ব্যক্তিগত পত্র

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (নতুন সংস্করণ) - চিঠিপত্র | | NCTB BOOK
36

আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে লিখিত যোগাযোগের উপায় হিসেবে ব্যক্তিগত পত্রের জন্ম। ইন্টারনেট প্রযুক্তির যুগেও ব্যক্তিগত পত্রের কদর কমেনি, বরং ধরন বদলেছে। পূর্বে প্রধানত ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পত্রের আদান-প্রদান হতো। বর্তমানে ডাকের পাশাপাশি ই-মেইল আকারেও ব্যক্তিগত পত্রের আদান-প্রদান হয়। ব্যক্তিগত পত্রে মানুষের শিক্ষা, বুদ্ধিমত্তা, রুচি ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। ব্যক্তিগত পত্রের গঠনে উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচিত হতেও দেখা যায়। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছিন্নপত্র', 'রাশিয়ার চিঠি', 'জাপান-যাত্রী' ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত চিঠি লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হয়। পত্রের শুরুতে পত্ররচনার তারিখ ও স্থানের নাম উল্লেখ করতে হয়। যাকে চিঠি লেখা হচ্ছে, তার সঙ্গে পত্রলেখকের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে তাকে কীভাবে সম্বোধন করা হবে। সাধারণত গুরুজনকে শ্রদ্ধেয়, মাননীয় ইত্যাদি সম্বোধন করা হয়। বয়সে ছোটো কাউকে পত্র লিখলে স্নেহের, কল্যাণীয় ইত্যাদি সম্বোধন করা হয়। বন্ধু বা প্রিয়জনের ক্ষেত্রে প্রিয়, প্রীতিভাজনেষু দিয়ে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। অপরিচিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে নাম বা পদবির আগে প্রিয় বা জনাব লিখে সম্বোধনের কাজ সারা যায়। পত্রের মূল বক্তব্যে যাবার আগে সৌজন্য প্রকাশক কথাবার্তা লেখা হয়ে থাকে। সহজ, সরল ও হৃদয়গ্রাহী করে লেখার উপরই চিঠির সার্থকতা নির্ভর করে। চিঠির পূর্বাপর বক্তব্যের সামঞ্জস্য, সংগতি ও ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। পত্রের শেষে 'ইতি' লেখার একটি রেওয়াজ বাংলায় প্রচলিত আছে। এরপর সম্পর্ক অনুযায়ী বিদায় সম্ভাষণ লিখে চিঠির শেষে নাম লিখতে হয়। লিখিত চিঠিটি ডাকযোগে গেলে খামের উপরে নাম-ঠিকানা লিখতে হয়, ই-মেইল আকারে পাঠালে নির্দিষ্ট জায়গায় ই- মেইল ঠিকানা ও চিঠির বিষয় লিখতে হয়।

এখানে কয়েকটি ব্যক্তিগত পত্রের নমুনা উল্লেখ করা হলো।

 

১. মাতার কাছে পুত্রের চিঠি

 

২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মতিঝিল, ঢাকা

শ্রদ্ধেয় মা

আমার সালাম নিয়ো। আশা করি ভালো আছ।

আমি নিরাপদে ছাত্রাবাসে পৌঁছেছি। যদিও আসার পথে বাড়ির কথা ভেবে আমার মন খারাপ লাগছিল। প্রতিবারই বাড়ি থেকে আসার সময়ে আমার এ রকম হয়। এসেই জানতে পারলাম আগামী ১০ই নভেম্বর থেকে আমাদের প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষা শুরু হবে। তাই পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার জন্য আশীর্বাদ কোরো। ছুটিতে বাড়ি গিয়ে লেখাপড়ায় খানিকটা ছেদ পড়েছিল। তাই এখন বেশি পরিশ্রম করে লেখাপড়ার সাময়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি। মা, আমি তোমাকে আমার জীবনের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছি। আমি সেই লক্ষ্য পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করব, তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করব। আসার সময়ে মেহরাবকে কিছুটা অসুস্থ দেখে এসেছি। এখন ও কেমন আছে, জানিয়ো। বাবাকে শরীরের প্রতি যত্ন নিতে বোলো। আমার জন্য চিন্তা কোরো না। আমি এখন ভালো আছি। ইতি

 

তোমার স্নেহের 

মাহের

 

২. কন্যার কাছে পিতার চিঠি

২৩ নভেম্বর ২০১৯ 

তেজগাঁও, ঢাকা

স্নেহের প্রাপ্তি 

আমার আশীর্বাদ নিয়ো। আশা করি ভালো আছ।

গত চিঠিতে তোমার প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল জেনেছি। প্রায় সবগুলো বিষয়ে ভালো করেছ। গণিতে খানিকটা কম নম্বর পেয়েছ। এতে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। গণিতের কোন বিষয়গুলো বুঝতে এখনও সমস্যা হচ্ছে, তা আগে শনাক্ত করো। প্রয়োজনে তোমার ক্লাসের গণিত শিক্ষকের সহযোগিতা নাও। মুখস্থ না করে বুঝে পড়ার চেষ্টা কোরো। সামনে তোমার নির্বাচনী পরীক্ষা এবং এসএসসি পরীক্ষারও খুব বেশি দেরি নেই। তাই এই সময়টা খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। জীবনে প্রতিটি মুহূর্তকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে হবে। পরীক্ষা শিক্ষাজীবনের একটি অংশ। তাই পরীক্ষাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সময়ে কীভাবে সুস্থ থেকে নিয়মানুযায়ী পড়াশোনা করা যায়, সেদিকে খেয়াল রেখো। বেশি রাত জেগো না, যথাসময়ে খাবার খেয়ো। আমরা বাসার সবাই ভালো আছি। ইতি

তোমার বাবা 

অনিরুদ্ধ রায়

ই-মেইলে পাঠানোর জন্য ঠিকানা ও বিষয়:

প্রেরক: aniruddharay@gmail.com
প্রতি: praptiray@gmail.com
বিষয়: উপদেশ

 

৩. ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 

সোবহানবাগ, ঢাকা

প্রিয় মতি 

আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করিস। অনেকদিন হলো তোর কোনো চিঠি পাচ্ছি না। ক্যাডেট কলেজের বন্ধুদের পেয়ে আমার কথা কি ভুলে গেছিস? আজ তোকে লিখতে বসেছি এক ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জানাতে। গত মাঘী পূর্ণিমার ছুটিতে আমি আর সীমান্ত গিয়েছিলাম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন লালবাগ কেল্লা দেখতে। ইতিহাসের বইয়ে শায়েস্তা খাঁর কথা পড়েছি। সেই শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত ঢাকার প্রায় চারশো বছরের পুরানো স্থাপনা এই লালবাগ কেল্লা। এর প্রাকৃতিক শোভা, প্রাচীন স্থাপত্য-সৌন্দর্যের কথা চিঠিতে লিখে পুরোপুরি তোকে বোঝাতে পারব না।

আমরা সেদিন সকালেই লালবাগের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। পুরান ঢাকার লালবাগে এর অবস্থান। দর্শনার্থীদের জন্য ঢোকার প্রবেশ পথে টিকিট কাউন্টার। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটলাম। ভিতরে প্রবেশ করার পর কয়েকজন বিদেশি দর্শনার্থীকে দেখলাম। ফটকের ভিতরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। মুঘল স্থাপত্য, মসজিদ, উন্মুক্ত মাঠ, সুসজ্জিত ফুলের বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু ১৬৭৮ সালে। তৎকালীন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবেদার আজম শাহ এই কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এর মূল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। লালবাগ কেল্লা মোঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি তৈরিতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর এবং রং-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে যে দরজাটি বর্তমানে জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া আছে, সেই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরি বিবির সমাধি। পরি বিবি ছিলেন শায়েস্তা খাঁর অকালপ্রয়াত কন্যা। কেল্লার চত্বরে আরো রয়েছে কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মামখানা, উত্তর-পশ্চিমাংশের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শাহি মসজিদ ও একটি জাদুঘর। দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা আছে। স্থাপনাগুলো ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

আমাদের খুব ভালো লেগেছে। সময় পেলে তুইও একবার দেখে আসিস বাংলার ইতিহাস-প্রসিদ্ধ লালবাগ কেল্লা। ভালো থাকিস। ইতি

তোর বন্ধু 

দীপ্র

 

৪. লেখকের কাছে পাঠকের চিঠি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মিরাবাজার, সিলেট

জনাব আহমদ সাদিক

আমার শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন। আমি আপনার পূর্বপরিচিত নই। আমি আপনার বইয়ের একজন পাঠক। এবারের একুশের বইমেলায় প্রকাশিত আপনার 'বাংলাদেশের প্রান্তিক-উৎসব' বইটি আমি পড়েছি। বইটি বইমেলা থেকেই সংগ্রহ করেছি। প্রত্যাশা ছিল আপনার সঙ্গে দেখা হবে, আপনার স্বাক্ষর সংবলিত বইটি পাব। কিন্তু সেদিন আপনি স্টলে আসেননি। আমাকেও পরদিন সিলেটে ফিরতে হয়েছে।

'বাংলাদেশের প্রান্তিক-উৎসব' বইটি পড়ে আমি খুব উপকৃত হয়েছি। মূলধারার উৎসবের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলে যে কত উৎসব আছে, তা আপনার বই পড়ার আগে জানতে পারিনি। আপনি একজন নিষ্ঠাবান গবেষক হিসেবে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। এই বই রচনায় আপনার সেই যোগ্যতার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেছে। আমি বেশি খুশি হয়েছি এই জন্য যে, সিলেট অঞ্চলের মণিপুরি, খাসিয়া ও চা শ্রমিকদের উৎসবের কথা আপনার বইয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। বইটির ভাষা ও অধ্যায়-বিভাজন আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। ৩১২ পৃষ্ঠার বইটি আমি দুই দিনে পড়ে শেষ করেছি।

আপনার সঙ্গে দেখা করার প্রত্যাশা রইল। যদি কখনও সিলেটে আসেন, আমাকে জানালে ও আমাদের বাসায় আতিথ্য গ্রহণ করলে খুশি হব। আপনার জন্য শুভ কামনা। ইতি

আতিকুল ইসলাম

 

ই-মেইলে পাঠানোর জন্য ঠিকানা ও বিষয়:

প্রেরক: atikulislam@gmail.com
প্রতি: ahmadsadik@gmail.com
বিষয়: শুভেচ্ছা বার্তা
Content added By
Promotion