তথ্যপ্রযুক্তির কারণে যেসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে তার একটি হচ্ছে চিকিৎসা। একটা সময় ছিল যখন ডাক্তার বা কবিরাজরা রোগীর লক্ষণ দেখে যেটুকু তথ্য পেতেন, সেটা দিয়েই তার চিকিৎসা করতেন। এখন আর সে অবস্থা নেই, একজন রোগী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তার তার পুরো শরীরকে সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন এবং অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার রোপ নির্ণয় করতে পারেন। শুধু তাই নয়, সেই তথ্যগুলো ডেটাবেসে থাকতে পারে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সকল তথ্য আবার খুঁজে বের করে নিয়ে আসা যেতে পারে। একজন রোগীর চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তারদের আর অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয় না। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন ও প্রেসক্রিপশন প্রস্তুত করতে পারে।
শুধু যে তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে রোগীর সকল তথ্য পর্যালোচনা করা সম্ভব হয় তা নয়, চিকিৎসাতে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। এ যন্ত্রগুলো বে সকল তথ্য সংগ্রহ করে, সেগুলো প্রক্রিয়া করা হয় নিখুঁতভাবে, যে কাজটি আগে করা অসম্ভব ছিল, এখন সেটি মানুষ নিজের ঘরে বসে করতে পারে।
আমাদের দেশে এখনো ডাক্টারের সংখ্যা বেশি নয়। এ অপ্রতুলতার কারণে অনেক সমরেই দেখা যায় ছোট শহরে বা গ্রামে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। ভবিষ্যতে একসময় দেশের সব অঞ্চলেই চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে, কিন্তু যতদিন আমরা সে অবস্থায় পৌঁছাতে পারছি না তথ্যপ্রযুক্তি ততদিন আমাদেরকে সাহায্য করতে এসেছে “টেলিমেডিসিন” নিয়ে। টেলিমেডিসিন হচ্ছে টেলিফোনের সাহায্যে চিকিৎসা সেবা নেওয়া- তোমরা শুনে খুশি হবে আমাদের দেশেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান “টেলিমেডিসিন সাহায্য " নিয়ে এসেছে। যখন হাতের কাছে কোনো ডাক্তারকে জরুরি কিছু জিজ্ঞেস করার উপায় নেই, তখন টেলিমেডিসিন ব্যবহার করে ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া যায়।
রোগ হলে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে আমরা যেভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিই- ঠিক তার মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগ বেন না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ। সে জন্য সবাইকে রোগ প্রতিরোধক টিকা নিতে হয় তোমরা জেনে পর্ব বোধ করতে পার বে, শিশুদের রোগ প্রতিরোধক টিকা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে শিশুকে মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। দেশের কোটি কোটি শিশুকে সঠিক সময়ে এই টিকা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন সব হয়, কারণ তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দায়িত্বপ্রান্ত ব্যক্তিগণ নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করতে পারছেন এবং সেটাকে কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা আগে যে বিষয়গুলো কল্পনাও করতে পারতাম না, এখন সেরকম অনেক কিছু আমাদের হাতের নাগালে চলে এসেছে।
মনে করো না যে আমরা সবকিছুই পেয়ে গেছি। তথ্যপ্রযুক্তির কারণে আমরা এখন অন্য মাত্রার গবেষণা করতে পারি। মানুষের জিনোম রহস্যভেদের মত জটিল কাজ আধুনিক কম্পিউটার দ্বারা সহজেই সমাধান করা গেছে। তাই চিকিৎসার জগতে একটা বিপ্লব শুরু হতে যাচ্ছে। এতদিন রোগের উপসর্গ কমানো হতো- এখন সত্যিকারভাবে রোগের কারণটিই খুঁজে বের করে সেটাকে অপসারণ করা হবে। শুধু তাই নয়- এখন যে রকম সব মানুষ একই ওষুধ খায়- ভবিষ্যতে প্রত্যেক মানুষের জন্য আলাদা করে তার শরীরের উপযোগী ওষুধ তৈরি হবে। এখন একজনকে উপস্থিত থেকে অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন করতে হয়। ভবিষ্যতে হাজার মাইল দূরে থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্জনরা রোগীর অপারেশন করতে পারবেন। বড় হয়ে তোমরা নিশ্চয়ই চিকিৎসার এই নতুন জগতে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
দলগত কাজ : চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হয় এরকম নানা ধরনের যন্ত্রপাতির একটা তালিকা কর এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে কোনগুলো কাজ করে সেগুলো চিহ্নিত কর।
নতুন শিখলাম : ডাটাবেস, টেলিমেডিসিন, জিনোম।
আরও দেখুন...