সাওম ইসলামের তৃতীয় রুকন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক সবার ওপর রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। সাওমের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলা নিজেই দিবেন। পানাহার না করার কারণে রোযাদার ব্যক্তির মুখে যে গন্ধ তৈরি হয়, তা আল্লাহ তা'আলার নিকট মিশকের সুগন্ধ থেকেও অধিক প্রিয়। রমযান মাস, সিয়াম পালন, তারাবিহর সালাত ও লাইলাতুল কদর সবই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উম্মতের জন্য বিশেষ উপহার।
সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা সাওম পালন সম্পর্কে বেশ কিছু বিধি-বিধান শিখেছো। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তোমরা সাওমের প্রস্তুতি, রমযান মাসের ফযিলত, লাইলাতুল কদরের মাহাত্মা, ঈদ ও ঈদের দিন করণীয় সম্পর্কে জানতে পারবে। তোমরা যথাযথভাবে সাওম পালন করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারবে ও সে অনুযায়ী মানবিক জীবন গঠন করতে পারবে। তাহলে চলো! এবার আমরা মূল আলোচনা শুরু করি।
প্রিয় শিক্ষার্থী, ইবাদাত অধ্যায়ের সাওম সম্পর্কে আলোচনার শুরুতে তুমি/তোমরা বিগত রমযান মাসে যেসব ইবাদাত করেছ, তোমার বন্ধুর সাথে সেসব ইবাদাতের অভিজ্ঞতা বিনিময় করো। তুমি/তোমরা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে বিগত রমযান মাসের স্মৃতিচারণ করে যা যা পেলে, তা নিচের ছকে লিখে ফেলো।
জোড়ায় কাজ স্মৃতির পাতায় সাওম | |
---|---|
কার্যক্রমসমূহ | বিগত রমযান মাসে তুমি/তোমরা যা করেছ |
বিগত রমযান মাসে যে ইবাদাত/আমল বেশি বেশি করেছি। | কুরআন তিলাওয়াত |
সাওমের যে কার্যক্রমটি বেশি ভালো লাগে। | |
বিগত রমযান মাসের স্মরণীয় কোনো মুহূর্ত। | |
সাওমের যে শিক্ষা/তাৎপর্য বাস্তব জীবনে চর্চা করি। |
সাওসের প্রস্তুতি
রমযান মুমিনের ইবাদাত ও আত্মশুদ্ধির মাস। দিনে সাওম পালন, সন্ধ্যায় ইফতার করা, রাতে তারাবিহর সালাত ও শেষ রাতে সাহরি খাওয়া। আমরা এভাবেই ইবাদাতে মশগুল হয়ে রমযান অতিবাহিত করি। সেজন্য আমাদের উচিত যথাযথ শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
রজব মাস থেকেই রাসুলুল্লাহ (সা.) সাওমের প্রস্তুতি শুরু করতেন। প্রিয় নবি করিম (সা.) রজব ও শাবান মাসের বরকত লাভ ও রমযান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট দোয়া করতেন। তিনি বলতেন,
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ وَيَلَّغْنَا رَمَضَانَ
অর্থ: 'হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন আর আমাদের রমযানে পৌঁছিয়ে দিন।' (মুসনাদে আহমাদ)
সারাদিন পানাহার না করে সাওম পালন করা কষ্টসাধ্য কাজ। তাই শাবান মাসে যথাসম্ভব নফল রোযা রেখে, রোযা রাখার অভ্যাস করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাস প্রায় পুরোটাই রোযা রাখতেন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে অধিক (নফল) সাওম অন্য মাসে পালন করতে দেখিনি। (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান মাসের অত্যাধিক রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি চাই, ফেরেশতাগণ আমার আমল আল্লাহ তা'আলার নিকট পেশ করার সময় আমি যেন রোযা অবস্থায় থাকি। রমযানের পূর্ববর্তী মাস হওয়ার কারণে শাবান মাসও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আমাদের দেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত শবে বরাত হিসেবে পরিচিত। হাদিসে এ রাতকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা 'মধ্য শাবানের রজনী' বলা হয়েছে। এ রাতের ফযিলত ও মর্যাদা বিষয়ে বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির (বান্দাদের) প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (ইবন মাজাহ) তাই এ রাতে এমন কাজ করবো, যাতে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয় ও আমাদের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হয়। আমরা অন্যকে ক্ষমা করে দিব ও অপরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব, তাহলে আল্লাহ তা'আলাও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।
