তোমার ঘরের দরজায় ঠক্ শব্দ হলে তুমি বুঝতে পার তোমার দরজায় কেউ অপেক্ষা করছে। দরজার কলিংবেল বাজলেও আমরা বুঝতে পারি কেউ এসেছে। কারও পায়ের শব্দ শুনে তুমি বুঝতে পার যে, কেউ আসছে। শব্দ আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা অন্যের সাথে যোগাযোগে সহায়তা করে। আমরা আমাদের চারপাশে নানা রকম শব্দ শুনতে পাই। বাঁশির সুর, গাড়ির হর্ন, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, ছাগলের ব্যা ব্যা, মুরগির কুকুরুকু, পাখির কলতান ইত্যাদি। শব্দ এক প্রকার শক্তি, যা আমাদের শুনার অনুভূতি জন্মায়। শব্দ কীভাবে উৎপন্ন হয়, কীভাবে সঞ্চালিত হয়, কীভাবে আমরা বিভিন্ন রকম শব্দ চিনতে পারি ইত্যাদি নিয়ে এই অধ্যায়ে আলোচনা করব।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
আমরা আমাদের কানের মাধ্যমে শব্দ শুনি। একটি স্টিলের বাটিকে মেঝেতে ফেল; শব্দ শুনতে পাবে। তুমি যখন কথা বল তখন মুখ থেকে শব্দ শুনতে পাও। আরিয়ান তার ঘড়ির এলার্মের শব্দে ঘুম থেকে ওঠে। সে তার স্কুলে যাবার পথে নানা রকম শব্দ শুনতে পায়। পাখির কাকলি, রাস্তায় রিকশার বেলের টুংটাং শব্দ, গাড়ির হর্ন, মানুষের হৈচৈ ইত্যাদি নানা রকম শব্দ। বন্ধুরা যখন কথা বলে তখন গলা থেকে উৎপন্ন সব রকম শব্দই তুমি চিনতে পার এবং বলতে পার কে কথা বলছে। আমরা যে সকল শব্দ শুনতে পাই তার মধ্যে কিছু আছে যা শ্রুতিমধুর। এদের মধ্যে সুর আছে এবং শুনতে ভাল লাগে। এরকম শব্দ হলো বাঁশির সুর ও হারমোনিয়ামের শব্দ। কিছু আছে গোলমেলে, সুরহীন ও বিরক্তিকর। এ-রকম শব্দ হলো গাড়ির হর্নের শব্দ, লোহা কাটার শব্দ, কুকুরের ঘেউ ঘেউ ইত্যাদি।
কাজ: সুরযুক্ত ও সুরহীন শব্দ শনাক্ত করা। পদ্ধতি: ৫/৬ জন করে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও। তোমরা যে নানা রকম শব্দ শুনতে পাও, তাদের মধ্যে কোনোগুলো সুরযুক্ত ও কোনোগুলো সুরহীন তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করো। আলোচনা থেকে পাওয়া সুরযুক্ত ও সুরহীন শব্দের একটি তালিকা তৈরি কর। দলের একজন শ্রেণিতে উপস্থাপন কর। |
শব্দ সুরযুক্ত বা সুরহীন যাই হোকনা কেন সকল শব্দেরই একটি উৎস আছে। শব্দ কোনো না কোনো উৎসে উৎপন্ন হয়। শব্দের ধরন থেকে আমরা বুঝতে পারি শব্দের উৎস কী? যেমন ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনলে না দেখেই আমরা বুঝতে পারি কুকুর শব্দ করছে, টেলিফোন উঠালেই আমরা কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারি অপর প্রান্তে কে কথা বলছে।
শব্দ এক প্রকার শক্তি, যা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি জন্মায়। এখানে আমরা কিছু কাজ করব যা থেকে বোঝা যাবে শব্দ কীভাবে উৎপন্ন হয়। তোমাদের স্কুলের ঘণ্টা যখন বাজানো হয়, তখন তা স্পর্শ করে দেখ। ঘণ্টাটি যে কাঁপে তা কি অনুভব করতে পার?
কাজ: শব্দের উৎপত্তির কারণ জানা। কাজ: শব্দের উৎপত্তির কারণ জানা। এখনও কি শব্দ শুনতে পাচ্ছ? না, শব্দ শোনা যায় না। থালাটিকে আবার আঘাত কর এবং পানির দিকে তাকাও। পানিতে কি কোনো ঢেউ দেখছ? থালা কাঁপার ফলে পানি কাঁপছে এবং পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। |
উপরের কাজগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ সৃষ্টি হয়। কম্পনশীল যে বস্তু শব্দ সৃষ্টি করে, তাই হলো শব্দের উৎস।
আমরা জানি কম্পনশীল বস্তু শব্দ সৃষ্টিকরে। শ্রোতার নিকট এ শব্দ কী করে পৌঁছায়? একটি উদাহরণ বিবেচনা করা যাক। কোনো বাদ্যযন্ত্রের কম্পনশীল তার বা কোনো সুরশলাকার কম্পনশীল বাহু এদের চারপাশের বায়ুর অণুগুলোকে কম্পিত করে। বায়ুর এই কম্পিত অণুগুলো এদের কম্পনকে পার্শ্ববর্তী বায়ুর অণুগুলোতে স্থানান্তর করে দেয়। পর্যায়ক্রমে এভাবেই শব্দ কোনো মাধ্যমে ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে উৎস থেকে শ্রোতার নিকট পৌঁছায়। কোনো মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের ফলে সৃষ্ট যে আন্দোলন, মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলে বা সঞ্চালিত হয়, তাকে ঢেউ বলে। একটি লম্বা স্প্রিং নিয়ে এর এক প্রান্তে আঘাত করলে দেখবে স্প্রিংটির সংকোচন ও প্রসারণের ফলে আন্দোলন সঞ্চালিত হচ্ছে। শব্দের ঢেউ ঠিক এভাবেই সঞ্চালিত হয়। শব্দের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতকে শব্দ সঞ্চালন বলে।
শব্দ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। এই মাধ্যম হতে পারে কঠিন, তরল ও বায়বীয়। শব্দ সবচেয়ে দ্রুত চলে কঠিন মাধ্যমে, তারপর তরল মাধ্যমে, এরপর বায়ু মাধ্যমে। পরবর্তীতে কাজের মাধ্যমে আমরা তা প্রমাণ করব। শব্দ কি মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমরা একটি কাজ করব।
কাজ: মাধ্যম ছাড়া শব্দ সঞ্চালিত হয় না তা জানা। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি ধাতব ঝুনঝুনি, একটি সরু কাঠি. একটি বড়ো মুখওয়ালা বোতল ও একটি কর্ক। পদ্ধতি: কাঠির এক মাথায় ঝুনঝুনিটাকে সুতো দিয়ে বাঁধো। কাঠির অপর মাথাটি কর্কের ভিতরের মুখে ঢুকাও। এবার পুরো ব্যবস্থাটিকে বোতলের ভিতর এমনভাবে ঢুকাও কর্কটি যেন ছিপির কাজ করে। ভালো করে ছিপিটি বন্ধ কর এবং বোতলটি ঝাঁকাও। খেয়াল রাখবে ঝুনঝুনি যেন বোতলের দেয়াল স্পর্শ না করে। বাইরে থেকে ঝুনঝুনির শব্দ শুনতে পাবে। এবার কর্কটি খুলে একটু উঁচু করে রেখে বোতলের নিচে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে তাপ দাও। গরম করার জন্য বোতল থেকে অনেকখানি বাতাস বেরিয়ে যাবে। বোতলের ছিপিটি বন্ধ কর। বোতলটি ঠান্ডা হওয়ার পর আবার ঝাঁকাও। কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছ কি? খুব ক্ষীণ শব্দ শোনা যাচ্ছে। যদি বোতলের সব বাতাস বের হয়ে যেতো তাহলে কোনো শব্দই শুনতে পেতে না। এর অর্থ কী? এর অর্থ শব্দ মাধ্যম ছাড়া সঞ্চালিত হয় না। |
আমরা আগেই বলেছি যে, শব্দ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম দরকার। মাধ্যম ছাড়া শব্দ সঞ্চালিত হয় না। শব্দ সবচেয়ে দ্রুত চলে কঠিন মাধ্যমে, তারপর তরল মাধ্যমে, এরপর বায়বীয় মাধ্যমে। পরবর্তীতে কাজের মাধ্যমে আমরা তা প্রমাণ করব।
কাজ: তরল পদার্থে শব্দের সঞ্চালন। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি বেলুন ও কিছু পরিমাণ পানি। পদ্ধতি: বেলুনটিতে পানি ভর্তি কর। বেলুনের একদিক তোমার কানের সাথে ধর এবং অপর দিকে আস্তে করে বেলুনে আঁচড় কাট। তুমি কি আঁচড়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছো? তুমি আঁচড়ের শব্দ জোরে ও স্পষ্ট শুনতে পাবে। |
কঠিন মাধ্যমে শব্দ বায়ু ও তরল মাধ্যমের চেয়ে দ্রুত ও ভালভাবে সঞ্চালিত হয়।
কাজ: কঠিন পদার্থে শব্দের সঞ্চালন। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি ধাতব স্কেল বা লম্বা ধাতব দন্ড পদ্ধতি: স্কেল বা দন্ডের এক প্রান্ত তোমার কানের সাথে ধর এবং অন্য প্রান্তে তোমার কোনো বন্ধুকে আস্তে আস্তে আঁচড় কাটতে বলো। তুমি কি আঁচড়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছো? এবার ধাতব স্কেলটিকে তোমার কানের পাশ থেকে সরিয়ে দাও এবং তোমার বন্ধুকে একই দূরত্বে থেকে ধাতব স্কেলে আস্তে আঁচর কাটতে বলো। তুমি কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছ কি না? |
এরকম একটি পরীক্ষা তোমরা একটি কাঠের বা ধাতব টেবিল নিয়ে করতে পার। কাজটি করে দেখ এবং কাজটি থেকে কী পেলে তা তোমাদের খাতায় লিখ। কাজটি থেকে জানতে পারবে যে, শব্দ কোনো ধাতু বা কাঠ দিয়েও চলাচল করে বা সঞ্চালিত হয়। বিভিন্ন কঠিন পদার্থে শব্দের বেগ বিভিন্ন রকম।
ছক : বায়বীয়, তরল ও কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগের তুলনা
বায়ুতে শব্দের বেগ ৩৪৩ মিটার/সেকেন্ড পানিতে শব্দের বেগ ১৪৯৬ মিটার/সেকেন্ড অ্যালুমিনিয়ামে শব্দের বেগ ৬৪২০ মিটার/সেকেন্ড |
সুতরাং বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দ বিভিন্ন বেগে সঞ্চালিত হয়। কঠিন মাধ্যমে শব্দ বায়ু ও তরল মাধ্যমের চেয়ে দ্রুত ও ভালোভাবে সঞ্চালিত হয়। আবার শব্দ বায়ু মাধ্যমের চেয়ে দ্রুত ও ভালোভাবে তরল মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়।
আমরা জানি কম্পনশীল বস্তু শব্দ উৎপন্ন করে এবং সেই শব্দ মাধ্যম দিয়ে সকল দিকে সঞ্চালিত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কী করে শব্দ শুনতে পাই?
আমাদের কানের বাইরের অংশের আকৃতি দেখতে অনেকটা চুঙ্গি বা ফানেল (funnel) এর মতো। শব্দ যখন এর ভিতর প্রবেশ করে; তখন শব্দ একটি ছিদ্রপথে যায়, যার শেষ প্রান্তে একটি টানটান পাতলা পর্দা থাকে। একে বলা হয় কানের পর্দা। এই পর্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। শব্দের কম্পন কানের পর্দাকে কাঁপায়। পর্দা এই কম্পনকে কানের ভিতরের অংশে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে শব্দ মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এভাবেই আমরা শব্দ শুনতে পাই। কানের পর্দা যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, তা জানার জন্য আমরা একটি পরীক্ষা করব।
কাজ: শব্দের কম্পন কীভাবে কানের পর্দায় কম্পন সৃষ্টি করে। তোমার বন্ধুর সৃষ্ট শব্দের কম্পন বেলুনে কম্পন সৃষ্টি করছে, তাই গম বা চাল লাফাচ্ছে। |
আমরা জানি যে, কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দের উৎপত্তি হয়। সকল কম্পনশীল বস্তুর শব্দ কি আমরা শুনতে পাই? না, সকল কম্পনশীল বসতুর শব্দ আমরা শুনতে পাই না। যে শব্দ প্রতি সেকেন্ডে ২০টির কম কম্পন দিয়ে সৃষ্টি হয়, তা আমরা মানুষেরা শুনতে পাই না। এরকম শব্দ শ্রবণ উপযোগী নয়। এরকম শব্দকে শ্রুতিপূর্ব শব্দ বলা হয়। আবার অনেক বেশি কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দকে আমরা শুনতে পাই না। প্রতি সেকেন্ডে ২০,০০০-এর বেশি কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দকেও আমরা শুনতে পাই না। একে শ্রুতি-উত্তর শব্দ বলা হয়। সুতরাং মানুষের জন্য শ্রাব্যতার সীমা হলো প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২০,০০০ কম্পন দিয়ে সৃষ্ট শব্দ। প্রতি সেকেন্ডে কোনো বস্তু যতটা কম্পন দেয় তাকে বলা হয় ঐ বস্তুর কম্পাঙ্ক। এই কম্পাঙ্ক প্রকাশের একক হলো হার্জ (Hertz)। কোনো বস্তু সেকেন্ডে ২০ বার কাঁপলে তার কম্পাঙ্ক ২০ হার্জ, ২০,০০০ বার কাঁপলে ২০,০০০ হার্জ। সুতরাং মানুষের কানের শ্রাব্য কম্পাঙ্কের সীমা ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ। এই সীমার মধ্যে কম্পাঙ্কের শব্দকে শ্রাব্য শব্দ বলে।
কোনো কোনো প্রাণী ২০,০০০ হার্জ কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। কুকুরের এই ক্ষমতা আছে। পুলিশ অতি উচ্চ কম্পাঙ্কের হুইসেল ব্যবহার করে যা কুকুর শুনতে পায় কিন্তু মানুষ শুনতে পায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক অতিশব্দ (শ্রুতি-উত্তর শব্দ ব্যবহারকারী) যন্ত্রের সাথে আমরা পরিচিত। এরকম একটি যন্ত্র হলো আল্ট্রাসনোগ্রাম। এ যন্ত্র ২০,০০০ হার্জের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্কের শব্দের সাহায্যে কাজ করে।
সুশ্রাব্য শব্দ ও নয়েজ: আমাদের চারপাশে আমরা নানারকম শব্দ শুনতে পাই। এদের মধ্যে অনেক শব্দ শুনতে ভালো লাগে, সুখকর ও আনন্দদায়ক। এরকম শব্দ হলো গানের সুর, বাঁশির সুর, হারমোনিয়ামের শব্দ, সেতারের বাজনা ইত্যাদি। এরকম শব্দ সুশ্রাব্য বা সুরেলা। অনেক শব্দ শুনতে কষ্ট লাগে, যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর। এরকম শব্দ হলো পেরেক ঠোকার শব্দ, নির্মাণ কাজের শব্দ, বোর্ডে লেখার সময় চকের কিচকিচ্ শব্দ, ইত্যাদি। যে শব্দ শুনতে ভাল লাগে, সুখকর, মধুর ও আনন্দদায়ক তাদের সুশ্রাব্য বা সুরেলা শব্দ বলে। বস্তুর নিয়মিত বা সুষম কম্পনের ফলে সুশ্রাব্য শব্দ উৎপন্ন হয়। যে শব্দ শুনতে কষ্ট লাগে, যন্ত্রনাদায়ক ও বিরক্তিকর তাদের অপ্রীতিকর শব্দ বা নয়েজ বলে।
শব্দ দূষণ: আমরা সবাই পানি দূষণ ও বায়ুদূষণের সাথে পরিচিত। পানিতে যা যা থাকা উচিত তা না থেকে যদি অন্য কিছু থাকে, তা হলে তাকে আমরা পানিদূষণ বলি। বায়ুতে যা যা থাকা উচিত তা না থেকে যদি অন্য কিছু থাকে তা হলে তাকে আমরা বায়ুদূষণ বলি। এরকম আমাদের পরিবেশে যদি অতিরিক্ত বা অবাঞ্ছিত শব্দ থাকে, তখন তাকে বলি শব্দদূষণ। শব্দদূষণের প্রধান প্রধান কারণ হলো গাড়ির শব্দ, কোনো বিস্ফোরণের শব্দ (পটকা বা বোমা ফাটার শব্দ), কোনো যন্ত্রের শব্দ, মাইকের শব্দ, নির্মাণ কাজের শব্দ। এছাড়া টেলিভিশন ও রেডিয়ো জোরে বাজানোর শব্দ, রান্না ঘরের জিনিসপত্রের শব্দ, এয়ারকুলারের শব্দ, ইত্যাদি শব্দদূষণের কারণ।
কাজ: তোমার এলাকায় শব্দদূষণের কারণগুলো চিহ্নিত কর এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কারণগুলো খাতায় লেখ। ৫/৬ জনের দল করে এ কাজটি করতে পার। |
শব্দ দূষণের ফলে কী ক্ষতি হয়?
