আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে, লোহার জিনিসপত্রে মরিচা পড়লে, কোথাও কিছু আগুনে পুড়ে গেলে, কিংবা দেহে আমাদের খাদ্য পরিপাকের সময় আসলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন নতুন পদার্থ তৈরি করে থাকেন। এইসব নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কখনো শক্তি উৎপন্ন হয়, কখনো আমাদের ব্যবহারের জিনিসপত্র তৈরি হয় আবার কখনো নতুন কোনো ঔষধ তৈরি করা হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া বোঝার জন্য আমাদের যে বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এই অধ্যায়ে সেই বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
8.1 প্রতীক, সংকেত, যোজনী
আগের শ্রেণিতে তোমরা জেনেছ যে বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর সকল পদার্থকে তাদের গঠন অনুসারে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন, আর তা হচ্ছে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত মোট 11৪টি মৌলিক পদার্থের (elements) সন্ধান পেয়েছেন। সাধারণত এইসব মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের প্রথম একটি অথবা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করানো হয়। মৌলের পুরো নামের এ সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন-হাইড্রোজেন (Hydrogen) এর প্রতীক হচ্ছে H, অক্সিজেন (Oxygen)-এর প্রতীক ০, ইত্যাদি।
আবার কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্ত রূপকে সংকেত দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কোনো অণুর সংকেত থেকে এতে বিদ্যমান পরমাণুগুলোর সংখ্যা বোঝা যায়। যেমন-হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H₂ 2 অর্থাৎ হাইড্রোজেন অণুতে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু রয়েছে, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুর সংকেত HCI অর্থাৎ হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুতে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি ক্লোরিন পরমাণু রয়েছে, ইত্যাদি।
কোনো যৌগের সংকেত লেখার জন্য সেই যৌগের মৌলগুলোর যোজনী সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে এবং যোজনীর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কীভাবে একটি মৌলের পরমাণু অন্য মৌলের পরমাণুর সাথে যুক্ত হবে। আরও সহজভাবে বোঝার জন্য আমরা মৌলিক পদার্থের যোজনীকে একেকটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের যতগুলো হাত তার যোজনী হবে তত। যেমন- হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ের যোজনী এক, তাই উভয়কে আমরা এক হাতবিশিষ্ট মৌল হিসেবে কল্পনা করতে পারি। অর্থাৎ একটি হাইড্রোজেন পরমাণু তার একটি হাত দিয়ে ক্লোরিন পরমাণুর একটি হাতকে ধরে রাখবে। তাই হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন দিয়ে গঠিত হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত হচ্ছে HCl। অক্সিজেনের যোজনী দুই, কাজেই আমরা কল্পনা করতে পারি অক্সিজেনের একটি পরমাণুর দুইটি হাত রয়েছে যার মাধ্যমে অক্সিজেন একযোজী বা এক হাতবিশিষ্ট দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হতে পারে। এ কারনে পানির সংকেত HO। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ও পানির অণুকে নিম্নরূপভাবে দেখানো হলো:
H-Cl H-O-H
(হাইড্রোজেন ক্লোরাইড) (পানি)
উপরের উদাহরণ থেকে বুঝা যায় যে, কোনো মৌলের যোজনী হলো ঐ মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হতে সক্ষম। উল্লেখ্য, কোনো যৌগ গঠনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মৌলের সবকটি যোজনী কাজে লাগে বা কোনো হাত ফাঁকা না থাকে!
নিজে করো:
নাইট্রোজেন যোজনী ও এবং কার্বনের যোজনী 4। তোমরা কি যোজনী ব্যবহার করে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত অ্যামোনিয়ার সংকেত লিখতে পারবে? একইভাবে তোমরা কি কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত মিথেনের সংকেত লিখতে পাবে?
উল্লেখ্য কোনো কোনো মৌলের একাধিক যোজনী থাকতে পারে। যেমন-সালফারের যোজনী 2 ও 4; আয়রনের যোজনী 2 ও ও। নিচের ছকে কিছু মৌলের প্রতীকসহ যোজনী উল্লেখ করা হলো:
মৌনের নাম, তাদের যোজনী ও প্রতীক
মৌল | প্রতীক | যোজনী |
হাইড্রোজেন | H | 1 |
ক্লোরিন | cl | 1 |
সোডিয়াম | Na | 1 |
ম্যাগনেসিয়াম | Mg | 2 |
সালফার | S | 2,4 |
অক্সিজেন | O | 2 |
নাইট্রোজেন | N | 3 |
অ্যালুমিনিয়াম | Al | 3 |
আয়রন | Fe | 2,3 |
কার্বন | C | 4 |
মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মতো কিছু পরমাণুগুচ্ছ যৌগ গঠনে অংশ নেয় এবং তারা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে না। এ জাতীয় পরমাণুগুচ্ছকে যৌগমূলক বা radical বলে। যেমন: এখানে, উদাহরণস্বরূপ কিছু যৌগমূলকের যোজনী উল্লেখ করা হলো। যেমন: নাইট্রেট (NO₂) ও অ্যামোনিয়াম (NH) উভয়ের যোজনী 1, কার্বনেট (CO2) এর যোজনী 2, ফসফেট (PO) এর যোজনী 3।
8.1.1 যোজনী ব্যবহার করে যৌগের আণবিক সংকেত লেখার নিয়ম
1) আণবিক সংকেত একটি যৌগের মধ্যে উপস্থিত মৌলের সংখ্যা সম্বন্ধে ধারণা প্রদান করে। প্রথমে মৌলগুলোকে তাদের নিজ নিজ প্রতীক দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যৌগে উপস্থিত মৌলসমূহ বা যৌগমূলকের যোজনী সমান হলে সংকেতে যোজনী লেখার প্রয়োজন হয় না। শুধু মৌল বা মূলকগুলো পাশাপাশি লিখতে হবে। যেমন: CaO (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), NH4Cl (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড), ইত্যাদি।
2) উভয় মৌলের বা মূলকের যোজনী কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার গুণিতক হলে ঐ সংখ্যা দিয়ে যোজনীকে ভাগ করে মৌলসমূহের মধ্যে বিনিময় করে লিখতে হবে। যেমন: কার্বন ডাইক্সাইডের ক্ষেত্রে কার্বন (C) ও অক্সিজেনের (০) যোজনী যথাক্রমে 4 এবং 2। সুতরাং কার্বন ডাইক্সাইডের সংকেত হওয়ার কথা C2O4 কিন্তু আমরা দুটি যোজনীকেই 2 দিয়ে ভাগ দিয়ে লিখি CO2।
3) উভয় মৌলের বা মূলকের যোজনী ভিন্ন বা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার গুণিতক না হলে, অর্থাৎ A মৌলের যোজনী x এবং B মৌলের যোজনী y হলে A ও B মৌল দ্বারা গঠিত যৌগটির সংকেত হবে ABIA yx মৌলের যোজনী সংখ্যা B মৌলের ডানপাশে সাবস্ক্রিপ্ট (subscript) হিসেবে এবং B মৌলের যোজনী সংখ্যা A মৌলের ডানপাশে সাবস্ক্রিপ্ট (subscript) হিসেবে লিখতে হবে। যেমন-অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O3)। এখানে অ্যালুমিনিয়াম ও অক্সিজেনের যোজনী যথাক্রমে ও ও 2।
8.2 রাসায়নিক সমীকরণ
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায়, যে পদার্থগুলো বিক্রিয়া করে সেগুলোর অণুগুলোর ভেতর যে বন্ধন থাকে সেগুলো ভেঙে নতুন পদার্থ গঠিত হয় এবং উৎপন্ন পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে নতুন বন্ধন তৈরি হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া বর্ণনা করার সময় আমরা রাসায়নিক সমীকরণ দিয়ে এই বিক্রিয়াকে প্রকাশ করি।
একটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুইটি অংশে ভাগ করা যায়, এক অংশে বিক্রিয়ক এবং অন্য অংশে বিক্রিয়ার ফলে নবগঠিত পদার্থ থাকে। সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করার সময় বিক্রিয়কগুলো সমীকরণের বাম দিকে থাকে এবং একটি তীর চিহ্ন দিয়ে ডানদিকে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নতুন পদার্থগুলো দেখানো হয়। নিচে একটি উদাহরণ দেখানো হলো:
এখানে, A এবং B হলো বিক্রিয়ক, যা বিক্রিয়া করে এবং C এবং D হচ্ছে উৎপন্ন পদার্থ। একটি প্রকৃত রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়কগুলোকে তাদের রাসায়নিক সংকেত দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ:
