বাংলাদেশের অর্থনীতি (চতুর্থ অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - | NCTB BOOK
122
122

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর কৃষিই তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। তবে শহরাঞ্চলের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যের ভূমিকাও আমাদের অর্থনীতিতে ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একটি আধুনিক রাষ্ট্রে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো খাতের গুরুত্ব অন্য খাত থেকে কম নয়। দেশকে উন্নত করতে হলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিকে সবল ও গতিশীল করে তুলতে হবে। তার জন্য কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সকলক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি করতে হবে। বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে এর কোনো বিকল্প নেই।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

১। অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যাবলির বিবরণ দিতে পারব;
২। বাংলাদেশের গ্রামের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজের ব্যাখ্যা করতে পারব;
৩। শহরের অনানুষ্ঠানিক কাজের চিত্র তুলে ধরতে পারব;
৪। জাতীয় অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক কাজের অবদান ব্যাখ্যা করতে পারব:
৫। বাংলাদেশের শিল্পের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিবরণ দিতে পারব;
৬। অর্থনীতির বিকাশে শিল্পের অবদান নির্ণয় করতে পারব;
৭। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা বর্ণনা করতে পারব;
৮। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের বিবরণ দিতে পারব;
৯। আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারব;
১০। প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ব্যাখ্যা করতে পারব;
১১। বাংলাদেশের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বর্ণনা দিতে পারব;
১২। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যা ও করণীয় ব্যাখ্যা করতে পারব।

Content added By

বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যাবলি (পাঠ ১)

497
497

অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে এমন যে-কোনো কাজ, সেবা বা বিনিময়কে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বলা হয়। আর যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেসব কাজের জন্য পূর্ব মজুরি নির্ধারিত নয়, করের আওতায় আনাও কঠিন এবং যেসব অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়, সংক্ষেপে অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম বলতে সেগুলোকেই বোঝায়। যেমন: নিজের জমি, দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ, গৃহস্থালি কর্ম, হকারি, দিনমজুরি প্রভৃতি। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রম এই অনানুষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। অতীতকাল থেকে চলে আসছে বলে অনেকে এসব কাজকে অর্থনীতির প্রথাগত খাতও বলে থাকেন।

গ্রামাঞ্চলের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী

বিশ্বের অন্য যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনানুষ্ঠানিক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামের একজন চাষি ও তার পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কাজ করেন। নিজেদের জমিতে কাজ করার জন্য তারা কোনো মজুরি পান না বা নেন না। কিন্তু তাদের সে কাজ বা পরিশ্রমের ফলে কেবল তাদের পরিবারই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রও উপকৃত হচ্ছে। দেশের মোট খাদ্য চাহিদার বড়ো অংশটা তারাই উৎপাদন করছে। এভাবে আমাদের কৃষকরা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কামার-কুমোরের কাজ, গ্রামের কুটির শিল্প, দোকান ও অন্যান্য ছোটখাটো ব্যবসাও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এসব কাজও মূল্যবান ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিককালে কৃষিসহ গ্রামীণ অর্থনীতিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও প্রথাগত বা অনানুষ্ঠানিক খাতটি এখনও প্রধান ভূমিকায় রয়েছে। জাতীয় অর্থনীতির দিক থেকে বিবেচনা করলেও এই খাতটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

শহরাঞ্চলের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী

বাংলাদেশের শহরগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন সকল শ্রেণির মানুষই বাস করে। বিত্তহীনদের মধ্যে অনেকে আবার ভাসমান বা অস্থায়ী। অর্থাৎ তাদের নিজস্ব বা স্থায়ী বাসাবাড়ি নেই। তারা বস্তি, ফুটপাত, পার্ক, রেলস্টেশন ইত্যাদি স্থানে বাস করে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা সাধারণত আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজ যেমন সরকারি ও বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে নিয়োজিত। নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনরা ছোটোখাটো দোকান, ফুটপাতে হকারি, ফেরিওয়ালা, রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালক, মুটে, মিস্ত্রি, জোগালি, কিংবা বাসাবাড়ির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এগুলোকে শহর অঞ্চলের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজ বলে গণ্য করা হয়।

অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক খাতের অবদান

গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে ও শ্রমে ধান-পাট, রবিশস্য, শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন, মাছ ধরা, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন, কুটিরশিল্প, হাটবাজারে পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে তাদের জীবিকার সংস্থানই করছে। শুধু তাই নয়, তারা দেশের অর্থনৈতিক জীবনকে সচল রাখার ক্ষেত্রেও প্রধান ভূমিকা পালন করছে। একইভাবে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী স্বল্প ও মাঝারি এমন কি উচ্চ আয়ের অনেক মানুষও অনানুষ্ঠানিক খাতের অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। এভাবে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি অনানুষ্ঠানিক খাতের উপর বেশি নির্ভরশীল। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক খাতের ভূমিকা বৃদ্ধি ও তা জোরদার হওয়ার পরও আমাদের অর্থনীতিতে প্রথাগত বা অনানুষ্ঠানিক খাতের গুরুত্ব কমেনি।

