বিশদ আয় বিবরণী এবং আর্থিক অবস্থার বিবরণী থেকে আমরা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা জানতে পারি যেমন লাভ— ক্ষতি, স্থায়ী সম্পদ, চলতি সম্পদ, চলতি দায়, দীর্ঘমেয়াদি দায়, মূলধনের পরিমাণ ইত্যাদি। কিন্তু এ জানা যথেষ্ট নয়। কারণ কত লাভ হয়েছে তার চেয়েও বড় কথা কত টাকা বিনিয়োগ করে কত লাভ হয়েছে। তেমনিভাবে চলতি সম্পদ এবং চলতি দায় পৃথকভাবে জানার পাশাপাশি চলতি সম্পদ চলতি দায়ের কত গুণ, অর্থাৎ ব্যবসায়ের চলতি সম্পদ দ্বারা চলতি দায় পরিশোধের ক্ষমতা কতটুকু। অতএব, ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা ভালোভাবে জানতে হলে আমাদেরকে বিশদ আয় বিবরণী এবং আর্থিক অবস্থার বিবরণীর একটি হিসাব খাতের সাথে আরেকটি হিসাব খাতের তুলনা করতে হবে, অর্থাৎ একটি হিসাবখাত অন্য হিসাব খাতের শতকরা কত অংশ (শতকরা হার) অথবা একটি হিসাব খাতের সাথে অন্য হিসাব খাতের অনুপাত বের করতে হবে। এই শতকরা হার এবং অনুপাত নির্ণয় করে একটি ব্যবসায়ের একাধিক বছরের আর্থিক অবস্থার তুলনামূলক মূল্যায়ন করা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, একটি ব্যবসায়ের সাথে অন্য ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থারও তুলনা করা যায় ৷ নিচে কয়েকটি অনুপাত বিশ্লেষণ দেখানো হলো ।
মুনাফার হার :
নিট মুনাফাকে আমরা বিক্রয় আয় এবং বিনিয়োজিত মূলধনের সাথে তুলনা করতে পারি। অর্থাৎ নিট মুনাফা ও বিক্রয় আয়ের শতকরা হার এবং নিট আয় ও বিনিয়োজিত মূলধনের শতকরা হার নির্ণয় করতে পারি। এই শতকরা হার যে সালে বেশি সেই বছরের মুনাফা অর্জনের ক্ষমতা অন্য বছরের চেয়ে ভালো। তেমনিভাবে, এই শতকরা হার যে ব্যবসায়ের বেশি, সে ব্যবসায়ের মুনাফা অর্জনের ক্ষমতা অন্য ব্যবসায়ের চেয়ে ভালো ৷
১। নিট মুনাফার হার = (নিট মুনাফা / নিট বিক্রয়)
২। বিনিয়োজিত মূলধনের উপর মুনাফার হার = (নিট মুনাফা / বিনিয়োজিত মূলধন)
এক্ষেত্রে বিনিয়োজিত মূলধন = মোট সম্পত্তি—চলতি দায়
চলতি দায় পরিশোধ ক্ষমতা :
চলতি সম্পদ এবং চলতি দায়ের তুলনা করে অর্থাৎ চলতি সম্পদ ও চলতি দায়ের অনুপাত নির্ণয় করে আমরা ব্যবসায়ের চলতি দায় পরিশোধ ক্ষমতা জানতে পারি। এর জন্য সাধারণত দুটি অনুপাত নির্ণয় করা হয় ।
১) চলতি অনুপাত = চলতি সম্পত্তি / চলতি দায়
২) তারল্য অনুপাত= (চলতি সম্পত্তি - (মজুদ পণ্য + অগ্রিম খরচ)) / চলতি দায়
অগ্রিম পরিশোধিত খরচ এবং মজুদ পণ্য দ্রুত নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায় না বিধায় তারল্য অনুপাত নির্ণয়ে এই আইটেমগুলো বাদ রাখা হয় । চলতি অনুপাত সাধারণত ২:১ হওয়া ভালো অর্থাৎ প্রতি ১ টাকা চলতি দায়ের বিপক্ষে ২ টাকার চলতি সম্পত্তি থাকা বাঞ্ছনীয় এবং প্রতি ১ টাকা তরল দায় পরিশোধের জন্য ১ টাকার তরল সম্পদ থাকা বাঞ্ছনীয় । অর্থাৎ তারল্য অনুপাতের ক্ষেত্রে আদর্শ মান হলো ১:১ ।
উদাহরণ:
রানি এন্টারপ্রাইজ এবং শ্রীলেখা এন্টারপ্রাইজের ২০১৭ সালের হিসাব বই হতে নিম্নোক্ত তথ্যাদি সংগৃহীতঃ
রানি এন্টারপ্রাইজ (টাকা) | শ্রীলেখা এন্টারপ্রাইজ (টাকা) | |
মোট মুনাফা | ১০,০০০ | ১৫,০০০ |
নিট মুনাফা | ৮,০০০ | ৬,০০০ |
বিক্রয় | ১,০০,০০০ | ১,২০,০০০ |
বিনিয়োজিত মূলধন | ৬০,০০০ | ৮০,০০০ |
চলতি দায় | ৯,০০০ | ১০,০০০ |
মজুদ পণ্য | ৫,০০০ | ৬,০০০ |
চলতি সম্পদ | ১,০০০ | ১,২০০ |
করণীয়:
ক) দুটি ব্যবসায়ের নিট মুনাফার হার ও বিনিয়োজিত মূলধনের উপর মুনাফার হার ।
খ) দুটি ব্যবসায়ের চলতি অনুপাত ও তারল্য অনুপাত ।
গ) কোন ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা ভালো?
সমাধান :
ক)
মুনাফার অনুপাত | রানি এন্টারপ্রাইজ | শ্রীলেখা এন্টারপ্রাইজ |
১। নিট মুনাফার হার = (নিট মুনাফা / নিট বিক্রয়) | ||
২। বিনিয়োজিত মূলধনের উপর মুনাফার হার= (নিট মুনাফা / বিনিয়োজিত মূলধন) |
খ)
চলতি দায় পরিশোধ অনুপাত | রানি এন্টারপ্রাইজ | শ্রীলেখা এন্টারপ্রাইজ |
১। চলতি অনুপাত = চলতি সম্পত্তি / চলতি দায় | ||
২। তারল্য অনুপাত = (চলতি সম্পত্তি - (মজুদ পণ্য + অগ্রিম খরচ)) / চলতি দায় |
গ) রানি এন্টারপ্রাইজের আর্থিক অবস্থা শ্রীলেখা এন্টারপ্রাইজের চেয়ে ভালো। রানির মুনাফার হার ৮% ও ১৩.৩%। শ্রীলেখার ৫% ও ৭.৫%। রানির তারল্য বা চলতি দায় মিটানোর ক্ষমতাও শ্রীলেখার চেয়ে ভালো। চলতি অনুপাতের আদর্শ মান সাধারণত ২:১ হয়, অর্থাৎ চলতি দায় পরিশোধ করেও যেন যথেষ্ট টাকা হাতে থাকে ।
আরও দেখুন...