কাউন্ট হলো এমন একটি সংখ্যা যা সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভর বা একক ভরের দৈর্ঘ্যকে নির্দেশ করে। সুতার কাউন্ট বা নম্বর হচ্ছে একটি সংখ্যাবাচক শব্দ, যা দ্বারা সূক্ষ্মতা বা স্থূলতা প্রকাশ পায়। কোনো বস্তুর সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা ঐ বস্তুর ব্যাস ও প্রস্থচ্ছেদ অনুপাতকে বোঝায়। সূক্ষ্মতা বলতে চিকন ও স্থূলতা বলতে মোটা সুতাকে বুঝানো হয়েছে । সুতার লিনিয়ার ডেনসিটি বোঝাতে দৈর্ঘ্য ও ব্যাসের সাথে সম্পর্ককে বোঝায়। সুতা বা আঁশের একক দৈর্ঘ্যের ওজনকে লিনিয়ার ডেনসিটি বলে।
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বিভিন্ন আঁশের উপর নির্ভর করে কাউন্ট নির্ণয়ও বিভিন্ন হয়ে থাকে । কটন, জুট, পলিয়েস্টার ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ফাইবারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। নবম শ্রেণিতে কিছু কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। দশম শ্রেণিতে টেক্স, ডেনিয়ার, মেট্রিক ও ওরস্টেড কাউন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাউন্টের সংজ্ঞা (Definition of Count)
কাউন্টের সংজ্ঞা সরাসরি বলতে হলে একক দৈর্ঘ্যের ভর অথবা একক ভরের দৈর্ঘ্য কে বুঝায়। ইংরেজিতে যাকে 'Length per unit weight or weight per unit length' বলে। উপরোক্ত সংজ্ঞা বাদেও বিভিন্ন সুতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাউন্ট রয়েছে। যেমন- কটন কাউন্ট, জুট কাউন্ট, ডাইরেক্ট সিস্টেমে কাউন্ট ও ইনডাইরেক্ট সিস্টেমে কাউন্ট ইত্যাদি যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে।
সুতার কাউন্টের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Yarn count)
সুতার কাউন্ট নির্ণয়ে প্রধানত: দুইটি পদ্ধতি। যথা-
১। পরোক্ষ পদ্ধতি (Indirect system )
২। প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct System)
পরোক্ষ পদ্ধতি ( Indirect system ) -
পরোক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক ভরের দৈর্ঘ্যকে কাউন্ট বলে। সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে সুভা তত চিকন বা সূক্ষ্ম হবে। আর কাউন্ট যত কম হবে সুতা তত মোটা হবে। পরোক্ষ পদ্ধতিতে প্রতিটি সুতার ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে আবার ওজনেরও একক আছে যা দ্বারা সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ ১০০ কটন কাউন্টের সুতার চেয়ে ১০ কটন কাউন্টের সুতা অনেক মোটা। কটন, উল, উরস্টেড, লিনেন ইত্যাদি আঁশের তৈরি সুতার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নিম্নের সূত্রের সাহায্যে সহজেই সুতার কাউন্ট নির্ণয় করা সম্ভব ।
প্রত্যক্ষ পদ্ধতি (Direct System )
প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে সুতার একক দৈর্ঘ্যের ভরকে কাউন্ট বলে। সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে সুতা তত মোটা হবে এবং কাউন্ট যত কম হবে সূক্ষ্ম অর্থাৎ চিকন হবে। এই পদ্ধতিতেও একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের একক ও ওজনের একক আছে যা দ্বারা সহজেই সুতার কাউন্ট বের করা যায়। উদাহরণস্বরূপ - ২৪ পাউন্ডস/স্পাইন্ডেল সুতার চেয়ে ৮ পাউন্ডস / স্পাইন্ডেলের সুতা অনেক চিকন । সাধারণত জুট, সিল্ক, উল, হেম্প, পলিয়েস্টার, নাইলন ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়।
টেক্স (Tex)-
টেক্স পদ্ধতিকে ইউনিভার্সেল সিস্টেমও (Universal system) বলা হয়। ISO (International Stan darization Organization) সুতার কাউন্ট নির্ণয়ের ক্ষেত্রে টেক্স পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। সকল ধরনের সুতা, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম যে ধরনেরই হোক না কেন এ পদ্ধতিতে কাউন্ট বের করা সম্ভব। আঁশ থেকে সুতা প্রতিটি স্তরেই এ পদ্ধতিতে কাউন্ট বের করা সম্ভব। ১০০০ মিটার সুতার ওজন যত গ্রাম তত টেক্স। সুতা যত সূক্ষ্ম হবে টেক্স তত কম হবে। উদাহরণস্বরূপ-এক কিলোমিটার অর্থাৎ ১০০০ মিটার সুতার ওজন ১ গ্রাম হলে সুতার টেক্স ১। এখানে দৈর্ঘ্যের একক ১০০০ মিটার ও ওজনের একক গ্রাম । অতি সূক্ষ্ম আঁশ থেকে শুরু করে অতি মোটা স্লাইভারের কাউন্ট পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বের করা সম্ভব। অতি সূক্ষ্ম আঁশ ও সুতার ক্ষেত্রে মিলিটেক্স (Militex) এবং মোটা ও স্থূল স্লাইভারের ক্ষেত্রে কিলোটেক্স ব্যবহার করা হয়। মিলিটেক্স (Militex) ১ কিলোমিটার সুতার ওজন যত মিলিগ্রাম তত মিলিটেক্স। কিলোটেক্স (Kilotex) ১ কিলোমিটার সুতার ওজন যত কিলোগ্রাম তত কিলোটেক্স। কিলোটেক্সকে সংক্ষেপে K-tex টেক্স বলা হয়।
সুতার টুইস্ট বা পাক (Twist of yarn)-
একটি সুতার প্রস্থচ্ছেদ করলে তার মধ্যে অনেকগুলো আঁশ দৃষ্টিগোচর হবে। আঁশগুলো আলাদা আলাদা থাকলে একসঙ্গে এটাকে আমরা সুতা বলব না। কিন্তু এই আলাদা আঁশসমূহ একত্রে মোচড় দেওয়া অবস্থায় থাকলে তখন আমরা তাকে সুতা বলব। কাজেই আঁশ যখন আলাদা আলাদা পাশাপাশি থাকে তাকে সুতায় রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্যাঁচ বা মোচড় দেওয়া হয় তখন তাকে আমরা পাক বা টুইস্ট বলতে পারি। স্পিনিং মেশিনে সুতা উৎপাদনকালীন সময়ে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে টুইস্ট প্রদান করা হয়। টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতায় শক্তি বৃদ্ধি ও প্যাকেজে জড়ানো এবং বহনে সুবিধা হয়।
স্পিনিং ফ্রেমে প্রথমে সুতা উৎপাদন করে পরে টুইস্ট প্রদান করে সুতায় শক্তি বৃদ্ধি করে ও পুরোপুরি সুতায় রূপ দেয়। এই সুতা জড়ানো অর্থাৎ কোনো প্যাকেজে জড়ানো না হলে স্পিনিং ফ্রেম থেকে সুতা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। সুতা সংগ্রহ করার জন্য স্পিনিং মেশিনেই ছোট-বড় প্যাকেজে রূপান্তরিত করতে হবে। এই প্যাকেজে রূপান্তরের জন্য স্পিনিং ফ্রেমে প্যাকেজ বিল্ডিং -এর প্রয়োজন রয়েছে। প্যাকেজ বিল্ডিং-এর জন্য স্পিনিং ফ্রেমে যে মোশন কাজ করে তাই বিল্ডিং মোশন।
টুইস্ট
সুতার মধ্যে অবস্থিত আঁশসমূহকে তার অক্ষের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ডান থেকে বাম দিকে অথবা বাম থেকে ডান দিকে যে প্যাঁচ বা মোচড় দেওয়া হয় তাকে প্যাঁচ বা টুইস্ট বলে। টুইস্ট প্রদানের মূল উদ্দেশ্য-
০ সুতার শক্তি বৃদ্ধি করা।
০ সুতার মধ্যে অবস্থিত আঁশসমূহকে ধরে রাখা।
০ সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধি করা।
০ সুতা দৃঢ় করা।
০ সুতাকে গোলাকৃতি আকার ধারণ করা।
০ সুতার মধ্যে আঁশ দ্বারা ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানে একটি কোণের সৃষ্টি করা ।
০ পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ কাপড় তৈরিতে সহায়তা করা।
টুইস্ট -এর গুরুত্ব
সুতার টুইস্ট এর গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো।
১। টুইস্ট প্রদানে সুতার শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২। পাশাপাশি অবস্থিত সমান্তরাল আঁশসমুহে টুইস্ট এলানের কারণে অনের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ।
৩। স্পিনিং থেকে উৎপাদিত সুতা দৃঢ় হয় ফলে স্পিন্ডেল জড়াতে সহজ হয়।
৪। টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতা গোলাকৃতি আকার ধারণ করে এবং সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধি পায় ।
৫। টুইস্ট প্রদান নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলে সুতা যথেষ্ট মজবুত হয়।
৬। টুইস্ট প্রদানের কারণেই পরবর্তী প্রক্রিয়া অর্থাৎ কাপড় তৈরিতে সহজ হয়।
সুতার টুইট প্রদান করার পর নিম্নলিখিত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
• সুতার টুইস্ট প্রদানের ফলে সুতার কাউন্ট নির্ণয় করতে সহজ হয়।
• সুতার টুইস্ট প্রদানের কারণে সহজেই বহনযোগ্য হয়, কারণ টুইস্টবিহীন আঁশ বহনযোগ্য নয়।
• সুভার আঁশসমূহ পাশাপাশি থাকলেও শক্তিতে কোনো সহায়তা করে না যতক্ষণ পর্যন্ত মা সুতার টুইস্ট প্রान করা হয়।
• সুতার নির্দিষ্ট আকার অর্থাৎ সুতা মাত্রই গোলাকার, তা একমাত্র টুইন্ট প্রদান করার জন্যই সম্বব।
• সুতার চাকচিক্যতা বৃদ্ধির জন্য টুইস্ট প্রদান করা অপরিহার্য।
• সুভা দ্বারা কাপড় পরত করা হয়। সুতায় পাক প্রদান করার কারণেই কাপড় তৈরি সম্ভব হয়েছে।
• সুতায় পাক প্রদান বের করার জন্য ইঞ্চিতে কয়টি মোচড় আছে তা বের করে টিপিজাই (TPI) নির্ণয় করা হয়।
টুইস্ট -এর প্রকারভেদ
টুইস্ট -এর দিকের উপর নির্ভর করে টুইস্ট -এর প্রকারভেদ করা হয়। অর্থাৎ আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে কোনো দিকে আবর্তিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে টুইস্টের প্রকারভেদ করা হয়। তাই টুইস্ট -এর দিকের উপর নির্ভর করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১। এস টুইস্ট (s-twist)
২। জেড টুইস্ট (Z-twist )
এল টুইট (S-twist)-
এক্ষেত্রে আঁশসমূহ সুতার অক্ষের সাথে বাম দিকে ঘুরে ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে ঘুরে যে টুইস্ট গঠন করে ডাকে এস টুইস্ট (S-twist) বলে। ইংরেজি এল (S) অক্ষরের পেটের অংশ বেভাবে বাঁক খার, আপসমূহ সুতার অক্ষের সাথে সেভাবে পাক খায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
জেড টুইস্ট (Z-twist)-
এক্ষেত্রে আঁশসমূহ সুভার অক্ষের সাথে ডান দিকে ঘুরে ঘুরে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার দিকে ঘুরে যে টুইস্ট গঠন করে তাকে এন টুইস্ট (S-twist) বলে। ইংরেজি এস (2) অক্ষরের পেটের অংশ যেভাবে বাঁক খায়, আঁশসমূহও সুতার অক্ষের সাথে সেভাবে পাক খায় বলে রূপ নামকরণ করা হয়েছে।
আরও দেখুন...