কাজ-১:
তোমার এলাকার যেকোনো একটি অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজের বিবরণ দাও। জাতীয় অর্থনীতিতে তা কীভাবে অবদান রাখে ব্যাখ্যা কর।
Content added By

বাংলাদেশের শিল্প (পাঠ ২)

94
94

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে কিছু কিছু শিল্প বা কলকারখানা গড়ে উঠতে থাকে। তার মধ্যে পাট, সুতা ও কাপড়ের কলই ছিল প্রধান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ববাংলার নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজি জুট মিলস্। পাকিস্তানি আমলে শিল্প বা কলকারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলটি শাসকদের বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। এক সময় আমাদের দেশের পাটশিল্পই ছিল প্রধান, সেই সঙ্গে ছিল চা, চিনি, সিমেন্ট, সার, চামড়া, রেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা। বর্তমানে গার্মেন্টস ও ঔষধ শিল্পেও বাংলাদেশ বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। মূলধন, উৎপাদনের পরিমাণ, কর্মী বা শ্রমিকের সংখ্যা ইত্যাদি বিচারে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:

বৃহৎ শিল্প

পাট, বস্ত্র, চিনি, সিমেন্ট, সার, রেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিদ্যুৎ প্রভৃতি বৃহৎ শিল্প। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রচুর মূলধন, দক্ষ শ্রমিক ও কারিগর, প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপকের প্রয়োজন হয়। এসব শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতাও অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়েও উৎপাদিত সামগ্রীর একটা অংশ বিদেশে রপ্তানি হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে এ ধরনের বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে এই শিল্পগুলো।

মাঝারি শিল্প

যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেড় কোটি টাকার অধিক মূলধন খাটে সেগুলোকে সাধারণত মাঝারি শিল্প বলে গণ্য করা হয়। যেমন- হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং, সিল্ক, সিরামিক, কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার প্রভৃতি। দেশের চাহিদা পূরণ ও অনেক লোকের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ ধরনের শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্ষুদ্র শিল্প

দেড় কোটি টাকার কম মূলধন খাটে যে কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাকে ক্ষুদ্র শিল্প ধরা হয়। চাল কল, ছোটো ছোট জুতা বা প্লাস্টিক কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প এর উদাহরণ।

কুটিরশিল্প

এই শিল্পে উৎপাদন ও বিপণনের কাজটি প্রধানত মালিক নিজে বা তার পরিবারের সদস্যরাই করে থাকেন। আমাদের দেশে তাঁতবস্ত্র, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ, শাড়ি বা মিষ্টির প্যাকেট, আগরবাতি ইত্যাদি কুটিরশিল্পের কয়েকটি উদাহরণ। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার ও শিল্পে অনগ্রসর একটি দেশে অসংখ্য মানুষের। কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতা অর্জনের সুযোগ করে দিয়ে। কুটিরশিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যবান অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান

নগরের বিস্তার ও মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিল্পের ভূমিকা ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধের মতো জিনিসগুলো তো বটেই; জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ছাড়া আমাদের জীবন আজ অচল। আর এগুলো আমরা কোনো না কোনো শিল্প থেকে পেয়ে থাকি। কৃষির পর দেশের বিরাটসংখ্যক মানুষের জীবিকার সংস্থানও হচ্ছে এই শিল্পখাত থেকেই। এর অভাবে দেশের বেকারত্বের হার আরও বেড়ে যেত। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এটি দেশের সামাজিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখছে। শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ মানুষকে শিক্ষা ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করছে। তাই বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার সংহত করা যেমন এই শিল্পগুলোর উন্নয়নে জরুরি তেমন শিল্পের প্রভাবে পরিবেশ দূষিত করা বন্ধ করতে সরকারের নজরদারী চালু থাকা অত্যাবশক। না হলে শিল্পায়নের সুফল পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশে শিল্পের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ একটি শিল্প সম্ভাবনাময় দেশ। এর রয়েছে বিশাল জনসম্পদ। এখানে অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। গার্মেন্টস শিল্প এর একটি বড়ো উদাহরণ। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে এককভাবে ও যৌথ অংশীদারিত্বে গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করেছে। এদেশে তৈরিপোশাক আজ বিশ্বের বাজারে সমাদৃত হচ্ছে। গার্মেন্টস ছাড়াও অন্যান্য শিল্পেও বিদেশিরা পুঁজি বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকার দেশে কয়েকটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। তাছাড়া বন্দর ও পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার মাধ্যমেও সরকার শিল্পখাতে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে। এসব পদক্ষেপের ফলে আগামীতে দেশে নানা ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ইদানীং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদেরও অনেকে তাদের অর্জিত অর্থ দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এভাবে বাংলাদেশের একটি শিল্পসমৃদ্ধ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এর ফলে শুধু যে দেশে দারিদ্র্য হ্রাস ও বেকার সমস্যারই সমাধান হবে তাই নয়, সাধারণভাবে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি এবং জাতীয় অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।

