ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কতগুলো ইউরোপীয় মিশন ব্রিটিশ (বৃটেন), ফ্রান্স এবং ইষ্ট ইন্ডিয়া হতে ফলের নতুন নতুন জাত প্রবর্তনের মাধ্যমে বেশ কিছু সংখ্যক বাণিজিক ফলের বাগান এদেশে প্রতিষ্ঠিত করে ।
কলা, কাঁঠাল, বাতাবি লেবুর, কয়েকটি জাত এবং আম, ভারতের দেশীয় ফল । লিচু, কমলা, লেবু প্রভৃতি চীন দেশ হতে পেঁপে, আনারস, সফেদা আমেরিকা হতে আঙ্গর, ডালিম প্রভৃতি এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রবর্তিত হয়েছিল। বাংলাদেশে বর্তমানে (২০০৫-০৬) প্রায় ১.৩৯ লাখ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ হয় । তন্মধ্যে আম কাঁঠাল, কলা, লিচু, কাগজিলেবু, বাতাবি লেবু, কমলা লেবু, আনারস, পেয়ারা, পেঁপে, আতাফল, তরমুজ, ইত্যাদি প্রধান। এছাড়া বাংলাদেশে আরও অন্যান্য ফলের চাষ এলাকা ভিত্তিক কম বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমস্যার মাতা ফল ও ফুল গাছ পোকা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় । প্রতিবছরই বাংলাদেশে এই সব অনিষ্টকারী পোকামাকড় আমাদের মূল্যবান ফল ও ফল গাছের ব্যাপক হারে ক্ষতি করে । ফুল ও ফলগাছের অধিকাংশ পোকামাকড় আকারে ছোট কিন্তু তাদের দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি ।
ক্ষতির প্রকৃতি এবং স্বভাব বিবেচনা করলে দেখা যায় বিভিন্ন পোকা ফল ও ফলগাছের চারা ফলগাছ, কাণ্ড, পলব, ফুল ও কুঁড়ির যথেষ্ট ক্ষতি করে। এর ফলে অনেক সময় ফল উৎদানকারী ও ফল জাত দ্রব্যের ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ হয়ে দাড়ায় । ফল ও ফল গাছের অনিষ্টকারী পোকামাকড় যথাযথভাবে প্রতিরোধ ও তাদের আক্রমণে প্রতিহত করতে হলে এদের স্বভাব, প্রকৃতি, বিস্তৃতি, জীবনবৃত্তান্ত, আবির্ভাবের সময় ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন ।
আমাদের জানা প্রয়োজন, কোন সময় ফল বা ফল গাছ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয় । ক্ষতির প্রকৃতি বা ধরন সম্পর্কেও জানা দরকার । সেই সাথে ঋতুভেদে পোকামাকড়ের সংখ্যাধিক্য, স্থায়ীত্ব, আবির্ভাবের সময় এবং বিস্তৃতি কেমন হয় তাও জানা প্রয়োজন । এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে পোকামাকড়ের আক্রমণের পুর্বাভাস দেয়া সম্ভব হতে পারে । সম্ভব হলে ফল ও ফল গাছ রক্ষায় আগাম ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে । সারা বিশ্বে এক হাজারের বেশি পোকা ও তার প্রজাতি ফল ও ফল গাছের অনিষ্ট করে থাকে । বাংলাদেশে শত শত পোকামাকড় প্রতি বছর ফল ও ফল গাছের ক্ষতি করে থাকে ।
ফল ও ফল গাছের আক্রমণকারী প্রধান প্রধান পোকা
বালাদেশের প্রধান প্রধান ফলে ও ফল গাছে নানা ধরনের পোকা মাকড় আক্রমণ করে থাকে । নিম্নের সারণিতে ফল ও ফল গাছে আক্রমণকারী প্রধান প্রধান পোকামাকড়ের তালিকা দেওয়া হলো ।
ফল ও ফুল গাছের আক্রমণের ধরন দেখে পোকা শনাক্ত
ফল ও ফুল গাছের অনিষ্টকারী পোকামাকড় দমন করতে হলে এর স্বভাব, প্রকৃতি, বিস্তৃতি, জীবন বৃত্তান্ত আবির্ভাবের সময় ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিম্নের বর্ণিত ফলের প্রধান প্রধান পোকার আবির্ভাবের সময় ও ক্ষতির লক্ষণ দেখে শনাক্তকারী পোকার বাংলা ও ইংরেজি নাম দেওয়া হলো ।
পোকা দমন পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা
ফসলকে বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পোকা দমন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে । প্রধানত দুই প্রকার পদ্ধতিতে পোকা দমন করা হয় । যেমন-
১) প্রাকৃতিক দমন ও ২) ফলিত বা কৃত্রিম দমন
প্রাকৃতিক দমন (Natural Control)
১. জলবায়ুগত উপাদান সমূহ দ্বারা
২. ভূমির বন্ধুরতা বৈশিষ্ট্য দ্বারা
৩. শিকারি জীব দ্বারা
৪. পোকার রোগ দ্বারা
ফলিত বা কৃত্রিম দমন (Applied or Artificial Control)
১. যান্ত্রিক দমন
২. ভৌত দমন
৩. কৃষিজ পরিচর্যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
৪. জৈবিক দমন
৫. রাসায়নিক দমন
৬. কৌলিকভাবে দমন
৭. আইনগত নিয়ন্ত্রণ
প্রাকৃতিক দমন (Natural Control)
জলবায়ুগত উপাদানের মধ্যে তাপমাত্রা, আদ্রতা, আলো, বাতাস ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য। এ সকল উপাদানের বিভিন্ন মাত্রা বিভিন্ন পোকা সহ্য করতে পারে ও বংশ বিস্তার করে থাকে। এসব উপাদানের পরিবর্তন ঘটলে বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় । যেমন গ্রীষ্মের সময় অত্যধিক তাপমাত্রায় বা খরায় পোকার মৃত্যু ঘটে । অল্প আর্দ্রতায় শোষক পোকার মৃত্যু ঘটে । আর্দ্রতা বেশি হলে পোকার দেহে ছত্রাকজনিত রোগ বেশি হয় এবং পোকা মারা যায়। এছাড়া খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদির জন্য একই অথবা একাধিক প্রজাতির মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে প্রাকৃতিক ভাবে পোকা দমন হয় ।
ফলিত বা কৃত্রিম দমন (Applied or artificial control) মানুষ কতৃক গৃহীত দমন ব্যবস্থাকে কৃত্রিম বা ফলিত দমন বলে । প্রাকৃতিক ভাবে দমন কার্যকরী না হলে কৃত্রিম দমন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হয় ।
ক. যান্ত্রিক দমন (Mechanical control): যান্ত্রিক উপায়ে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ হলো বিশেষ কোন ধরনের কোন যন্ত্র, মানুষের শ্রম ও কোন বিশেষ দ্রব্যের সাহায্যে কীটপতঙ্গ দমনের কৌশল । অথাৎ হাত দ্বারা ধরে এবং বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পোকা মাকড় দমন পদ্ধতিকে যান্ত্রিক দমন বলে । যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি গুলো হলো। নিম্নরুপ:
১. হাতে ধরা এ পদ্ধতিতে মাজরা পাকার ডিম, মথ ও পূর্ণাঙ্গা পোকা দমন করা যায় । হাতের সাহায্যে এগুলো সংগ্রহ করে পিটিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে হবে ।
২, পাতার অগ্রভাগ কাটা: পামরি পোকাসহ কতিপয় পোকা এবং তাদের ডিম ও গ্রাব পাতার অগ্রভাগে মোড়ানো অবস্থায় বা পাতার শিরার মাঝখানে থাকে। এ অবস্থায় পাতার অগ্রভাগ এবং মোড়ানো অংশ কেটে মাটিতে পুতে বা আগুনে পুড়ে ফেলা যায় ।
৩. আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা : আক্রান্ত গাছগুলো বিশেষ করে ভাইরাস আক্রান্ত গাছ গুলো তুলে আগুনে পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে ।
৪. আলোর ফাঁদ: হ্যাজাকলাইট, হারিকেন, বৈদ্যুতিক বাতি ইত্যাদি দ্বারা আলোর ফাদ তৈরি করে ক্ষেতের মধ্যে বা পাশে ঝুলিয়ে রাখলে বিভিন্ন পোকা আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়। বাতির নিচে রক্ষিত একটি কেরোসিন বা কীটনাশক মিশ্রিত পানির পাত্রে পোকাগুলো পড়ে মারা যায় ।
