মৌলিক উৎপাদকের গাছ

ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - গণিত - NCTB BOOK

প্রকৃতিতে কিছু গাছ দেখা যায় যাদের ডালপালা বা শাখা-প্রশাখা নেই। যেমন, সুপারি গাছ, তাল গাছ, নারকেল গাছ, খেজুর গাছ ইত্যাদি। আবার কিছু গাছপালা আছে যাদের অনেক ডালপালা বা শাখা-প্রশাখা আছে। যেমন: আম গাছ, জাম গাছ, মরিচ গাছ ইত্যাদি।

তোমরা হয়তো ভাবছ গাছের সাথে আবার উৎপাদকের কী সম্পর্ক!

ভেবে দেখ তো মরিচ গাছে মরিচ হয়, আম গাছে আম আর গোলাপ ফুলের গাছে গোলাপ ফুল। তাহলে মৌলিক উৎপাদকের গাছে ফুল হিসেবে কী থাকবে?

নিচের ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবে।

খেয়াল করলে দেখতে পাবে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে হলুদ রঙের ফুল হিসাবে আঁকা হয়েছে। আচ্ছা ভেবে দেখ তো এখানে ৩ = ৩ বা ১ বা ২ = ২ বা ১ এভাবে কেন লেখা নাই ?

১ মৌলিক সংখ্যা কি না তোমরা কি জানো ?

আবার, ৯৬ সংখ্যাটির জন্য কিন্তু নিচের ছবির মতো করেও উৎপাদকের গাছ আঁকা যায়।

এবার, সবাই মিলে ৯৬ সংখ্যাটির জন্য আরও কত বিভিন্ন রকম উৎপাদক গাছ আঁকা যায় খুঁজে বের করো। 

এবারে লটারির মাধ্যমে প্রত্যেকে একটি করে স্বাভাবিক সংখ্যা বেছে নাও। লটারিতে পাওয়া সংখ্যাটির জন্য কত রকম উৎপাদক গাছ আকা যায় খুঁজে বের করো। সবগুলো উৎপাদক গাছ একটা পোস্টার কাগজে বা পুরাতন ক্যালেন্ডারে এঁকে তোমার শিক্ষক, সহপাঠী সবাইকে দেখাও। তোমার পছন্দমতো গাছ আঁকতে পারো শুধু মৌলিক সংখ্যাগুলো হলুদ রং দিয়ে আঁকবে। তোমাদের সবার উৎপাদক গাছ একসাথে সাজিয়ে বাগান তৈরি করে প্রদর্শনী করো।

এবার নিচের সংখ্যাগুলো দিয়ে উৎপাদকের গাছ তৈরি করো।

তবে তোমরা প্রয়োজনে নিচের ছবির মতো করে উপর থেকে নিচের দিকেও উৎপাদকের গাছ আঁকতে পারো। সেক্ষেত্রে কী সুবিধা হবে বলতে পারো? এই গাছের মতো ছবিগুলোকে ইংরেজিতে “Tree Diagram” বলা হয়ে থাকে।

চলো এবার ১২ এর মৌলিক উৎপাদকের গাছটি নিচের ছবিতে দেখি।

লক্ষ করো, এখানে ১২ এর উৎপাদকের গাছ থেকে শুধুমাত্র মৌলিক সংখ্যাগুলো নেওয়া হয়েছে।

এবার নিচের মৌলিক উৎপাদকের গাছগুলো পূরণ করো।

🧩গুণিতক ও গুণনীয়কের খেলা

এখন আমরা কোনো সংখ্যার গুণিতক ও গুণনীয়ক নিয়ে একটা মজার খেলা খেলব। তোমরা নিশ্চয়ই জানো কীভাবে কোনো সংখ্যার গুণিতক এবং গুণনীয়ক নির্ণয় করতে হয়। এখন আরেকটা মজার ব্যাপার বলি। “উৎপাদক আর গুণনীয়ক কিন্তু আলাদা কিছু নয়।”

তার মানে, তোমরা কোনো সংখ্যার গুণনীয়ক বের করার জন্য উৎপাদকের গাছ-এর ধারণা ব্যবহার করতে পারো।

🎮খেলার নিয়ম

■ প্রথমে ১ম সংখ্যা ও ২য় সংখ্যার মৌলিক উৎপাদকের গাছ আঁকো;

■ ১ম সংখ্যার সবগুলো মৌলিক উৎপাদক যদি ২য় সংখ্যার মধ্যে থাকে তাহলে, ১ম সংখ্যা ২য় সংখ্যার গুণনীয়ক এবং ২য় সংখ্যা ১ম সংখ্যার গুণিতক হবে;

■ আবার ২য় সংখ্যার সবগুলো মৌলিক উৎপাদক যদি ১ম সংখ্যার মধ্যে থাকে তাহলে; ২য় সংখ্যা ১ম সংখ্যার গুণনীয়ক এবং ১ম সংখ্যা ২য় সংখ্যার গুণিতক হবে।

নিচের ছবিগুলো দেখে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।

• এরপর / অথবা × চিহ্ন দিয়ে নিচের ছকটি পূরণ করো।

🎱গসাগু”র খেলা

তোমরা গসাগু নির্ণয়ের একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছ। নিচের পদ্ধতিটাও নিশ্চয়ই তোমাদের অজানা নয়।

“একটি সংখ্যার সবগুলো মৌলিক উৎপাদক যদি অন্য একটি সংখ্যার মধ্যে থাকে তাহলে ১ম সংখ্যা ২য় সংখ্যার গুণনীয়ক হবে।”

তাহলে দুইটি সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ক হবে এমন একটি সংখ্যা যার সবগুলো মৌলিক উৎপাদকই ঐ দুইটি সংখ্যার মৌলিক উৎপাদকের গাছে থাকবে।

এখন, গসাগু অর্থাৎ গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাধারণ গুণনীয়ক। সেক্ষেত্রে তোমরা দুইটি সংখ্যারই মৌলিক উৎপাদকের গাছে পাওয়া যাবে এমন সবগুলো মৌলিক উৎপাদক খুঁজে বের করলে তাদের গুণফলই হবে গসাগু। 

চাইলে চেষ্টা করে দেখতে পারো এই গুণফলের চেয়ে বড় কোন সংখ্যা নিলে সেটা দুইটি সংখ্যারই সাধারণ উৎপাদক হতে পারে কিনা?

এবার ভেবে দেখতো মৌলিক উৎপাদকের গাছের সাহায্যে কীভাবে গসাগু নির্ণয়ের খেলাটি খেলতে হবে?

🎱গসাগু’র খেলার নিয়ম:

■ দুইটি সংখ্যার মৌলিক উৎপাদকের গাছ আঁকো।

■ দুইটি সংখ্যার মৌলিক উৎপাদকের গাছেই আছে এমন মৌলিক উৎপাদকগুলো চিহ্নিত করো। এগুলো হচ্ছে ঐ সংখ্যা দুইটির সাধারণ মৌলিক উৎপাদক।

■ এবার সাধারণ মৌলিক উৎপাদকগুলোর গুণফলই হবে ঐ সংখ্যার গসাগু।

ছবিতে গসাগু”র খেলার মাধ্যমে ১৮ ও ১২ এর গসাগু নির্ণয় দেখে নাও।

পাশের দেখানো মৌলিক উৎপাদকের গাছের সাহায্যে গসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি এবং গসাগু খেলা অংশের শুরুতে দেখানো পদ্ধতির মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছ কি?

