ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে সঠিক প্রকল্প নির্বাচনের উপর। প্রকল্প হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্ম পদ্ধতি। প্রকল্প একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিসমাপ্ত হয়। একটি প্রকল্প হতে পারে সম্পূর্ণ নতুন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত অথবা পুরাতন ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ। ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হলো ধারণা চিহ্নিতকরণ এবং ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটিকে নির্বাচন করা।
১. প্রকল্প ধারণা চিহ্নিতকরণ
একজন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তার প্রকল্প চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয় তার প্রকল্প ধারণা অনুভব করার সময় থেকেই। তিনি তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কোনো পণ্য বা সেবার চাহিদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। এই চাহিদার উপর প্রকল্প নির্বাচন নির্ভর করে। সাধারণত পণ্য বা সেবা সামগ্রীর চাহিদা প্রকল্প ধারণার জন্ম দেয়। পণ্যের ধারণা থেকেই প্রকল্পের সূত্রপাত হয়। প্রকল্প ধারণা চিহ্নিত করার সময় উদ্যোক্তার নিজের শখ বা আগ্রহ আছে এমন পণ্য, প্রকৃত চাহিদা আছে এমন পণ্য, বিদ্যমান পণ্যের অসুবিধা, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদি দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। নতুন প্রকল্প ধারণাগুলোর উৎসসমূহ হলো সাধারণত নিজের কল্পনা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রকাশনা, অর্থনৈতিক ও শিল্প জরিপ প্রতিবেদন, গবেষণামূলক প্রতিবেদন ইত্যাদি।
২. ধারণা মূল্যায়ন ও প্রকল্প নির্বাচন
একজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কয়েকটি সম্ভাব্য ধারণা চিহ্নিত করে একটি তালিকা করবেন। এ তালিকাবদ্ধ ধারণাগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচন করবেন। দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে চিহ্নিত ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে প্রকল্প নির্বাচন করা যায়। এর একটি হলো ম্যাক্রোস্ক্রিনিং এবং অন্যটি হলো মাইক্রোস্ক্রিনিং।
ক. ম্যাক্রোস্ক্রিনিং (Macro-Screening) ম্যাক্রোস্ক্রিনিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কতকগুলো প্রভাবক বা উপাদানের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ধারণাগুলো মূল্যায়ন করে একটি প্রকল্প ধারণা নির্বাচন করতে সহায়তা করে। সকল ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি উদ্যোক্তার নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কতিপয় উপাদান দ্বারা কম-বেশি প্রভাবিত হয়। এ প্রভাবকগুলো হলো জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত পরিবেশ।
আইনগত পরিবেশ : দেশের প্রচলিত আইন, ব্যবসায় ও শিল্পনীতি ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
ম্যাক্রোস্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে প্রকল্প নির্বাচন একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। চূড়ান্তভাবে প্রকল্প নির্বাচনের জন্য প্রকল্পটির যথার্থতা আরো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর সাহায্য নেয়া প্রয়োজন হয়।
খ. মাইক্রোস্ক্রিনিং (Micro-Screening):
মাইক্রোস্ক্রিনিং হলো বাজার চাহিদা, কারিগরি, বাণিজ্যিক ও আর্থিক দিক এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া। নিচে মাইক্রোস্ক্রিনিং-এর উপাদানগুলো ব্যাখ্যা করা হলো।
আলোচ্য দৃষ্টিকোণ থেকে যে প্রকল্পটি সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও লাভজনক তাই বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ক্ষুদ্র সেবামূলক ব্যবসায়, কেনা-বেচা ও অন্যান্য খুচরা ব্যবসায় প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান বিবেচনা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়, যেমন ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ের প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ম্যাক্রো ও মাইক্রো উভয় প্রকার স্ক্রিনিং আবশ্যক ।
৩. ব্যবসায় প্রকল্প প্রতিবেদন প্রণয়ন
ব্যবসায় প্রকল্প প্রণয়নের শেষ ধাপ হলো একটি সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করা। নির্বাচিত প্রকল্পটির সম্ভাবনা যাচাইয়ের তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।
আরও দেখুন...