তোমরা কি জানো, চারপাশের অতিরিক্ত শব্দ নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব সমস্যা হলো, অনিদ্রা, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, বিরক্তি, দুর্ভাবনা ও আরও অনেক রকম সমস্যা। কোন মানুষ অনেক দিন অতিরিক্ত জোরালো শব্দ শুনলে কান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সে কানে কম শুনতে পারে বা নাও শুনতে পারে।
শব্দদূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শব্দের উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা কীভাবে করা যায়? কোনো আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে
এছাড়া শব্দদূষণ রোধ করতে বিমানের ইঞ্জিন, যানবাহনের ইঞ্জিন এবং কলকারখানার মেশিনে সাইলেনসার লাগাতে হবে। সাইলেনসার হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা উৎপন্ন শব্দকে বাইরে যেতে দেয় না।
শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র দুরকমের-সুরেলা যন্ত্র ও বেসুরো যন্ত্র। সুরেলা যন্ত্র হলো, বাঁশি, হারমোনিয়াম, একতারা, দোতারা, সেতার, ইত্যাদি। বেসুরো যন্ত্র অনেক তবে আমাদের অতি পরিচিত দুটি হলো, গাড়ির হর্ন ও সাইকেল বা রিকশার বেল।
বাঁশি: বাঁশির ভিতরকার বাতাসের কম্পনের ফলে সুর সৃষ্টি হয়। ফুঁ দিয়ে বাঁশির নলে বাতাস ঢুকানো হয়। বাঁশির দৈর্ঘ্য ও ছিদ্র সংখ্যার উপর শব্দের তীক্ষ্ণতা নির্ভর করে।
কাজ: একটি খোলা নলের দৈর্ঘ্যের সাথে শব্দের তীক্ষ্ণতার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি পান করার নল ও একটি কাঁচি। পদ্ধতি: নলটির এক প্রান্ত চেপ্টা করে নাও। এখন চেপ্টা প্রান্তটি চিত্রের মতো সরু করে কাট। কাটা প্রান্তটি মুখে নিয়ে ফুঁ দাও। কী রকম শব্দ হয় লক্ষ কর। এবার নলের অপর মাথাটি কেটে খাটো কর। উৎপন্ন শব্দের তীক্ষ্ণতার কোনো পার্থক্য শুনতে পাচ্ছ কি? খাটো নলে শব্দের তীক্ষতা বেশি। |
একতারা ও দোতারা: এগুলো তার-বিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র। এসব যন্ত্রে তারের কম্পনের ফলে সুশ্রাব্য বা সুরেলা শব্দ সৃষ্টি করা যায়। এসব বাদ্যযন্ত্রের তারকে টেনে ছেড়ে দিলে বা কোনো কিছু দিয়ে নাড়াচাড়া করলে তা কাঁপে এবং সুরেলা শব্দ উৎপন্ন করা যায়। তারের দৈর্ঘ্য ও পুরুত্ব বাড়িয়ে বা কমিয়ে এবং বেশি শক্ত করে টানটান করে শব্দের তীক্ষ্ণতা পরিবর্তন করা যায়।
সাইকেল বা রিকশার বেল: আমরা সাইকেল বা রিকশার বেলের টুংটাং শব্দের সাথে পরিচিত। কিন্তু এই বেল কী করে শব্দ উৎপন্ন করে তা তোমরা জানো কি? এই বেলে গোলাকার একটি ধাতব বাটি উপুড় করে রাখা হয়। বাটির নিচে একটি ধাতব হাতুড়ি লাগানো হয়। একটি হাতলের সাহায্যে হাতুড়ি নাড়াচাড়া করলে তা বাটিতে আঘাত করে। বাটির কম্পনের ফলে টুংটাং ঘণ্টা বাজে।
এই অধ্যায়ে শেখা নতুন শব্দ
শ্রাব্য, অশ্রাব্য, কানের পর্দা, শ্রুতিপূর্ব শব্দ, শ্রুতি-উত্তর শব্দ, সুশ্রাব্য শব্দ, নয়েজ বা অপ্রীতিকর শব্দ ও শব্দ দূষণ।
এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম
শূন্যস্থান পূরণ কর।
১. শব্দ কোনো ______ ছাড়া সঞ্চালিত হয় না।
২. মানুষের কানের শ্রাব্যতার সীমা ______ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ।
৩. অবাঞ্চিত ও বিরক্তিকর শব্দ হলো ________
৪. শব্দের বেগ বায়বীয় পদার্থে সবচেয়ে ________
৫. ২০,০০০ হার্জের বেশি কম্পাঙ্কের শব্দকে __________ শব্দ বলে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. শ্রাব্য ও অশ্রাব্য শব্দের মধ্যে পার্থক্য কী?
