ঢাকা থেকে অনেক দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম। নাম তার অচিনপুর। সেই গ্রামে তিথিদের বাড়ি। গ্রীষ্মের ছুটিতে ওরা বাড়িতে বেড়াতে আসে। এবারও ওরা বেড়াতে এসেছে।
গ্রামে এলে তিথি মন ভরে প্রকৃতি দেখে। সবুজ সুন্দর এই গ্রামে আছে কত গাছ। কত পাখি উড়ে যায় আকাশের পথে। সুপারি গাছের সারি দিয়ে উঁকি দেয় সকালের সূর্য।
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নাদের চাচা বলেছেন, নদীর চরে পাখিদের মেলা বসে। তিনি একজন জেলে। মাছ ধরতে চলে যান একেবারে মাঝনদীতে। ওখানেই তিনি দেখেছেন শত শত পাখি।
নৌকার মাঝি গণেশ কাকা বলেছেন, পাখিরা মাছ ধরে। সাদা বকগুলো চুপ করে বসে থাকে। মাছ দেখলেই খপ করে ধরে। তিথি এসব গল্প শোনে। মনে মনে ভাবে, আহা, যদি আমিও যেতে পারতাম। গণেশ কাকা বলেছেন, একদিন তোমাকে নিয়ে যাব।
এক সকালে গণেশ কাকা সত্যিই নৌকা নিয়ে হাজির। বাবা বললেন, চলো ঘুরে আসি।
নদীর তীর ধরে নৌকা চলছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে মসজিদের মিনার। দেখা যাচ্ছে গ্রামের বাজার, বটতলা, মাঠ, মন্দির।
একটু পেরুতেই চোখে পড়ল কুমারপাড়া। নৌকায় উঠলেন বাবার বন্ধু মধু পাল। তিনি মাটি দিয়ে শখের হাঁড়ি বানান। রঙিন হাঁড়িগুলো দেখতে খুব সুন্দর। মধু কাকা তিথিকে দুটি রঙিন হাঁড়ি দিলেন। বললেন, বাসায় সাজিয়ে রেখো।
আরেকটু এগুতেই তীর থেকে ডাক দিলেন হামিদ চাচা। তিনি গ্রামের স্কুলের শিক্ষক। গণেশ কাকা নৌকা থামালেন। বাবা হামিদ চাচাকে বললেন, চলো, বেড়িয়ে আসি। হামিদ চাচা নৌকায় উঠতে উঠতে বললেন, চলো যাই। ঝড়-বাদলের দিন, তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
নৌকা আবার চলতে শুরু করল। তিথি দেখল টলটল করছে নদীর জল। ভয়ে ভয়ে সে নদীর জলে হাত বুলাল। কী শীতল!
অল্প সময়ের মধ্যেই ওরা পৌছে গেল নদীর চরে। সুন্দর এক দ্বীপের মতো এই বালুচর। চরের চারদিকে কাঁটাঝোপ, ঘাস আর কাশবন। খুঁটে খুঁটে পোকা খাচ্ছে শালিক। ঘাড় বাঁকা করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদা বক। নলখাগড়ার ঝোপে চুপচাপ বসে আছে মাছরাঙা। হঠাৎ পুবদিক থেকে উড়ে এলো এক ঝাঁক পাখি। গণেশ কাকা বললেন, ওই দেখো গাঙচিল। তিথি চিৎকার করে উঠল, বাবা, কী সুন্দর!
হামিদ চাচা শোনালেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। ১৯৭১ সালে এই চরে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাঁটি গেড়েছিল। তারা ডুবিয়ে দিয়েছিল পাকবাহিনীর লঞ্চ।
চরের পশ্চিম দিক থেকে কে যেন এগিয়ে আসছে। আরে আরে! এতো দেখি নাদের চাচা। তাঁর ঝুড়ি ভরতি মাছ। পাবদা, পুঁটি আর একটা মাঝারি আকারের বোয়াল। তাজা মাছগুলো এখনো নড়ছে। তিথি অবাক হয়ে মাছ দেখল। নাদের চাচা সবাইকে দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন।
গণেশ কাকা বললেন, ফিরতে হবে। হামিদ চাচা আকাশের দিকে তাকালেন। তিথি দেখল উত্তর-পূর্ব আকাশে মেঘ জমেছে। নদীর বুকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। সবাই নৌকায় উঠে পড়ল।
গণেশ কাকা দ্রুত বৈঠা চালালেন। নাদের চাচা তুলে নিলেন আরেকটি বৈঠা। দুজনে নৌকা বেয়ে ছুটে চললেন গ্রামের দিকে। তীরে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই শুরু হলো ঝড়। তিথি ভাবতে লাগল, পাখিগুলো এখন কী করছে!
শব্দ শিখি
উঁকি দেওয়া - আড়াল থেকে দেখা
মিনার - দালানের উঁচু চূড়া
বাদল - বৃষ্টি
চর - নদীতে তৈরি হওয়া বালুময় ভূমি
নলখাগড়া - নলের মতো লম্বা ঘাস
ঘাঁটি - আস্তানা
বাক্য বলি ও লিখি
নদী . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
নৌকা . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
মুক্তিযোদ্ধা . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বালুচর. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
ডান পাশ থেকে শব্দ নিয়ে খালি জায়গা পূরণ করি
নদীর পানি সাদা বক সকালের সূর্য পাখিদের |
সুপারি গাছের সারি দিয়ে উঁকি দেয়। . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
নদীর চরে . . . . . . . . . . . . . . . . . . . মেলা বসে।
টলটল করছে . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
ঘাড় বাঁকা করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বিপরীত শব্দ জেনে নেই
শব্দ | বিপরীত শব্দ |
গ্রাম | শহর |
সাদা | কালো |
শীতল | উষ্ণ |
পরিষ্কার | নোংরা |
দূর | নিকট |
সঠিক উত্তরটি বলি ও লিখি
তিথির গ্রামের নাম -
ক. মধুপুর খ. অচিনপুর
গ. শফিপুর ঘ. নাজিরপুর
নদীর চরে পাখিদের মেলা বসার কথা বললেন -
ক. গণেশ কাকা খ. হামিদ চাচা
গ. নাদের চাচা ঘ. মধু কাকা
মাটি দিয়ে শখের হাঁড়ি বানান –
ক. নাদের চাচা খ. হামিদ চাচা
গ. মধু কাকা ঘ. গণেশ কাকা
নলখাগড়ার গায়ে চুপচাপ বসে আছে -
ক. মাছরাঙা খ. গাঙচিল
গ. শালিক ঘ. সাদা বক
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল –
ক. ১৯৪৭ সালে খ. ১৯৫২ সালে
গ. ১৯৬৯ সালে ঘ. ১৯৭১ সালে
বুঝে নেই
কুমারপাড়া - কুমারেরা যেখানে একসাথে বাস করে।
শখের হাঁড়ি - যে হাঁড়িতে শখের জিনিস রাখা হয়।
দ্বীপ - চারিদিকে পানি দিয়ে ঘেরা ভূখণ্ড।
মুখে মুখে উত্তর বলি ও লিখি
গ্রামের প্রকৃতি তিথির কেমন লাগে?
নৌকায় করে তিথিরা কোথায় গেল?
চরে কারা ঘাঁটি গেড়েছিল?
নাদের চাচার ঝুড়িতে কী কী মাছ ছিল?
তিথি কেন পাখিদের জন্য ভাবছিল?
বিরামচিহ্ন বসিয়ে বাক্য লিখি
ঢাকা থেকে অনেক দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম কী শীতল
তিথি চিৎকার করে উঠল বাবা কী সুন্দর
গণেশ কাকা বললেন ফিরতে হবে
আরও দেখুন...