৫. আঠা লাগানো ফাঁদ ও কয়েকটি হার্ডবােের্ডর টুকরায় আঠা বা গাম লাগিয়ে জমিতে বিছিয়ে রাখলে পোকা চলাচলের সময় বােের্ডর আঠায় আটকিয়ে যায়। এ ধরনের ফাদে সবুজ পাতা ফড়িং ও বাদামি গাছ ফড়িং বেশি ধরা পড়ে । হলুদ রঙের দিকে বাদামি গাছ ফড়িং এবং সাদা রঙের দিকে থ্রিপস বেশি আকৃষ্ট হয় ।
খ, আধুনিক চাষাবাদ বা পরিচর্যা পদ্ধতির মাধ্যমে দমন (Cultural method )
১. রোগবালাই প্রতিরোধী জাত ( Resistant variety) চাষের মাধ্যমে দমন: রোগ প্রতিরোধী জাতের ফসল চাষ করে পোকা মাকড়ের আক্রমণ বহুলাংশে রোধ করা যায়। যেমন- আই আর- ২০, ব্রি ধান-৫, ব্রিধান-৩৩, বিআর-৩১, বিআর-৬, চান্দিনা জাতগুলো ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রোপণ করলে বাদামি গাছ ফড়িং এর আক্রমণ থেকে ধানের জমি রক্ষা করা সম্ভব। বিআর-১, ১০, ১১ ও ১২ মাজরা পোকা সহনশীল জাত হিসাবে চিহ্নিত (সুত্র: আধুনিক ধানের চাষ: ব্রি)।
২. রোদ শুকানো জমি চাষ করে আলগা অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা রোেদ শুকাতে দিলে অনেক পোকা মারা যায়।
৩, , গভীরভাবে চাষ: গভীর ভাবে চাষ দিলে পোকা উপরে ওঠে আসে । তারপর রোেদ শুকিয়ে মারা যায় বা পাখি খেয়ে নেয় ।
৪. মুড়িয়ে ফসল কাটা: ধান কাটার পর যদি অবশিষ্ট অংশ বেশি থাকে। তবে তার মধ্যে মাজরা পোকা, লেদা পোকার পুত্তলী আশ্রয় নেয় ।তাই মুড়িয়ে ফসল কাটতে হবে যাতে পোকা আশ্রয় নিতে না পারে ।
৫. পর্যায়ক্রমে ফসলের চাষ: একই জমিতে একই ফসল প্রতি বছর আবাদ করলে সে ফসলে পোকার আক্রমণ বেড়ে যায় । কিন্তু যদি পর্যায়ক্রমে ফসলের চাষ করা হয় যেমন- কলার পরে পেঁপে বা আনারস এতে পোকার আক্রমণ কমে যায় । ধানের ক্ষেতে পাট বা গম ইত্যাদি ।
৬. পানি ব্যবস্থাপনা: পানি সেচ দিয়ে উড়চুঙ্গা, শীষকাটা লেদা পোকা ইত্যাদি পোকা মারা যায় । আবার পানি সরিয়ে দিয়ে ধানের জমি হতে চুঙ্গি ও ঘাস ফড়িং এর আক্রমণ কমানো বা রোধ করা যায় ।
৭. আগাছা মুক্ত জমি: আগাছা পাকামাকড় ও রোগবালাই এর আশ্রয় স্থল এবং বংশবিস্তারের মাধ্যম আগাছা মুক্ত রাখার মাধ্যমে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমানো যায় ।
গ. রাসায়নিক দমন (Chemical Control)
পোকা মাকড় এবং রোগবালাই দমন পদ্ধতির মধ্যে রাসায়নিক দমন হলো সর্বশেষ বহুল ব্যবহৃত দমন পদ্ধতি । বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এ পদ্ধতির প্রয়োগ না করাই ভালো। এ পদ্ধতি তখনই ব্যবহৃত হয়, যখন অন্য কোন উপায়ে পোকা দমন সম্ভব নয় । এতে করে মাটিতে বসবাসকারী উপকারী জীবাণুর বিশেষ ক্ষতি হয়। রাসায়ি নক পদ্ধতি কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে কীটনাশকের সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি ও সময় জানা প্রয়োজন । এ দমন পদ্ধতিতে ডায়াজিনন, সুমিথিয়ন, সেভিন, ফুরাডান, ফাইফানন ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্য, এলটুসিড, ডিমিলিন ইত্যাদি কৃত্রিম হরমোন, নিম, বিষকাঁঠালী, নিশিন্দা ইত্যাদি ভেষজ বিষ হিসাবে পোকা দমনে ব্যবহার হয় । রাসায়নিক বালাইগুলো ব্যবহারের পূর্বে নিমের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে ।
(i) ফসলে কী ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে তা পরীক্ষা করা
(ii) ওষুধ ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে দমন করা সম্ভব কিনা যাচাই করা
(iii) সঠিক বা অনুমোদিত সর্বনিম্ন মাত্রায় প্রথম বার বালাইনাশক প্রয়োগ
(iv) সঠিক সময়ে সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি প্রয়োগ করা
(v) ফসলের উপকারী পোকামাকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখা
(vi) ফসলের আর্থিক ক্ষতির নিম্নতম পর্যায় অতিক্রম করলেই কেবল প্রয়োগ করা ইত্যাদি
ঘ. জৈবিক দমন (Biological Control); এই পদ্ধতিতে পোকার প্রাকৃতিক শর্তসমুহ যেমন- পরভোজী, পরজীবী এবং রোগজীবাণু কৃত্রিম উপায়ে বৃদ্ধি করে আক্রান্ত শস্য ক্ষেতে ছেড়ে দিয়ে দমন করা হয় । অর্থাৎ ফসলের মাঠে/বাগানে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গা সমূহকে বিভিন্ন প্রকার রাগজীবাণু, পরভোজী ও পরবাসী কীটপতঙ্গ, পোকা খাদক পাখি, ব্যাঙ, ইত্যাদি উপকারী জীব দ্বারা দমন করার পদ্ধতিতে জৈবিক দমন পদ্ধতি বলে । জৈবিক দমন পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ :
(i) পরভোজী পোকা সংরক্ষণ: যে সব পোকা অন্য পোকাকে খেয়ে বেঁচে থাকে তাদেরকে পরভোজী পোকা বলে। এদের মধ্যে রয়েছে লেডিবার্ডবিটল, মেরিড বাগ, মাকড়সা ইত্যাদি। এরা ফসলের অনিষ্টকারী পোকা যেমন- সবুজ পাতা ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং ইত্যাদি খেতে ভালাবাসে। এছাড়া টাইগার বিটল, ড্রাগন ফ্লাই ইত্যাদি পরভোজী পোকাগুলো অন্যান্য অনিষ্টকারী পোকা খেয়ে জৈবিক দমনে সাহায্য করে। কাজেই এসব পরভোজী পোকা সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী।
(ii) প্রবাসী পোকা সংরক্ষণ: ফসলের অনিষ্টকারী পোকার সাথে টেলিনমাস, ব্রাকনিড ইত্যাদি কতগুলো পরবাসী পোকা বাস করে । ব্রাকনিড হল ধানের পামরি পোকার এবং টেলিনমাস হল হলুদ মাজরা পোকার ডিমের প্যারাসাইট । এরা আগষ্ট হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৬০ থেকে ১০০ ভাগ পোকার ডিম নষ্ট করে ।
(iii) পাখি বসার ডাল: শালিক, ময়না, দোয়েল ইত্যাদি পাখি পোকা খায় । ক্ষেতের মধ্যে গাছের ডাল বা বাঁশের আগা ইত্যাদি পুঁতে দিয়ে পাখি বসার সুযোগ করে দিলে বিভিন্ন অনিষ্টকারী কীটপতঙ্গ দমনে সাহায্য করে । নির্দিষ্ট দূরত্বে ধৈঞ্চা লাগিয়েও পাখি বসার সুযোগ করে দেয়া যায় ।
(iv) মাছ ও হাঁসের চাষ: বোরো ও রোপা আমন ধানের ক্ষেতে মাগুর, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছের চাষ করলে মাছ পোকা খেয়ে ধানের উপকার করে। আবার ধানের জমিতে হাঁস ছাড়লে জমির পোকা খেয়ে হাঁস ধানের উপকার করে ।
(v) ব্যাঙঃ ফসলের ক্ষেতে বিশেষ করে ধানের জমিতে ব্যাঙ ছেড়ে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে ব্যাঙ পোকামাকড় ধরে খায়।
(ঙ) কৌশিক ভাবে দমন: গামা রশ্মি প্রয়োগে কীট পতঙ্গের প্রজনন ক্ষমতা রহিত করে এবং পোকার সংখ্যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এ পদ্ধতিতে পুরুষ পাকাগুলোকে গামা রশির মাধ্যমে বন্ধা করে স্ত্রী পোকাগুলোর সহিত স্বাভাবিক যৌন মিলনের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় । এদের মিলনের ফলে সব ডিমই বা হয় এবং বাচ্চা হয় না ।
(চ) আইনগত নিয়ন্ত্রণ: কোন ক্ষতিকর পোকা কোন দেশ বা অঞ্চলে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইনগত ভাবে বাধা প্রদান করা হয়। আক্রান্ত গাছের অংশ ও বীজ এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে চলাচলে আইনগত বিধিনিষেধ আরোপ করে অনেক পোকা ও রোগের ব্যাপক বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
যান্ত্রিক পোকা দমনের পদ্ধতি ও উপকারিতা
যান্ত্রিক পদ্ধতির উপকারিতা
১. পরিবেশ দূষণ হ্রাসে সহায়তা করে বা কমিয়ে আনে ।
২. অল্প খরচে সামান্য কিছু উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাকার বংশ প্রাথমিক অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
৩. এই পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব, কোন রকম দূষণ সৃষ্টি না করে পোকা দমন করা যায় ।
৪. এই পদ্ধতি কম ব্যয় বহুল
৫. কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয়। কম খরচে বেশি ফলন পেতে সহায়তা করে ।
৬, অল্পতেই কৃষককে এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ সম্পর্কে সেখানে যায় ।
৭. উপকারী পোকা মাকড়, মাছ, ব্যাঙ, পশুপাখি ইত্যাদির সংরক্ষনে সহায়তা
৮. প্রাকৃতিক ভাবে বিদ্যমান জৈবিক ভারসাম্যের কোন ক্ষতি করে না
৯. ক্ষতিকর বালাই নাশকের ব্যবহার কমিয়ে কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় করে ।
পোকাদমনে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার উপকারিতা
সমন্বিত বালাই দমনের বহুবিধ সুবিধার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. উপকারী পোকামাকড়, মাছ, ব্যাঙ, পশু-পাখি প্রভৃতি সংরক্ষণ করা যায়
২. বালাইনাশকের যুক্তিসংগত ব্যবহার নিশ্চিত করা, যাতে করে উৎপাদন খরচ কমে যায়
৩. ক্ষতিকারক পোকা মাকড়, বালাইনাশক সহনশীলতা অর্জন করার সুযোগ পায় না
৪. বালাই নাশ ক্রিয়া রোধ করা। এতে করে বালাইনাশক হজেই এড়ানো যায় ।
৫. বালাইয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা কমে যায় ।
৬. পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় ।
৭. কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা যায় ।
৮. জনস্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
৯. ফসল সংরক্ষণ খরচ কমিয়ে আনা যায় ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। সারা বিশ্বে কত প্রজাতির পোকা মাকড় ফল ও ফল গাছের অনিষ্ট করে থাকে ?
২। পোকা মাকড়ের প্রাকৃতিক দমন বলতে কী বোঝায় ?
৩। কাঁঠালের ফল ছিদ্রকারী পোকার নাম কী ?
৪ । পোকা দমনে যান্ত্রিক পদ্ধতির উপকারীতা কী ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। আম ছিদ্রকারী পোকার অপর নাম কী ? এ পোকা দমনের উপায় বর্ণনা কর ।
২। কলার পাতা ও ফলের বিটলের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
৩। নারিকেলের গল্ডার পোকার অপর নাম কী ? এ পোকাকে গন্ডার পোকা বলা হয় কেন ? এ পোকা দমনের উপায়গুলো লেখ ।
৪ । পোকা দমনের বিভিন্ন পদ্ধতির নাম লেখ ।
৫ । প্রাকৃতিক দমন ও কৃত্রিম দমনের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
৬। যান্ত্রিক ও জৈবিক পদ্ধতিতে পোকা দমনের উপকারিতা লেখ ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কলার পাতা ও ফলের বিটল কোন অবস্থায় কলা গাছের ক্ষতি করে । এ পোকার ক্ষতির নমুনা ও দমনের উপায় সংক্ষেপে বর্ণনা কর ।
২। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পোকা দমন কৌশলগুলার বর্ণনা কর ।
৩। জৈবিক উপায়ে পোকা দমন পদ্ধতির বিবরণ দাও ।
৪ । ফল ও ফল গাছে পাকার আক্রমণের ধরন দেখে আম, কাঁঠাল কলা, নারিকেল ও পেয়ারার ২টি করে প্রধান পোকা শনাক্ত করার পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
৫ । সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝায় ? এর উপকারিতা বা সুবিধাগুলো লেখ ।
আরও দেখুন...