এ রাতে অনেক প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সুন্দর পোশাক পরিধান করে, আতর ও সুরমা মেখে মসজিদে সমবেত হতেন এবং সালাত আদায় করতেন। তাই আমরা মধ্য শাবানের রাতে যথাসাধ্য ইবাদাত করবো, নফল সালাত আদায় করবো, আল্লাহ তা'আলার নিকট নিজের ও পরিবার পরিজনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো ও দিনে রোযা রাখবো। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ এ তিন দিন রোযা রাখতেন। অনেকে শবে বরাতের রাতে আতশবাজি করে, মোমবাতি জ্বালায়। এগুলো অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আমরা এসব শরিয়তবিরোধী কাজ থেকে দূরে থাকবো।
আমরা রজব ও শাবান মাসের হিসাব রাখব। সম্ভব হলে আমরা রমযানের চাঁদ দেখার চেষ্টা করবো। চাঁদ দেখা সুন্নাত। কিন্তু আমরা বর্তমানে এ বিষয়ে খেয়াল রাখি না। রমযান কুরআন নাযিলের মাস। তাই এ মাস আসার আগে থেকেই আমরা বেশি বেশি কুরআন মাজিদ অধ্যয়ন করবো। জামাতে সালাত আদায়ের অভ্যাস করবো ও নফল সালাত আদায় করবো। গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করবো। যথাযথ পরিকল্পনা ব্যতীত কোনো কাজেই সফল হওয়া যায় না। তাই রমযানের জন্য আমরা প্রস্তুতি নেব। যে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করবে, রমযানে সে যথাযথ ইবাদাত করতে পারবে। আর প্রস্তুতির অভাবে আমরা যদি ইবাদাত করতে না পারি, তাহলে রমযানের রহমত-বরকত থেকে আমরা বঞ্চিত হবো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোমলিন হোক, যে রমযান পেল অথচ গুনাহ মাফ করাতে পারলো না। (তিরমিযি)
রমযান মাস আসার আগেই আমরা সারাদিনের ইবাদাতের পরিকল্পনা করবো। যেন কোনো ভাবেই রমযানের রহমত, বরকত থেকে আমরা বঞ্চিত না হই।
রমযান মাসের ফফিলত
রমযান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের এক অনন্য মাস রমযান। এ মাসেই মহান আল্লাহ কুরআন মাজিদ নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَتٍ مِّنَ الْهُدَى
وَ الْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থ: 'রমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।' (সুরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
অন্য আসমানি কিতাবসমূহও রমযান মাসেই নাযিল হয়েছে। ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাসমূহ রমযানের প্রথম রাতে নাযিল হয়। ষষ্ঠ রমযানে তাওরাত নাযিল হয়। তেরোতম রমযানে ইনজিল নাযিল হয়। আঠারতম রমযানে যাবুর নাযিল হয়। কুরআন মাজিদ নাযিল হয় রমযান মাসের কদর রাতে।
কুরআন মাজিদই রমযানের সুমহান মর্যাদার কারণ। এ মাসে আসমান থেকে রহমত নাযিল হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'রমযানে রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে। দেওয়া হয়। শয়তানদেরকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।' (বুখারি)
রমযানে এক মাস সাওম পালন করা ফরয। সাওম আল্লাহ তা'আলার খুবই পছন্দনীয় ইবাদাত। তাই সাওমের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলা নিজে দিবেন। এ মাসে বান্দা যেহেতু সাওম পালন করে, তাই আল্লাহ তা'আলা সকল ইবাদাতের সাওয়াব বহুগুন বাড়িয়ে দেন। হাদিসে আরো বর্ণিত আছে, এ মাসে ওমরা আদায় করলে হজের সাওয়াব পাওয়া যায়। (বুখারি)
আল্লাহ তা'আলা গাফুরুর রাহিম। তিনি আমাদের গুনাহ মাফ করে দিতে চান। আমরা যাতে অন্যায় পথ ছেড়ে আল্লাহ তা'আলার পথে ফিরে আসি, সে জন্য রমযানে আমাদের গুনাহ মাফের অনন্য সুযোগ রেখেছেন। রমযান মাসে একজন ঘোষণাকারী ফেরেশতা এ ঘোষণা দিতে থাকেন, 'হে কল্যান অনুসন্ধানকারী। অগ্রসর হও। ছে পাপাসক্তা (পাপ থেকে) বিরত হও।' আল্লাহ তা'আলা রমযানের প্রতি রাতেই অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
রমযান ইবাদাতের মাস। আমরা দিনে সাওম পালন করি আর রাতে তারাবিহর সালাত আদায় করি। সাওম ও তারাবিহর সালাতের ফযিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ
مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থ: 'যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমযানে রোখা রাখেন, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।' (বুখারি) রাসুলুল্লাহ (সা) আরো বলেন, 'যে ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমযানে রাত জেগে ইবাদাত করে (তারাবিহর সালাত আদায় করে), তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।' (বুখারি)
এ মাসেই আল্লাহ তা'আলা বান্দার জন্য লায়লাতুল কদর তথা মহিমান্বিত রজনী রেখেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। নবিজি (সা.) ইরশাদ করেন 'যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কদরের রাত জেগে ইবাদাত করে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়'। (বুখারি)
কঠিন কিয়ামতের দিনে রোযাদার বান্দার মুক্তির জন্য রোযা আল্লাহ তা'আলার কাছে সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, 'হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমযানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।' কুরআন বলবে, 'আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি। আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন।' তখন উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (বায়হাকী)
এভাবে রোযা, তারাবিহর সালাত ও লায়লাতুল কদরের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা বান্দার গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমরা যতই অন্যায় করি না কেন, আল্লাহ তা'আলার রহমত তার চেয়েও বিস্তৃত। তাই রমযানে আমরা যথাযথভাবে সাওম পালন, বেশি বেশি নফল ইবাদাত ও তাওবা করবো যাতে আমাদের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারি। যে রমযান মাস পেল, অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারলো না, ভার মতো হতভাগা আর কেউ নেই। ইচ্ছাকৃত সাওম পরিত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। সাওম পরিত্যাগকারীর জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। ইচ্ছাকৃত একটি রোযা পরিত্যাগ করলে, সারাজীবন রোযা রাখলেও রমযান মাসের একটি রোযার সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা রমযান মাসে বেশি বেশি ইবাদাত করবো, আল্লাহ তা'আলার অফুরন্ত রহমত বরকত লাভে ধন্য হবো।
একক কাজ নিজেকে পরিশুদ্ধ করি, রমযান মাসে যে ইবাদাতগুলো অভ্যাসে পরিণত করি। (উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তুমি রমযান মাসের যে ইবাদাতগুলো নিয়মিত পালন করো। করবে তার একটি তালিকা করো।। |
রমযান মাসে যেসব ইবাদাত করি | রমযান মাসে যেসব ইবাদাত করবো |
---|---|
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করি। | অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত করবো। |
লায়লাতুল কদর
কদর অর্থ মহিমান্বিত, সম্মানিত, নির্ধারণ, ভাগ্য। লায়লাতুল কদরকে আমরা মহিমান্বিত রাত্রি বা ভাগ্যরজনী বলতে পারি। আল্লাহ রাকুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতকে যে কয়েকটি বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন, লায়লাতুল কদর তন্মধ্যে অন্যতম। এটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
অর্থ: 'লায়লাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।' (সূরা কদর, আয়াত: ৩)
যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে রাত জেগে ইবাদাত করে, আল্লাহ তা'আলা তাকে এক হাজার মাস ইবাদাতের সাওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ইমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কদরের রাত জেগে ইবাদাত করে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়'। (বুখারি)
