আমাদের দেশের ভূমিকম্প নিয়ে সাধারণ মানুষের একটি ভুল ধারণা আছে। যখন ভূমিকম্প হয়, তখন বেশির ভাগ মানুষের ধারণা হয় সেটি বুঝি ঠিক তার পায়ের নিচে ঘটছে। প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ সময় সেটি কয়েকশত কিলোমিটার কিংবা আরো দূরে কোথাও ঘটে এবং দূর থেকে তার কম্পনটি আমরা অনুভব করি। তোমরা যারা তোমাদের জীবনে কখনো ভূমিকম্প অনুভব করেছ, তারা সবাই লক্ষ করেছ, তখন মনে হয় পায়ের নিচের মাটি নড়ছে বা কাঁপছে। আসলেই তখন মাটি কাঁপতে থাকে এবং ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে কতদূরে মাটি কতটুকু কতটুকু কাঁপে তার পরিমাণ থেকে ভূমিকম্পের মাত্রাটির পরিমাপ করা হয়। এই সহজ এবং প্রচলিত পদ্ধতির নাম রিখটার স্কেল। আমরা যদি ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ১০০ কিলিমিটার দূরে থাকি এবং সেখানে বসে ভূমিকম্প চলাকালীন আনুমানিক ১০০ মিমি (বা ১০ সেন্টিমিটার) বিস্তৃত কম্পন অনুভব করি, তাহলে সেটাকে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প বলা হয়। যে যন্ত্র দিয়ে দিয়ে এই ধরনের ভূ-কম্পন মাপা হয় সেটিকে সিসমোগ্রাফ বলে।
রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পহচ্ছে মাঝারি (Moderate) ভূমিকম্প। এর থেকে কম মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেভাবে অনুভব করা যায় না। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প ১ মাত্রা বেড়ে গেলে কম্পন ১০ গুণ বেড়ে যায়! কাজেই ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পন ৫ মাত্রার কম্পন থেকে ১০ গুণ বেশি এবং সেটি বড় (Strong ভূমিকম্প। আবার ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের চাইতেও ১০ গুণ বেশি কম্পন হয় কাজেই সেটি গুরুতর (Major) ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নেওয়া না থাকার কারণে ২০১০ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে হাইতিতে তিন লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ৭ মাত্রা থেকে ১০ গুণ বেশি কম্পন হয়, কাজেই সেটাকে বিশাল অথবা ভয়াবহ (Great) ভূমিকম্প বলা যায়। পৃথিবীতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের উদাহরণ খুব বেশি নেই। ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো জনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অনেক উদাহরণ যেরকম আছে, আবার ভূমিকম্পের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কারণে ২০১৪ সালে চিলিতে মাত্র ছয়জন লোক মারা গিয়েছিল, সেই উদাহরণও আছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে আমরা যত দূরে থাকবো আমরা তত কম কম্পন অনুভব করব। উদাহরণ দেওয়ার জন্য বলা যায় ৫ মাত্রার একটা ভূমিকম্প ১০০ কিলোমিটার থেকে যতটুকু কম্পন পাওয়া যায়, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের বেলায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে থেকে সেই একই পরিমাণ কম্পন অনুভব করা যাবে।
ভূমিকম্পের সময় বিস্তৃত এলাকায় টেকটনিক সীমানা থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি বের হয়ে আসে। হিরোশিমাতে যে নিউক্লিয়ার বোমাটি ফেলা হয়েছিল একটি ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে সেই পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। তোমরা জেনেছ, রিখটার স্কেলে প্রতি মাত্রায় কম্পন ১০ গুণ করে বেড়ে যায়, কিন্তু নির্গত শক্তির পরিমাণ প্রতি মাত্রায় বেড়ে যায় প্রায় ৩২ গুণ! অর্থাৎ ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে যে পরিমাণ শক্তি বের হয় ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নির্গত শক্তি তার থেকে ১০০০ গুণ বেশি! কাজেই ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ১০০০টি হিরোশিমায় ব্যবহৃত নিউক্লিয়ার বোমার সমান শক্তি বের হয়।
আরও দেখুন...