নিচের ছবিটা দেখলে খুব সহজেই বুঝতে পারবে যে দুটি পদ্ধতি আসলে একই।

‘’১ মৌলিক উৎপাদকের গাছে না থাকলেও কিন্তু সব সংখ্যার উৎপাদক/গুণনীয়ক।''

যদি দুইটি সংখ্যার মধ্যে ১ ছাড়া অন্য কোনো সাধারণ গুণনীয়ক না থাকে অর্থাৎ তাদের গসাগু ১ হয় তাহলে সংখ্যা দুইটিকে আমরা সহমৌলিক সংখ্যা (Co-prime numbers) বলি।

যেমন: ৪ ও ৯ এর গসাগু ১। তাই ৪ ও ৯ পরস্পর সহমৌলিক।

করে দেখি

এবার গসাগু’র খেলার মাধ্যমে মৌলিক উৎপাদকের গাছের চিত্র (ডায়াগ্রাম) ব্যবহার করে সংখ্যাগুলোর গসাগু নির্ণয় করো।

১) ২৮, ২৪

২) ৩৫, ২৫, ১০৫

৩) ৪৫, ১৮, ৯৯

৪)২৮, ৪৮, ৭২

৫) ৩১, ৩২, ৩৪১

এবার গুণনীয়কের তালিকা তৈরি করে সংখ্যাগুলোর গসাগু নির্ণয় ও যাচাই করো।

ইউক্লিড পদ্ধতিতে ভাগ প্রক্রিয়ায় গসাগু নির্ণয়

ছবিতে গসাগু নির্ণয়

তোমরা দুইটি সংখ্যার গসাগু নির্ণয়ের দুইটি উপায় সম্পর্কে জেনেছ।

• প্রথম পদ্ধতি

➡️ সংখ্যা দুইটির সবগুলো গুণনীয়ক বা উৎপাদকের তালিকা তৈরি করো।

➡️ তালিকা থেকে সংখ্যা দুইটির সাধারণ উৎপাদকগুলো খুঁজে বের করো।

➡️ এবার সাধারণ উৎপাদকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যাটিই হবে ঐ সংখ্যাদুইটির গসাগু।

উদাহরণ

২০ এর গুণনীয়ক১, ২, ৪, ৫, ১০,২০
৩২ এর গুণনীয়ক১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২

অর্থাৎ গসাগু = ৪

• দ্বিতীয় পদ্ধতি

➡️ সংখ্যা দুইটিকে মৌলিক উৎপাদক গাছের সাহায্যে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।

➡️ সংখ্যা দুইটির সাধারণ মৌলিক উৎপাদকগুলো খুঁজে বের করো।।

➡️ এবার সাধারণ মৌলিক উৎপাদকগুলোর গুণফলই হবে ঐ সংখ্যা দুইটির গসাগু।

উপরের দুইটি পদ্ধতিতেই উৎপাদকের তালিকা তৈরি অথবা মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণের জন্য অনেকবার সংখ্যা দুইটিকে ভাগ করার প্রয়োজন হয়। আর সংখ্যা দুইটি অনেক বড় হলে সেক্ষেত্রে দুই পদ্ধতিতেই গসাগু নির্ণয় করতে বেশ সময় লাগবে।

এই গসাগু নির্ণয়ের কাজটা আরেকটু সহজ করার জন্য গণিতবিদ Euclid (300 B.C অর্থাৎ ৩০০ খ্রি. পূর্ব) অন্য একটি মজার পদ্ধতি খুঁজে পান। অবশ্য Nicomachus নামের আরও একজন গণিতবিদ এই গসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি জানতেন। পাশের ছবিটি দেখো।

এখন সেই মজার পদ্ধতিতেই ৪৪ ও ১৮ এর গসাগু নির্ণয় করা হবে।

■ প্রথমে স্কেলের সাহায্যে একটি ৪৪ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৫ সেমি প্রস্থের কাগজের স্ট্রিপ কেটে নাও।

■ এবার ১৮ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৫ সেমি প্রস্থের কয়েকটি কাগজের স্ট্রিপ কেটে নাও। (এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্যের পরিমাপই গসাগু নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি স্ট্রিপের প্রস্থ ৫ সেমি এর পরিবর্তে অন্য যেকোনো সুবিধাজনক পরিমাপ নিতে পারো। তবে সেক্ষেত্রে সবগুলো স্ট্রিপ একই প্রস্থবিশিষ্ট নিলে সুবিধা হবে।

■ এবার ৪৪ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপের পাশে ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপটি বসাও। ৪৪ সেমি দৈর্ঘ্য পূরণ হতে আরও ২৬ সেমি বাকি আছে।

■ এখন বলো তো সর্বোচ্চ কতগুলো ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানো যাবে যেন মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ সেমি এর বেশি না হয়?