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু তৈরি বা ধ্বংস করা যায় না, শুধু তাদের পুনর্বিন্যাস ঘটে। অতএব, বিক্রিয়ার আগে বিক্রিয়কগুলোতে যে পরমাণুগুলো যতগুলো করে থাকে, বিক্রিয়ার পর উৎপন্ন পদার্থেও ঠিক সেই পরমাণুগুলো ততগুলো করে থাকে। কাজেই এই আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়ক এবং উৎপন্ন পদার্থকে প্রতীক, সংকেত ও কিছু গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করে সংক্ষেপে প্রকাশ করাকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে। যেমন-
8.2.1 রাসায়নিক সমীকরণ লেখার নিয়ম
রাসায়ানিক সমীকরণ লেখার নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো:
1) রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়কগুলোর প্রতীক বা সংকেত সমীকরণটির তীর চিহ্নের (→) বামদিকে লিখতে হবে। উল্লেখ্য, একটি তীর চিহ্ন (→) বিক্রিয়ককে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন পদার্থ বা বিক্রিয়াজাত পদার্থ থেকে আলাদা করে। বিক্রিয়াজাত পদার্থ বা পদার্থগুলোর প্রতীক বা সংকেত সমীকরণটির তীর চিহ্ন (→) ডানদিকে লিখতে হবে।
2) বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ একাধিক হলে তাদের মধ্যে যোগ চিহ্ন (+) দেওয়া হয়।
3) রাসায়নিক সমীকরণে তীর চিহ্নের (→) পরিবর্তে সমান (=) চিহ্নও ব্যবহার করা হয়, তবে এক্ষেত্রে বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলোর মধ্যে উপস্থিত পরমাণুর 'সমতাকরণ' প্রয়োজন হয়।
সমতাকরণ
সমতাকরণ বলতে বোঝানো হয়, রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়কের অণুর মধ্যে যত সংখ্যক বিভিন্ন মৌলের পরমাণু থাকে, বিক্রিয়ার পরে গঠিত বিক্রিয়াজাত পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে ঠিক তত সংখ্যক বিভিন্ন মৌলের পরমাণু থাকবে। তাই সমীকরণের উভয়য় পক্ষে (বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ) মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমতা আনার জন্য প্রতীক ও সংকেতগুলোকে প্রয়োজনীয় সংখ্যা দ্বারা গুণ করতে হয়।
যেমন-হাইড্রোজেন ও পানির বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। সুতরাং, রাসায়ানিক সমীকরণ লেখার নিয়ম অনুযায়ী বামদিকে হাইড্রোজেন (H₂) ও অক্সিজেন (০2) অণুর সংকেত এবং ডানদিকে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন পানির (H₂O) অণুর সংকেত বসিয়ে আমরা লিখতে পারি:
এখন লক্ষ করো যে, বিক্রিয়ার আগে যত সংখ্যক H এবং O পদার্থে তত সংখ্যক H পরমাণু থাকলেও ততসংখ্যক পরমাণু আছে বিক্রিয়ার পরেও বিক্রিয়াজাত পরমাণু নেই। তাই বিক্রিয়ার সমতাকরণের জন্য H2অণু, O2 অণু ও H₂O অণুর সংখ্যা এবং সমীকরণ হবে নিম্নরূপ:
এই সমীকরণে বিক্রিয়ার আগে এবং পরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মোট পরমাণুর সংখ্যা সমান, অর্থাৎ এই সমীকরণে বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলোর মধ্যে উপস্থিত পরমাণুর সমতাকরণ করা হয়েছে।
৪.ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ও রাসায়নিক পরিবর্তন
রাসায়নিক পরিবর্তন বলতে বোঝানো হয় এক বা একাধিক পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন এক বা একাধিক পদার্থে পরিবর্তিত হওয়া। রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় বিক্রিয়কের অণু-পরমাণুগুলো নতুনভাবে বিন্যস্ত হয়, যে কারণে এই নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। রাসায়নিক পরিবর্তনে প্রায় সময়েই শক্তি বিনিময় হয়ে থাকে, কখনো তাপ সৃষ্টি হয় কখনো তাপ শোষিত হয়, যার ফলে বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যে নতুন পদার্থ তৈরি হয় প্রায় সময়েই সেগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন এবং এই পরিবর্তন সাধারণত অপ্রত্যাবর্তী (irreversible)। রাসায়নিক বিক্রিয়া নানাভাবে সংগঠিত হতে পারে। এখানে সংক্ষেপে সংযোজন, দহন, প্রতিস্থাপন এবং বিযোজন বিক্রিয়া আলোচনা করা হলো।
8.3.1 সংযোজন বিক্রিয়া (Addition reaction):
সংযোজন বিক্রিয়া হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যেখানে দুই বা ততোধিক বিক্রিয়ক (reactant) একত্রিত হয়ে নতুন একটি বিক্রিয়াজাত পদার্থ (product) তৈরি করে।
ল্যাবরেটরির নিরাপদ পরিবেশে একটি টেস্ট টিউবে লোহার গুঁড়া এবং সালফার পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে দুটি বিক্রিয়ক (আয়রন এবং সালফার) একত্রিত হয়ে বিক্রিয়াজাত পদার্থ ফেরাস সালফাইড তৈরি হয়। টেস্ট টিউব থেকে যে বস্তু পাওয়া যায় সেটি দেখতে গাঢ় ধূসর বর্ণের, এখানে হালকা হলুদ রঙের সালফার বা লোহার (আয়রন) গুঁড়া কোনোটিই দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ, এখানে আয়রন ও সালফার একে অপরের সাথে মিলে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ ফেরাস সালফাইড (FeS) তৈরি করেছে।
এ ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন যেখানে একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিশিষ্টের নতুন পদার্থ তৈরি করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। একইভাবে জিঙ্ক (Zn) ও সালফার (S) বিক্রিয়া করে জিঙ্ক সালফাইড (ZnS) তৈরি করে। এটিও একটি সংযোজন বিক্রিয়া।
উপরোল্লেখিত দুটি বিক্রিয়াতেই মৌল থেকে যৌগ তৈরির মাধ্যমে সংযোজন বিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। তবে দুটি যৌগ যুক্ত হয়েও সংযোজন বিকিয়ার মাধ্যমে নতুন একটি যৌগ গঠন করতে পারে। যেমন, অ্যামোনিয়ার (NH3) সাথে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) যুক্ত হয়ে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4CI) উৎপন্ন করে। নিচে এই সংযোজন বিক্রিয়াটি দেখানো হলো:
8.3.2 দহন বিক্রিয়া (combustion reaction)
দহন বিক্রিয়া হলো এমন এক ধরনের বিক্রিয়া যেখানে কোনো পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আলো এবং তাপ উৎপন্ন করে। দহন বিক্রিয়ায় অবশ্যই অক্সিজেন (০₂) থাকতে হবে, যেখানে অক্সিজেন একটি বিক্রিয়ক হিসেবে কাজ করে। তোমরা তোমাদের চারপাশে সব সময়েই দহন প্রক্রিয়ার অনেক উদাহরণ দেখেছ, মোমবাতির জ্বলন, চুলার আগুন বা গাড়ির ইঞ্জিন চলা এগুলো সবই দহন বিক্রিয়ার উদাহরণ।
তোমরা যদি অন্ধকার ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালাও তাহলে দেখবে তার আলোতে ঘর আলোকিত হয়ে উঠেছে, আলোর শিখার কাছে হাত নিলে তার তাপটাও অনুভব করবে। মোমটিকে ভালো করে লক্ষ করলে দেখবে মোমের কিছু অংশ গলে নিচে গড়িয়ে পড়ে ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে গেলেও বেশিরভাগ উৎপন্ন তাপে বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে। এই বাষ্পীভূত মোম দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করছে যার ফলে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে।
মোমের পরিবর্তে যদি কখনো সালফার বা গন্ধককে উত্তপ্ত করা হয় তাহলেও তোমরা দেখতে পাবে যে, প্রথমে সালফার গলে যাবে; তারপর সেখানে নীল আগুনের শিখা দেখা যাবে। তাপ দেওয়ার ফলে একসময় সালফার (S) বাতাসের অক্সিজেনের (০2) সাথে বিক্রিয়া করে সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) গ্যাস তৈরি করতে শুরু করবে।
সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) একটি বিষাক্ত গ্যাস তাই শুধু ল্যাবরেটরির নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া এই দহন প্রক্রিয়া করা সম্ভব নয়।
