বয়ঃসন্ধিকালে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (চতুর্থ অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য - | NCTB BOOK
66
66

একটি নবজাত শিশু বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের আদরে, স্নেহে বড়ো হয়ে ওঠে। এভাবে বাল্যকাল পার হয়ে কৈশোরে পদার্পণ করে এবং এর সাথে সাথে তার দ্রুত শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। এই কৈশোরকাল হচ্ছে একটি শিশুর বয়ঃসন্ধিকাল। এ সময় শিশু-কিশোরদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন নিরাপদ পরিবেশ। পরিবারের সকলের যত্ন ও ভালোবাসার মাঝে যে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর পরিবেশে একটি শিশু বেড়ে ওঠে, সে পরিবেশকে নিরাপদ পরিবেশ বলা হয়।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-
১. বয়ঃসন্ধিকালে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
২. বয়ঃসন্ধিকালে নিরাপত্তাহীনতার বিভিন্ন দিক বর্ণনা করতে পারব।
৩. বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপ সামলানোর কৌশলগুলো ব্যাখ্যা করতে পারব।

Content added By

বয়ঃসন্ধিকালে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পাঠ ১)

36
36

পরিবারের নিরাপদ পরিবেশে শিশু-কিশোররা সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। এজন্য তাদের পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য প্রয়োজন। নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য মা-বাবাসহ পরিবারের সকল সদস্যের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের দরকার রয়েছে। এ সময় শিশুরা আদর, স্নেহ, ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বড়ো হয়ে ওঠে। কিন্তু অনেক পরিবারে শিশুদের সাথে খারাপ আচরণ, যেমন: বকাঝকা, মারপিট, গালাগালি করা হয়। শিশুরা ভয়ে এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের কথা কাউকে বলতে পারে না। কোনো কোনো শিশু আবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুশ্রমে নিয়োজিতদের বেলায় এটা দেখা যায়। বাল্যবিবাহ, যৌতুকপ্রথা কিশোরীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।

Content added By

বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন (পাঠ ২)

48
48

নিরাপত্তাহীনতার বিভিন্ন দিক: ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে যদি কোনো কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং বাধ্যতামূলকভাবে সে কাজ করতে গিয়ে যদি তা তার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে তাকে নিপীড়ন বলা যায়। যেকোনো বয়সের ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষকে প্রচন্ডভাবে বকাবকি করা, উচ্চেঃস্বরে ধমক দেওয়া, অপমান করা, শারীরিকভাবে আঘাত করা কিংবা মারধর করা- এসব কাজ নিপীড়নের আওতায় পড়ে। আমাদের সমাজে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়। শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে শারীরিক নিপীড়ন বলে। যে সমস্ত কাজ, আচরণ, কথা প্রভৃতি শিশু-কিশোরকে মানসিক কষ্ট দেয় এবং শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে, তাকে মানসিক নিপীড়ন বলে। যেমন: গৃহকর্মী হিসেবে একটি শিশুকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করা, তার পক্ষে সে কাজ করা সম্ভব না হলে তাকে বকুনি দেওয়া ছাড়াও শারীরিক নির্যাতন করা বা গৃহসামগ্রী দিয়ে আঘাত করা হয়। ফলে ঐ শিশুটি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যৌননিপীড়ন: যৌননিপীড়ন আরেকটি বিষয় যা শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। অসৎ উদ্দেশ্যে কারো শরীরের কোন অংশে বিশেষত পোশাকে ঢেকে রাখা অংশে হাত বা অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে স্পর্শ বা আঘাত করা হলে তাকে যৌননিপীড়ন বলা হয়। যৌননির্যাতনের শিকার একজন কিশোর-কিশোরীর পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে আসতে কষ্ট হয়। সে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়।

কাজ-১: শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়। নিচে লেখা উপায়ের মধ্যে যেটা সঠিক তার ডানে টিক (ঘ) চিহ্ন দাও, আর ভুল হলে ব্রুস (x) চিহ্ন বসাও।
১. নিজের কাজে মনোযোগী হওয়া।
২. কোনো সমস্যা দেখা দিলে মা-বাবা বা অভিভাবকের সাথে আলোচনা না করা।
৩. নিপীড়নের প্রতিবাদ করা।
৪. পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝে কাজ না করা।
৫. আত্মসচেতন হওয়া।
৬. অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ করলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যহানি হওয়া।
কাজ-২: বাল্যবিবাহ কাকে বলে এবং বাল্যবিবাহের ফলে মা ও শিশুর কী ক্ষতি হয়- ধারাবাহিকভাবে লিখ।
Content added By

বয়ঃসন্ধিকালে দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার উপায় (পাঠ ৩)

65
65

বয়ঃসন্ধিকালে শিশু-কিশোরেরা শারীরিকভাবে দ্রুত বেড়ে ওঠে। এর সাথে সাথে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে। এ সময়ে তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা খুব প্রয়োজন। সুতরাং স্বাস্থ্য যাতে অটুট থাকে, সেদিকে প্রত্যেকেরই লক্ষ রাখা উচিত। সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে হলে যেমন শরীরের যত্ন নিতে হয়, তেমনি স্বাস্থ্য বিধানসমূহ মেনে চলতে হয়। তাহলে আমাদের জানা প্রয়োজন, কীভাবে আমরা সুস্থ থাকব অর্থাৎ কীভাবে আমরা স্বাস্থ্য রক্ষা করব। শরীরের গঠন ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখা এবং নীরোগ থাকাই হচ্ছে স্বাস্থ্যরক্ষা। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

দৈহিক স্বাস্থ্য: শিশুকাল থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত অর্থাৎ সাধারণত ২৫ বছর পর্যন্ত একজন মানুষের দেহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময়কালে এই দৈহিক বৃদ্ধি কখনো ধীরে, কখনো দ্রুত ঘটে। ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি স্থির থাকে। এরপর আর দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে না, বরং ক্ষয় হতে শুরু করে। কাজেই যেকোন বয়সের একজন ব্যক্তির শরীর সুস্থ রাখতে হলে তাকে বয়সোপযোগী সুষম খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলে সে তার দৈহিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারবে।

মানসিক স্বাস্থ্য: কোনো কারণে মানসিক অশান্তি থাকলে কাজে মন বসে না। দেহের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। আবার শরীর খারাপ থাকলে মন খারাপ হয়- চিন্তাশক্তি, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। তাই দৈহিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে। কারণ শরীর ও মনের সম্পর্ক নিবিড়, একে অপরের পরিপূরক।

দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার উপায়: স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে। এ জন্য প্রথমে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর তা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। স্বাস্থ্যবিষয়ক নিয়মকানুন বা স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে সময়ানুবর্তিতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রয়োজনীয় ও পরিমিত ব্যায়াম, বিশ্রাম ও ঘুম, প্রয়োজনীয় পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত খেলাধুলা, বিনোদন, সদা প্রফুল্ল থাকা, মাদকদ্রব্য বর্জন, আনন্দদায়ক বইপত্র পাঠ, সুষ্ঠ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন ইত্যাদি।

কাজ-১: গত তিন মাসে তোমার বাড়িতে এবং স্কুলে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে যেসব ঘটনা তোমার মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে, সেগুলো চিহ্নিত কর এবং প্রতিটির বর্ণনা লিখ।
ঘটনার উল্লেখঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা
১.১.
২.২.
৩.৩.
Content added By

অনুশীলনী

38
38

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. বয়ঃসন্ধিকালে শিশু-কিশোরদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজন কেন?
ক. শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
খ. পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের জন্য
গ. স্নেহ ও ভালোবাসার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য
ঘ. মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করার জন্য

২. বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের জন্য দরকার-
i. নিরাপত্তা
ii. স্বাস্থ্যরক্ষা
iii. আত্মসচেতনতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;