■ ছবিতে দেখতে পাচ্ছ দুইটি ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানোর পর বাকি থাকে ৮ সেমি। 

■ এবারে কয়েকটি ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ তৈরি করে একটি ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপের পাশে বসাও।

■ ছবিতে দেখতে পাচ্ছ দুইটি ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানোর পর ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ পূরণ করতে বাকি থাকে ২ সেমি।

■ এরপর কয়েকটি ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ তৈরি করে একটি ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপের পাশে বসাও।

■ ছবিতে দেখতে পাচ্ছ চারটি ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানোর পর ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ সম্পূর্ণ পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

■ এবার আমাদের কাজ শেষ এবং সবশেষে ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ দিয়ে আমরা ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের একটা স্ট্রিপ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। কাজেই, ৪৪ এবং ১৮ এর গসাগু হবে ২।

কিন্তু কেন এই কাগজের স্ট্রিপ পূরণ করতে করতে আমরা গসাগু পেয়ে গেলাম সেটাও তো জানতে হবে। উত্তরটা লুকিয়ে আছে গুণিতকের ধারণার মধ্যে।

নিচের ছবিতে নিজেই দেখে নাও।

সবশেষে ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ দিয়ে আমরা ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের একটা স্ট্রিপ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। তাহলে, ২ কিন্তু ৮ এর গুণনীয়ক।

ছবি থেকে এটাও বোঝা যাচ্ছে, ২ কিন্তু ১৮ এবং ৪৪ দুইটি সংখ্যারই গুণনীয়ক।

তার মানে, ২ সংখ্যাটি যে ৪৪ ও ১৮ দুইটি সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ক সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

এখন, শেষ প্রশ্ন থাকবে তোমাদের কাছে : 

২ সংখ্যাটি ৪৪ ও ১৮ এর সবচেয়ে বড় বা গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক সেটা কি উপরের পদ্ধতিতে ছবি থেকে প্রমাণ করা যায়? শুরুতে প্রত্যেকে আলাদা করে চিন্তা করে দেখো।

এরপর শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে তোমার চিন্তা বা মতামত সবাইকে প্রদর্শন করো এবং দলগত আলোচনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে সবাই মিলে প্রমাণটি সম্পূর্ণ করো। ভাগ প্রক্রিয়ার সাথে ইউক্লিড পদ্ধতিতে গসাগু নির্ণয়ের একটিভিটির সম্পর্ক:

ছবিতে তিনটি সংখ্যার গসাগু নির্ণয়:

📚 অনুশীলনী

১) ছবির মাধ্যমে এবং ভাগ প্রক্রিয়ায় নিচের সংখ্যাগুলোর গসাগু নির্ণয় করো।

(ক) ২৪, ৪৫, ৭২ (খ) ৫৬, ৭৮, ৯০ (গ) ১২০, ৫৬, ৭৮ (ঘ) ৯৯, ৩৩, ১২৩ (ঙ) ৯৫, ৫৭, ২৩

২) চিত্র থেকে ১০০ এবং ৪৪ এর গসাগু নির্ণয় করা যায়।

কীভাবে বলো তো?

চলো এবার বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় কীভাবে ও কেন গসাগু প্রয়োজন হয় তার কিছু নমুনা দেখি।

৩) ১৫ মিটার এবং ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুইটি দড়ি আছে। এই দুইটি দড়িকে কেটে ছোট ছোট একই দৈর্ঘ্যের টুকরো করতে হবে যেন দড়ির কোনো অংশ নষ্ট না হয়। ছোট ছোট টুকরার দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ কত হতে পারে?

৪) একজন দোকানদার ১২টি প্যাকেটে মোমবাতি বিক্রি করে এবং ৮টি প্যাকেটে মোমবাতি স্ট্যান্ড বিক্রি করে। প্রতিটি মোমবাতি স্ট্যান্ডের জন্য একটি মোমবাতি থাকতে হলে আয়শাকে সর্বনিম্ন কতগুলো মোমবাতি এবং মোমবাতি স্ট্যান্ড কিনতে হবে?

