প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং দূষণ (ত্রয়োদশ অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - বিজ্ঞান - | NCTB BOOK
60
60

আমাদের চারপাশের সব জড় ও জীবকে নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। তোমরা জানো বিভিন্ন জড় ও জীবের মধ্যে রয়েছে সম্পর্ক। আবার জীব ও পরিবেশের অন্যান্য অংশের মধ্যেও রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক, যার ফলে আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে বিচিত্র সব কর্মকাণ্ড। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে, যার জন্য পরিবেশে সে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালায়। কোনো একটি পরিবেশে মানুষ যখন এ ধরনের কর্মকান্ড চালায়, তখন সেখানকার উপাদানসমূহের উপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

  • পরিবেশ দূষণ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশের উপাদানসমূহের দূষণের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশের উপাদানের উপর দূষণের প্রভাব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • পরিবেশ সংরক্ষণে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগী হব।
  • পরিবেশ দূষণ এবং এর প্রভাব পোস্টারে উপস্থাপন করতে পারব।
Content added By

পরিবেশ দূষণ (পাঠ ১)

50
50

সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষ তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে। প্রাকৃতিক অথবা মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড, এই উভয় কারণেই পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে মানুষ, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য প্রাণীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসকল ঘটনাকে আমরা বলি পরিবেশ দূষণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পিারবেশকে বলি দূষিত পরিবেশ।

চিত্র-১৩.১: দূষিত পরিবেশ

কাজ: পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জানা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: নোট খাতা ও কলম।
পদ্ধতি: তোমার এলাকা ও স্কুলের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ কর। পরিবেশে কোনো প্রকার দূষণ ঘটেছে কি না তা লক্ষ্য কর এবং শনাক্ত কর। যে সকল দূষণ তুমি শনাক্ত করেছ, সে সম্পর্কে শ্রেণিতে আলোচনা কর।

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে সকল প্রকার জীব ও মানুষের বিচরণ পৃথিবীর এই পরিবেশে। পরিবেশের কোনো অংশই আজ দূষণমুক্ত নয়। মানুষ শুধু তার নিজের পরিবেশকেই দূষিত করছে না, সকল জীব ও তার পরিবেশও এই দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষসহ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন ধারণে বিঘ্ন ঘটেছে। দূষণ কেন ঘটছে? কিছু ক্ষতিকারক উপাদান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহারের ফলে আমাদের পরিবেশ দূষিত করছে। সেগুলোকে আমরা দূষক (pollutant) বলি। বিভিন্ন কারখানা, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনি এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক, রাসায়নিক সার, বিভিন্ন আবর্জনা, পলিথিন, প্লাস্টিক ইত্যাদি হলো দূষকের উদাহরণ। এ সকল দূষক বিভিন্নভাবে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে দূষিত করছে।

Content added By

পরিবেশের উপাদানসমূহের দূষণের কারণ (পাঠ ২)

44
44

পরিবেশ প্রধাণত দুটো উপাদান নিয়ে গঠিত। জীব এবং জড় উপাদান। তোমরা জানো সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে পরিবেশের জীব উপাদান গঠিত। আবার জড় উপাদানের মধ্যে রয়েছে মাটি, পানি, বায়ুসহ পৃথিবীর অন্যান্য সকল জড়বস্তু। দূষণের ফলে পরিবেশের সকল জীব ও জড় উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে মানুষসহ সকল জীব পরিবেশে হুমকির সম্মুখীন হয়। এখন প্রশ্ন হলো, পরিবেশ দূষিত হওয়ার কারণ কী?

কাজ: পরিবেশের উপাদানসমূহের দূষণ সম্পর্কে জানা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: নোট খাতা, পোস্টার কাগজ ও মার্কার।
পদ্ধতি: শিক্ষকের সহায়তায় দল গঠন কর। পূর্ববর্তী পাঠে তোমরা যে সকল দূষণ শনাক্ত করেছ, সেগুলোর কারণ কী, তা বিভিন্ন দলের সদস্যরা পর্যবেক্ষণ কর। পরিবেশের এ সকল উপাদান দূষিত হওয়ার উৎসসমূহ খুঁজে বের কর। দূষণের কারণ এবং উৎসসমূহ পোস্টার কাগজে লিখে শ্রেণিতে প্রদর্শন কর। প্রত্যেক দলের কাজ ঘুরে ঘুরে দেখ এবং শ্রেণি আলোচনায় অংশগ্রহণ কর।