২. শ্রুতি-পূর্ব ও শ্রুতি-উত্তর শব্দ কাকে বলে?
৩. নয়েজ ও সুশ্রাব্য শব্দের পার্থক্য কী?
৫. সকল কম্পাঙ্কের শব্দ কি আমরা শুনতে পাই? আমাদের শ্রাব্যতার সীমা কত?
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. কোন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি?
ক. শূন্য মাধ্যম
খ. কঠিন মাধ্যম
গ. বায়বীয় মাধ্যম
ঘ. তরল মাধ্যম
নিচের অনুচ্ছেদটি ভালোভাবে পড়ে ২ ও ৩ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।
চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ এবং পৃথিবী পৃষ্ঠে বড়ো মাঠের দূরপ্রান্তে বন্দুকের নল থেকে গুলি বের হলো। উভয় ক্ষেত্রে সৃষ্ট আলোর ঝলকানি দেখা গেল।
২. চন্দ্রপৃষ্ঠে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে হলে পৃথিবী থেকে-
i. চন্দ্রের দূরত্ব কম হতে হবে
ii. পৃথিবী ও চন্দ্রের মাঝে মাধ্যম থাকতে হবে
iii. শব্দের কম্পাঙ্ক ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ হতে হবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. ii ও iii
৩. উভয় ঘটনা একইসাথে সংঘটিত হয়ে থাকলে কোনটি সবশেষে পর্যক্ষেণ করা যাবে?
ক. বন্দুকের গুলির শব্দ
খ. বন্দুকে সৃষ্ট আলো
গ. বিস্ফোরণের শব্দ
ঘ. বিস্ফোরণের আলো
৪. ভিতরের বাতাসে কম্পনের ফলে সুর সৃষ্টি হয় কোন বাদ্যযন্ত্রে?
ক. সেতার
খ. একতারা
গ. গিটার
ঘ. বাঁশি
সৃজনশীল প্রশ্ন
১. শব্দের বেগ ৩৩০ মি/সে (বায়ুতে) সমুদ্রের পানিতে শব্দের বেগ ১৫০০ মি/সে তীরে দাঁড়ানো লোকটি ও ডুবুরি বোমা ফাটার স্থান থেকে ৩৩০০ মিটার দূরে আছে।
ক. শব্দ কী?
খ. রেললাইনের পাতে কান রাখলে দূর থেকে রেলগাড়ি চলার শব্দ শোনা যায় কেন?
গ. বোমা ফাটার স্থান থেকে তীরে অবস্থিত লোকটি কতক্ষণ পর শব্দ শুনবে?
ঘ. বোমা ফাটার শব্দ ডুবুরিও কি একই সময়ে শুনতে পারবে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
২. এতদিন যাবৎ তপনের বাসা থেকে স্কুলের ঘণ্টা ধ্বনির শব্দ শোনা যেত না। সম্প্রতি ঘণ্টাটির ওজন ঠিক রেখে গঠনে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে এখন সে বাসা থেকেই ঘণ্টাধ্বনির শব্দ শুনতে পারে।
ক. সুশ্রাব্য শব্দ কী?
খ. বাঁশের বাঁশির নলের দৈর্ঘ্য কম হলে শব্দের তীক্ষ্ণতার কীরূপ পরিবর্তন আসবে?
গ. স্কুলের ঘণ্টা ধ্বনি তপনের কানে পৌঁছার কৌশল বর্ণনা কর।
ঘ. ঘণ্টায় কোন ধরনের পরিবর্তনের কারণে তপন বাসা থেকেই এখন ঘণ্টার শব্দ শুনতে পায়। উপযুক্ত কারণসহ ব্যাখ্যা কর।
Read more