৫) একজন ফুল বিক্রেতা বিভিন্ন সারিতে ২৪টি ফুলের তোড়া সাজাতে চায়। তিনি প্রতিটি সারিতে একই সংখ্যক তোড়া দিয়ে সেগুলো কত বিভিন্ন উপায়ে সাজাতে পারেন?

৬)২১০টি কমলা, ২৫২টি আপেল এবং ২৯৪টি নাশপাতি সমানভাবে কার্টনে প্যাক করা হয়েছে যাতে

কোনো ফল অবশিষ্ট না থাকে। সর্বোচ্চ কতগুলো কার্টন প্রয়োজন হবে সেখানে?

৭) একটি ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা যথাক্রমে ৬ মি ৮০ সেমি, ৫ মি ১০ সেমি এবং ৩ মি ৪০ সেমি। তোমাকে কোনো স্কেল দেওয়া হবে না শুধু একটি লাঠি দেওয়া হবে। লাঠির দৈর্ঘ্য তুমি যা চাইবে সেটাই পাবে কিন্তু একবারই বলার সুযোগ পাবে মানে লাঠি একটিই পাবে। এই লাঠি দিয়ে তোমাকে ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রত্যেকটি সঠিকভাবে পরিমাপ করে নিশ্চিত করতে হবে। তুমি সর্বোচ্চ কত দৈর্ঘ্যের লাঠি চাইতে পারবে?

৮) দুটি সংখ্যার গসাগু হলো ৬, একটি সংখ্যা ৪২ হলে অন্য সংখ্যাটি কত হতে পারে ?

৯) বালতি ও পানির সাহায্যে একটিভিটি : 

ক) ৩ লিটার ও ৫ লিটার পানির বালতি দিয়ে কীভাবে ৪ লিটার পানি পরিমাপ করা যায়? এক্ষেত্রে বালতির গায়ে কোনোরকম পরিমাপ নির্দেশক দাগ কাটা থাকবে না। আবার অন্য কোনো পরিমাপ যন্ত্র যেমন স্কেল বা দাঁড়িপাল্লা ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।

খ) ৪ লিটার ও ৬ লিটার পানির বালতি দিয়ে নিচের কোন কোন পরিমাণ পানি পরিমাপ করা যায়? (এক্ষেত্রে অন্য পাত্রে রাখার সুযোগ থাকবে ৭, ৮, ৯, ১০ লিটারের জন্য)

লসাগু’র খেলা

১) দুইটি সংখ্যা নিয়ে সংখ্যাগুলোর মৌলিক উৎপাদকের গাছ আঁক। এবার নিচে লসাগু'র একটা বাক্স ও আলাদা করে আঁক যেখানে লসাগু'র মৌলিক উৎপাদকগুলো থাকবে। পূর্বের ধারণার মাধ্যমে ১ম সংখ্যা থেকে উৎপাদক নাও এবং তার গুণিতক বের করার জন্য ২য় সংখ্যায় একই উৎপাদক থাকলে তা ১ম সংখ্যার উৎপাদকের সাথে মিলাও। এবার ২য় সংখ্যায় আরও মৌলিক উৎপাদক থাকলে ১ম সংখ্যার গুণিতক বানানোর জন্য তা নিচে লসাগু’র বাক্সে নামাও।

• এক্ষেত্রে নিচের মতো করে আগে ১ম সংখ্যার উৎপাদক নামাও। এরপর ২য় সংখ্যার গিয়ে একই উৎপাদক থাকলে তা ১ম সংখ্যার সাথে মিলাও। আরও অবশিষ্ট থাকলে ১ম সংখ্যার গুণিতক বানানোর জন্য সেটা নিচে নামাও। এখানে ১ম সংখ্যা ৪ থেকে প্রথমে ২, ২ মৌলিক উৎপাদক নিচে আসবে। এরপর ২য় সংখ্যা ৬ থেকে একই মৌলিক উৎপাদক ২ মিলাও এবং ৩ নিচে নামাও।

