হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মানুষদেরকে নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্সের পেশাগত দক্ষতার সর্বোচ্চ উন্নয়ন, নিয়োগকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা এবং হিউম্যান রিসোর্সের যোগ্যতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সর্বাত্মকভাবে ব্যবহার করা। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের কাজগুলো হলো-
→ হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা প্রণয়ন (Human resource planning) : প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্সকে বর্তমান অবস্থান থেকে ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত হিউম্যান রিসোর্সে পরিণত করার করণীয় নির্ধারণকে হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা বলে। এজন্য প্রথমে কর্মরত হিউম্যান রিসোর্সের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ, তাদের সংখ্যা, যোগ্যতা, দক্ষতা, সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা, বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম-বর্ণ প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য নিতে হবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতজন কর্মী প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে পারে, অবসরে যেতে পারে তার আগাম ধারণা নিতে হবে। এর আলোকে ভবিষ্যৎ কর্মীর চাহিদা নিরূপণ করতে হবে এবং বর্তমান হিউম্যান রিসোর্সের একটি মজুদ গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও হিউম্যান রিসোর্সের ভবিষ্যৎ সমস্যা সম্পর্কে পূর্বানুমান করে প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে কর্মী চাহিদা, নির্বাচন, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে।
→ হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ ও নির্বাচন ( Recruitment and selection of human resource ) : হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ হলো সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করতে উৎসাহিত করা। আর হিউম্যান রিসোর্স নির্বাচন হলো সংগৃহীত কর্মী তথা আবেদনকারীদের মধ্য হতে কাঙ্ক্ষিত মানের হিউম্যান রিসোর্স খুঁজে বের করা বা বাছাই করা। এজন্য হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে ঠিক করতে হবে যে একজন প্রার্থীর কী ধরনের শারীরিক ও মানবিক গুণাবলি অবশ্যই দরকার, কোন কোন যোগ্যতা ও দৃষ্টিভঙ্গি আকাঙ্ক্ষিত এবং কোন কোন বৈশিষ্ট্য ক্ষতির কারণ। হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যেকোনো উৎস ব্যবহার করা যেতে পারে। আর হিউম্যান রিসোর্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে কর্মীর ঝোঁক বা প্রবণতা, বুদ্ধিমত্তা, নেতৃত্বের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রভৃতি বিষয় খেয়াল করতে হবে।
→প্রেষণা দান (Motivation) : হিউম্যান রিসোর্সের কর্মদক্ষতার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজের প্রতি তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরিকে প্রেষণা বলে। এটি হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মনস্তাত্ত্বিক কাজ। এটি হিউম্যান রিসোর্সকে কাজের প্রতি ইচ্ছা, আগ্রহ, কর্মশক্তি এবং উদ্দীপনা বাড়াতে সহায়তা করে। এতে সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে সচেষ্ট হয়। এটি আর্থিক বা অনার্থিক দুভাবেই হতে পারে।
→ কর্মী মূল্যায়ন (Employee evaluation) : সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময় পরপর কর্মরত কর্মীদের কর্মদক্ষতা এবং আরও ভালো কাজের সামর্থ্য যাচাইয়ের পদ্ধতিকে কর্মী মূল্যায়ন বলে। এর উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের উন্নয়ন করা। মেধা বাছাই এবং মেধাবীদেরকে দিয়ে উচ্চতর শূন্যপদ পূরণ বা তাদেরকে যথাযথ পদে পদায়ন করাও এর উদ্দেশ্য। এছাড়া কর্মদক্ষতা অনুযায়ী সম্মানী প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও এটি করা হয়।
→ উত্তম শিল্প সম্পর্ক স্থাপন (Establishing good industrial relation) : মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যকার সম্পর্ককে শিল্প সম্পর্ক বলে। একে শ্রম ব্যবস্থাপনা বা মানবীয় সম্পর্ক বলা হয়ে থাকে। মালিক, ব্যবস্থাপক, কর্মী, শ্রমিক সংঘ ও সরকারের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক এর আওতাভুক্ত। এর সাথে হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক জোরালোভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে তাকে যে কাজগুলো করতে হয় তা হলো-
• শিল্প আইন মেনে চলা এবং ব্যবস্থাপকদের তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া;
• স্থানীয়ভাবে দরকষাকষি পরিচালনা করা এবং জাতীয়ভাবে দরকষাকষিতে নিয়োগকর্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা;
• সম্পাদিত চুক্তিগুলোর বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করা;
• চুক্তি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা এবং চুক্তি যেন সঠিকভাবে পালিত হয় সেজন্য কৌশল প্রণয়ন করা;
• অনিয়ন্ত্রিত এবং ভুল পরিস্থিতিকে পরিশুদ্ধ করা;
• সমন্বিতভাবে আলাপ-আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কর্মীদের প্রণোদনা বা উৎসাহ প্রদান করা;
• কর্মীবাহিনীর সংখ্যা, ব্যয় দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রদান করা প্রভৃতি।
→ কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা (Ensuring employee benefits ) : প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের অনুগত রাখা এবং আগ্রহী করে তোলার জন্য তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া ভালো প্রতিষ্ঠানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই সুবিধাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে কর্মীদের ঋণ প্রদান এমনকি তাদের ব্যক্তিগত সমস্যায় পরামর্শ প্রদান। এটি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর অন্তর্ভুক্ত হলো-
• চিকিৎসা ভাতা, অসুস্থতার জন্য ছুটি বাড়ানো এবং রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা;
• বিশেষ বিশেষ দিনে ছুটির প্রচলন করা;
• আঘাতপ্রাপ্ত, অনুপযুক্ত এবং শারীরিকভাবে অক্ষম কর্মীদের পুনর্বাসন করা এবং তাদেরকে অপেক্ষাকৃত সহজ ও হালকা কাজে নিয়োজিত করা;
• বিকলাঙ্গতার পরিসংখ্যান এবং নিবন্ধনপত্র রক্ষণাবেক্ষণ করা;
• খেলাধুলা, সামাজিকতা, শখ এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কাজের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া;
• ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা;
• প্রয়োজনের সময় কর্মীদের আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করা;
• তথ্যপুঞ্জি রাখার বিধান করা;
• বিভিন্ন প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা এবং অবসরপূর্ব বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করা;
• স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিধান প্রণয়ন এবং প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা প্রভৃতি ।
→ কর্মীদের শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন (Employee education, training and development) : শিক্ষা হলো মনকে উন্নত করা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা অর্জন করা।
প্রশিক্ষণ হলো কোনো কাজ বা চাকরিতে একজন ব্যক্তির প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞান বা দক্ষতার প্রক্রিয়াগত উন্নয়ন সাধন করা। আর কর্মী উন্নয়ন হলো সক্ষমতা, উপলব্ধি এবং সচেতনতার নিরিখে কোনো ব্যক্তির উন্নয়ন করা। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের এই কাজগুলো করতে হয়।
উদ্দেশ্য হলো সেসব পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য, যা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পূরণ করতে চায়। অনুরূপভাবে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে একটি যথাযোগ্য এবং ভারসাম্যপূর্ণ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা। এ উদ্দেশ্য পূরণে যথোপযুক্ত হিউম্যান রিসোর্স সংগ্রহ, নির্বাচন, সামাজিকীকরণ, বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন, প্রেষণা বা প্রণোদনা দান, সংরক্ষণ প্রভৃতি কার্যের মাধ্যমে হিউম্যান রিসোর্সের সর্বোত্তম ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও মুনাফা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। নিচে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলোচনা করা হলো-
→ উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন ও নিয়োগ (Selection and recruitment of suitable employee ) : প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে সঠিক পদে সঠিক ব্যক্তি নিয়োগের জন্য যথোপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ ও বাছাই করা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে শুরুতেই হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা একটি যথার্থ কর্মী নীতি ও নিয়োগ বিধি প্রণয়ন এবং পদ ও দায়িত্বভেদে যাচাই বাছাইয়ের ধরন নির্ধারণ করে থাকে।
→ দক্ষ ও সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী গড়ে তোলা (To build an efficient and disciplined workforce) : প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি দক্ষ ও সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী গঠন করা হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, বাজারজাতকরণসহ সব কাজের সাথেই কর্মীবাহিনী সম্পৃক্ত। তাই সুদক্ষ ও সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী গঠন করা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের প্রধান পূর্বশর্ত। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা কর্মী সংগ্রহ, সুযোগ্য কর্মী নির্বাচন, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, প্রেষণা দান এবং ন্যায্য বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি সুদক্ষ ও সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে ।
→ হিউম্যান রিসোর্সের কার্যকর ব্যবহার (Effective use of human resource): যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ। হিউম্যান রিসোর্সের দ্বারাই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সম্পদগুলো ব্যবহার করতে হয়। তাই হিউম্যান রিসোর্সের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্মীদের কার্য নির্ধারণ, কার্য সম্পাদন মূল্যায়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে তৎপর থাকে ।
→ কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি (Increase the efficiency of employee ) : কর্মী দক্ষতার উন্নতি প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের পূর্বশর্ত। কর্মীদের দক্ষতার অভাব থাকলে সব পরিকল্পনা, উদ্যোগই ব্যর্থ হবে। তাই উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
→ মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক (Cordial relationship between worker and management) : একটি সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী গঠন করা এবং কর্মী-ব্যবস্থাপক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার লক্ষ্যে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা বিভাগ সর্বদা চেষ্টা করে। এটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, কার্য নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধি লাভের পথ সহজ করে তোলে।
→ কার্যসন্তুষ্টি নিশ্চিতকরণ (Ensuring job satisfaction) : যেকোনো ব্যক্তি কাজ করে উপযুক্ত প্রতিদানের আশায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রতিদান বলতে শুধু পারিশ্রমিককেই বোঝায় না। বরং কাজের স্বীকৃতি দান, ন্যায্য পারিশ্রমিকের পাশাপাশি চিকিৎসা সুবিধা, বিমা, বোনাস, খেলাধুলা ও অন্যান্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাকরণ প্রভৃতি সুযোগ- সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কর্মীর কার্যসন্তুষ্টি বিধান করা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানজেমেন্টের অন্যতম উদ্দেশ্য।
→ কার্য সম্পাদন মূল্যায়ন (Performance appraisal) : হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে যোগ্য কর্মী চিহ্নিতকরণ এবং কর্মীদের যোগ্যতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে কার্যসম্পাদন মূল্যায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পাদন করতে হয়। একজন কর্মীর সম্পাদিত কার্যসমূহের মূল্য নির্ণয় করার একটি রীতিবদ্ধ পদ্ধতি হলো কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কার্যক্ষেত্রে কর্মীর ভূমিকা মূল্যায়ন করা হয়।
→ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান (To pay proper compensation) : ক্ষতিপূরণ হচ্ছে কর্মীদের শ্রমের আর্থিক পুরস্কার। কর্মীরা প্রতিষ্ঠানে যে শ্রম বিনিয়োগ করে তার প্রতিদান হিসেবে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনাকে মজুরি, বেতন, বোনাস ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়।
→ কর্মীদের উন্নত মনোবল প্রতিষ্ঠাকরণ (Build up strong morality of employee ) : দৃঢ় মনোবলই কর্মীদের আন্তরিকভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা উত্তম কার্য পরিবেশ, ন্যায্য মজুরি প্রদান এবং কর্মীদের ব্যক্তিগত ও দলীয় সুখ- স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাকরণের মাধ্যমে দৃঢ় মনোবল প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করতে সচেষ্ট থাকে।
→ সুষ্ঠু সমন্বয়সাধন (Proper coordination) : প্রতিষ্ঠানের সবপর্যায়ের ব্যক্তি, শাখা, উপবিভাগ ও বিভাগের কাজের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়সাধন প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনের জন্য অত্যাবশ্যক। হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুষ্ঠু সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে কাজের গতি বজায় রাখা এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি অর্জন। সঠিক সমন্বয়ের অভাবে যেকোনো পরিকল্পনা বা উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বাধ্য ।
→ শ্রম কল্যাণমূলক কার্যক্রম (Labour welfare activities) : বর্তমান সময়ে মজুরিই শ্রমিকদের একমাত্র প্রাপ্য নয়। এখন শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। কর্মীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাকরণ, ক্যান্টিন সুবিধা, বোনাস, ভবিষ্যৎ তহবিল, অবসর ভাতা, সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ দান, স্কুল, কলেজ, উপাসনালয় প্রভৃতির সুব্যবস্থা করাও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের অন্যতম উদ্দেশ্য। এসব কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কর্মীর কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে কর্মীর কাজে আত্মনিয়োগে উৎসাহিত করে।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও যৌথ দরকষাকষির সুযোগ দান, শ্রম ঘূর্ণায়মানতার হার হ্রাস করে কর্মীদের সংরক্ষণ, পদোন্নতির সুযোগ দান প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করাও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এসব উদ্দেশ্য অর্জনে হিউম্যান রিসোর্স ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু কার্যপন্থা গ্রহণ করে থাকে ।
আরও দেখুন...