুশীলনী

930
930

শুন্যস্থান পূরণ কর।

১. মানুষের টাইফয়েড রোগের কারণ _____________।

২. আমাশয় রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের নাম ____________।

৩. জীবন্ত দেহের বাইরে _________।

8. ___________ নামক ছত্রাক পাঁউরুটির কারখানায় ব্যবহার করা হয়।

৫. দণ্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়াকে __________ বলে।

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

১. প্রকৃত পরজীবী কথার অর্থ কী?
২. ব্যাকটেরিয়াজনিত চারটি রোগের নাম লিখ।
৩. অণুজীব কারা?
৪. কোন কোন উপাদান নিয়ে ভাইরাসের দেহ গঠিত?

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টি করে কোন ব্যাকটেরিয়া?

ক. স্পাইরিলাম
খ. ব্যাসিলাস
গ. কক্কাস
ঘ. কমা

২. শৈবাল ব্যবহৃত হয়-
i. আইসক্রিম প্রস্তুতকরণে
ii. মাছ চাষের ক্ষেত্রে
iii. ঔষধ তৈরি করতে
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i
খ. i ও ii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।
মালেক আখ খাবার সময় লক্ষ করল আখের গায়ে লাল দাগ পড়েছে। তার বাবা বললেন এটি এক ধরনের পরজীবীর কারণে সৃষ্টি হয়।

৩. উদ্দীপকের পরজীবী জীবটি সৃষ্টি করে-

i. রেড রাস্ট
ii. ট্রাকিয়ার প্রদাহ
iii. মাথার খুশকি
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

৪. মালেক লক্ষ করা রোগটির জন্য কোনটি দায়ী?

ক. ছত্রাক
খ. শৈবাল
গ. ব্যাকটেরিয়া
ঘ. ভাইরাস

সৃজনশীল প্রশ্ন

১.

ক. শৈবাল কী?
খ. ছত্রাককে মৃতজীবী বলা হয় কেন?
গ. A দ্বারা সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধের উপায় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. B ক্ষতিকারক জীব হলেও পরিবেশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিসহ তোমার মতামত দাও।

২. বরকত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছে। তার বাবা তাকে হাঁচি ও কাঁশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে বললেন।

ক. ভাইরাস কী?
খ. ভাইরাসকে অকোষীয় জীব বলা হয় কেন?
গ. বরকত রুমাল ব্যবহার করতে বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বরকত রোগটি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যদের কীভাবে সচেতন করবে তা বিশ্লেষণ কর।

নিজেরা কর

১) একখণ্ড পাঁউরুটি ভিজিয়ে অন্ধকার ঘরে কয়েকদিন রেখে দাও। এর পর রুটির উপরে যে সাদা বা কালো আস্তরণ দেখা যাবে সেগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখ এবং যা দেখছ তার ছবি আঁক। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকের সাথে আলোচনা কর।

২) ঢেঁড়শ পাতা, পেঁপে পাতাসহ অন্যান্য গাছের কুঁচকানো পাতা সংগ্রহ কর এবং বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা কর। পাতার এ রকম পরিবর্তনের কারণ খুঁজে বের কর। প্রয়োজনে শিক্ষকের সাহায্য নাও।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;