সিটি স্ক্যান শব্দটি ইংরেজি Computed Tornography Scan এর সংক্ষিপ্ত রূপ। টমোগ্রাফি বলতে বোঝানো হয় ত্রিমাত্রিক বস্তুর একটি ফালির বা দ্বিমাত্রিক অংশের প্রতিবিম্ব তৈরি করা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই যন্ত্রে এক্স-রে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ এক্স-রে করার সময় শরীরের ভেতরের একবার ত্রিমাত্রিক অঙ্গের দ্বিমাত্রিক একটা প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যান যন্ত্রে একটি এক্স-রে টিউৰ রোগীর শরীরকে বৃত্তাকারে ঘুরে এক্স-রে নির্গত করতে থাকে এবং অন্য পাশে ডিটেকটর প্রতিবিম্ব গ্রহণ করতে থাকে। প্রতিবিম্বটি স্পষ্ট করার জন্য অনেক সময় রোগীর শরীরে বিশেষ Contrast দ্ৰব্য ইনজেকশন করা হয়।
বৃত্তাকারে চারপাশের এক্স-রে প্রতিবিম্ব পাওয়ার পর কম্পিউটার দিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করে সমন্বয় করা হয় এবং একটি পরিপূর্ণ ফালির (Slice) অভ্যন্তরীণ গঠন পাওয়া যায়। একটি ফালির ছবি নেওয়ার পর সিটি স্ক্যান করার যন্ত্র রোগীকে একটুখানি সামনে সরিয়ে আবার বৃত্তাকারে চারদিক থেকে এক্স-রে প্রতিচ্ছবি গ্রহণ করে, যেগুলো বিশ্লেষণ করে দ্বিতীয় আরেকটি ফালির অভ্যন্তরীণ পঠনের একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি তৈরি করে। এভাবে রোগীকে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে নিয়ে তার শরীরের কোনো একটি অঙ্গের অনেকগুলো ফাশির প্রতিচ্ছবি নেওয়া হয়। একটা রুটির অনেকগুলো স্লাইস পরপর সাজিয়ে নিয়ে আমরা যেরকম পুরো রুটিটি পেয়ে যাই, ঠিক সেরকম শরীরের কোনো অঙ্গের অনেকগুলো স্লাইসের ছবি একত্র করে আমরা রোগীর শরীরের ভেতরের একটা ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি তৈরি করে নিতে পারি। সিটি স্ক্যানের কাজের পদ্ধতিটি দেখে তোমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল জটিল এবং একটি বিশাল যন্ত্র। তবে শরীরের ভেতরে না গিয়ে বাইরে থেকেই শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নিখুঁত ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করতে পারে বলে এটি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের খুব প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিটি স্ক্যান করে নিচের কাজগুলো করা সম্ভব:
(a) সিটি স্ক্যানের সাহায্যে শরীরের নরম টিস্যু, রক্তবাহী শিরা বা ধমনি, ফুসফুস, ব্রেন ইত্যাদির পূর্ণাঙ্গ ছবি পাওয়া যায়।
(b) যকৃৎ, ফুসফুস এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার শনাক্ত করার কাজে সিটি স্ক্যান ব্যবহার করা হয়।
(c) সিটি স্ক্যানের প্রতিবিম্ব টিউমারকে শনাস্ত করতে পারে। টিউমারের আকার ও অবস্থান সম্পর্কে বলতে পারে এবং সেটি টিউমারের আশপাশের টিস্যুকে কী পরিমাণ আক্রান্ত করেছে সেটিও জানিয়ে দিতে পারে।
(d) মাথার সিটি স্ক্যানের সাহায্যে মস্তিষ্কের ভেতর কোনো ধরনের রক্তপাত হয়েছে কি না, ধমনি ফুলে গেছে কি না কিংবা কোনো টিউমার আছে কি না সেটি বলে দেওয়া যায়।
(e) শরীরে রন্তু সঞ্চালনে সমস্যা আছে কি না সেটিও সিটি স্ক্যান করে জানা যায়। সতর্কতা: সিটি স্ক্যান করার জন্য যেহেতু এক্স-রে ব্যবহার করা হয় তাই গর্ভবর্তী মহিলাদের সিটি স্ক্যান করা হয় না। ছবির কন্ট্রাস্ট বাড়ানোর জন্য যে “ডাই” ব্যবহার করা হয় সেটি কারো কারো শরীরে অ্যালার্জির জন্ম দিতে পারে বলে সেটি ব্যবহার করার আগে সতর্ক থাকতে হয়।
আরও দেখুন...