১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবৈধ সেনা শাসন বহাল ছিল। দেশের সংবিধানকে উপেক্ষা করে খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি সায়েম, জিয়াউর রহমান, বিচারপতি আহসান উদ্দিন এবং জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। দেশে সেনা শাসন বহাল রেখে সুবিধামতো সময়ে জিয়াউর রহমান (১৯৭৫-১৯৮১) এবং জেনারেল এরশাদ (১৯৮২-১৯৯০) নির্বাচন সম্পন্ন করে বেসামরিক শাসন চালু করেন। তাদের অগণতান্ত্রিক শাসন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যকলাপ দেশের জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর অবশেষে ১৯৯১ সালে পুনরায় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।
জিয়াউর রহমানের শাসন আমল (১৯৭৫-১৯৮১) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর মেজর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি ২৭শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের অধীনে তিনি ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবার পরিজনসহ শাহাদাত বরণ করার পর খন্দকার মোশতাক সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর ২৪শে আগস্ট তিনি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে জিয়াউর রহমানকে নিযুক্ত করেন। ৩রা নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাকের পতন ঘটে এবং জিয়াউর রহমান গৃহবন্দি হন। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর পাল্টা সেনা অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর আগে ৬ই নভেম্বর ভোররাতে গৃহবন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ল্যান্সার বাহিনীর একটি দল। জিয়াউর রহমান মুক্তি পেয়ে সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের অনুমতি ব্যতিরেকে বেতারে ভাষণ দিতে চলে যান এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দাবি করেন। পরে অবশ্য পদবি পরিবর্তন করে উপ-প্রধান আইন প্রশাসক হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে প্রহসনমূলক গণভোটের (হ্যাঁ ভোট ও না ভোট) মধ্য দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও তার শাসন আমলে ২০টির ও বেশি সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছিল এবং সেনা বাহিনীতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। এসকল ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর জিয়াউর রহমান বিচারের নামে অনেক নিরপরাধ সামরিক কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যদের সাজা, চাকরিচ্যুত এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেয়। জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭২-এর সংবিধানের যেসব মৌলিক নীতি ও চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়ে আসছিল, তার বেশিরভাগই এ সময়ে বাতিল করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিবর্গকে তিনি সমাজ ও রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব.) আবু তাহেরকে ১৯৭৬ সালে সামরিক আদালতে প্রহসনের বিচার শেষে তারই আদেশে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৫ই আগস্টসহ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না মর্মে যে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ প্রণীত হয়েছিল তার মূল হোতাও ছিলেন জিয়াউর রহমান।
নির্বাচন ও দল গঠন
১৯৭৬ সালে কিছু শর্ত সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘ঘরোয়া রাজনীতি' করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতা বৈধকরণের লক্ষ্যে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন। এরপর তিনি নিজস্ব পরিকল্পনা মতো বিভিন্ন দল থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) গঠন করেন।এ সময়ে রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা-গড়ার কাজও চলে। পরিশেষে চাপের মধ্যে ১৯৭৮ সালের ৩ রা জুন দেশে প্রহসনমূলক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন উপলক্ষে দুটি জোট গঠিত হয়। একটি ছিল জিয়া প্রতিষ্ঠিত 'জাগদল'-এর নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট আর অপরটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে 'গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট'। জিয়া ছিলেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম.এ.জি ওসমানী ছিলেন গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের প্রার্থী। কারচুপির এ নির্বাচনে জিয়াউর রহমান সহজে বিজয় অর্জন করেন। সামরিক শাসনাধীনে অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচনে প্রধানত শাসকের ইচ্ছারই বাস্তবায়ন ঘটে। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান ইতোপূর্বে গঠিত জাগদল বিলুপ্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২০৭টি আসন পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করে। উক্ত সংসদে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত যে সকল সামরিক বিধি, সংবিধান সংশোধনসহ বিভিন্ন অধ্যাদেশ জারি করা হয়, সেগুলো সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী হিসেবে পাস করা হয়। অবশ্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০০৮ সালে এক রায়ে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৯ সালের ৬ ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করা হয়। বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া চালু করে রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতাকারীদের পুনর্বাসন করেন। তিনি সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করেন। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের পথ তৈরি করেন। জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী চীন ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশকে এই সময়ে স্বীকৃতি প্রদান করে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে এ সময় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের নীতি অনুসরণ করে। জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। ফলে জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ বছরের সেনা শাসনের অবসান ঘটে।
জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসন আমল (১৯৮২-১৯৯০)
১৯৮১ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ছিলেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮১ সালের ১৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি আবদুস সাত্তার জয়লাভ করেন। কিছু বিচারপতি সাত্তারের দুর্বল নেতৃত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণ দেখিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাত্তার সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি সংবিধান স্থগিত করেন এবং জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আহসান উদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করা হয়। সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। ১৯৮৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি আহসান উদ্দিনকে অপসারণ করে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ সামরিক শাসন জারির পর দেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পত্র-পত্রিকা স্বাধীনভাবেসংবাদ পরিবেশন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। শেখ হাসিনা, ড. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ ফরহাদসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার বা অন্তরীণ করা হয়। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ করে। শুরু হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। এ আন্দোলনে পুলিশি হামলায় ও সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে সেলিম, দেলোয়ার, শাহজাহান সিরাজ, জয়নাল, দিপালী সাহা ও রাউফুন বসুনিয়াসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় এবং বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট গঠিত হয়। এ জোটসমূহের আন্দোলনই ১৯৯০-এ এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে পরিণত হয়। অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। জেনারেল এরশাদ সরকার পূর্ববর্তী জিয়াউর রহমান সরকারের অধিকাংশ নীতি অনুসরণ করে।
দল গঠন ও নির্বাচন
জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের শুরু থেকেই ব্যাপক রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়েন। ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলসমূহের দাবির মুখে দ্রুত রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করতে বাধ্য হন। ১৯৮৩ সালের ১ লা এপ্রিল ঘরোয়া রাজনীতি এবং ১৪ই নভেম্বর প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি প্রদান করেন। ১৯৮৩ সালের ১৭ই মার্চ ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে এরশাদ নিজেই জনদল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১৯৮৪ সালে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালের ২১শে মার্চ এরশাদ লোক দেখানো প্রহসনমূলক গণভোটের আয়োজন করেন। এ গণভোটে জনগন "হ্যাঁ" / "না'র মাধ্যমে মতামত ব্যক্ত করে। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ ও ২০শে মে নতুন প্রবর্তিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালের ১৬ই আগস্ট জনদলসহ ৫টি ছোট দল নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়। এই ফ্রন্টই ১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে আত্মপ্রকাশ করে। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেন।
১৯৮৬ সালের ৭ই মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৮টি দল অংশগ্রহণ করে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে ৭৬টি আসন লাভ করে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করে। পর্যবেক্ষকগণও এ অভিযোগের যথার্থতাকে সমর্থন করেন। ১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে। প্রহসনমূলক এ নির্বাচনে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকেই এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দল, সাধারণ জনগণ এবং নাগরিক সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। জেনারেল এরশাদের পদত্যাগ ও একটি অর্থবহ নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দল গণআন্দোলন শুরু করে। ১৯৮৭ সালে সংসদ থেকে একযোগে বিরোধী দল পদত্যাগ করলে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ দেশের প্রধান দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। ভোটারবিহীন, দলবিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৫১টি আসনে বিজয়ী দেখানো হয়। সরকার অনুগত আ.স.ম. রবের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী জোটকে ১১টি আসন দেওয়া হয়। বাকি আসনের ৩টি জাসদ (সিরাজ), ২টি ফ্রিডম পার্টি এবং ২৫টি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঝে বন্টন করা হয়।জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯ বছরের দীর্ঘ শাসনকালে রাস্তাঘাট নির্মাণসহ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।
আরও দেখুন...