আমরা পবিত্র বাইবেলে বর্ণিত প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনেক আশ্চর্য ঘটনার কথা জানি। এই কাজগুলো তিনি তাঁর প্রচারজীবনে করেছেন। এই আশ্চর্য কাজগুলোর মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। এগুলো হলো তাঁর ঐশরাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রকাশ। লোকেরা এই কাজগুলো দেখে স্তম্ভিত হয়ে যেত। কারণ তারা এধরনের কাজ এর আগে কখনো দেখেনি। এই অধ্যায়ে আমরা প্রভু যীশুর আশ্চর্য কাজসমূহের কথা চিন্তা ও ধ্যান করে যীশুর ওপর আমাদের আস্থা আরও গভীর করে তুলব।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
আগে আমরা মথি, মার্ক, লুক ও যোহন লিখিত মঙ্গলসমাচারে প্রভু যীশুর আশ্চর্য কাজগুলোর কথা জেনেছি। আমরা খ্রীষ্টের আশ্চর্য কাজের একটি তালিকা দেখতে পেয়েছি। এ আশ্চর্য কাজগুলোর মধ্য দিয়ে যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। এ শক্তি বা ক্ষমতা মন্দতা বা অপশক্তির বিরুদ্ধে। মন্দতার বিরুদ্ধে তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি একটি নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এই নতুন রাজ্যই হলো ঐশরাজ্য।
আমরা রাজ্য বলতে এমন একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকে বুঝে থাকি যেখানে শাসনকর্তা ও প্রজা আছে। কিন্তু ঐশরাজ্য জাগতিক কোনো রাজ্যের মতো নয়। এটি হলো ঈশ্বরের রাজ্য যেখানে কোনো পাপ বা মন্দতা নেই; বরং আছে ন্যায্যতা, শান্তি, ভালোবাসা, ক্ষমা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণগুলো। যেখানেই বা যে -কোনো ব্যক্তির মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়, সেখানেই ঐশরাজ্য বিরাজমান অর্থাৎ ঈশ্বর বিরাজমান। কাজেই বলা যায়, যেখানে ঈশ্বরের কর্মগুলো সাধিত হয় ও যাঁরা ঈশ্বরের ইচ্ছামতো চলে তাঁদের মধ্যে ঐশরাজ্য বিরাজমান। এটি বাইবেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটি পবিত্র বাইবেলের পুরাতন ও নতুন-উভয় নিয়মেই পাওয়া যায়। পুরাতন নিয়মে ঐশরাজ্যের আগমনের কথা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং তা ঈশ্বরপুত্র যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। প্রভু যীশুর এই প্রকাশ তাঁর জীবন, তাঁর কথা ও তাঁর আশ্চর্য কাজ দ্বারা সাধিত হয়েছে। এই রাজ্য শুধু খ্রীষ্টানদের কাছে নয় বরং সমগ্র মানবজাতির কাছে ঘোষণা করা হয়েছে। এই জগতে খ্রীষ্টমণ্ডলী হলো ঐশরাজ্যের বীজ বা সূচনা। মন্ডলী সব সময় পরিপক্বতার দিকে এগিয়ে চলেছে যার মধ্য দিয়ে ঐশরাজ্যের পরিপূর্ণতা আসবে।
কাজ: পার্থিব রাজ্য ও ঐশরাজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলো পাশাপাশি দুটি কলামে লিখ। |
