পানি ও খনিজ লবণের পরিবহন

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - ব্যাপন, অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন | NCTB BOOK

জামরা জেনেছি যে উদ্ভিদ মূলের মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে। এই পানি ও খনিজ লবণের প্রবণকে কাষ্ট এবং শাখা-প্রশাখার মধ্য দিয়ে পাতার পৌঁছানো দরকার। কারণ পাতাই প্রধানত এগুলোকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির রসদ হিসেবে ব্যবহার করে। আবার পাতার তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ তার দেহের বিভিন্ন অংশে যথা- কান্ড ও শাখা-প্রশাখার পাঠিয়ে দেয়। উদ্ভিদের মূলরোম দ্বারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণ মূল থেকে পাতায় পৌঁছানো এবং পাতার তৈরি খাদ্যবস্তু সারা দেহে ছড়িয়ে পড়াকে পরিবহন বলে। শোষণের মতো পরিবহন পদ্ধতি ও উদ্ভিদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক পরিবহন টিস্যুর মাধ্যমে উদ্ভিদে পরিবহন ঘটে। জাইলেমের মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত পানি পাতার যায় এবং ফ্লোরেম যারা পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারা দেহে পরিবাহিত হয়। সুতরাং জাইলেম ও ক্লোরেম হলো উদ্ভিদের পরিবহনের পথ। উদ্ভিদের পরিবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিতভাবে সম্পন্ন হয়-

 

উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় এবং পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়ে জাইলেম টিস্যুতে পৌঁছায়। জাইলেমের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহে রসের ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন হয়। ফ্লোরেমের মাধ্যমে পাতায় তৈরি খাদ্যরসের উভমুখী পরিবহন হয়।

উদ্ভিদের সংবহন বা পরিবহন বলতে প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন এবং নিম্নমুখী পরিবহনকে বোঝায়।

মাটি থেকে মূলরোমের যারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণের দ্রবণ (রস) যে জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে পাতার পৌঁছায় তা একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন পেপারোমিরা উদ্ভিদ। এ গাছের কাণ্ড ও মধ্য শিরা স্বচ্ছ।

চিত্র ৩.১১ : পানি পরিবহনের পরীক্ষা

কাজ : পানি পরিবহনের পরীক্ষা

প্রয়োজনীয় উপকরণ: দোপাটি অথবা পেপারোমিয়া উচ্চিল, বোতল, জুল, লাল রং, পামি

পদ্ধতি : একটি নাম কার্ডের দোপাটি অথবা পেপারোমিয়া উদ্ভি মাটি থেকে মূলসহ ভুলে মূলগুলো পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এখন একটি বোতলে পানি নিয়ে তাতে করেক ফোঁটা লাল রং মেশাতে হবে। এবার গাছের মূলসহ অংশটি রঙিন পানিতে
ডুবিয়ে রাখতে হবে।

কয়েক ঘণ্টা পরে দেখা যাবে যে কাঞ্চ এবং পাতার শিরাগুলো লাল রং ধারণ করেছে। গাছটি বোতল থেকে খুলে ফান্ডের প্রস্থচ্ছেদ বা সম্বচ্ছেদ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখ এবং ভা লিপিবদ্ধ করো। তোমার পর্যবেক্ষণ থেকে তুমি কী সিদ্ধাে উপনীত হলে এবং এতে কী প্রমাণ হলো।

নতুন শব্দ : ব্যাপন, অর্ধভেদ্য পর্দা, ভেদ্য পর্দা, অন্তঃঅভিস্রবণ, বহিঃঅভিস্রবণ, আয়ন, কোষরস, সক্রিয় শোষণ, নিষ্ক্রিয় শোষণ, প্রস্বেদন

এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-

   - ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়া কী?

   - উদ্ভিদ-ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি, খনিজ লবণের আয়ন মাটিস্থ দ্রবণ থেকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়ায় মূলের মূলরোম দ্বারা শোষণ করে।

   - উদ্ভিদের জাইলেম দিয়ে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ পাতায় পরিবাহিত হয়।

   - উদ্ভিদের ফ্লোয়েম দিয়ে পাতায় তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ দেহের শাখা ও প্রশাখায় পৌঁছায়।

   - অভিস্রবণের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হয়। 

   - প্রস্বেদনের ফলে জাইলেম বাহিকায় যে টান সৃষ্টি হয় তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion