বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ আমাদের চারপাশ। আমরা নিজেরাও একজন অন্যজন থেকে আলাদা। আমাদের শরীর যে একে অন্যের থেকে আলাদা তা নির্ধারণ করা যায় আঙুলের ছাপ, কন্ঠস্বর ইত্যাদির মাধ্যমে। আচ্ছা আমাদের আচার আচরণ, চলাফেরা, অভ্যাস এইগুলোর মধ্যেও তো পরিবর্তন আছে তাই না? সেটি আমরা কীভাবে বুঝতে পারি?
বৈচিত্র্য গাছ : আমার এবং আমার বন্ধুর পছন্দের ব্যাপারগুলো বৈচিত্র্য গাছে লিখি। একটি পাতায় লিখবো আমার পছন্দের এবং অন্য দুটি পাতায় লিখবো অন্য দুজন বন্ধুর পছন্দের ব্যাপারগুলো |
আমরা বুঝতে পারলাম, একটি গাছে যেমন শাখা-প্রশাখাগুলো এক জায়গা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন দিকে বিচিত্রভাবে ছড়িয়ে যায়, একটি বৈচিত্র্য পৃথিবীতেও তেমনি আমি ও আমার বন্ধুরা শাখা-প্রশাখা হয়ে আমাদের স্বকীয়তা নিয়ে একে অন্য থেকে কিছুটা আলাদা হয়েও কী সুন্দর করে একসাথে বেঁচে আছি, তাই না?
চলো আমরা আরেকটি অনুশীলন করি।
নিচের ঘরে আমরা নিজের এবং নিজ নিজ পরিবারের অভ্যাস বা আচরণগত বিভিন্ন দিক লিখি
সবাই কি সবার লিখা উত্তরগুলো শুনলে? আচ্ছা! এর মাধ্যমে কি আমরা বুঝতে পারলাম পরিবারভেদে আমাদের অভ্যাস ও আচরণ ভিন্ন ভিন্ন? হ্যাঁ, আমরা সবাই ভিন্ন পরিচয়ে ভিন্ন এবং আচরণে ভিন্ন, আর এই ভিন্নতাকেই বলে বৈচিত্র্য। আমাদের মধ্যে বৈচিত্রতা থাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে, যেমন শারীরিক গঠন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয়তা, ধর্ম ইত্যাদি। আমাদের চারপাশে বৈচিত্র্য না থাকলে আমরা সবাই একই রকম হলে কী একঘেয়েমি ব্যাপার হতো, তাই না?:
এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা একটি বৈচিত্র্যপত্র অর্জন করব। বড়দের যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে আমরাও ষষ্ঠ শ্রেণিতে তেমন একটি স্থানীয় বৈচিত্রপত্র পেতে পারি। এরপর সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যেতে যেতে আমরা পাব ‘আন্তদেশীয় বৈচিত্ৰ্যপত্র’, তারপর এশিয়ান বৈচিত্র পত্র’ তারপর ‘বৈশ্বিক বৈচিত্রপত্র’ এবং একেবারে শেষে ‘ডিজিটাল বৈশ্বিক বৈচিত্ৰ্যাপত্র’।
কী মজার ব্যাপার হবে, বলো তো।
ভাবছ কীভাবে অর্জন করতে পারি আমার ‘স্থানীয় বৈচিত্ৰ্যাপত্র!
খুব সহজ, আমরা আমাদের বাংলাদেশের বৈচিত্রাগুলোকেই জানার চেষ্টা করব, আর বন্ধুদের মূল্যায়ন করব কে কতটা জানতে পারল, এভাবেই সবার শেষে আমাদের প্রধান শিক্ষক আমাদের জন্য এই স্থানীয় বৈচিত্ৰ্যাপত্র’ অনুমোদন করবেন।
বাড়ির কাজ বাড়ির কাজ হিসেবে আমরা সবাই নিজের জেলা বার্তীত অন্য আরেকটি জেলা নির্ধারণ করব এবং সেই জেলার মানুষ সম্পর্কে আমার পরিবারের সদস্যরা যেমন বাবা, মা বাবা, দাদা -দাদী/নানা-নানি ধারণা তা জেনে সেটি এক লাইনে লিখব।
আমার নির্ধারণ করা জেলার নাম | ঐ জেলার মানুষ সম্পর্কে আমার পরিবারের সদস্যদের ধারণা |
---|---|
|
আচ্ছা, তোমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাচে তুমি কার পক্ষ। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই বলবে আমি ‘বাংলাদেশ’-এর পক্ষে। কেন এমন হয় বলতে পারো? কারণ আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি, দেশের ক্রিকেটাররা যদি ভালো নাও খেলে তাও আমরা ভালোবাসি। এটি মন্দ কিছু না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় বেশি পছন্দ বা অপছন্দ করতে গিয়ে কোনো বিষয় বা ঘটনাকে বিচার করতে ভুল করে ফেলি।
আমার এক বন্ধুর নাম পলাশ, ওকে আমি অনেক পছন্দ করি। আমার আরেক বন্ধু মিতা আমি তাকে খুব একটা পছন্দ করি না। একদিন আরেক বন্ধু শিমুল এসে বলল, ‘জানো! পলাশ না একটা খুব অন্যায় কাজ করেছে, সে (মিতার অনুমতি না নিয়েই তার ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়ে ফেলেছে আবার সেখান থেকে একটি পর নিয়ে নিজের নামে স্কুলের ম্যাগাজিনে ছেপে দিয়েছে।” আমি যেহেতু পলাশকে অনেক পছন্দ করি, আমি শিমুলের কথা আর কিছুতেই বিশ্বাস করলাম না, আমি যাচাইও করলাম না আসলে ঘটনা সত্য কি না। এই যে আমি পলাশকে পছন্দ করি বলে শিমুলের কথা বিশ্বাস করলাম না, এটিই হচ্ছে পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’!
পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি হলো মানুষের চিন্তাভাবনা করার কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় ঘটনা বা ব্যক্তির প্রতি একমত বা দ্বিমত পোষণ করেন শুধুমাত্র ওই বিষয় ঘটনা বা ব্যক্তিকে তিনি আগে থেকে পছন্দ/বিশ্বাস বা অপছন্দ / অবিশ্বাস করে থাকেন বলে। এই পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একজন ব্যক্তি এমন তথ্যই খোঁজেন যেটি তার পছন্দ। তার পছন্দের বা বিশ্বাসের বাইরে কোনো তথ্য পেলে তিনি সেটি গ্রহণ করতে চান না এবং সেটির সত্যতাও যাচাই করা থেকে বিরত থাকেন।
চলো কয়েকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখি, এখানে কোনো পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে কিনা।
আচ্ছা আমাদের মধ্যে কি এই ধরনের কোনো পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করত যেটি পরে আবার ঠিক হয়ে গেছে? আমার অভিজ্ঞতা নিচের ঘরে লিখব। তোমার জন্য একটি উদাহরণ করে দেওয়া হলো।
আগামী সেশনের বাড়ির কাজঃ
গত সেশনের বাড়ির কাজ ছিল একটি জেলা বাছাই করা এবং সে জেলা সম্পর্কে পরিবারের সদস্যরা কী ধারণা পোষণ করেন তা জানা।
আজকের বাড়ির কাজ হলো, আমাদের সেই নির্ধারিত জেলা সম্পর্কে আমরা তথ্য খুঁজব এবং ওই জেলার মানুষ আসলেই কেমন তা জেনে নিচের ঘরে লিখ
তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন মানবীয় উৎস এবং জড় উৎস থেকে তথ্য নেব। মানবীয় উৎস হতে পারে, সে জেলায় বসবাস করে আমার কোনো আত্মীয়, জড় উৎস হতে পারে বই, পত্রিকা, ইন্টারনেট ইত্যাদি। এই জেলার বিখ্যাত কোনো ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণ করেও আমরা কিছু তথ্য পেতে পারি।
এই কাজ করার মাধ্যমে আমরা আমানের বৈচিত্র্যাপত্র’ পাওয়ার ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাব ।
আমার নির্ধারণ করা জেলার নাম | ঐ জেলা এবং জেলার মানুষ সম্পর্কে আমার পরিবারের সদস্যদের ধারণা | আমি জেলা সম্পর্কে যে তথ্য পেলাম |
---|---|---|
|
বৈচিত্ৰ্যাপত্র পেতে হলে আমাদের চারপাশকে নিরপেক্ষভাবে বিচার-বিবেচনা বা যাচাই করতে পারতে হবে। আমরা কি জানি নিরপেক্ষতা মানে কী? কোনো পক্ষ না নেওয়া?