এ রাতে হযরত জিবরাইল (আ.) অগণিত ফেরেশতাসহ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও শান্তির বার্তা নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। তাঁরা রাত জেগে ইবাদাতকারীদের জন্য আল্লাহ তা'আলার নিকট রহমতের দোয়া করেন। ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার রহমতের অবিরত ধারা অব্যাহত থাকে। এ রাতেই আল্লাহ তা'আলা মানুষের আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তিনি বান্দার দোয়া কবুল করেন ও মনোবাসনা পূরণ করেন। তিনি ভাওবাকারীর তাওবা কবুল করেন। বান্দা যত গুনাহগারই হোক না কেন, সে যদি আল্লাহ তা'আলার নিকট মাফ চায়, তিনি গুনাহ মাফ করে তাকে সম্মানিত করেন।
কুরআন মাজিদ সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আল্লাহ তা'আলা এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে সমগ্র কুরআন মাজিদ নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা'আলার নির্দেশে জিবরাইল (আ.) সেখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে ওহি নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট যেতেন। কুরআন মাজিদের কারণেই আল্লাহ তা'আলা এ রাতকে এত বেশি মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْتُهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبْرَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ
অর্থ: 'আমি একে (কুরআন মাজিদকে) বরকতময় রাতে নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।' (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩)
লায়লাতুল কদরের অনুসন্ধান
এ রাতকে আল্লাহ তা'আলা নির্দিষ্ট করে দেননি বরং গোপন রেখেছেন, বান্দা যাতে বেশি বেশি ইবাদাত করে। রাসুল (সা.) রমযান মাসের শেষ দশকে লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করতে বলেছেন। হাদিসে পবিত্র রমযান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহের কথাও বলা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.), ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সহ অনেক প্রসিদ্ধ আলিম রমযান মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত ২৭ তারিখের রাতকে লায়লাতুল কদর বলে চিহ্নিত করেছেন।
আমাদের উচিত রমযান মাসের শেষ দশকে রাত জেগে বেশি বেশি ইবাদাত করা, যাতে কোনো অবস্থাতেই এ মহিমান্বিত রাতের রহমত-বরকত থেকে আমরা বঞ্চিত না হই। যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরের রহমত-বরকত থেকে বঞ্চিত হয়, তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।
লায়লাতুল কদরের আমল
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে লায়লাতুল কদরের দোয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁকে নিম্নোক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
অর্থ: 'হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।' (তিরমিযি)
রমযানের শেষ দশক ইতিকাফের সময়। ইতিকাফ হলো ইবাদাতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। নারীরা তাদের বাসগৃহে নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে। এ সময় ইতিকাফে থাকলে দশ দিনই ইবাদাতের মাধ্যমে কাটানো যায়, ফলে লায়লাতুল কদরের বরকত লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যে যত বেশি ইবাদাত করবে, সে তত বেশি সাওয়াব পাবে। আমরা এ রাতসমূহে তারাবির সালাত আদায় করবো, যথাসম্ভব কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করবো, তাসবিহ পাঠ করবো, জিকির করবো, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবো, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করবো। আমাদের পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য দোয়া করবো। কবরবাসীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করবো। এভাবে ফজর নামায পর্যন্ত ইবাদাত করবো, যাতে আল্লাহ তা'আলা আমাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
প্রতিফলন ডায়েরি লিখন |
লায়লাতুল কদরের যে যে ইবাদাতসমূহ আমি করবো: |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
লায়লাতুল কদর নিয়ে আলোচনা করি ও সে অনুযায়ী আমল করি। ১) লায়লাতুল কদরকে কি আমরা অন্য কোনো নামে জানি? ১ ২) এক হাজার মাসে কত বছর হয়া ৩) রমযান মাসের শেষ দশ দিন কোন কোন ইবাদাত করলে লায়লাতুল কদরের ফযিলত পাওয়া যাবে? ৪) লায়লাতুল কদরের ইবাদাতের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করি ও সে অনুযায়ী আমল করি। |
তাকওয়া অর্জনে সাওম
তাকওয়া ও সাওমের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাকওয়া আরবি শব্দ। এর অর্থ অন্যায় থেকে দূরে থাকা, আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া। তাকওয়ার কারণে মানুষ হারাম কাজ থেকে দূরে থাকে। পক্ষান্তরে সাওম পালনের জন্য আল্লাহর আদেশে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বান্দা পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পুরণ থেকে দূরে থাকে অথচ সেগুলো হালাল। তাই সাওম উঁচু স্তরের তাকওয়াপূর্ণ ইবাদাত। তাকওয়া ব্যতীত সাওম পালন সম্ভব নয়। কারণ সাওম পালনকারীর অন্তরে আল্লাহ তা'আলার ভয় না থাকলে সে লুকিয়ে খাবার খেতে পারতো। কিন্তু আল্লাহর ভয়েই সে সারাদিন পানাহার থেকে দূরে থাকে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সাওম পালনের আদেশ দিয়েছেন যাতে আমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারি
মহান আল্লাহ বলেন,
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى
الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ
অর্থ: 'হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।' (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮০)
সাওমের তিনটি দিক রয়েছে, রমযান মাসে সাওম পালনের ক্ষেত্রে এই দিকগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করলে আমরা পরিপূর্ণ মুত্তাকী হতে পারবো।
প্রথম: সাওম পালনকারী ব্যক্তি পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে দূরে থাকে। এর মাধ্যমে নফস (কুপ্রবৃত্তি) দুর্বল হয়ে পড়ে, অন্যায় কাজের প্রতি মানুষের সহজাত তাড়না কমে যায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ সহজ হয়ে যায়। ফলে রোযাদারের মনে আল্লাহ তা'আলার ভয় প্রবল হয়।
দ্বিতীয়: রমযান মাসে সাওম পালনকারী দিনে রোযা রাখে, রাতে তারাবিহ সালাত আদায় করে। এভাবে দিন-রাত ইবাদাতে মশগুল থাকে। ক্ষুধাতুর শরীর অন্যায় কাজে সাড়া দেয় না। ফলে সাওম শয়তানের পথ রুদ্ধ করে, মানুষকে গুনাহ বর্জন করতে সাহায্য করে। সবাই ইবাদাতে উদ্বুদ্ধ থাকে। সমাজে অশ্লীল কাজ কমে যায়। রোযাদার অশ্লীল কথা বলে না ও অশ্লীল কাজ করে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'সাওম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোযা রেখে অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় ও ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে বাগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোযাদার।' (বুখারি)
তৃতীয়: রমযানে এক মাস সিয়াম পালন করে রোযাদার পানাহার বর্জন ও গুনাহের কাজ পরিত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সে আল্লাহর ইবাদাতের প্রকৃত স্বাদ পেতে শুরু করে। ইবাদাতের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। রোযাদার খাবার সামনে নিয়ে বসে থাকে অথচ আহার করে না। এভাবে রোযা ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'রোযা সবরের অর্ধেক।' মানুষ পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্যই বেশিরভাগ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। রোযা যেহেতু মানুষকে উভয় কাজ থেকে দূরে রাখে তাই আল্লাহকে স্মরণ করা সহজ হয়।
শয়তানের প্ররোচনা রোযাদারকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। সে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। এভাবে রোযাদার অল্লাহ তা'আলার প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়।
সাওম আমাদেরকে তাকওয়ার পথ দেখায়। তাকওয়ার মাধ্যমে ইবাদাতে ইখলাস তৈরি হয়। ইখলাস অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য ইবাদাত করা। আল্লাহ তা'আলা ইখলাসপূর্ণ ইবাদাত কবুল করে উত্তম প্রতিদান দেন। ইখলাসের বিপরীত হলো রিয়া বা লৌকিকতা। রিয়া ইবাদাতকে ধ্বংস করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা রোযা রাখে কিন্তু মিথ্যা কথা বলা ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করতে পারে না। তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-