কাজ- ১: ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ কিংবা কুটিরশিল্প-এর যে কোনো এক ধরনের শিল্পের নামোল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
কাজ- ২: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিল্প সম্ভাবনা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
Content added By

বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি (পাঠ ৩)

428
428

সাধারণত কোনো দেশই তার চাহিদার সমস্ত জিনিস নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না। অন্য দেশ থেকে কিছু কিছু জিনিস তাকে আমদানি করতে হয়। একইভাবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্যের একটা অংশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যে দেশে যে সামগ্রী প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় সাধারণত সেগুলোই বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এভাবে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা যেমন বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ব্যয় করা যায় তেমনি দেশের উন্নয়নেও কাজে লাগে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং বিদেশে পণ্য রপ্তানি করার নামই বৈদেশিক বাণিজ্য। যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আধুনিক বিশ্বে বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ অনেক বেড়েছে। কোনো দেশই আজ তার চাহিদার সমস্ত জিনিস নিজেরা উৎপাদন করার কথা ভাবে না। বরং দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে যে পণ্যটা আমদানি বা যে পণ্যটি রপ্তানি করা সহজ ও লাভজনক, তাই করা হয়। একটি পরিকল্পনা ও নীতির আওতায় কাজটা করা হয়। বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির আওতায় এই আমদানি-রপ্তানি অর্থাৎ বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর এই বাণিজ্যিক কার্যক্রম তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্য শুল্ক নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখার জন্য রয়েছে কতগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা বা সংগঠন। যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organisation: WTO), দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা (South Asian Free Trade Area: SAFTA) প্রভৃতি। যে দেশের আমদানির চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ বেশি তাকে উন্নত দেশ ধরা হয়।

বাংলাদেশের আমদানি পণ্যসামগ্রী

বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়মিত যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলো হলো চাল, গম, ডাল, তৈলবীজ, তুলা, অপরিশোধিত পেট্রোল ও পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, ভোজ্যতেল, সার, কৃষি ও শিল্প যন্ত্রপাতি, সুতা প্রভৃতি। আর যেসব দেশ থেকে এসব সামগ্রী আমদানি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই এই আমদানি বাণিজ্য চলে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে মোট ৪০,৭৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪০,৭০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২,৯২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪৭,০০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৬,০৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে ৭৫০৬২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য সামগ্রী আমদানি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যসামগ্রী

এক সময় পাট ও পাটজাত দ্রব্যই ছিল আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পাট ও পাটজাত দ্রব্য যেমন-চটের ব্যাগ, কার্পেট প্রভৃতি রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করত। কিন্তু কিছু সময়ের জন্য সারা বিশ্বে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা কমে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের দ্বারা পাটের 'জেনোম' বা জন্মরহস্য আবিষ্কার এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আবারও পাট ও পাটজাত সামগ্রী রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য দ্রব্য ছাড়া আরও যেসব পণ্য বাংলাদেশ বিদেশে রপ্তানি করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তৈরি পোশাক, হিমায়িত চিংড়ি, ঔষধ সামগ্রী, চা, চামড়াজাত দ্রব্য, রাসায়নিক সামগ্রী প্রভৃতি। বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো-যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইটালি, নেদারল্যান্ড, কানাডা, জাপান প্রভৃতি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭,০২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩৪,২৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪,৬৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪০,৫৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৫৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ে শীর্ষে ছিল তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশের পণ্যের বড়ো ক্রেতা হলো যুক্তরাষ্ট্র।

আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্ব

বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রধানত সেসব পণ্যই আমদানি করে যা দেশের মানুষের খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য দরকার। সময় মতো এসব পণ্য আমদানি না করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে এসব পণ্যের চরম অভাব ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটত। আর তাতে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিত। পৃথিবীর কোনো দেশই তার চাহিদার সমস্ত সামগ্রী নিজ দেশে উৎপাদন করতে পারে না। পরিকল্পিত বাণিজ্য নীতির আওতায় অন্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য সুবিধাজনক দামে আমদানি করে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এর পাশাপাশি বাংলাদেশ বেশ কিছু পণ্য নিয়মিত বিদেশে রপ্তানি করছে। তা থেকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা শুধু দেশের অর্থনীতিকে সচলই রাখছে না এর ফলে দেশে শিল্প সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আমদানি হ্রাস করে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারি। আমরা জনগণকে যত বেশি উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত করতে পারব ততই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠব। বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের শিল্প সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে রপ্তানির বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

কাজ-১: বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের একটি তালিকা তৈরি কর।
কাজ-১: আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য লিখ।
Content added By

কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প (পাঠ ৪)

220
220

ক. প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো পণ্যকে অন্য পণ্যে রূপান্তর এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণ বলা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান তা করে থাকে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প নামে অভিহিত করা হয়। কৃষিজ বিভিন্ন পণ্যকে রূপান্তর করে বিভিন্ন চাহিদা সৃষ্টি করার জন্যে পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠছে। এর ফলে কৃষিতে উৎপাদিত পণ্যের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ সারা বছর নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। যেমন, শিশু খাদ্য, দুধ জাতীয় খাদ্য, মাছ, মাংস, আখ, তরিতরকারি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য পণ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে নিরাপদ খাদ্য তৈরি করতে পারলে তা আমাদের সম্ভবনাকে আরও বিকশিত করবে। সেই সাথে দূষণ থেকেও মুক্ত থাকতে হবে এ ধরনের শিল্পকে।

খ. বাংলাদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প

আমাদের দেশের মানুষ পূর্বে সনাতন পদ্ধতিতে কিছু কিছু খাদ্য দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করতো। যেমন, মুড়ি, চিড়া, শুঁটকি, পিঠা, চাল, দই, মাঠা ইত্যাদি তৈরি করতো। এখন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে খাদ্য পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ যেমন অনেক গুণ বেড়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে।

সনাতন পদ্ধতির প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যা

  • চাহিদা মোতাবেক পণ্য রূপান্তর করা যায় না
  • সংরক্ষণের সমস্যা
  • স্বাস্থ্য সম্মত কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না।

আধুনিক পদ্ধতির সুবিধা

কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণশিল্প প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশের মতো কৃষি প্রধান দেশের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সামগ্রীর সর্বোচ্চ ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন পাটের বহুমুখী ব্যবহার উদ্ভাবনের ফলে মানুষ পাটের কাপড়, ব্যাগ, কারুশিল্প ইত্যাদি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছে। এর ফলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হতে পারে, অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উদ্যোক্তা ও কর্মীগণও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। পণ্যসামগ্রী ব্যবহারকারীগণও ঐসব পণ্য ব্যবহার করার সুবিধা পেতে পারে। পাটখড়ি থেকে পারটেক্স প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়েও দেশ লাভবান হতে পারছে। একইভাবে কৃষিজ পণ্য, চাল, আটা, ভুট্টা, টমেটো, আলু, দুধ, মাছ, মাংস, ইক্ষু, চামড়া, তুলা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে দেশে এখন নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠছে। যেমন, টমেটো সংরক্ষণ করার জন্যে কোল্ড স্টোরেজ তৈরি হচ্ছে। ক্রেতাগণ সারা বছর টমেটো ক্রয় করতে পারছে। মাছ থেকে এখন শুধু শুটকি নয়, টিনজাত করে তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে, প্রয়োজন মতো খাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক ফল সংরক্ষণ এবং ফলের নানা ধরনের রসালো খাবার উদ্ভাবন করা হচ্ছে- যা দিয়ে সারা বছর মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। সরিষা ও তৈলজ শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈলজাতীয় সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। দুধের প্রক্রিয়াজাত শিল্প থেকে মিষ্টি, দই, মাখন, পনিরসহ শিশু খাদ্যের বিভিন্ন জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এখানে যে সব ফসল, প্রাণী, ফলজ, ফুলজ গাছ ও বীজের চাষাবাদ হচ্ছে তা ব্যাপকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে। বর্তমান দুনিয়ায় কৃষিজপণ্যকে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ঔষধসহ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ অনেক অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহার করা যাচ্ছে। আমাদের দেশ তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তবে অতিরিক্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। যেকোনো উন্নয়নকে হতে হবে টেকসই।

প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সমস্যা

  • পুঁজির সমস্যা
  • প্রযুক্তিজ্ঞান ও গবেষণার সমস্যা
  • দক্ষ উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের সমস্যা
  • পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ত্রুটি
  • ব্যবস্থাপনা দক্ষতার অভাব
  • কৃষিজ পণ্য সংরক্ষণের সুযোগ কম।

সমাধানের উপায় (করণীয়)

  • কৃষিজ পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
  • উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বহুমুখী উদ্বাবনী সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করা।
  • দক্ষ উদ্যোক্তা ও কর্মজীবী মানুষের সুযোগ সৃষ্টি করা।
  • উন্নত বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে কাজে লাগানো।
  • বাজারজাতকরণ এবং বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করা।
  • কৃষিজ পণ্যের বহুমাত্রিক ব্যবহার এবং মানুষের জীবনে এর প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
কাজ-১: কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পগুলো চিহ্নিত কর।
কাজ-২: কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সমস্যাগুলো চিহ্নিত কর।
Content added By

অনুশীলনী

139
139

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. কোন দেশটি পোশাকসহ বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর সবচেয়ে বড় ক্রেতা?
ক. ফ্রান্স
খ. জার্মানি
গ. যুক্তরাষ্ট্র
ঘ. যুক্তরাজ্য

২. বাংলাদেশ একটি শিল্প সম্ভাবনাময় দেশ কারণ, এখানে -
i কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়
ii বিনিয়োগ সহায়ক সরকারি কর্মসূচি রয়েছে
iii উৎপাদিত পণ্যের গুণাগুণ অন্য দেশের চেয়ে ভালো
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

৩. ফলের রস একটি-
ক. রপ্তানিযোগ্য খাদ্য
খ. শিশু খাদ্য
গ. দুধ জাতীয় খাদ্য
ঘ. প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য

8. প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রধান সমস্যা হচ্ছে-
i কৃষিপণ্যের সংরক্ষণের সুযোগ কম
ii রপ্তানি চাহিদা কম
iii পুঁজির সমস্যা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৫ ও ৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।

রাকিব সাহেব একজন শিল্পপতি। তিনি ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ৩০ লাখ টাকা দিয়ে একটি পোশাক তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। তার এ কারখানাটিতে ২০০জন শ্রমিক কাজ করে। তিনি এ কারখানার লভ্যাংশ দিয়ে আরও একটি কারখানা স্থাপন করেন। তৈরি পোশাক তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।
৫. রাকিব সাহেবের স্থাপিত কারখানাটি কোন শিল্পের অন্তর্গত?
ক. কুটির শিল্প
খ. ক্ষুদ্র শিল্প
গ. মাঝারি শিল্প
ঘ. বৃহৎ শিল্প

৬. উক্ত কাজটি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির কোন ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রভাব ফেলছে?
ক. দেশীয় কাঁচামালের সদ্ব্যবহার
খ. স্বনির্ভরতা অর্জন
গ. কর্মসংস্থান সৃষ্টি
ঘ. মূলধন বৃদ্ধি

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. তমিজ উদ্দিন তার তিন ছেলেকে সাথে নিয়ে তার জমিতে ধান, গম, সরিষা, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসল চাষ করে। তার স্ত্রী ও পুত্রবধূরাও ফসল তোলার কাজে সহায়তা করে। অবসর সময়ে সে বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান চালায়। কিন্তু এসব কাজের জন্য কেউ তাকে কোনো বেতন দেয় না। তাতে সে মনে কষ্ট না পেয়ে বরং গর্ববোধ করে।
ক. SAFTA এর পুরো নাম কী?
খ. মাঝারি শিল্প বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. তমিজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের কাজ কোন ধরনের অর্থনৈতিক কাজের আওতাভুক্ত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তমিজ উদ্দিনের মতো মানুষের কাজ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে-মূল্যায়ন কর।

২. জরিনা বেগম গ্রামের একজন গরিব বিধবা মহিলা। সে একদিন বাজার থেকে বাঁশ ও বেত কিনে নিয়ে আসে। দুই মেয়েকে নিয়ে ডালা, কুলা ও ফুলদানি তৈরি করে। তার ছেলে তামজিদ এগুলো বাজারে বিক্রি করে। এতে তাদের যে লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চলে। দিনে দিনে তাদের তৈরিকৃত দ্রব্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে তামজিদ তার বাবার এক বন্ধুর সহযোগিতায় স্থানীয় একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। সে কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানা স্থাপন করে। তামজিদ তার কারখানায় খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করে প্রচুর লাভ করে।
ক. রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী?
খ. অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. তামজিদের স্থাপিত কারখানাটি কোন শিল্পের অন্তর্গত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জরিনা বেগমের কাজের অবদান মূল্যায়ন কর।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;