তোমরা যখন ছোট ছিলে তখন মা-বাবা তোমাদের পোশাক নির্বাচন করতেন। এখন ভূমি বড় হয়েছ। তত্ত্ব ও
বিভিন্ন কস্ত্র সম্পর্কে তোমার কিছু ধারণা হয়েছে। কাজেই এখন তোমার বা পরিবারের সদস্যদের পোশাক
নির্বাচনে তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। আমরা জানি সভ্য সমাজে সব পরিবারের জন্যই পোশাক
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বিভিন্ন পরিবারের বত্রের প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন হয়। কেননা সব পরিবারের
প্রয়োজন ও সামর্থ্য একই রকম হয় না। তবে সব পরিবারেই পোশাকের নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা থাকে। আবার
কতকগুলো বিষয় আছে যা পরিবারের এই চাহিদাগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করে। নিচে পোশাক নির্বাচনে এ
ধরনের কিছু বিবেচ্য বিষয়ের উপর আলোচনা করা হলো।
আয় অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচন
পরিবারের সদস্যদের পোশাক-পরিচ্ছদ নির্বাচনে প্রথমেই আসে আয়ের প্রসঙ্গ। পরিবারের আয় আবার কিছু
বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন- পরিবারের কতজন সদস্য উপার্জন করছে? তাদের পেশা কী? পরিবারের
অন্যান্য বিষয় সম্পত্তি হতে অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি। দেখা গেছে যে পরিবারের মোট আর্থিক
আয় বেশি হলে পোশাকের খাতে ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। অন্যদিকে আয় কম হলে
স্বল্প টাকায় বুদ্ধিমত্তার সাথে সময় উপযোগী পোশাক নির্বাচন করা হলে অনেক সময় দামি পোশাকের চেয়েও
বেশি প্রশংসা পাওয়া যায়।
বয়স অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচন
একটি পরিবারে বিভিন্ন বয়সের সদস্য থাকে। পরিবারের সদস্যদের বয়সকে পোশাক নির্বাচনকালে প্রাধান্য
দিতে হবে। কেননা বিভিন্ন বয়সের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করতে
হয়। সাধারণত নবজাতকদের শরীর থাকে খুবই স্পর্শকাতর এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও থাকে
কম। তাই এদের জন্য হালকা রং, নরম জমিন ও সাধারণ ডিজাইনের পোশাক নির্বাচন করতে হবে, যাতে
করে ময়লা লাগলে সহজেই পরিষ্কার করা যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে হলে তাদের জন্য বোতাম, হুক, সেফটিপিন
ইত্যাদি বর্জিত নিরাপত্তামূলক পোশাক (safety measure garments) নির্বাচন করতে হবে।
স্কুলে যাওয়ার পূর্বে বা প্রাকবিদ্যালয় বয়সে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে তাদের
কোনো ধারণা থাকে না। তাই তাদের জন্য কিছুটা ঢিলেঢালা কিন্তু খুব লম্বা নয়, এমন পোশাক নির্বাচন করতে
হবে। এদের পোশাক নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রঙের পোশাকের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে
যেন পোশাকে জীবজন্তু, গাছপালা, পশুপাখি বা প্রাকৃতিক কতুর ছাপ থাকে। এতে করে স্কুলে যাওয়ার আগেই
তারা বিভিন্ন রং ও চারপাশের নানা ধরনের বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। প্রাকবিদ্যালয় বয়সের
শিশুরা যেন নিজেরাই নিজেদের পোশাক খুলতে পারে ও পরতে পারে সেজন্য নিচের ছবির মতো
আত্মনির্ভরশীল পোশাক-পরিচ্ছদ (self-help garments) নির্বাচন করতে হবে।
কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ বোধ গড়ে উঠে। অনেক সময় পোশাক-পরিচ্ছদ
নির্বাচনের এ ধাপে মা-বাবার সাথে কিশোর-কিশোরীদের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এ
বয়সের ছেলেমেয়েদের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, তবে উক্ত পোশাক যেন
আমাদের সমাজ বা কৃষ্টি বহির্ভূত না হয় সে দিকেও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
অবসর জীবন বা বৃদ্ধ বয়সে পোশাকের চাহিদা কমে যায় বলে পোশাক নির্বাচনের সময় তাদের অবহেলা
করলে চলবে না। এ সময়ের জন্য ওজনে হালকা, আরামদায়ক ও সরল নকশার পোশাক নির্বাচন করতে হবে।
মৌসুম অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন
পোশাকের উৎপত্তির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাইরের প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করা।
আমাদের দেশ ষড় ঋতুর দেশ হলেও পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা তিনটি ঋতুকে প্রাধান্য দেই।
শীতকালে পশমি কাপড়ের বেশি প্রয়োজন হয়। কেননা পশম তন্তুর মধ্যে যে বাতাস ঢুকে থাকে তা দেহের
উপর চাপ সৃষ্টি করে; এর ফলে দেহের তাপমাত্রা বের হতে পারে না; ফলে আরাম অনুভূত হয়। গ্রীষ্মকালে
গরমে ঘাম বেশি হয় তাই এ সময় সুতি, লিনেনের মতো ভাপ সুপরিবাহী কদর বেশি নির্বাচন করা উচিত।
এছাড়া বর্ষা ঋতুতে কাপড় ধোয়া ও শুকানোর সুবিধার জন্য নাইলন, টেট্রন, জর্জেট, পলিয়েস্টার জাতীয়
কাপড় বেশি উপযোগী। দেখা গেছে সুপ্তি বস্ত্রের দাম কম হলেও ঘামে নষ্ট হয়ে যাবার কারণে এক বছরের
পোশাক অন্য বছর অনেক সময় পরা যায় না। অন্যদিকে পশমি বস্ত্র ও কৃত্রিম তন্তুর বত্র একটু বেশি দাম
দিয়ে কিনলেও যত্ন সহকারে রাখলে কয়েক বছর একই পোশাক ব্যবহার করা যায়। পোশাক নির্বাচনে এ
বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
উপলক্ষ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন
সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন
ধরনের পোশাকের প্রয়োজন হয়। যেমন- গায়ে হলুদ, বিয়ে, ঈদ, মিলাদ, পূজা, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী
ইত্যাদি। আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণত সুন্দর, তুলনামূলকভাবে দামি ও বৈচিত্র্যময় পোশাক দরকার
হয়। এছাড়া মসজিদ, গির্জা, মন্দির প্রভৃতি স্থানে যাওয়ার সময় আমরা সাদাসিধা ধরনের বিশেষ পোশাক
নির্বাচন করে থাকি। কাজেই সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে বিভিন্ন উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির
পোশাক নির্বাচন করতে হয়।
সদস্যদের পেশা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন
আমরা সমাজে নানা পেশার লোক দেখতে পাই। যেমন- উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাধারণ অফিসার, পিয়ন,
ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শ্রমিক, ডাক্তার, নার্স, বৈমানিক, সৈনিক, অগ্নিনির্বাপক কর্মী ইত্যাদি। কে কোন ধরনের
পোশাক নির্বাচন করবে তা নির্ভর করে তার পেশার উপর। যেসব পেশায় নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে তাদের
পোশাক নির্বাচনে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। তবে যাদের পেশায় ইউনিফর্ম নেই তাদের
পোশাক নির্বাচনে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা অটিপৌরে বা অনানুষ্ঠানিক পোশাক না হয়। কেননা পেশা ও
সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী পোশাক পরলে মানুষ কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং সম্মান পায় ।
কৃষ্টি ও জাতীয়তা অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন
প্রত্যেক সমাজেরই নিজস্ব কিছু রীতিনীতি থাকে। যেমন- পাশ্চাত্যের মহিলারা প্যান্ট, শার্ট, স্কার্ট, টপস
ইত্যাদি পরে। আমাদের দেশের সামাজিক রীতি অনুসারে মহিলারা শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ ইত্যাদি পরে।
পুরুষেরা নির্বাচন করে লুঙ্গি, প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা ইত্যাদি। অন্যদিকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার
চাকমা মহিলারা লুঙ্গি ও ব্লাউজ পরে। সিলেট জেলার মনিপুরী অঞ্চলের মহিলারা লুঙ্গির মতো করে এক
টুকরা কাপড় পরে, স্থানীয় ভাষায় যাকে 'ফনের' বলে। এছাড়া তারা ব্লাউজ এবং ওড়নাও ব্যবহার করে।
কৃষ্টি ও জাতীয়তা পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। সুতরাং নিজেদের পোশাক
নির্বাচন করার সময় প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী মানানসই পোশাক নির্বাচন করা উচিত। দেখা গেছে
সমাজ ও সম্প্রদায় কর্তৃক স্বীকৃত পোশাক মানুষের মনে সামাজিক নিরাপত্তা ও মানসিক তৃপ্তি আনে এবং
আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় ।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কোন বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ বোধ গড়ে উঠে?
(ক) কৈশোর
(খ) প্রাক-কৈশোর
(গ) যৌবন
(ঘ) প্রারম্ভিক কৈশোর
২। পরিবারের সদস্যদের পোশাক নির্বাচনে প্রাধান্য বিস্তার করে-
(i) কৃষ্টি
(ii) জাতীয়তা
(iii) নিরাপত্তা
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) i ও ii
(খ) i ও iii
(গ) ii ও iii
(ঘ) i, ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও
নাছিমার অফিস বাড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় পোশাক নির্বাচনে জর্জেটকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু গ্রীষ্ম ঋতুতে
লিনেন কাপড় বেছে নেন।
৩। নাছিমার প্রাধান্য দেওয়া কাপড়টি
(i) ধোয়া ও শুকানো সহজ
(II) ইস্ত্রি ছাড়াও পড়া যায়
(iii) তাপ সুপরিবাহী
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) i ও ii
(খ) i ও iii
(গ) ii ও iii
() i, ii ili
৪। নাছিমার গ্রীষ্মকালে নির্দিষ্ট তত্ত্বর কাপড় বেছে নেওয়ার কারণ?
(ক) দামে সস্তা
(খ) তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি
(গ) সহজে তাপ চলাচল করে
(ঘ) দীর্ঘদিন ব্যবহারের অনুপযোগী
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। সালমা হক তার দুই মেয়ে নাহি ও নিমুর জন্য জামা কিনতে মার্কেটে যান। নিম্ন তিন মাস বয়সী হওয়ায়
হালকা রঙের সিনথেটিকস কাপড়ের উপর নকশা করা জামা কেনেন। আর চার বছর বয়সী নাহির জন্য
ঢিলেঢালা উজ্জ্বল বর্ণের বিভিন্ন প্রাণীর ছাপা সম্বলিত সামনে বোতাম দেওয়া জামা কেনেন। সালমা হক
বাড়ি এসে নিমুকে জামা পরালে নিমু অসস্তিবোধ করে।
(ক) আনন্দমুখর অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণত কোন ধরনের পোশাক দরকার?
(খ) গ্রীষ্মকালীন পোশাক কিরূপ হওয়া উচিত বুঝিয়ে দাও।
(গ) নিমুর অস্বস্তিবোধ করার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) সালমা হকের নির্বাচিত পোশাক নাহির জন্য উপযোগী তুমি কি একমত? স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
আরও দেখুন...