مَنْ لَمْ يَدَعُ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةً
فِي أَنْ تَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
অর্থ: 'যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করলো না, এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।' (বুখারি)
শ্রেণিকক্ষে বসে থেকেও কোনো শিক্ষার্থী যদি শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে ঐ শিক্ষার্থী যেমন কোনো কিছুই শিখতে পারে না, ঠিক তেমনি সারাদিন পানাহার ত্যাগ করেও, মিথ্যা ও অশ্লীলতা বর্জন করতে না পারলে, রোযাদার কোনো সাওয়াব পায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-
رُبَّ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الْجُوعُ وَرُبَّ قَائِمٍ
لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ
অর্থ: 'অনেক রোযাদার রোযা থেকে ক্ষুধার কষ্ট ব্যতীত আর কিছু লাভ করতে পারে না। অনেক তাহাজ্জুদ আদায়কারী তাহাজ্জুদ থেকে রাত জাগরণ ব্যতীত আর কিছু লাভ করতে পারে না।' (ইবন মাজাহ)
আল্লাহ তা'আলা কুরআন মাজিদে অসংখ্য আয়াতে আমাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করতে আদেশ দিয়েছেন। কারণ মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে মর্যাদাবান। কুরআন মাজিদের ঘোষনা, 'তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদাবান, যার তাকওয়া সবচেয়ে বেশি।' (সুরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৩) রমযানের রোযা আমাদের এই তাকওয়া অর্জনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঈদুল ফিতর
ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ, উৎসব ইত্যাদি। ফিতর অর্থ রোযা ভঙ্গ করা। ঈদুল ফিতরের আভিধানিক অর্থ রোযা ভঙ্গ করার উৎসব। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। এক মাস সাওম পালন করার পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তা'আলা শাওয়াল মাসের প্রথম দিনকে রোযাদারের জন্য আনন্দ উদযাপন করার দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। মহানবি (সা.) হিজরতের পর মদিনায় এসে মদিনাবাসীদের নির্দিষ্ট দুই দিন আনন্দ- উৎসব ও খেলাধুলা করতে দেখলেন। মহানবি (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু'দিন কিসের? তারা বললো, আমরা জাহিলি যুগে এ দুই দিন আনন্দ-উৎসব ও খেলাধুলা করতাম। তখন মহানবি (সা.) বললেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটি দিন দান করেছেন। আর তা হলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ)
দলগত কাজ | |
ঈদের দিনে করণীয় | ঈদের দিনে বর্জনীয় |
সুন্দর পোশাক পরিধান | বাজি, পটকা ফোটানো |
ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয়
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাত খোলা ময়দানে বা ঈদগাহে আদায় করা উত্তম। মসজিদেও ঈদের সালাত আদায় করা যায়। উৎসব উদযাপনেও ইসলাম সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধকে গুরুত্ব দিয়েছে। অভাবী ও গরীব মানুষেরাও যেন উৎসব উদযাপন করতে পারে, সে জন্য আল্লাহ তা'আলা সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। কোনো কারণে আদায় করতে না পারলে পরবর্তীতে আদায় করতে হবে। কিন্তু দেরি করার কারণে এটি সাধারণ দান হিসেবে পরিগণিত হবে।
ঈদের দিনের কিছু সুন্নাত আমল নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করা।
২. সকালে কিছু খেয়ে ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়া। সাধারণত রাসুলুল্লাহ (সা.) বেজোড়
সংখ্যক খেজুর খেয়ে ঈদের সালাত আদায় করতে যেতেন।
৩. পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও উত্তম পোশাক পরিধান করে ঈদগাহে যাওয়া। আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা ও চোখে সুরমা লাগানো।
৪. যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়া।
৫. ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়ার সময়, সালাত আদায়ের আগে ও ঈদগাহে অবস্থানকালে তাকবির বলা। তাকবির বিভিন্নভাবে পড়া যায়। সাধারণত আমরা নিমোক্ত তাকবির পাঠ করি।
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ
وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ: আল্লাহ আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।'
অর্থ: 'আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। আর তিনিই মহান, তিনি মহান ও তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা।'
৬. এক পথে ঈদগাহে যাওয়া ও ভিন্নপথে বাড়ি ফেরা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন বাড়ি ফেরার সময় ভিন্ন পথে ফিরতেন।' (বুখারি)
৭. শিশুদের ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের সালাত আদায়ের জন্য পরিবারের শিশুদের নিয়ে আসতেন।
৮. সালাত শেষে খুতবা শোনা। খুতবা না শুনে চলে আসলে গুনাহগার হতে হবে।
ঈদের আনন্দ উদযাপন
ঈদের দিন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে কুশল বিনিময় করা ও তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া উচিৎ। সাহাবিগণ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলতেন 'তাকাব্বালাল্লাহ মিন্না ওয়া মিনকুম'। অর্থ 'আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও আপনাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন।' আমরা ঈদ মুবারক বা ঈদুকুম সাঈদ (তোমাদের ঈদ সৌভাগ্যমন্ডিত হোক) বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারি। আমাদের উচিত ঈদের দিন সামর্থ্যানুযায়ী উত্তম খাবারের আয়োজন করা, নিজে আহার করা, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে আপ্যায়ন করা।
ঈদের আনন্দ উদযাপনের জন্য শরিয়ত অনুমোদিত খেলাধুলারও আয়োজন করতে পারি। ঈদের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের লাঠি খেলা ও আনন্দ করার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি আমরা আল্লাহর নিকট গুনাহ মাফ চাইব। কেননা রমযানে যার গুনাহ মাফ হয়নি, তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই। একবার ঈদের দিন আবু হুরায়রা (রা.) উমর ফারুক (রা.) এর বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, হযরত উমর (রা.) দরজা বন্ধ করে কাঁদছেন। আবু হুরায়রা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, 'হে আমিরুল মু'মিনিন। লোকেরা আনন্দ উদযাপন করছে আর আপনি কাঁদছেন?' উমর ফারুক (রা.) বললেন, 'আনন্দিত লোকেরা যদি জানতো, তাহলে তারা আনন্দ উদযাপন করতো না'। একথা বলে তিনি পুনরায় কান্না শুরু করলেন আর বললেন, 'তাদের আমল (রমযানের সাওম, সালাত ও ইবাদাত) যদি কবুল হয়ে থাকে, তবে তারা আনন্দ উদযাপন করতে পারে। কিন্তু তাদের আমল যদি প্রত্যাখ্যাত হয়, তাদের কান্না করা উচিত। আর আমি জানি না আমার আমল কবুল হয়েছে নাকি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে'।
তাই ঈদের খুশির আতিশয্যে আল্লাহকে আমরা চুলে থাকবো না। এমন কাজ করবো না, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) অপছন্দ করেন। আমরা ঈদের আনন্দ উদযাপনে, পোশাক-পরিচ্ছদ ও চাল-চলনে শালীনতা বজায় রাখবো। নতুন পোশাক পরিধান করলেও অহংকার প্রকাশ করবো না। নতুন পোশাক না থাকলে, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো। ঈদের দিন আল্লাহ তা'আলার নিকট নিজের, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করবো। আমাদের নিকটজন যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের কবর যিয়ারত করবো ও তাদের মাগফিরাত কামনা করবো। সর্বোপরি সবাই পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও মনোমালিন্য তুলে প্রকৃত মুসলিম হবো এবং একতার বন্ধনে আবন্ধ হবো।
বাড়ির কাজ | |||
সাওমের শিক্ষা | যেভাবে চর্চা করবো | চর্চা করা হয়েছে | মন্তন্য (অভিভাবক) |
ভ্রাতৃত্ববোধ | অভাবী ব্যক্তিকে সাহায্য করবো | ||
আরও দেখুন...