সুস্থ, সুন্দর জীবন আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। কে চায় অসুস্থ হতে? নিজেকে সুস্থ রাখা, ভালো রাখা একটা বড় যোগ্যতা। সুষম খাদ্য, শরীরচর্চা, নিয়ম মেনে চলা ইত্যাদি অনেক কিছুর উপরেই সুস্থ থাকা নির্ভর করে। সেই সাথে নিজেকে সুস্থ রাখতে রোগব্যাধিও দূরে রাখতে হয়। বিভিন্ন ধরনের রোগ সম্পর্কে জেনে তা প্রতিরোধের উপায় প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণ রোগ যেমন: সর্দি, কাশি, ছাড়াও আমরা আরও অনেক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারি। যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আচরণ, সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে মেলামেশা এর সাথে জড়িত। এর বাইরে আরও এমন অনেক মারাত্মক সংক্রামক রোগ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। শুধু সংক্রামক রোগই নয়, বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে নানা রকম অসংক্রামক রোগও বাসা বাঁধতে পারে। এ সমস্ত রোগ একজনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়ায় না, কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবন আচরণের কারণে এ সমস্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সপ্তম শ্রেণিতে বিভিন্ন ধরনের আবহাওয়া বা পরিবেশে আমরা সাধারণত যে সমস্ত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হই সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তা মোকাবিলা করার কৌশল সম্পর্কে জেনেছি। এবারের শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা নিজেদের জীবন আচরণ পরিবর্তন করে কীভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি তা শিখব। এর জন্য প্রথমে প্রশ্নপত্র তৈরি করে একটি জরিপ করব।
এ সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যা ও ঝুঁকি কমানোর কৌশল নিয়েই আলোচনা করব।
চলো তাহলে শুরু করা যাক।
শিক্ষকের পরামর্শে আমরা সকলে মিলে 'সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ সচেতনতা জরিপ' করার জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করেছি। এই প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে আমরা আমাদের পরিবার ও প্রতিবেশী কমপক্ষে দুটি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। সংগ্রহ করার সময় আমরা অবশ্যই তাদের সম্মতি (consent) নিবো এবং বলব এই তথ্য শুধুমাত্র আমাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই ব্যবহার হবে এবং যেখানে কারও কোনো নাম উল্লেখ থাকবে না।
জরিপের তথ্য সংকলন
জরিপের তথ্য সংগ্রহের পর আমরা জরিপের সংগৃহীত তথ্যগুলো শিক্ষকের সহযোগিতায় নিচে ছকে সংকলিত করব। এরপর সেগুলো আমরা দলে শেয়ার করব।
পোস্টার প্রদর্শনী
এবারে আমরা বিদ্যালয়ে একটি 'পোস্টার প্রদর্শনী' আয়োজনের ব্যবস্থা করব। পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমে জরিপে প্রাপ্ত তথ্যগুলো আমরা বিদ্যালয়ের সকলকে জানাব। চলো তাহলে আমাদের দলের সকলের তথ্যগুলো দিয়ে পোস্টার তৈরি করি।
নিজে সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি
সবার পোস্টার প্রদর্শনী থেকে আমরা রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণের পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনেছি। এবার চলো একজন স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে আমরা সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর কার্যক্রম বিষয়ে জানব।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আচরণ, সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে মেলামেশার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু সংক্রামক ব্যাধি রয়েছে যার কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। সে সম্পর্কেও আমাদের সচেতন হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। এরকম কিছু রোগ সম্পর্কে জানতে চলো আমরা স্কুলের লাইব্রেরি বা যেখানে তথ্য উৎস আছে সেখানে যাই। সেখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ যেমন: খোস পাঁচড়া বা স্ক্যাবিস, দাদ রোগ, র্যাবিস বা জলাতঙ্ক, এইডসসহ অন্যান্য যৌনবাহিত রোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য জানব। এসব রোগ কেন হয়, এর লক্ষণগুলো কী কী এবং এগুলো প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় সম্বন্ধে তথ্য লিপিবদ্ধ করব। বাড়িতেও নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করব। উৎস হিসেবে আমরা এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশিক্ষিত এনজিও কর্মী, শিক্ষক, স্কুলের লাইব্রেরি এবং ইন্টারনেট এর বিশ্বস্ত সূত্র বিবেচনায় নিতে পারি। এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে আমরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করব।
জরিপের মাধ্যমে আমরা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে টিকা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বিষয়ে জেনেছি। এছাড়াও বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতা শুনেছি। এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবদন তৈরি করেছি। এবার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিজেদের জীবনাচরণের পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার পালা। সাথে সাথে সংক্রামক রোগের প্রতিরোধের জন্য টিকা গ্রহণের সচেতনতায় ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জীবনাচরণের পরিবর্তনে অন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ নেব।
নিজের অভ্যাস গড়ি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করি
আমরা সংক্রামক রোগ ও অসংক্রামক রোগ হতে বেঁচে থাকার উপায় জানলাম, কিন্তু জানলেই হবে না। এটা নিয়ে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে আর নিজের জীবনে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষকের নির্দেশনায় আমরা অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে একটি লিফলেট তৈরি করেছি। এবার লিফলেট ব্যবহার করে যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম তাদের সচেতন করব। কতজনের কাছে আমি পৌঁছাতে পেরেছি তা নিচের ছকে উল্লেখ করব।
বিষয় | নারী/মেয়ে | পুরুষ/ ছেলে | মোট |
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে তথ্য প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ | |||
টিকা দ্বারা প্রতিরোধ করা যায় না এমন সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ | |||
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জীবন যাপনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠনে উদ্বুদ্ধকরণ |
এবার নিজের অভ্যাস গঠনের পালা, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমরা যে স্বাস্থ্যকর আচরণ সম্পর্কে জেনেছি সেগুলো চর্চা করব। নিচের ছকটি ব্যবহার করে প্রতিমাসে প্রত্যেকটি অভ্যাস চর্চার জন্য আমরা '১-৫' এর নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন করতে পারি। যদি সবগুলো চর্চা নিয়মিত করি তাহলে প্রতিটি অভ্যাস চর্চার জন্য ৫, আর যদি নিয়মিত পালন না করি তাহলে ১। এভাবে প্রতিটি অভ্যাসের জন্য নিজেকে মূল্যায়ন করব।
মাস | নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা | স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ | ধূমপান এবং যেকোনো তামাক জাতীয় পদার্থ গ্রহণে বিরত থাকা | মানসিক চাপ ও অস্থিরতা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগ |
১ম | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্যনম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য |
২য় | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য |
৩য় | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য |
৪র্থ | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য |
৫ম | নম্বর ন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য | নম্বর মন্তব্য |
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
অপর পৃষ্ঠার ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে → নেবো। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দিবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।
মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ
নিজের মন্তব্য | সহপাঠীর মন্তব্য | অভিভাবকের মন্তব্য | শিক্ষকের মন্তব্য | |
স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ গ্রহণ | ||||
শ্রদ্ধাশীল আচরণ | ||||
সহযোগিতামূলক মনোভাব | ||||
পাঠ্যপুস্তকে সম্পাদিত কাজের মান |
মূল্যায়ন ছক ২: সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চর্চা
মন্তব্য | সঠিকভাবে জরিপের তথ্য সংগ্রহ | অন্যদের সচেতন করার কৌশল প্রয়োগ | স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চর্চায় নিজের চেষ্টা ও আগ্রহ |
নিজের মন্তব্য | |||
অভিভাবকের মন্তব্য | |||
শিক্ষকের মন্তব্য |
আরও দেখুন...