পারিবারিক কাজ ও পেশা (দ্বিতীয় অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা - | NCTB BOOK
50
50

প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের কিছু কাজ করতে হয় এবং কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত হতে হয়। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাদের বিভিন্ন পারিবারিক কাজে অন্যদের সহায়তা করতে হয়। কিছু কাজ আছে যা পরিবারের বাইরের ব্যক্তি দ্বারা সম্পাদিত হয়। এই অধ্যায়ে এসব কাজের গুরুত্ব এবং বিভিন্ন কাজ ও পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এই অধ্যায় শেষে আমরা -

  • প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবারের সদস্যদের পেশায় নিয়োজিত থাকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবারের বাইরের ব্যক্তিদের দ্বারা সম্পাদিত প্রাত্যহিক জীবনের কাজগুলো মূল্যায়ন করতে পারব।
  • বিভিন্ন কাজ ও পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজে সহায়তা করতে পারব।
  • বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কায়িক কাজসমূহ করতে পারব।
  • নিজ বিদ্যালয়ের বাইরে অন্য বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কায়িক কাজসমূহ করতে পারব।
  • বাস্তব পরিস্থিতিতে কায়িক কাজ করতে পারব।
  • প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত কাজ বিষয়ক একটি নাটিকায় অংশগ্রহণ করতে পারব।
  • কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করব।
  • বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব।
Content added By

প্রাত্যহিক জীবনের কাজগুলো নিজে করার গুরুত্ব (পাঠ ২১ - ২৪)

67
67

নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব অনেক। প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো বেশিরভাগই নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট। এ কাজগুলো যদি প্রত্যেকে নিজে নিজেই করি তাহলে কাজের সৌন্দর্য যেমন বাড়ে তেমনি কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয়। নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করালে সে কাজের গুরুত্ব কমে যায়; কাজটি দায়সারা গোছের হয়। তাছাড়া অন্যকে দিয়ে করালে তারা কাজটি আন্তরিকভাবে করে না বা করতে চায় না। এছাড়াও এমন অনেক কাজ আছে যেগুলো অন্যের মাধ্যমে করানো একেবারেই উচিত নয়। এজন্য নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম। যেমন- নিজের জামা-কাপড় নিজেই ধোয়া ভালো। অন্যদের দিয়ে ধোয়ালে তা ভালোভাবে পরিষ্কার নাও হতে পারে এবং জামা-কাপড় নষ্ট হতে পারে।

কাজ

তোমরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যাও। একটি দল মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে কী কী কাজ থাকতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি কর। আর অন্য দলটি নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব আলোচনা করে লিপিবদ্ধ কর। উভয় দলের কাজ শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব

সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করা যায়: নিজের কাজটি যদি নিজে করো তাহলে কাজটি তুমি যেভাবে করতে চাইবে সেভাবেই করতে পারবে। কাজটি তুমি যেভাবে করতে চাইবে সেটি তোমার চেয়ে আর কেউ ভালো বুঝতে পারবে না। অন্য কাউকে দিয়ে যদি তোমার কাজ করাতে চাও সেক্ষেত্রে তার নিজের পদ্ধতি বা ধরনের উপর তোমাকে নির্ভর করতে হবে যা তোমার পছন্দ নাও হতে পারে। যেমন: স্কুল ব্যাগ গুছানো। ব্যাগের কোন পকেটে কী রাখবে বা কী রাখলে ভালো হয় তা তুমিই ভালো বুঝবে; অন্যকে ব্যাগ গোছাতে দিলে সে এলোমেলো করে রাখবে এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে পাবে না।

দক্ষতা বৃদ্ধি পায়: যে যত বেশি কাজ করে তার কাজের হাত তত পাকা হয়। নিজের কাজ নিজে করলে কাজ করতে করতে একসময় তোমার কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তুমি এই সুযোগ পাবে না এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। যেমন: বিছানা গোছানো। তুমি যদি এখন থেকেই বিছানা না গোছাও তাহলে পরবর্তীতে পরিবারের বাইরে অর্থাৎ হোস্টেলে বা অন্য কোথাও গেলে বিছানা গোছানো নিয়ে সমস্যায় পড়বে।

নিজের মনের মতো কাজ করা যায়: প্রত্যেক মানুষের একটা নিজস্ব ধ্যান-ধারণা আছে এবং সব মানুষই কাজ করার ক্ষেত্রে নিজের মনের মতো করে কাজটি করতে চায়। নিজের কাজ নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করালে নিজের চিন্তা-চেতনার প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ থাকে না এবং কাজটি নিজের মনের মতো হয় না। যেমন: পড়ার টেবিল গোছানো। টেবিলের উপরে কী কী জিনিস রাখবে, টেবিলের পাশের দেয়ালে কী লাগানো থাকবে তা তুমি নিজেই ঠিক করবে। তাহলে তোমার পড়ার টেবিল তুমি নিজের মনমতো করে গোছাতে পারবে।