একদম না, নিরপেক্ষতা অর্থ হচ্ছে যা যথার্থ তার পক্ষে থাকা। গত দুই সেশনে আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি ‘পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ কী কোনো ঘটনা, বিষয় বা ব্যক্তিকে যাচাই করার সময় কোনো রকম পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি না ধারণ করাই হলো নিরপেক্ষতা।
কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার জন্য দুটি ব্যাপার জানা থাকলে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা খুব সহজ হয়ে যায়। এগুলো হলো-
১। প্রকৃত সত্য বা ফ্যাধ
২। মতামত বা ওপিনিয়ন।
যে কখনও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখেনি, সে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত কত বড় তা বুঝতে কোনো বর্ণনাটা বেশি কাজে লাগবে। (টি দাও)
যে কখনও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখেনি, সে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কতটা ভিড় হয় তা বুঝতে কোন বর্ণনাটা বেশি কাজে লাগবে? (টিক দাও)
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম, যে ফ্যাক্ট বা প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ‘যে বক্তব্যে কোনো ঘটনার আসল রূপ বোঝাতে গিয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়। আর মতামত হলো একজন ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ’।
‘মতামত’ যে সব সময় ভুল বা মিথ্যে হবে তা কিছু নয়। কিন্তু ফ্যাক্ট বা প্রকৃত সত্য’ বেশি বিশ্বাসযোগ্য নির্ভরযোগ্য।
নিচের ঘরে আরও কিছু ‘মতামত মূলক বাকা দেওয়া হলো, একই বাক্য “প্রকৃত সত্য’ বিবেচনায় কেমন হতে পারে তা লিখি –
আমরা কি সবগুলো ‘মতামতের সপক্ষে ওই ঘটনাটি ‘প্রকৃত সত্য’কে কীভাবে তুলা ধরা যায় তা লিখতে পেরেছি?
এখন আমাদের গত দিনের বাড়ির কাজের কোন অংশটি ‘মতামত’ ছিল আর কোন অংশটি ‘প্রকৃত সত্য’ ছিল, তা বের করতে পারব ?
আগামী দিনের বাড়ির কাজ :
বাড়ির কাজ হিসেবে আমরা দলে যে বিভাগটি নিয়েছি সে বিভাগ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করব। তাই এখনই আমাদের দলের সদস্যদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিই কে কোন অংশ নিয়ে আলোচনা করব।
আগামী দিন শ্রেণিতে কাজ করতে যে উপকরণ লাগবে :
১। একটি ছোট খাতা, যেখানে ২০টি পৃষ্ঠা থাকবে (হাতের কাছে অতিরিক্ত খাতা না থাকলে ২০টির মতো কাগজ ছিঁড়ে সেলাই করে নিতে পারি।।
২। আমার এক কপি ছবি (ছবি জোগাড় করতে না পারলে নিজের মুখের একটি প্রতিচ্ছবি আঁকতে পারি)।
৩। নিজের সম্পর্কে সব তথ্য নিজের নাম, মা-বাবার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, আমার জন্মনিবন্ধন নম্বর)।
আমরা আজকের সেশনে নিজেদের জন্য এ রকম একটি পরিচিতি ডায়েরি বানাব। ডায়েরিতে একটি পাতায় নিজের বিস্তারিত তথ্য থাকবে, বাকি ৮টি পৃষ্ঠায় ৮টি বিভাগের নাম লিখব। প্রতিটি পৃষ্ঠার পর দুটি পৃষ্ঠা খালি রাখব। আমার নিজের বিভাগ সবার শুরুতে রাখব এবং আমার দল যে বিভাগ নিয়ে কাজ করছে সে বিভাগের নাম সবার শেষে লিখব। বিভাগের নামের নিচে প্রতিটি গ্রুপ কী উপস্থাপন করল তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে তা লিখব এবং পরের পৃষ্ঠায় সে তথ্যগুলোর ভিত্তিতে আমার নিজের পর্যবেক্ষণ লিখব।
আমাদের ডায়েরি তৈরি শেষ হলে আমাদের দলের নির্ধারণকৃত বিভাগটি সম্পর্কে দলের সদস্যরা তথ্য পেলাম তা সমন্বয় করব। আর কোনো তথ্য খুঁজে না পেলে তা শিক্ষকের সহায়তায় পত্রিকা, টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা অন্যান্য উৎস ব্যবহার করে উপযুক্ত তথ্য খুঁজে বের করি। আগামী সেশনে আমাদের দলীয় উপস্থাপন করতে হবে।
দলীয় উপস্থাপনের জন্য ৭টি দলকে শ্রেণিকক্ষের ৭ স্থানে উপস্থাপন স্টল/বুথ বানাতে হবে। পরবর্তী পৃষ্ঠা দেখে নিতে পারি, কেমন হবে গুল। তাই আগামী সেশনের আগে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখব, যেন এসেই ক্লাসরুম সাজিয়ে নিতে পারি।
আমাদের স্টল সাজানোর জন্য, আমাদের দলের বাছাইকৃত বিভাগ নিয়ে ছবি, মানচিত্র, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের উপস্থাপন তৈরি করতে পারি। তাই তথ্যসমৃদ্ধ পোস্টার বা অন্যান্য উপকরণ বাড়ি থেকে তৈরি করে নিয়ে আসব। তাই দলের কোন সদস্য কী তৈরি করবে তা এখনই আলোচনা করে নিই।
আজ আমরা শুধুমাত্র উপস্থাপন করব। দলের প্রতিটি সদস্য নিজেদের স্টলের সামনে ১০/১৫ মিনিট ( সদস্যের সংখ্যার ওপর নির্ভর করবে) করে থাকব, বাকি সদস্যরা ঘুরে ঘুরে অন্য ইলে/বুজে দিয়ে বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জানবো, এবং ওই বিভাগ সম্পর্কে ডায়েরিতে লিখবো। উপস্থাপনকারী সদস্য চলে দাঁড়িয়ে থাকবে, অন্য দলের সবাই এসে এসে তাকে প্রশ্ন করে করে ওই বিভাগ সম্পর্কে জেনে নেবে।
আজকের উপস্থাপন শেষ হলে বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন বিভাগের পাশে খালি পাতায় আমার নিজের পর্যবেক্ষণগুলো লিখব। এর পরদিন এসে এই ডায়েরিটা এবং আমাদের ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি বই শিক্ষকের কাছে জমা দেব। শিক্ষক আমাদের ডায়েরি মূল্যায়ন করে আমাদের জন্য বৈচিত্র্যপত্র প্রস্তাব করবেন এবং প্রধান শিক্ষক আমরা যারা বৈচিত্রপত্র পাওয়ার যোগ্য তাদের জন্য বৈচিত্রপত্র স্বাক্ষর করবেন। শিক্ষক আবার আমাদের প্রধান শিক্ষকের সাক্ষরসহ বইটি ফেরত দেবেন, তখন আমরা আমাদের বৈচিত্র পত্রটি কেটে নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করব।
Read more