মানব শরীরের সকল রোগের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া প্রদাহের মাধ্যমে হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরকে বৃহত্তর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। সেবাদানের জন্য সংক্রমণ, প্রতিরোধ, প্রদাহ ও নিরাময় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ অধ্যায়ে আমরা সংক্রমণ, প্রতিরোধ, প্রদাহ ও নিরাময় এবং এদের গুরুত্ব ও ব্যবহার সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করব ।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
উল্লেখিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে এই অধ্যায়ে আমরা তিনটি জব (কাজ) সম্পন্ন করব। এই জবের মাধ্যমে সংক্রমণের প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় এর প্রকারভেদ, উপসর্গ ও পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে পারবো এবং এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারব। জগুলো সম্পন্ন করার আগে প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ জানৰ।
জীবিত রক্তসঞ্চালিত টিস্যুতে কোনো ক্ষতি হলে দেহ যে ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয় তাকে প্রদাহ বলে। প্রদাহের অবস্থান যে অঙ্গে তার নামের শেষে আইটিস (Itis) কথাটি যোগ করে প্রদাহের নাম উল্লেখ করা হয়। যেমন- এপেন্ডিকস সাইটিস (Appendicitis), টনসিলাইটিস (Tonsilitis) ইত্যাদি। প্রদাহের ইংরেজি পরিভাষা Inflammation শব্দটা এসেছে ল্যাটিন শব্দ ইনফ্লামেয়ার (Inflammare) থেকে, যার অর্থ পুড়ে যাওয়া।
প্রদাহের শ্রেণিবিন্যাস:
১। তীব্র প্রদাহ (Acute Inflammation): আঘাত, অপ্রপচার অথবা সংক্রমণের ফলে ফ্লুইড, প্লাজমা প্রোটিন, লিউকোসাইট ও নিউট্রোফিল ইত্যাদির ক্ষরণ হয়। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত প্রোটিন এবং মুত কোষযুক্ত তরল পদার্থ ক্ষরণ হয়। যা প্রদাহের জন্য রক্তনালী থেকে বেরিয়ে টিস্যুতে জমা হয়। এই প্রদাহ কয়েক মিনিট, ঘন্টা অথবা কয়েক দিন স্থায়ী হয়।
তীব্র প্রদাহের চিহ্ন:
১) তাপ (Heat),
২) লাল হয়ে যাওয়া (Redness),
৩) স্কুলে যাওয়া (Swelling),
৪) ব্যথা (Pain)
৫) কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ( Loss of function) |
তীব্র প্রদাহের কারণঃ
ক) সংক্রামক (Infectious agent): ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া প্রভৃতি। ব্যাকটেরিয়াই সাধারণত বেশি প্রদাহ করে থাকে।
খ) স্বতঃঅনাক্রম্য ক্ষত (Immunologic injury): রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে। যেমন- এলার্জিক রাইনাইটিস (Allergic rhinitis)
গ) ভৌত ও প্রাকৃতিৰ (Physical agent): বিভিন্ন ধরনের আঘাতে থেতলে যাওয়া, কেটে যাওয়া, ঠান্ডা, তাপ এবং বিকিরণের ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
ঘ) রাসায়নিক বস্তু (Chemical agent) : শক্তিশালী অ্যাসিড, ক্ষার ও অন্যান্য অনেক রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে।
২। স্থায়ীপ্রদাহ (Chronic Inflammation):
তীব্র প্রদাহ দীর্ঘ স্থায়ীহলে স্বামীপ্রদাহের রূপ নেয়।
স্থায়ীপ্রদাহের কারণ:
স্থায়ীপ্রদাহ সাধারণত তীব্র প্রদাহের অনুন্নতি থেকে সৃষ্টি হয়।
ক) সংক্রামক (Infectious agent ) : মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) বা যক্ষ্মা জীবাণু, মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপরি (Mycobacterium leprae) বা কুষ্ঠ জীবাণু, হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (Helicobacter pylori) গ্যাস্ট্রিক ও ডিওডেনাল আলসার সৃষ্টিকারী জীবাণু।
খ) ভৌত ও রাসায়নিক বস্তু (Physical and chemical agent): দীর্ঘ সময় ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শ, যেমন- ধূমপান ফুসফুসে ব্রংকাইটিস ও ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
গ) স্বয়ং অনাক্রম্য ব্যাধি - (Autoimmune disease):
রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস (Rheumatoid arthritis),
ক্রনস ডিজিস (Crohn's disease),
আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative colitis) ইত্যাদি।
কোনো ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যু আঘাত প্রাপ্তির পর যে প্রক্রিয়ায় নিজেকে পুনর্গঠন করে তাকে নিরাময় বলে।
নিরাময় সাধারণত দুই ভাবে হয়,
১. পুনঃস্থাপন (Repair)
২. পুনঃউতপত্তি (Regeneration)
নিরাময়ের জন্য উৎপাদকসমূহ:
স্থানীয় উৎপাদক | দেহতন্ত্ৰীয় উৎপাদক |
অক্সিজেন লাভ্যতা সংক্রামণ বহিরাগত বস্তুর অবস্থান | বয়স ও লিঙ্গ, হরমোন দেহের অংশবিশেষে রক্তস্বল্পতা বহুমুত্র রোগ, নির্দিষ্ট ওষুধ, অপুষ্টি |
পুনঃস্থাপন (Repair):
ক্ষতিগ্রস্থ কোষসমূহ নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পুনরায় মেরামত হওয়াকে নিরাময় বা পুনঃস্থাপন (Repair) বলে। প্রদাহের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলও অকেজো হয়ে গেলে নতুন টিস্যুর সৃষ্টি হয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিস্থাপিত টিস্যুই পূর্বের টিস্যুর স্থান দখল করে। এই প্রক্রিয়াকে পুনঃস্থাপন বা নিরাময় বলা হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রদাহ দূরীকরণের ক্ষেত্রে ঔষধ (যেমনঃ এন্টিবায়োটিক) ছাড়াও ফিজিওথেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি, স্টেম সেল থেরাপী ও আকুপাংচার চিকিৎসাও বিশেষভাবে কার্যকর। চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাময় বা পুনঃস্থাপন হয়:
১) রক্ত জমাট বাধন (Coagulation): এই প্রক্রিয়ায় নতুন রক্তনালী সৃষ্টি হয়,
২) প্রদাহ (Inflammation): এই প্রক্রিয়ায় ফাইব্রোব্লাস্ট ও শ্বেত রক্ত কনিকা জড়ো হয়,
৩) কোষ সংখ্যা বৃদ্ধি (Proliferation): ফাইব্রোব্লাস্ট সংখ্যা বৃদ্ধি করে নতুন ম্যাট্রিক্স সৃষ্টি হয়,
৪) পুনর্গঠন (Remodelling) : এই প্রক্রিয়া আন্তঃ ও বহিঃ আবরণী সুগঠিত হয়।
পুনঃউৎপত্তি (Regeneration )
কখনও কখনও আঘাত অথবা অস্ত্রপ্রচার জনিত কারণে দেহের অভ্যন্তরে অথবা উপরিভাগে কিছু স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে টিস্যুর পুনঃউৎপত্তির মাধ্যমে উক্ত ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান পুনরায় সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়াকে পুনঃউৎপত্তি বা রিজেনারশন বলে। একই ধরনের নতুন কলা বা কোষ দিয়েসাধারণত ক্ষতিগ্রস্থ কলার পুনঃস্থাপন হয়েথাকে। কলা বা কোষের পুনঃস্থাপন কোষভেদে তিন প্রক্রিয়ায় হয়। যথা :
১. লেবারেল,
২. স্টেবল ও
৩. পারমানেন্ট।
লেবারেন্স ও স্টেবল কোষগুলো পুণরায় তৈরি হতে পারে ও পুণঃস্থাপন হতে সক্ষম।
পুনঃস্থাপন ও পুনঃউৎপত্তির মধ্যে সাম্যক পার্থক্যঃ
পুনঃস্থাপন | পুনঃউৎপত্তি |
ক্ষত চিহ্ন থাকে | ক্ষত চিহ্ন থাকে না |
পূর্বের কার্য সম্পাদনায় ব্যর্থ | কার্যকর টিস্যু |
অগোছালো ম্যাট্রিক্স | সুসজ্জিত স্বাভাবিক টিস্যু |
ক্ষতস্থান সঙ্কুচিত হয় | সঙ্কুচিত হয় না |
ত্বকের স্বাভাবিক ক্ষত নিরাময় করে | যকৃতের ক্ষত নিরাময় করে |
সংক্রমণের ফলে কোনো পোষক জীবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী সংঘটকের প্রবেশ, আক্রমণ, সংখ্যাবৃদ্ধি, পোষক দেহকলার সাথে সংঘটিত বিক্রিয়া এবং এর ফলে উৎপন্ন উপসর্গের সমষ্টিকে বোঝায়। সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট রোগকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ বলে।
শ্রেণিবিভাগ: উপসর্গের ভিত্তিতে সংক্রমণ দুই প্রকার।
১) অনির্ণীত সংক্রমণ (Sub clinical infection) যা অসম্পূর্ণ রোগ লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পায়।
২) নির্ণীত সংক্রমণ (Clinical infection) যা পূর্ণ রোগ লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পায়।
জীবাণুর ভিত্তিতে সংক্রমণ
১) ব্যাক্টেরিয়া জনিত
২) ভাইরাস জনিত
৩) ছত্রাক জনিত
৪) প্লাজমোডিয়াম জনিত
সংক্রমিত অঙ্গের ভিত্তিতে রোগের সচিত্র উাহরণ:
সংক্রমণ সংঘটক (Agent) যেমন- ভাইরাস, ভিরয়েড, প্রিয়ন, ব্যাকটেরিয়া, নেমাটোড (বিভিন্ন প্রকার কৃষি), পিঁপড়া, আর্থ্রোপড যেমন উকুন, মাছি এবং বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক দ্বারা সংঘটিত হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গ
১. সংক্রমণের উপসর্গ রোগের ধরনের উপর নির্ভর করে।
২. সংক্রমণের কিছু লক্ষণ সাধারণত পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে, যেমন ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস, জ্বর, রাতে ঘাম, ঠাণ্ডা, ব্যথা।
৩. অন্যদের চামড়ায় দাগ, কাশি ইত্যাদি হতে পারে।
ভাইরাসঘটিত এবং ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের পার্থক্য
ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ | ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্ৰমণ |
সাধারণত বহুতান্ত্রিক- শরীরের এক বা একাধিক অংশকে আক্রমণ করে। যেমন কাশি, হাঁচি, চুলকানি, ইত্যাদি। | ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের লক্ষণগুলো হল দেহের নির্দিষ্ট জায়গা ১. লাল হয়ে যাওয়া, ২. গরম হয়ে যাওয়া, ৩. ফোলা এবং ৪. ব্যথা। |
ভাইরাসগুলো শরীরের নির্দিষ্ট অংশকেও আক্রমণ করতে পারে, যেমন চোখ উঠা। | ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যথা। উদাহরণস্বরূপ, যদি শরীরের কোথাও কেটে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়, তবে সংক্রমণের জায়গায় ব্যথা হয়। |
অল্প কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রমণ বেশ পীড়াদায়ক, যেমন বিসর্প বা হার্পিস । | ব্যাকটেরিয়াঘটিত গলা ব্যথা প্রায়ই গলার এক পাশে ব্যথা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। যদি কোন কাটা অংশে পুঁজ জমে,তবে তার সম্ভাব্য কারণ ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ। |
সম্পুরক পরিভাষা:
দেহের বাইরের বিভিন্ন ক্ষতিকারক বন্ধু এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য যে বৈশিষ্ট বা ক্ষমতা বলে এসব জীবাণুকে, চিহ্নিত, জাবদ্ধ ও ধ্বংস করতে পারে তাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) বা অনাক্রম্যতা বলা হয়।
এন্টিবডি (Antibody): এন্টিডি হচ্ছে ৰহিরাগত পদার্থের প্রতি সাড়া দিয়ে প্লাজমা কোষ থেকে উৎপন্ন প্রোটিনধর্মী পদার্থ যা এর সমধর্মী এন্টিজেনের সংগে সুনির্দিষ্ট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।
এন্টিজেন (Antigen): বহিরাগত বস্তুর একটি অংশ যা বিভিন্ন মাপ পেরিয়ে কোষের প্লাজমা মেমব্রেনে অবস্থান নিয়ে এন্টিডি উৎপাদনে উদ্দীপনা জোগায়, তাকে এন্টিজেন বলে। সংক্রমণ মুক্ততা বা রোপ প্রতিরোধ বা অনাক্রম্য হলো দেহের কাঠামো নিয়ে গঠিত নিস্ব প্রতিক্ষা ব্যবস্থা যা দেহে রোগব্যাধির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। সঠিকভাবে কাজ করতে অনাক্রম্যকে বহিরাগত ভাইরাস বা পরজীবীর বিভিন্ন এজেন্ট যাদেরকে রোগ সংক্রামক জীবাণু বা (Pathogen) বলা হয়।
রোগ সংক্রামক জীবাণুগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি বা বংশবিস্তার লাভ করে অনাক্রম্যতন্ত্রকে (Immune System ) ফাঁকি দিতে পারে, আবার অনেক প্রতিরক্ষা উপাদানও একইভাবে উন্নতি করে রোগ সংক্রামক জীবাণুকে সনাক্ত ও প্রশমিত করতে পারে। অনাক্রম্যতন্ত্রের কার্যপ্রণালীর মধ্যে রয়েছে শ্বেত কনিকার ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়া, ডিফেনসিন্স নামধারী ক্ষুদ্রাণুরোধী পেপটাইডসমূহ এবং কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম। মানুষের নির্দিষ্ট রোগ সংক্রামক জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে আরো সুচারুরূপে পদক্ষেপ নেবার মতো অধিক উন্নত প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধ প্রকারভেদ:
অর্জনের ভিত্তিতেঃ
১. ইনেট ইমুউনিটি (Innate Immunity) - যা দেহের কাঠামো, অঙ্গ, অঙ্গাণু দ্বারা প্রকাশিত হয় এবং বংশগত ভাবে প্ৰান্ত
২.এ্যাকুয়ার্ড ইউনিটি (Acquired Immunity) যা সংক্রমণ বা টিকা গ্রহণের পর জীবাণুর প্রতিরোধের স্মৃতি থেকে প্রাপ্ত
সংক্রমণের পর অনাক্রম্য স্মৃতি তৈরী করে রাখে যা একবার প্রতিরোধ করা হয়েছে এমন সংক্রামক জীবাণুর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলে।
অনাক্রম্যতন্ত্রে সমস্যার ভিত্তিতেঃ
১. স্বরং অনাক্রম্য ব্যাধি (Auto immune Disease): অনাক্রম্যত নিজ দেহ কোষকে ঠিকভাবে সনাক্ত না করে তাকে বহিরাগত কোষ মনে করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াকে স্বয়ং (অটোইম্যুনিটি) অনাক্রম্যতা বলা হয়। অনাক্রম্যতন্ত্রে কোনো সমস্যা হলে, স্থায়ী প্রদাহী ক্ষত বা ক্যান্সার হতে পারে। যেমন- হাশিমোটোস থাইরয়ডিটিস, রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস টাইপ এবং সিস্টেমিক লুপাস ১- এরিথেনাটোসাস।
২. নন (Immune deficiency): অনাক্রম্যতন্ত্র তুলনামূলকভাবে দুর্বল থাকলে এবং ভা থেকে প্রাণঘাতী সংক্রমণ হতে পারে।
অনাক্রম্যহীনতার কারণ
১. জীবাণুর কারণে যেমন (এইডস্ এইচ আই ভি)
২. অনাক্রম্যতন্ত্রকে দুর্বল করে এমন ওষুধ ব্যবহারের কারণেও হতে পারে। (যেমন স্টেরয়েড)
শারীরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মত জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যদি এই জীবাণুসমূহ শারীরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা নিষ্ক্রিয় না হয়, তবে সহজাত অনতিক্রম্যতা এর কাজ শুরু করে, যদিও এই ধরনের প্রতিরোধ অনির্দিষ্ট ধরনের। যদি তাতেও জীবাণু নিষ্ক্রিয় না হয় তাহলে ভিন্ন একধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা,এ্যাকুৱাৰ্ড ইমুউনিটি সক্রিয় হয়। এই ধরনের প্রতিরোধ জীবাণু শরীরে প্রবেশের পরই তৈরি হয় এবং ক্রমশ এর কার্যকারীতা বাড়তে থাকে এবং জীবাণু ধ্বংসের পরও এর স্মৃতি শরীরে থেকে যায় এবং পুনরায় একই জীবাণুর আক্রমণে এ্যাকুয়ার্ড ইমুউনিটি একে চিনতে পেরে সক্রিয় হয় এবং জীবানুকে প্রতিরোধ করে।
অর্জিত অনাক্রম্যতা ও ইনেট ইমিউনিটির মধ্যে পার্থক্য -
এ্যাকুয়ার্ড ইমুউনিটি (Acquired Immunity) | ইনেট ইমিউনিটি (Innate Immunity) |
জীবাণু নির্দিষ্ট | জীবাণু অনির্দিষ্টতা |
জীবাণু প্রবেশের কিছুসময় পর কার্যকর হয় | তাৎক্ষনিকতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। |
স্মৃতিরক | স্মৃতিহীনতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। |
মেরুদন্ডীদের অন্যতম অন্যক্রমতা | সকল ধরনের প্রাণিতে উপস্থিত |
সেলুলার ও হিউমেরাল অনাক্রম্যতা উপস্থিত | সেলুলার ও হিউমোরাল অনাক্রম্যতা উপস্থিত |
নিজস্ব ও বাহ্যিক পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষমতা আছে | নিজস্ব ও বাহ্যিক পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষমতা আছে |
মূলত এন্টিজেন এর বিপরীতে এন্টিবডির মাধ্যমে কার্যকর হয়। | বিভিন্ন যান্ত্রিক, রাসায়নিক, জৈবিক বাধা এর অন্তর্ভুক্ত |
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতার অর্জনের বিভিন্ন উপায়সমূহ
যেসব কারণে ত্বক ভেঙে যায় তখন থাকে ক্ষত (wound) বলে। যেমন, ত্বক কেটে গেলে, স্ক্র্যাপস (Scrapes), এবং স্ক্র্যাচ (Scratch) হলে। একজন ব্যক্তি রান্না করার সময়, বাগানের পরিচর্যা করার সময় এমনকি কোনো কিছু পরিষ্কার করার সময় জখমের শিকার হতে পারে। ছোট বাচ্চারা খেলাধুলা অথবা বাড়ির মধ্যে উপর থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে এই ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেকারণেই ক্ষত তৈরি হোক না কেন, এই ক্ষতের যত্ন কিভাবে নিতে হবে তা একজন স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য জানা খুবই জরুরি। একটি যথাযথ যত্নের মাধ্যমে ক্ষত থেকে সৃষ্ট সংক্রমণ (infection) ও অন্যান্য জটিলতা (complications) থেকে রোগীকে প্রতিরোধ করা যায়।
নিন্মলিখিত উপায়ে জখমে আক্রান্ত একজন রোগীর যত্ন নেয়া যেতে পারে-
১। প্রথমে সাবান- পানি দিয়ে হাত ধুয়ে এবং পরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে নিজের হাত জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে।
২। পরিষ্কার কাপড় অথবা ব্যান্ডেজ দিয়ে চেপে ধরে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে।
৩। ক্ষত স্থানটিকে চলমান পানি (Running water) দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষতস্থানটির আশে-পাশে সাবান ব্যবহার করে পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে ক্ষতের মধ্যে যেন সাবান না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪। ক্ষতটি যদি ছোট আকৃতির হয় তাহলে এ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল মলম (Antibacterial Ointment) ব্যবহার করতে হবে।
৫। ক্ষত রক্ষা করার পরবর্তী পদক্ষেপটি হল ক্ষতটিকে একটি জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং দিয়ে ঢেকে রাখা এবং একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে সুর ক্ষত করা। এটি ক্ষতটির চারপাশের ত্বককে রক্ষা করে এবং ক্ষতটিকে আকারে বাড়তে বাধা দেয় এবং নিরাময়ের জন্য এটিতে চাপ প্রয়োগ করে।
৬। পরবর্তী ধাপটি হল দিনে অন্তত একবার ড্রেসিং পরিবর্তন করা। ড্রেসিং পরিবর্তন করার সময় হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্ষতস্থানটি সাবধানে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ দিয়ে সুরক্ষিত করে নিতে হবে।
৭। ড্রেসিং পরিবর্তন করার সময় খেয়াল করতে হবে যে, রোগীর ক্ষতস্থানটি শুকাচ্ছে কিনা। অনেক সময় দেখা যায় ক্ষতস্থান থেকে হলুদ স্রাব (yellowish discharge) অথবা স্থানটি গাঢ় লাল রঙের দেখা যায়। এমনটি হওয়ার অর্থ হল ক্ষতটি ঠিকমত শুকাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে, একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮। রুটিন অনুযায়ী ক্ষতস্থানটির বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
পারদর্শিতার মানদণ্ড :
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (Tools & Equipment)
ক্রমিক | নাম | স্পেসিফিকেশন | সংখ্যা |
৫ | ছবিযুক্ত বই | পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক | ১টি |
৬ | বল পয়েন্ট কলম | কালো কালির | ১টি |
৭ | নমুনা ছবি | নমুনা মোতাবেক | ১টি |
৮ | মডেল | নমুনা মোতাবেক | ১টি |
প্রদাহের উপসর্গ চিহ্নিত করার কৌশলঃ
১. ছবিতে চিহ্নিত প্রদাহের উপসর্গগুলো সনাক্ত করা।
২. সনাক্তকৃত উপসর্গগুলোর নাম পাশে লিখা।
৩. প্রদাহের কারণ উল্লেখ করা।
কাজের ধারা
১। কাজের জন্য উপযুক্ত পিপিই পরতে হবে।
২। নির্দেশিকা অনুযায়ী হাত ধৌত করতে হবে।
৩। সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ, সরবরাহকৃত সরঞ্জাম সংগ্রহ করে প্রস্তুত করতে হবে।
৪। দুই হাতে ক্লিন গ্লোভস পড়ে রোগীকে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে প্রদাহের উপসর্গ চিহ্নিত করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে তার মৌখিক সম্মতি নিতে হবে।
৫। রোগীর পজিশন আরামদায়ক অবস্থায় নিয়ে নিতে হবে।
৬। রোগীর ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে একের পর এক ধাপ মেনে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
৭। রোগীর ক্ষতস্থান ও আশেপাশের কোনো পরিবর্তন যেমন লালচে ভাব, ফোলা, ভাল, ব্যথা ইত্যাদি আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
৮। চিকিৎসক কোনো রক্তের পরীক্ষা দিয়ে থাকলে তা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৯। প্রয়োজনীয় তথ্য রেকর্ড চার্টে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
১০। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জাম, উপকরণসমূহ এবং কাজের এলাকাটি পরিষ্কার করে নির্দেশনা অনুসারে সরঞ্জাম ও উপকরণসমূহ নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
কাজের সতর্কতা
অর্জিত দক্ষাতা/ ফলাফলঃ
পারদর্শীতার মানদণ্ড
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (Tools & Equipment)
ক্রমিক | নাম | স্পেসিফিকেশন | সংখ্যা |
১ | ছবিযুক্ত বই | পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক | ১টি |
২ | বল পয়েন্ট কলম | কালো কালির | ১টি |
৩ | নমুনা ছবি | নমুনা মোতাবেক | ১টি |
৪ | মডেল | নমুনা মোতাবেক | ১টি |
ফুসফুসে সংক্রমণের উপসর্গ চিহ্নিত করার কৌশলঃ
১. ছবিতে চিহ্নিত সংক্রমণের উপসর্গগুলো সনাক্ত করা।
২. সনাক্তকৃত উপসর্গগুলোর নাম পাশে লিখা।
৩. সংক্রমণের কারণ উল্লেখ করা।
কাজের ধারা
১। কাজের জন্য উপযুক্ত পিপিই (PPE) পরতে হবে।
২। নির্দেশিকা অনুযায়ী হাত ধৌত করতে হবে।
৩। সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ, সরবরাহকৃত সরঞ্জাম সংগ্রহ করে প্রস্তুত করতে হবে।
৪। দুই হাতে ক্লিন গ্লোভস পড়ে রোগীকে ফুসফুসে সংক্রমণের উপসর্গ চিহ্নিত করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে তার মৌখিক সম্মতি নিতে হবে।
৫। রোগীর পজিশন আরামদায়ক অবস্থায় নিয়ে নিতে হবে।
৬। রোগীকে লম্বা শ্বাস নিয়ে কাশি দিতে বলতে হবে এবং লক্ষ্য করতে হবে কাশির সাথে ঘন শ্লেষ্মা বের হয় কিনা।
৭। রোগীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, তার বুকের ব্যথা প্রায়শই ধারালো বা ছুরিকাঘাতের মত অনুভব করে কিনা এবং কাশি বা গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের ব্যথা আরও বাড়ে কিনা।
৮। রোগীর জ্বর, হৃদ-স্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ইত্যাদি পরিমাপ করতে হবে।
৯। রোগীর সর্দি ও হাঁচির মত উপসর্গ আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
১০। রোগীর শ্বাস কষ্টের কারণে তার ত্বক ও ঠোঁট নীল বর্ণের হয়ে যায় কি না তা দেখতে হবে।
১১। একটি স্টেথোস্কোপ বুকের উপর রেখে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ফুসফুস থেকে কোনো কৰ্কশ শব্দ শোনা যায় কিনা ।
১২। চিকিৎসক কোনো ল্যাবরেটরী পরীক্ষা দিয়ে থাকলে তা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩। প্রয়োজনীয় তথ্য রেকর্ড চার্টে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
১৪। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জাম, উপকরণসমূহ এবং কাজের এলাকাটি পরিষ্কার করে নির্দেশনা অনুসারে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে
কাজের সতর্কতা
অর্জিত দক্ষতা/ফলাফল:
পারদর্শিতার মানদণ্ড :
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE): প্রয়োজন অনুযায়ী।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (Tools & Equipment)
ক্রমিক | নাম | স্পেসিফিকেশন | সংখ্যা |
১ | ছবিযুক্ত বই | পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক | ১টি |
২ | বল পয়েন্ট কলম | কালো কালির | ১টি |
৩ | নমুনা ছবি বা ক্ষত | নমুনা মোতাবেক | ১টি |
৪ | মডেল | নমুনা মোতাবেক | ১টি |
ক্ষতস্থান চিহ্নিত ও তাঁর পরিচর্যা করার কৌশলঃ
১. ছবিতে চিহ্নিত সংক্রমণের উপসর্গগুলো সনাক্ত করা।
২. সনাক্তকৃত উপসর্গগুলোর নাম পাশে লিখা।
৩. সংক্রমণের কারণ উল্লেখ করা ।
কাজের ধারা
১। কাজের জন্য উপযুক্ত পিপিই পরতে হবে।
২। আদর্শ নির্দেশিকা অনুযায়ী হাত ধৌত করতে হবে।
৩। সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহকৃত সরঞ্জাম সংগ্রহ করে প্রস্তুত করতে হবে।
৪। দুই হাতে ক্লিন গ্লোভস পড়ে রোগীকে ক্ষতস্থান চিহ্নিত ও তাঁর পরিচর্যাকরনের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে তার মৌখিক সম্মতি নিতে হবে।
৫। রোগীর পজিশন আরামদায়ক অবস্থায় নিয়ে নিতে হবে।
৬। রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ক্ষতস্থান শক্ত করে চেপে ধরতে হবে।
৭। হাত বা পা কেটে গিয়ে রক্তপাত হলে ক্ষতস্থান হৃদপিন্ডের উপরে তুলে ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে রক্তপাত কম হবে, কারণ তরল পথার্থ কখনোই উপরের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না।
৮। ক্ষতস্থানের উপর একটি পরিষ্কার কাপড়ের প্যাড দিয়ে শক্ত করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিতে হবে।
৯। এরপরেও যদি রক্তপাত না কমে সেক্ষেত্রে রক্তচাপ বিন্দু বা প্রেসার পয়েন্ট চেপে ধরতে হবে।
১০। দিনে অন্তত একবার ড্রেসিং পরিবর্তন করতে হবে। ড্রেসিং পরিবর্তন করার পূর্বে প্রতিবার হাত ধুয়ে নিতে হবে।
১১। ক্ষতস্থানটির অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয় তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১২। প্রয়োজনীয় তথ্য রেকর্ড চার্টে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
কাজের সতর্কতা
অর্জিত দক্ষতা/ফলাফল:
আরও দেখুন...