প্রভু যীশু তাঁর প্রচারজীবন শুরু করেন ঐশরাজ্যে প্রবেশের আহ্বান জানিয়ে। দীক্ষাগুরু যোহন কারাগারে বন্দি হওয়ার পর তিনি তাঁর সুসমাচার এই বলে ঘোষণা করেন, সময় পূর্ণ হয়েছে, ঐশরাজ্য এখন খুব কাছে এসে গেছে। তোমরা মন পরিবর্তন কর ও সুসমাচারে বিশ্বাস কর। প্রভু যীশু জগতে এসেছেন তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করে এই জগতে ঐশরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁর পিতার ইচ্ছাই হচ্ছে, মানুষকে জীবন দান করা, যাতে মানুষ তাঁর ঐশ জীবন সহভাগিতা করতে পারে। এই কারণে তিনি তাঁর চারপাশের মানুষকে সমবেত করেন। তিনি তাঁর বাণীর দ্বারা, ঐশরাজ্যের প্রতীক স্বরূপ বিভিন্ন চিহ্ন ও তাঁর শিষ্যদের প্রেরণ করার মধ্য দিয়ে মানুষকে তাঁর চারপাশে সমবেত হতে আহ্বান করেন। সর্বোপরি প্রভু যীশু তাঁর ক্রুশ মৃত্যুবরণ ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে ঐশরাজ্যের প্রকাশকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যান।
প্রভু যীশু তাঁর ঐশরাজ্যে সবাইকে আহ্বান করেন। যদিও ঐশরাজ্যের কথা প্রথমে ঈশ্বরের প্রিয় জাতি ইস্রায়েল সন্তানদের কাছে ঘোষণা করা হয়েছে, তথাপি তা সকল জাতির, সকল মানুষের জন্য। সবাই এই ঐশরাজ্যের নাগরিক হতে আহূত।
যদিও ঐশরাজ্য সবার জন্য তথাপি এই রাজ্যে প্রবেশের বা এর নাগরিক হওয়ার অগ্রাধিকার পাবে দরিদ্র ও বিনম্ররা। যীশু নিজেই বলেছেন যারা অন্তরে দীন, ধন্য তারা কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই। তাঁরা তাঁর বাণী বিনম্র অন্তরে শোনে, গ্রহণ করে ও সে অনুসারে জীবনযাপন করে। ঐশরাজ্যের মর্মসত্য জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানদের কাছে গোপন রাখা হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করা হয়েছে নিতান্ত দীনতম ও ক্ষুদ্রতমদের কাছে। প্রভু যীশু তাঁর পার্থিব জীবনে দীনদরিদ্রদের পক্ষ সমর্থন করেছেন, তাদের সাথে থেকেছেন, তাদের ভালোবেসে তাদের সমব্যথী হয়েছেন। সেই কারণে তিনি ঐশরাজ্যে প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসেবে ভালোবাসাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন।
তথাপি ঐশরাজ্যের নাগরিক হওয়ার জন্য যীশু ঐশরাজ্যকে একটি ভোজসভার সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর এই ভোজসভায় তিনি পাপীদের নিমন্ত্রণ করেন। কারণ তিনি তো ধার্মিকদের জন্য এই জগতে আসেননি, এসেছেন পাপীদের আহ্বান করতে। মন পরিবর্তন হলো ঐশরাজ্যে প্রবেশের পথ। তাই একজন পাপীর মন পরির্বতনে ঐশরাজ্যে কতই-না আনন্দ হয়!
ঐশরাজ্যের রহস্য খুবই গভীর। এই কারণে যীশু খ্রীষ্ট ঐশরাজ্যের রহস্যকে বিভিন্ন প্রতীক, চিহ্ন ও উপমার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। যেমন,
ক) যীশু ঐশরাজ্যকে সর্ষে বীজের সাথে তুলনা করেছেন। যীশুর অঞ্চলের সর্ষে গাছ অনেক বড়ো। বীজ হিসেবে তা খুবই ছোট। কিন্তু যখন চারা গজায় ও পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হয় তখন কিন্তু অন্য সব গাছ সে ছাড়িয়ে যায়। পাখিরাও এসে তাতে বাসা বাঁধতে পারে।
খ) ঐশরাজ্যকে যীশু খামিরের সাথেও তুলনা করেছেন। খামির ততক্ষণ পর্যন্ত মাখাতে হয় যতক্ষণ-না তা গেজে ওঠে।
গ) যীশু ঐশরাজ্যকে আবার লুকিয়ে রাখা কোনো জমিতে গুপ্তধনের সাথে তুলনা করেছেন। কোনো লোক তা খুঁজে পেয়ে মনের আনন্দে গিয়ে তার যা-কিছু রয়েছে তা বিক্রি করে সেই জমিটা কিনে ফেলে।
যীশু তাঁর বিভিন্ন উপমার মধ্য দিয়ে সবাইকে ঐশরাজ্যে প্রবেশের আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। তবে তা গ্রহণ করার জন্য প্রকৃত সিদ্ধান্ত আমাদের। ঐশরাজ্য লাভ করতে হলে আমাদের কিছু ছাড়তে হবে এবং তার বাণী অনুসারে জীবনযাপন করতে হবে।
কাজ: শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা কীভাবে ঐশরাজ্যের নাগরিক হতে পারি? দলে আলোচনা করো। |
ঐশরাজ্যের বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট করে তোলার জন্য যীশু খ্রীষ্ট তাঁর বাণীতে নানা উপমা ব্যবহার করেছেন। ঐশরাজ্যের পূর্ণতা ও প্রকাশের জন্য তিনি বিভিন্ন আশ্চর্য বা অলৌকিক কাজগুলোকে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর অলৌকিক কাজগুলোর মধ্য দিয়ে এই সত্য প্রকাশিত হয় যে তিনি পিতার কাছ থেকে এসেছেন। এই কাজগুলো তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও গভীর করতে সহায়তা করে। তাঁর এইসকল আশ্চর্য কাজ তাঁর ঐশশক্তি ও ক্ষমতাকে প্রকাশ করে। এই জগতে ঐশরাজ্যের আগমনের অর্থ হচ্ছে মন্দতা বা শয়তানের পরাজয়। যীশু অপদূত তাড়ানোর মধ্য দিয়ে মানুষকে মন্দ আত্মার প্রভাব থেকে মুক্ত করেছেন। মন্দ আত্মার বিরুদ্ধে জয়লাভ প্রভু যীশু বিজয়ের পূর্বাভাস ঘোষণা করেছে। প্রভু যীশুর ক্রুশে মৃত্যুবরণের মধ্য দিয়ে ঐশরাজ্যের চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
কাজ: প্রভু যীশুর একটি আশ্চর্য কাজ বেছে নাও। এর মধ্য দিয়ে কীভাবে ঐশরাজ্যের প্রকাশ ঘটে এবং কীভাবে যীশুর অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা প্রকাশ পায় তা খাতায় লিখ। |
ক্ষমতার বাহ্যিক চিহ্ন হলো চাবি। আমরা জানি, ঘর বা প্রতিষ্ঠানের চাবির দায়িত্ব যাকে-তাকে দেওয়া হয় না। যার সেই দায়িত্বজ্ঞান রয়েছে বা যে তা বহন করতে পারবে তাকেই সে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
প্রভু যীশু তার প্রচার জীবনে বারজন শিষ্যকে মনোনীত করেছেন যেন তাঁরা তাঁর সঙ্গে থাকেন এবং তাঁর প্রেরণকর্মে অংশগ্রহণ করেন। বারোজনের অন্যতম ছিলেন পিতর, যাঁকে তিনি পাথর বলে অভিহিত করেছেন এবং এই পাথরের ভিতের উপর তাঁর মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তাঁর হাতে ঐশরাজ্যের চাবি তুলে দিয়েছেন। পৃথিবীতে তিনি যা মুক্ত করবেন, স্বর্গেও তা মুক্ত করা হবে। আর পৃথিবীতে তিনি যা-কিছু ধরে রাখবেন তা স্বর্গেও ধরে রাখা হবে। প্রভু যীশু তাঁর মেষদের পালন করার দায়িত্বও পিতরকে দিলেন। পিতরের হাতে ঐশরাজ্যের চাবি প্রদান করা ও তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে পোপের দায়িত্ব পালনের কাজ ঐশরাজ্যের উপস্থিতির চিহ্নই আমাদের কাছে আজও প্রকাশ করে।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালো ও মন্দ দুইটি দিকেরই প্রভাব রয়েছে। কখনো কখনো ভালো শক্তিটা প্রবল হয় আবার কখনো কখনো প্রবল হয়ে ওঠে মন্দ শক্তিটা। ঠিক তেমনিভাবে পৃথিবীতে শুভশক্তি ও অপশক্তি-এই দুইটিরই প্রভাব রয়েছে। কখনো কখনো আমরা দেখি শুভশক্তি খুব জোরদার ভূমিকা পালন করছে, আবার কখনো কখনো দেখি অপশক্তিটা যেন সব দখল করে নিয়েছে। মানুষ তার শুভশক্তি বা ভালো শক্তির গুণে পৃথিবী আরও সুন্দর করতে পারে। আবার মানুষই তার অপশক্তি বা মন্দ শক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীটা ধ্বংস করতে পারে। মন্দ শক্তির ধারক ও বাহক হলো শয়তান। এই মন্দ শক্তি পৃথিবীতে আদি থেকেই বিদ্যমান ছিল। যীশু অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে তাকে পরাজিত করেছেন। আজও মানুষের মধ্যে শুভ ও অপশক্তির মধ্যে লড়াই চলছে
কাজ: বাস্তব জগতে কোথায় কোথায় মন্দ শক্তি সক্রিয় এবং কী কী উপায়ে মন্দ শক্তি থেকে মুক্ত থাকা যায় দলে তার একটা তালিকা তৈরি করো। |
দূত ও অপদূত
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট অনেক অপদূত বিতাড়িত করেছেন এবং এর মধ্য দিয়ে মন্দের ওপর তাঁর জয়লাভের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। বাইবেলে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কর্তৃক অপদূত বিতাড়নের বিষয়ে আলোচনার পূর্বে দূত ও অপদূত সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমরা জানি, দূতদের শুধু আত্মা আছে কিন্তু তাদের শরীর নেই। স্বর্গে চিরকাল ঈশ্বরের আরাধনা ও সেবা করতে ও তাঁর দর্শনসুখ ভোগ করতে ঈশ্বর দেবদূতদের সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র। ঈশ্বর তাঁর প্রয়োজনে তাঁর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য দূতদের ব্যবহার করেছেন। যেমন যীশুর জন্মসংবাদ দেওয়ার জন্য মহাদূত গাব্রিয়েলকে প্রেরণ করেছেন। যীশুর জন্মের সংবাদ রাখালদের কাছে দেওয়ার জন্য দূতদের পাঠিয়েছেন। যীশুর শূন্য কবরে দূতেরা বসেছিলেন এবং শিষ্যদের কাছে যীশুর পুনরুত্থানের বার্তা শুনিয়েছেন। এছাড়া আমাদের রক্ষা করার জন্যও ঈশ্বর রক্ষীদূতদের নিযুক্ত করেছেন। তাঁরা প্রতিনিয়ত আমাদের বন্ধু ও রক্ষাকর্তা হিসেবে রক্ষা করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে অপদূতদেরও শুধু আত্মা আছে, তাদের কোনো শরীর নেই। তারাও অনেক শক্তিশালী কিন্তু তাদের শক্তি সীমাহীন নয়। ঈশ্বরের রাজ্যগঠন প্রতিহত করাই অপদূতদের প্রধান কাজ। অপদূতেরা এই জগতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে বটে, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তির কাছে তা কিছুই নয়। একজন মানুষ মন্দ আত্মার দ্বারা তাড়িত হয় যখন সে শয়তানের শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। এই জগতে শয়তানের কাজ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। এমনও হতে পারে যে একজন লোক নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও শয়তানের হাতিয়ার হয়ে পড়ে।
কাজ: দূত ও অপদূতদের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য নির্ণয় করো। |
বাইবেলের বিভিন্ন মঙ্গলসমাচার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আট বার অপদূতগ্রস্ত লোককে নিরাময় করেছেন। নিম্নে এর তালিকা তুলে ধরা হলো:
১। অপদূতে পাওয়া অন্ধ ও বোবা লোকটি (মথি ১২: ২২-২৮; মার্ক ৩:২২-২৭; লুক ১১:১৪-২৩)
২। অপদূতে পাওয়া কানানীয় স্ত্রীলোকের মেয়েটি (মথি ১৫: ২১-২৮; মার্ক ৭:২৪-৩০)
৩। অপদূতে পাওয়া বোবা লোকটি (মথি ৯:৩২-৩৩; লুক ১১:১৪-১৫)
৪। অপদূতে পাওয়া মৃগীরোগী ছেলেটি (১৭:১৪-২০; মার্ক ১৪-২৯; লুক ৯:৩৭-৪৩)।
৫। অপদূতে পাওয়া গেরাসেনীয় লোকটি (মথি ৮:২৮-৩৪; মার্ক ৫:১-২০; লুক ৮:২৬-৩৯)।
৬। কাফার্নাউম/কফরনাহুম সমাজগৃহে অপদূতে পাওয়া একজন লোক (মথি ৭:২৮-২৯; মার্ক ১:২৩-২৮; লুক ৪:৩১-৩৭)।
৭। মান্দালার মারীয়া (মার্ক ১৬:৯; যোহন ২০: ১১-১৮)।
৮। অপদূতে পাওয়া নুয়ে পড়া স্ত্রীলোকটি (লুক ১৩:১০-১৭)।
কাজ: যীশু অপদূতগ্রস্ত লোকদের সুস্থ করার ঘটনাগুলোর মধ্য থেকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে অভিনয় করে দেখাবে। |
ঐশ আত্মার শক্তিতেই শয়তানের শক্তি নাশ
উপরে উল্লিখিত তালিকার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট অনেক অপদূতগ্রস্ত লোককে সুস্থ করেছেন। একবার প্রভু যীশুর কাছে অপদূতে পাওয়া একটি লোককে আনা হলো। লোকটি বোবা ও অন্ধ ছিল। যীশু লোকটিকে সুস্থ করে তুললেন। লোকটি যে সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার ও দেখার শক্তি ফিরে পেয়েছে তা দেখে উপস্থিত সকলে খুবই আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা সকলে যীশুর জয়ধ্বনি করতে লাগল। কিন্তু ফরিসিরা তাতে খুশি না- হয়ে বলতে লাগল যীশু নাকি অপদূতরাজ বেয়েলজেবুলের শক্তিতে অপদূত তাড়িয়ে বেড়ান। যীশু তাদের মনোভাব জানতেন। তাই তিনি তাদের যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে, বিবাদে বিভক্ত রাজ্য খুব তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। ঠিক তেমনি শয়তান নিজে যদি শয়তানকে তাড়িয়ে বেড়ায় তাহলে শয়তানেরা নিজেদের মধ্যে নিজেরাই বিবাদে বিভক্ত হয়ে যায়। তাহলে সে রাজ্য বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। তিনি ফরিসিদের আরও জিজ্ঞেস করেন, তাদের শিষ্যরা যখন অপদূত তাড়ায় তখন কার শক্তিতে তা করে? সেটা নিশ্চয় শয়তানের শক্তিতে নয়! তারা সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। তাই প্রভু যীশুও ফরিসিদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। আমরা জানি, প্রভু যীশু স্বয়ং পরমাত্মার শক্তিতে অপদূত তাড়ান এবং এর মধ্য দিয়ে যে মানুষের মাঝে ঐশরাজ্যের প্রকাশ করে চলছেন তারই ইঙ্গিত তিনি তাদের দান করেন।
কাজেই দেখা যায়, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সমস্ত মন্দতার ওপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার করেছেন স্বয়ং পরমপিতার কাছ থেকে পাওয়া শক্তির মধ্য দিয়ে। তিনি মন্দতাকে নির্মূল করতে এ জগতে আসেননি বরং এসেছেন যেন মানুষ মন্দতার দাসে পরিণত না-হয়। মানুষ যেন মন্দতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে পরিত্রাণ বা মুক্তির স্বাদ লাভকরতে পারে এ জগতে ঐশরাজ্য প্রসারিত করার কাজ চালিয়ে যেতে পারে। প্রভু যীশুর মধ্য দিয়েই আমরা ঐশরাজ্যের সন্ধান পেয়েছি।
শূন্যস্থান পূরণ করো।
১. মন্দশক্তির ধারক ও বাহক হলো _______।
২. লোকটি বোবা ও _______ ছিল।
৩. সকলে যীশুর _______ করতে লাগল।
8. _______ হলো ঐশরাজ্যে প্রবেশের পথ।
৫. একজন পাপী মন ফিরালে ঐশরাজ্যে কতই-না _______ হয়।
বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডানপাশের বাক্যাংশের মিল করো।
বাম পাশ | ডান পাশ |
১. সবাই ঐশরাজ্যের ২. প্রভু যীশু জগতে এসেছেন ৩. ঐশরাজ্যের নাগরিক হওয়ার অগ্রাধিকার পাবে ৪. ঐশরাজ্য যেন একটি ৫. যীশুর বাণী অনুসারে |
|
১. জগতে ঐশরাজ্যের অর্থ কী?
ক. যীশুর পরাজয়
খ. শিষ্যদের পরাজয়
গ. শয়তানের পরাজয়
ঘ. মারীয়ার পরাজয়
২. কী কারণে ঈশ্বর ঐশরাজ্যের রহস্য প্রকাশ করেছেন?
ক. ন্যায়পরায়ণতার জন্য
খ. মন পরিবর্তনের জন্য
গ. ধার্মিকতার জন্য
ঘ. সত্যবাদিতার জন্য
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
কণা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন। বয়সের কারণে তাঁর পক্ষে প্রতিষ্ঠানের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, সহকর্মীদের মধ্যে কমল এ কাজটি করার উপযুক্ত। কমল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি গরিব-দুঃখীদের সেবায় নিয়োজিত।
৩. কমলের মধ্যে পিতরের কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
ক. সেবাপরায়ণতা
খ. মানবতা
গ. সহযোগিতা
ঘ. দায়িত্বশীলতা
8. কমলের সাথে পিতরের কাজের বৈসাদৃশ্য হলো –
i. আর্ত-পীড়িতের সেবা
ii. বাণী প্রচার
iii. আশ্চর্য কাজ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
১. মাইকেল মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গিয়ে দেখতে পেল দেশটি খুব সুশৃঙ্খল। রাজ্যটির প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবই পরিকল্পিত বলে মনে করল। রাজার পরিচালনায় রাজ্যের জনগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। যে কোনো সমস্যা বা অসুবিধায় রাজা তার জনগণের পাশে থেকে যাবতীয় সাহায্য-সহযোগিতা দিচ্ছেন। জনগণও রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজাকে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে।
ক. কারা ঐশরাজ্যের নাগরিক হতে আহৃত?
খ. ঐশরাজ্যে প্রবেশ করতে হলে আমাদের কীভাবে জীবন যাপন করতে হবে?
গ. মাইকেলের দেখা রাজ্যটির মধ্যে ঐশরাজ্যের কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে-ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মাইকেলের দেখা রাজ্য ও তোমার পাঠ্যপুস্তকের উল্লেখিত রাজ্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো।
২. বীনা ও রিটা দুইজনই মেধাবী এবং ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। পড়াশুনার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। কিছুদিন পর দেখা গেল বীণা একটু অন্যরকম আচরণ করতে শুরু করল। সে নেশাগ্রস্ত বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে করতে নিজেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়াশুনায় অবহেলা করতে শুরু করে। সে চাচ্ছে সৎপথে ফিরে আসতে, কিন্তু পারছে না। বীণার মধ্যে সৎ ও অসৎ শক্তির যুদ্ধ চলছে।
ক. আমাদের রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর কাদের নিযুক্ত করেছেন?
খ. কী কারণে ঈশ্বর দেবদূতদের সৃষ্টি করেছেন?
গ. কোন শক্তির প্রভাব বীনার মধ্যে বিদ্যমান- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'প্রভু যীশুর পথই বীনাকে তার অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে'-উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন
১. আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে যীশুর কোন দিকটি প্রকাশ পায়?
২. ঐশরাজ্য বলতে কী বুঝ?
৩. ঐশরাজ্যের রহস্যসমূহ কীভাবে প্রকাশ করা হয়েছে?
বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. ভালো-মন্দ শক্তিসমূহের পার্থক্য নির্ণয় করো।
২. ঐশরাজ্য বোঝাতে যীশু কী ধরনের উপমা ব্যবহার করেছেন সংক্ষেপে আলোচনা করো।
৩. যীশু কর্তৃক অপদূত বিতাড়নের তিনটি ঘটনার নাম উল্লেখ করে যে কোনো একটি ঘটনা বর্ণনা করো।
Read more