8.3.3 প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (substitution reaction)
যে বিক্রিয়ায় একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে নিয়ে নতুন একটি যৌগ তৈরি করে, তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে। প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া সম্বন্ধে বোঝার জন্য নিচের সহজ কিন্তু সুন্দর পরীক্ষাটি করে দেখতে পারো। এই পরীক্ষাটি করার জন্য তোমাকে শুধু একটুখানি ছুঁতে বা কপার সালফেট (CuSO4) জোগাড় করতে হবে অন্য সবকিছু তুমি তোমার হাতের কাছে পেয়ে যাবে।
প্রথমে একটি কাচের গ্লাসে খানিকটা পানি নিয়ে সেখানে ছুঁতে যোগ করে পানিটি ভালো করে নাড়িয়ে তুঁতের দ্রবণ তৈরি কর। তোমরা সুন্দর নীল বর্ণের একটি দ্রবণ দেখতে পাবে। এবারে একটি লোহার পেরেক ভালোভাবে পরিষ্কার করে সেই দ্রবণে খানিকক্ষণ ডুবিয়ে রাখলে দেখবে ডুবে থাকা অংশে মরিচা পড়ার মতো রং ধারণ করেছে। তবে এটি আসলে মরিচা নয়, এটি লোহার পেরেকের উপর কপারের একটি আস্তরণ। লোহা কপার থেকে বেশি বিক্রিয়াশীল হওয়ার কারণে সেটি নিচের বিক্রিয়ার মাধ্যমে লোহা (Fe) কপার সালফেটের কপারকে (Cu) প্রতিস্থাপন করেছে।
এই বিক্রিয়াটি যেহেতু ধীর গতিতে সম্পন্ন হয় তাই তুমি যদি কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা কর এবং মাঝে মাঝে গ্লাসটিকে নেড়ে পেরেকের উপরে জমা হওয়া কপারকে সরিয়ে দাও তাহলে দেখবে নিচে কপারের কণা জমা হতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয় তুমি দেখবে নীল কপার সালফেটের (CuSO4) দ্রবণ হাল্কা সবুজ রঙে ফেরাস সালফেটের (FeSO4) দ্রবণে পাল্টে গেছে।
তুঁতের পরিবর্তে জিঙ্ক সালফেট (ZnSO4) অথবা ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4) দিয়েও এই প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া করা সম্ভব।
8.3.4 বিযোজন বিক্রিয়া (decomposition reaction)
বিযোজন বিক্রিয়া হচ্ছে সংযোজন বিক্রিয়ার বিপরীত। এখানে একটি বিক্রিয়ক ভেঙে নিচে দেখানো প্রক্রিয়ায় দুটি বা ততোধিক বিক্রিয়াজাত পদার্থ তৈরি হয়।
এখানে AB হলো একটি বিক্রিয়ক, AB ভেঙে A এবং B দুইটি বিক্রিয়াজাত পদার্থ তৈরি হয়েছে। বিযোজন বিক্রিয়া আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য নিচের পরীক্ষাটি করে দেখতে পার।
ল্যাবরেটরির নিরাপদ পরিবেশে একটি টেস্ট টিউবে যদি কেউ খানিকটা চুনাপাথর (CaCO3) বা ক্যালসিয়াম কার্বোনেট নিয়ে উত্তপ্ত করে তাহলে দেখবে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ভেঙ্গে বা বিযোজিত হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) গ্যাস তৈরি হচ্ছে। নিচে বিক্রিয়াটি দেখানো হলো
উৎপন্ন গ্যাসটি কার্বন ডাইঅক্সাইড কি না সেটিও পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব। নির্গত গ্যাসটিকে সংগ্রহ করে স্বচ্ছ চুনের পানি দিয়ে প্রবাহিত করলে দেখা যাবে যে চুনের পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছ চুনের পানি হচ্ছে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)₂), এটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO₂) সাথে বিক্রিয়া করে অস্বচ্ছ ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করে তাই চুনের পানি ঘোলা হয়ে যায়।
যে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বিযোজিত করা হয়েছে সেটি আবার ফিরে এসেছে।
৪.৭ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর
শক্তির বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যেমন-তাপ শক্তি, আলোক শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, স্থিতি শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, শব্দ শক্তি ইত্যাদি। তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে শক্তিকে সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস করা যায় না, এটিকে কেবল এক ধরনের শক্তি থেকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। এখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
তাপশক্তি:
আমরা আমাদের চারপাশে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি তাপ শক্তিতে রূপান্তর দেখে অভ্যস্ত। যে কোন দহন প্রক্রিয়া হচ্ছে এর উদাহরণ। মোমবাতি কিংবা চুলায় এভাবে তাপ উৎপন্ন করা হয়, এমনকি আমাদের শরীরেও এভাবে তাপ শক্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিনেও রসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে তাপ শক্তির সৃষ্টি হয় সেই শক্তি দিয়ে গাড়িকে চলমান করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে রাসায়নিক বিক্রিয়াতে বিপরীত প্রক্রিয়াও ঘটে থাকে যেখানে তাপ শক্তি গ্রহণ করে বিক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। যেমন বেকিং সোডার মাঝে লেবুর রস দেওয়া হলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বুদ্বুদ আকারে বের হয়ে আসে, তখন এই বিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তাপ নিয়ে নেওয়ার কারণে মিশ্রণের তাপমাত্রা কমে যায়।
আলোক শক্তি
মোমবাতির শিখায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ শক্তি সৃষ্টি করে সেই তাপ শক্তি থেকে আলোক শক্তি সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে কোন তাপ শক্তি সৃষ্টি না করে সরাসরি আলোক শক্তি সৃষ্টি করা যায়। তার সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে জোনাকি পোকা, সেটি তার শরীরে লুসিফেরিন নামক রাসায়নিক পদার্থ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে আলো সৃষ্টি করে।
বিদ্যুৎ শক্তি
আমরা ব্যাটারিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে বিদ্যুৎ শক্তি পেয়ে থাকি। সাধারণ শুষ্ক কোষে জিঙ্ক, এমোনিয়াম ক্লোরাইড এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি হয়ে থাকে। লিথিয়াম আয়ন জাতীয় রিচার্জ করার উপযোগী ব্যাটারিতে এর বিপরীত প্রক্রিয়াটি ঘটানো হয়, যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ করে বিপরীত রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ শক্তি সৃষ্টি করার উপযোগী করে রাখা হয়।
শব্দ শক্তি
বাজি বা পটকা ফুটিয়ে শব্দ তৈরি করা হয়। এখানে রাসায়নিক বিক্রিয়া যে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে তখন গ্যাসের দ্রুত প্রসারণে এই শব্দের সৃষ্টি হয়।
রাসায়নিক বিভব শক্তি:
রাসায়নিক বন্ধনে শক্তি সঞ্চিত থাকে এবং এই বন্ধন ভেঙে শক্তি পাওয়া যায়। তার একটি উদাহরণ হচ্ছে জীব জগতের কোষে সঞ্চিত এটিপি নামক অণু যেটি জীবদের দেহে শক্তি সৃষ্টি করে। এই অণু তার রাসায়নিক বন্ধনে শক্তি সঞ্চিত রাখে বলে এটি জৈব মুদ্রা নামে পরিচিত।
উপরের আলোচনা থেকে তোমরা নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছ যে রাসায়নিক শক্তিকে নানা ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব যেটি শিল্প-কলকারখানা থেকে শুরু করে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। উদাহরণ হিসেবে রাসায়নিক শক্তির বিভিন্ন রূপান্তরের মাঝে শুষ্ক কোষ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তি সৃষ্টি করার প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
8.4.1 ইলেক্ট্রোনাইট (electrolyte) এবং ইলেক্ট্রোলাইসিস (electrolysis)
শুষ্ক কোষ সম্বন্ধে জানতে হলে তড়িৎ বিশ্লেষ্য বা ইলেক্ট্রোলাইট (electrolyte) এবং তড়িৎ বিশ্লেষণ বা ইলেক্ট্রোলাইসিস (electrolysis) সম্পর্কে একটু ধারণা থাকতে হবে। যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহণ করে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অন্য পদার্থে পরিণত হয় তাদেরকে ইলেক্ট্রোলাইট বলে এবং এ প্রক্রিয়াকে ইলেক্ট্রোলাইসিস বলে।
ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ প্রবাহ করে আয়নিক যৌগকে তাদের মৌলে বিযোজন করা যায়। ছবিতে দেখানো উপায়ে দুটি ইলেকট্রোড বা তড়িৎ দ্বারকে ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণে নিমজ্জিত করে তাদের মাঝে ডিসি বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হলে ইলেক্ট্রোলাইটের ক্যাটায়ন ক্যাথোড এবং অ্যানায়ন অ্যানোডে জমা হবে। বিশুদ্ধ পানিতে অল্প অ্যাসিড বা লবণ মিশিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহী করে সেটিকে ইলেক্ট্রোলাইসিস করে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে বিযোজন করা যায়। তরল সোডিয়াম ক্লোরাইডকে ইলেক্ট্রোলাইসিস করা হলে সেখান থেকে সোডিয়াম ধাতু এবং ক্লোরিন গ্যাস পাওয়া সম্ভব।
শুষ্ক কোষ (Dry cell)
হিসেবে কাজ করে একটি দস্তার ধাতব আবরণ। ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইডের পেস্ট দিয়ে ঘিরে থাকা মাঝখানের কার্বন দণ্ডটি। এনোড এবং ক্যাথোডের মাঝখানে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NHCI) ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে। অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বৈদ্যুতিক চার্জের বাহক হিসেবে কাজ করে কারণ, এতে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত (Cl-) এবং ধনাত্মক চার্জযুক্ত (Zn2+, NH**) আয়ন রয়েছে।
শুষ্ক কোষের কাজ:
এখানে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইডের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এই কারণে কোষের দুই প্রান্তে 1.5 ভোল্টের একটি বিভব পার্থক্য তৈরি হয়। যেটি দুই প্রান্তে সংযুক্ত কোনো সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারে।
উপরে বর্ণিত কোষকে জিঙ্ক-কার্বন কোষও বলা হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের পরিবর্তে যদি পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইডকে (KOH) ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন এই কোষকে এলক্যালাইন (alkaline) কোষ বলা হয়। এলক্যালাইন কোষ বহুল ব্যবহৃত জিঙ্ক-কার্বন কোষ থেকে অনেক বেশি কার্যকর।
8.5 রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ
রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময়, পরমাণু তৈরি বা ধ্বংস হয় না। বিক্রিয়কগুলোর পরমাণুসমূহ কেবল বিক্রিয়াজাত পদার্থ তৈরি করার জন্য পুনর্বিন্যাস হয়। তাই পুরোপুরি আবদ্ধ পরিবেশে-যেখানে কোনো কিছু বাইরে যেতে পারে না বা বাইরে থেকে কোনো কিছু আসতে পারে না, সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের কোনো পরিবর্তন হয় না। এটিকে ভর সংরক্ষণের সূত্র (Law of conservation of mass) বলে।
যেহেতু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভর তৈরি বা ধ্বংস করা যায় না। সুতরাং, বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের ভরের যোগফল অপরিবর্তিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, নিচের বিক্রিয়াটি লক্ষ করতে পারো।
এখানে বিক্রিয়কের ভর 100 গ্রাম এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের ভরের যোগফলও (56+ 44 = ) 100 গ্রাম। কাজেই উপরোল্লিখিত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আরও দেখুন...