একান্তে কাজ করা যায়: এমন কিছু কাজ আছে যা একান্তে করা প্রয়োজন। এ কাজগুলো অন্যদের দিয়ে করালে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম।

অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় : যে যত বেশি অভিজ্ঞ সে তত নিপুণভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে এবং যে যত বেশি কাজ করে সে তত বেশি অভিজ্ঞ। কাজ করতে করতেই মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং তুমি যদি তোমার কাজগুলো নিজেই করো তাহলে তোমার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে এবং যেকোনো কাজ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে পারবে।

ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়: যেকোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি বেশি কাজ করলে কাজের ভুল থেকে শেখার সুযোগ হয় এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়।

অর্থের সাশ্রয় হয়: নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করাতে গেলে তাকে তার শ্রমের দাম দিতে হয়; এজন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়। যেমন: ধোপাকে দিয়ে কাপড় ধোয়ালে অর্থ ব্যয় হয়। নিজের কাজ নিজে করলে সে অর্থ নিজেরই থেকে যাবে।

সৃজনশীলতার বিকাশ হয়: কাজ করতে করতে মানুষ দক্ষতা অর্জন করে। যেমন: কাজ করার নিত্য নতুন পদ্ধতি ও উপায় উদ্ভাবন, ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা এবং সময় বাঁচিয়ে কাজ করা ইত্যাদি। তুমি যদি নিজের কাজ নিজেই কর তাহলে তুমিও এরকম নতুন কিছু করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে তোমার সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে।

সুস্থ দেহে সুস্থ মন: কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। কাজ করার মাধ্যমে শরীরের পেশিগুলোর সঞ্চালন হয় ও শরীরের ব্যায়াম হয়। এতে মনও অনেক প্রফুল্ল থাকে। নিজের কাজ নিজে করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।

সময়মতো কাজ সম্পাদন করা যায়: নিজের কাজ নিজে করলে সময়মতো কাজ শেষ করা যায়। অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তার উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। তাছাড়া সে তোমার সময় এবং প্রয়োজনের গুরুত্ব নাও বুঝতে পারে। সে যদি সময়মতো কাজ না করতে পারে এতে তুমি সমস্যায় পড়তে পারো। সুতরাং নিজের কাজ নিজে করাই ভালো।

কাজ

"শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে চারটি দলে ভাগ করবেন। প্রতিটি দল পরিবারে নিজের কাজ নিজে করার উপর একটি নাটিকা প্রস্তুত করবে। শ্রেণিতে ভূমিকাভিনয় করে দেখাবে।
*এ কাজে দুটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।

Content added By

আমাদের জীবনে পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব (পাঠ ২৫)

85
85

এসো নিচের গল্পটি পড়ি

জসিমরা তিন ভাইবোন। জসিমের বয়স ১৬ বছর, তার ভাই সোহেলের বয়স ১২ বছর আর ছোটো বোন মিলির বয়স ৮ বছর। তাদের নিজেদের কোনো আবাদি জমি নেই। তাদের বাবা অন্যের জমিতে সারাদিন হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। অবসর সময়ে তিনি বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। এগুলো হাটে বিক্রি করে তিনি সামান্য আয় করেন। তাদের মা সংসারের কাজের পাশাপাশি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন ও আঙ্গিনায় শাক-সবজি চাষ করেন। হাঁস-মুরগির ডিম ও শাক-সবজি বিক্রি করে তারা আয় করেন।

তাদের এই পরিশ্রমের ফলে জসিম কলেজে এবং সোহেল ও ছোটো বোন মিলি স্কুলে পড়ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মা তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ঘরের ব্যবস্থা করেছেন। তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার দেন, অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সন্তানদের বিনোদনের জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যান।

তোমরা এ গল্পটি পড়ে কী বুঝলে? পরিবারের কেউ যদি কোনো কাজে জড়িত না থাকে তাহলে যে যে সমস্যা হয় তা নিচের ছকটিতে লিখ-

ক্রমসমস্যা

তোমরা সকলেই জানো মানুষ হিসেবে ভালোভাবে বাঁচতে, শিক্ষা লাভ করতে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে আমাদের সকলের স্বপ্ন বা ইচ্ছা থাকে। আমাদের এ স্বপ্ন বা ইচ্ছাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন অর্থের। পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কাজে জড়িত হওয়া আমাদের এস্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে। যদি পরিবারের কেউ কোনো কাজে জড়িত না হন তাহলে কী করে তাঁরা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন? আমাদের ভরণ-পোষণ, শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই তাঁরা সহযোগিতা করেন। এজন্য আমাদের জীবনে পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ বিষয়ে আমরা নিচে আলোচনা করছি:

ভরণ-পোষণ: পরিবারের সদস্যদের কাজে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা হয়। তারা যদি কেউ কোনো কাজ না করেন তাহলে আমাদের খাওয়া-দাওয়া, পোশাক এগুলো আসতো কোথা থেকে? এজন্য আমাদের পরিবারের কর্মপযোগীদের কাজে জড়িত হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা: সবাই চায় তাদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখে জ্ঞান অর্জন করুক। লেখাপড়ায় অর্থের প্রয়োজন হয়। পরিবারের সদস্যদের কাজের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার ব্যয় মেটানো সম্ভব হয়। সুতরাং আমাদের জীবনে পরিবারের সদস্যদের কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসা: অনেক সময় পরিবারের কোনো সদস্য দুর্ঘটনা বা বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে নিতে হয়, ডাক্তার দেখাতে হয়, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয় ও ওষুধ কিনতে হয়। এসব করার জন্য প্রয়োজন হয় অর্থের। পরিবারের কেউ যদি কোনো কাজে নিয়োজিত না থাকেন তাহলে এ অর্থের সংকুলান হবে কীভাবে?

বিনোদন: মানুষের সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিনোদন হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিনোদনকে বলা হয় মনের খোরাক। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে যাওয়া, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেওয়া, বিশেষ দিনে মজা করা, নাটক দেখা ও গান শোনা-এসব বিনোদনের অংশ। এসব করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তার জোগান দেন পরিবারের সদস্যরা।

পরনির্ভরশীলতা: পরিবারের সদস্যরা যদি কোনো কাজে নিয়োজিত না হন তাহলে জীবনধারণের জন্য আমাদেরকে অন্যের দয়ার উপর নির্ভরশীল হতে হবে। অন্যের দয়ার মাধ্যমে জীবনধারণ করা সকলের কাছেই অসম্মানের। এজন্য অসম্মান থেকে বাঁচতে পরিবারের সদস্যদেরকে কোনো না কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হবে।

সামাজিক মর্যাদা: যে পরিবারের সদস্যরা কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত থাকেন সমাজে ঐ পরিবারের গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যে পরিবারের সদস্যরা কোনো কাজ করে না সমাজে তাদের কোনো গুরুত্ব ও মর্যাদা নেই। কেউ তাদেরকে পছন্দ করে না, সম্মান করে না এবং এ কারণে সমাজে তাদেরকে হেয় হতে হয়। তাই সমাজের সক্রিয় সদস্য হিসেবে বসবাস করার জন্য কাজে জড়িত হওয়া জরুরি।

কাজ

তোমরা প্রত্যেকে নীরবে পাঠটি পড়। এবার পরিবারের অন্যরা কোনো কাজে জড়িত না হলে তোমাদের জীবনে আরও কী কী সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে দুজন দুজন করে আলোচনা কর। নতুন কোনো সমস্যা চিহ্নিত হলে সেগুলো উপস্থাপন কর।

Content added By

পরিবারের অন্যদের কাজে সহায়তা (পাঠ ২৬ ও ২৭)

49
49

তোমরা জেনেছ যে তোমাদের জীবনের অনেক কাজে পরিবারের সদস্যরা অনেক ভূমিকা রাখেন ও সহায়তা করেন। পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তোমারও অন্যদের কাজে সহায়তা করার দায়িত্ব রয়েছে। পরিবারের অন্যদের যে সকল কাজে তোমার সহায়তা করা সম্ভব তুমি সেসব কাজে তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করতে পারো। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারে কাজ করার লোক খুব কম। তখন একজন বা দুজনের পক্ষে সবগুলো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারে অন্যদের কাজে সহায়তা করা তোমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাছাড়া পরিবারের কাজ তো পরিবারের সকল সদস্যেরই কাজ। পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তোমারও পরিবারের কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত। পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তুমি যদি অন্যদের কাজে সহায়তা করো তাহলে পরিবারে অন্যদের ওপর কাজের চাপ কমবে। যদি পরিবারের প্রত্যেক সদস্য তাদের নিজ নিজ কাজ যথাসময়ে সম্পাদন করে তাহলে কোনো একজনের উপর কাজের চাপ পড়বে না। তোমরা দেখে থাকবে যেসব পরিবারের সকল সদস্য তাদের নিজ নিজ কাজ করার পাশাপাশি অন্যদের কাজে সহায়তা করেন সেসব পরিবার অনেক সুশৃঙ্খল ও সুখী হয়ে থাকে।

কাজ
শিক্ষক পারিবারিক কাজে সাহায্য করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে আহ্বান করবেন।
(ক্ষেত্রগুলো হতে পারে: ছোটো ভাইবোনদের যত্ন ও লেখাপড়া, গৃহসজ্জায় সহায়তা, খাবার তৈরিতে সহায়তা ইত্যাদি।)
*এ কাজে একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।

এবার নিচের গল্পটি পড়ি-

আব্দুল করিম সাহেব একজন সরকারি চাকরিজীবী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে হাসান গ্রামের স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে আর মেয়ে নাসিমা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ওদের মা আমেনা বেগম একজন গৃহিণী। তারা গ্রামে বাস করেন।

আজ বৃহস্পতিবার। আব্দুল করিম সাহেবের দুই সন্তানের মনে খুব আনন্দ। কারণ শুক্রবার নানা-নানি তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। বিকেলে খেলাধুলা শেষে হাসান তার বাবাকে গরু গোয়ালে বাঁধা ও খড় দেওয়ার কাজে সাহায্য করেছে আর নাসিমা তার মাকে হাঁস-মুরগি খোয়াড়ে রাখতে সহায়তা করেছে। সন্ধ্যায় আব্দুল করিম সাহেব তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে একসাথে নাস্তা করতে বসলেন। এসময় তারা আগামীকাল কী কী করবেন তার একটি পরিকল্পনা করলেন।

শুক্রবার সকাল। হাসান ও নাসিমা ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিল। এরপর দুই ভাইবোন মিলে বিছানা ও ঘর গোছানোর কাজে তাদের মাকে সহযোগিতা করল। নাস্তা করার পর হাসান তার বাবার সাথে বাজারে গেল। তারা মাছ, মাংস, সবজি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাড়িতে ফিরে এলো। আর নাসিমা তার মায়ের সাথে রান্নার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। সে তার মাকে বিভিন্ন জিনিস এগিয়ে দিচ্ছে। তরকারি কাটা, মাছ ও মাংস কাটা, পানি এনে দেওয়া ইত্যাদি কাজে সে তার মাকে সহায়তা করছে।

সকাল ১১ টার দিকে তাদের নানা-নানি এলেন। তাঁরা তাদের নাতি-নাতনির জন্য মিষ্টি ও ফল এনেছেন। হাসান ও নাসিমা তো মহাখুশি। তারা তাদের নানা-নানির সাথে গল্প করতে লাগল। অতিথিদের খাবার তৈরি হওয়ার পর হাসান ও নাসিমা খাবার পরিবেশনে তাদের মাকে সহায়তা করল। তারপর সবাই একসাথে খাওয়া শেষ করে গল্প করতে বসলেন।

কাজ: হাসান ও নাসিমা তাদের মা-বাবাকে যে যে কাজে সহযোগিতা করেছে নিচের টেবিলে সেগুলো লিখ:
ক্রমকাজ
কাজ
প্রত্যেকে গত এক সপ্তাহে পরিবারের অন্যদের কী কী কাজে সহায়তা করেছো তার একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
*এ কাজে একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।
Content added || updated By

পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ ও পেশা (পাঠ ২৮ ও ২৯)

54
54

তোমরা কি জানো পরিবারে কী কী ধরনের ব্যয় থাকতে পারে? কীভাবে একটি পরিবার চলে? কারা সেই ব্যয় বহন করেন? কী কাজ করে তারা সেই ব্যয় বহনের জন্য অর্থ উপার্জন করেন? আজকের আলোচনায় আমরা সে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব। আমরা সকলেই জানি একটি পরিবারে প্রতিদিনে, সপ্তাহে, মাসে কিংবা বছরে অনেক ধরনের ব্যয় হয় বা ব্যয়ের পরিকল্পনা থাকে। এ ব্যয়গুলোকে আমরা ভরণ-পোষণ ব্যয় বলি। অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে একটি পরিবারে এ খরচগুলো হয়।

ভরণ-পোষণের মধ্যে কী কী ব্যয় থাকতে পারে তা তোমরা নিচের টেবিলটিতে লিখ:

ক্রমব্যয়
খাদ্য
………………………………………………………………………………………………………………
পোশাক
………………………………………………………………………………………………………………
বিদ্যালয়ের বেতন ও ফিস
………………………………………………………………………………………………………………
………………………………………………………………………………………………………………
চিকিৎসা/ওষুধ
………………………………………………………………………………………………………………
১০………………………………………………………………………………………………………………

তোমরা কি জানো পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কার? পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পরিবারেরই কোনো না কোনো সদস্যকে নিতে হয়। আমাদের দেশে, সাধারণত আমরা দেখি মা-বাবা, বড়ো ভাই বা বোন পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অর্থাৎ পরিবারের যিনি বা যারা বড়ো তিনিই বা তারাই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। পরিবারের কেউ এই দায়িত্ব না নিলে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ হবে কোথা থেকে? সেজন্য এই দায়িত্ব বর্তায় পরিবারের কোনো সদস্য বা সদস্যদের উপরই।

তোমরা কি জানো পেশা কী? পেশা হচ্ছে কাজ বা কাজের ক্ষেত্র। অর্জিত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সামাজিকভাবে স্বীকৃত কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ বা বিশেষ কাজ করাকে পেশা বলে। যেমন: একজন কৃষক তার দক্ষতা অনুযায়ী জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করেন, এজন্য তার পেশা হচ্ছে কৃষি। আবার একজন ডাক্তার তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসা করে উপার্জন করেন এজন্য তার পেশা হচ্ছে চিকিৎসা। এভাবে প্রত্যেক মানুষ নিজের দক্ষতা অনুযায়ী যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সে কাজই হচ্ছে তার পেশা।

পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদেরকে আয় করতে হয় এবং এর জন্য কোনো না কোনো আয়সৃজনী কাজে জড়িত হতে হয়। প্রত্যেকের নিজ নিজ কাজই হচ্ছে তার পেশা। তোমরা একটু খেয়াল করলেই দেখবে তোমাদের মা-বাবা, চাচা-চাচি, ভাই-বোন বা পরিচিত অনেকেই কোনো না কোনো কাজ করছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে শ্রম দেন এবং তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক অর্থাৎ টাকা পান। এই যে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন বা শ্রম দিচ্ছেন সে কাজগুলোই তাদের প্রত্যেকের জন্য এক একটি পেশা। পরিবারের ভরণপোষণের কথা চিন্তা করেই তারা এসব পেশায় জড়িত হন।

এসো আমরা নিচের গল্পটি পড়ি-

সাবিনা আদর্শপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে পড়াশোনায় খুব ভালো। বিদ্যালয়ের সবাই তাকে খুব আদর করেন। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে। সাবিনার বাবার নাম আব্দুল মুক্তাদির। মুক্তাদির সাহেব আদর্শপাড়া গ্রামে বসবাস করেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বাবা-মা নিয়ে তার পরিবার। তিনি সেলাইয়ের কাজ ভালো জানেন; এজন্য গ্রামের বাজারে একটি দোকান নিয়ে তিনি দর্জির কাজ করেন। তিনি কষ্ট করে হলেও তার দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাতে বদ্ধপরিকর। সাবিনার মা বাড়িতে পরিবারের গৃহস্থালির কাজগুলো করেন। তিনি বাঁশ ও বেত দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পারেন। তিনি এগুলো তার মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন। অবসর সময়ে তিনি বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির লোকজন এসে এগুলো কিনে নিয়ে যায়। আবার বেশি হলে তার বাবা হাটে নিয়ে এগুলো বিক্রি করেন। সাবিনার বড়ো বোন গত বছর উপজেলার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি পাশের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি তার বাবাকে সংসার চালাতে সহায়তা করেন।

কাজ
নিচের টেবিলে তোমার জানা পেশাগুলো লিখ এবং তার পাশে ঐ পেশায় জড়িত পরিচিতজনের নাম লিখ।
ক্রমপেশাপেশার সাথে জড়িত ব্যক্তির নাম
Content added By

কাজ ও পেশার ক্ষেত্রে সম্মান (পাঠ ৩০ ও ৩১)

28
28

এসো নিচের ঘটনাগুলো পড়ি

ঘটনা ১: হাসান সাহেব গ্রামের সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ ও সম্মানিত ব্যক্তি। গ্রামের সবাই তাকে খুব শ্রদ্ধা করে। তিনি ছিলেন একজন কৃষক। তার তিন ছেলে। তিন ছেলেকেই তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন। তার বড়ো ছেলে লেখাপড়া শেষ করে কৃষিকাজ করে। তিনি নিজেদের জমির পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। মেজো ছেলে ঢাকার একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি তাদের গ্রামের একটি হাসপাতালের ডাক্তার। আর ছোটো ছেলে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে তাঁতের কাজ করেন। গ্রামের কিছু লোক হাসান সাহেবের দুই ছেলের পেশা নিয়ে ঠাট্টা করে। তারা বলে লেখাপড়া করার পরও তার দুই ছেলে কৃষিকাজ ও তাঁতের কাজ করে। ছেলেদের পেশা নিয়ে হাসান সাহেবের কোনো দুঃখ নেই, বরং তিনি আনন্দিত। কারণ তিনি জানেন সব কাজেরই আলাদা সম্মান আছে।

ঘটনা ২: কাপড় তৈরি করার জন্য সুতা বানানোর যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন আর্করাইট। ১৭৩২ সালে যুক্তরাজ্যের প্রেসটন শহরে তার জন্ম। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি কখনো বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পান নি। নিজে নিজে যা পড়েছিলেন তাই ছিল তার সম্বল। তিনি তার পরিবার চালানোর জন্য চুলকাটার দোকানে কাজ করতেন। ঐ দোকানে কাজ শিখে তিনি নিজেই একটি দোকান খুলেন ও পরচুলা লাগানোর ব্যবসায় শুরু করেন। ঐ সময় অনেকে তার এ পেশাকে নীচুশ্রেণির কাজ বলে টিটকারি করত। তিনি বলতেন কাজ যেরকমেরই হোক না কেন সেটা তো একটি কাজ। কোনো কাজই মানুষকে কখনো ছোটো করে না।

ঘটনা ৩: প্লেটো একজন বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক। ইউরোপের গ্রিসে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী। তিনি আর এক বিশ্ববিখ্যাত জ্ঞানতাপস এরিস্টটলের শিক্ষক ছিলেন। এরিস্টটল ছোটোবেলা থেকেই প্লেটোর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। একবার প্লেটো বিশ্বকে জানতে ও জ্ঞান আহরণের জন্য বিশ্বভ্রমণে বের হলেন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি মিসরে এসে উপস্থিত হলেন। মিসরে এসে তিনি অর্থশূন্য হয়ে পড়েন। এরপর তিনি তার পথের খরচ মেটানোর জন্য মাথায় করে মিসরের পথে পথে তেল বিক্রি করতেন। মিসরের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাঁর একাজ দেখত। তিনি বলতেন, "উন্নত কাজ করে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায় না বরং যেকোনো কাজে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ী হলেই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায়"।

কাজ
তোমরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেক দল একটি করে গল্প পড়ে আলোচনা কর যে কেন গল্পে উল্লিখিত কাজটি অবহেলা করার মতো নয় বরং সম্মানের। আলোচনার পর প্রত্যেক দল নিজ নিজ গল্পের কাজটি যে সম্মানজনক তা ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন কর।
*এ কাজে একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।

আমরা প্রাত্যহিক জীবনে জীবনধারণ কিংবা ভালোভাবে বাঁচার জন্য বিভিন্ন কাজ করে থাকি। কেউ বা কৃষিকাজ, তাঁতের কাজ, মুচির কাজ আবার কেউ বা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নানান কাজ করে থাকি। মনে রাখবে কোনো কাজই ছোটো নয়; সব কাজই সমান। সততা, ধৈর্য, মনোযোগ, নিয়মানুবর্তিতা ও দক্ষতার সাথে যে কাজই তুমি কর না কেন তা হবে অত্যন্ত সম্মানজনক এবং তাতে তুমি সফলতা লাভ করবে। কেউ যদি শ্রমিক হয় এবং সততা, নিষ্ঠা, মনোযোগ, নিয়মানুবর্তিতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করে তাহলে তা হবে সম্মানজনক। আবার কেউ যদি বড়ো কর্মকর্তা হয়েও অসততা, অবহেলা, কাজে ফাঁকি দেওয়া ও মিথ্যার আশ্রয় নেন তাহলে তা হবে অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর।

কাজ
প্রত্যেকে যেকোনো একটি কাজ বা পেশা চিহ্নিত কর। কাজটি যে সম্মানজনক এর পক্ষে দশটি বাক্য লেখ এবং উপস্থাপন কর।
*এ কাজে একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।
Content added By

পরিবার ব্যতীত অন্যদের কাজ ও এর গুরুত্ব (পাঠ ৩২ ও ৩৩)

38
38

তোমরা সকলে জানো একটি পরিবারে কত ধরনের কাজ থাকতে পারে। একটি পরিবারে যত কাজ থাকে তার সব কাজই পরিবারের সদস্যরা করতে পারেন তা নয়। অনেক কাজ আছে যেগুলো পরিবারের সদস্যরা করতে পারে না বা তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসব কাজ করার জন্য পরিবারের বাইরে অন্যান্য লোকের সহায়তা নিতে হয়। সব পরিবারেই এ ধরনের অনেক কাজ আছে। নিচের ছকে এ ধরনের কী কী কাজ থাকতে পারে তার একটি তালিকা তৈরি কর।

ক্রমপরিবারের বাইরে অন্যদের কাজ
ঘর-বাড়ি মেরামত করা/রং করা
জমিতে ফসল বোনা
চুল কাটা ………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………….
………………………………………………………………………………………….

তোমরা উপরের ছকে যে কাজগুলোর কথা উল্লেখ করলে সবকাজ কি সবাই করতে পারে? সবাই সব কাজ করতে পারে না। কাজ করতে দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এজন্য এসব কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ যারা তাদেরকেই আনা হয়। যেমন-ঘরবাড়ি মেরামত করার জন্য কাঠমিস্ত্রি বা রাজমিস্ত্রি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ঠিক করার জন্য বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি কিংবা গাছ কাটার জন্য গাছি, গবাদি-পশু পালনের জন্য রাখাল, ইত্যাদি তেমনিভাবে ধোপা, গোয়ালা, সংবাদপত্রের হকার, গৃহকর্মী, দিনমজুর এসকল পেশার লোকদের আমরা ডেকে থাকি। এ কাজগুলো করার জন্য আগে থেকেই লোক ঠিক করতে হয়।

কাজ
তোমরা সকলে পাঁচটি দলে ভাগ হও। পরিবারের বাইরের লোকের দ্বারা দৈনন্দিন যে কাজগুলো করা হয় তার একটি তালিকা তৈরি কর। এ কাজগুলোর গুরুত্ব শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
*এ কাজে একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।

পরিবারের যে কাজগুলো অন্যেরা করে থাকেন সেই কাজগুলো পরিবারের অন্যান্য নিয়মিত কাজের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের কাজের মধ্যে কোনো কাজ ব্যাহত হলে পরিবারের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। অন্যদেরকে দিয়ে করাতে হয় এমন কাজগুলোর মধ্যে কোনোটি যদি ব্যাহত হয় তাহলেও পরিবারের বিভিন্ন অসুবিধার সৃষ্টি হয়। যেমন: রাখাল যদি একদিন কাজে না আসে তাহলে গবাদি-পশু লালন-পালনের কাজগুলো কে করবে? বাড়ির বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা হলে যদি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি না পাওয়া যায় তাহলে অন্ধকারে থাকতে হবে, যাদের গাড়ি আছে তাদের গাড়িচালক যদি একদিন কাজে না আসে তাহলে গাড়ি চালাবে কে? আবার ডাক্তার যদি রোগীর চিকিৎসা না করেন তাহলে কী অবস্থা হবে?

কাজ
বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা করে না এমন কাজে বা পেশায় নিয়োজিত একজন ব্যক্তিকে শ্রেণিকক্ষে এনে তাঁর বক্তব্য শোনা এবং শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করা। শিক্ষার্থীরা
পূর্বে প্রস্তুতকৃত প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে।
*এ কাজে একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে জীবনধারণের জন্য পরিবারের বাইরে অন্যরা করে এমন সব কাজেরই সমান গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং যে ধরনের কাজ হোক না কেন কাজগুলোর ক্ষেত্রে অবহেলা বা গড়িমসি করা ঠিক নয়।

Content added || updated By

কাজ ও পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব (পাঠ ৩৪ - ৩৭)

64
64

মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ ও পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। প্রত্যেক মানুষ তার দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী নানান ধরনের পেশা ও কাজে নিয়োজিত হন। একেক জনের কাজ একেক ধরনের। আমাদের জীবনে প্রত্যেক কাজেরই সমান গুরুত্ব রয়েছে। ছোটো কাজ বা বড়ো কাজ বলে যেমন কিছু নেই, তেমনি উঁচু কাজ বা নীচু কাজ বলেও কোনো কিছু নেই। যারা বিভিন্ন ধরনের কাজ বা পেশায় নিয়োজিত তাদের প্রতি সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের কর্তব্য। তারা তাদের কাজের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধন করছেন। কৃষক যদি ফসল না ফলান, ভ্যানচালক যদি তার ভ্যানের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়া না করেন, ডাক্তার যদি চিকিৎসা না করেন, রিকশাচালক যদি রিকশা না চালান, কুলি পণ্য বহন না করেন, দোকানদার যদি দোকান বন্ধ রাখেন, জেলে যদি মাছ না ধরেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী যদি রাস্তা পরিষ্কার না করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে কী হবে? দেশ অচল হয়ে যাবে, আমাদেরও বেঁচে থাকা কঠিন হবে। সুতরাং এসকল কাজে নিয়োজিতদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এবার আমরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানব :

সব কাজই সমান: যে যে কাজই করুক না কেন সব কাজই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পরিশ্রম, মর্যাদা, আর্থিক মূল্য, দক্ষতার ব্যবহারসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করলে সব কাজকে সমানভাবে দেখা এবং সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।

সবার ভূমিকা সমান : দেশের উন্নয়নে সকল পেশার মানুষের ভূমিকা সমান। শ্রমিক থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সবাই যার যার কাজের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সচল রেখেছেন। এদের কেউ যদি তাদের কাজ বন্ধ রাখেন তাহলে আমরা প্রতিদিন অসুবিধায় পড়ব। এজন্য সকল পেশার মানুষকে সম্মান জানানো উচিত।

উন্নয়নের অংশীদার: যত ধরনের কাজ ও পেশা আমাদের দেশে রয়েছে তার সবগুলোই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। কোনো একটি পেশার মানুষ যদি কাজ বন্ধ করে দেয় তাহলে উন্নয়ন থমকে যাবে। যেমন: কৃষক যদি উৎপাদন বন্ধ করে তাহলে খাদ্যের সমস্যা দেখা দিবে। ভ্যানচালক যদি পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখেন তাহলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রমিক যদি বিভিন্ন কল-কারখানায় কাজ না করেন তাহলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য সব পেশার মানুষকে সম্মান জানাতে হবে।

পেশায় শ্রমের গুরুত্ব : সব ধরনের কাজ ও পেশায় পরিশ্রম আছে। কেউ করেন শারীরিক পরিশ্রম, কেউ করেন মানসিক পরিশ্রম আবার কেউবা শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের শ্রমই দিয়ে থাকেন। কোনো ধরনের কাজই শ্রম ছাড়া সম্পাদন করা সম্ভব নয়। এজন্য সকল ধরনের পেশাকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

মজবুত অর্থনীতি ও সমৃদ্ধ দেশ: দেশের মানুষ তাদের কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন। প্রত্যেকে স্বস্ব পেশা ও কাজের মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধ করছেন। এক্ষেত্রে কে কোন পেশায় আছেন সেটি মূলকথা নয় বরং প্রত্যেকেই নিজের পেশায় থেকে শ্রম দিয়ে অর্থনীতিকে বেগবান করছেন। এজন্য সব পেশাকেই সমান মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি: যারা যে পেশায় আছেন বা শ্রম দিচ্ছেন প্রত্যেকেই নিজে পেশার একজন দক্ষ শ্রমিক। চাই সেটা মানসিক হোক অথবা শারীরিক হোক না কেন উত্তরোত্তর কাজ করার কারণে তারা নিজেদের পেশায় যেমন আরও দক্ষ হয়ে উঠেছেন তেমনি তাদের দক্ষতা নতুনদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এজন্য প্রত্যেক পেশাকেই সম্মান করা দরকার।

শ্রম বিভাজন: এক একজন একেক পেশায় জড়িত হওয়ায় শ্রমের বিভাজন ঘটেছে। সবাই যদি একই কাজ করে বা করতে চায় তাহলে অন্য কাজগুলো কে করবে? এছাড়া সব পেশায় যদি মানুষ জড়িত না হয় তাহলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। এজন্য সব পেশাকে সম্মান জানাতে হবে যাতে মানুষ সব ধরনের পেশায় জড়িত হতে পারে।

সামাজিক ভারসাম্য: বিভিন্ন কাজ বা পেশায় জড়িত হওয়ার ফলে মানুষের পরিবারে যেমন স্বচ্ছলতা আসছে তেমনি সমাজের ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি গড়ে উঠছে। সবাই সচেতনতা ও আত্মমর্যাদার সাথে নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত থাকে। তারা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে যেমনি সচেতন থাকে ঠিক তেমনিভাবে অন্যদের অধিকারের ব্যাপারেও সচেতন থাকে। সমাজের ভারসাম্যতার জন্য সব ধরনের পেশাকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে।

কাজ
দলগত কাজ
কাজ ও পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব বিষয়ে পোস্টার লিখে তা শ্রেণিতে প্রদর্শন।
*এ কাজে দুটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।
Content added By

অনুশীলনী

33
33
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. নিজের কাজ নিজে করলে-
ক. নিজের মনের মতো কাজ করা যায়
খ. অর্থ ব্যয় হয়
গ. কাজটি দায়সারা গোছের হয়
ঘ. সৃজনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়

২. পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকার ফলে প্রধানত আমাদের কোন ধরনের অধিকারগুলো পূরণ হয়ে থাকে?
ক. সামাজিক
খ. রাজনৈতিক
গ. মৌলিক
ঘ. সাংস্কৃতিক

৩. নিচের কোন খাতের ব্যয়টি পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ সংক্রান্ত ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়?
ক. খাদ্য
খ. পোশাক
গ. চিকিৎসা
ঘ. সঞ্চয়

৪. নিচের কোন কাজটি সাধারণত পরিবারের বাইরের কারো দ্বারা করানো হয়?
ক. রান্না করা
খ. চুল কাটা
গ. কাপড় ধোয়া
ঘ. বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করা

৫. বৈচিত্র্যময় পেশায় আমাদের অংশগ্রহণের ফলে-
i. সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হয়
ii. পরিবারে স্বচ্ছলতা আসে
iii. শ্রমের বিভাজন ঘটে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

গ্রামের সকলেই আলম সাহেবকে শ্রদ্ধা করে। তিনি পেশায় কৃষক। তিনি তার একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে খুবই সচেষ্ট। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় তিনি তার ছেলেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ বিভাগে লেখাপড়া করতে পাঠান। লেখাপড়া শেষে তিনি তার ছেলেকে নিজের তিনটি পুকুরের পাশাপাশি আরও কয়েকটি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করতে দিলেন। এজন্য গ্রামবাসীদের কেউ কেউ তার ছেলেকে বিদ্রুপ করলেও আলম সাহেব তাঁর ছেলের পেশায় খুবই গর্বিত।
ক. পেশা কী?
খ. মানুষ কাজ করে কেন?
গ. গ্রামের কিছুলোক আলম সাহেবের ছেলেকে ঠাট্টা করে কেন? বর্ণনা কর।
ঘ. ছেলের পেশা নিয়ে আলম সাহেবের খুশি হওয়ার বিষয়টি মূল্যায়ন কর।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;