২) এভাবে লসাগু করতে পারলে এরপর দুইটি বড় সংখ্যা নাও। ধরা যাক সংখ্যা দুইটি ৩০ ও ৪৫ । প্রথমে এই সংখ্যা দুইটির মৌলিক উৎপাদক এর গাছ বানাও।

এরপর আগের বর্ণিত নিয়ম অনুসারে আগে প্রথম সংখ্যা থেকে মৌলিক উৎপাদক লসাগু’র বাক্স নামাও। এরপর দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে একই মৌলিক উৎপাদক মিল করো ও অবশিষ্ট মৌলিক উৎপাদক নামাও। 

এরপর লসাগু’র মৌলিক উৎপাদক থেকে লসাগু বের করো।

 ■ এভাবে লসাগু বের করার মাধ্যমে সাধারণ গুণিতক বের করে লসাগু নির্ণয় ও মৌলিক উৎপাদক থেকে লসাগু নির্ণয় করার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। এরপর লসাগু'র মৌলিক উৎপাদক ১ম সংখ্যা ও ২য় সংখ্যায় একইসাথে খেয়াল করবে। একই মৌলিক উৎপাদক পাওয়া গেলে তীর চিহ্ন দিয়ে সেটা বাক্সে নামাবে, একই না পাওয়া গেলে সেটা শুধু তীর চিহ্ন দিয়ে সেটা নামাবে। এভাবে লসাগু বের করলেও দেখবে যে লসাগু একই আসে।

   ■১৮, ১২, ১৪ এর লসাগু নির্ণয় করার উপায় এর একটা ধারণা পেয়েছ।

উপরের পদ্ধতিকেই লসাগু নির্ণয়ের ‘ইউক্লিডীয় প্ৰক্ৰিয়াত বলা হয়।

• নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো। 

 ১)এই পদ্ধতিতে অন্তত দুইটি সংখ্যার মধ্যে থাকলে তবেই সেটাকে বেছে নেওয়া বা সেটা দিয়ে ভাগ করা হচ্ছে কেন ?

 ২) শুরুতে ২ এর পরিবর্তে ৭ বা ৩ দিয়ে ভাগ করে দেখো লসাগু একই হয় কিনা?

ইউক্লিডীয় প্রক্রিয়ায় লসাগু নির্ণয় সম্পর্কে যা জানলাম:

১২, ১৮, ২০, ১০৫ এর লসাগু নির্ণয়। 

 সমাধান:

প্রদত্ত উদাহরণ থেকে নিয়মটি লক্ষ করি :

  ■ সংখ্যাগুলোর মধ্যে (,) চিহ্ন দিয়ে তাদেরকে এক সারিতে লিখে নিচে একটি রেখা (L) টানা হয়েছে।

  ■ প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর কমপক্ষে দুইটিকে সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক দ্বারা ভাগ করা হয়েছে।

  ■ গুণনীয়কটি দ্বারা যে সংখ্যাগুলো নিঃশেষে বিভাজ্য তাদের ভাগফলও এর সঙ্গে নিচে লেখা আছে। যেগুলো বিভাজ্য নয় সেগুলো অপরিবর্তিত রেখে লেখা হয়েছে।

  ■ নিচের সারির সংখ্যাগুলো নিয়ে আগের নিয়মে কাজ করা হয়েছে।

  ■ এভাবে ভাগ করতে করতে সবার নিচের সারির সংখ্যাগুলো যখন পরস্পর সহমৌলিক হয়েছে তখন আর ভাগ করা হয়নি।

  ■ নিচের সারির সংখ্যাগুলো ও ভাজকগুলোর ধারাবাহিক গুণফলই নির্ণেয় লসাগু।

লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক (লসাগু)

আমরা জানি, ৪ এর গুণিতকগুলো : ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০, ২৪, ২৮, ৩২, ৩৬, ৪০, ৪৪, ৪৮ ইত্যাদি

