এই বিভাগ অধ্যয়ন করে আমরা -
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্যের পরই বস্ত্রের স্থান। সৃষ্টির আদিতে মানুষের লজ্জা নিবারণের জন্য কোনো বস্ত্রের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ লজ্জা ও শীত-তাপ থেকে আত্মরক্ষা ছাড়াও নানাবিধ প্রয়োজনে বস্ত্র পরিচ্ছদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করল। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে রুচির পরিবর্তন হওয়ায় বস্ত্র পরিচ্ছদেও নানা বৈচিত্র্যতা দেখা দিয়েছে। মানুষ তার প্রয়োজনে নানা রকম তন্তু আবিষ্কার করেছে এবং করছে। বস্ত্র তৈরি হয় মূলত সুতা থেকে, এই সুতা আবার তৈরি হয় আঁশ বা তন্তু হতে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় আঁশকে সুতায় পরিণত করা হয়। তবে এটা জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সব রকম আঁশ বা তন্তু বত্র বয়নের উপযোগী নয়। এই বয়ন তন্তুর উৎস প্রকৃতি হতে পারে আবার কৃত্রিমও হতে পারে । প্রাথমিক পর্যায়ে বস্ত্র তৈরির উপকরণ ছিল সুতি, লিনেন, রেশম ও পশম তন্তু । পরবর্তীতে রেয়ন, নাইলন, ভিনিয়ন, সরণ ইত্যাদি নামের অনেক কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিটি বয়ন তন্তুর বৈশিষ্ট্য সাধারণত ভিন্ন হয়। তাই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট বয়নতন্ত্র ব্যবহার করতে হলে সেই তন্তুটির বৈশিষ্ট্য জানা ও শনাক্ত করা প্রয়োজন হয় ।
সাধারণত বস্ত্র তৈরি হয় সুতা থেকে। তাই সুতাকে বস্ত্রের ক্ষুদ্রতম মৌলিক একক বলে মনে করা হতো। কিন্তু এ ধরনের সুতা আবার কতগুলো আঁশ বা তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত। তন্তু বলতে যে কোনো প্রকার আঁশ বোঝালেও বস্ত্রশিল্পে তন্তু বলতে বয়ন তন্তুকেই বোঝানো হয়ে থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায়, বস্ত্র তৈরির কাজে যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তাকেই বয়ন তন্তু বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, বস্ত্রের মৌলিক ক্ষুদ্রতম এককই বয়ন তন্তু । ল্যাটিন শব্দ টেক্সো (Texo) থেকে টেক্সটাইল (Textile) শব্দের উৎপত্তি। টেক্সো কথাটির অর্থ হচ্ছে— বুনন করা। এ জন্য বস্ত্রের তন্তুকে বয়ন তন্তু বা টেক্সটাইল ফাইবার বলা হয়।
সাধারণত যেসব গুণ থাকলে কোনো আঁশ বা তন্তুকে বয়ন তন্তু হিসেবে গণ্য করা যায় সেসব বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে কিছু আছে মুখ্য বা প্রধান এবং কিছু রয়েছে গৌণ বা মাধ্যমিক গুণাবলি। প্রধান বা মুখ্য গুণাবলিগুলো হলো দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত, তন্তুর অন্তর্নিহিত শক্তি, নমনীয়তা, সমরূপতা, আসঞ্জনপ্রবণ ইত্যাদি। অন্যদিকে গৌণ বা মাধ্যমিক গুণাবলিগুলোর মধ্যে রয়েছে— রেসিলিয়েন্সি, উজ্জ্বলতা, স্থিতিস্থাপকতা, বিশোষণ, তাপ পরিবাহিতা, সংকোচন ইত্যাদি। নিচে বয়ন তন্তুর গুণাবলি উল্লেখ করা হলো-
মূখ্য গুণাবলি
১। দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত (Length to width ratio)–বয়ন তন্তুর ব্যাসের চেয়ে দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে বড় হতে হবে। অধিকাংশ প্রাকৃতিক তন্তুতেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সাধারণত তন্তুর ব্যাস যত সূক্ষ্ম হবে, তন্তু তত নমনীয় ও মসৃণ হবে
২। তন্তুর অন্তর্নিহিত শক্তি (Tenacity) - বয়ন তন্তুর পর্যাপ্ত শক্তি থাকতে হবে। ন্যূনতম শক্তি না থাকলে তন্তুকে সুতা বা বস্ত্রে পরিণত করা সম্ভব হবে না। প্রকৃতপক্ষে তন্তু কতোটুকু টান সহ্য করতে পারে তা দিয়েই তন্তুর শক্তি প্রকাশ করা হয়।
৩। নমনীয়তা (Flexibility) - বয়ন তন্তুর তৃতীয় মুখ্য গুণাবলি হচ্ছে নমনীয়তা। যেহেতু সুতা ও ব ভাঁজ করতে হয়, তাই বস্ত্রে ব্যবহৃত তন্তুকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে। নমনীয়তার জন্যই বয়নতন্তু দিয়ে সুতা পাকানো যায় ৷
৪। আসঞ্জনপ্রবণ (Cohesiveness) - এ বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট ছোট আঁশগুলো একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। যার ফলে তন্তু থেকে উৎপাদিত সুতা বস্ত্র শিল্পে ব্যবহৃত হয় ।
গৌণ গুণাবলি –
১। রেসিলিয়েন্সি (Resiliency) - তন্তুকে ভাঁজ করা, মোচড়ানো বা কুঁচকানোর পর আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাকে রেসিলিয়েন্সি বলে। বস্ত্রের কুঞ্চন প্রতিরোধের জন্য তন্তুর এ গুণটি থাকা উচিত। যেসব বস্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা ভালো তাদের রেসিলিয়েন্সিও ভালো হয় ৷
২। উজ্জ্বলতা (Luster) - একটি তন্তুর নিজস্ব চাকচিক্য, মসৃণ ও দীপ্তিময় ভাবই তার ঔজ্জ্বল্য। উজ্জ্বলতা বয়ন তন্তুর একটি প্রয়োজনীয় গুণ। রেশম তন্তুর স্বাভাবিক চাকচিক্যের কারণেই একে তন্তুর রানী হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকাল বিভিন্ন ধরনের তন্তুতে সমাপ্তিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকচিক্য সৃষ্টি করা যায়।
৩। বিশোষণ (Absorbency) - যেসব তন্তুর আর্দ্রতা শোষণ ক্ষমতা ভালো, তাতে সহজেই রং ও ফিনিশ প্রয়োগ করা যায়। এরূপ তন্তুর বস্ত্র সহজে ধোয়া যায় এবং পরিধানের জন্য সুবিধাজনক হয়। যেসব বস্ত্রের বিশোষণ ক্ষমতা কম, তাদের তাড়াতাড়ি ধুয়ে শুকিয়ে নেয়া যায় ৷
৪। স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity) - বয়ন তন্তুকে স্থিতিস্থাপক হতে হয় অর্থাৎ তন্তু টানলে প্রসারিত হবে এবং টান সরিয়ে নিলে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
৫। সমরূপতা (Uniformity) - সুতা তৈরিতে একই দৈর্ঘ্য-প্রস্থের নমনীয়, পাক বা মোচড় দেওয়ার - ক্ষমতাসম্পন্ন তন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম তন্তুর মতো সমরূপ প্রাকৃতিক তন্তু পাওয়া সহজ নয়। তবে এই বৈশিষ্ট্যের ফলে তৈরি সুতার মান ভালো হয় এবং সুতা সমান ও মসৃণ হয় ৷
৬। তাপ পরিবাহিতা (Heat conductivity) - তাপ পরিবাহক হিসেবে ফ্ল্যাক্স তন্তুর স্থান সবার উপরে। তুলাও ভালো তাপ পরিবাহক হওয়ায় গরমকালে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়। প্রোটিন তন্তু তাপ কুপরিবাহী। তাই সিল্ক ও উল শীতকালের পোশাকের জন্য উপযোগী।
কাজ - বয়ন তন্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণাবলি উল্লেখ করে দুটি চার্ট তৈরি কর।
বহু বছর আগে থেকে বয়ন তন্তুর শ্রেণিবিভাগ বিভিন্নভাবে হয়ে এসেছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে শ্রেণিবিন্যাসের ধরনও বদল হয়েছে। প্রথম দিকের শ্রেণিবিভাগ ছিল বেশ সহজ সরল। যেমন- প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ, খনিজ ইত্যাদি। কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারের ফলে আগের শ্রেণিবিভাগ অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে একই গুণসম্পন্ন তত্ত্বদের এক দলে ফেলে শ্রেণিবিভাগ করার প্রবণতা দেখা দেয়। এর ফলে জনগণ একই শ্রেণিভূক্ত তন্তুগুলোর গুণাগুণ, যত্ন ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়।
উৎস অনুযায়ী বয়ন তন্তুকে প্রধানত : দুইভাগে ভাগ করা যায়-১। প্রাকৃতিক তন্তু এবং ২। কৃত্রিম তন্তু
১। প্রাকৃতিক তন্তু (Natural fiber )- প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যেও শ্রেণিভেদ রয়েছে। যেমন:-
(ক) উদ্ভিজ্জ তন্তু (Vegetable fibers) - উদ্ভিজ্জ তন্তু উদ্ভিজ্জ জগৎ থেকে পাওয়া যায়, যা সেলুলোজ দিয়ে গঠিত। এরা সেলুলোজ ভিত্তিক হওয়ায় এদের সেলুলোজিক তন্তু বলে। এরা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে—
(খ) প্রাণিজ তন্তু (Animal fibers) - প্রাণিজ তন্তু প্রাণী বা পোকামাকড় থেকে পাওয়া যায়। এদের মূল
উপাদান প্রোটিন, তাই এদের প্রোটিন তন্তু বলেও গণ্য করা হয়। যেমন-
(গ) খনিজ তন্তু (Mineral fibers) - মাটির নিচে বিভিন্ন ধরনের কঠিন শিলার স্তরে স্তরে এক প্রকার আঁশ জমা হয়, যা এসবেসটস নামক বয়ন তন্তু হিসেবে স্বীকৃত। এরা আয়রন এবং এরূপ অন্যান্য ধাতু যেমন- সোডিয়াম, এলুমিনিয়ম বা ম্যাগনেশিয়ামের জটিল সিলিকেট হয়। এরূপ তন্তু এসিড, মরিচিকা ও আগুণ প্রতিরোধক্ষম।
(ঘ) প্রাকৃতিক রাবার (Natural rubber) - প্রাকৃতিক রাবারকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংকোচন করে বিভিন্ন প্রকার তন্তু ও সুতা তৈরি করা হয়।
প্রাকৃতিক তন্তুর শ্রেণিবিভাগ
প্রাকৃতিক তন্তু
উদ্ভিজ্জ তন্তু
প্রাণিজ তন্তু
খনিজ তন্তু
বীজ তন্তু
বৃক্ষ কোষ তন্তু
পল্লব তন্তু
বাদামের খোলস তন্তু
তুলা,
ফ্যাক্স, পাট, হ্যাম্প, র্যামি
সিসাল, ম্যানিলা
নারকেলের ছোবড়া
এসবেসটস
প্রাণিজ নিঃসরণ প্রাণিজ লোম
উল
রাবার তন্তু
প্রাকৃতিক রাবার
ক্যাপক
রেশম
২। কৃত্রিম তন্তু (Man made fiber) - যে সব তন্তু প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়নি, মানুষ বিভিন্ন পদার্থ বা রাসায়নিক দ্রব্যাদির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে উদ্ভাবন ঘটিয়েছে, তাদের কৃত্রিম তন্তু বলে। কৃত্রিম তন্তুগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে কারখানায় তৈরি করা হয়। এসব তন্তুর কাঁচামাল প্রাকৃতিক বা রাসায়নিক হতে পারে। এরূপ তন্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাই এদের খাটো বা লম্বা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। উৎস ও রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম তন্তুগুলোকে ছয়ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
ক)সেলুলোজিক তত্ত্ব - ছোট তুলার আঁশ, বাঁশের বা কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক সেলুলোজ ভিত্তিক পদার্থের সাথে রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃত্রিম সেলুলোজিক তন্তু উৎপাদন করা হয় ৷ যেমন – কিউপ্রামোনিয়াম রেয়ন, ভিসকোস রেয়ন ইত্যাদি।
খ)পরিবর্তিত সেলুলোজিক তন্তু - প্রাকৃতিক সেলুলোজ ভিত্তিক পদার্থের সাথে রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সেলুলোজের গঠন পরিবর্তন করে এ ধরনের তন্তু উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সেলুলোজ বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে না। যেমন- এসিটেট, ট্রাই— এসিটেট ইত্যাদি।
গ) সাংশ্লেষিক তন্তু – প্রাকৃতিকভাবে সেলুলোজভিত্তিক নয় এমন পদার্থ যেমন-কার্বন, হাইড্রোজেন, -- অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদির সাথে রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া ঘটিয়ে যখন এমন পদার্থ সৃষ্টি করা যায়, যা তন্তুর গুণাবলি প্রকাশ করে- সেগুলোকে সাংশ্লেষিক তন্তু বলে। নানা প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান যেমন— কয়লা, বায়ু, পানি, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি থেকে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে আলাদা করে নিয়ে আবার বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একত্র করে এরূপ তন্তু উৎপাদন করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে- নাইলন, পলিয়েস্টার, একরাইলিক, ভিনিয়ন, সরন ইত্যাদি তন্তু ।
ঘ) প্রোটিন তন্তু - ধান, গম, প্রভৃতি শস্য এবং দুধের প্রোটিনকে রাসায়নিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে কৃত্রিম প্রোটিন তন্তুতে রূপান্তরিত করা যায়। তবে বাণিজ্যিক ভাবে এরা সফলতা লাভ করে নি। যেমন- এজলন, ক্যাসিন ইত্যাদি ।
ঙ) খনিজ তন্তু – বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এককভাবে বা সংমিশ্রণ অবস্থায় প্রক্রিয়াজাত করে খনিজতন্তু তৈরি - করা যায়। যেমন— সিলিকা, লাইমস্টোন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান একত্র করে গঠন করা হয় গ্লাস তন্তু ।
চ) ধাতব তন্তু – এলুমিনিয়ম, রূপা, সোনা প্রভৃতি ধাতুকে খনি থেকে বিভিন্ন অপদ্রব্যের সাথে উত্তোলন করার পর পরিশুদ্ধ করে নানা উপায়ে কৃত্রিম ধাতব তন্তু তৈরি করা হয়।
ছ)অন্যান্য কৃত্রিম তন্তু – এলজিনেট, টেফলন ইত্যাদিও মানুষ দ্বারা তৈরি তন্তু । সমুদ্র শৈবাল থেকে প্রাপ্ত এলজিনেট তন্তু পানিতে দ্রবীভূত হওয়ায় এরূপ তন্তুর গুরূত্ব তুলনামূলকভাবে কম ।
প্রাথমিক পর্যায়ে বয়ন তন্তুর জন্য প্রাকৃতিক উৎস ও যোগানের উপর নির্ভর করতে হলেও ঊনবিংশ শতাব্দির প্রারম্ভে মানুষ কৃত্রিম তন্তুর আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। দেখা গেছে, ১৯০০ সাল থেকে কৃত্রিম তন্তুর উদ্ভাবন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৩০ সালের পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা আরও ডজনখানেক কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কারে সফল হন
কাজ – প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তন্তুর শ্রেণিবিভাগ পোষ্টারের মাধ্যমে উপস্থাপন কর।
তুলা তন্তুর ব্যবহার পোশাক পরিচ্ছদে তুলা তন্তু ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কেননা এর রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার ক্ষমতা। এই তন্তুর মূল্য তুলনামূলকভাবে কম, তাই এই তন্তুর তৈরি বস্ত্র-বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, মশারি, লেপ, সোফার কাপড়, ন্যাপকিন, ঘর সাজানোর সামগ্রী ইত্যাদি কম ব্যয়বহুল হয়। এ ছাড়া এর অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক। কেননা এর যত্ন নেওয়া সহজ। পরিধেয় গুণাবলি ভালো হওয়ায় ভোক্তার কাছে এর চাহিদাও বেশি। সুতি বস্ত্র বেশ তাপ সহ্য করতে পারে, এজন্য ইস্ত্রি করার সময় বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় না। গরম পানি দিয়ে প্রয়োজনে সিদ্ধও করা যায়। সুতি বস্ত্র মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সব ঋতুতে ব্যবহার করা যায়। হালকা ওজনের বস্ত্রও প্রয়োজনে এ তন্তু দিয়ে তৈরি করা যায়। মূলত আরামের জন্যই সুতি বস্ত্র আজ তন্তুর রাজা হিসেবে সমাদৃত ।
অনেকদিন যাবৎ সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকলে সুতি বস্ত্র হলুদ রং ধারণ করে এবং দুর্বল হয়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রাখলে তিলা পড়ে। এই তন্তু উচ্চ তাপ সহ্য করতে পারে, ফুটন্ত পানিতে রাখলে এই তন্তুর কোনো ক্ষতি হয় না। ক্ষার দিয়ে সুতি বস্ত্র ধোয়া যায়। শক্তিশালী এসিডে এরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মৃদু এসিডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ব্লিচিং করা যায়, তবে ব্লিচিংয়ের ফলে কাপড়ের আয়ু হ্রাস পায়। তুলা তন্তুর রং ধারণ ক্ষমতা ভালো, পানিতে ভিজলে তুলা তন্তুর শক্তি বৃদ্ধি পায়, তাই ধোয়ার সময় চাপ ও ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে।
ফ্ল্যাক্স তন্তুর ব্যবহার – ফ্ল্যাক্স খুব শক্তিশালী তন্তু । এটা দিয়ে সূক্ষ্ম সুতা ও মসৃণ লিনেন বস্ত্র তৈরি করা যায়, যা খুব মজবুত ও ঠান্ডা। এরূপ বস্ত্র পরিধানে আরাম বোধ হয়, এগুলো সহজেই ধোয়া যায়। আকর্ষণীয়, অভিজাত, সমতলভাবে অবস্থান করে এবং সুন্দরভাবে ঝুলে থাকে- তাই টেবিল কভারের জন্যও সহজেই নির্বাচন করা যায়। রাসায়নিক দ্রব্য ও ধোয়ার উপকরণের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। সূর্যালোকে নষ্ট হয় না। পরিধেয় ও গৃহস্থালী বস্ত্র হিসেবে এর জনপ্রিয়তা অনেক। তন্তুর গঠনগত কারণে সহজে ময়লা হয় না । পানি শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় এ তন্তুর তৈরি লিনেন বত্র গরমের দিনের জন্য আরামদায়ক। সুতির বস্ত্রের তুলনায় লিনেন কত্র বেশি টেকসই হয় ৷
কাজ – তুলা এবং ফ্ল্যাক্স তন্তুর ব্যবহার সম্পর্কে লেখ ।
রেশম তন্তুর ব্যবহার- রেশমকে তন্তুর রানী বলা হয়। এই তন্তু নরম, মসৃণ ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বিলাসবহুল ও ফ্যাশন বহুল বত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। রেশমি বস্ত্র সুতি ও লিনেনের চেয়ে ওজনে হালকা। এর বহুমুখী ব্যবহার উপযোগিতার কারণে শার্ট, ব্লাউজ অর্থাৎ ছেলে ও মেয়েদের পোশাক, সজ্জামূলক উপকরণের উপযোগী বস্ত্র ইত্যাদি এ তন্তু থেকে তৈরি করা হয়। স্থিতিস্থাপকতার জন্য এরূপ বস্ত্র দিয়ে নানা ধরনের কুঁচি, পিট, ঝালর প্রভৃতি ডিজাইনযুক্ত পোশাক সহজেই তৈরি করা যায়। রেশমি বস্ত্র দামি ও যত্নসহকারে ব্যবহার করলে অনেক দিন স্থায়ী হয় ।
পশম তন্তুর ব্যবহার- পশম তাপ কুপরিবাহী। তাই পশমিবস্ত্র পরিধানে গরম অনুভব হয়। শীতবস্ত্র হিসেবে - পশমের বহুবিধ ব্যবহার দেখা যায়। যেমন- সোয়েটার, মোজা, মাফলার, কোট, প্যান্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি। এ ছাড়া পশম দিয়ে নানা ধরনের কম্বল, শাল, কার্পেট ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। ধোয়া ও ইস্ত্রি করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পশমি বস্ত্র বেশ দামি। যত্নসহকারে ব্যবহার করলে অনেকদিন ব্যবহার করা যায় এবং টেকসই হয়।
কাজ – রেশন ও পশম তন্তুর ব্যবহার উল্লেখ কর।
রেয়ন তন্তুর ব্যবহার - অন্যান্য বস্ত্রের তুলনায় রেয়ন সস্তা। বিভিন্ন মূল্যের রেয়ন বস্ত্র বাজারে পাওয়া যায় বলে এরূপ বস্ত্র সহজেই অনেকে কিনতে পারে। রেয়ন তন্তুর একটি গুণ হলো এর আকর্ষণীয় রূপ। বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন মাত্রার এরূপ উজ্জ্বল তন্তু বাজারে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বহুমুখী ব্যবহারের জন্য এই তন্তু বেশ জনপ্রিয়। এরূপ তন্তুর নির্মিত কার্পেট, পর্দা ইত্যাদি ঘরের নতুনত্ব আনয়ন করে। রেয়ন তন্তুর বত্ৰ মজবুত, উজ্জ্বল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে রেয়ন হতে নানা রকম অভিজাত বস্ত্র প্রস্তুত করা যায়। এরূপ বস্ত্র সহজে ধোয়া ও যত্ন নেওয়া যায়। এই তন্তুর পানি শোষণ ক্ষমতা কম বলে দ্রুত শুকায়।
নাইলনের ব্যবহার- নাইলনের বত্র মজবুত ও ওজনে হালকা হওয়ায় এর বহুমূখী ব্যবহার দেখা যায়। টেকসই ও স্থিতিস্থাপক বলে অন্তর্বাস, মশারি, বিছানার চাদর, আসবাবপত্রের ঢাকনা, ছাতার কাপড়, ফিতা, চুলের নেট, লেস, সুতা, মাছ ধরার জাল, চামড়া জাতীয় সামগ্রীর আস্তরণ, কার্পেট, গলফ খেলার ব্যাগ ইত্যাদি তৈরিতে নাইলনের সুতা ও বস্ত্র ব্যবহৃত হয়। নাইলনের বস্ত্র সহজেই ধোয়া ও শুকানো যায়, এজন্য বর্ষার দিনে বেশি ব্যবহার করা হয়। নাইলনের তন্তু অন্যান্য তন্তুর সমন্বয়ে নানা ধরনের গুণসম্পন্ন বস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যেমন— নাইলন—সুতি, নাইলন—পশম, নাইলন— রেয়ন ইত্যাদি। ময়লার প্রতি আকর্ষণ কম বলে সহজে ময়লা ধরে না। বেশি ইস্ত্রি করারও দরকার হয় না।
কাজ— রেয়ন ও নাইলন তন্তুর ব্যবহার পোষ্টারের মাধ্যমে উল্লেখ কর ।
বাজারে নানা ধরনের প্রাকৃতিক, কৃত্রিম ও মিশ্র তন্তুর বস্ত্র দেখা যায়। কোনো একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে একটি কাপড়ের তন্তুর প্রকৃতি সঠিকভাবে নির্ণয় করা কষ্টকর। একাধিক পরীক্ষার সাহায্যেই তা স্থির করতে হয়। সাধারণত যেসব পরীক্ষার সাহায্যে তন্তুর প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয় তাকেই তন্তু শনাক্তকরণ বলে। তন্তু চেনার জন্য যেসব পরীক্ষার আশ্রয় নিতে হয় সেগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন—
ক) তন্তুর ভৌত পরীক্ষা (Physical test ) - ভৌত পরীক্ষাগুলো ঘরে বসেই করা যায়। এগুলো অপ্ৰযুক্তিগত বা non technical হওয়ায় এসব পরীক্ষার উপর খুব বেশি নির্ভর করা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তন্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় মাত্র, সঠিকভাবে তন্তুর প্রকৃতি নির্ধারণ করা যায় না ।
ভৌত পরীক্ষাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—
১। স্পর্শ করে পরীক্ষা – অনেক দিনের অভিজ্ঞতার কারণে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হাত দিয়ে স্পর্শ করে বিভিন্ন - প্রকার তন্তুর তৈরি কাপড় শনাক্ত করতে পারেন। যেমন- সুতির কাপড় হাত দিয়ে ঘষলে ঠান্ডা ও নরম অনুভূতি জাগে। লিনেন কাপড় সুতি কাপড়ের তুলনায় অনেক ঠান্ডা ও মসৃণ মনে হয়। তবে পশমি বস্ত্ৰ গরম ও নমনীয় এবং রেশমি বস্ত্র গরম ও মসৃণ মনে হয়। দুই বা ততোধিক তন্তু দিয়ে মিশ্রিত তন্তুর কাপড় এ পদ্ধতিতে শনাক্ত করা কঠিন।
২। চাক্ষুস পরীক্ষা – ভৌত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ পরীক্ষা হলো চাক্ষুস পর্যবেক্ষণ। তন্তুর দৈর্ঘ্য, - উজ্জ্বলতা ইত্যাদি দেখে তন্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
৩। ভাঁজ করে পরীক্ষা- একটি বস্ত্র দুই ভাঁজ করে আঙ্গুলের সাহায্যে চেপে ধরতে হবে। বস্ত্রটি যদি ফ্যাক্স তন্তুর হয় তাহলে ভাঁজের দাগ বেশ সুস্পষ্ট হবে এবং এ দাগ সহজে মিলে যাবে না। সুতির বস্ত্রেও ভাঁজের দাগ পড়বে কিন্তু এ দাগ লিনেনের মতো এত সুস্পষ্ট হবে না। রেশমি ও পশমি বস্ত্রে এ পরীক্ষায় কোনো ভাঁজ পড়বে না। কাজেই এ পরীক্ষার সাহায্যে সুতি- লিনেন ও রেশমি- পশমি বস্ত্রের পার্থক্য শনাক্ত করা যায় ৷
৪। পাক খুলে পরীক্ষা – বস্ত্র থেকে কয়েকটি সুতা বের করে তাদের পাক খুলে ফেলতে হবে। বস্ত্ৰটি পশম তন্তুর হলে পশমি সুতায় পশমের স্বাভাবিক ভাঁজ বা ঢেউ দেখা যাবে। এ ছাড়া একটি সুতাকে ছিঁড়ে তার ছেঁড়া অংশ পরীক্ষা করেও তন্তুর উৎস শনাক্ত করা যায়। যেখানে তন্তুটি ছিঁড়ে যাবে তার সম্মুখভাগ যদি দেখতে সূঁচের মতো সরু হয় তবে তা ফ্ল্যাক্স তন্তু বুঝতে হবে। অন্যদিকে যদি সম্মুখভাগ দেখতে একটি তুলির সম্মুখভাগের মতো মোটা হয় তবে তা তুলা তন্তু বলে বুঝতে হবে।
৫। ভিজিয়ে পরীক্ষা – এ পরীক্ষার সাহায্যে ফ্ল্যাক্স ও নাইলন তন্তু সহজেই চেনা যায়। কেননা লিনেন বস্ত্রের পানি শোষণ ক্ষমতা বেশ ভালো। আঙুলের সাহায্যে এক ফোঁটা পানি কোনো কাপড়ের উপর রাখার সাথে সাথে যদি পানি কাপড়ে প্রবেশ করে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তবে বুঝতে হবে কাপড়টি ফ্ল্যাক্স তন্তু দিয়ে প্রস্তুত। অন্যদিকে শোষণ ক্ষমতা না থাকার কারণে নাইলনতন্তুর বত্রে পানি প্রবেশ করবে না
৬। গরম ইস্ত্রি দিয়ে পরীক্ষা - এ পরীক্ষার মাধ্যমে কৃত্রিম তন্তুর বস্ত্র সহজেই শনাক্ত করা যায়। একটি ইস্ত্রি খুৰ গরম করে কাপড়ের উপর চেপে ধরলে যদি কাপড়টি এসিটেট, নাইলন বা ডেকোন ভৰে তা একেবারেই গলে যাবে। ফুল, ফ্যাক্স, রোষ, পশম বা জোনের হলে কাপড়ে লালচে পড়া পরবে।
৭। লেবেল দেখে পরীক্ষা- কাপড়ের গায়ে সংযুক্ত লেবেলে তন্তু সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য দেওয়া থাকে, যা দেখে একজন ক্রেতা কাপড়টি কোন ধরনের তন্তুর তৈরি সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
৮। কলগছ পুড়িয়ে পরীক্ষা - পোড়ানো পরীক্ষা একটি খুব ভালো প্রাথমিক পরীক্ষা। এ পরীক্ষার জন্য করণীয় গুলো হচ্ছে- কাপড়ের টানা সুতা যতে দুই একটা সুতা দিয়ে পাক খুলে লাগুনের শিখার ধরে প্রজননের সমুনা ও ছাই পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং ভ থেকে যে গল্প বের হয় তা লক্ষ করতে হবে। এরপর পড়েন সুতা নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করতে হবে। কুদন প্রক্রিয়ার কাপড়টি তৈরি না ফলে সুতার পরিবর্তে এক টুকরা কাপড় পোড়ানো পরীক্ষার ব্যবহার করতে হবে।
পোড়ানো পরীক্ষায় হাই
গোঁড়া পরীক্ষার ফলাফলের ত্রুটি
প্রতি হয় । না।
নাইন
আর্গুনের শিখার পে
चिकना
শিল্প
ধীরে পোড়ে এবং শেয়ার
करें
নিজেই নিচে
কেন হয়।
न
এ ছোট কালো দুটিকা সৃষ্টি হয়।
मंगदक मंगलकी ।
निण निकरे
আরও দেখুন...