"বাচ্য' শব্দের অর্থ বক্তব্য বিষয়। মানুষের বক্তব্য বিষয় প্রকাশের কয়েকটি প্রসিদ্ধ ভঙ্গি বা রীতি-নীতি আছে।
এই রীতি-নীতি বা ভঙ্গিই বাচ্য।
সংস্কৃতে বাচ্য চার প্রকার কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য ও কর্মকর্তৃবাচ্য।
১। কর্তৃবাচ্য
বাক্যের যে রীতিতে কর্তার কথাই প্রধানভাবে বলা হয়, তাকে কর্তৃবাচ্য বলে।
এই বাচ্যে কর্তৃকারকে প্রথমা বিভক্তি ও কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অধীন হয়, অর্থাৎ
কর্তায় যে পুরুষ ও যে বচন হয়, ক্রিয়ায়ও সেই পুরুষ ও সেই বচন হয়। যেমন—
অহং রামায়ণং পঠামি (আমি রামায়ণ পড়ি)
ত্বং রামায়ণং পঠসি (তুমি রামায়ণ পড়
বালকঃ চন্দ্ৰং পশ্যতি (বালকটি চাঁদ দেখছে)
বালকৌ অনুং খাদতঃ (দুজন বালক ভাত খাচ্ছে)
বালকাঃ অনুং খাদন্তি (বালকেরা ভাত খাচ্ছে)।
২। কর্মবাচ্য
বাক্যের যে রীতিতে কর্মের প্রাধান্য থাকে, তাকে কর্মবাচ্য বলে।
কর্মবাচ্যে কর্তায় তৃতীয়া ও কর্মে প্রথমা বিভক্তি হয় এবং কর্ম অনুসারে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়,
অর্থাৎ কর্ম যে
পুরুষ ও যে বচনের হয়, ক্রিয়াও সেই পুরুষ ও সেই বচনের হয়। সকল ধাতুই আত্মনেপর্দী হয় এবং লট, লোই,
লঞ্চ ও বিধিলি-এর চারটি ল কারে ধাতুর উত্তর 'খৃ' হয়। যেমন-
তেন অহং দৃশ্যে (তার দ্বারা আমি দৃষ্ট হচ্ছি)।
তেন তুং দৃশ্যসে (তার দ্বারা তুমি দৃষ্ট হচ্ছো)।
ময়া স দৃশ্যতে (সে আমার দ্বারা দৃষ্ট হচ্ছে)।
তেন পুস্তকং পঠাতে (তার দ্বারা পুস্তক পঠিত হচ্ছে)।
তেন পুস্তকৌ পঠোতে (তার দ্বারা দুটি পুস্তক পঠিত হচ্ছে)।
তেন পুস্তকানি পঠান্তে (তার দ্বারা পুস্তকগুলি পঠিত হচ্ছে)।
৩। ভাববাচ্য
যে বাচ্যে ক্রিয়ার প্রাধান্য থাকে, তাকে ভাববাচ্য বলে।
ভাববাচ্যে কর্তৃকারকে তৃতীয়া বিভক্তি হয়, কর্ম থাকে না এবং ক্রিয়াপদ প্রথমপুরুষের একবচনান্ত হয়।
কর্মবাচ্যের মত লট, লোট, লঙ্ ও বিধিলি এই চারটি ল-কারে ধাতুর উত্তর 'য' হয় এবং ধাতু আত্মনেপদী
হয়।
কেবল অকর্মক ধাতুর ক্ষেত্রেই ভাববাচ্য হয়। যেমন-
তেন নৃত্যতে (তার নাচা হচ্ছে)।
ময়া ধীয়তে (আমার থাকা হচ্ছে)।
শিশুনা শয্যতে (শিশুর শোয়া হচ্ছে)।
বালকৈঃ হস্যতে (বালকদের হাসা হচ্ছে)।
৪। কর্মকর্তৃবাচ্য
যে-বাচ্যে কর্তার নিজগুণেই যেন আপনা থেকে কাজ হচ্ছে এরূপ বোঝায়, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। “ভিদ্যুতে
বৃক্ষঃ'—বৃক্ষটি ভেঙে যাচ্ছে বললে বোঝায় বৃক্ষটি আপনা-আপনিই ভেঙে যাচ্ছে। এরূপ- পচাতে ওদনঃ (ভাত
রান্না হচ্ছে)। ছিদাতে কাম (কাপড় ছিঁড়ছে)।
বাচ্য পরিবর্তন
অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে এক বাচ্যের বাক্যকে অন্য বাচ্যে পরিবর্তন করার নাম বাচ্য পরিবর্তন। বাচ্য
পরিবর্তনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন :
কর্তৃবাচ্যের বাক্যে যদি কর্ম থাকে, তাহলেই তাকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন করা যায়, নতুবা কর্তৃবাচ্যকে
ভাববাচ্যে পরিণত করা চলে।
কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তৃবাচ্যে পরিণত করা যায়।
ক্রিয়া সকমর্ক হলেও যদি কর্ম না থাকে, তবে সেই বাক্যকে ভাববাচ্যে পরিণত করা চলে।
প্রশ্নমালা
শুদ্ধ উত্তরটির পাশে টিক (/) চিহ্ন দাও :
(ক) কর্তৃবাচ্যে কর্তৃকারকে ১মা / ৪র্থী/৩য়া/ ৬ষ্ঠী বিভক্তি হয়।
(খ) ভাববাচ্যে প্রাধান্য থাকে কর্তার/কর্মের অব্যয়ের ক্রিয়ার।
(গ) কর্মবাচ্যে কর্তায় ২য়া/ওয়া/১ মা/৪র্থী বিভক্তি হয়।
(ঘ) 'পচাতে ওদনঃ' কর্তৃবাচ্যের/কর্মবাচ্যের/ভাববাচ্যের কর্মকর্তৃবাচ্যের উদাহরণ।
(ঙ) ভাববাচ্যে কর্তায় ১মা / ৪র্থী/৬ষ্ঠী/ওয়া বিভক্তি হয়।
(চ) 'তেন অনুং খাদ্যতে কর্মবাচ্যের কর্তৃবাচ্যের কর্মকর্তৃবাচ্যের ভাববাচ্যের উদাহরণ।
২। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
(ক) কর্মবাচ্যে কর্তায় কোন বিভক্তি হয়?
(খ) ভাববাচ্যে লট প্রভৃতি চারটি ল-কারে ধাতুর উত্তর কিসের আগম হয়?
(গ) কর্মবাচ্যে ধাতু কোন পণী হয়।
(ঘ) বাচ্য পরিবর্তন কাকে বলে?
(৩) "ওয়া বেদঃ পঠ্যতে'- এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ?
৩। বাচ্যান্তর করা
(ক) সা বেলং পঠতি। (খ) তে বনে তিষ্ঠন্তি। (গ) ময়া চন্দ্রঃ মুশাতে। (ঘ) শিশুঃ হসতি। (ঙ) তেন
অহং দৃশ্যে।
৪। বাংলায় অনুবাদ কর :
(ক) অহং পুরাণং পঠামি। (খ) তেন পুস্তকানি পঠান্তে। (গ) বালকৈঃ হসাতে। (ঘ) ছিদ্যতে বাম।
(৫) তেন অনুং খাদ্যতে। (চ) ভিদ্যতে বৃক্ষঃ।
। সংস্কৃতে অনুবাদ কর :
(ক) আমার থাকা হচ্ছে। (খ) ভাত রান্না হচ্ছে। (গ) বালকটি চাঁদ দেখছে। (ঘ) তুমি রামায়ণ পড়।
(ঙ) তার দ্বারা পুস্তক গঠিত হচ্ছে। (চ) তার দ্বারা তুমি দৃষ্ট হচ্ছে।
৬। কর্তৃবাচ্যকে ভাববাচ্যে পরিণত করার নিয়মগুলো লেখ।
৭। কর্তৃবাচ্যকে কর্মবাচ্যে পরিণত করার নিয়মগুলো লেখ।
৮। ৰাচ্য পরিবর্তনের সময় কোন বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন?
৯। কর্মকর্তৃবাচ্য কাকে বলে? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
১০। ভাববাচ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
১১। কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কিছু
১২। প্রত্যেক বাচ্যের দুটি করে উদারহণ দাও।
১৩। বাচ্য কাকে বলে? বাচ্য কত প্রকার ও কি কি?
আরও দেখুন...