পৃথিবীতে জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বাড়তি মানুষের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত খাদ্য, বাসস্থান, যানবাহন ইত্যাদি। চাষের জমি বাড়াতে ও বাসস্থান তৈরি করতে মানুষ বনজঙ্গল কেটে ফেলছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এরোসোল ও রেফ্রিজারেটর থেকে নির্গত CFC (ক্লোরোফ্লোরো কার্বন) ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাড়তি মানুষের জন্য খাদ্য ও বাসস্থান ছাড়াও প্রয়োজন নানা রকম পণ্যসমাগ্রী। ফলে তারা গড়ে তুলছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। এসব শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য দূষিত করছে পরিবেশ। এভাবেই পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরবর্তী পাঠগুলোতে তোমরা মাটি, পানি ও বায়ু, পরিবেশের এই তিনটি প্রধান উপাদানের দূষণ সম্পর্কে জানবে।

Content added By

মাটিদূষণ (পাঠ ৩-৪)

37
37

আমাদের জীবন ধারণের জন্য মাটি অত্যাবশ্যক। মাটিতে বিভিন্ন ফসল ফলে, যা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। শুধু খাদ্যই নয়, জীবন ধারণের সবকিছুই যেমন- বাসস্থান, বস্ত্র, ঔষধ ইত্যাদির জন্য আমরা যে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল তাও মাটিতে জন্মায়। এ মাটিকেও আমরা বিভিন্নভাবে দূষিত করছি, যার ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।

কাজ: মাটিদূষণ ও মাটিদূষণের উৎস সম্পর্কে জানা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: নোট খাতা, পোস্টার কাগজ ও মার্কার।
পদ্ধতি: তোমার এলাকার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন কর। এসব স্থানে কীভাবে মাটি দূষিত হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ কর। মাটিদূষণের উৎসগুলো কী কী তা পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লিখ। তোমার এলাকার মাটি দূষণরোধে সবাইকে সচেতন করতে হলে কী কী করা দরকার তা পোস্টার কাগজে লিখে শ্রেণিতে প্রদর্শন কর এবং আলোচনায় অংশ নাও।

মাটিদূষণের কারণ ও উৎস

মাটিতে আমরা যে সকল আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ ফেলি, এগুলোকে পচতে ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে। যার ফলে এগুলো মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যায়। এছাড়াও আজকাল আমরা এমন সব দ্রব্যাদি ব্যবহার করছি যেগুলো মাটিতে পচে না, যেমন কাচ, পলিথিন, প্লাষ্টিক, ইত্যাদি। এসকল অপচনশীল দ্রব্যাদি উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এসব জিনিষ ছাড়াও মাটিকে আমরা বিভিন্নভাবে দূষিত করছি। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আবর্জনাসহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার, শিল্পকারখানার বর্জ্য, ইত্যাদি।

চিত্র-১৩.২: মাটিদূষণ

Content added By

পানিদূষণ (পাঠ ৫-৬)

34
34

বর্তমানে পৃথিবীতে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানি ছাড়া জীবন চলে না। পানিদূষণ আমাদের জন্য একটি বড়ো চিন্তার বিষয়। পানি নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। মানুষই পানি দূষণের জন্য দায়ী। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই এখন অত্যন্ত প্রকট।

কাজ: পানিদূষণ এবং পানিদূষণের কারণ এবং উৎস সম্পর্কে জানা।
পদ্ধতি: তোমার এলাকায় বা এলাকার নিকটে বা গ্রামের বাড়িতে যদি কোনো জলাশয়, পুকুর বা নদী থাকে তা পরিদর্শন কর। লক্ষ্য করে দেখ এখানকার পানি কীভাবে দূষিত হচ্ছে। যদি তোমার এলাকা বা গ্রামের বাড়িতে এ ধরনের জলাশয় বা পুকুর অথবা নদী কিছুই না থাকে, তবে সহপাঠিদের সাথে আলোচনা করে জেনে নাও কীভাবে তাদের এলাকার পানি দূষিত হয়, নোট খাতায় লিখে রাখ। পানিদূষণের উৎস ও কারণ জেনে শ্রেণিতে আলোচনায় অংশ নাও।

পানি দূষণের কারণ এবং উৎস

বিভিন্নভাবে পানি দূষিত হতে পারে। এ কারণগুলোর মধ্যে মানুষের কর্মকান্ড অন্যতম প্রধাণ কারণ। নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্প বর্জ্য অনেক বেড়ে গিয়েছে। ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জমিতে ও জলাশয়ে বিভিন্ন কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলোও বিভিন্ন ভাবে জলাশয় থেকে নদী এবং নদী থেকে সাগরে পড়ছে। এছাড়া এগুলো মাটির নিচের পানির সঙ্গে মিশেও পানিকে দূষিত করছে। তোমরা লক্ষ করে থাকবে অনেকে পুকুরের পানিতে বাঁশ, বেত, পাট, ইত্যাদি ভিজিয়ে রাখে। গরু, মহিষ, ছাগল গোসল করায়। অনেকে বিভিন্ন জলাশয়ের উপর কাঁচা পায়খানা তৈরি করে। এসবই পানিকে দূষিত করে।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণেও পানি দূষিত হয়ে থাকে। যেমন- তোমরা বন্যার কথা শুনেছ। বন্যার ফলে মানুষ ও গৃহপালিত পশু পাখির মলমূত্র পানিতে মিশে যায় এবং পানি দূষিত হয়। খাদ্যের উচ্ছিষ্ট, ময়লা আবর্জনা, জীবজন্তুর মৃতদেহ, গৃহস্থালীর ব্যবহার্য নানাধরণের পচনশীল বস্তু যেখানে সেখানে ফেলা হয়। এগুলো পচে বিভিন্ন জীবাণুর সৃষ্টি হয়। এসব বর্জ্য বৃষ্টির পানির সাথে পুকুর, নদী ও জলাশয়ের পানিতে গিয়ে মিশে।

চিত্র-১৩.৩: পানিদূষণ

Content added By

বায়ুদূষণ (পাঠ ৭-৮)

39
39

আমাদের পৃথিবীর চারপাশে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। এই বায়ুর মধ্যেই মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বেঁচে আছে। মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বায়ুর কোনো কোনো উপাদানের পরিমাণ বেড়ে বা কমে যাচ্ছে, যা পরিবেশ এবং আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বায়ুর এ ধরনের পরিবর্তন বায়ুদুষণ নামে পরিচিত। আজ পৃথিবীর চারপাশের বায়ুমণ্ডল বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে।

কাজ: বায়ুদূষণ এবং এর উৎস সম্পর্কে জানা।
পদ্ধতি: তোমার এলাকার বায়ুদূষণের উৎস ও কারণগুলো পর্যবেক্ষণ কর। এগুলোর মধ্যে মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণগুলো পৃথকভাবে পোস্টার কাগজে লিখ। এটি শ্রেণিতে প্রদর্শন কর এবং আলোচনা কর।

বায়ুদূষণের কারণ এবং উৎস

মানুষের দ্বারা এবং প্রাকৃতিকভাবে বায়ু দূষিত হতে পারে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বায়ুদূষণের জন্য কতগুলো কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যানবাহন ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া। এছাড়াও আমাদের দেশে ইটের ভাটায় যখন ইট তৈরি করা হয়, তখন সেখান থেকে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, যা বায়ু দূষণ ঘটায়। বায়ুদূষণের আরও কারণের মধ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বাস, টেম্পো ইত্যাদির ইঞ্জিন থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়া। এসকল ধোঁয়ার সাথে নির্গত হয় কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন কণা এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড। এগুলো পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

বায়ুদূষণের জন্য শুধু যে যানবাহন ও শিল্পকারখানাই দায়ী তা কিন্তু নয়। সিগারেটের ধোঁয়া, এসবেস্টস, নির্মাণ কাজের ধূলিকণা, বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা, ইত্যাদিও বায়ুদূষণ ঘটায়। বায়ু দূষণের আরও একটি অন্যতম কারণ হলো নির্বিচারে বন-জঙ্গল কেটে ফেলা। এর ফলে বায়ুতে উদ্ভিদ কর্তৃক গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ না কমে বেড়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বায়ুদূষণের উদাহরণ হলো আগ্নেয়গিয়ির অগ্নুৎপাতের সাথে বিষাক্ত গ্যাস (CO2 SO2, H2S) নির্গমন এবং বনজঙ্গলের দাবানলের ফলে ধোঁয়া ও গ্যাস বের হওয়া

চিত্র- ১৩.৪: বায়ুদূষণ

Content added By

দূষণের প্রভাব (পাঠ ৯)

39
39

তোমরা মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ কীভাবে ঘটে তা জেনেছো। তোমরা কী জানো এসব দূষণের ফলে পরিবেশের উপর কোন ধরনের প্রভাব পড়ে?

কাজ: বিভিন্ন দূষণের প্রভাব সম্পর্কে জানা।
পদ্ধতি: শিক্ষকের সহায়তায় দল গঠন কর। দলগুলো তোমাদের বিদ্যালয় এবং এলাকার আশেপাশের পরিবেশ পরিদর্শন করবে। দেখ এলাকার পরিবেশে কোন কোন ধরনের দূষণ ঘটছে। এসব দূষণের ফলে মানুষসহ অন্যান্য জীবের উপর কোন ধরনের প্রভাব পড়ছে তা বিভিন্ন দলের সদস্যদের মধ্যে নিজেরা আলোচনা করে নোট খাতায় লিখ। শ্রেণিতে বিভিন্ন দল থেকে সংগৃহীত তথ্য উপস্থাপন কর এবং শ্রেণিতে আলোচনায় অংশগ্রহণ কর।

মাটিদূষণের প্রভাব

তোমরা জেনেছো, মাটিদূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাটিতে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। মাটি দূষণের জন্য দায়ী বিভিন্ন কঠিন ও রাসায়নিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলার কারণে পরিবেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাটিতে ফেলে দেওয়া কাচ, অ্যালুমিনিয়াম, পলিথিন ইত্যাদি মাটিতে সহজে মেশে না। ফলে মাটি তার উর্বরতা হারায়। তোমরা জেনে অবাক হবে অ্যালুমিনিয়াম মাটির সাথে মিশতে সময় লাগে আড়াইশত বছর। কাচের লাগে দশ লক্ষ বছর এবং পলিথিনের লাগে প্রায় এক হাজর বছর। তাই এগুলো আমাদের নর্দমা, জলাশয়কে ভরাট করে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এগুলো পুকুর, নদী, সাগর এসব স্থানেও স্থানান্তরিত হয়। ফলে এসব পরিবেশে জীবের বেঁচে থাকা হুমকির সম্মুখীন হয়। কৃষি জমিতে যে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় মাটির বিভিন্ন জীবের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এসব রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ভিদের মাধ্যমে খাদ্যের সাথে মিশে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি করছে।

পানিদূষণের প্রভাব

আমরা বিভিন্নভাবে পানি দূষিত করছি তা তোমরা জেনেছো। এ দূষিত পানি পান করলে আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ হয়। পানি দূষিত হলে সে পানিতে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীও বাঁচতে পারে না। ফলে পানির পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

বায়ুদূষণের প্রভাব

তোমরা জেনেছো বিভিন্নভাবে বায়ু দূষিত হয়। বায়ু দূষিত হলে সে বায়ুতে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বায়ুতে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সার এর মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে। এছাড়াও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুতে মিশে গিয়ে অম্ল বা এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি হতে পারে। এই অ্যাসিড বৃষ্টি শুধু মানুষের ক্ষতিই করে না, জলজ প্রাণীদেরও ক্ষতি করে এর ফলে বনভূমিও ধ্বংস হয়।

এসব ছাড়াও বায়ুদূষণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি যদি অব্যাহত থাকে, তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলবর্তী নিচু স্থলভূমি পানিতে ডুবে যাবে। আবার কোনো কোনো অঞ্চল খরার কবলে পড়বে। ফলে স্থানীয় জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটবে। এতে শুধু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে সার্বিকভাবে পৃথিবী ঝুঁকির মুখে পড়বে।

Content added By

দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণ (পাঠ ১০)

45
45

বিভিন্নভাবে পরিবেশের মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ এর কারণ আমরা জানলাম। মাটি, পানি ও বায়ু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু মানুষের কারণেই বর্তমানে এ পরিবেশ ধীরে ধীরে বাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। পরিবেশকে সুস্থ ও স্বাভাবিক না রাখতে পারলে পৃথিবীর সকল জীবের অস্তিত্বই হুমকীর সম্মুখীন হবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার একমাত্র উপায় হলো পরিবেশ সম্পর্কে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দূষণ প্রতিরোধ।

কাজ : দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির উপায় সম্পর্কে জানা।
পদ্ধতি: শিক্ষকের সহায়তায় দল গঠন কর। পরিবেশ দূষণ থেকে নিজে ও সকলকে বিরত রাখতে কী কী করা যায়, তা নিজেদের দলে আলোচনা করে নোট খাতায় লিখ। পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে স্লোগান তৈরি কর। স্কুলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা কর।

মাটি, পানি, বায়ু ছাড়া পরিবেশে জীবের অস্তিত্বের কথা ভাবাই যায় না। আমাদের সকলের উচিত পরিবেশের এ উপাদানগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা। বর্তমানে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশের এসকল উপাদানের ব্যবহার অনেক বেশি হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে পরিবেশের দূষণ ঘটছে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে ও সংরক্ষণ করতে হলে আমাদের সবাইকে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

  • সুস্থ পরিবেশের জন্য মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ যাতে না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • বাড়িঘর, স্কুল ও রাস্তার পাশে গাছপালা লাগাতে হবে।
  • খোলা জায়গায় যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা বন্ধ করতে হবে।
  • শিল্পকারখানা থেকে ধোঁয়া বের হয়ে যেন দূষণ না ঘটে, সেজন্য ধোঁয়া বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে একে দূষণমুক্ত করতে হবে।
  • প্লাস্টিক, পলিথিন ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এসবের পরিবর্তে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কীটনাশক, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে হবে। এগুলোর পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা মাকড় দমন করতে হবে।
  • জনগণকে দূষণের ক্ষতিকারক দিক এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
  • বন সংরক্ষণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এগুলো বিভিন্ন জীবের আবাসস্থল। এছাড়া গাছপালা আমাদের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম

  • পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে যখন কোনো পরিবর্তন ঘটে তখন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে মানুষসহ অন্যান্য জীবের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যাকে আমরা বলি পরিবেশ দূষণ।
  • প্রাকৃতিক এবং মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড উভয় কারণেই পরিবেশ দূষণ ঘটে। তবে বিভিন্ন দূষণের জন্য মানুষই প্রধানত দায়ী।
  • পরিবেশের মাটি, পানি ও বায়ুদূষণের ফলে শুধু মানুষই বিপন্ন হবে না, অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
  • দূষণ রোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম উপায়।
Content added By

অনুশীলনী

45
45

শূন্যস্থান পূরণ কর।

১. চাষের জমি বাড়াতে ও বাসস্থান তৈরি করতে মানুষ ________ কেটে ফেলছে।

২. শিল্পকারখানার _________ পানিদূষণের জন্য দায়ী।

৩. বিভিন্ন আবর্জনাকে পচতে সাহায্য করে ___________

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. দূষণ কীভাবে ঘটে তার একটি উদাহরণ দাও।
২. দূষণ রোধ সম্পর্কে তোমার এলাকার সবাইকে সচেতন করতে হলে তুমি কী কী করতে পার?
৩. তোমার বাড়ির পরিবেশ সংরক্ষণে তোমার করণীয় কী?
৪. তোমার বিদ্যালয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে তুমি কীভাবে ভূমিকা রাখতে পার?
৫. পানিদূষণের দুটো প্রভাব উল্লেখ কর।
৬. বায়ুদূষণ কেন মানুষের জন্য ক্ষতিকর?

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. কোনটি থেকে শহরের বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ করা হয়?

ক. নলকূপ
খ. পুকুর
গ. নদী
ঘ. বিল

২. মাটিদূষণের কারণ হলো-
i. পলিথিন ও কীটনাশক
ii. আবর্জনা ও মৃত জীবদেহ
iii. রাসায়নিক সার ও কাচ
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

দৃশ্যটি লক্ষ কর এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।

চিত্র: কারখানার ধোঁয়া ও বৃক্ষনিধন

৩. দৃশ্যকল্পের W চিহ্নিত অংশে অনুপস্থিত কোনটি?

ক. কার্বন ডাইঅক্সাইড
খ. অক্সিজেন
গ. ক্লোরোফ্লোরো কার্বন
ঘ. কার্বন মনোঅক্সাইড

৪. চিত্রে প্রদর্শিত ঘটনাটি পৃথিবীতে সংঘটিত হলে-
i. ওজোন স্তর নষ্ট হবে
ii. অম্লবৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে
iii. গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১.

ক. অম্ল বা অ্যসিড বৃষ্টি কী?
খ. প্লাস্টিক মাটির জন্য ক্ষতিকর কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের প্রাণীগুলো কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে কারণসহ ব্যাখ্য কর।
ঘ.কী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উদ্দীপকের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে?

২.

ক. দূষণ কী?
খ. পানিদূষণ কেন ক্ষতিকর?
গ. পরিবেশের উপর 'P' কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে দেখানো সমস্যা সমাধানে আমাদের করণীয় কী তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;