দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে মূলধন বাজেটিং-প্রক্রিয়া প্রয়োগে জড়িত ধাপগুলো নিম্নরূপ :
ক) নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন
খ) বাট্টা হার নির্ধারণ
গ) মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্বাচন ও প্রয়োগ
ক) নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন : যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত যেমন: স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়, ব্যবসার সম্প্রাসারণ, উৎপাদন পদ্ধতির যান্ত্রিকীকরণে এবং অন্যান্য সিদ্ধান্তের সাথে নগদ প্রবাহ জড়িত। মূলধন বাজেটিং-প্রক্রিয়া প্রয়োগের প্রথম ধাপ হচ্ছে নগদের আন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ প্রাক্কলন করা। প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ করতে প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় পূর্বানুমান, চলতি খরচ পূর্বানুমান, মূলধনি ব্যয় এবং অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। বিক্রয় থেকে প্রতিষ্ঠানের নগদ আন্তঃপ্রবাহ ঘটে এবং চলতি খরচ, মূলধনি ব্যয় এবং অন্যান্য খরচ পূর্বানুমান থেকে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে। এখানে বিক্রয় অনুমান, চলতি খরচ, স্থায়ী খরচ প্রত্যেকটি বিষয় অতি সতর্কতার সাথে নির্ধারণ করতে হয়। আগেই বলেছি একটি প্রতিষ্ঠানের মোট বিক্রয় অনুমান করতে হলে প্রতিটি পণ্যের ভবিষ্যতে বিক্রয়মূল্য এবং প্রতিবছর কতগুলো পণ্য বিক্রি হবে তা পূর্বানুমান করতে হয়। এগুলো পূর্বানুমানের পর প্রতিবছর বিক্রি থেকে মোট অর্জিত আয় পাওয়া যায় এই অর্জিত আয় থেকে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়। অতএব বলা যায়, নগদ প্রবাহের সঠিক প্রাক্কলন নির্ভর করে পণ্যের ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে বিক্রয়মূল্য এবং কতগুলো পণ্য বিক্রয় হবে তার উপর। এ কারণে, ভবিষ্যৎ বিক্রয়মূল্য অনুমানে বা পণ্য বিক্রির সংখ্যা অনুমানে ভুল হলে সেটির প্রভাব নগদ প্রবাহকে প্রভাবিত করে। অনুরূপভাবে প্রতিষ্ঠানের মোট খরচের মাধ্যমে নগদ বহিঃপ্রবাহ ঘটে। একটি প্রতিষ্ঠানের চলতি খরচ এবং স্থায়ী খরচ মিলে মোট খরচ হয়। চলতি খরচ বলতে কাঁচামাল ক্রয় বাবদ খরচ, কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য পরিচালনা খরচ এবং স্থায়ী খরচ বলতে অফিস ভাড়া, বিমা খরচ, অবচয়সহ অন্যান্য খরচকে বুঝানো হয়। বিক্রয় অনুমানের মতো প্রত্যেক চলতি খরচ এবং স্থায়ী খরচ পূর্বানুমানে অতি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কোনো কারণে এসব খরচ অনুমানে ভুল হলে মূলধন বাজেটিং ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারে, যে কারণে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
খ) বাট্টা হার : নগদ প্রবাহ নির্ধারণ করার পর সেগুলোকে নগদ মূল্যে রূপান্তর করার জন্য বাট্টা হার প্রয়োজন হয়। অর্থের সময় মূল্য অধ্যায়ে তোমরা জেনেছ যে ভবিষ্যৎ বছরগুলোতে আগত নগদ প্রবাহের পরিমাণ সমান হলেও সেগুলোর বর্তমান মূল্য সমান হয় না। অর্থের সময়মূল্য অনুযায়ী নগদ প্রবাহ যত দেরিতে পাওয়া যায়, সেটির বর্তমান মূল্য তত কম। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প থেকে যেহেতু বেশ কয়েক বছর ধরে নগদ প্রবাহ পাওয়া যায়, সেহেতু মূলধন বাজেটিং-এর মাধ্যমে সঠিক বিনিয়োগ সুযোগ নিতে হলে ভবিষ্যতে আগত নগদ প্রবাহগুলোর বর্তমান মূল্য নির্ণয় করতে হয়। বাট্টাকরণ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহকে বর্তমান মূল্যে রূপান্তর করা হয়। এ কারণে বাট্টা হারের প্রয়োজন হয়। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের মূলধন খরচকে মূলধন বাজেটিং-প্রক্রিয়ার বাট্টা হার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মূলধন ব্যয় সম্পর্কে তোমরা পরের অধ্যায়ে বিস্তারিত জানতে পারবে। আয়-ব্যয় প্রাক্কলনের পূর্বেই বাট্টা হার নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গ) মূলধন বাজেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ : নগদ প্রবাহ প্রাক্কলন এবং বাট্টা হার নির্ধারণের পর মূলধন বাজেটিং পদ্ধতি নির্বাচন করতে হয়। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য মূলধন বাজেটিং-এর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রত্যেকটি পদ্ধতি সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রত্যেকটি পদ্ধতির কিছু সুবিধা- অসুবিধা রয়েছে। বিনিয়োগ সুযোগ বা প্রকল্পের ধরন, ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে সঠিক পদ্ধতিটি নির্বাচন করতে হয়।
আরও দেখুন...