                   ৬ এর গুণিতকগুলো: ৬, ১২, ১৮, ২৪, ৩০, ৩৬, ৪২, ৪৮, ৫৪ ইত্যাদি

                   এবং ৮ এর গুণিতকগুলো : ৮, ১৬, ২৪, ৩২, ৪০, ৪৮, ৫৬, ৬৪ ইত্যাদি।

দেখা যাচ্ছে, ৪, ৬ ও ৮ এর সাধারণ গুণিতক ২৪, ৪৮ ইত্যাদি, এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাধারণ গুণিতক ২৪।

:• ৪, ৬ ও ৮ এর লসাগু ২৪।

৪ = ২ × ২, ৬ = ২ × ৩, ৮ = ২ × ২ × ২

এখানে, ৪, ৬, ৮ সংখ্যাগুলোর মৌলিক গুণনীয়কে ২ আছে সর্বোচ্চ ৩ বার, ৩ আছে সর্বোচ্চ ১ বার। 

কাজেই ২ তিনবার, ৩ একবার নিয়ে ধারাবাহিক গুণ করলে পাওয়া যায়, ২ × ২ × ২ × ৩ বা ২৪, যা প্ৰদত্ত সংখ্যাগুলোর লসাগু ।

             ■ এখানে মৌলিক উৎপাদকগুলোর সর্বোচ্চ সংখ্যা নিয়ে লসাগু নির্ণয়ের প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি মৌলিক উৎপাদকের গাছের সাহায্যে ইউক্লিডীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাখ্যা করো।

📚 অনুশীলনী

১) মৌলিক উৎপাদকের গাছের সাহায্যে 'লসাগু’র খেলা' অংশে আলোচনার সব কয়টি পদ্ধতিতে লসাগু নির্ণয় করো। 

(ক) ১৪, ১৫, ১২(খ) ৬৬, ৭৮, ১০০ (গ) ১২০, ৫৬, ৬০ (ঘ) ৫৫, ১৫, ১৪৩ (ঙ) ২৫, ৫৭, ৯৫

২) গসাগু ও লসাগু'র মধ্যে সম্পর্ক 

যে কোনো দুইটি সংখ্যা ১০ এবং ৩০ নিয়ে মৌলিক গুণনীয়কগুলো নির্ণয় করা হলো। 

১০ = ২ × ৫, ৩০ = ২ x ৩ x ৫ 

১০ এবং ৩০ এর গসাগু = ২ x ৫ = ১০

এবং লসাগু = ২ × ৩ × ৫ = ৩০

আবার, ১০ এবং ৩০ সংখ্যাদ্বয়ের গুণফল = ১০ × ৩০ = (২× ৫) × (২× ৩ × ৫) = গসাগু x লসাগু

:• দুইটি সংখ্যার গুণফল সংখ্যা দুইটির গসাগু ও লসাগু এর গুণফলের সমান।

দুইটি সংখ্যার গুণফল = সংখ্যাদ্বয়ের গসাগু × সংখ্যাদ্বয়ের লসাগু 

এবার, ‘দুইটি সংখ্যার গুণফল সংখ্যা দুইটির গসাগু ও লসাগু’র গুণফলের সমান।

তুমি কি উপরের গাণিতিক উক্তিটি ‘গসাগু’র খেলা' এবং 'লসাগু’র খেলা' অংশে আলোচনা করা পদ্ধতির মাধ্যমে যেকোনো দুইটি সংখ্যার জন্য সত্য প্রমাণ করতে পারবে?

           চলো এবার বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় কীভাবে ও কেন লসাগু প্রয়োজন হয় তার কিছু নমুনা দেখি।

৩) সর্বনিম্ন কতজন শিক্ষার্থীকে ৩, ৪, ৬ এবং ৮ জনের দলে সাজানো যেতে পারে যাতে কোনো ক্ষেত্রেই কেউ অবশিষ্ট না থাকে?

৪) একটি লোকাল বাস সার্ভিসে ২ রকম বাস রয়েছে যেগুলো সকাল ৮ টায় থেকে একসাথে যাত্রা শুরু করে। প্রথম ধরনের বাসগুলো প্রতি ১৫ মিনিট পরপর ছেড়ে যায় এবং দ্বিতীয় ধরনের বাসগুলো প্রতি ২০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায়। কোনো একটি দিনে সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই ধরনের বাসই একই সাথে বা একই সময়ে কতবার ছেড়ে যায়?

৫) তিনজন চিত্রশিল্পী রন, হাবিব এবং শেলি একটি হোটেলের কক্ষে নকশা করার কাজ করছেন। হোটেলে রুম নম্বর আছে ১৫ থেকে ২০০। রনকে সব কক্ষেই কাজ করতে হবে। হাবিবকে সেই কক্ষে কাজ করতে হবে যেখানে রুম নম্বরটি ৩ এর গুণিতক। শেলিকে সেই কক্ষে কাজ করতে হবে যেখানে রুম নম্বরটি ৫ এর গুণিতক। কোন কোন ঘরে তারা সবাই একসাথে কাজ করবে?

৬) সারা প্রতি ৬তম দিনে একটি শপিং মলে যায়। অ্যান্ডি প্রতি ৭ম দিনে একই শপিং মলে যায়। ১লা ডিসেম্বর থেকে গণনা শুরু করলে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে মোট কতবার তাদের মলে দেখা হবে?

৭) সামির একবারে ৪ ধাপ লাফ দিতে পারে এবং নিনা একবারে ৫ ধাপ লাফ দিতে পারে। উভয়ে একসাথে লাফাতে শুরু করলে কোন ধাপে উভয়েই মিলিত হবে?

৮) অমিয়ার সপ্তাহের প্রতি ২য় দিনে একটি সংগীতের ক্লাস এবং প্রতি ৩য় দিনে পেইন্টিং ক্লাস হয়। কোন দিন তার উভয় ক্লাস হবে?

৯) আজ, ফুটবল দল এবং বাস্কেটবল দল উভয়েরই খেলা ছিল। ফুটবল দল প্রতি ৩ দিনে খেলে এবং বাস্কেটবল দল প্রতি ৫ দিনে খেলে। আবার কবে একই দিনে দুই দলের খেলা হবে?

১০) তুমি প্রতি ৪ সেকেন্ডে তোমার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে একবার হাসো এবং তোমার বন্ধু প্রতি ৬ সেকেন্ডে তোমার দিকে তাকিয়ে ফিরে হাসেন। তুমি ও তোমার বন্ধু একই সাথে কখন হাসবে ? সংকেত : নিজেরাই হাসাহাসি করে দেখো।

১১) ছবিতে দুইটি ভিন্ন আকারের বর্গাকৃতি বাক্স দিয়ে পাশাপাশি দুইটি আলাদা স্তুপ করা হচ্ছে। দুটি স্তুপের উচ্চতা সমান করতে হলে সর্বনিম্ন কতগুলো কমলা বাক্স এবং কতগুলো নীল বাক্স প্রয়োজন হবে? সর্বনিম্ন কত উচ্চতায় স্তুপ দুটি সমান উঁচু হবে?

১২) একটি ম্যারাথন দৌড়ে দুইজন ব্যক্তি দৌড় শুরু করার পর নির্দিষ্ট সময় পরপর পানি পান করেন। প্রথম ব্যক্তি প্রতি ৯ মিনিটে একবার পানিপান করেন। দৌড় শুরুর ৭২ মিনিট পরে প্রথমবার দুইজন একই সময়ে পানি পান করেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি কত সময় পরপর পানি পান করেন? ৭২ মিনিটে দ্বিতীয় ব্যক্তি কতবার করে পানি পান করেন?

১৩) ঢাকার নগর সার্ভিসের একটি বাস A প্রতি ৬০ মিনিট পরপর বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যায়। আবার একই বাসস্ট্যান্ড থেকে আরেকটি বাস B প্রতি ৮০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায়। প্রতিদিন সকাল ৬ টায় বাস দুইটি তাদের সার্ভিস শুরু করে। প্রতিদিন মোট কতবার এবং কোন কোন সময়ে উভয় বাস একসাথে বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যাবে?

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion