এ অধ্যায়ের শেষে আমরা ধারণা নিতে পারব - ■ সূত্র পিটক কী; ■ সূত্র পিটকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি; ■ সূত্র পিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা। |
একদিন বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে শান্তিকুঞ্জ বৌদ্ধ বিহারে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় ভিক্ষু, শ্রমণ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় বিশুদ্ধানন্দ ভিক্ষুকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক সম্পর্কে একক ধর্মদেশনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ত্রিপিটক সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বুদ্ধ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে ধর্ম সম্পর্কে বহু উপদেশ দিয়েছেন। বুদ্ধের মহা- পরিনির্বাণের পর বুদ্ধশিষ্যগণ সেসব ধর্মোপদেশ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। সেই সম্মেলনকে বলা হয় সঙ্গীতি। ধর্মোপদেশের প্রকৃতি বা ধরন অনুযায়ী বুদ্ধবাণীগুলোকে তিনটি পিটকে সংকলন করা হয়েছে। তিনটি পিটক হলো : সূত্র পিটক, বিনয় পিটক এবং অভিধর্ম পিটক। ত্রিপিটক অনেকগুলো গ্রন্থের সমাহার। সম্পূর্ণ ত্রিপিটক সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই আজ আমি কেবল সূত্র পিটক সম্পর্কে আলোচনা করব। তিনটি পিটকের মধ্যে সূত্র পিটক সবচেয়ে বড়।
সূত্র পিটক পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা : ক) দীর্ঘ বা দীঘ নিকায় ; খ) মধ্যম বা মজিঝিম নিকায়; গ) সংযুক্ত নিকায়; ঘ) অঙ্গুত্তর নিকায় এবং ঙ) খুদ্দক বা ক্ষুদ্র নিকায় । |
বুদ্ধ সূত্র আকারে যেসব ধর্মোপদেশ দিয়েছেন, সেগুলো সূত্র পিটকের এই পাঁচটি নিকায়ে সংকলিত আছে। এ কারণে এই পাঁচটি নিকায়কে একত্রে বলা হয়েছে সূত্র পিটক। এখন আমি সূত্র পিটকের পরিচয় সংক্ষেপে বর্ণনা করব। আপনারা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
অংশগ্রহণমূলক কাজ : ১
প্রথমে নিচের প্রশ্নটি সম্পর্কে চিন্তা করি, তারপর জোড়ায় আলোচনা করি এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও ধারণাগুলো অন্যদের সামনে উপস্থাপন করি।
প্রশ্ন : কেন আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ পড়া উচিত?
সূত্র পিটকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
দীর্ঘ বা দীঘ নিকায় : সূত্র পিটকের প্রথম ভাগ বা নিকায় হচ্ছে দীর্ঘ নিকায়। বুদ্ধ দেশিত দীর্ঘ আকৃতির সূত্রগুলো এই নিকায়ে সংকলিত আছে। তাই এটিকে নাম দেওয়া হয়েছে দীর্ঘ নিকায়। দীর্ঘ নিকায় তিনটি বর্গ বা খণ্ডে বিভক্ত।যেমন- শীলস্কন্ধ, মহাবর্গ ও পাটিক বর্গ। তিনটি বর্গে মোট চৌত্রিশটি সূত্র আছে। কিছু সূত্র গদ্যে, কিছু সূত্র পদ্যে রচিত। দীর্ঘ নিকায়ে সূত্রগুলোতে শীল বা নৈতিকতার কথা, মানব জীবনে পারস্পরিক দায়িত্ব পালনের কথা এবং বুদ্ধের শেষ জীবনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা আছে। অমঙ্গল, অশান্তি এবং দুর্দশা থেকে পরিত্রাণের জন্য পাঠ করা হয় - এ রকম মন্ত্র বা সূত্রও সেখানে রয়েছে। এছাড়া বুদ্ধের সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্ম-দর্শনের কথাও দীর্ঘ নিকায়ে পাওয়া যায়।
মধ্যম বা মজ্ঝিম নিকায় : সূত্র পিটকের দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে দীর্ঘ নিকায়। বুদ্ধ দেশিত মধ্যম আকৃতির সূত্রগুলো আছে বলে এটি মধ্যম নিকায় নামে পরিচিত। তিন খণ্ডে বিভক্ত মধ্যম নিকায়ের একশ বাহান্নটি সুত্রে রয়েছে দান, শীল, ভাবনা, অনিত্যতা, দুঃখ, অনাত্ম এবং নির্বাণ প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা।
এছাড়া, এ নিকায়ে সুন্দর জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
সংযুক্ত নিকায় : সূত্র পিটকের তৃতীয় ভাগ বা নিকায় হচ্ছে সংযুক্ত নিকায়। তুলনামূলকভাবে ছোট বা ক্ষুদ্র আকারের ছাপ্পান্নটিসূত্র সংযুক্ত নিকায়ে সংকলিত আছে। এ নিকায়ে বুদ্ধ দেশিত মোট ছাপ্পান্নটি সূত্র আছে, যা পাঁচটি বর্গে বিভক্ত। সূত্রগুলোতে তিন, ধরণের বিষয়বস্তু রয়েছে। যেমন- নৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং দার্শনিক। বিশেষত, শরীর, মন, পঞ্চস্কন্ধ, ধ্যান, সমাধি, চতুরার্য সত্য, শ্রদ্ধা প্রভৃতি বিষয় এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে নৈতিক ও মানবিক নানা কাহিনি এবং কবিতার মাধ্যমে। এছাড়া প্রশ্নোত্তর, উপমা ও উদাহরণের মাধ্যমেও বিষয়বস্তুকে বর্ণনা করা হয়েছে।
অঙ্গুত্তর নিকায় : সূত্র পিটকের চতুর্থ ভাগ হচ্ছে অঙ্গুত্তর নিকায়। গদ্যে ও পদ্যে রচিত এই নিকায়ে ছোট-বড় ২৩০৮টি সূত্র আছে। এই নিকায়ে শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা, পঞ্চ উপাদান (রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ), পঞ্চক্লেশ, পঞ্চনিবারণ, পঞ্চ ধ্যান, উপোসথ, মার্গ ও মার্গফল প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। এগুলো বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া, মানুষের বৈশিষ্ট্য, সমাজ জীবনে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য, পাপ-পুণ্য, কুশল-অকুশল কর্ম প্রভৃতি বিষয়ও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
খুদ্দক বা ক্ষুদ্র নিকায় : সূত্রপিটকের শেষ ভাগ হচ্ছে খুদ্দক নিকায়। এ নিকায়ে ষোলটি গ্রন্থ আছে। প্রতিটি গ্রন্থের বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলী ভিন্ন। ক্ষুদ্র বা ছোট ছোট বিষয়ের সমষ্টি বলেই এই নিকায়ের নাম রাখা হয় খুদ্দক নিকায়। খুদ্দক নিকায়ের অন্তর্গত ষোলটি গ্রন্থ হলো : ১. খুদ্দক পাঠ ২. ধম্মপদ, ৩. উদান ৪. ইতিবুত্তক ৫. সুত্ত নিপাত ৬. বিমান বন্ধু ৭. পেত বন্ধু ৮. থের গাথা ৯. থেরীগাথা ১০. জাতক (ষষ্ঠ খণ্ড) ১১. মহানিদ্দেস ১২. চূল্লনিদ্দেস ১৩. পটিসম্ভিদা মগ্গ ১৪. অপদান ১৫. বুদ্ধবংসো ১৬. চরিয়া পিটক। নৈতিক, মানবিক, ত্যাগ, উদারতা, সহিষ্ণুতা, পরোপকার প্রভৃতি বিষয় খুদ্দক নিকায়ে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। বর্তমান সমাজে গ্রন্থগুলোর যথেষ্ট সমাদর রয়েছে। সূত্র পিটক সম্পর্কে বর্ণনা করার পর বিশুদ্ধানন্দ ভিক্ষু বলেন, বিশুদ্ধানন্দ ভিক্ষু বলেন, সূত্রপিটকের গ্রন্থগুলো পাঠ করলে অনেক সুফল লাভ করা যায়। নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জিত হয়। এরপর তিনি সূত্রপিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করেন।
সূত্র পিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা
সূত্র পিটক পাঠে বুদ্ধের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা যায়। সূত্রপিটকে বুদ্ধ সূত্রগুলো কোথায়, কার কাছে এবং কী উদ্দেশ্যে দেশনা করেছিলেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। এছাড়া, সূত্রগুলোতে বুদ্ধের সময়ের রাজা ও রাজন্যবর্গ সহ রাজ্যের রাজনৈতিক, ধর্মীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এ কারণে সূত্র পিটককে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানার গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া, সূত্রপিটকের সূত্রগুলো পাঠ করলে অর্জিত হয় নৈতিকতা, মানবিকতা, উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতা, সংযম, ধৈর্য প্রভৃতি গুণ। সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং পরোপকারের মনোভাব জাগ্রত হয়। হিংসা, লোভ, বিদ্বেষ, তৃষ্ণা প্রভৃতি থেকে মুক্ত থাকা যায়। নৈতিক ও মানবিক জীবন গঠন এবং নির্বাণ লাভে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য সূত্র পিটকের সূত্রগুলো পাঠ করা একান্ত আবশ্যক।
সূত্র পিটক পাঠের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করার পর বিশুদ্ধানন্দ ভিক্ষু সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করে আলোচনা শেষ করেন। উপস্থিত সবাই মনোযোগ দিয়ে তাঁর ধর্মালোচনা শোনেন এবং সাধুবাদ দিয়ে অনুমোদন করেন। শিক্ষার্থীরা পরদিন ক্লাসে এসে শিক্ষককে বললেন, আলোচনা সভা থেকে আমরা সূত্রপিটক সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। শিক্ষক তাদের প্রশংসা করেন এবং ধর্মালোচনায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন।
অংশগ্রহণমূলক কাজ : ২
নিচের কিউআর কোড (QR Code) স্ক্যান করে ওয়েবসাইট থেকে ত্রিপিটকের গ্রন্থগুলো সম্পর্কে জানো।
অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৩
সূত্র পিটক সম্পর্কে তোমার নতুন জ্ঞানের একটি বড় তুষার বল তৈরি করার জন্য উপযুক্ত চিন্তাগুলো বৃত্তে লেখো। তুষার বল হচ্ছে এমন একটি ধারণা যেখানে অনেকগুলো ছোট ছোট তুষার বলের সমন্বয়ে বড় একটি তুষার বল তৈরি হয়। এজন্য উপরের ছবিটি দেখো।
অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৪
এই অধ্যায়টি পড়ার পরে নিচের প্রবাহ চিত্রটি সম্পূর্ণ করো (শূণ্যস্থান পূরণ করার মতো)।
অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৫
বই পড়া ও তথ্য অনুসন্ধান অভিজ্ঞতাটি সম্পর্কে তোমার লিখিত মতামত দাও ।
কার্যক্রমের কী কী ভালো লেগেছে (ভালো দিক) - - - কার্যক্রম করতে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছ, (প্রতিবন্ধকতাসমূহ) - - - সমস্যা নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়? - - - ভবিষ্যতে আর কী কী উন্নয়ন করা যায় (পরামর্শ) - - - |
ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না ঘরে (√) চিহ্ন দাও:
অংশগ্রহণমূলক কাজ নং | সম্পূর্ণ করেছি | |
হ্যাঁ | না | |
১ | ||
২ | ||
৩ | ||
৪ | ||
৫ |
আরও দেখুন...