লেনদেন ও হিসাবরক্ষণ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

ভূমিকা

হিসাবরক্ষণের সাহায্যে আমরা প্রথমত ব্যবসার লেনদেন সংরক্ষণ করতে পারি। দ্বিতীয়ত, আর্থিক লেনদেনের প্রকৃতি অনুসারে ভাগ করে সাময়িক ফলাফল জানতে পারি এবং এর সমষ্টি নির্ণয় করা যায় । তৃতীয়ত, হিসাব রক্ষণের তথ্য থেকে ব্যবসার লাভ-ক্ষতি হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করতে পারি ।

একজন উদ্যোক্তা বিভিন্ন পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণ করতে পারেন। তিনি প্রতিদিন, সাপ্তাহিক, মাসিক বিভিন্ন সময়কালের আর্থিক লেনদেন তথ্যের হিসাব রাখতে পারেন। যে পদ্ধতিতেই হিসাব রাখা হোক না কেন বছর শেষে লাভ-ক্ষতি হিসাব (Profit and Loss Account) ও বছরান্তে উদ্বৃত্তপত্র (Balance Sheet) তৈরি করা হয়।

বুককিপিং একটি সামাজিক শাস্ত্র। প্রতিদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন হয়ে থাকে। এ লেনদেন সংরক্ষণ করা না হলে ব্যবসার লাভ-ক্ষতি হিসাব ও আর্থিক অবস্থা জানা যায় না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় করতে হয় বিধায় বিভিন্ন কাজে অর্থ খরচ করতে হয়। বর্তমান জগতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য হিসাবরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।

হিসাবরক্ষণ বা বুককিপিং-এর সংজ্ঞা 

Definition of Book-Keeping

ইংরেজি ‘Book-Keeping' এর বাংলা পরিভাষা হিসাবরক্ষণ । ইংরেজি ভাষায় Book শব্দের অর্থ বই এবং Keeping শব্দের অর্থ সংরক্ষণ। তা হলে Book - Keeping শব্দের অর্থ হলো বই সংরক্ষণ। কিন্তু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর অর্থ হিসাবের বই এবং এর অর্থ সুষ্ঠু, সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে হিসাবরক্ষণের পদ্ধতিকে বোঝায় ।

ব্যাপক অর্থে বুককিপিং বলতে ব্যবসা সংঘটিত আর্থিক লেনদেনসমূহ সুষ্ঠু, সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হিসাবের বইতে সংরক্ষণ করার কলাকৌশলকে বোঝায়।

হিসাব রক্ষণের বুক কিপিং এর উদ্দেশ্যসমূহ (Objects of Book-keeping)

প্রত্যেক কারবার প্রতিষ্ঠান তার আর্থিক লেনদেনগুলোর ফলাফল জানতে আগ্রহী। বুককিপিং-এর মাধ্যমে এরূপ ফলাফল জানা সম্ভব। বুক-কিপিং এর মাধ্যমে কারবারি যে কোনো সময় তার ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা, লাভ-ক্ষতি, দেনা-পাওনাদার পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ে অবগত হতে পারে। যে কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের ফলাফল নিরূপণ করাই বুক কিপিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য। নিম্নে প্রধান উদ্দেশ্যগুলো বর্ণিত হলো:

১. কারবারসংক্রান্ত লেনদেনের স্থায়ী হিসাব সংরক্ষণ: কোনো প্রতিষ্ঠানের কারবারসংক্রান্ত লেনদেনগুলোর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে হিসাবের বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হিসাবের সর্বপ্রথম উদ্দেশ্য। এর ফলে ব্যবসায়ী ভবিষ্যতের যে কোনো সময় স্মৃতিশক্তির সাহায্য ছাড়াই লেনদেনের সঠিক প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব ।

২. কারবারের লাভ-লোকসান নির্ণয়: প্রত্যেক কারবার প্রতিষ্ঠানই কোনো নির্দিষ্ট সময়াস্তে তার আর্থিক ফলাফল অর্থাৎ লাভ-লোকসান জানতে আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি হিসাব সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়ী যে কোনো সময় ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-লোকসান হিসাব তৈরির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান নির্ণয় করতে পারে ।

৩. কারবার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নিরূপণ: একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দেনা-পাওনা, সম্পদ ও দায় মূলধন তথা সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা হিসাববিজ্ঞানের আর একটি প্রধান উদ্দেশ্য । একটি নির্দিষ্ট সময়ের শেষ তারিখে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায় ।

৪. নগদ টাকার অবস্থা নিরূপণ: কারবারের হিসাব বইগুলোর মধ্যে নগদান বই অন্যতম প্রধান বই । এ বইয়ে নগদ অর্থের প্রাপ্তি ও প্রদানের হিসাব রাখা হয়। তাছাড়া হাতে নগদ টাকা ও ব্যাংকে জমা নগদের পরিমাণও জানা যায় । 

৫. যাবতীয় সম্পদ ও দায়-দেনার উপর নিয়ন্ত্রণ: সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও দেনার সঠিক অবস্থা জানা যায়। ফলে কারবারের সম্পত্তির পরিমাণ কমে গেলে অথবা দায়- দেনার পরিমাণ বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবসায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে । 

৬. কারবার প্রতিষ্ঠানের দেনা ও পাওনার পরিমাণ নির্ধারণ: কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানে সমুদয় আর্থিক লেনদেনগুলোকে সুষ্ঠুভাবে হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট দিনে কারবার প্রতিষ্ঠানের মোট দেনা ও পাওনার পরিমাণ সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায় ।

৭. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা: কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানে সমুদয় আর্থিক লেনদেনগুলোকে সুষ্ঠুভাবে হিসাবের খাতা লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট দিনে কারবার প্রতিষ্ঠানের মোট দেনা ও পাওনার পরিমাণ সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায় । 

৮. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা: কারবার প্রতিষ্ঠানের লেনদেনগুলো সঠিকভাবে হিসাবের বইয়ে সংরক্ষণের ফলে প্রত্যেক হিসাব খাতের ব্যয়ের পরিমাণ পৃথকভাবে জানা যায়। ফলে ব্যবসায়ী প্রয়োজনবোধে তার ব্যবসার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।

৯. হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেন হিসাবের বইয়ে সংরক্ষণ করলে এবং পরবর্তীতে রেওয়ামিল তৈরি করার মাধ্যমে হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হিসাব সংরক্ষণের উদ্দেশ্য । 

১০. চুরি ও জালিয়াতি রোধ: বর্তমানকালে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে চুরি ও জালিয়াতি হওয়ার আশঙ্কা আছে । সুষ্ঠুভাবে হিসাব সংরক্ষণ করলে সহজেই এসব ধরা পড়ে এবং সহজেই তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় । 

১১. কর নির্ধারণে সহায়তা: কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানের সমুদয় হিসাব স্বীকৃত হিসাব পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষিত হলে আয় কর বা বিক্রয় কর কর্তৃপক্ষের নিকট তা অধিক গ্রহণযোগ্য হয় । ফলে হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে আয়কর এবং বিক্রয় কর কর্তৃপক্ষের নিকট তা অধিক গ্রহণযোগ্য হয়। ফলে হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে আয়কর এবং বিক্রয় কর সম্বন্ধীয় সমস্যার সমাধান সহজতর হয়। 

১২. কারবার পরিচালনায় সাফল্য অর্জন: কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানের সমুদয় লেনদেনগুলো হিসাবের বইয়ে সংরক্ষণের ফলে ব্যবসায়ী কারবারের বিভিন্ন তথ্যাদি সম্পর্কে সহজেই অবহিত হতে পারে। ফলে কারবারি কারবারের বিভিন্ন তথ্য প্রয়োগের মাধ্যমে কারবারের সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে কারবার পরিচালনার সাফল্য অর্জন করতে পারে। 

১৩. অর্থনৈতিক তথ্য পরিবেশন করা: আর্থিক বিবরণী, বিকৃতি ও প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় অর্থনৈতিক তথ্য যথাশীঘ্র সংশ্লিষ্ট পক্ষকে জানানো হিসাবরক্ষণের উদ্দেশ্য।

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, হিসাবরক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুষ্ঠুভাবে ও সঠিক নিয়মে হিসাব সংরক্ষণ করে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে লাভবান হতে সহায়তা করে ।

Content added || updated By

হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি (Method of Book keeping)

হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি দুইরকম । যথা— 

১. একতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি । 

২. দু'তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি ।

হিসাবরক্ষণের এ পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি (Double Entry System)। বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য হিসাবরক্ষণ আধুনিক পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। দু'তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি বর্ণনার পূর্বে কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে জানা দরকার ।

১. সম্পদ (Assets ) 

২. মূলধন (Capital ) 

৩. ঋণ (Credit)

দু'তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতিতে এ তিন ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে হিসাব রক্ষিত হয় ।

১. সম্পদ (Assets): এখানে সম্পদ বলতে ব্যবসার প্রয়োজনে যে সকল দ্রব্য ক্রয় করা হয়। যেমন-জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, স্টেশনারি দ্রব্য, এমনকি নগদ টাকাও সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয় ।

২. মূলধন (Capital): মূলধন হচ্ছে ব্যবসায় সম্পদ ক্রয় করার জন্য এবং সেই সাথে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিনিয়োগকৃত অর্থ ও ব্যবসায় মূলধন । 

৩. ঋণ (Credit): ঋণ হচ্ছে উক্ত সম্পদগুলোর ক্রয় করার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যখন অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে কোনো শর্তের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে তখন সেই পরিমাণ অর্থকে ঋণ বলে । যেমন-ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, কোনো পণ্য দ্রব্য বাকিতে ক্রয় করা অথবা কোনো পাওনা এখনও পরিশোধ করা হয়নি এমন অর্থও ঋণ পাওনা হিসাবে দেখানো হয় ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণের সময় নিম্নলিখিত তিনটি বিষয় বিবেচনা করতে হয় ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সংজ্ঞা (Definition of Double Entry System) :

যে পদ্ধতির প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষকে সমান টাকার অংকে একটিকে ডেবিট এবং অপরটিকে ক্রেডিট করে হিসাবের বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির কতিপয় জনপ্রিয় সংজ্ঞা নিম্নে প্রদত্ত হলো :

১. উইলিয়াম পিকলস-এর মতে, 'দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে টাকা বা টাকায় পরিমাপযোগ্য প্রতিটি লেনদেনকে দ্বৈত সত্তায় প্রকাশ করা হয় । ফলে একটি হিসাব খাতকে প্রাপ্ত সুবিধার জন্য ডেবিট এবং সুবিধা প্রদানকারী হিসাবকে ক্রেডিট করা হয় । এটাই দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি ।'

২. অধ্যাপক ব্রুক ও পামার আর্চারের মতে, 'প্রতিটি লেনদেনের দ্বৈত সত্তা লিপিবদ্ধ করে কারবারের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।'

৩. স্পাইসার ও পেগলার-এর মতে, 'যে পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনকে সমপরিমাণ অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় । অর্থাৎ এক বক্তির নিকট হতে যে সুবিধা পায় এবং অপর ব্যক্তিকে সমান মূল্যের সুবিধা প্রদান করে তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

উপরোক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, হিসাব পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট এই দ্বৈত সত্তা দু'টি পৃথক হিসাব খাতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাসমূহ ( Advantages of Double Entry System )

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। নিম্নে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :

১. লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ হিসাব: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে লেনদেনের দ্বৈত সত্তার উপর প্রতিষ্ঠিত বলে লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখা সম্ভব ।

২. গাণিতিক নির্ভুলতা যাচাই: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণের মাধ্যমে যাচাই করা যায় । 

৩. লাভ-লোকসান নির্ণয়: এ পদ্ধতিতে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাবসমূহ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়; ফলে কোনো নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে সহজেই লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুত করে কারবারের সঠিক লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করা যায় । 

৪. দেনা-পাওনার পরিমাণ জানা: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রাখলে মোট দেনা ও মোট পাওনার পরিমাণ জানা যায় এবং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা সহজ হয় । 

৫. আর্থিক অবস্থা নির্ণয়: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পত্তি ও দায়ের হিসাব যথাযথভাবে রাখা হয় । ফলে উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা যায় । 

৬. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায় । 

৭. তুলনামূলক বিশ্লেষণ: এ পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হলে চলতি হিসাবকালের সাথে সহজেই এক বা একাধিক হিসাবকালের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করা যায় ।

৮. চুরি ও জালিয়াতি রোধ: এ পদ্ধতিতে হিসাব রাখলে হিসাবের ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি সহজে উদ্ঘাটন করা যায় এবং চুরি ও জালিয়াতির হাত থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষাও করা যায় ।

৯. তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ: এ পদ্ধতিতে হিসাব রাখার মাধ্যমে ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সহজেই সংগ্রহ করা যায় এবং প্রয়োজনে তথ্যসমূহ সরবরাহ করে ব্যবসায়ীকে সহায়তা করা যায় । 

১০. সহজ প্রয়োগ: দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতিটি নির্ভরযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হওয়ায় ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানেই প্রয়োগ করা যায় ।

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি (Double Entry System)

দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য হিসাব ব্যবস্থা। ইতালীয় ধর্মযাজক লুকা প্যাসিওলি ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি প্রচলন করেন । বর্তমান বিশ্বে এ পদ্ধতিটি হিসাবরক্ষণের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত এবং সুসংবদ্ধ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । যে পদ্ধতির প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষকে সমান টাকার অংকে একটিকে ডেবিট এবং অপরটিকে ক্রেডিট করে হিসাব বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে ।

প্রত্যেক ব্যবসায়ের লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকে। একটি ডেবিট পক্ষ এবং অপরটি ক্রেডিট পক্ষ । যে পক্ষ গ্রহণ করে তাকে ডেবিট এবং যে পক্ষ প্রদান করে তাকে ক্রেডিট বলে ।

দু'তরফা দাখিলা হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি একটি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া যা অবিরত চক্রাকারে চলতে থাকে । হিসাবরক্ষণের এই প্রক্রিয়াকে হিসাব চক্র বলে । নিম্নলিখিত পাঁচটি স্তরে হিসাব চক্রকে বিভক্ত করা যায় । যথা-

Content added By

মোবাইল ব্যাংকিং ও এর কার্যাবলি

মোবাইল ব্যাংকিং বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে এক যুগান্তরকারী পদ্ধতি। নগদ টাকার লেনদেন মুহূর্তেই গ্রাহকের নিকট পৌঁছে দেওয়ার অনলাইন সিস্টেমকে মোবাইল ব্যাংকিং বলে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন একটি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট। আজকাল প্রায় ব্যাংকেই মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম চালু হয়েছে। এতে গ্রাহকের একটি এটিএম কার্ড সঙ্গে রাখতে হয়; যা এটিএম বুথে মেশিনে ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত থাকা সাপেক্ষে উত্তোলন করা সম্ভব হয়। মোবাইল সিম এবং একাউন্ট ব্যবহার করে মোবাইলে ক্যাশ লে-দেন সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং এর মধ্যে বিকাশ, রকেট এবং এম-ক্যাশ উল্লেখযোগ্য।

Content added By

ব্যবসায় হিসাবরক্ষণ বহিসমূহ লেখার নিয়মাবলি

নগদান বই (Cash Book): যে হিসাবের বইয়ে সর্বপ্রকার নগদ টাকার আদানপ্রদান বা প্রাপ্তি পরিশোধ সংক্রান্ত তারিখের ক্রমানুসারে প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং নির্ধারিত সময়াস্তে ব্যালেন্স নির্ণয় করা হয় তাকে নগদান বই বলা হয়। নগদান বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠায় দু'টি দিক থাকে । একটি ডেবিট দিক এবং একটি ক্রেডিট দিক । প্রতিষ্ঠানের সমস্ত প্রাপ্ত নগদ টাকা ডেবিট দিকে এবং যাবতীয় নগদ টাকা প্রদান বা পরিশোধ ক্রেডিট দিকে লেখা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর নগদান বইয়ের জের বা ব্যালেন্স নির্ণয় করা হয় । এখানে উল্লেখ্য যে, নগদ প্রাপ্তি অপেক্ষা নগদ প্রদানের পরিমাণ কখনোই বেশি হতে পারে না । তাই নগদান বইয়ের সর্বাবস্থায় ডেবিট ব্যালেন্স হয় । উক্ত ডেবিট ব্যালেন্সের পরিমাণ নগদ তহবিলের সমান হয় ।

নগদান বইয়ের শ্রেণিবিভাগ (Classfication of Cash Book)

কারবার প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনের প্রকৃতি, পরিমাণ ও প্রয়োজন অনুসারে নগদান বইকে চার শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন-

১. একঘরা নগদান বই (Single Column Cash Book) 

২. দু'ঘরা নগদান বই (Double Column Cash Book 

৩. তিনঘরা নগদান বই (Three Column Cash Book) 

৪. খুচরা নগদান বই (Petty Column Cash Book)

নিম্নে নগদান বইয়ের উপরোক্ত শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো: 

১. একঘরা নগদান বই (Single Column Cash Book)

যেসব প্রতিষ্ঠানে নগদেই অধিকাংশ লেনদেন সম্পাদিত হয়ে থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানে একঘরা নগদান বই সংরক্ষণ করে । যে নগদান বইয়ের উভয় দিকে টাকার পরিমাণ লেখার জন্য একটি করে ঘর থাকে তাকে একঘরা নগদান বই বলে । সাধারণ ছোট ছোট বই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে এ বই ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

নগদ ও ব্যাংকসংক্রান্ত লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করার জন্য যে নগদান বইয়ের উভয় পার্শ্বে নগদ ও ব্যাংকের জন্য পৃথক টাকার ঘর রাখা হয় তাকে দু'ঘরা নগদান বই বলা হয় । সকল প্রকার নগদ ও ব্যাংক প্রাপ্তিসমূহ এ বইয়ের ডেবিট দিকে এবং সকল প্রকার নগদ ও চেকের মাধ্যমে প্রদান ক্রেডিট-এর দিকে লেখা হয় ।

৩. তিনঘরা নগদান বই (Three Column Cash Book)

যে নগদান বইয়ে ডেবিট এবং ক্রেডিট উভয় পার্শ্বে নগদ, ব্যাংক ও বাট্টাসংক্রান্ত লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনটি করে টাকার ঘর থাকে তাকে তিনঘরা নগদান বই বলা হয়। দেনাদারের নিকট হতে টাকা আদায় করার জন্য যে বাট্টা প্রদান করা হয় তা ডেবিট দিকের বাট্টার ঘরে লিখতে হয় এবং পাওনাদারকে টাকা পরিশোধ করার সময় যে বাট্টা পাওয়া যায় তা ক্রেডিটের দিকে বাট্টার ঘরে লিখতে হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বাট্টার জন্য ব্যালেন্স নির্ণয়ের প্রয়োজন নেই। কারণ ডেবিট ও ক্রেডিট ঘরের যোগফল স্বতন্ত্র খতিয়ান ব্যালেন্স হিসেবে বিবেচিত হয়।

৪. খুচরা নগদান বই (Petty Column Cash Book): যে নগদান বইতে কারবার প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন ছোট অংকের খরচগুলো তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খুচরা নগদান বই বলা হয় ।

দু'ঘরা এবং তিনঘরা নগদান বই প্রস্তুত করার নিয়মাবলি 

(Rules for Preparing Double, Tripple Column Cash Book)

১. প্রারম্ভিক নগদ তহবিল এবং ব্যাংক উদ্বৃত্ত: দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইতে ডেবিট দিকে ব্যালেন্স সি/ডি বাবদ নগদ তহবিল নগদ ঘরে এবং ব্যাংক উদ্বৃত্ত ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে । উল্লেখ্য যে, ব্যাংক জমাতিরিক্ত থাকলে ক্রেডিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে ।

২. নগদ অর্থ প্রাপ্তি ও নগদ অর্থ পরিশোধ: নগদ অর্থ পাওয়া গেলে দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বহির ডেবিট দিকে নগদ ঘরে লিখতে হবে। নগদ অর্থ পরিশোধ করা হলে তা দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বহির ক্রেডিট দিকে নগদ ঘরে লিখতে হবে। 

৩. চেক প্রাপ্তি: চেক প্রাপ্ত হয়ে ব্যাংকে জমা না দেওয়া পর্যন্ত নগদ টাকার শামিল। চেক প্রাপ্তি দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে নগদ ঘরে লিখতে হবে । 

৪. চেক প্রদান: চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করলে দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে । 

৫. ব্যাংকের টাকা জমা রাখা: যখন নগদ টাকা নগদ তহবিল হতে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয় তখন দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের উভয় পার্শ্বে একটি করে জায় করতে হয়। ব্যাংক নগদ টাকা জমা দেওয়ার ফলে উক্ত পরিমাণ টাকা নগদ তহবিল হতে চলে যায়; পক্ষান্তরে ব্যাংক উক্ত টাকা গ্রহণ করে। সেহেতু নগদ তহবিল দাতা এবং সে জন্য এটি নগদান বইয়ের ক্রেডিট পার্শ্বে টাকার পরিমাণ কক্ষে লিখতে হবে । আবার ব্যাংক উক্ত টাকা গ্রহণ করে তাই ব্যাংক গ্রহীতা এবং সেহেতু উক্ত টাকার পরিমাণ দিয়ে ব্যাংক হিসাব ক্রেডিট হয় । অর্থাৎ নগদান বইয়ের ডেবিট পার্শ্বস্থিত ব্যাংক পরিমাণ কক্ষে তা লিখতে হবে। বিপরীতমুখী দাখিলাকে কন্ট্রা এন্ট্রি বলা হয় । 

৬. ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন: ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করলে দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের উভয় পার্শ্বে একটি করে জায় লিখতে হয়। ব্যাংক হতে টাকা তোলার ফলে ব্যাংক দাতা হয় বিধায় উক্ত টাকা নগদ তহবিলে আগমন করে, সেহেতু নগদ তহবিল গ্রহীতা রূপে গণ্য হয় । সুতরাং ব্যাংক হতে টাকা তোলা হলে প্রথমবার দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট পার্শ্বস্থিত ব্যাংক পরিমাণ কক্ষে লিখতে হয় এবং দ্বিতীয়বার এটি উভয় নগদান বইয়ের ডেবিট পার্শ্বস্থিত টাকার পরিমাণ কক্ষে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ বিপরীতমুখী দাখিলাকে বাট্টা এন্ট্রি বলা হয় । 

৭. চেক পেয়ে তা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে জমা দিলে চেক পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে জমা দিলে তা দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে । 

৮. প্রাপ্য বিল আদায়ের জন্য ব্যাংকে প্রেরণ: প্রাপ্য বিল আদায়ের জন্য ব্যাংকে জমা দেওয়া হলে তা দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে । 

৯. আদায়ের জন্য ব্যাংকে প্রেরিত বিল প্রত্যাখ্যাত হওয়া: যদি কোনো প্রাপ্য বিল আদায়ের জন্য ব্যাংকে প্রেরিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট খাতকের নিকট হতে আদায় না হয়ে প্রত্যাখ্যাত হয় তখন এ প্রত্যাখ্যাত বিল দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিটে ব্যাংক ঘরে লিপিবদ্ধ করতে হবে। 

১০. মালিকের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন: মালিক কর্তৃক ব্যাংক হতে নিজ প্রয়োজনে সরাসরি টাকা উত্তোলনের জন্য নগদ তহবিল কোনোরূপ প্রভাবিত হয় না। এ টাকা সরাসরি মালিকের নিকট চলে যায় বলে দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে ।

১১. ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদেয় বিল পরিশোধ: ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদেয় বিল পরিশোধ করা হলে দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট পার্শ্বে ব্যাংক পরিমাণ কক্ষে লিপিবদ্ধ করা হয় । 

১২. সরাসরি ব্যাংকে প্রদান: যদি কোনো দেনাদার আমাদের কারবারের পক্ষে ব্যাংকে সরাসরি টাকা জমা দেয় অথবা যদি ব্যাংক আমাদের পক্ষে অপর কারো নিকট হতে টাকা আদায় করে তবে তা দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে। 

১৩. ব্যাংক কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত সুদ: ব্যাংক জমা টাকার উপর সুদ প্রদান করে । এ সুদের জন্য ব্যাংকে জমা টাকা বৃদ্ধি পায় । সুতরাং ব্যাংক মঞ্জুরীকৃত সুদ দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ডেবিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে ।

১৪. ব্যাংক চার্জ: ব্যাংক মাঝে মাঝে আমানতকারীর বিভিন্ন প্রকার কার্য সম্পাদন করে থাকে এবং এ সমস্ত কাজের জন্য কিছু কমিশন ধার্য করে । ব্যাংক কর্তৃক ধার্যকৃত এরূপ কমিশনকে ব্যাংক চার্জ বলে । ব্যাংক চার্জ দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট দিকে ব্যাংক ঘরে লিখতে হবে। কারণ উক্ত টাকা গ্রাহকের হিসাব থেকে কেটে রাখা হয়। 

১৫. মঞ্জুরীকৃত নগদ বাট্টা ও প্রাপ্ত নগদ বাট্টা: মঞ্জুরকারী প্রতিষ্ঠান-এর তিনঘরা নগদান বইতে এ মঞ্জুরীকৃত নগদ বাট্টা উক্ত নগদান বহির ডেবিট পার্শ্বে বাট্টা পরিমাণ ঘরে লিপিবদ্ধ করবে । পাওনাদারগণের নিকট নগদ বাট্টা পাওয়া যেতে পারে। এরূপ প্রাপ্ত বাট্টা একটি আয় এবং এটি তিনঘরা নগদান বইয়ের ক্রেডিট পার্শ্বে বাট্টা পরিমাণ কক্ষে লিপিবদ্ধ করা হয়। 

১৬. কন্ট্রা এন্ট্রি এর সংজ্ঞা (Definition of Contra Entry): নগদ ও ব্যাংক সম্পর্কীয় লেনদেনগুলোর কতিপয় দফা আছে যেগুলোর প্রতিটি কন্ট্রা এন্ট্রি বলা হয়। যেমন-কারবারের টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হলে এবং কারবারের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হলে, দু'ঘরা ও তিনঘরা নগদান বইয়ের উভয় দিকে লিখতে হয় । ডেবিটের দিকে নগদ ঘরে লিপিবদ্ধ করা হলে ক্রেডিটের দিকে ব্যাংক ঘরে লিপিবদ্ধ করা হয় । পক্ষান্তরে, ডেবিট দিকে ব্যাংক ঘরে লেখা হলে তা ক্রেডিট দিকে নগদ ঘরে লেখা হবে। এ জাতীয় দাখিলাকে কন্ট্রা এন্ট্রি বা বিপরীত দাখিলা বলা হয় ।

উদাহরণ: ১। নিম্নলিখিত লেনদেনগুলো অবলম্বন করে মেসার্স রানা এন্ড কোং-এর একটি নগদান বই তৈরি কর।

নগদান বই সর্বাবস্থায় ডেবিট ব্যালেন্স প্রকাশঃ

নগদান বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠায় দুটি দিক থাকে। একটি ডেবিট দিক এবং অন্যটি ক্রেডিট দিক । প্রতিষ্ঠানের সমস্ত প্রাপ্ত নগদ টাকা ডেবিট দিকে এবং ক্রেডিট দিকে যাবতীয় নগদ প্রদান বা পরিশোধ লিপিবদ্ধ করা হয় । নগদান বইতে সমস্ত লেনদেন লিপিবদ্ধ করার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর এর ব্যালেন্স নির্ণয় করা হয়। নগদান বইয়ের এ ব্যালেন্স সর্বাবস্থায় ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে । কারণ নগদ প্রাপ্তির পরিমাণ হতে নগদ পরিশোধের পরিমাণ কোনো অবস্থাতেই বেশি হতে পারে না ।

১. জাবেদাকরণ (Journalising)। জাবেদা হিসাবরক্ষণের প্রাথমিক বই। ব্যবসায়ের প্রতিটি লেনদেন সমূহ সর্বপ্রথমে ডেবিট ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে জাবেদা বইয়ে লিপিবদ্ধ করা। এটা হিসাব চক্রের প্রথম ধাপ। জাবেদা বইকে সাধারণ জাবেদা বলে। এটা ছাড়া কিছু কিছু ভিন্নধর্মী জাবেদা বই রয়েছে। যেমন—ক্রয় বই ও বিক্রয় বই, ক্রয় ফেরত, বিক্রয় ফেরত বই, নগদান বই, প্রাপ্য বিল, প্রদেয় বিল, বেতন বহি ইত্যাদি ।

২. খতিয়ানভুক্তকরণ (Posting for Ledger): হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হলো খতিয়ানভুক্তকরণ । জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ লেনদেন একই শ্রেণির হিসাব বইতে রেকর্ড করাকে খতিয়ানভুক্তকরণ বলে ।

খতিয়ান বইতে লেনদেনগুলো পাকাপাকিভাবে পৃথক পৃথক হিসাবরক্ষণ করা হয়। খতিয়ান বই অনেকগুলো। যেমন- নগদান হিসাব, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি হিসাব, মাল ক্রয় হিসাব, মাল বিক্রর হিসাব ইত্যাদি । খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক হিসাব দেখে ব্যবসায় সামগ্রিক আর্থিক চিত্র সম্পর্কে ধারণা করা যায় । খতিয়ান দেখে ব্যবসার দেনা-পাওনার পরিমাণ ব্যাকে পাচ্ছিত টাকার পরিমাণ, লাভ-লোকসান নির্ণয়, আর্থিক অবস্থা হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায় ।

৩. রেওয়ামিল তৈরিকরণ (Preparing Trial Balance) হিসাব চক্রের তৃতীয় ধাপ রেওয়ামিল প্রস্তুত করা খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হিসাবসমূহের ডেবিট জেল ও ক্রেডিট জেনগুলোকে একটি বিবরণীর মাধ্যমে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করাকে রেওয়ামিল বলে। প্রতিটি খতিয়ানের ডেবিট ও ক্রেডিট ব্যালেন্স রেওয়ামিলের ডেবিট ও ক্রেডিট পার্শ্বে স্থানান্তর করে উত্তর পার্শ্বের যোগফল নির্ণয় করাই রেওয়ামিল প্রস্ততকরণ। ভয়ান হিসাবগুলোর গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।

হিসাবে কোনো গরমিল না থাকলে রেওয়ামিলের দুই দিক সমান হয়। যদি কোনো কারণে উভয় দিক সমান না হয় তবে বুঝতে হবে হিসাবের কোথাও না কোথাও ভুল হয়েছে।

৪. আর্থিক বিবরণী তৈরিকরণ (Preparation Financial Statement): হিসাব চক্রের চতুর্থ ধাপ হলো আর্থিক বিবরণী তৈরিকরণ। এ পর্যায়ে রেওয়ামিল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে বছরের শেষে ব্যবসার ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, লাভ-লোকসান হিসাব ও উদ্বৃত্তপত্র প্রস্তুত করে আর্থিক ফলাফল নিরূপণ করা হয় । 

৫. আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ (Analysis of Financial Statement): ব্যবসায়ীকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যেন ভবিষ্যতে ব্যবসা হতে মুনাফা অর্জন করা যায় । সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসার প্রতি বছরের শেষে আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবসার সাফল্য-ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করা যায় এবং পরবর্তীতে সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় ।

চূড়ান্ত হিসাবের সংজ্ঞা (Definition of Final Account): ব্যবসার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা । প্রত্যেক ব্যবসায়ী জানতে চায়, কোনো নির্দিষ্ট সময় পরে ব্যবসায় কত লাভ হলো কত ক্ষতি হলো । একমাত্র চূড়ান্ত হিসাব কারবারের সঠিক আর্থিক অবস্থা নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে । কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে কারবার প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত লাভ-লোকসান এবং সঠিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করার জন্য যে সমস্ত হিসাব ও বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকেই সমষ্টিগতভাবে চূড়ান্ত হিসাব বলে ।

সেবামূলক ব্যবসা (Service Business)

যে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় উৎপাদনের সাথে জড়িত না হয়ে আত্মকর্মসংস্থামূলক পেশার সাথে জড়িত রয়েছে তাদেরকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বলে। যেমন- হোটেল, ক্যান্টিন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন কোম্পানি, ইত্যাদি । সেবামূলক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালন ব্যয় পর্যায় এসে সংগ্রহ করা হয় এবং মোট পরিচালন ব্যয়কে নির্দিষ্ট সময়ান্তে মোট সেবা একক দিয়ে ভাগ করে সেবা এককের ব্যয় নির্ণয় করা হয় ।

Content added By

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. হিসাবরক্ষণ কী? 

২. হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? 

৩. নগদান বহির শ্রেণিবিভাগ দেখাও । 

8. পণ্য মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হয়? 

৫. ক্রয় মূল্য ব্যবসা কাকে বলে? 

৬. সেবামূলক ব্যবসা কাকে বলে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. হিসাবরক্ষণ ও হিসাববিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। 

২. দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও । 

৩. নগদান বহির সংজ্ঞা দাও । 

৪. চূড়ান্ত হিসাব কাকে বলে?

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. বুক-কিপিং-এর উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর । 

২. হিসাবরক্ষণের সুবিধাগুলো আলোচনা কর ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion